সায়্যিদুনা আবদুর রহমান বিন আবু বকর সিদ্দিক
(رضي الله عنه)'র আক্বিদা
একটি কলিজা এবং একশ ত্রিশজন সাহাবী (رضي الله عنه)ঃ-
হযরত আবদুর রহমান বিন আবূ বাকর সিদ্দিক (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন যে, রাসূল (ﷺ)’র সাথে আমরা একশ ত্রিশজন সাহাবী ছিলাম। রাসূল (ﷺ) জিজ্ঞাসা করলেন, তোমাদের মধ্যে কারো কাছে খাবার আছে কি?
আমাদের সাথে একলোক ছিল, যার কাছে এক সা (চার কি.গ্রা.) আটা আছে, আটাগুলো পিসা হল। অতঃপর এলোমেলো চুল ওয়ালা একজন লম্বা ব্যক্তি আসল, যে নিজের ছাগলগুলো চড়াচ্ছিল।
রাসূল (ﷺ) তাকে বললেন, এই বকরিগুলো বিক্রি করবে অথবা হাদিয়া দিবে? লোকটি বলল, “না” হাদিয়া দেব না বরং বিক্রি করবো।”
রাসূল (ﷺ) একটি বকরি ক্রয় করলেন। ছাগলটি জবেহ করে মাংশ তৈরী করা হল। নাবী কারিম (ﷺ) ছাগলের কলিজা ভুনা করার নির্দেশ দিলেন। হযরত আবদুর রাহমান (رضي الله عنه) বলেন-
وَايْمُ اللهِ، مَا مِنَ الثَّلَاثِينَ وَمِائَةٍ إِلَّا حَزَّ لَهُ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حُزَّةً حُزَّةً مِنْ سَوَادِ بَطْنِهَا، إِنْ كَانَ شَاهِدًا أَعْطَاهُ، وَإِنْ كَانَ غَائِبًا خَبَأَ لَهُ
-‘‘আল্লাহর শপথ! রাসূল (ﷺ) এই একশ ত্রিশজন সাহাবিদের প্রত্যেককে এই কলিজা থেকে এক টুকরা করে দিয়েছেন। যারা উপস্থিত ছিলেন তাদেরকে টুকরা দিয়েছেন। আর যারা অনুপস্থিত ছিলেন তাদের জন্য কলিজার টুকরা রেখে দিলেন।’’
রাসূল (ﷺ) গোশতগুলোকে দুটি পেয়ালার মধ্যে রাখলেন। আমরা সবাই সেখান হতে খেলাম এবং পরিতৃপ্ত হলাম। ওই বাটিগুলোর মধ্যে খাবার পুণরায় পূর্ণ হয়ে গেল, আমি (আবদুর রাহমান বিন আবি বকর রাদ্বিআল্লাহু তা‘আলা আনহু) বাটিগুলোকে উটের ওপর রাখলাম। ২২৪
{২২৪. সহীহ মুসলিম শরীফ, ৩/১৬২৬ পৃ. হা/২০৫৬, ইমাম বুখারী, আস-সহীহ, ৭/৬৯ পৃ. হা/৫৩৮২, পরিচ্ছেদ: بَابُ مَنْ أَكَلَ حَتَّى شَبِعَ , মুসনাদে আহমদ, ৩/২৩১ পৃ. হা/১৭০৩, বায়হাকী, আস-সুনানুল কোবরা, ৯/৩৬১ পৃ. হা/১৮৭৮৯, মুসনাদে বায্যার, হা/২২৬৪, ইবনে আছির, জামেউল উসূল, ১১/৩৬২ পৃ. হা/৮৯১২}
আক্বিদা
রাসূল (ﷺ)’র সত্তাই হল উপকার দানকারী। তাঁকে আল্লাহ তা‘আলা এমন সম্মান এবং শক্তি দান করেছেন যে, অল্প বস্তুকে তিনি অধিক করতে পারেন, এরূপ তাঁর কোটি কোটি মু‘জিযা রয়েছে।
খাবারে বারকতঃ-
সায়্যিদুনা আবদুর রাহমান বিন আবূ বকর (رضي الله عنه) বলেন, আসহাবে সুফ্ফার লোকেরা দারিদ্র্য ছিলেন, একদা রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, যার নিকট দুই জনের খাদ্য আছে, সে যেন এদের থেকে তৃতীয় জনকে নিয়ে যায়, আর যার কাছে চার জনের খাদ্য আছে, সে যেন এদের থেকে পঞ্চম জনকে নিয়ে যায় অথবা চতুর্র্র্থ জনকে নিয়ে যায়।
হযরত আবূ বকর (رضي الله عنه) তিনজনকে নিয়ে গেলেন, রাসূলে পাক (ﷺ) দশজনকে নিয়ে গেলেন। হযরত আবদুর রহমান বিন আবু বকর (رضي الله عنه) বলেন, ঘরে আমার পিতা, মাতা এবং একজন খাদিম ছিলেন।
হযরত আবু বকর ছিদ্দিক (رضي الله عنه) রাসূূল (ﷺ)’র সাথে শাম-এর খাবার গ্রহণ করছিলেন।
রাসূল (ﷺ)’র পাশে দণ্ডায়মান হলেন, শেষ পর্যন্ত ইশারের নামায পড়লেন, পুনরায় ফিরে এসে দণ্ডায়মান রইলেন, ইতোমধ্যে রাসূল (ﷺ)’র তন্দ্রা চলে আসল। অতঃপর আল্লাহর মর্জি মোতাবেক যখন রাতের একটা অংশ অতিক্রান্ত হলো, হযরত আবূ বকর (رضي الله عنه) ঘরে ফিরে আসলেন।
হযরত আবূ বকর (رضي الله عنه)’র বিবি তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, “আপনার মেহমানদের ছেড়ে কোথায় গিয়েছেন”? হযরত আবু বকর বললেন, কেন, মেহমানদের তোমরা খাওয়াও নি?
বিবি বললেন, মেহমানরা আপনাকে ছাড়া খানা খেতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। তাদের সামনে খাবার পরিবেশন করা হয়েছিল। কিন্তু তাঁরা তা গ্রহণ করেননি।
হযরত আবদুর রহমান (رضي الله عنه) বললেন, ভয়ে আমি এক জায়গায় লুকিয়ে রইলাম। হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) বললেন, “ওহে মূর্খ! আল্লাহ তোমার নাক কর্তন করুণ।” আমার রাগ এসেছে, মেহমানদের বললেন, খাবার গ্রহণ করুন। আর তিনি আল্লাহর শপথ করে বললেন, এই খাবার আমি কখনো গ্রহণ করবো না। হযরত আবদুর রহমান (رضي الله عنه) বলেন-
وَايْمُ اللَّهِ، مَا كُنَّا نَأْخُذُ مِنْ لُقْمَةٍ إِلَّا رَبَا مِنْ أَسْفَلِهَا أَكْثَرُ مِنْهَا - قَالَ: يَعْنِي حَتَّى شَبِعُوا - وَصَارَتْ أَكْثَرَ مِمَّا كَانَتْ قَبْلَ ذَلِكَ
আল্লাহর শপথ! খাওয়ার জন্য লোকমা যখনই উঠতাম, লোকমার নিচ থেকে খানা বের হচ্ছে এবং খাবার প্রথম থেকে বেশি হয়ে গিয়েছিল। অবশেষে আমরা পরিতৃপ্ত হলাম আর খাবার প্রথম থেকে বেশি হয়েছিল।
হযরত আবু বকর সিদ্দিক (رضي الله عنه) যখন দেখলেন যে, খাবার প্রথম থেকে আরো বেশি হয়েছে, তখন তিনি তাঁর বিবিকে লক্ষ্য করে বললেন- ওহে ফিরাছ গোত্রের বোন, এটা কী! তিনি বললেন, আমার চোখের শীতলতার শপথ! এই খাবারগুলো প্রথম থেকে তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে (সুবহানাল্লাহ!)। ২২৫
{২২৫. সহীহ মুসলিম শরীফ, ৩/১৬২৭পৃ. হা/২০৫৭, ইমাম বুখারী, আস-সহীহ, ১/১২৪ পৃ. হা/৬০২, পরিচ্ছেদ: بَابُ السَّمَرِ مَعَ الضَّيْفِ وَالأَهْلِ}
আক্বিদা
প্রথম খালিফা আবূ বকর সিদ্দিক (رضي الله عنه)’র কারামতে খানা বৃদ্ধি পেয়েছে, এটা থেকে বুঝা গেল যে, ‘কারামত সত্য’। আর এটি হচ্ছে রাসূূল (ﷺ)’র ফায়েজ।
যেসব ব্যক্তি খিলাফত নিয়ে শোরগোল করে এবং সাধারণ মানুষের উপর এই বিশ্বাস ছড়ায় যে, আমরা খুলাফায়ে রাশিদীনের মান-মর্যাদার সংরক্ষণকারী তাদের এটা বুঝা উচিত।
সিদ্দিক আকবর (رضي الله عنه)’র সত্তা যদি জাতির জন্য উপকারী হতে পারে তবে রাসূূলে করিম (ﷺ)’র পবিত্র সত্তা তো আরো বেশি উপকারী হবে। সুতরাং এ কথা বলা ইসলামের সাথে কত বড় দুশমনি যে, নাবী (ﷺ) অপরের উপকার তো নয় বরং যারা মনে করে নাবী (ﷺ) নিজের উপকার করতে পারে তারা মুশরিক!