জা’আল হক (প্রথমাংশ)
মূলঃ হযরাতুল আল্লামা আলহাজ্ব মুফতী আহমদ ইয়ার খান নঈমী রহমতুল্লাহে আলাইহে
অনুবাদকঃ (শাহজাদা) মাওলানা মুহাম্মদ জহুরুল আলম ও মুহাম্মদ লুৎফুর রহমান।
তথ্য সংযােজনঃ মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ বাহাদুর
টেক্সট রেডীঃ মাসুম বিল্লাহ সানি, সিরাজুম মুনির তানভির
মুহাম্মদী কুতুবখানা ৪২, জামে মসজিদ শপিং কমপ্লেক্স, আন্দরকিল্লা, চট্টগ্রাম। মোবাইল : ০১৮১৯-৬২১৫১৪
প্রকাশনায় : আরিফুর রহমান নিশান
নিশান প্রকাশনী,
শাহী জামে মসজিদ শপিং কমপ্লেক্স আন্দরকিল্লা, চট্টগ্রাম।
প্রথম প্রকাশঃ ৩০ শে সেপ্টেম্বর ১৯৮৮ ইং
দ্বিতীয় সংস্করণঃ ২৫ শে মে ১৯৯০ ইং
তৃতীয় সংস্করণঃ ২৩ শে সেপ্টেম্বর ১৯৯৩ ইং
চতুর্থ সংস্করণঃ ২৯ শে জুলাই ১৯৯৯ ইং
পুণঃ মুদ্রণঃ ৪ ঠা সেপ্টেম্বর ২০০১ ইং
পুণঃ মুদ্রণঃ ১৫ ই ফেব্রুয়ারি ২০০৬ ইং
পুণঃ মুদ্রণঃ ১০ ই মার্চ ২০১০ ইং
চতুর্থ সংস্করণঃ ১ লা এপ্রিল ২০১৬ ইং
হাদিয়াঃ ৩০০.০০ (সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত)
শব্দ বিন্যাসঃ নিউ এ বি কম্পিউটার এণ্ড প্রিন্টার্স ৬০, শাহী জামে মসজিদ মার্কেট (দক্ষিণ ২ য় তলা) আন্দরকিল্লা, চট্টগ্রাম।
অনুবাদকের কথাঃ
ফিতনা ফ্যাসাদের এ যুগসন্ধিক্ষণে ঈমান - আক্কীদা নিয়ে টিকে থাকা বড়ই দুরহ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাতিল দলের ব্যাপক তৎপরতার ফলে মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছে। দিনের পর দিন ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে ভেদাভেদ বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং প্রায় জায়গায় নানা মতাদর্শ জনিত বিবাদ - বিসম্বাদ লেগেই আছে। মাঝে মাঝে কোন কোন মহল থেকে এ ভেদাভেদ ভুলে একই পতাকাতলে জমায়েত হবার আহবানও জানানাে হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্য যে, কেউ এসব দল উপদলের অভূদয় ও ভেদাভেদের মুল কারণগুলাে চিহ্নিত করেন না। আবার কেউ এগুলােকে নিছক মামুলী ব্যাপার বলে উড়িয়ে দেন। যার ফলে আজ পর্যন্ত এর কোন সুরাহা হলােনা। হাকীমুল উম্মত হযরাতুল আল্লামা মুফতী আহমদ ইয়ার খান নঈমী (রহঃ) ইসলাম ধর্মের প্রধান বিতর্কিত বিষয়সমূহ সন্নিবেশিত করে উর্দুভাষায় একটি মুল্যবান গ্রন্থ রচনা করেন, যার নামকরণ করেন “ জা'আল হক ওয়া যাহাকাল বাতিল ” (সত্যের আবির্ভাবে বাতিল তিরােহিত)। এতে ধর্মীয় মতানৈক্য বিষয়সমূহের চূড়ান্ত ফায়সালা কুরআন হাদীছের আলােকে ও নির্ভরযােগ্য প্রমাণাদি দ্বারা সুন্দরভাবে বিবৃত হয়েছে। যে কেউ নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কিতাবটি একবার অধ্যয়ন করলে মতভেদের মুল কারণগুলা খুঁজে বের করতে সক্ষম হবেন এবং গলদ কোথায় তা অনায়াসে বুঝতে পারবেন আক্বীদা হচ্ছে ধর্মের মূল ভিত্তি। আক্বীদার ব্যাপারে আপােষের কোন প্রশ্নই আসে না। সঠিক আক্বীদা গ্রহণ করার আর বাতিল আকৃীলা পরিহার করার প্রয়ােজনীয়তা অনস্বীকার্য। আমলের ক্ষেত্রে অবহেলা করলে পাপ হতে পারে, কিন্তু আক্বীদার ব্যাপার ভিন্নমত পােষণ করলে খােদাদ্রোহী ও ঈমান হারা হবার সমূহ সম্ভাবনা থাকে তাই ঈমান - আক্বীদা বিশুদ্ধ করার প্রয়ােজনীয়তা সর্বাধিক হযরাতুল আল্লামা মুফতী আহমদ ইয়ার খান নঈমী সাহেব রচিত এ জা'আল হক গ্রন্থটি যুগােপযােগী অনন্য এক সহায়ক গ্রন্থ হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে তিনি তাঁর ক্ষুরধার লেখনির মাধ্যমে ভ্রান্ত আক্বীদার খােলস উস্বোচন করে বিশুদ্ধ আক্বীদার রূপরেখা তুলে ধরেছেন। এ পর্যন্ত তাঁর রচিত এ কিতাবটি কয়েকটি ভাষায় অনুদিত হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে অনেকেই উর্দুভাষা পড়তে ও বুঝতে সক্ষম ছিলেন বিধায় আগে কেউ এ কিতবাটির বঙ্গানুবাদ করার প্রয়ােজন বােধ করেননি। কালের আবর্তনে ইদানীং উর্দুভাষার চর্চা ও অনুশীলনের পথ রুদ্ধ হয়ে যাওয়ায় বৃহত্তম জনগােষ্ঠী ও আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের স্বার্থেই আমরা কিতাবটির বানুবাদে হাত দিয়েছি। অনুবাদের ক্ষেত্রে ভাষাকে মার্জিত, সহজবােধ্য ও মুল বিষয়বস্তুকে পরিস্ফুটিত করার যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি। আমরা একেবারে শাব্দিক অনুবাদও করিনি, যাতে পাঠকদের কাছে বিরক্তকর হয়। আবার এতটা স্বাধীন অনুবাদও করিনি, যা মুল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, আমরা প্রধানতঃ মুরাদাবাদ (ভারত) থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত মুল গ্রন্থ অবলম্বনেই বাংলায় অনুবাদ করেছি। খােদার লাখাে শুকরিয়া, বইটি পাঠক সমাজের কাছে যথেষ্ট সমাদৃত হয়েছে। এ পর্যন্ত চারবার সংস্করণ করা হয়েছে, পুণঃমুদ্রিত হয়েছে অনেকবর। প্রত্যেক বার ভুলত্রুটি মুক্ত করার জন্য যথাযথ চেষ্টা করেছি। এরপরও একেবারে নির্ভুল বলে দাবী করতে পারি না। আশা করি, সুধী পাঠকবৃন্দ শাব্দিক ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। তুবে তথ্যগত কোন ভুলত্রুটি ধরা পড়লে অবহিত করে বাধিত করবেন যেন পরবর্তী সংস্করণে শােধরিয়ে নিতে পারি।
—অনুবাদক।
| সূচী | বিষয় |
➠মূল গ্রন্থাকার এর ভূমিকা
✧ সমস্ত ফিতনার মধ্যে ওহাবী-নজদীদের ফিতনা সর্বাধিক বিপজ্জনক
✧ মুসলমানদের উপর বিশেষ করে হেরমাইন শরীফাইনে বসবাসকারীদের উপর অত্যাচার
✧ লা-মাযহাবী ও দেওবন্দীদের মধ্যে পার্থক্য
✧ জা 'আল হক' নামকরণের তাৎপর্য
➠পেশ কালাম
✧ তাফসীর, তাবল ও তাহরীফের মধ্যে পার্থক্য
✧ মনগড়া তাফসীর হারাম, তাফসীরের স্তর বর্ণনা
➠তাকলীদের বর্ণনা
✧ তাকলীদের অর্থ ও প্রকারভেদ
✧ কোন ধরণের মাসাইলে তাকলীদ করা হয়?
✧ তাকলীদ কার জন্য ওয়াজিব আর কার জন্যে ওয়াজিব নয়
✧ মুজতাহিদের ছয়টি শ্রেণি ও তাদের পরিচয়
✧ তাকলীদ ওয়াজিব হওয়ার দলিলাদির বিবরণ
✧ ব্যক্তিগত তাকলীদের বর্ণনা
✧ তাকলীদ সম্পর্কে উত্থাপিত আপত্তিসমূহ এবং উহাদের উত্তর
✧ পরিশিষ্ট : কিয়াস সম্পর্কিত বিষয়ের আলােচনা
➠ইলমে গায়ব বা অদৃশ্য জ্ঞানের বর্ণনা
✧ ‘গায়ব’ এর সংজ্ঞা ও এর প্রকারভেদের বর্ণনা।
✧ প্রাসঙ্গিক প্রয়োজনীয় উপকারী বিষয়সমূহের বর্ণনা।
✧ ইলমে গায়ব সম্পর্কিত আক্বীদা ও ইলমে গায়বের বিবিধ পর্যয়ের বর্ণনা
✧ ইলমে গায়েবের প্রমাণ সম্বলিত বর্ণনা।
✧ কুরআনী আয়াত দ্বারা প্রমাণ।
✧ ইলমে গায়ব সম্পর্কিত হাদীছ সমূহের বর্ণনা।
✧ ইলমে গায়ব সম্পর্কে হাদীছ ব্যাখ্যাকারীদের উক্তি সমূহের বর্ণনা।
✧ ইলমে গায়ব সম্পর্কে বিশিষ্ট ওলামায়ে উম্মতের অভিমত।
✧ বিরুদ্ধ মতাবলম্বীদের ভাষ্য থেকে ইলমে গায়েবের সমর্থন।
✧ ইলমে গায়বের সমর্থনে যুক্তি নির্ভর প্রমাণসমূহ ও আওলিয়া কিরামের ইলমে গায়েবের বর্ণনা।
✧ অদৃশ্য জ্ঞান সম্পর্কে উত্থাপিত আপত্তিসমূহের বিবরণ।
✧ প্রাসঙ্গিক কুরআনের আয়াতের বিবরণ।
✧ অদৃশ্য বিষয়াদির জ্ঞানের অস্বীকৃতি সূচক হাদীছ সমূহের বর্ণনা।
✧ ইলমে গায়বের বিপক্ষে ফকীহগণের বিবিধ উদ্ধৃতির বিবরণ।
✧ ইলমে গায়ব সম্পর্কে উত্থাপিত যুক্তি নির্ভর আপত্তি সমূহের বিবরণ।
➠হাযির-নাযির এর আলােচনা
✧ হাযির-নাযির সম্পর্কিত বিষয়ের প্রামান্য বিবরণ।
✧ কুরআনের আয়াতসমূহের দ্বারা প্রমাণ।
✧ হাযির-নাযির বিষয়ক হাদীছ সমূহের বর্ণনা।
✧ ফকীহ ও ওলামায়ে উম্মতের উক্তিসমূহ থেকে হাযির-নাযির এর প্রমাণ।
✧ ভিন্নমতালম্বীদের রচিত পুস্তকসমূহ থেকে হাযির-নাযির এর প্রমাণ।
✧ হাযির-নাযির সংক্রান্ত বিষয় সম্পর্কে উত্থাপিত আপত্তিসমূহের বিবরণ।
➠হুযুর (ﷺ) কে মানুষ কিংবা ভাই বলে আখ্যায়িত করা সম্পর্কে আলােচনা।
✧ হুযুর পুর নূর (ﷺ) এর মানব হওয়ার বিষয়কে কেন্দ্র করে উত্থাপিত প্ৰশ্নসমূহের বিবরণ
➠'ইয়া রাসুলাল্লাহ' বলে আহবান/ শ্লোগান
✧ ' ইয়া রাসূলাল্লাহ ' বলা প্রসঙ্গে উত্থাপিত আপত্তিসমূহের বিবরণ।
✧ আল্লাহর ওলী ও নবীগণ থেকে সাহায্য প্রার্থনা প্রসঙ্গে আলােচনা।
✧ খােদা ভিন্ন অন্য কারাে কাছে সাহায্য প্রার্থনার স্বীকৃত প্রমাণসমূহ।
✧ আল্লাহর ওলীগণ থেকে সাহায্য প্রার্থনার স্বীকৃতিসূচক যুক্তি সঙ্গত প্রমাণাদি।
✧ আল্লাহর ওলীগণের কাছ হতে সাহায্য প্রার্থনা প্রসঙ্গে উথাপিত আপত্তি সমূহের বিবরণ
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيْمِ
الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ خَالِقِ السَّمَوَتِ وَالْاَرْضِيْنَ، وَالصَّلَوةُ وَالسَّلاَمُ عَلَى مَنْ كَانَ نَبِيَّا وَاَدَمُ بَيْنَ الْمَاءِ وَالطِّيْنِ اَجْمَلِ اَلاَجْمَلِيْنِ اَكْمَلِ آلاَكْمَلِيْنَ سَيِّدِنَا مُحَمَّدٍ وَاَلِهِ وَاَصْحَابِهِ وَاَهْلِ بَيْتِهِ اَجْمَعِيْنَ.
ভূমিকা
প্রায় পৌনে চৌদ্দশ’ বছর গত হলো ইসলাম ধর্ম এ পৃথিবীতে এসেছে। এর মধ্যে অনেক বিপদাপদের মুকাবেলা করতে হয়েছে এ পবিত্র ধর্মকে। হুযুর (ﷺ) এর সুশোভিত এ উদ্যানের উপর দিয়ে অনেক প্রলয়ঙ্করী ঝড়-তুফান বয়ে গেছে। কিন্তু খোদার লাখো শুকরিয়া যে, এ বাগান পূর্ববৎ সজীব ও প্রাণবন্ত রয়েছে। ইসলাম-রবি বার বার কালো মেঘে আচ্ছাদিত হয়েছে, কিন্তু এ সূর্য পূর্ববৎ আলোক উজ্জ্বল ও উদ্ভাসিত রয়ে গেছে। উজ্জ্বল থাকবে না বা কেন? আল্লাহ স্বয়ং এ ধর্মের হিফাজতকারী ও সাহায্যকারী।
❏ আল্লাহ পাক ফরমানঃ-
إِنَّا نَحْنُ نَزَّلْنَا الذِّكْرَ وَإِنَّا لَهُ لَحَافِظُونَ
-‘‘আমিই কুরআন অবতীর্ণ করেছি এবং আমিই এটির হিফাযতকারী।’’
{১৪তম পারা, সূরাঃ হুজরাত, আয়াত নংঃ ৯।}
এ ধর্ম কখনো কুখ্যাত ইয়াযীদের শাসনামলে মেঘাচ্ছন্ন হয়েছে, কখনও হাজ্জাজের আমলের নির্যাতনে ধূলিধূসরিত হয়েছে, কখনো খলীফা মামুনের আমলে বাতিলপন্থীদের আক্রমণের শিকার হয়েছে, আবার কখনো তাতারীগণ বীর-বীক্রমে এর উপর প্রচন্ড আঘাত হেনেছে, কখনও খারেজীগণ এর মুকাবেলা করেছে, রাফেজীরাও একে সমূলে বিনাশ করার অপচেষ্টা চালিয়েছে। কিন্তু এটি এমনই এক পাহাড়, যার সম্মুখে কোন শক্তিই টিকে থাকতে পারেনি। এটা যেমনি ছিল তেমনি মজবুত রয়েছে। আল্লাহ তা’আলা একে স্থির ও অটল রাখুন।