বিষয় নং-১৮: রাসূল (ﷺ) ‘র কুরআন পড়তে এবং লিখতে জানা প্রসঙ্গ:
‘‘হাদীসের নামে জালিয়াতি’’ গ্রন্থের ৩০৪-৩০৫ পৃষ্ঠায় লিখেছে রাসূল (ﷺ) কুরআন লিখতে ও পড়তে জানতেন না । এ ভ্রান্ত বিষয়টি প্রমাণ করার জন্য অনেক ব্যর্থ চেষ্টা করেছেন। সে আরও বলেছে, রাসূল (ﷺ) কুরআন লিখতে ও পড়তে জানতেন, এটা নাকি কুরআন বিরোধী কথা। সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! কতবড় দুশমনে রাসূল হলে এ ধরনের কথা লিখতে পারেন!
আমরা সকলেই জানি যে, লিখতে ও পড়তে পারা এ দুটি বিষয়ই ইলমের অন্তর্ভূক্ত। এতে সকলেই একমত। আর রাসূল (ﷺ) কে আল্লাহ্ তা‘য়ালা যাবতীয় সকল ইলম দান করেছেন। কোন ইলমই মহান আল্লাহ্ তাঁর প্রিয় রাসূল (ﷺ) কে শিক্ষা দিতে বা জানাতে বাকি রাখেননি।
❏ রাসূল (ﷺ) এর ইলম সম্পর্কে হাদিস শরীফে বর্ণিত হয়েছে যেমন
عَنْ وَهْبِ بْنِ مُنَبِّهٍ، قَالَ: قَرَأْتُ إِحْدَى وَسَبْعِينَ كِتَابًا فَوَجَدْتُ فِي جَمِيعِهَا أَنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ لَمْ يُعْطِ جَمِيعَ النَّاسِ مِنْ بَدْءِ الدُّنْيَا إِلَى انْقِضَائِهَا مِنَ الْعَقْلِ فِي جَنْبِ عَقْلِ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَّا كَحَبَّةِ رَمْلٍ مِنْ بَيْنِ رِمَالِ جَمِيعِ الدُّنْيَا، وَأَنَّ مُحَمَّدًا ﷺ أَرْجَحُ النَّاسِ عَقْلًا، وَأَفْضَلُهُمْ رَأْيًا. -
-‘‘হযরত ওয়াহাব ইবনে মুনাব্বাহ (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি (আসমানী) ৭১ টি কিতাব পাঠ করেছি। সবগুলো তেই পাঠ করেছি আর বুঝতে পেরেছি যে, আল্লাহ্ তা‘য়ালা সৃষ্টির সূচনালগ্ন থেকে মহা প্রলয় পর্যন্ত সকল মানুষকে যে জ্ঞান বুদ্ধি দান করেছেন তা রাসূলে আকরাম (ﷺ) এর জ্ঞানবুদ্ধির তুলনায় এমন, যে বিশ্বের সমস্ত বালুকণা হল রাসূল (ﷺ) এর ইলম আর বালুকণা সমূহের মধ্যে একটি বালুকণা হল সকলের ইলম। নিঃসন্দেহে মুহাম্মদ (ﷺ) সমগ্র মানব জাতির মধ্যে সর্বাধিক বুদ্ধিমান ও সর্বাধিক বিচার-বিবেচনাশীল।’’ ২৬৩
২৬৩.
ক. ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতি : খাসায়েসুল কোবরা : ১/১১৯ পৃ: হা/৩১৪
খ. ইমাম আবু নুয়াইম ইস্পাহানী : হিলইয়াতুল আউলিয়া : ৪/২৬ পৃ.
গ. আল্লামা ইবনে আসাকির : তারিখে দামেস্ক : ৩/২৪২ পৃ.
উক্ত তাবেয়ী রাসূল (ﷺ) এর ইলমের কিছুটা মত প্রকাশ করেছেন মাত্র। কারণ রাসূল (ﷺ) এর ইলমের পরিমাপ করার ক্ষমতা এক আল্লাহ্ ব্যতীত আর কারও নেই।
❏ মহান রব তা‘য়ালা তার হাবিবকে সব কিছুর জ্ঞান দান করেছেন এবং নিজে তাঁকে কুরআন শিক্ষা দিয়েছেন।
আল্লাহ্ ফরমান-
الرَّحْمَنُ ۞ عَلَّمَ الْقُرْآنَ ۞ خَلَقَ الْإِنْسَانَ ۞عَلَّمَهُ الْبَيَانَ
-‘‘দয়াবান আল্লাহ্ তা‘য়ালা স্বীয় মাহবুবকে কুরআন শিখিয়েছেন, রাসূল (ﷺ) কে সৃষ্টি করেছেন এবং তাকে সৃষ্টির পূর্বাপর সবকিছুর তাৎপর্য বাতলে দিয়েছেন।’’ (সুরা আর-রাহমান, আয়াত, ১-৪)
❏ মহিউস সুন্নাহ, ইমাম বাগভী (رحمة الله) এবং ইমাম ছালাভী (رحمة الله) তাঁরা এ আয়াতের ব্যাখ্যায় তাদের তাফসিরে লিখেন-
وَقَالَ ابْنُ كَيْسَانَ: خَلَقَ الْإِنْسانَ يَعْنِي مُحَمَّدًا صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَّمَهُ الْبَيانَ يَعْنِي بَيَانَ مَا كَانَ وَمَا يَكُونُ لِأَنَّهُ كَانَ يُبِينُ عَنِ الْأَوَّلِينَ وَالْآخَرِينَ وَعَنْ يَوْمِ الدِّينِ.
-‘‘বিখ্যাত মুফাস্সির, তাবেয়ী ইমাম ইবনে কায়সান (رحمة الله) বলেছেন যে, (উক্ত আয়াতে) ইনসান বলতে হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) কে বুঝানোর উদ্দেশ্য। (عَلَّمَهُ الْبَيانَ)-এর মমার্থ হলো, তাঁকে (মুহাম্মদ কে) পূর্ববর্তী ও পরবর্তী যা হবে সব বিষয়ের বিবরণ এবং কিয়ামতের দিন হওয়া পর্যন্ত সব অবহিত করেছেন।’’ ২৬৪
২৬৪ . ইমাম বাগভী : মা‘আলেমুত তানযীল, ৪/৩৩০ পৃ., ইমাম ছালাভী, তাফসিরে ছালাভী, ৯/১৭৭ পৃ.
❏ ইমাম বাগভী তাঁর তাফসিরে লিখেন-
عَلَّمَ الْقُرْآنَ ، قَالَ الْكَلْبِيُّ عَلَّمَ الْقُرْآنَ مُحَمَّدًا.
-‘‘মহান রবের বাণী: তিনি শিক্ষা দিয়েছেন কোরআন, এ আয়াতের তাফসিরে ইমাম কালবী (رحمة الله) বলেন, মহান রব মুহাম্মদ (ﷺ)-কে নিজে কোরআন শিক্ষা দিয়েছেন।’’২৬৫
২৬৫. ইমাম বাগভী, মা‘আলেমুত তানযীল, ৪/৩৩০ পৃ.
❏ তাফসীরে খাযেনে উক্ত আয়াতের তাফসীরে বলা হয়েছে
وقيل أراد بالإنسان محمدا صلّى الله عليه وسلّم علّمه البيان يعني بيان ما يكون وما كان لأنه صلّى الله عليه وسلم ينبئ عن خبر الأولين والآخرين وعن يوم الدين
-‘‘কোন কোন মুফাস্সিরগণ বলেছেন যে, (উক্ত আয়াতে) ইনসান বলতে হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) কে বুঝানোর উদ্দেশ্য। (عَلَّمَهُ الْبَيانَ)-এর মমার্থ হলো, তাঁকে (মুহাম্মদ কে) পূর্ববর্তী ও পরবর্তী যা হবে সব বিষয়ের বিবরণ এবং কিয়ামতের দিন হওয়া পর্যন্ত সব অবহিত করেছেন।’’ ২৬৬
২৬৬. ইমাম খাযেন, তাফসীরে লুবাবুত তা‘বীল, ৪/২২৫ পৃ.
❏ আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী (رحمة الله) তার তাফসীরে রুহুল বায়ানে এ আয়াতের তাফসীরে উল্লেখ করেন যে,
وعلم نبينا عليه السلام القرآن واسرار الالوهية كما قال وعلمك ما لم تكن تعلم
-‘‘আল্লাহ্ তা‘য়ালা আমাদের নবী করীম (ﷺ) কে নিজেই স্বয়ং কুরআন ও স্বীয় প্রভুত্বের রহস্যাবলীর জ্ঞান দান করেছেন, যেমন আল্লাহ্ তা‘য়ালা ফরমায়েছেন, আপনার রব সে সব বিষয় আপনাকে শিখিয়েছেন, যা আপনি জানতেন না।’’ ২৬৭
২৬৭. আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী, তাফসিরে রুহুল বায়ান, ৯/২৮৯ পৃ.
❏ শুধু তাই নয় ইমাম নাসাফী (رحمة الله)-এর লিখিত সুবিখ্যাত তাফসির গ্রন্থ তাফসীরে মাদারিকে উক্ত আয়াতের তাফসীরে বলেন,
{الرحمن علم القرآن خَلَقَ الإنسان} أي الجنس أو آدم أو محمداً عليهما السلام
-‘‘ইনসান তথা মানব জাতি বলতে আদম (عليه السلام) অথবা রাসূল (ﷺ) কে বুঝানো হয়েছে।’’ ২৬৮
২৬৮. ইমাম নাসাফী, তাফসীরে মাদারিকুত তানযিল, ৩/৪০৯ পৃ.
❏ তাফসীরে মা’আলিমুত তানযীলে ইমাম বাগভী (رحمة الله) (ওফাত : ৫১৬ হি.) এ আয়াতের ব্যাখ্যায় লিখেন-
وَقِيلَ:الْإِنْسَانُ هَاهُنَا مُحَمَّدٌ ﷺ ، بَيَانُهُ: وَعَلَّمَكَ مَا لَمْ تَكُنْ تَعْلَمُ
-‘কোন কোন মুফাস্সিরগণ এ আয়াতের الْإِنْسَانُ ইনসান বলতে হুযূর (ﷺ) কে বুঝিয়েছেন এবং بيان বয়ান বলতে এ কথাই বোঝানো হয়েছে যে, তাকে {প্রিয় হাবীব (ﷺ)} কে ঐ সমস্ত বিষয়ের জ্ঞান দান করা হয়েছে, যা তিনি জানতেন না।’’ ২৬৯
২৬৯. ইমাম বাগভী : মা‘আলেমুত তানযীল, ৪/৩৩০ পৃ., দারু ইহইয়াউত তুরাসুল আরাবী, বয়রুত, লেবানন, ইমাম ছালাভী, তাফসিরে ছালাভী, ৯/১৭৭ পৃ.
এমন আরও গ্রহণযোগ্য তাফসীর কারকদের মতামত রয়েছে যা দ্বারা প্রমাণিত হয় যে এমন কোন ইলম নেই যা হুযূর (ﷺ) কে জানানো হয়নি, তিনি যা জানতেন না সব কিছুই আল্লাহ্ তা‘য়ালা তাকে শিক্ষা দিয়েছেন।
❏ আল্লামা আহমদ বিন মুহাম্মদ সাভী আল মালেকী (رحمة الله) (ওফাত : ১২২৩ হিজরী) বলেন,
و قيل هو محمد صلي الله عليه وسلم لانه الانسان الكامل و المراد بالبيان علم ما كان و ما يكون و ما هو كائن
-‘‘বলা হয়েছে, নিশ্চয়ই মুহাম্মদ (ﷺ) হলেন ইনসানে কামেল। আর বয়ান (শিক্ষা দেয়া) দ্বারা যা হয়েছে ও যা হবে এবং এমনকি কিয়ামত পর্যন্ত যা হবে তা আল্লাহ্ রাসূল (ﷺ) কে শিক্ষা দিয়েছেন।’’ ২৭০
২৭০. আল্লামা সাভী আল-মালেকী, তাফসীরে সাভী, ৪/১৫৩ পৃ. মাকতাবায়ে কায়রু, মিশর।
❏ ইমাম আবুল ফারাহ আব্দুর রহমান বিন জাওযী (رحمة الله) (ওফাত : ৫৯৭ হিজরী) বলেন-
أنه محمّد صلّى الله عليه وسلم، علّمه بيان كلّ شيء ما كان وما يكون، قاله ابن كيسان.
-‘‘নিশ্চয়ই হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) কে বয়ান তথা বর্ণনা শিক্ষা দেয়া হয়েছে। তা হল- ইতোপূর্বে যা হয়েছে এবং যা হবে তার সব। এমনটি ইমাম কায়সান (رحمة الله) বলেছেন।’’২৭১
২৭১ .ইমাম ইবনে জওজী : যা’দুল মাসীর ফি উলূমুত তাফসীর : ৪/২০৬ পৃ.
❏ ইমাম আবু হাফস সিরাজুদ্দীন দামেস্কী (ওফাত. ৭৭৫ হি.) কুরআনুল কারীমের সূরা আলাকের ৫ নং আয়াতের তাফসিরে লিখেন-
وقيل: الإنسان - هنا - محمد ﷺ لقوله تعالى: {وَعَلَّمَكَ مَا لَمْ تَكُنْ تَعْلَمُ} [النساء: ১১৩] .
-‘‘কোন কোন মুফাস্সিরগণ এ আয়াতের الْإِنْسَانُ ইনসান বলতে হুযূর (ﷺ) কে বুঝানো হয়েছে এবং بيان বয়ান বলতে এ কথাই বোঝানো হয়েছে যে, তাকে {প্রিয় হাবীব (ﷺ)} কে ঐ সমস্ত বিষয়ের জ্ঞান দান করা হয়েছে, যা তিনি জানতেন না।’’ (তাফসিরে লুবাব ফি উলূমিল কিতাব, ২০/৪১৬ পৃ.)
❏ ইমাম কুরতুবী (رحمة الله) (ওফাত : ৬৬৮ হিজরী) বলেন,
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ أَيْضًا وَابْنِ كَيْسَانَ: الْإِنْسَانُ هَاهُنَا يُرَادَ بِهِ مُحَمَّدٌ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَالْبَيَانُ بَيَانُ الْحَلَالِ مِنَ الْحَرَامِ، وَالْهُدَى مِنَ الضَّلَالِ. وَقِيلَ: مَا كَانَ وَمَا يَكُونُ، لِأَنَّهُ بَيَّنَ عَنِ الْأَوَّلِينَ وَالْآخِرِينَ وَيَوْمِ الدِّينِ.
-‘‘হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) ও ইমাম কায়সান (رحمة الله) বর্ণনা করেন, ইনসান শব্দ দ্বারা সরকারে দু’আলম (ﷺ) কে বুঝানো হয়েছে। আর বয়ান দ্বারা হারাম থেকে হালাল এবং পথভ্রষ্টতা থেকে হেদায়েতকে শিক্ষা দিয়েছেন এবং এখানে এটাও বর্ণনায় এসেছে, যা কিছু হয়েছে ও যা কিছু হবে। এমনকি সৃষ্টির শুরু থেকে বিচার দিবস হাশর পর্যন্ত সবকিছু বর্ণনা রাসূল (ﷺ) কে শিক্ষা দেয়া হয়েছে।’’ ২৭২
২৭২. ইমাম কুরতুবী : তাফসীরে জামিউল আহকামিল কুরআন : ১৭/১৫২ পৃ.
❏ ইমাম ছালাভী (رحمة الله) কুরআনুল কারীমের সূরা আলাকের ৫ নং আয়াতের তাফসিরে লিখেন-
وقيل: الإنسان هاهنا محمد صلى الله عليه وسلم، بيانه وَعَلَّمَكَ ما لَمْ تَكُنْ تَعْلَمُ
-‘‘কোন কোন মুফাস্সিরগণ এ আয়াতের الْإِنْسَانُ ইনসান বলতে হুযূর (ﷺ) কে বুঝানো হয়েছে এবং بيان বয়ান বলতে এ কথাই বোঝানো হয়েছে যে, তাকে {প্রিয় হাবীব (ﷺ)} কে ঐ সমস্ত বিষয়ের জ্ঞান দান করা হয়েছে, যা তিনি জানতেন না।’’ ২৭৩
২৭৩. ইমাম ছালাভী : তাফসিরে ছালাভী, ১০/২৪৫ পৃ.
❏ আল্লামা খরপুর্তী (رحمة الله) শরহে কাসীদায়ে বুরদায় উল্লেখ করেন,
وواقعون لديه عند حدهم وفى حديث يروى عن معاوية انه كان يكتب بين يديه عليه السلام فقال له الق الدواة وخرف القلم واقم الباء وفرق السين ولا تعور الميم مع انه عليه السلام لم يكتب ولم يقرء من كتاب الاولين-
-‘‘হযরত আমীরে মুয়াবিয়া (رضي الله عنه) থেকে হাদিস বর্ণিত আছে যে, তিনি হুযূর (ﷺ) এর সামনেই লিখার কাজ করতেন। রাসূল (ﷺ) তাকে বলছিলেন, দোয়াত এভাবে রাখ, কলমকে ঘুরাও, ‘বা’ অক্ষরকে সোজা কর ‘‘সীন’’ অক্ষরটি পৃথক কর এবং ‘‘মীম’’ কে বাঁকা করো অথচ, হুযূর (ﷺ) (দুনিয়াবি) লিখার পদ্ধতি কারো কাছ থেকে কোন দিন শিখেন নি, পূর্ববতীদের কোন কিতাবও পড়েন নি।’’
❏ বিশ্ববিখ্যাত তাফসীরকারক আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী (رحمة الله) তাফসীরে রুহুল বায়ানে সূরা আনকাবুতের ৪৮ নং আয়াতের তাফসীরে বলেন,
كان عليه السلام يعلم الخطوط ويخبر عنها
-‘‘হুযূর (ﷺ) লিখতে জানতেন এবং সে বিষয়ে অপরকেও জ্ঞাত করতেন।’’ ২৭৪
২৭৪. আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী: তাফসীরে রুহুল বায়ান : ৬/৪৮০ পৃ.
❏ মিশকাতুল মাসাবীহ শরীফে বাবুল ওফাতুন্নাবী (ﷺ) অধ্যায়ে বুখারী, মুসলিম শরীফের বরাতে অনেক দীর্ঘ হাদিস উল্লেখ আছে এভাবে-
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ ؓ قَالَ: لَمَّا حُضِرَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ وَفِي الْبَيْتِ رِجَالٌ فِيهِمْ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ قَالَ النَّبِيُّ ﷺ : هَلُمُّوا أَكْتُبْ لَكُمْ كِتَابًا لَنْ تَضِلُّوا بَعْدَهُ . فَقَالَ عُمَرَ: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ ﷺ قَدْ غَلَبَ عَلَيْهِ الْوَجَعُ وَعِنْدَكُمُ الْقُرْآنُ حَسْبُكُمْ كِتَابُ اللَّهِ فَاخْتَلَفَ أَهْلُ الْبَيْتِ وَاخْتَصَمُوا فَمِنْهُمْ مَنْ يَقُولُ: قَرِّبُوا يَكْتُبْ لَكُمْ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ. وَمِنْهُم يَقُولُ مَا قَالَ عُمَرُ. فَلَمَّا أَكْثَرُوا اللَّغَطَ وَالِاخْتِلَافَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: قُومُوا عَنِّي . قَالَ عُبَيْدُ اللَّهِ: فَكَانَ ابنُ عباسٍ يَقُول: إِن الرزيئة كل الرزيئة مَا حَالَ بَيْنَ رَسُولِ اللَّهِ ﷺ وَبَيَّنَ أَنْ يَكْتُبَ لَهُمْ ذَلِكَ الْكِتَابَ ----------- الخ
-‘‘হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হুযূর পাক (ﷺ) এর ইন্তিকালের সময় নিকটবর্তী হওয়ায় তার গৃহে বহুলোক উপস্থিত ছিলেন। তাদের মধ্যে হযরত ওমর ইবনে খাত্তাব (رضي الله عنه) ও ছিলেন। এক সময় হুযূর (ﷺ) বললেন, আস আমি তোমাদের জন্য একটি স্মরণ লিপিকা লিখে দিয়ে যাই। যেন তোমরা এর পর কখনও পথভ্রষ্ট না হও। তখন হযরত ওমর (رضي الله عنه) বললেন, হুযুরে পাক (ﷺ) এর প্রবল রোগযন্ত্রণায় তাকে কোন রূপ কষ্ট দেয়া ঠিক নয়। আর তোমাদের নিকট কুরআনে পাক রয়েছে, সুতরাং আল্লাহর কুরআনই তোমাদের জন্য যথেষ্ট। ব্যাপারটি গৃহে উপস্থিত লোকজনের মধ্যে মতবিরোধ সৃষ্টি করল এবং তারা পরস্পর বিতর্কে লিপ্ত হয়ে পড়লেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ বললেন যে, কাগজ কলম আন যেন হুযূর পাক (ﷺ) তোমাদের জন্য কিছু লিখে যান। আবার কেউ কেউ সে কথা বললেন, যা হযরত ওমর (رضي الله عنه) বলেছিলেন -----------।’’ ২৭৫
২৭৫.
ক. ইমাম বুখারী : আস্ সহীহ : ৮/১৩ পৃ. হাদিস, ৪৪৩২
খ. ইমাম মুসলিম : আস সহীহ: ৩/১২৫৭ পৃ. হা/১৬৩৭
গ. ইমাম খতিব তিবরিযী : মিশকাতুল মাসাবীহ : ৪/৪০৪ পৃ. হা/৫৯৬৬
ঘ. ইমাম আহমদ, আল-মুসনাদ, ১/১২২ পৃ.
দেখুন উক্ত হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হলো রাসূল (ﷺ) লিখতে জানতেন, এই জন্যই রাসূল (ﷺ) বললেন যে, তোমরা খাতা কলম নিয়ে আস আমি তোমাদের লিখে দিয়ে যাই। আর এটা বুখারী মুসলিম শরীফের হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। হাদিসে রাসূল (ﷺ) এ কথা বলেন নাই যে, তোমরা লিখ আমি বলি বরং রাসূল (ﷺ) বলেছেন তোমরা কাগজ কলম নিয়ে আস আমি লিখে দিয়ে যাই। এখন উক্ত সহীহ বুখারী ও মুসলিম শরীফের হাদিসকে উপেক্ষা করে যারা মনগড়া কথা বলবে নিঃসন্দেহে তারা কী পথভ্রষ্ট নয়?