বনূ তামিম গোত্র


মধ্য আরব অঞ্চলের সর্বাধিক পরিচিত গোত্র হলো বনূ তামিম। প্রধান প্রধান আরব গোত্রগুলোর প্রশংসাসূচক অনেক হাদীস বিদ্যমান, যার মাত্রা ব্যক্ত করতে নিম্নের কয়েকটি উদাহরণের তালিকা পেশ করা হলো:


❏ হাদিস 15:

    

রাসূলে খোদা (ﷺ) ইরশাদ ফরমান, “ইয়া আল্লাহ, ‘আহমাস’ গোত্র ও এর ঘোড়াগুলো এবং মানুষজনকে সাত গুণ (আপনার) আশীর্বাদধন্য করুন।” [১৪.]

১৪. ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল; আল-হায়তামী কৃত ‘মজমা’, ১০:৪৯ আল-হায়তামীর মতে এর বর্ণনাকারীরা সবাই আস্থাভাজন। 


❏ হাদিস 16:

    

হযরত গালিব বিন আবজুর (رضي الله عنه) বলেন,


ذَكَرْتُ قَيْسَ عِنْدَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَرَحِمَ اللهُ قَيْسًا، رَحِمَ اللهُ قَيْسًا قِيلَ: يَا رَسُولَ اللهِ، تَرَحَّمُ عَلَى قَيْسٍ؟ قَالَ:نَعَمْ إِنَّهُ كَانَ عَلَى دَيْنِ أَبِي إِسْمَاعِيلَ بْنِ إِبْرَاهِيمَ خَلِيلِ اللهِ، يَا قَيْسُ حَيِّ يَمَنًا، يَا يَمَنُ حَيِّ قَيْسًا، إِنَّ قَيْسًا فُرْسَانُ اللهِ فِي الْأَرْضِ

-              

“আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর উপস্থিতিতে ‘কায়স’ গোত্রের কথা উল্লেখ করলে তিনি ইরশাদ ফরমান, ‘আল্লাহতা’লা কায়স গোত্রের প্রতি তাঁর রহমত নাযেল করুন।’[১৫.] 

১৫. আত্ তাবারানী : আল মু‘জামুল কাবীর, গালিব ইবন আবজুর আল মুযনী ১৮:২৬৫।


তাঁকে জিজ্ঞেস করা হয়, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ (ﷺ)! আপনি কি কায়স গোত্রের জন্যে আল্লাহর রহমত কামনা করছেন?’ তিনি উত্তর দেন, ‘হ্যাঁ, সে আল্লাহর পেয়ারা ও আমাদের পূর্বপুরুষ হযরত ইসমাঈল ইবনে ইবরাহীম আলাইহিস সালামের ধর্ম অনুসরণ করেছে। কায়স, আমাদের ইয়েমেনকে অভিবাদন জানাও! ইয়েমেন, আমাদের কায়সকে অভিবাদন জানাও! কায়স হলো পৃথিবীর বুকে আল্লাহতা’লার অশ্বারোহী বাহিনী’।” 


❏ হাদিস 17:

    

হযরত আবূ হোরায়রা (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন যে মহানবী (ﷺ) ইরশাদ ফরমান,

نِعْمَ الْقَوْمُ الأَزْدُ ، طَيِّبَةٌ أَفْوَاهُهُمْ ، بَرَّةٌ أَيْمَانُهُمْ ، نَقِيَّةٌ قُلُوبُهُمْ.

“আযদ গোত্রের মানুষেরা কতোই না উত্তম! মিষ্টভাষী, ওয়াদা পূরণকারী ও নির্মল (পরিষ্কার) অন্তর!”[১৬.]

১৬ . আহমদ : আল মুসনাদ, মুসনাদু আবী হুরায়রা, ২:৩৫১ হাদীস নং ৮৬০০।


❏ হাদিস 18:

 

হযরত আনাস বিন মালেক (رضي الله عنه) বলেন,

إِنْ لَمْ نَكُنْ مِنَ الأَزْدِ فَلَسْنَا مِنَ النَّاسِ.

“আমরা যদি আযদ গোত্র হতে (আবির্ভূত) না হই, তবে আমরা মনুষ্য জাতি হতে নই।”[১৭.]

১৭. তিরমিযী : আস সুনান, বাবু ফি ফাদ্বলিল ইয়ামান, ৬:২১৯ হাদীস নং ৩৯৩৮।


❏ হাদিস 19:

 

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) বলেন,


شَهِدْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَدْعُو لِهَذَا الْحَيِّ مِنَ النَّخَعِ ، أَوْ قَالَ - يُثْنِي عَلَيْهِمْ ، حَتَّى تَمَنَّيْتُ أَنِّي رَجُلٌ مِنْهُمْ.


“আমি প্রত্যক্ষ করি যে মহানবী (ﷺ) ‘নাখ’ গোত্রের জন্যে দোয়া করেন।” অথবা তিনি (ইবনে মাসউদ) বলেন, “হুযূর পাক (ﷺ) তাদের এমন প্রশংসা করেন যে আমার ইচ্ছে হচ্ছিল আমি ’নাখ’ গোত্রের সদস্য হই।”[১৮.]

১৮. আহমদ : আল মুসনাদ, মুসনাদু আব্দিল্লাহ ইব্ন মাসঊদ, ৬:৩৭৬ হাদীস নং ৩৮২৬।


❏ হাদিস 20:

 

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আল-আস বর্ণনা করেন; তিনি বলেন,

إِنَّ هَذَا الأَمْرَ فِي قُرَيْشٍ لاَ يُعَادِيهِمْ أَحَدٌ، إِلَّا كَبَّهُ اللَّهُ عَلَى وَجْهِهِ، مَا أَقَامُوا الدِّينَ

“আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)কে বলতে শুনেছি ‘এই খেলাফত থাকবে কুরাইশ গোত্রের অধীন। তারা যতোদিন ধর্ম কায়েম রাখবে, কেউ তাদের বিরোধিতা করলে আল্লাহ তাকে মুখ উপুড় করে (মাটিতে) ছুঁড়ে ফেলে দেবেন’।”[১৯.]

১৯. বুখারী : আস সহীহ, বাবু মানাকিবি কুরাঈশ, ৪:১৭৯ হাদীস নং ৩৫০১।

(ক) দারেমী : আস সুনান, ৩:১৬৩৯ হাদীস নং ২৫৬৩।

(খ) নাসায়ী : আস সুনান, ৮:৮১ হাদীস নং ৮৬৯৭।

(গ) ত্বাবরানী : মু‘জামুল কাবীর, ১৯:৩৩৮।

(ঘ) ইব্ন হিব্বান : আস সহীহ, ১৪:১৬১ হাদীস নং ৬২৬৫।

(ঙ) বাগাবী : শরহুস সুন্নাহ, ১৪:৬১ হাদীস নং ৩৮৪৯।


যে হাদীসে দৃশ্যতঃ তামিম গোত্রকে প্রশংসা করা হয়েছে, তা ব্যতিক্রমী নয়, এবং তাতে অন্যান্য গোত্রের ওপর তামিমের শ্রেষ্ঠত্ব কোনোভাবে কল্পনাও করা যায় না। বস্তুতঃ বিভিন্ন গোত্রের গুণের প্রশংসাসূচক এই বিশাল হাদীস সংকলনে কেবল একটিমাত্র তাৎপর্যপূর্ণ বর্ণনায় তামিম গোত্রের প্রশংসা পাওয়া যায়। বর্ণনাটি নিম্নরূপ: 


❏ হাদিস 21:


হযরত আবূ হোরায়রা (رضي الله عنه) বলেন,

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: لاَ أَزَالُ أُحِبُّ بَنِي تَمِيمٍ بَعْدَ ثَلاَثٍ سَمِعْتُهُ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُهَا فِيهِمْ: ্রهُمْ أَشَدُّ أُمَّتِي عَلَى الدَّجَّالِ وَكَانَتْ فِيهِمْ سَبِيَّةٌ عِنْدَ عَائِشَةَ، فَقَالَ: ্রأَعْتِقِيهَا، فَإِنَّهَا مِنْ وَلَدِ إِسْمَاعِيلَ ، وَجَاءَتْ صَدَقَاتُهُمْ، فَقَالَ: " هَذِهِ صَدَقَاتُ قَوْمٍ، أَوْ: قَوْمِي "

“মহানবী (ﷺ) এর কাছ থেকে তামিম গোত্র সম্পর্কে তিনটি বিষয় শোনার পর আমি তাদেরকে পছন্দ করি। তিনি ইরশাদ ফরমান, ‘তামিম গোত্র আমার উম্মতের মধ্যে দাজ্জালের বিরুদ্ধে সবচেয়ে কঠোর হবে।’ তাদের একজন আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহার মালিকানাধীন বন্দী ছিল। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, ‘এই নারীকে মুক্ত করে দাও, কেননা সে হযরত ইসমাঈল (আ:)-এর বংশধর।’ আর যখন তামিম গোত্র নিজেদের যাকাত নিয়ে আসে, তখন হুযূর পূর নূর (ﷺ) ইরশাদ ফরমান, ‘এটি একটি জাতির যাকাত’; অথবা (বর্ণনান্তরে), ‘আমার জাতির (যাকাত)’।”[২০.]

২০ . বুখারী : আস সহীহ, ৩:১৪৮ হাদীস নং ২৫৪৩।

(ক) মুসলিম : আস সহীহ, ৪:১৯৫৭ হাদীস নং ২৫২৫।

(খ) ইব্ন হিব্বান : আস সহীহ, ১৫:২১৯ হাদীস নং ৬৮০৮।

(ঙ) বাগাবী : শরহুস সুন্নাহ, ১৪:৬৬ হাদীস নং ৩৮৫৭। 


এই হাদীস স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত করে যে দাজ্জালের বিরুদ্ধে শেষ ফয়সালাকারী যুদ্ধে বনূ তামিম গোত্রের কঠোরতাকে ইসলামের বিপক্ষে নয়, বরং পক্ষে ব্যবহার করা হবে; আর এটি প্রশ্নাতীতভাবে একটি গুণ। দ্বিতীয় বিষয়টি অপেক্ষাকৃত কম তাৎপর্যপূর্ণ, যেহেতু সকল আরব গোত্রই হযরত ইসমাঈল আলাইহিস সালামের বংশধর; তৃতীয় বিষয়টির বিভিন্ন বর্ণনা দ্ব্যর্থহীনভাবে এর তাৎপর্য তুলে ধরতে অক্ষম। এমন কি এই বিষয়ের সবচেয়ে ইতিবাচক ব্যাখ্যায়ও আমরা এর বাইরে সিদ্ধান্ত নিতে পারি না যে মহানবী (ﷺ) ওই গোত্রের প্রতি ততোক্ষণ-ই সন্তুষ্ট ছিলেন, যতোক্ষণ তারা যাকাত দিচ্ছিল। অতঃপর আমরা দেখতে পাবো যে তাদের যাকাত দানের ব্যাপারটি ক্ষণস্থায়ী হিসেবেই প্রমাণিত হয়।


তামিম গোত্রের স্পষ্ট সমালোচনা বিধৃত হয়েছে এমন হাদীসের সংখ্যা আরও অনেক বেশি। নজদীপন্থী আত্মপক্ষ সমর্থনকারীরা সাধারণতঃ এ সব হাদীসকে অগ্রাহ্য করে; কিন্তু ঐতিহ্যবাহী ইসলামী বিদ্যাচর্চা বা গবেষণা এটি আমাদের কাছে দাবি করে যে কেবল কিছু সংখ্যক নয়, বরং এতদসংক্রান্ত সমস্ত প্রামাণ্য দলিল-ই বিবেচনায় আনা জরুরি এবং কোনো মীমাংসায় পৌঁছার আগে এগুলোকে সামগ্রিকভাবে গ্রহণ করা প্রয়োজন। আর তামিম গোত্র সম্পর্কে বিপুল সংখ্যক সমালোচনামূলক দলিলকে বিবেচনায় নিলে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হবে যে মহানবী (ﷺ) ও সালাফ আস্ সালেহীন (প্রাথমিক যুগের পুণ্যাত্মা)-বৃন্দ এই গোত্রকে বড় ধরনের সমস্যা হিসেবে দেখতেন।


❏ আয়াতঃ


বনূ তামিম গোত্রভুক্ত লোকদের সম্পর্কে প্রাথমিক ইঙ্গিত দিয়েছেন স্বয়ং খোদাতা’লা। তিনি তাঁরই পাক কালামে ইরশাদ ফরমান:

 إِنَّ الَّذِينَ يُنَادُونَكَ مِنْ وَرَاءِ الْحُجُرَاتِ أَكْثَرُهُمْ لَا يَعْقِلُونَ

“নিশ্চয় ওই সব লোক যারা আপনাকে হুজরা (প্রকোষ্ঠ)-সমূহের বাইরে থেকে আহ্বান করে, তাদের মধ্যে অধিকাংশই নির্বোধ।”[২১.]  

২১. আল কুরআন : আল হুজুরাত, ৪:৪৯।


এ আয়াতের ‘সাবাব আন্ নুযূল’ বা অবতীর্ণ হবার কারণ নিচে বর্ণনা করা হলো:


❏ হাদিস 22:


“হুজূরাত তথা প্রকোষ্ঠসমূহ ছিল দেয়াল-ঘেরা কক্ষ। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর প্রত্যেক স্ত্রীর একটি করে কক্ষ ছিল। এই আয়াতটি নাযেল হয় যখন বনূ তামিম গোত্রের একটি প্রতিনিধিদল মহানবী (ﷺ) এর কাছে আসে। তারা মসজিদে প্রবেশ করে এবং ওই প্রকোষ্ঠগুলোর সামনে এসে দাঁড়ায়। অতঃপর উচ্চস্বরে ডেকে বলে, ‘ওহে মোহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)! আমাদের কাছে বেরিয়ে আসুন!’ এই কাজটি রূঢ়, স্থূল ও বেয়াদবিপূর্ণ ছিল। রাসূলে করীম (ﷺ) কিছুক্ষণ অপেক্ষা করেন এবং তারপর তাদের কাছে বেরিয়ে আসেন। আল-আক্করা’ ইবনে হাবিস নামে পরিচিত তাদের একজন বলে, ‘হে মোহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)। আমার প্রশংসা হলো একটি অলংকার, আর আমার অভিযুক্তকরণ লজ্জা বয়ে আনে।’ এমতাবস্থায় মহানবী (ﷺ) প্রত্যুত্তর দেন, ‘তোমার জন্যে আফসোস! এটি-ই আল্লাহর পক্ষ থেকে তোমার পাওনা’।”[২২.]

২২. ইমাম মোহাম্মদ ইবনে আহমদ ইবনে জুযাঈ কৃত ‘আল-তাশিল’, বৈরুত ১৪০৩ হিজরী সংস্করণ, ৭০২ পৃষ্ঠা; অন্যান্য তাফসীরগ্রন্থও দেখুন; এছাড়া ইবনে হাযম প্রণীত ‘জামহারাত আনসাব আল-‘আরব’, তামিম অধ্যায়,, ২০৮ পৃষ্ঠা,  কায়রো ১৩৮২ হিজরী সংস্করণ দ্রষ্টব্য। অনুবাদকের নোট: মুফতী আহমদ ইয়ার খান নঈমী রচিত তাফসীরে ‘নূরুল এরফান’-গ্রন্থেও তামিম গোত্রের কথা উল্লেখিত হয়েছে; বঙ্গানুবাদক - মওলানা এম, এ, মান্নান, চট্টগ্রাম।


আল-কুরআনের এই সমালোচনার পাশাপাশি বিপুল পরিমাণ হাদীসে উম্মতের প্রতি এই গোত্র সম্পর্কে উপদেশবাণী পেশ করা হয়েছে। যেহেতু রাসূলে পাক (ﷺ) এর মৌন সমর্থনও হাদীস (সুন্নাতে তাকরীরী) হিসেবে পরিগণিত, সেহেতু আমরা নিম্নের ঘটনা দিয়ে শুরু করতে পারি।


❏ হাদিস 23:


এটি হযরত হাসসান ইবনে সাবেত (رضي الله عنه)'র একটি প্রসিদ্ধ কবিতা। তামিম গোত্রের লোকেরা শেষদিকে ইসলাম গ্রহণ করে, যা তারা অনেক বিরোধিতার পর করেছিল; বছরটি ছিল ‘আম আল-উফূদ’ তথা প্রতিনিধিদলের বছর, হিজরী নবম সাল। ফলে তামিম গোত্রীয়রা ‘সাবিকা’ তথা ইসলামে অগ্রবর্তী বা পূর্ববর্তী হবার বৈশিষ্ট্যশূন্য ছিল। মহানবী (ﷺ) এর দরবারে সবশেষে এসে তারা তাঁর সাথে একটি প্রকাশ্য বাহাস বা বিতর্ক দাবি করে বসে। এমতাবস্থায় হুযূর পাক (ﷺ) হযরত হাসসান বিন সাবেত (رضي الله عنه)কে তামিম গোত্র সম্পর্কে তাদের অন্তঃসারশূন্য দর্পচূর্ণ করার জন্যে নিয়োগ করেন। হযরত হাসসান (رضي الله عنه)'র এই কাব্য, যা তামিম গোত্রকে সম্পূর্ণভাবে পরাভূত করে এবং তাদের নিচুতা ও হীনতাকে ফুটিয়ে তোলে, তা বনূ তামিম গোত্র সম্পর্কে মহানবী (ﷺ)-এর নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলনের প্রমাণ বলেই বিবেচনা করা যায়; কেননা, এই অভিযোগ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর উপস্থিতিতেই উত্থাপিত হয়, এবং এর প্রতি তাঁর সমালোচনার কোনো প্রামাণিক দলিল বিদ্যমান নেই।[২৩.]

২৩. দেওয়ানে হাসসান ইবনে সাবেত, বৈরুত, ১৯৬৬ইং, ৪৪০পৃষ্ঠা; পুরো ঘটনার বৃত্তান্ত জানার জন্যে একই গ্রন্থে বারকুকীর ব্যাখ্যা দেখুন; আরও দেখুন ইবনে হিশাম কৃত ‘সীরাহ’, Guillaume অনূদিত সংস্করণ, ৬৩১ পৃষ্ঠা।

 

❏ হাদিস 24:


বনূ তামিম গোত্র সম্পর্কে অপর এক রওয়ায়াতে আছে:

عَنْ عِمْرَانَ بْنِ حُصَيْنٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، قَالَ: جَاءَ نَفَرٌ مِنْ بَنِي تَمِيمٍ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ: يَا بَنِي تَمِيمٍ أَبْشِرُوا قَالُوا: بَشَّرْتَنَا فَأَعْطِنَا، فَتَغَيَّرَ وَجْهُهُ، فَجَاءَهُ أَهْلُ اليَمَنِ، فَقَالَ: يَا أَهْلَ اليَمَنِ، اقْبَلُوا البُشْرَى إِذْ لَمْ يَقْبَلْهَا بَنُو تَمِيمٍ ، قَالُوا: قَبِلْنَا، فَأَخَذَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُحَدِّثُ بَدْءَ الخَلْقِ وَالعَرْشِ          

হযরত ইমরান ইবনে হুসাইন (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন যে তামিম গোত্রের এক প্রতিনিধিদল রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর দরবারে এলে তিনি তাদের উদ্দেশ্যে ইরশাদ ফরমান, “ওহে তামিম গোত্র! শুভসংবাদ গ্রহণ করো!” তারা উত্তর দেয়, “আপনি আমাদেরকে সুসংবাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন; অতএব, আমাদেরকে কিছু (অর্থ-কড়ি) দিন!” এমতাবস্থায় হুযূর করীম (ﷺ) এর চেহারা মোবারকে পরিবর্তন ঘটে। ঠিক সে সময় কয়েকজন ইয়েমেনী তাঁর দরবারে উপস্থিত হন, আর তিনি তাঁদেরকে বলেন, “হে ইয়েমেনবাসী! শুভসংবাদ গ্রহণ করো, যদিও তামিম গোত্র তা গ্রহণ করে নি!” অতঃপর ইয়েমেনীরা বলেন, “আমরা গ্রহণ করলাম।” আর মহানবী (ﷺ) সৃষ্টির প্রারম্ভ ও আরশ সম্পর্কে আলোচনা শুরু করেন।[২৪.]

২৪. বুখারী : আস সহীহ, বাবু মা জা‘আ ফি কাওলিল্লাহি, ৪:১০৫ হাদীস নং ৩১৯০।


কুরআন মজীদ ও হাদীস শরীফে বিধৃত তামিম গোত্রের রূঢ় ও উচ্ছৃঙ্খল মন-মানসিকতা মূর্তি-পূজারী কুরাইশ বংশীয় নেতা আবূ জাহেলের ব্যক্তিত্বসংশ্লিষ্ট একটি কৌতূহলোদ্দীপক বিষয়ের প্রতি আলোকপাত করে। মহানবী (ﷺ) এর প্রতি অন্ধ আক্রোশ পোষণকারী আবূ জাহেলের শৈশব নিশ্চয় তামিমী ভাবধারায় গড়ে ওঠে। তার মাতা আসমা বিনতে মুখাররিবা তামিম গোত্রভুক্ত ছিল।[২৫.]

২৫. আল-জুমাহী কৃত ‘তাবাকাত ফুহূল আল-শুয়ারা’, সম্পাদক মোহাম্মদ শাকির, কায়রো, ১৯৫২ সংস্করণ, ১২৩ পৃষ্ঠা।


وَكَانَ لِأَبِيْ جَهْلٍ مِنَ الْوَلَدِ: أَبُوْ عَلْقَمَةَ، قُتِلَ بِالْيَمَنْ، وَاِسْمُهُ زَرَارَةَ؛ وَأَبْوْ حَاجِبٍ، وَاِسْمُهُ تَمِيْمٌ وَأُمُّهُمَا: بِنْتُ عُمَيْرٍ بْنِ مَعْبَد ْبْنُ زَرَارَةَ بْنُ عُدْسٍ.


আবূ জাহেল বিয়ে করে উমাইর ইবনে মা’বাদ আল-তামিমীর কন্যাকে, যার গর্ভে তার এক পুত্র সন্তান হয় এবং নাম রাখা হয় তামিম, কারণটি যার সহজেই অনুমেয়।[২৬.]

২৬ . মুসআব ইবনে আব্দিল্লাহ প্রণীত ‘নসব কুরাইশ’, কায়রো, ১৯৫৩, ৩১২ পৃষ্ঠা।


হাদীসশাস্ত্রে তামিমীদের যে বৈশিষ্ট্য বার বার উল্লেখ করা হয়েছে, তা হলো তাদের অনাকাঙ্ক্ষিত বাড়াবাড়ি। তারা যখন অবশেষে ইসলাম গ্রহণ করে, তখন তারা এমন উগ্র ধার্মিকতার সাথে জড়ায় যা উপলব্ধির পরিবর্তে সাদামাটা ও অনমনীয় আনুগত্যের দাবি পেশ করে; আর যা ঘন ঘন ধর্মের প্রতিষ্ঠিত কর্তৃত্বকে অমান্য করে। 


❏ হাদিস 25:


ইমাম মুসলিম (رحمة الله) হযরত আবদুল্লাহ ইবনে শাকিক (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন:


خَطَبَنَا ابْنُ عَبَّاسٍ يَوْمًا بَعْدَ الْعَصْرِ حَتَّى غَرَبَتِ الشَّمْسُ، وَبَدَتِ النُّجُومُ، وَجَعَلَ النَّاسُ يَقُولُونَ: الصَّلَاةَ الصَّلَاةَ، قَالَ: فَجَاءَهُ رَجُلٌ مِنْ بَنِي تَمِيمٍ، لَا يَفْتُرُ، وَلَا يَنْثَنِي: الصَّلَاةَ الصَّلَاةَ، فَقَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ: أَتُعَلِّمُنِي بِالسُّنَّةِ؟ لَا أُمَّ لَكَ


“হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) একবার আমাদেরকে ধর্মশিক্ষা দিচ্ছিলেন আসর নামাযের বা’দে। অতঃপর সূর্য ডুবে যায় এবং আকাশে তারা দৃশ্যমান হয়। মানুষেরা বলতে আরম্ভ করে, ‘নামায!’ ’নামায!’ বনূ তামিম গোত্রের এক লোক তাঁর কাছে এসে জোর দিয়ে বার বার বলে, ‘নামায!’ ‘নামায!’ এমতাবস্থায় হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) জবাব দেন, ‘তুমি কি আমায় সুন্নাহ শেখাতে এসেছ, হতভাগা কোথাকার’?”[২৭.]

২৭ . মুসলিম : আস সহীহ, বাবু জামউ বায়নাস সালাতাইন, ১:৪৯১।

(ক) বায়হাকী : শু‘য়াবুল ঈমান, ৩:২৩৯ হাদীস নং ৫৫৫৩।

Top