সপ্তদশ অধ্যায়


আযান এবং ইক্বামাত


আযানের ক্ষেত্রে পাঁচটি সুন্নাত রয়েছে যা ইবনুল ক্বাইয়্যুম তাঁর “যাদ আল মা‘আদ” কিতাব -এ উল্লেখ করেছেনঃ


 ১। যে ব্যক্তি আযান শুনবে মুয়াজ্জিন যা বলে সে তাই পুনরাবৃত্তি করবে শুধু

حَيَّ عَلَى الصَّلاَةِ, حَيَّ عَلَى الْفَلاَحِ

এর জবাবে বলবেঃ

لَا حَوْلَ وَلا قُوَّةَ إِلا بِاللَّهِ


উচ্চারণঃ- লা হাওলা ওয়া লা কুওয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহি।


অর্থঃ ‘আল্লাহ ব্যতীত কোন শক্তি এবং ক্ষমতা নেই।’


حَدَّثَنَا إِسْحَاقُ بْنُ رَاهَوَيْهِ، قَالَ حَدَّثَنَا وَهْبُ بْنُ جَرِيرٍ، قَالَ حَدَّثَنَا هِشَامٌ، عَنْ يَحْيَى، نَحْوَهُ‏.‏ قَالَ يَحْيَى وَحَدَّثَنِي بَعْضُ، إِخْوَانِنَا أَنَّهُ قَالَ لَمَّا قَالَ حَىَّ عَلَى الصَّلاَةِ‏.‏ قَالَ لاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللَّهِ‏.‏ وَقَالَ هَكَذَا سَمِعْنَا نَبِيَّكُمْ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ‏.‏


ইয়াহ‌ইয়া رحمة الله عليه  থেকে বর্ণিতঃ:


ইয়াহইয়া رحمة الله বলেছেন, আমার কোনো ভাই আমার নিকট বর্ণনা করেছেন যে, মুআয্যিন যখন حَيَّ عَلَى الصَّلاَةِ বলল, তখন তিনি (মু‘আবিয়াহ رضي الله عنه  لاَحَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللهِবললেন। অতঃপর তিনি বললেন, তোমাদের নাবী ﷺ -কে আমরা এরূপ বলতে শুনেছি। 


(সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৬১৩, ৬১২) (ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৫৮৬)


 এই সুন্নাতর উপকারিতা হচ্ছে এটি জান্নাতকে অপরিহার্য করে দেয় যা মুসলিমের বর্ণনায় উল্লেখ করা হয়েছে।



 ২। আযান শোনার পরে বলবেঃ


أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ رَضِيتُ بِاللَّهِ رَبًّا وَبِمُحَمَّدٍ رَسُولًا وَبِالْإِسْلَامِ دِينًا .


উচ্চারণঃ- আশহাদু আন লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহু ওয়া আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহু রাদ্বিতু বিল্লাহি রাব্বা ওয়া বিমুহাম্মাদির রাসুলা ওয়া বিল ইসলামি দ্বিনা।


অর্থঃ ‘আমি স্বাক্ষ্য দিচ্ছি যে আল্লাহ ছাড়া ইবাদতযোগ্য কোন ইলাহ নেই, তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই। এবং আমি আরও স্বাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ ﷺ তাঁর বান্দা এবং রাসুল। আমি আল্লাহ ﷻ-কে রব এবং মুহাম্মদ ﷺকে রাসুল হিসেবে এবং ইসলামকে দ্বীন হিসেবে নিয়ে সন্তুষ্ট।’ 


وَحَدَّثَنِي مُحَمَّدُ بْنُ أَحْمَدَ بْنِ أَبِي خَلَفٍ، حَدَّثَنَا رَوْحٌ، حَدَّثَنَا ابْنُ جُرَيْجٍ، قَالَ أَخْبَرَنِي أَبُو الزُّبَيْرِ، أَنَّهُ سَمِعَ جَابِرَ بْنَ عَبْدِ اللَّهِ، يَقُولُ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ لِكُلِّ نَبِيٍّ دَعْوَةٌ قَدْ دَعَا بِهَا فِي أُمَّتِهِ وَخَبَأْتُ دَعْوَتِي شَفَاعَةً لأُمَّتِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ ‏"‏ ‏.‏


মুহাম্মাদ ইবনু আহমাদ ইবনু আবূ খালাফ رحمة الله عليه  থেকে বর্ণিতঃ:


রাসুলুল্লাহ‌ ﷺ  ইরশাদ করেন, প্রত্যেক নাবীকে একটি গ্রহণীয় বিশেষ দু’আর অনুমতি দেয়া হয়েছে। সবাই তাঁদের দু’আ আপন উম্মাতের কল্যাণের জন্য করে ফেলেছেন, তবে আমি আমার দু’আটি কিয়ামাত দিবসে আমার উম্মাতের শাফা’আতের জন্য গোপনে অবশিষ্ট রেখে দিয়েছি। 


(সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৩৮৬) (ই.ফা. ৩৯২)

  

 এই সুন্নাতর উপকারিতা হচ্ছে ঐ ব্যক্তির গুনাহ সমূহ ক্ষমা করা হবে।



 ৩ । অতঃপর রাসুল ﷺ'র উপর সালাত এবং সালাম (দরূদ) প্রেরণ করা। 


وَحَدَّثَنَا أَبُو كُرَيْبٍ، حَدَّثَنَا وَكِيعٌ، ح وَحَدَّثَنِيهِ إِبْرَاهِيمُ بْنُ سَعِيدٍ الْجَوْهَرِيُّ، حَدَّثَنَا أَبُو أُسَامَةَ، جَمِيعًا عَنْ مِسْعَرٍ، عَنْ قَتَادَةَ، بِهَذَا الإِسْنَادِ غَيْرَ أَنَّ فِي، حَدِيثِ وَكِيعٍ قَالَ قَالَ ‏ "‏ أُعْطِيَ ‏"‏ ‏.‏ وَفِي حَدِيثِ أَبِي أُسَامَةَ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم ‏.‏


কাতাদাহ‌ رضي الله عنه থেকে বর্ণিতঃ:


অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। তবে ওয়াকী’র বর্ণনায় আছে আনসার رضي الله عنه থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। তবে ওয়াকী’র বর্ণনায় আছে আনাস رضي الله عنه বলেন, নবী ﷺ  বলেছেন, প্রত্যেক নাবীকে একটি করে দু’আ প্রদান করা হয়েছে। 


(সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৩৮৪) (ই.ফা. ৩৯০)

  


 পূর্ণ দরূদে ইবরাহীমঃ


اَللَّهُمَّ صَلِّ و سلم عَلَى مُحَمَّدٍ، وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا صَلَّيْتَ و سلمت عَلَى إِبْرَاهِيمَ، وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ، إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ، وَبَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ، وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ، وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ، فِي الْعَالَمِينَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌٌ .


 ৪। অতঃপর এই দু‘আ পাঠ করা-


اللَّهُمَّ رَبَّ هَذِهِ الدَّعْوَةِ التَّامَّةِ وَالصَّلَاةِ الْقَائِمَةِ آتِ مُحَمَّدَاً الْوَسِيلَةَ وَالْفَضِيلَةَ وَابْعَثْهُ مَقَامَاً مَحْمُودَاً الَّذِي وَعَدْتَهُ ورزقنا شفاعته يوم القيامه إِنَّكَ لَا تُخْلِفُ الْمِيعَادَ.


উচ্চারণঃ- আল্লাহুমা রাব্বা হাযিহিদ দাওয়াতিত তাম্মাতি ওয়াস সালাতুল ক্বাায়িমাতি আাতি মুহাম্মাদাল ওয়াসিলাতি ওয়াল ফাদ্বিলাতি ওয়া আবয়াছহু মাক্বামাম মাহমুদাল লাযি ওয়াদতুহু ওয়ারযুকনাা শাফায়াতিহি ইয়ামাল ক্বিয়ামাতি ইন্নাকা লাা তুখলিফুল মিয়াাদ।


অর্থঃ ‘হে আল্লাহ! এই পরিপূর্ণ আহবানের রব এবং যে সলাত কায়েম হবে তার মালিক, মুহাম্মদ ﷺকে দান করুন ওয়াসীলাহ ও ফাদীলাহ  এবং কিয়ামতের দিন শাফায়াত নসিব করুন যার ওয়াদা আপনি তাঁকে করেছন।’ 


حَدَّثَنَا قَيْسُ بْنُ حَفْصٍ، وَمُوسَى بْنُ إِسْمَاعِيلَ، قَالاَ حَدَّثَنَا عَبْدُ الْوَاحِدِ بْنُ زِيَادٍ، حَدَّثَنَا أَبُو قُرَّةَ، مُسْلِمُ بْنُ سَالِمٍ الْهَمْدَانِيُّ قَالَ حَدَّثَنِي عَبْدُ اللَّهِ بْنُ عِيسَى، سَمِعَ عَبْدَ الرَّحْمَنِ بْنَ أَبِي لَيْلَى، قَالَ لَقِيَنِي كَعْبُ بْنُ عُجْرَةَ فَقَالَ أَلاَ أُهْدِي لَكَ هَدِيَّةً سَمِعْتُهَا مِنَ النَّبِيِّ، صلى الله عليه وسلم فَقُلْتُ بَلَى، فَأَهْدِهَا لِي‏.‏ فَقَالَ سَأَلْنَا رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَقُلْنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ كَيْفَ الصَّلاَةُ عَلَيْكُمْ أَهْلَ الْبَيْتِ فَإِنَّ اللَّهَ قَدْ عَلَّمَنَا كَيْفَ نُسَلِّمُ‏.‏ قَالَ ‏ "‏ قُولُوا اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ، وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ، إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ، اللَّهُمَّ بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ، وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ، وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ، إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ ‏"‏‏.‏


‘আবদুর রহমান ইবনু আবূ লাইলা رحمة الله عليه  থেকে বর্ণিতঃ:


তিনি বলেন, কা’ব ইবনু উজরা رضي الله عنه আমার সঙ্গে দেখা করে বললেন, আমি কি আপনাকে এমন একটি হাদিয়া দেব না যা আমি নবী‎ ﷺ  হতে শুনেছি? আমি বললাম, হাঁ, আপনি আমাকে সে হাদিয়া দিন। তিনি বললেন, আমরা রাসুলুল্লাহ ﷺ -কে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহ ﷻ'র  রাসুল! আপনাদের উপর অর্থাৎ আহলে বাইতের উপর কিভাবে দরুদ পাঠ করতে হবে? কেননা, আল্লাহ তো (কেবল) আমাদেরকে জানিয়ে দিয়েছেন, আমরা কিভাবে আপনার উপর সালাম করব। তিনি বললেন, তোমরা এভাবে বল, “হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মাদ ﷺ -এর উপর এবং মুহাম্মাদ ﷺ -এর বংশধরদের উপর রহমত বর্ষণ করুন, যেরূপ আপনি ইবরাহীম (‘আঃ) এবং তাঁর বংশধরদের উপর রহমত বর্ষণ করেছেন। নিশ্চয়ই আপনি অতি প্রশংসিত, অত্যন্ত মর্যাদার অধিকারী। হে আল্লাহ! মুহাম্মাদ ﷺ  ও মুহাম্মাদ ﷺ -এর বংশধরদের উপর তেমনি বরকত দান করুন যেমনি আপনি বরকত দান করেছেন ইবরাহীম (‘আঃ) এবং  ইবরাহীম (‘আঃ)-এর বংশধরদের উপর। নিশ্চয়ই আপনি অতি প্রশংসিত, অতি মর্যাদার অধিকারী।

  

(সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৩৩৭০)


 এই দু‘য়া পাঠ করার উপকারিতা হচ্ছে পুনরুত্থান দিবসে রাসুল ﷺ তার জন্য সুপারিশ করবেন।


 ৫। অবশেষে নিজের জন্য দো’আ পাঠ করা-


 ‘বল, যেমন তারা (মুআযযিন) বলে, যখন তা সম্পন্ন করবে চাও (দো’আ কর) তোমাকে তা দেয়া হবে।’ 


حَدَّثَنَا ابْنُ السَّرْحِ، وَمُحَمَّدُ بْنُ سَلَمَةَ، قَالاَ حَدَّثَنَا ابْنُ وَهْبٍ، عَنْ حُيَىٍّ، عَنْ أَبِي عَبْدِ الرَّحْمَنِ، - يَعْنِي الْحُبُلِيَّ - عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو، أَنَّ رَجُلاً، قَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّ الْمُؤَذِّنِينَ يَفْضُلُونَنَا ‏.‏ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ قُلْ كَمَا يَقُولُونَ فَإِذَا انْتَهَيْتَ فَسَلْ تُعْطَهْ ‏"‏ ‏.


‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর رضي الله عنه থেকে বর্ণিতঃ:


এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহ ﷻ'র  রাসুল! মুয়াজ্জিন তো আমাদের উপর মর্যাদার অধিকারী হয়ে যাচ্ছে। রাসুলুল্লাহ ﷺ  বলেনঃ মুয়াজ্জিনরা যেরূপ বলে থাকে তোমরাও সেরূপ বলবে। অতঃপর আযান শেষ হলে (আল্লাহ ﷻ'র  নিকট) দু‘আ করবে। তখন তোমাকে তা-ই দেয়া হবে (তোমার দু‘আ ক্ববুল হবে)।

  

(সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৫২৪)




ইক্বামাত


 ১। ইক্বামতের ক্ষেত্রে ইক্বামতকারী ব্যক্তি যা বলে তার পুনরাবৃত্তি করা, শুধু 

حَيَّ عَلَى الصَّلاَةِ, حَيَّ عَلَى الْفَلاَحِ 

এর জবাবে বলবেঃ


لَا حَوْلَ وَلا قُوَّةَ إِلا بِاللَّهِ


অর্থঃ ‘আল্লাহ ব্যতীত কোন শক্তি এবং ক্ষমতা নেই।’


 ২। যখন  حَيَّ عَلَى الصَّلاَةِ বলবে তখন দাড়াবে নামাজের জন্য এবং حَيَّ عَلَى الْفَلاَحِ বললে দাড়ানো শেষ হবে। 


(শরহে বেক্বায়া)

Top