আদদৌলাতুল মক্কীয়াহ বিল মাদ্দাতিল গায়বিয়াহ্।
(ইলমে গায়ব বিষয়ক অদ্বিতীয় গ্রন্থ)
মূলঃ ঈমামে আহলে সুন্নাত আ’লা হযরত ঈমাম আহমদ রেযা খান ফাযেলী বেরলভী (رحمة الله)
অনুবাদঃ আবু সাঈদ মুহাম্মদ ইউসুফ জিলানী।
টেক্সট রেডীঃ মাসুম বিল্লাহ সানি, সরকার জিলানী, সিরাজুম মুনির তানভীর, আব্দুল্লাহ আল কাফী, আব্দুল ওয়াহাব রিজভী
উৎসর্গ
শ্রদ্ধেয়,
আব্বা-আম্মা ও উস্তাদ মহোদয়গণকে যাদের দোয়া ও অনুপ্রেরণায় এ গ্রন্থখানা অনুদিত।
ইমামে আহলে সুন্নাত, পীরে তরীকত, শায়খুল হাদীস ওয়াত। তাফসীর ওয়াল ফিক্হ, উস্তাযুল আসাতিযাহ্ হযরতুল আল্লামা আলহাজ্ব কাজী মুহাম্মদ নূরুল ইসলাম হাশেমী সাহেব মাদ্দাজিলুহুল আলী-এর।
অভিমত
শতাব্দীর মােজাদ্দেদ ইমামে আহলে সুন্নাত, আ'লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা খান বেরলভীর (رحمة الله) ক্ষুরধার লেখনী সঞ্জাত সহস্রাধিক অকাট্য কিতাব সুন্নী জাহান তথা সত্য সন্ধানী মুসলিম সমাজের জন্য অমূল্য সম্পদ ও নির্ভুল দিশারী। তারই লিখিত “আদ-দৌলাতুল মক্কীয়্যাহ্ বিল মাদ্দাতিল গায়বিয়্যাহ্’ হচ্ছে ঐসব কিতাবের মধ্যে অত্যন্ত প্রসিদ্ধ ও অতি উচ্চমানের।
কিতাবটার বঙ্গানুবাদ হওয়া দীর্ঘদিনের চাহিদাই ছিলাে। উদীয়মান সাহিত্যিক, আহলে সুন্নাতের নিষ্কলুষ আদর্শ প্রচারে একান্ত উৎসুক আমার স্নেহভাজন মুহাম্মদ ইউসুফ জিলানী এ কিতাবখানার বঙ্গানুবাদ করে যুগের চাহিদা পূরণে আপ্রাণ প্রচেষ্টা চালিয়েছে।
আমি যতটুকু দেখেছি-কিতাবটার অনুবাদ সরল ও শুদ্ধ পেয়েছি। কিতাবখানা প্রকাশিত ও বহুলভাবে প্রচারিত হলে বাংলাভাষীগণ এক অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সঠিক দিশার সন্ধান পাবে।
আমি আ’লা হযরতের রফ’ই দরজাত এবং অমূল্য পুস্তিকার বঙ্গানুবাদক ও প্রকাশকদের সর্বাঙ্গীন উন্নতি আর বইটি বহুল প্রচার কামনা করছি।
আমীন।
(কাজী মােহাম্মদ নূরুল ইসলাম হাশেমী)
প্রতিষ্ঠাতা আঞ্জুমানে মুহিব্বানে রসুল গাউছিয়া জিলানী কমিটি।
_____________________________________
খতীবে আহলে সুন্নাত, শাইখুল হাদীস ওয়াত তাফসীর, উসতাযুল উলামা, - হযরতুল আল্লামা অধ্যক্ষ আলহাজ্ব জালালুদ্দীন আল-কাদেরী
মাদ্দাজিলুল আলী-এর
অভিমত
ইমামে আহলে সুন্নাত, মােজাদ্দেদে দ্বীন ও মিল্লাত, আ'লা হযরত, শাহ ইমাম আহমদ রেযা খান বেরলভী (رحمة الله)-এর বিশ্ব আলােড়ন সৃষ্টিকারী অমূল্য, অদ্বিতীয় ও তুলনাহীন গ্রন্থ ‘আদদৌলাতুল মক্কীয়াহ্ বিল মাদ্দাতিল গায়বিয়াহ বাংলায় প্রকাশিত হতে দেখে আমি খুবই আনন্দিত হয়েছি। মূল আরবী ইবারতের সাথে যথাযথ সামঞ্জস্য রেখে সরল ও প্রাঞ্জল ভাষার মাধ্যমে অনুবাদক লেখকের ভাব মূর্তিকে ফুটিয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেন। আমি যতটুকু দেখেছি অনুবাদ বিশুদ্ধ ও সুন্দর পেয়েছি।
আহলে সুন্নাত ওয়াল জমাতের আকীদায় বিশ্বাসীদের জন্য এটা নিঃসন্দেহের সু-সংবাদ
বাংলা ভাষায় অনুদিত এ গ্রন্থটি সর্বসাধারণ মুসলিম ছাড়াও দেশের মাদ্রাসা ছাত্রদের অধ্যয়নের ব্যাপারে বিশেষভাবে উপকৃত করবে।
আমি গ্রন্থখানার বহুল প্রচার এবং অনুবাদকের দীর্ঘায়ু কামনা করি।
(মােহাম্মদ জালাল উদ্দীন আল-কাদেরী)
প্রকাশকের নিবেদন
আলহামদু লিল্লাহ ওয়াশুক্রু লিল্লাহ, আযকা সালাতী-সালামী লিরাসুল্লিাল্লাহ, আকা সালাতী- সালামী লিহাবীবিল্লাহ্। হাবিবুল্লাহ (ﷺ) কে নিজ জীবনের চেয়ে অধিক ভালবাসতে না পারলে জীবন অর্থহীন হয়ে যায়। যদি আকীদা ঠিক না থাকে তবে আমলতাে কোন কাজে আসবে না।
এ বই পড়ে হাবিবুল্লাহ (ﷺ) সম্পর্কে জানার ক্ষেত্রে কোন ভুল থাকলে তা সংশােধন হবে এবং তাঁর শান-মান সম্পর্কে উচ্চ ধারণা সৃষ্টি হবে এ আশায় এ পুস্তক প্রকাশনায় সাথে যুক্ত হয়েছি।
এর প্রকাশনায় যারা যেভাবে সাহায্য সহযােগিতা করেছেন তাদের সকলের প্রতি ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। বিশেষত ইসলামী আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক বিশিষ্ট্য ইসলামী চিন্তাবিদ গবেষক জনাব স,উ,ম আবদুস সামাদ ভাই যিনি আমার ও অনুবাদকের মাঝে সেতু হিসাবে কাজ করেছেন। এই বই বিক্রির সমুদয় অর্থ ইমামুত তরীকত মুহিউস সুন্নাহ হযরত শেখ মুহাম্মদ বােরহান উদ্দিন (رحمة الله) এর স্বপ্ন ও প্রস্তাবিত আল-ওয়াইসিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফান্ডে উৎসর্গ করছি। কোন প্রকার ভূল ত্রুটি সম্পর্কে জানালে আনন্দিত হব।
সালামান্তে
মুহাম্মদ সরওয়ার হােসাইন
_____________________________________
সূচীপত্র
ভূমিকা
প্রথম ভাগ
প্রথম নজর
(ইলমে গায়ব) স্বীকার ও অস্বীকার জ্ঞাপক আয়াত ব্যবহারের বর্ণনা
ইলমের শ্রেনী বিভাগ
গায়তুল মামুলের খন্ডন
আল্লাহ পরিপূর্ণ পরিচয় লাভ কারাে পক্ষে সম্ভব নয়
রাসুল(ﷺ)কাছে ‘গায়বের কোন জ্ঞান নেই, তিনি শেষ পরিণতি সম্পর্কেও অজ্ঞ’ উক্তিকারী কাফির
দ্বিতীয় নজর
ওহাবীরা ঐ মুশরিক যারা পূর্বাপর সবকিছুর জ্ঞান আল্লাহ ব্যতিত অন্যের জন্য শিরক সাব্যস্ত করে।
গায়াতুল মামুলের কুটিলতাপূর্ণ বক্তব্যের খন্ডন
আরেকটি জঘন্য উক্তির খন্ডন
একটি কুটিলতা পূর্ণ বক্তব্যের খণ্ডন
তৃতীয় নজর
হিফজুল ঈমান গ্রন্থকার খানবীর উপর কিয়ামতে কুবরা কায়েম
বান্দার ক্ষমতা
চতুর্থ নজর
ওহাবীদের ধূমীর প্রতি কঠোর হুশিয়ারি, ইলমে গায়ব সম্পর্কে তাদের ও অামাদের পার্থক্য,
ওহাবীরা মুশরিকের চেয়েও বােকা
পূর্বাপর সকল বস্তুর জ্ঞান রসুলে পাক (ﷺ) এর জ্ঞানের কিয়দাংশ মাত্ৰ
পঞ্চম নজর
ইলমে গায়ব সম্পর্কে কুরআন, হাদীস ও ওলামা কেরামের বক্তব্য
গ্রন্থকারের কুরআন পাক থেকে অকাট্য প্রমান
গায়াতুল মামুলের খণ্ডন
রাসুলে পাক(ﷺ) এর মর্যাদায় গাঙ্গুহীর আক্রোশ
রশিদ আহমদ ও খলীল আহমদ সম্পর্কে : ওলামায়ে মককার কুফরী ফতােয়া প্রদান
গাঙ্গুহীর কতেক ভ্রান্ত ধারণা
ষষ্ঠ নজর
এখন প্রশংসার স্থলে শর্তহীনভাবে খাস করা অপরিহার্য নয়
সংখ্যা অতিরিক্তকে অস্বীকার করে না
পাঁচকে নির্দিষ্ট করার রহস্য
আল্লাহর মধ্যে জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা বান্দার জ্ঞান অস্বীকারকে অপরিহার্য করে অনুরূপ ঐ জ্ঞান বান্দাকে প্রদান করা বিশুদ্ধ
আল্লাহ ছাড়া কোন কিছুর অস্থিত্ব নেই
রাসুলের শানে হযরত সাওয়াদের কবিতায় ওহাবীদের ভ্রান্ত ধারণা খন্ডন
পঞ্চ দৃশ্য জ্ঞানের বিস্তারিত বিবরণ
গর্ভাশয়ের জ্ঞান
দ্বিতীয় ভাগ
____________________________________
সংক্ষিপ্ত লেখক পরিচিতিঃ
ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসে হাতে গােনা যে কয়জন অসাধারণ কৃতিত্বের অধিকারী, ক্ষনজন্মা কালজয়ী মহামনীষীর পদচারণা পরিলক্ষিত হয়, ত্রয়ােদশ শতাব্দীর মুজাদ্দিদ, ইমামে আহলে সুন্নাত, শাহ্ আহমদ মুহাম্মদ রেযা খান বেরলভী (رحمة الله) তন্মধ্যে অন্যতম। তদানিন্তনকালে ইসলাম বিদ্বেষী বাতিলরা যখন মুসলমানদের ধ্বংস করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ঠিক সেই মুহুর্তে আল্লাহ তায়ালা সত্যের আলােকবর্তিকা রূপে তাকে প্রেরণ করলেন।
তিনি একাধারে আলিম, হাফিজ, ক্বারী, মুহাদ্দিস, মােফাসসির, মুফতি, পন্ডিত, দার্শনিক, ভাষাবিদ, সাহিত্যিক, চিন্তাবিদ, শিক্ষাবিদ, গবেষক, সংস্কারক, কবি, কলম সম্রাট, অপ্রতিদ্বন্দ্বী মুনাযির, শ্রেষ্ঠতম বক্তা, বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী, সর্বোপরি তিনি হলেন জ্ঞান-বিজ্ঞানের “এনসাইক্লোপিডিয়া”। আলা হযরত ১০ই শাওয়াল ১২৭২ হিজরী, ১৪ই জুন মােতাবেক ১৮৫৬ ইংরেজী ভারতের (ইউপি) বেরলী শহরে শনিবার জোহরের সময় জন্ম গ্রহণকরেন। তিনি নিজেই আরবী সংখ্যাতাত্ত্বিক গাণিতিক সূত্রের (আবজাদ) মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার এ বাণী “তারা হচ্ছেন সেসব ব্যক্তি, যাদের হৃদয়ে আল্লাহ তায়ালা ঈমানের চিত্র অংকন করেছেন এবং নিজ পক্ষ থেকে রুহ' দ্বারা তাদেরকে সাহায্য করেছেন”। (সুরা মুজাদালাহ্) হতে স্বীয় জন্মসাল ১২৭২ হিজরী বের করেছেন। তাঁর পিতামহ মাওলানা রেযা আলী খান তাঁর নাম রাখেন মুহাম্মদ আহমদ রেযা খান। তার মহিয়সী মাতা পরম স্নেহের সাথে ডাকতেন “আমান মিয়া” পিতা ডাকতেন আহমদ মিঞা। রাসুল প্রেমের নিদর্শন স্বরূপ তিনি স্বীয় নামের পূর্বে আবদুল মােস্তফা সংযােজন করেছেন। তিনি ১২৭৬ হিজরী মােতাবেক ১৮৬০ সাল মাত্র ৪ বছর বয়সে পবিত্র কুরআন সমাপ্ত করেন। এরপর প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন তার সম্মানিত পিতার তত্ত্বাবধানেই। এ ছাড়া তিনি যে সকল ওস্তাদগণ থেকে শিক্ষার্জন করেছেন মাওলানা আবদুল আলীম রামপুরী, মাওলানা মির্জা গােলাম বেগ প্রমুখ অন্যতম। ১২ই রবিউল আওয়াল, ১২৭৮ হিঃ পবিত্র জশনে ঈদে মীলাদুন্নবী (ﷺ) উপলক্ষে আয়ােজিত মহাসমাবেশে এক হৃদয়গ্রাহী বক্তৃতা দিয়ে সকল আলােচক ও শ্রোতাকে হতবাক করে দেন। ৮ বছর বয়সেই আরবী ব্যাকরণের বিখ্যাত গ্রন্থ হেদায়তুন্নাহু” পাঠ সমাপ্ত করেন এবং আরবীতে আরেকটি শরাহ (ব্যাখ্যা) লিখেন। এ হিসেবে এটা তাঁর সর্বপ্রথম লিখিত পুস্তক। আরাে বিস্ময়ের ব্যাপার হলাে মাত্র ১৩ বছর ১০ মাস ৪ দিনে তিনি সর্ববিষয়ের জ্ঞান লাভ করে ১২৮৬ হিঃ ১৮৬৯ সালের ১৪ ই সাবান দস্তারে ফজিলত লাভ করেন। আরাে আশ্চার্যের বিষয় যে, যেদিন তিনি শেষ বর্ষ সনদ লাভ করেন সে দিনই বালক হন। (সুবহানাল্লাহ) সে দিনই তিনি স্তন্যদান সম্পর্কিত একটি জটিল বিষয়ে ফতােয়া প্রদান করেন। তাঁর দক্ষতার পরিচয় পেয়ে তার পিতা নক্বী আলী খান তার উপর ফতােয়া প্রদানের দায়িত্বভার প্রদান করেন।'
আ’লা হযরত (رحمة الله) লিখার জগতে একজন শ্রেষ্ঠতম ও সফলতম ব্যক্তিত্ব। জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রায় সব বিষয়ে তিনি কলম ধরেছেন। ৭২টিরও বেশী বিষয়ের উপর প্রায় ১৫০০-এর অধিক কিতাব তিনি প্রণয়ন করেছেন। শুধুমাত্র ওহাবীদের ভ্রান্ত ধারণা খন্ডনে তিনি ২০০-এর অধিক গ্রন্থ রচনা করেন। এ মহান কলম সম্রাট ও মহান ব্যক্তিত্ব ১৩৪ হিজরী সালে ২৫শে সফর ১৯২১ খৃষ্টাব্দে রােজ জুমাবার ২টা ৩৮ মিনিটে মাওলায়ে হাকিকীর সান্নিধ্যে চলে যান। আল্লাহ তায়ালা তার কবরকে নুরে রহমত দ্বারা পরিপূর্ণ করুন।
দৌলাতুল মক্কীয়াহ রচনার প্রেক্ষাপটঃ
১৩২৩ হিজরী মােতাবেক খৃষ্টাব্দের ২০ই ফেব্রুয়ারী আছর নামাজ পড়ে আ’লা হযরত হেরম শরীফের কুতুবখখানার দিকে যাচ্ছিলেন, সিঁড়ির দিকে উঠতেই তাঁর যেন কেউ আসছে মনে হলাে। তিনি পেছনের দিকে ফিরলেন, দেখলেন রঈসুল ওলামা মৌলানা সালেহ কামাল (رحمة الله)। সালাম ও মােসাফাহা পর্ব শেষান্তে উভয়ে গ্রন্থাগারের দফতরে গিয়ে বসলেন। সেসময়ে অন্যান্য ওলামা কেরাম ছাড়াও সৈয়দ ইসমাঈল এবং তাঁর ভাই সৈয়দ মৌলানা মােস্তফা, তাঁদের পিতা মৌলানা সৈয়দ খলীল শরীফও' তাশরীফ নিয়েছিলেন। হযরত মাওলানা সালেহ কামাল পকেট থেকে এক টুকরাে কাগজ বের করলেন যাতে ইলমে গায়ব (অদৃশ্য জ্ঞান) বিষয়ক পাঁচটি প্রশ্ন ছিলাে, যার উত্তর তিনি সবেমাত্র আরম্ভ করেছিলেন। আ’লা হযরতের বক্তব্য ও তার জ্ঞানের বিশালতা দেখে তিনি সেগুলাে তাঁর নিকট হস্তান্তর করে বললেন, এ প্রশ্নগুলাে ওহাবীরা শরীফ আলী পাশার মাধ্যমে পাঠিয়েছেন, -“আপনি এগুলাের জবাব পদান করুন। আ’লা হ্যরত জবাব প্রদানের জন্য তৎক্ষণাৎ তৈরি করে গেলেন। তিনি সৈয়দ মােস্তফাকে বললেন দোয়াত-কলম দিন। মৌলানা সালেহ কামাল, মৌলানা সৈয়দ ইসমাইল ও মৌলানা সৈয়দ খলীল বললেন, আমরা এমন দ্রুত সংক্ষিপ্ত জবাবের প্রত্যাশি নই। বরং এমন জবাব চাই যদ্বারা ভ্রষ্ট ওহাবীদের স্বরূপ উন্মাচিত হয়ে যায়। আ’লা হযরত এমন জবাবের জন্য কিছু সময় চেয়ে বললেন, যেন দিনের মাত্র দু'ঘন্টা বাকী এত স্বল্প সময়ে কি করা যায়? মৌলানা সালেহ কামাল বললেন, কাল মঙ্গলবার আর পরশু বুধবার এ দু’দিনে আপনি জবাব পুর্ণ করুন। আমরা আপনার থেকে বৃহস্পতিবারই তা চাই যেন শুক্রবার শরীফ সাহেবের সামনে পেশ করতে পারি। আ’লা হযরত আল্লাহ ও রাসুলের উপর ভরসা করে তা লেখার অঙ্গীকার করেন এবং জবাব লেখা আরম্ভ করেন। এদিকে মক্কা শরীফে এ গুজব সৃষ্টি হলাে যে, ওহাবীরা ইলমে গায়বের উপর প্রশ্ন করেছেন আর আ’লা হযরত এর জবাব লিখছেন। এখনও দৌলাতুল মৃক্কীয়াহ্ প্রথম ভাগ শেষ হয়নি, দ্বিতীয় ভাগ লেখা হচ্ছে, এমতাবস্থায় হযরত শরীফ সাহেবের মাধ্যমে স্থানীয় আলিম মৌলানা আহমদ আবুল খায়র মােরদাদ-এর পয়গাম পৌছালাে যে, আমি চলাফেরা করতে অক্ষম, আপনার লিখিত দৌলাতুল মক্কীয়াহ্ শুনতে চাই। আ’লা হযরত তাঁর নিকট তশরীফ নিলেন এবং এ কিতাবের লিখিত অংশ, তাঁকে *শুনালেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন যেন তাতে ‘পঞ্চ অদৃশ্য জ্ঞানের বিষয়ও অন্তর্ভূক্ত করা হয়। আ’লা হযরত বললেন, এ বিষয়ে কোন প্রশ্ন ছিলােনা বিধায় আমি তা সংযােজন করিনি। বিদায়ের সময় সম্মানার্থে তাঁর উরু মােবারকে হাত রাখলেন। তিনি আবেগ আপ্লোত কণ্ঠে বলে উঠলেন আনা ইক্বাবেবলু আরজুলাকুম, আনা উক্বাবেবলু নিয়া'লেকুম' অর্থাৎ আমি আপনার কদমবুচি করবাে, আপনার জুতা চুমু খাবাে। অতঃপর আ’লা হযরত সেখান থেকে নিজের অবস্থানে চলে আসলেন, আর রাত্রেই ‘পঞ্চ অদৃশ্য জ্ঞান সম্পর্কিত অধ্যায় সংযােজন করলেন।
' দ্বিতীয় দিন বুধবার তিনি যখন সকালে হেরম শরীফ থেকে নামাজ পড়ে বের হলেন, তখন মাওলানা সৈয়দ আবদুল হাই ইবনে মাওলানা সৈয়দ আবদুল কবীর-এর খাদেমের পয়গাম আসলাে যে,তিনি তাঁর সাক্ষাৎ প্রার্থী। মাওলানা আবদুল হাই সে মহান ব্যক্তিত্ব যিনি সে সময় শুধুমাত্র হাদীস বিষয়ে ৪০টি গ্রন্থ লিখেছেন যা মিশরে প্রকাশিত হয়েছিলাে। আ’লা হযরত তাঁর অঙ্গীকার এবং দৌলাতুল মক্কীয়ার বাকী কাজ সমাপ্তের কথা চিন্তা করে অপারগতা প্রকাশ করে বললেন, আমি আজ ক্ষমা চাই, আরেকদিন আমি নিজেই তার সাথে সাক্ষাৎ করবাে। খাদেম চলে গেলেন। পুনরায় এসে বললেন, মৌলানা আবদুল হাই সাহেব আজই মদীনায় চলে যাচ্ছেন। আজ জোহরের পর তিনি মদীনার দিকে রওয়ানা হবেন। অপারগ হয়ে তিনি তাকে আসার অনুমতি প্রদান করেন। তিনি এসে আ’লা হযরত থেকে ইলমে হাদীসের অনুমতি চেয়ে তা লিখে নেন। অনেক্ষণ আলাপ-আলােচনার পর তিনি মদীনায় রওয়ানা দেন। এ দিনের অধিকাংশ সময়ও এভাবেই কেটে গেলাে। কিন্তু আল্লাহর অনুগ্রহ এ দিন ঈশারের নামজের পর তিনি তা সমাপ্ত করেন। দু’দিনের ৪ ঘন্টা করে মাত্র ৮ ঘন্টায় ‘দৌলাতুল মক্কীয়াহ’ লিখে আলোড়ন সৃষ্টি করেন। ‘ইলমে গায়ব' বিষয়ক এ অদ্বিতীয় গ্রন্থ ওহাবীদের মৃত্যুডঙ্কা বাজিয়ে দিলাে, নবীর দোষমণদের মুখ চিরতরে বন্ধ করে দিলােপ্রকৃত পক্ষে এ গ্রন্থ আ’লা হযরত (رحمة الله)-এর একটি জিন্দা কারামত। মাত্র ৮ ঘন্টায় এমন বৃহৎ তথ্যনির্ভর জ্ঞান-বিজ্ঞান ও সাহিত্যে অতুলনীয় গ্রন্থ রচনা করে সমগ্র আরব-আজমের ওলামাদের নিরােত্তর করে দিলেন। তিনি তীব্র রােদের তাপে কোন কিতাবের সাহায্য ব্যতীত শুধুমাত্র স্বীয় প্রভুর সাহায্যে নির্ভর করে কুরআন, হাদীস, তাফসীর, ফিক্হ ও ওলামায়ে কেরামের কিতাবাদির মূল বক্তব্য সহকারে যে কিতাব রচনা করেন তা সত্যিই বিস্ময়কর এবং এটা আ’লা।
*হযরতের আল্লাহর প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস রাসুলে পাক (ﷺ) এর বিশেষ অনুগ্রহের বহিঃপ্রকাশ এবং আল্লাহ তায়ালার বিশেষ জ্ঞান (ইলমে লাদুন্নী)। আমাদেরকে এ মহান ইমামের অনুসরণের তাওফীক দান করুন।
ইলমে গায়েব সম্পর্কে আল্লাহ ও রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর প্রতি আহলুস সুন্নাহর আকিদাঃ
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
حمد و مصلى على رسوله الكريم
- সকল প্রশংসা আল্লাহ তায়ালার জন্য, যিনি যাবতীয় গায়ব (অদৃশ্য বস্তু) সমূহ পরিপূর্ণরূপে জ্ঞাত, পাপসমূহের মার্জনাকারী, দোষ-ত্রুটিসমূহ গােপনকারী, গােপন রহস্যাদি স্বীয় পছন্দনীয় রাসুলগণের নিকট প্রকাশকারী। আর উৎকৃষ্টতম দরুদ ও সালাম তাঁর উপর, যিনি সকল পছন্দনীয়দের চাইতেও অধিকতর পছন্দনীয়, সকল প্রিয়দের চেয়ে অধিকতর প্রিয়, গায়ব সম্পর্কে অবগতকারীদের সরদার, যাঁকে তাঁর মহান প্রতিপালক ভালরূপে শিক্ষা প্রদান করেছেন। তাঁর উপর আল্লাহর করুণা অসীম! তিনি সকল গায়েবের বিশ্বস্ত রক্ষক, গায়বের সংবাদ দিতে তিনি কৃপণতা করেন না। আর না তিনি স্বীয় প্রতিপালকের ইহসান থেকে উদাসীন রয়েছেন, যার কারণে যা কিছু গত হয়েছে অথবা ভবিষ্যতে সংঘটিত হবে তা তাঁর কাছে গােপন থাকবে। সুতরাং তিনি ফেরেস্তাদের স্বচক্ষে প্রত্যক্ষকারী এবং আল্লাহ তায়ালার সত্তা ও গুণাবলীকে এমনভাবে প্রত্যক্ষকারী যে, না তাঁর চক্ষু অবনত হয়েছে, আর না সীমাতিক্রম করেছে। এতদসত্বেও কি যা কিছু তিনি দর্শন করেছেন তাতে তােমরা তাঁর সাথে ঝগড়া করবে? " আল্লাহ তায়ালা তাঁর উপর কুরআন অবতীর্ণ করেছেন, যা প্রত্যেক কিছুর বিবরণ সম্বলিত। অতএব, তিনি পূর্বাপর সকল কিছুর জ্ঞান বেষ্টন করে নিয়েছেন। আর এমন জ্ঞানও যার কোন সীমা নেই, গণনা সে পর্যন্ত পৌছতে অসমর্থ। সমগ্র জাহানে যা কেউই জানেন না! এমনকি হযরত আদম (আঃ)-এর জ্ঞানসমূহ ও সকল সৃষ্টির জ্ঞান এবং লাওহ-কলম ইত্যাদি সকল কিছুর জ্ঞান মিলে আমাদের প্রিয় নবী (ﷺ)-এর জ্ঞানের সমুদ্রের একটি বিন্দু মাত্র। কেননা, হুজুর (ﷺ) এর জ্ঞানের পরিধি ধারণার বহু উর্ধ্বে। তার উপর আল্লাহর দরুদ ও সালাম। তার জ্ঞান ঐ অসীম সমুদ্র অর্থাৎ আল্লাহ্ তায়ালার চিরস্থায়ী জ্ঞানের সবচেয়ে বড় বিচ্ছুরণ এবং মহানতর অঞ্জলি স্বরূপ।
সুতরাং হুজুর(ﷺ) স্বীয় প্রতিপালকের সাহায্য নেন, আর সমগ্র জাহান হুজুর (ﷺ) থেকে সাহায্য নেন। আর জ্ঞানীর কাছে যে জ্ঞান তা হুজুর সৈয়দে আলম(ﷺ)-এর জ্ঞান থেকেই এবং হুজুর(ﷺ) এর কারণে, তাঁর কাছ থেকে অর্জিত হয়েছে এবং তার (ﷺ) থেকেই নেয়া হয়েছে।
যেমন কসীদায়ে বােরদায় আল্লামা ইমাম শরফুদ্দীন বুসিরী (رحمة الله) কত সুন্দরভাবে ছন্দের মাধ্যমে বলেছেনঃ
نموا من البحر أو رشقا من الديم
وكلهم من رسول أله ملست وأوقفون لديه عندحدهم من نقطة العلم ومنشطة الحكم
অর্থাৎ প্রত্যেকেই রাসুলুল্লাহ (ﷺ)-এর জ্ঞান সমুদ্র থেকে এক অঞ্জলি অথবা তার রহমতের বৃষ্টি থেকে এক চুমুক (রহমত) প্রার্থী। সকলেই সরকারে রিসালত থেকে নিজ নিজ পদ মর্যাদানুযায়ী পরিস্তান অবহিত হয়, রাসুলে সৈয়দে আলম (ﷺ)-এর জ্ঞানের একটি বিন্দু অথবা তার জ্ঞান-বিজ্ঞানের স্বরচিহ্ন অর্থাৎ। রাসুলে ইলম ও হিকমত এতই ব্যাপক যে, প্রত্যেকের জ্ঞান-বিজ্ঞানের সম্পর্ক তার সম্মুখে; তাইও যে সম্পর্ক কিতাবের সাথে আরবী স্বরচিহ্ন ও জের জবরের। তার বংশধর ও ছাহাবীদের উপর বরকত সমূহ ও সম্মান প্রেরণ করুন। আমীন!
আদ-দৌলাতুল মাক্কীয়া কিতাব রচনার রহস্যঃ
সালাত ও সালামের পর, আমি পবিত্র মক্কা মােকাররমায় অবস্থানকালে আমার নিকট রাসুলে সরওয়ারে কাউনাইন(ﷺ)-এর জ্ঞান সম্পর্কিত কতেক হিন্দুস্থানীদের পক্ষ থেকে ২৫শে জিলহজ্ব ১৩২৩ হিজরী সােমবার দিবসে আসরের সময় একটি প্রশ্ন উত্থাপিত হলাে। আমার ধারণা ঐ প্রশ্ন সেসব ওহাবীদের উত্থাপিত যারা অন্তর খুলে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকে গালি দেয় এবং হিন্দুস্থানে তাদের কিতাবসমূহে প্রচার করে। কেননা, কোন সুন্নীর কোন মাসয়ালার প্রয়ােজন হলে তারা ওলামায়ে কেরাম থেকে জিজ্ঞেস করে নেবেন এটাতাে আল্লাহর নিরাপদ নগর, আল্লাহরই প্রশংসা যে, জ্ঞান ও জ্ঞানী দ্বারা এটা পরিপূর্ণ। যে ব্যক্তি উপচে পড়া সমুদ্রের নিকটে অবস্থান করে, সে একটি নহরের উদ্বৃত্ত অংশের নিকট কেন যাবে? এছাড়াও আমাদের সরদার মক্কা মােকাররমার আলিমবৃন্দ (আল্লাহ তাদের হেফাজত করুন) নবীয়ে করীম (ﷺ) এর জ্ঞানের মাসআলা এবং অন্যান্য যে মাসআলাসমূহে অত্যাচারী ওহাবীরা মতবিরােধ করে, দু’একবার নয়, বারংবার এগুলাে সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করে দিয়েছেন এবং মরীচিকা পরিষ্কার করেছেন, সৌন্দর্য প্রদান করেছেন, দোষ-ত্রুটি মিটিয়ে দিয়েছেন এবং ওহাবীদের উপর মৃত্যুঘন্টা বাজিয়েছেন।
এ নগন্য বান্দা আপন শক্তিমান ও সৌন্দর্যময় প্রতিপালকের করুণায় বাপ দাদা তথা পূর্ব-পুরুষদের প্রদর্শিত সুন্নাতের খেদমতে রয়েছি এবং ওহাবীদের উপর কিয়ামত কায়েমরত রয়েছি। (তাদের খন্ডনে) আমি দু’শতেরও বেশী গ্রন্থ রচনা করেছি। আর তাদের গুরুদের দু'-চার বার নয় বরং অনেক বার মুনাজারার দাওয়াত দিয়েছি। কিন্তু তারা কেউ প্রত্যুত্তর দেয়নি, তারা হতভম্বই রয়ে গেছে, বরং এসব ব্যক্তিরা যারা আমাদের প্রিয়নবীর শানে অপবাদ দেয়, আমাদের মহান। “প্রতিপালক মিথ্যা বলতে পারে বলে অপবাদ দেয়। সুতরাং তারা পলায়ন করেছে, ভীত সন্ত্রস্ত হয়েছে, মরে গেছে এবং ধ্বংস হয়েছে। আর যারা অবশিষ্ট আছে তারাও ইনশাআল্লাহ দেখবে যে, কিংকর্তব্যবিমূঢ়, হীন, বােবা ও অজ্ঞান অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবে। এসব কথা তাদের ক্রোধান্বিতই করে। তারা জানেন যে, আমি মক্কা শরীফে স্বীয় কিতাবাদি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বায়তুল্লাহর জিয়ারতে মশগুল এবং অতিসত্তর স্বীয় মাওলা হাবীব(ﷺ)-এর শহরের দিকে যাত্রাকারী। এমন এক সময়েই তারা এ প্রশ্ন উত্থাপন করেছে। তাদের আশা হলাে, তাড়াহুড়া ও ধ্যানমগ্ন অবস্থায় এবং কিতাবাদি থেকে বিচ্ছিন্নতা তাদের উত্তরে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করবে, যা তাদের জন্য ঈদ ও আনন্দে পর্যবসিত হবে। আর ঐ মুসিবত যা তাদের উপর পড়েছিলাে এর এক রকম বদলাই হয়ে যাবে যে, আমিও একবার নিশ্ৰুপ থাকতে বাধ্য হবাে। যেভাবে আমি তাদের গুরুদের, হাজার বার নিশ্ৰুপ করে দিয়েছি। কিন্তু জানেনি যে, এ শক্ত দ্বীন নিরাপত্তায় রয়েছে। যে কেউ এর সাহায্যে করবে, সে সাহায্যপ্রাপ্ত ও নিরাপদ থাকবে। আল্লাহর কর্ম এমনই যে, যখন তিনি কোন কর্ম করার ইচ্ছে করেন, বলেন, হয়ে যাও, তৎক্ষণাৎ তা হয়ে যায়। সুতরাং ঐ প্রশ্ন থেকে যা আমি অনুভব করেছি তা- এটাই। সত্য ও প্রকৃত জ্ঞানতাে আল্লাহরই নিকট।
অতএব ভাল হয়, জবাবকে দুইভাগে বিভক্ত করলে। একভাগ প্রশ্নকর্তার জন্য, যে উপকারিতা হাসিল করতে চায়। আর দ্বিতীয় ভাগ হলাে সেই গোঁয়ার . আক্রমনকারীর জন্য। যেন প্রত্যেকের নিকট তাই পৌছে, যার সে উপযােগী। আর প্রত্যেককে এমন উত্তর প্রদান করা হবে, যে যার যােগ্য।
প্রথম ভাগ
• এ মাসআলায় হকের চেহারা থেকে পর্দা দুরীভূত করার বর্ণনা রয়েছে। আর এ অধ্যায়ে কয়েকটি নজর (পরিচ্ছেদ) রয়েছে যেন বুদ্ধির অধিকারীরা মূলবস্তু সহজে খুঁজে নিতে পারেন।
প্রথম নজর
স্বীকার ও অস্বীকার’ জ্ঞাপক আয়াত ব্যবহারের বর্ণনাঃ
জেনে রাখুন যে, দ্বীনের ভিত্তি এবং যার উপর মুক্তি নির্ভর, তা হলাে-পবিত্র কুরআনের সব আয়াতের উপর বিশ্বাস স্থাপন করা। অধিকাংশ ভ্ৰষ্ট সম্প্রদায় পথভ্রষ্ট হয়েছে এ কারণে যে, তারা কতেক আয়াতের উপর বিশ্বাস স্থাপন করেছে। আর কতেক আয়াতকে অস্বীকার করে বসেছে। যেমনঃ
কদরীয়া সম্প্রদায়ঃ
✦তারা এ আয়াতের প্রতি ঈমান এনেছে-
انا وما ظلمنهم ولكن كانوا أنفسهم يظلمون.
আমি তাদের উপর জুলুম করিনি, বরং তারা নিজেরাই নিজেদের উপর জুলুম (অত্যাচার করেছে)।
✦আর এ আয়াতকে অস্বীকার করেছে,
والله خلقكم وما تموت
(আল্লাহ তােমাদের ও তােমাদের কর্মসমূহের স্রষ্টা।)
আর জবরিয়া সম্প্রদায়ঃ
✦এরা এ আয়াতে বিশ্বাস করে,
وما تشاءون إلا أن يشاء الله رب العالمين
(তােমরা কি চাও, কিন্তু আল্লাহ যা ইচ্ছে তাই করেন, যিনি সমগ্র বিশ্বের প্রতিপালক।)
✦আর এ আয়াতকে অস্বীকার করে,
(এটা তাদেরকে আমি অবাধ্যতার প্রতিফল দিয়েছি, আর নিশ্চয়ই আমি সত্যবাদী)।
খারেজী সম্প্রদায়ঃ
✦এরা এ আয়াত বিশ্বাস করে,
ت يصلونها يوم الدين .وان الفجار لفي جحيم .
(নিঃসন্দেহে পাপীরা কিয়ামত দিবসে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে)।
✦কিন্তু এ আয়াতকে অস্বীকার করে-
[নিশ্চয়ই আল্লাহ কুফর (গুনাহ) ক্ষমা করেন না। এতদব্যতীত অন্য সব (পাপ) তিনি যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করে দেন।]
ভ্রষ্ট মরজিয়া সম্প্রদায়ঃ
✦এ আয়াতে বিশ্বাস করে -
لاتقنطو من رحمة الله ان الله يغفر الذنوب جميعا الم.
(আল্লাহর করুণা থেকে নৈরাশ হয়াে না, নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা সকল পাপ ক্ষমা করে দিবেন, নিঃসন্দেহে তিনি ক্ষমাশীল ও দয়ালু।
✦অথচ তারা এ আয়াতকে অস্বীকার করেঃ
(যে কেউ পাপ কর্ম করবে, তাকে তার প্রতিফল প্রদান করা হবে)। এ ধরনের অসংখ্য দৃষ্টান্তে কালাম শাস্ত্ৰসমূহ ভরপুর
_____________________________________
(ইলমে গায়ব) স্বীকার ও অস্বীকার জ্ঞাপক আয়াত ব্যবহারের বর্ণনাঃ
✦পবিত্র কুরআনে করিম দ্বারা প্রমাণিত যে-
(আসমান ও জমিনে আল্লাহ তায়ালা ব্যতীত কেউ গায়ব জানেন না।)
✦কুরআন করীম এটাও স্পষ্টভাবে বিবৃত করছে,
وما كان الله ليطلعكم على الغيب ولكن الله يجتبي من رسله من
(আল্লাহ তাঁর নির্বাচিত রাসুলদের ব্যতীত কারাে উপর গায়ব প্রকাশ করেন না।)
➤সূরা জ্বিন: আয়াত ২৬-২৭
✦এটাও ইরশাদ করেছেন-
তিনি (মুহাম্মদ (ﷺ) গায়বের ব্যাপারে কার্পণ্য করেন না।)
➤ সূরা তাকভীর, আয়াত-২৪
✦আরাে ইরশাদ হয়েছে,
(হে নবী, আপনি যা জানতেন না, আল্লাহ তা আপনাকে শিক্ষা দিয়েছেন, আপনার উপর তাঁর করুণা মহান)।
➤সূরা নিসা ১১৩
✦আরাে ইরশাদ হয়েছে--
الغيب نوحية إليك وما كنت لديهم إذا جمعوا أمرهم وهم يمكرون و
(এটা গায়বের সংবাদ, যা আমি আপনার কাছে ওহী করেছি, আপনি তাদের নিকট ছিলেন না, যখন তারা স্বীয় কর্মে জড়াে হয়েছে এবং তারা প্রতারণা করেছে।)
✦আল্লাহ তায়ালা আরাে বলেন-
و ما کنت لديهم اذ يلقون اقلامهم أيهم يكفل مريم وكنت لديهم إذ يختصمون.
এগুলাে গায়বের সংবাদ, যা আমি আপনার প্রতি অবতারণ করেছি, আপনি তাদের নিকট ছিলেন না, যখন তারা স্বীয় কলমগুলাে নিক্ষেপ করেছিলাে যে, তাতে কে মরিয়মকে প্রতিপালন করবে এবং আপনি তাদের নিকট ছিলেন না, যখন তারা ঝগড়া করছিলাে।)
✦আল্লাহ তায়ালা আরাে ঘােষণা করেছেন-
(এগুলাে গায়বের সংবাদ, যা আমি আপনার নিকট ওহী করেছি।)
এ সম্পর্কিত আরাে অনেক আয়াত রয়েছে। সুতরাং আমাদের প্রতিপালক (আল্লাহ) যিনি (গায়ব সম্পর্কে) এমনভাবে নিষেধ করেছেন, যা অস্বীকার করা যায়না, আর প্রমাণও এমনভাবে করেছেন, যাতে কোন সন্দেহের অবকাশ থাকতে পারে না। সুতরাং স্বীকৃতি ও অস্বীকৃতি (নফী ও ইছবাত) উভয় প্রকার আয়াতই সঠিক, সবই বিশ্বাসের। যে কেউ এ উভয় প্রকার আয়াতের কোন একটিকে অস্বীকার করে সে কুরআনকেই অস্বীকার করে। অতএব, যে ব্যক্তি আল্লাহ ব্যতীত অন্যের জন্য ইলমে গায়ব (অদৃশ্য জ্ঞান) সম্পূর্ণরূপে অস্বীকার করে যে, কোন কারণেই তা স্বীকার করে না, তাহলে সে স্বীকৃতিবাচক আয়াতগুলােই অস্বীকার করেছে। আর শর্তহীনভাবে (অদৃশ্য জ্ঞান) এমনভাবেই স্বীকার করে যে, কোনভাবেই তা অস্বীকার করে না, তাহলে সে ঐ আয়াতগুলাের সাথে কুফর করে যাতে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করা হয়েছে। আর মুমিনগণ সব আয়াতের উপরই বিশ্বাস স্থাপন করেন। এতে তারা কখনাে। ভিন্নমত পােষণ করেন না। অথচ স্বীকৃতি-অস্বীকৃতির হুকুমতাে একত্রে বর্তায়।
এ কারণে উভয়ের জন্য ভিন্ন ভিন্ন ক্ষেত্র তালাশ করা অপরিহার্য। (এ মূলনীতির ভিত্তিতে) আমি মহান আল্লাহর উপর ভরসা করে বিশ্লেষণের ময়দানে ঝাঁপ দিচ্ছি এবং যারা প্রতারণা ও ধােকাবাজির আশ্রয় গ্রহণ করেছে, তাদের উপর দৃঢ়তার সাথে দন্ডায়মান হয়ে আমার বক্তব্য উপস্থাপন করছি।
ইলম বা জ্ঞানের কয়েকটি শ্রেণী বিভাগঃ
(টিকা ১) করা যায়। তন্মধ্যে একটি এর মাছদার তথা উৎপত্তি সূত্রের ভিত্তিতে দ্বিতীয় পদগত সম্পর্কের ‘লাম’ বর্ণের উপর জবর সহকারে এ থেকে আরাে একটি প্রকারও বের হয় যে, এর সম্পর্ক কিভাবে হয়েছে।
এ প্রথম প্রকার হলােঃ হয়তাে সত্তাগত (টিকা ২) হবে, যখন তা মূল জ্ঞানী সত্তা থেকে প্রকাশ পায় এবং তাতে না কারাে অংশ থাকবে, না তা কারাে প্রদত্ত হবে, কোন কার্যকারণগত হবে।
টিকা ১:
(১) এ প্রকারে গ্রন্থকারের প্রশংসাবলী আল্লাহর জন্য। তা অত্যন্ত সুস্পষ্ট ও খুব জ্ঞাতকারী বর্ণনায় পরিবেষ্টনকারী। যদ্বারা কোন গুবারের (ধুলােয় আচ্ছন্ন ব্যক্তি) আল্লাহর জ্ঞান ও বান্দার জ্ঞানে কলহ (মতভেদ) সৃষ্টি করার পথ অবশিষ্ট রইলােনা। আল্লাহর সাথে সমানত্বের মুখতা সুলভ বাক্যের ভিত্তিতে যে সন্দেহের সৃষ্টি হতাে তা সম্পূর্ণরূপে দুরিভূত করে দিয়েছেন। চমৎকার জৌতির্ময় বাক্য, আর কি সুন্দর সুক্ষদশী যুক্তি ও প্রমাণ। সত্যিই তাই, সত্যিই যদি এমন না হয়, তাহলে কোন কিছুই নয়। হামদান ওনাঈসী মালেকী (মুদাবৃরিস হারামে নববী শরীফ) এটা লিখেছেন। আল্লাহ তায়ালা তাঁর মাগফিরাত করুন, আমীন।
এ টীকা ঐ টীকাসমূহের মধ্যে সর্বপ্রথম যদ্বারা আমার কিতাবকে আল্লামা হামদান (আল্লাহ তায়ালা তাঁকে উত্তম প্রতিদান প্রদান করুন) মর্যাদাবান করেছেন। আর সকল প্রশংসা আল্লাহ তায়ালার জন্য, যিনি সমগ্র জাহানের প্রতিপালক।
টিকা ২:
(২) এ শ্রেণীবিন্যাস উজ্জ্বল ও সুস্পষ্ট। সম্মানিত ওলামা কিরাম বিভিন্ন স্থানে তা বর্ণনা করেছেন এবং স্বয়ং আমাদের এ অদৃশ্য জ্ঞানের মাসয়ালায় তা ব্যক্ত করেছেন। সত্বর এ সম্পর্কিত বর্ণনা শীর্ষস্থানীয় ইমাম আবু জাকারিয়া নবভী ও ইমাম ইবনে হাজর মককীর (رحمة الله) ব্যাখ্যা সহকারে উদ্ধৃত হবে যে, মাখলুক থেকে সত্ত্বাগত জ্ঞান ও সম্পূর্ণ পরিবেষ্টিত জ্ঞান নঞর্থক (অস্বীকারবােধক)। কিন্তু বিস্ময় তাদের থেকে যারা এ বিন্যাসগুলাের বিশুদ্ধতায় বিশ্বাস রাখে আবার তারাই এ গুঞ্জন করে যে, যদিও তা মূলতঃ বিশুদ্ধ কিন্তু দার্শনিকদের ঐসব সুক্ষ্ম বক্তব্য ও চিন্তার ফসল যা মহামান্য ওলামা কেরাম, বুদ্ধিজীবি ও সুস্থ বিবেক সম্পন্ন লােকেরা,
কুরআনে করীম ও রাসুলে করীম (ﷺ)-এর হাদীসের মর্মার্থের ব্যাপারে গ্রহণ করেন না। এটাও দাবী করে বসেছে যে, এটা মুসলমানদের মহান ফিতনায় নিমজ্জিত করা ও আল্লাহর দ্বীনের, শক্ত রঞ্জুকে বন্ধনমুক্ত , করে ছিন্ন ছিন্ন করে ফেলা ছাড়া আর কিছু নয়।
অতঃপর সামান্যতমই বিলম্বে স্বয়ং উক্ত বর্ণনা আল্লামা নবভী ও ইবনে হাজার প্রমুখ ইমামদ্বয়ের দিকে সম্পর্কিত করেছে। অথচ তাঁরা অস্বীকৃতি জ্ঞাপক আয়াতে জ্ঞানকে সত্ত্বাগতভাবে চিরস্থায়ী জ্ঞান এবং পরিপূর্ণরূপে পরিবেষ্টনকারী জ্ঞানের উপর প্রয়ােগ করেছেন। তাদের মতে, অবশ্যই এ ইমামদ্বয় না ওলামায়ে দ্বীনের অন্তর্ভূক্ত, না সুস্থ বিবেক সম্পন্ন, বরঞ্চ মুসলমানদের আশ্চর্যজনক ফিতনায় নিমজ্জিতকারী! আল্লাহর পানাহ!। যদি তারা দ্বীনের শক্ত রঞ্জুকে খুলে চুরমার করে দিয়েছেন (ইমামদ্বয়) এমন হন (আল্লাহ উভয়কে তা থেকে হিফাজতে রাখুন তাহলে কেন তারা তাঁদের থেকে সনদ গ্রহণ করেছেন তাঁদের ইমাম বানিয়েছেন এবং তাঁদের বাণী সনদ হিসেবে পেশ করেছেন! লা হাওলা ওয়ালা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ।
(টিকা শেষ)________________
দ্বিতীয় প্রকার প্রদত্ত, যা কারাে প্রদানের (টিকা ১) ভিত্তিতে হয়ে থাকে।
প্রথম প্রকার (সত্তাগত গায়ব) আল্লাহ তায়ালার জন্য খাস (নির্দিষ্ট), অন্যের জন্য তা অসম্ভব। যে কেউ এ প্রকারের গায়ব কারাে জন্য সাব্যস্ত করে তা যত অল্প পরিমানই হােক না কেন, সে অকাট্যভাবে মুশরিক হয়েছে এবং নিঃসন্দেহে ধ্বংস হয়েছে।
দ্বিতীয় প্রকার তাঁর বান্দাদের জন্য নির্দিষ্ট; যা আল্লাহর জন্য অসম্ভব। এ ধরনের জ্ঞান যদি কেউ আল্লাহর জন্য সাব্যস্ত করে, সে কাফির। কেননা, সে আল্লাহর জন্য এমন বস্তু সাব্যস্ত করেছে, যা শিরকে আকবর’ থেকেও জঘণ্য ও নিন্দনীয়। কেননা, মুশরিকতাে সে ব্যক্তিই যে আল্লাহর সাথে অন্যকে খােদার সমতুল্য জানে। অধিকন্তু সে (খােদা ব্যতীত) অন্যকে খােদার চেয়ে নিকৃষ্ট জ্ঞান করেছে যে, সে নিজের জ্ঞান ও শ্রেষ্ঠত্বের ফয়েজ আল্লাহর প্রতি পৌছিয়ে দিয়েছে।
__________________
(টিকা ১) জেনে রাখুন! যে বস্তু অপরের কারণে হয়, তা অবশ্যই অপরের দানের অন্তর্ভুক্ত হবে। কেননা, অপরের কারণ শুধুমাত্র মাখলুকের জ্ঞানেরই অন্তর্ভূক্ত। আর তা সবই আল্লাহর প্রদানের মাধ্যমেই হয়। যেমন শিক্ষক ছাত্রের জ্ঞানের কারণ হয়, কিন্তু দাতা হলেন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা। কেননা, সে চিন্তা করেনি যে, যা অপরের কারণে হয়, তা অপরের প্রদত্ত হয় না, যতক্ষণ না উভয়ের মধ্যকার মাধ্যম হয়। অতএব, তা প্রমাণিত হলাে।
দ্বিতীয় প্রকার জ্ঞান দু'প্রকারঃ
এক. মুতলাকুল ইলম বা ইলমের শর্তহীনতা।
এটা বলতে আমি ঐ শর্তহীন (জ্ঞান) বুঝিয়েছি যা উসুল শাস্ত্রের পরিভাষায় বিদ্যমান। এমন জ্ঞান প্রমাণ করার জন্য কোন একটি একক হওয়াই আবশ্যক। আর অস্বীকার করা প্রত্যেক একককেই অস্বীকার করা বুঝায়। আর এ মুতলাক’। হয় অনির্দিষ্ট একক, নতুবা প্রকৃত সত্ত্বা, যা কোন এককে পাওয়া যায়। যেমন এর বিশ্লেষণ আমার শ্রদ্ধেয় পিতা তাঁর রচিত ‘উলুমুর রাশাদ লিকময়ে মবানিয়িল ফাসাদ’ নামক গ্রন্থে বিশ্লেষণ করেছেন। সুতরাং এখানে বিষয়টির ইতিবাচকীয়তা হচ্ছে অংশতঃ। কারণ বিষয়টি সামগ্রিকতার ক্ষেত্রে ব্যাপক।
অপরদিকে, নেতিবাচকীয়তা হচ্ছে সামগ্রিক দুই ইলমে মুতলাক্ব (শর্তহীন ইলম) তা দ্বারা আমার উদ্দেশ্য হলাে ঐ জ্ঞান, যা সকল মৌলিক জ্ঞানকে শামিল করে নেয়। তা ততক্ষণ প্রমাণিত হয় না, যতক্ষণ না সকল একক (আফরাদ) বিদ্যমান হয় এবং যা কোন একটি এককের নিষেধের দ্বারা দূরিভূত হয়ে যায়। সুতরাং ইতিবাচক এখানে সামগ্রিক এবং নেতিবাচক অংশতঃ হবে।
আর এ জ্ঞানের সম্পর্ক দু’কারণের ভিত্তিতে হয়।
এক. এজমালী (সামগ্রিক),
দুই. তাফসীলী বা.বিস্তারিত, যাতে প্রত্যেক জ্ঞান পৃথক ও প্রত্যেক বােধগম্য বস্তু অন্যবস্তু থেকে আলাদা হবে।
অর্থাৎ জ্ঞানীর কাছে যত প্রকার জ্ঞান আছে, তা হয়ত সম্পূর্ণ কিংবা আংশিক। দ্বিতীয় প্রকারের ভিত্তিতে তা চার প্রকার হবে। তন্মধ্যে প্রথমটি আল্লাহ তায়ালার জন্য খাস, যা হলাে শর্তহীন বিস্তারিত জ্ঞান। এ আয়াতই এর প্রমাণ বহন করে-(আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেক বস্তু সম্পর্কে জ্ঞাত)। কেননা, আমাদের মহান প্রতিপালক তাঁর পবিত্রতম জাত (সত্ত্বা), অসীম গুণাবলী, সব ঘটনাবলী যা সংঘটিত হয়েছে ও কিয়ামত পর্যন্ত যা সংগঠিত হতে থাকবে এবং সকল সম্ভাব্য বস্তু যা না কখনাে অস্তিত্ব লাভ করেছে না অস্তিত্ব লাভ করবে বরং সকল অসম্ভাব্যতা সম্পর্কেও জ্ঞাত আছেন। সুতরাং, সকল জ্ঞান থেকে কোন জ্ঞান আল্লাহর নিকট লুকায়িত ও তার বহির্ভূত নয়। তিনি সবকিছুর জ্ঞান বিস্তারিতভাবে জানেন-আদি থেকে অনন্তকাল পর্যন্ত।
আর আল্লাহ তায়ালার পবিত্র সত্ত্বা এবং গুণাবলীও অসীম (গায়রে মুতান্নাহিয়া) * তন্মধ্যে এক একটি গুণ এবং সংখ্যার পরম্পরাসমূহও (টিকা ১) অসীম-অশেষ। আর 'অনুরূপ অনন্তকাল দিবস (টিকা ২) ও এর সময়-মুহুর্ত এবং জান্নাতের নিমাতসমূহ, জাহান্নামের প্রতিটি শাস্তি, জান্নাত ও জাহান্নামবাসীদের শ্বাস-প্রশ্বাস, চোখের পলক, নড়াচড়া (টিকা ৩) সহ অন্যান্য সব বস্তু এমন, যার শেষ নাই অসীম-অশেষ।
এ সব কিছুর পূর্বাপর সকল জ্ঞান বিস্তারিতভাবে তিনি ‘আজল ও আবদে’ জ্ঞাত আছেন। সুতরাং আল্লাহর জ্ঞানে সীমাহীনতার পরম্পরাসমূহ বারংবারই সীমাহীন ও অসীম।
বরং (টিকা ৪) আল্লাহ তায়ালার জন্য প্রতিটি ক্ষুদ্র থেকেও ক্ষুদ্রতর বস্তু ও অনু পরমানুতে অসীম' ও স্থায়ী জ্ঞান বিদ্যমান। এ কারণে যে, প্রত্যেক অতিক্ষুদ্র থেকেও ক্ষুদ্রতর যা সংঘটিত হয়েছে বা ভবিষ্যতে হবে বা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে অথবা যা কোন নিকটবর্তী, দূরবর্তী ও পার্শ্ববর্তীতে হবে এবং যা কালের পরিবর্তনে পরির্তিত হবে এবং এসব কিছু আল্লাহ তায়ালা সক্রিয়ভাবে জ্ঞাত আছেন। বুঝা গেলাে, আল্লাহ তায়ালার জ্ঞান অসীম থেকেও অসীমতর এবং অসীমতম। গণিত শাস্ত্রবিদদের পরিভাষায় তা অসীমিত্বের তৃতীয় পর্যায় তথা ঘনশক্তি যাকে মাকআব’ বলা হয়। সংখ্যাকে যখন তার মূলের সাথে গুণ করা হয়, তখন তা বর্গসংখ্যা হয়, আর যদি বর্গসংখ্যা, সে একই সংখ্যায় গুণ। করা হয়, তাহলে তা (মাকআব) বা ঘনসংখ্যা হয়। এসব সুস্পষ্ট বক্তব্য সে ব্যক্তিরই জন্য, ইসলামের সাথে যার সম্পর্ক রয়েছে এবং সুস্পষ্ট অংশ রয়েছে। স্মর্তব্য যে, কোন সৃষ্টি একই মুহুর্তে, একই সময়ে অসীমকে সক্রিয়ভাবে কোন ক্ষেত্রে কোন দিক থেকে পরিপূর্ণ স্বাতন্ত্রভাবে পরিবেষ্ট করতে পারে না। এ কারণে যে, স্বাতন্ত্র যখন হবে, তখন প্রত্যেক এককের পক্ষে এর বৈশিষ্টের প্রতি লক্ষ্য রাখতে হয়, আর অসীমের প্রতি লক্ষ্য রাখা এক মুহূর্তের জন্যও সম্ভব নয়। সুতরাং সৃষ্টির জ্ঞান যতই বেশী হউক এমনকি যদি আরশ (টিকা ৫) ও ফরশের মধ্যে প্রথম দিবস থেকে শেষ দিবস পর্যন্ত কোটি কোটি দৃষ্টান্তও যদি সব পরিবেষ্টিত হয়ে যায় তবুও (টিকা ৬) কার্যত সীমাবদ্ধই থাকবে।
কেননা, আরশ ও ফরশ দু'টি পরিবেষ্টিত সীমা। আর প্রথম দিবস থেকে শেষ দিবস পর্যন্ত এটারও দু'টি সীমা রয়েছে। আর যে বস্তু দু’টি সীমায় সীমাবদ্ধ হবে তা সসীম ব্যতীত হয় না। হাঁ, মাখলুকের জ্ঞান এ ভিত্তিতে অসীম হওয়া বিশুদ্ধ হতে পারে যে, ভবিষ্যতে কোন সীমার উপর যেন তা বাধাপ্রাপ্ত না হয় (সর্বাবস্থায় বৃদ্ধি পেতে থাকে)। আর এ অর্থের ভিত্তিতে আল্লাহর জ্ঞান অসীম হওয়া অসম্ভব। কেননা, তাঁর জ্ঞান ও গুণাবলী নতুন সৃষ্টি হওয়া থেকে পবিত্র ও অনেক উর্ধ্বে। সুতরাং প্রমাণিত হলাে, সক্রিয় অসীমতা আল্লাহ্ তায়ালার জ্ঞানের সাথেই খাস। আর ঐ অসীমিতুের বৃদ্ধি পাওয়া, কোন সময় বাধা প্রাপ্ত না হওয়া তাঁর বান্দাদের জ্ঞানের সাথেই নির্দিষ্ট। প্রথম প্রকারের জ্ঞান আল্লাহ তায়ালা ব্যতীত কারাে জন্য নয়।
_______________
(টিকা ১) আবদের’ (অনন্তকালীন) দিবসসমূহ ও তৎপরবর্তী বস্তু সম্পর্কে যখন আমাদের থেকে জিজ্ঞেস করা হলাে যে, আল্লাহ তায়ালা কি এর সংখ্যা সম্পর্কে জানেন? যদি না বলা হয়, তাহলে তা কতই না মন্দ অস্বীকৃতি! যদি হাঁ বলা হয়, তাহলে এ বস্তুসমূহ সসীম হওয়াই আবশ্যক হয়ে পড়বে। কেননা, স্থিরীকৃত সংখ্যা অসীম হয় না বরং সসীমই। তা দুটি সীমায় সীমাবদ্ধ। তার পূর্বে শুধুমাত্র একটি সংখ্যাই বৃদ্ধি করা যায় আর এভাবে তার পূর্বে এক পর্যন্ত আরাে বৃদ্ধি করা যায় সীমাবদ্ধতার মধ্যে সীমাবদ্ধ পর্যায়ে। সীমাবদ্ধতা এভাবেই বলা যায় যেমন ফতােয়ায়ে সিরাজিয়ায় উল্লেখ আছে- আল্লাহ তায়ালার জ্ঞান আছে, কিন্তু তাঁর জন্য কোন সংখ্যা নেই। আমি বলবাে, এটা আদবের প্রতি অনুসরণ যেমন আমি এ দিকে ইঙ্গিত করেছি। না হয় যার জন্য কোন সংখ্যা নেই তাঁর জন্য সংখ্যা নির্ধারণ করাও অজ্ঞতা। আর অজ্ঞতার অস্বীকৃতি আবশ্যক। সুতরাং যদি প্রথম মত গ্রহণ করা হয়, তাহলে তা আল্লাহর বাণীর অনুরূপই হবে- তারা বলে, এগুলাে হলাে আমাদের জন্য আল্লাহর সমীপে সাহায্যকারী, আপনি বলুন, তােমরা কি আল্লাহকে তা সম্পর্কে সংবাদ প্রদান করছে যে, তিনি জানেন না আসমান ও জমীনে যা কিছু রয়েছে? তারা যে শিরক করে তা থেকে আল্লাহ পবিত্র'।
(টিকা ২) বরং আমি বলবাে, এটা আল্লাহর অসীম থেকেও অসীমতর জ্ঞানের একটি। তাঁর অন্যান্য জ্ঞানের সমুদ্রেরতাে প্রশ্নই উঠেনা (তাতে গণনার বাইরে)। আর “সালাসিল” (পরম্পরাসমূহ) শব্দ বহুবচন বলার দ্বারা আমি এ দিকেই ইঙ্গিত করেছি। আর তা হলাে ১-২-৩ থেকে শেষ পর্যন্ত (সংখ্যা যতই নেয়া হােক তা) অসীম, আর বিজোড় সংখ্যা ১-৩-৫ থেকে শেষ পর্যন্ত নিলে তাও অসীম। আর জোড় সংখ্যা ২-৪-৬ থেকে শেষ পর্যন্ত তা অসীম। দ্রুপ ২-৫-৮-১১ শেষ পর্যন্ত নিলেও অসীম কিংবা ১ থেকে ৩টি করে বাদ দিয়ে ৫-৯-১৩শেষ পর্যন্ত অসীম অথবা ২ থেকে ৩টি করে সংখ্যা : বাদ দিয়ে ২-৬-১৯-১৪ নিলে তাও অসীম। অনুরূপ যত সংখ্যার পার্থক্যই হােক শেষ করা যাবেনা অনুরূপ প্রত্যেক সংখ্যা থেকে সেরূপ মিলিয়ে ১-২-৪-৮ শেষ পর্যন্ত গণতাতীত অথবা অনুরূপ ২টি সংখ্যা মিলিয়ে ১-৩-৯-২৭ শেষ পর্যন্তও অপরিসীম। আর এভাবে ৩ এর অনুরূপ সংখ্যা মিলিয়ে কিংবা ৪ থেকে শেষ পর্যন্ত তাও অসীম। আর যদি বিক্ষিপ্ত করে দেয়া হয় এবং কোন বিশেষ গঁৎ অনুসরণ করা না হয় তবুও অসীম থেকে অসীমতর। আর যদি পর্যায়ক্রমিকতা অনুসরন করা না হয় তখনও অসীম থেকে - অসীমতর। আর যদি বর্গসংখ্যা ১-৮-২৭-৬৪ শেষ পর্যন্ত নেয়া হয় তবুও অসীম। যদি ৩৬। (দ্রব্যসমূহ) ১-৪-৯-২৬ শেষ পর্যন্ত নেয়া হয়, তাহলে অসীম। আর (ঘনসমূহ) ১-৮-২৭-৬৪ শেষ পর্যন্ত নিলে তবুও অসীম। (দ্রব্যের দ্রব্য কিংবা(ঘন-এর দ্রব্য সমূহ) (ঘন-এর ঘন সমূহ) এর উপরের শক্তিসমূহের মধ্য থেকে অগণিত সংখ্যা পর্যন্ত নিলে সবই অসীম। আর যদি উল্লেখিত প্রত্যেক শক্তি উপরে আরােহনকারীর বিপরীত অবতীর্ণকারী শক্তিসমূহের পরম্পরা নিই যেমন ১২(বর্গমূল) কিংবা (ঘন এর অংশ) এবং (দ্রব্যের অংশ) তাও অসীম। আর ভগ্নাংশ যেমন (অর্ধেক), (এক তৃতীয়াংশ), (এক চতুর্থাংশ) পর্যন্ত অগণিত নিই, তাহলে সবই অসীম। আর এসবের পরম্পরা সবই অসীম থেকে অসীমতর এবং এ সব কিছুর জ্ঞান আল্লাহ তায়ালার জ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত। আর আজল’ থেকে ‘আবদ' পর্যন্ত সব কিছুর জ্ঞান পরিপূর্ণ বিস্তারিতভাবে তাঁর জ্ঞানে শামিল রয়েছে। আর এটা একটি মাত্র শ্রেণী বিন্যাস ঐ অসীম শ্রেণীসমূহ থেকে। সুতরাং পবিত্রতা ঐ সত্তার যাঁকে আকল ও বুদ্ধি দ্বারা পরিবেষ্টন করা যায় না। তিনি মহান ও পবিত্র বস্তু থেকে যে, তার সম্মানিত স্থান ও রাজদরবার পর্যন্ত যেখানে কাল্পনিক-স্বাপ্নিক ধারণা এবং কারাে অনুমান (সে পর্যন্ত) পৌছবে। সুতরাং তাঁর জন্যই সকল প্রশংসা। আর তাঁর নবীর উপর অগণিত দরূদ ও সালাম।
(টিকা ৩) দেখুন! ঐ বস্তুসমূহকে আমি অসীমই গণ্য করেছি। আর আমার বিশ্লেষণসমূহ হলাে মাখলুকের জ্ঞান অসীম কর্মসমূহকে সক্রীয়ভাবে পরিবেষ্টন করতে পারে না। আপনাদের নিকট ঐ প্রতারকের মিথ্যা উক্তি সুস্পষ্ট হয়ে যাবে, যে আমার উপর এ অপবাদ রটাতে চেয়েছিলাে যে, রাসুলে পাক(ﷺ)এর জ্ঞানের পরিবেষ্টন থেকে আল্লাহ তায়ালার জাত ও সিফাত ব্যতীত কোন বস্তু বাদ নেই। তাহলে সম্ভবতঃ সংখ্যা, দিন ও ঘন্টাসমূহ,, আয়াতসমূহ, জান্নাতের নি'মাত, দোযখের শাস্তি, শ্বাস-প্রশ্বাস, মুহূর্ত ও অঙ্গীভঙ্গিসমূহ সবকিছু তার মতে আল্লাহ তায়ালার জাত ও সিফাতের অন্তর্ভূক্ত। আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।
(টিকা ৪) আল্লাহ তায়ালার প্রশংসা। আমি এটা স্বীয় পক্ষ থেকে নিজ ঈমানী শক্তিবলে লিখে দিয়েছি। অতঃপর আমি তাফসীরে কবীরে' এর ব্যাখ্যা দেখেছি। তাতে এ আয়াতের ব্যাখ্যায় উল্লেখ আছে- ‘আমার শ্রদ্ধেয় পিতা মরহুম হযরত ইমাম ওমর জিয়াউদ্দিনকে বলতে শুনেছি যে, তিনি হযরত আবুল কাসেম আনসারী থেকে শুনেছেন। তিনি বলেছেন, আমি ইমামুল হারামাইন (رحمة الله) কে বলতে শুনেছি- “আল্লাহর জ্ঞান সকল ক্ষেত্রেই অসীম। এ জ্ঞানসমূহের মধ্য থেকে প্রতিটি একক সম্পর্কেও তাঁর জ্ঞান অসীম। কেননা, এককের সত্ত্বা পরিবর্তনের ভিত্তিতে অসীম বস্তুতে পাওয়া যাওয়া সম্ভব এবং তা পরিবর্তনের ভিত্তিতে অসীম গুণাবলীর সাথে প্রশংসিত হওয়াও সম্ভব। তিনি আরও বলেন- “আর অসীম জ্ঞানসমূহ একবার সৃষ্টির জ্ঞানে অর্জিত হওয়া অসম্ভব। সুতরাং এখন আল্লাহ তায়ালা প্রকাশ করা ব্যতীত ঐ জ্ঞানসমূহ অর্জিত হওয়ার কোন পন্থা নেই। তা কতেকের পর কতেক অর্জিত হতে থাকবে। এর শেষ সীমা নেই। আর না ভবিষ্যতেও তা শেষ পর্যন্ত অর্জন করা যাবে। এ কারণে আল্লাহ তায়ালা (তিনিই অধিক জ্ঞানী) ইরশাদ করেন নি; বরংঃ ইরশাদ করেছেন। বিশ্লেষকদের বাণী থেকেও তাই প্রমাণিত হয়। যেমন•(আল্লাহর দিকে সফরের সীমা রয়েছে) (কিন্তু আল্লাহর মধ্যে সফরের কোন সীমা নেই) আল্লাহ তায়ালাই সর্বাধিক জ্ঞাত।
(টিকা ৫) আল্লামা শেহাবুদ্দিন খফাযী এক আয়াত এর ব্যাখ্যায়। আল্লামা তৈয়বী (رحمة الله) থেকে উদ্ধৃত করে বলেন- আল্লাহ তায়ালার জ্ঞানসমূহ অসীম। আসমান ও জমীনের গায়কসমূহ যা তিনি প্রকাশ করেন, আর যা তিনি গােপন করেন, তাঁর জ্ঞানের এক বিন্দু মাত্র।
______________
আল্লাহর পরিপূর্ণ পরিচয় লাভ কারাে পক্ষে সম্ভব নয়ঃ
আমি বলছি-যদি আমরা উক্ত সব বর্ণনা হতে দৃষ্টি বিচ্ছিন্ন করি তবুও অকাট্য প্রমাণ হওয়ার জন্য এ আয়াতই যথেষ্টঃ
(আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেক বস্তু পরিবেষ্টন করে আছেন)।
কেননা, আল্লাহর জাত সীমাবদ্ধ নয়, সুতরাং তাঁর সৃষ্টির কারাে পক্ষে সম্ভব নয় যে, আল্লাহ তায়ালাকে তাঁর সত্তার ন্যায় তিনি যেভাবে সেভাবে পরিপূর্ণ পরিচয় লাভ করা। তাই এটা বলা বিশুদ্ধ হবে না। এখন আল্লাহ তায়ালার পরিচয় লাভ হয়ে গেছে, যার পরে তাঁর পরিচয়। লাভের প্রয়ােজন নেই। কারণ, যদি এমন এতাে তাহলে এ জ্ঞান আল্লাহর সত্তাকে পরিবেষ্টনকারী হয়ে যেতাে, তখন আল্লাহ তায়ালা তার পরিবেষ্টনে এসে যেতো।
- তিনি এ থেকে পবিত্র যে, তাকে কোন বস্তু পরিবেষ্টন করতে পারে। বরং তিনি সব বস্তুকে পরিবেষ্টন করে রয়েছেন। আল্লাহর পরিচয় লাভকারী নবী, ওলী, সালিহ ও মুমিনগণের পরস্পর মর্যাদাগতভাবে যে পার্থক্য তা তাঁর পরিচয় লাভের ভিত্তিতেই।
যে যত বেশী আল্লাহর পরিচয় লাভ করেছেন, তিনি ততই নৈকট্যবান ও উচ্চ মর্যাদায় আসীন হয়েছেন। সুতরাং অনন্তকাল পর্যন্ত তাদের। জ্ঞান উত্তরােত্তর বৃদ্ধি পেতেই থাকবে, কিন্তু কখনাে তার জ্ঞান পরিবেষ্টনে সক্ষম ও শক্তিশালী হবেনা বরঞ্চ (টিকা ১) সীমাবদ্ধ জ্ঞানই লাভ করবে। আর সব সময় তাঁর পরিচয় লাভের ক্ষেত্রে অসীমতাই অবশিষ্ট থেকে যাবে। প্রমাণিত হলাে যে, আল্লাহ তায়ালার সকল জ্ঞান পরিপূর্ণ বিস্তারিতভাবে কোন সৃষ্টির পক্ষে পরিবেষ্টন করার দাবী যুক্তি ও শরীয়ত উভয় দৃষ্টিতে অসম্ভব। বরং সৃষ্টির আদি থেকে অন্ত পর্যন্ত সকল জ্ঞান যদি একত্রিত করা হয় তাহলে জ্ঞানসমূহের সমষ্টির সাথে আল্লাহর জ্ঞানের প্রকৃতপক্ষে কোন সম্পর্কই হবে না। এমনকি একটি বৃষ্টি ফোটাকে দশ লাখ ভাগে বিভক্ত করে তার সাথে দশ লাখ সমুদ্রের যে সম্পর্ক, তাও হতে পারে না। কেননা, বৃষ্টি ফোটার এ অংশও সীমাবদ্ধ। আর সমুদ্রের পানি নিঃশেষ হয়ে যাবে, সমুদ্র শুষ্ক হয়ে যাবে। কেননা এর পানি সীমাবদ্ধ। কিন্তু অসীম হতে সসীমের যত মহান অসীম অংশের উদাহরণই নেয়া হােক না কেন, তা সর্বাবস্থায় সসীমই থাকবে। আর তাতে সব সময় অসীমতা বাকী থেকে যাবে। সুতরাং কখনাে কোন সম্পর্ক হাসিল হতে পারে না।
টিকাঃ গায়াতল মামুলের খন্ডনঃ
এ উজ্জ্বল ব্যাখ্যাসমূহ প্রত্যক্ষ করেন। এটাও বারংবার এ অধ্যায়ে এসেছে যে, মাখলুকের জ্ঞান অসীম কর্মকে পরিবেষ্টন করতে পারে না। এখন প্রতারকদের প্রতারণার পরিমাণ অনুমান করুন, যারা আমার বিরুদ্ধে এ উক্তির অপবাদ রটিয়েছে যে, সৃষ্টির জ্ঞান অসীম জ্ঞানসমুহ পরিবেষ্টনকারী, সুতরাং যে সৃষ্টির জন্য অসীম কর্মের মধ্য থেকে একটি - জ্ঞান অর্জিত হওয়াকেও সুস্পষ্ট প্রমাণ দ্বারা খন্ডন করেছে সে কিভাবে সকল অসীম। কর্মসমূহ পরিবেষ্টনের উক্তি করবে?
হায়রে আফসােস! যদি তারা এ কথা বলতাে যে, আমার পুস্তিকায় নেই তাহলে এ মাসয়ালার 'অস্বীকৃতির জন্য প্রতিবাদ হতাে স্বীকৃতির জন্য নয়। সুতরাং ঐ সময় এর সম্পর্ক যদি হতাে, তাহলে শুধু অপবাদই হতাে। কিন্তু আমিতাে বেশ কয়েক স্থানে এর নিষেধ সম্পর্কে সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছি। সুতরাং আমার দিকে এর সম্পর্ক করা অপবাদ, হটকারিতা, একগুয়েমী ও কঠোর শত্রুতার বহিঃপ্রকাশ। কিন্তু এতে আশ্চর্য হবার কিছু নেই যে, এগুলাে ফ্যাসাদ সৃষ্টিকারী ওহাবীদের কারসাজী। কেননা, তারাতাে এ ধরণের অনেক অপবাদ রটনায় অভ্যস্ত এবং এটাই তাদের উত্তম পুঁজি। সুতরাং এ পুস্তিকা সৃষ্টির জ্ঞান কর্মের সাথে অসীম হওয়ার পরিবেষ্টন সম্পর্কে যে বক্তব্য প্রদান করেছে এর স্বরূপ উন্মোচিত হয়েছে। আর এটা দূর থেকে আহবান এবং তার ঐ অভিযােগের খন্ডন যা সে কল্পনা করেছে। বরং যার চিন্তা-ভাবনা সে নিজেই করেছে। আমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা ও নিরাপত্তা প্রার্থনা করি।
(টিকা ১) আশ্চর্য এ থেকে, যে এটা শুনেছে। অতঃপর রাসূলে পাক (ﷺ)-এর জ্ঞান_হাস করার জন্য হাদীসে শাফায়াত দ্বারা দলীল গ্রহণ করেছে--“অতঃপর আমি মাথা উত্তোলন করবাে এবং স্বীয় প্রতিপালকের হামদ ও গুণকীর্তন এমন প্রশংসা ও স্তুতিবন্ধনা দ্বারা করবাে, যদ্বারা আমার প্রতিপালক আমাকে অবগত করাবেন।” অতঃপর (১৬ পৃঃ) বলেন-“এটা প্রমাণিত যে, আল্লাহ তায়ালা তাঁকে তাই জ্ঞাত করবেন, যার জ্ঞান তাঁর নিকট ইতােপূর্বে ছিলােনা। আর এটা উপরােক্ত বেষ্টনীকে বাতিল করে দেয়।
_______________
আল্লাহর উপর এধরণেরই (১) আমাদের ঈমান। এদিকেই হযরত খিজির (আঃ) এক বাণীতে ইঙ্গিত করেছেন, যা তিনি হযরত মুসা (আঃ) কে বলেছিলেন, যে সময় পাখী সমুদ্র থেকে ঠোট ভরে এক বিন্দু পানি নিয়েছিলাে। যা হােক এ প্রকার জ্ঞান আল্লাহর জন্যই খাস্।
বাকী রইলাে অন্য তিন প্রকার, অর্থাৎ ইলমে মুতলাক ইজমালী (জ্ঞানের শর্তহীন সামগ্রিকতা) মুতলা ইলমে
সে নিশ্চয়ই পূর্বে আমার এ উক্তি শ্রবণ করেছে যে, আল্লাহ তায়ালার জাত সীমাহীন, তাঁর সিফাত (গুণাবলী) অসীম এবং তাঁর প্রত্যেক গুণও অসীম। সুতরাং অসীম কর্মের সাথে মাখলুকের জ্ঞানের নিঃসন্দেহে কোন সম্পর্কই নেই। অতএব, রাসূলে পাক (ﷺ) পরকালে আল্লাহ তায়ালার অন্য সিফাত সম্পর্কে জ্ঞাত হওয়া যাঁর জ্ঞান ইতিপূর্বে ছিলােনা, উল্লেখিত বেষ্টনীতে কি তিরস্কার হতে পারে? অতএব, তার এ উত্থাপিত আপত্তির জবাব এটাই দেয়া হলাে, যদি তােমার উদ্দেশ্য এই হয় যে, তিনি সে সময় এমন কালাম দ্বারা বাক্যালাপ করবেন যা আল্লাহ তায়ালার জাত ও তাঁর মুল সিফাতের প্রমাণ বহন করে তাহলে এটা বিশুদ্ধ নয় এবং এতে অহেতুক দীর্ঘালাপই করেছেন মাত্র। এটাতাে প্রমাণিত মাসয়ালা। এর ব্যাখ্যা আমি পূর্বে করেছি। আর এর দ্বারা তােমার উদ্দেশ্য যদি অন্যকিছু হয়, তাহলে উপরােক্ত বেষ্টনী বাতুলতা প্রমাণিত হয়ে যায়।
সুতরাং দেখুন ঐ ব্যক্তিকে, যার ধারণা যে, আল্লাহ তায়ালা স্বীয় সকল গুণাবলীর সাথে - যা প্রথম দিন থেকে সংঘটিত হয়েছে, আর-যা শেষ দিবস পর্যন্ত হতে থাকবে, এর মধ্যে অন্তর্ভূক্ত, সীমাবদ্ধ এবং লাওহ-ই মাহফুজে লিপিবদ্ধ রয়েছেন। আর এর বহির্ভূত জাত ও সিফাতের মৌলিকতা মাত্র। সুতরাং যখন নবীয়ে করীম (ﷺ) তাঁর হলাে জাত ও সিফাত সম্পর্কিত কোন নতুন জ্ঞান পরকালে পান, যে সম্পর্কে তিনি দুনিয়াতে জানতেন না; তাহলে তা দু’অবস্থা থেকে মুক্ত নয়। হয়তঃ তিনি আল্লাহ তায়ালার জাত ও সিফাতের রহস্য সম্পর্কে জানলেন। কেননা, তা ‘লাওহ-ই মাহফুজের বহির্ভূত অথবা তার জ্ঞান দুনিয়াতে ঐ বস্তুসমূহ পরিবেষ্টনকারী ছিলাে না, যা লাওহ-ই মাহফুজে সীমাবদ্ধ রয়েছে। আর সে এটা জ্ঞাত হয় নি যে, লাওহে সীমাবদ্ধ জ্ঞান সসীম, আর জাত ও সিফাতের সাথে সম্পর্কিত জ্ঞান অসীম। তাতে আম্বিয়ায়ে কিরামের জ্ঞানসমূহ অনন্তকাল পর্যন্ত বৃদ্ধি হতে থাকবে। আর তাঁদের কখনাে কোন অবস্থাতেই সসীম ছাড়া অসীমের জ্ঞান হাসিল হবে না। আর অসীম কখনাে সসীম হবে। সুতরাং যে সব বিষয় থেকে বিরত থাকা বাঞ্ছনীয়তার কোনটিই আবশ্যক হয়নি এবং অবােধ্যতার দরুণ চোখের উপর পর্দাই পড়েছে। আল্লাহর কাছে উভয় জাহানের নিরাপত্তা কামনা করি।
ইজমালী (সামগ্রিক শর্তহীন জ্ঞান) এবং ৮ তাফসীলী (বিস্তারিত জ্ঞান) এগুলাে আল্লাহর সাথে খাস নয়। বরং যদি আমরা সামগ্রিক জ্ঞানকে বস্তুহীন শর্তের ভিত্তিতে ধরে নিই অর্থাৎ যেখানে একটি বিষয়ের জ্ঞান অন্য বিষয় থেকে সম্পূর্ণ স্বাতন্ত্র হবে না, তখন ইজমালি জ্ঞানের উভয় প্রকার আল্লাহ তায়ালার জন্য অসম্ভব হবে এবং বান্দাদের সাথেই খাস হওয়া অপরিহার্য হয়ে যাবে।' ‘সামগ্রিক শর্তহীন জ্ঞান বান্দাদের জন্য অর্জিত হওয়া যুক্তিগত ও দ্বীনের প্রয়ােজনাদির অন্তর্ভুক্ত। এ জন্য যে, আমরা বিশ্বাস স্থাপন করেছি (আল্লাহ প্রত্যেক বস্তু সম্পর্কে জ্ঞাত) প্রত্যেক বস্তু সম্পর্কে জ্ঞাতি বলতে আমরা আল্লাহর সকল জ্ঞানই বুঝেছি এবং তা সবই সামগ্রিকভাবেই জেনে। নিয়েছি। সুতরাং যে নিজের বেলায় তা অস্বীকার করেছে সে ঈমান এবং এ আয়াতকেই অস্বীকার করেছে এবং স্বয়ং নিজের কুফরকেই মেনে নিয়েছে। আল্লাহর কাছে পানাহ্। "
টিকাঃ আল্লামা শেখ আবুল হাসন বিকরীর (رحمة الله) উক্তি
‘হুজুর (ﷺ) আল্লাহ তায়ালার সকল জ্ঞানে জ্ঞানী’-এর পর্যালােচনাঃ🔴
(১) যে ব্যক্তি পূর্বোক্ত অধ্যায়ের সব বিষয়বস্তু চিন্তা ও গবেষণার দৃষ্টিতে তাকাবে, বিশেষতঃ পেছনের বাক্যাবলীতে যে, সৃষ্টিকর্তা ও সৃষ্টির জ্ঞানে অকাট্যভাবে কোন সম্পর্ক নেই’—তিনি নিশ্চিত বুঝে নেবেন যে, আল্লাহর শপথ! মিথ্যা ও প্রতারণার উপর যারা সৃষ্টি ও স্রষ্টার জ্ঞানকে সমান বলে যার দিকে সম্পর্কিত করেছে তিনি এমন মিথ্যা দাবী থেকে নিশ্চয়ই পবিত্র এবং এটা স্থায়ী ও অস্থায়ীর পার্থক্য মাত্র। তা সত্ত্বেও আমরা এর প্রবক্তার ব্যাপারে কাফের বলা পছন্দ করি না, যেমন মওদুআত গ্রন্থে রয়েছে। কেননা, কতেক আরিফ থেকে এ প্রকারের উক্তি বর্ণিত হয়েছে। আর তারা আমাদের সরদার আবুল হাসান বিকরী (رحمة الله) ও তাঁর অনুসারী। আল্লামা শেখ উসমাভী (رحمة الله) শরহে সালাতে সৈয়দ আহমদ বদভী আল কবীর (رحمة الله)-এ উল্লেখিত হয়েছে যে, আল্লামা ওমর হালবীর কালামে রয়েছে- সৈয়দী মুহাম্মদ বিকরীর এক উক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলাে যে, নবী করীম (ﷺ) আল্লাহর সব জ্ঞানই জানতেন। সারাংশ এই যে, শেখ মুহাম্মদ বিকরীর উক্তি ইক ও বিশুদ্ধ। এজন্য সম্ভব যে, আল্লাহ তায়ালা তাঁকে নিজের সমস্ত জ্ঞান প্রদান করেছেন এবং তাঁকে সে বিষয়ে অবগত করেছেন। আর এ উক্তি দ্বারা এটা আবশ্যক হবে না যে, মুহাম্মদ (ﷺ) রাবুবিয়াতের স্থান পর্যন্ত পৌঁছে যাবেন। এ কারণে যে, উক্ত জ্ঞান আল্লাহ তায়ালার জন্য সত্তাগতভাবে প্রমাণিত। আর মুস্তাফা (ﷺ)-এর জন্য আল্লাহরই শিক্ষার মাধ্যমে। এরপর আল্লামা উসমাভী (رحمة الله) বলেন, আমাকে আমার কতেক সঙ্গী বলেছেন ‘আমরা যখন বলবাে যে, রাসূলে পাক (ﷺ) প্রত্যেক বস্তু সম্পর্কে অবগত আছেন, তাহলে তাঁর জ্ঞানতাে আল্লাহর জ্ঞানের সমান হওয়া আবশ্যকীয় হয়ে পড়বে। আমি এর উত্তরে বলেছি, এর দ্বারা এসব কিছু অপরিহার্য হয় না। কারণ, আল্লাহর জ্ঞান হলো প্রকৃত ও মৌলিক। আর নবী করীম (ﷺ)এর জ্ঞান স্বভাবগত ও প্রদত্ত। তাঁরা এ জবাবে সন্তুষ্ট হন এবং তা তাদের মনঃপুত হলাে।
১০৭ শেখ বিকরীর এ উক্তির দিকে শেখ মােহাক্কেক আবদুল হক্ মুহাদ্দেস দেহলভী (رحمة الله)। 'মাদারেজুন্নবুয়তে” ইঙ্গিত করেছেন। তিনি তা না কুফর বলেছেন, না ভ্রষ্টতা, আর না অন্য কিছু। বরং তিনি তা কতেক আরিফদের উক্তি বলে অভিমত প্রকাশ করেছেন। তিনি শুধুমাত্র এটাই বলেছেন যে, এ উক্তি দৃশ্যতঃ অধিকাংশ প্রমাণাদির বিপরীত। আল্লাহই অধিক অবগত এ উক্তির মর্মার্থ দ্বারা বক্তার উদ্দেশ্য কি? মর্মার্থ সহকারে দ্বিতীয় নজরে সুস্পষ্ট বিশ্লেষণ সত্বর বর্ণিত হচ্ছে যে, রাসূলে পাক (ﷺ) এর জ্ঞান আল্লাহ তায়ালার সকল জ্ঞানকে পরবেষ্টনকারী দাবী করা ত্রুটিপূর্ণ, পরিত্যক্ত ও ভ্রান্ত। কিন্তু এটা ত্রুটি, পাপ ও কঠোর পাপ যে, যে ব্যক্তি এসব কিছু প্রত্যক্ষ করার পরও মিথ্যাপবাদ দেয় এবং এমন সুস্পষ্ট মিথ্যার দুঃসাহস দেখায়। মহান আল্লাহ তায়ালার তাওফীক ব্যতীত সক্কর্মের শক্তি ও অসৎকর্ম থেকে রক্ষার কারাে শক্তি নেই। নিশ্চয়ই এ অপবাদ ওহাবীদের আবিস্কৃত। আল্লাহ তায়ালা তাদের অপমানিত করুন। তারাতাে আল্লাহ ও রাসুলের উপর মিথ্যাপবাদ দেয়। সুতরাং তাদের রক্ষা করার কে আছে এবং কাদের ব্যাপারে অলসতা করবাে? আল্লাহর কাছেই ক্ষমা প্রার্থী। যদি আপনারা বলেন যে, মাওদুয়াতে কি বলা হয়নি- “যে ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালা ও রাসূলে পাক (ﷺ)-এর জ্ঞানের সমান হওয়ায় বিশ্বাস রাখে সে সকলের ঐকমত্যে কাফির যেমন তা কারাে নিকট গােপন নয়? " আমি বলবো যদি প্রত্যেক প্রকার সমান হওয়া উদ্দেশ্য হয়, তাহলে হাঁ! আল্লাহ ব্যতীত অন্য কেউ চিরস্থায়ী হওয়া এবং তা থেকে বেপরওয়া হওয়াই আবশ্যক হয়ে। পড়বে। যেমন ঐ পার্থক্যসমূহ আপনারা অবগত হয়েছেন যা আমি বর্ণনা করছি। আর এ সকল আরিফগণের বাক্যের সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই। কেননা, তাঁদের উক্তিসমূহ আপনারা প্রত্যক্ষ করেছেন। সুতরাং এমন উক্তি কোন মুসলমান করবে না, আর না যে এমন উক্তি করবে সে মুসলমান হবে।
আর যদি সমান শুধুমাত্র পরিমাণের মধ্যে উদ্দেশ্য হয়, যেমন তা বক্তব্যে সুস্পষ্ট। কেননা, তিনি এর ভিত্তি ইবনে কাইয়ুমের ধারণার উপর রেখেছেন যে, ঐ ব্যক্তি যাদের নিজ সীমালংঘন দ্বারা সীমাতিক্রমকারী’ নাম রেখেছেন। তাঁদের মতে এ যে, রাসুলে পাক (ﷺ)-এর জ্ঞান আল্লাহ তায়ালার জ্ঞানের হুবহু অনুগামী। সুতরাং আল্লাহ তায়ালা যা কিছু জানেন তা তাঁর রাসুলও জানেন, সুতরাং কুফরীর কোন কারণ রইলােনা। কেননা, প্রকৃতপক্ষে কোন নসই বর্ণিত হয়নি। আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেক বস্তুর উপর শক্তিমান। কোন জ্ঞান আল্লাহর জন্য সীমাবদ্ধ হওয়া তাঁর বান্দাদের প্রদান ও সাহায্যের বিপরীত নয়।
যেমন সত্বর বর্ণিত হচ্ছে। যদি এর দ্বারা কুফরী অপরিহার্য হয়, তাহলে (আল্লাহর আশ্রয়) ঐ ওলামা ও আউলিয়াদের কুফর আবশ্যক হয়ে যাবে যারা এ উক্তির প্রবক্তা যে, রাসুলে। পাক (ﷺ) কে কিয়ামতের জ্ঞান প্রদান করা হয়েছে এবং তাঁকে তা গোপন করার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে, যেমন এক্ষুণিই তা আপনাদের নিকট প্রকাশিত হবে। আর এটা ,। ‘মাওদুআত” গ্রন্থ থেকে বর্ণিত। স্বয়ং তিনি “রিসালাহ’-এর সমাপ্তিতে স্বীকৃতি দিয়েছেন যে, পরবর্তী ওলামা ও সুফীদের মধ্যে কতেক পক্ষ অদৃশ্য জ্ঞান প্রদানের দিকে অভিমত। প্রকাশ করেছেন। এতদসত্বেও তাঁদের ব্যাপারে কুফরী বা ভ্রষ্টতা বলেন নি।
বাকী রইলাে, তাঁর জ্ঞান পঞ্চ বিষয়ের সীমাহীন-শেষহীন হওয়া সম্পর্কে, এ মাসয়ালা হচ্ছে যুক্তিগত। এর উপর শরীয়তের কোন প্রমাণ (দলীল) নেই। আর না প্রত্যেক যুক্তিগত মাসয়ালা অস্বীকার করা কুফর, যদি তাতে দ্বীনের কোন বিষয় অন্তর্ভুক্ত। না থাকে। বরং আমি ইমামুল হাক্বায়েক সৈয়দী মুহিউদ্দীন (رحمة الله)-এর উক্তিতে তা হাসিল হওয়ার বৈধতা দেখেছি, তিনি তাতে অবশ্য জোর দেননি।
তবে আল্লাহর জ্ঞানের সুক্ষ্মতা ও যথাযথত্ব হাসিল হওয়ার বৈধতার ব্যাপারে অবশ্যই - ওলামায়ে কিরামের মধ্যে মতবিরােধ রয়েছে।
“শরহে মাওয়াক্কিফে” এর অস্বীকারকে ইমাম গাজ্জালী ও ইমামুল হারামাঙ্গনের ন্যায় কতেক সাথীদের দিকে সম্পৃক্ত করেছেন এবং বলেছেন, তন্মধ্যে কতেক ওলামা (কোন মন্তব্য করা থেকে) নিশুপ থেকেছেন। যেমন কাযী আবু বকর (رحمة الله) প্রমুখ।
আমাদের কতেক সাথী তা সংঘটিত হওয়ার প্রবক্তা। যেমন মাওয়াকিফ ও এর ব্যাখ্যা গ্রন্থে রয়েছে। তাহলে এমন একটি মাসয়ালার ব্যাপারে কুফরী ফতােয়া প্রদান কিভাবে বিশুদ্ধ হতে পারে? যদিও আমাদের জন্য নিষেধ সত্য, এমনকি আল্লাহর দর্শনের পরেও (নিষেধ)।
(আল্লাহ তায়ালা আমাদের উপকার প্রদান করুন) যদিও আল্লামা হালবী (رحمة الله) এ বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। মাওদুআত’ গ্রন্থের উক্তি= (যেমন গােপনীয় নয়) * দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, শুধুমাত্র তা কোথাও বর্ণিত দেখেননি, নিজ পক্ষ থেকে একটি বিষয় এ ধারণায় জুড়ে দিয়েছে যে, মাসয়ালা ঝগড়ার শক্তি রাখে না। আর ঐকমত্য এমন ধারণা দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়না, যার কোন দলীল নেই। সুতরাং কিভাবে একদল অলী সম্পর্কে এমন উক্তি দ্বারা কাফির ফতােয়া দেয়া বিশুদ্ধ হতে পারে যা না যুক্তিগত, না বর্ণিত ও গ্রহণযােগ্য। সুতরাং হকের উপর প্রতিষ্ঠিত থেকো, আল্লাহরই তাওফীক।
*রদ্দুল মােখতার 'বাবু ইদরাকিল ফরীদা’-এর একটি মাসয়ালায় যা ‘বাহারে' উল্লেখিত এবং এর পেছনে (পরে) লিপিবদ্ধ ছিলাে। যার বক্তব্য হলো, “সুস্পষ্ট কথা হলাে এই যে, 'বাহারে’ (তিনি) তা স্পষ্টতঃ বার্ণিত দেখেন নি।
_________
জ্ঞাতব্য যে, ইলমে মুতলা ইজমালী’ যখন বান্দার জন্য প্রমাণিত হলাে তখন ‘মুতলাক্ব ইলমে ইজমালী' প্রমাণিত হওয়াই স্বাভাবিক। অনুরূপ মুতলাক ইলমে তাফসীলী জন্যই যে, আমরা কিয়ামত, জান্নাত, দোযখ এবং আল্লাহ ও তার গুণাবলী থেকে সাতটি মৌলিক গুণাবলীর উপর ঈমান এনেছি এবং এগুলাে গায়ব ছাড়া কিছু নয়। আর এ সবের ব্যাপারে আমরা পৃথক পৃথক ও অন্যের থেকে স্বাতন্ত্র বুঝেছি। সুতরাং বুঝা গেলাে, গায়বসমুহের ‘শর্তহীন বিস্তারিত জ্ঞান প্রত্যেক মুসলমানেরই
(১) অর্জিত হওয়া অপরিহার্য হয়েছে আম্বিয়া (আঃ) এর তাে প্রশ্নই উঠে না। কেনই বা হবে না? আল্লাহ তায়ালাতাে আমাদেরকে গায়বের উপর ঈমান আর নির্দেশ দিয়েছেন। ঈমান হলাে সত্যায়নের নাম। আর সত্যায়ন হলাে জ্ঞান। অতএব, যে গায়ব জানবে না, সে এর সত্যায়ন করবে কি করে? আর যে সত্যায়ন (স্বীকার) করবেনা, সে ঈমান কিভাবে আনবে? প্রমাণিত হলাে, যে জ্ঞান আল্লাহ তায়ালার সাথে খাস হবার যােগ্য, তা হলাে সত্ত্বাগত। জ্ঞানই।
রাসুল (ﷺ) এর কাছে গায়বের কোন জ্ঞান নেই, তিনি শেষ পরিণতি সম্পর্কেও ‘অজ্ঞ' উক্তিকারী কাফিরঃ
আর শর্তহীন বিস্তারিত জ্ঞান যা আল্লাহ তায়ালার সকল মৌলিক জ্ঞান ভান্ডারের সাথে পরিবেষ্টিত হবে। অতএব, যে আয়াতসমূহে আল্লাহ ব্যতীত অন্যান্যদের জ্ঞান অস্বীকার করা হয়েছে, তাতে এ উভয় অর্থই উদ্দেশ্য হবে। আর এ কথাও প্রতীয়মান হলাে যে, যে জ্ঞান বান্দাদের জন্য প্রমাণ করা হবে তা প্রদত্ত জ্ঞান, যদিও তা মুতলকুে এজমালী হােক কিংবা মুলকু ইলমে তাফসীলী’ হােক। আর প্রশংসা এ দ্বিতীয় প্রকারের দ্বারাই হয়ে থাকে।
(১) তাফসীরে কবীরে রয়েছে এটি বলা নিষেধ নয় যে, গায়ব থেকে আমরা তাই জানি, যার উপর আমাদের জন্য দলীল রয়েছে। ইমাম কাযী আয়াজ (رحمة الله) থেকে নাসীমুর রিয়াদ শরহে শিফাতে’ বর্ণিত আছে- “আল্লাহ তায়ালা আমাদের গায়বের প্রতি, বিশ্বাস স্থাপন করা সম্পর্কে কষ্ট দিবেন না। বরং এর দ্বারা অকাট্যভাবে গায়বের দ্বার উন্মুক্ত করে দিয়েছেন। আল্লামা ইবনে জরীর আয়াতে করীমা এর ব্যাখ্যায় ইবনে জায়েদ থেকে রেওয়ায়েত করেন- ‘গায়ব’ হলাে কুরআন'। আর ইবনে যর থেকে বর্ণনা করেন-- ৫-১০ (দানীন) হলাে কৃপন, আর -- (গায়ক) হলাে কুরআন। ইমাম মােজাহিদ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-“তিনি সে সম্পর্কে কৃপনতা করেন না, যে সম্পর্কে তাঁর জ্ঞান রয়েছে। হযরত কাতাদাহ থেকে বর্ণিত-“নিঃসন্দেহে এ কুরআন গায়ব (অদৃশ্য বস্তু)। এটা মুহাম্মদ(ﷺ)কে প্রদান করেছেন এবং তা তাঁকে শিক্ষা দিয়েছেন।'
আর নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা জ্ঞান দ্বারাও বান্দাদের প্রশংসা করেছেন। যেমন ইরশাদ হয়েছে-
✦(ফেরেশতাগণ ইব্রাহীমকে (আঃ) এক জ্ঞানী ছেলের সুসংবাদ প্রদান করেছেন)।
✦আরাে ইরশাদ করেন-(নিশ্চয়ই ইয়াকুব আমার প্রদত্ত জ্ঞান। থেকে অবশ্যই জ্ঞানী)
✦আরাে ইরশাদ করেন-(আমি খিযিরকে ইলমে লাদুন্নী। প্রদান করেছি।)
✦আরাে ইরশাদ হয়েছে-(হে নবী (ﷺ) আপনি যা জানতেন না। আমি তা আপনাকে শিখিয়েছি।)
আরাে অনেক আয়াতে এ প্রকারের জ্ঞানের প্রমাণ রয়েছে। যা দ্বারা বান্দাদের ‘ইলমে গায়ব (অদৃশ্য জ্ঞান) প্রদান করাই প্রমাণিত হয়। আয়াতের এটাই সঠিক মর্মার্থ। প্রকৃত পক্ষে যা থেকে না পলায়নের স্থান আছে, না অন্য কোন মর্মার্থের সম্ভাবনা। সুতরাং আপনাদের কাছে।
স্পষ্ট হয়ে গেলাে, ধর্মীয় যেসব বক্তব্য আমি এখানে বর্ণনা করেছি তা সব - (কোরআন-হাদীস) দ্বারা অবশ্যই প্রমাণিত। যে ব্যক্তি তা থেকে কোন একটিকে অস্বীকার করে সে দ্বীনকেই অস্বীকার করে, সে ইসলামী সম্প্রদায়ের বহির্ভূত। আর এটাই সে ব্যাখ্যা দ্বারা নির্ভরযােগ্য ওলামায়ে কিরাম স্বীকৃতি-অস্বিকৃতিমূলক আয়াতগুলাের মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান করেছেন। যেমন,
✦বিখ্যাত ইমাম আবু জাকারিয়া নবভী (رحمة الله) স্বীয় ফতােয়ায় বর্ণনা করেছেন। তারপর ইমাম ইবনে হাজর মক্কী (رحمة الله) ফতােয়ায়ে হাদীসিয়ায় এবং অন্যান্যদের গায়বের ইলমের অস্বীকৃতির অর্থ হলাে, কেউ সত্তাগতভাবে নিজ পক্ষ থেকে গায়ব জানেনা, আর কারাে জ্ঞান আল্লাহর সকল জ্ঞানকে পরিবেষ্টন করতে পারে।
সুতরাং উদীয়মান সূর্য ও অতিবাহিত দিনের ন্যায় প্রতীয়মান হলো, যারা নবীর ‘শর্তহীন ইলমে গায়ব। আল্লাহ প্রদত্ত হলেও অস্বীকার করে; যেমন আমাদের দেশের ওহাবীরা, তারা পরিস্কার ভাষায় বলে যে “এমন কি নবী (ﷺ) না স্বীয় শেষ পরিণতির কথা জানেন, না উম্মতের।” এমন একজন ভ্রষ্টের প্রশ্নের হুকুম সম্পর্কিত প্রশ্ন দিল্লী থেকে রবিউল আওয়াল ১৩১৮ হিজরী সনে আমার হস্তগত হয়েছে। এর প্রত্যুত্তরে আমি ‘আম্বাউল মােস্তফা বিহালে সিররিও ওয়াআখফা’ লিখে ওহাবীদের উপর ক্বিয়ামতে কুবরা কায়েম করেছি; সুতরাং এরা এমন বস্তু অস্বীকার করছে, যা কোরআনে করীম প্রমাণ করেছে। আর তার একথা তার ঈমানকেই অস্বীকার করেছে এবং এটাই তার অনিষ্ট ও ধ্বংসের জন্য যথেষ্ট। সে তার এ কুফরী বাক্যের কারণে কাফির ও মুরতাদ। আর তার বাক্য-নবী করিম (ﷺ) না স্বীয় খাতেমার (শেষ পরিণতি) অবস্থা জানেন, না উম্মতের’ এটা দ্বিতীয় কুফর। যা অনেক সুস্পষ্ট আয়াতেরই অস্বীকার জ্ঞাপক।
✦আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন- (আপনার জন্য দুনিয়ার চেয়ে পরকালই অতি উত্তম)
✦(অতিসত্বর আপনার প্রতিপালক আপনাকে এমনভাবে দান করবেন যে, আপনি সন্তুষ্ট হয়ে যাবেন।)
✦(সে দিন আল্লাহ তায়ালা নবী ও তার সাথে যারা থাকবেন, তাঁদের লজ্জিত ও অপমানিত করবেন না, তাদের ডানে ও বামে তাঁদের নুর থাকবে।)
✦(অতিসত্ত্বর আপনার প্রতিপালক আপনাকে মাকামে মাহমুদ (প্রশংসিত স্থান) প্রদান করবেন)
✦(হে নবীর পরিবারবর্গ, আল্লাহ। চান তােমাদের অপবিত্রতা থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে এবং তােমাদের খুব পবিত্র করতে)
✦(নিশ্চয় আপনাকে আমি প্রকাশ্য বিজয় দান করেছি যেন আল্লাহ আপনার কারণে (১) পূর্ববর্তী ও পরবর্তীদের পাপ ক্ষমা করেন, স্বীয় নিমাত আপনার উপর পরিপূর্ণ করেন এবং আপনাকে তার দিকে সঠিক পথ প্রদর্শন ও সম্মানজনক সাহায্য প্রদান করেন।
✦আল্লাহ তায়ালা এমনও পর্যন্ত ইরশাদ করেছেন-
خلدين فيها و يكفر عنهم سيأتهم وكان ذلك عند الله فوزا عظيما
" (যেন আল্লাহ ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার মহিলাদের জান্নাতে প্রবেশ করান যার নিম্নদেশে নহর প্রবাহিত, তাতে তারা স্থায়ীভাবে বসবাস করবেন, তাদের থেকে তাদের পাপ মােচন করবেন আর এটাই আল্লাহর নিকট মহান সাফল্য)। আরাে ইরশাদ করেছেন-(সেই বরকতময় আল্লাহ যদি চান, তাহলে তােমাদের জন্য উত্তম করবেন জান্নাত, যার নিম্নপ্রদেশে নহরসমূহ প্রবাহমান এবং তৈরী করবেন তােমাদের জন্য উঁচু ও নীচু প্রাসাদ) - শব্দের পেশ বর্ণের সহিত যা আল্লামা ইবনে কাসীর, আমেরের ক্বিরাত এবং আসেম থেকে আবু বকরের রেওয়ায়েত হিসেবে বর্ণনা করেন। এতদ্ব্যতীত আরাে অনেক আয়াত রয়েছে। এ সম্পর্কে বহু হাদীসে মুতাওয়াতিরও রয়েছে, যা এক গভীর সমুদ্র, যার তল ও কুল পাওয়া অসম্ভব। (যারা কোরআন অস্বীকার করে বসেছে তারা) আল্লাহ ও তাঁর আয়াতের পর কোন্ হাদীসের উপর ঈমান আনবে? হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে প্রার্থনা করছি এবং কাফিরদের আঘাত থেকে আশ্রয় চাচ্ছি।
টিকাঃ
১. এটা আমাদের প্রতিপালকের রায়। তিনি কুরআনে করীমে ইরশাদ করেছেন “বাহানা করাে না, তােমরা ঈমান আনার পর কাফির হয়েছিলে।” এ আয়াতের তাফসীরে ইবনে আবী শােবা, ইবনে জরীর, ইবনে মুনজির, ইবনে আবী হাতিম ও আবু শেখ প্রমুখ মােজাহিদ থেকে বর্ণনা করেন-“কোন মুনাফিক বললাে ‘মুহাম্মদ (ﷺ) আমাদের বললেন যে, অমুকের উষ্ট্রী অমুক জঙ্গলে রয়েছে, তিনি গায়ব সম্পর্কে কি জানেন? এটা কেনইবা নবুয়তের অস্বীকার হবে না।”
আল্লামা কুলানী (رحمة الله) মাওয়াহেবে লাদুনিয়ায় উল্লেখ করেন-“নবুয়ত হলাে গায়ব, সম্পর্কে অবগত করানাে।” তিনি আরাে বলেন - নবুয়ত নাবা’ থেকে, উৎকলিত! এর অর্থ সংবাদ। অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালা তাঁকে গায়ব সম্পর্কে অবগত করেছেন।
(২) “লাকা এর মধ্যে লাম কারণ বুঝানাের জন্য। আর যাম্বুন (পাপ)-এর নিসবত (সম্পৰ্ক) নগন্য সম্পর্কের কারণে অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালা আপনার কারণে এবং আপনার সাথে সম্পর্ক রাখার কারণে আপনার পরিবার বর্গের ত্রুটি ক্ষমা করুন। অর্থাৎ আপনার সম্মানিত পিতা-মাতা হযরত আবদুল্লাহ ও মহিয়সী মাতা হযরত আমিনা (رضي الله عنه) থেকে হযরত আদম ও হাওয়া (আঃ) পর্যন্ত সকলের পূর্ববর্তী পাপ ও পদস্খলন এবং আপনার পরবর্তী বংশধর তথা সন্তান-সন্ততি, পৌত্র পৌত্রের সকল আত্মিক বংশধর তথা কিয়ামত পর্যন্ত আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের সকল অনুসারীর পাপ, পদস্খলন ও ভুল-ত্রুটি ক্ষমা করুন। এটাই আমাদের মতে উত্তম ও বিশুদ্ধ ব্যাখ্যা। আল্লাহই অধিক জ্ঞানী।
দ্বিতীয় নজর
ওহাবীরা ঐ মুশরিক যারা পূর্বাপর সবকিছুর জ্ঞান আল্লাহ ব্যতীত অন্যের জন্য শিরক সাব্যস্ত করেঃ
‘ইতােপূর্বেকার আলােচনার মাধ্যমে পরিষ্কার হয়ে গেছে যে, পূর্ণ-পরিপূর্ণ ও চরমােকর্ষিত সকল সৃষ্টিজগতের জ্ঞানের সমষ্টিকে আমাদের সমগ্র জাহানের প্রতিপালক আল্লাহর জ্ঞানের সমান হওয়ার সন্দেহ করা এতটুকুর জন্যও উপযুক্ত নয় যে, মুসলমানদের হৃদয়ে এর সামান্যতম সন্দেহও থাকতে পারে। অন্ধরা কি এটাও বুঝে না যে, আল্লাহর জ্ঞান সত্ত্বাগত আর সৃষ্টির জ্ঞান প্রদত্ত? আল্লাহর জ্ঞান তাঁর পবিত্র সত্তার জন্য ওয়াজিব আর সৃষ্টির জ্ঞান তার জন্য মুমকিন (সম্ভবপর)। আল্লাহর জ্ঞান স্থায়ী, অনন্তকালীন, কদীম ও মৌলিক। আর সৃষ্টির জ্ঞান অস্থায়ী ও ধ্বংসশীল। কেননা, সকল সৃষ্টিই ধ্বংসশীল। আর সিফত (গুণ) তার মাউসুফ (গুনান্বিত) হতে অগ্রণী হতে পারে না। আর আল্লাহ তায়ালার জ্ঞান-
🔴
.
মাখলুক (সৃষ্টি) নয়, সৃষ্টির জ্ঞানই ‘সৃষ্টি’। আল্লাহ তায়ালার জ্ঞান কারাে শক্তিবলে নয়, মাখলুকের জ্ঞান তার শক্তিতেই এবং তাঁর কুদরতী হস্তেই। আল্লাহর জ্ঞান। স্থায়ী হওয়া ওয়াজিব আর মাখলুকের জ্ঞানের ধ্বংসশীলতাই স্বাভাবিক। আল্লাহর জ্ঞানের কোনরূপ পরিবর্তন হতে পারে না, সৃষ্টির জ্ঞানে পরিবর্তন হতে পারে। আর ঐ পার্থক্যসমূহ বুঝার পর, কেউ (আল্লাহ ও মাখলুকের জ্ঞান) সমান হবার। অনুমান করবে না কিন্তু যার উপর আল্লাহ তায়ালা লা'নত (অভিসম্পাত) করেছেন এবং তাদের বধির ও অন্ধ করে দিয়েছেন। সুতরাং যদি আমরা ধরে নিই যে, কোন ধারণাকারী নবীর জ্ঞানকে আল্লাহর সকল জ্ঞানকে পরিবেষ্টনকারী জ্ঞান করে, তবে তার এ ধারণা অবশ্যই ভ্রান্ত ও তার অনুমান ভুল। আল্লাহর জ্ঞানের সাথে কোন সমতার তুলনা কিন্তু এখনও হয়নি। ঐ কঠিন পার্থক্যসমূহের কারণ যা আমি উপরে বর্ণনা করেছি যে, সৃষ্টিকর্তার জ্ঞান থেকে সৃষ্টির . জ্ঞানসমূহের জন্য আইন, লাম, মীম (১) অর্থাৎ শুধুমাত্র শরীক ব্যতীত কিছু অবশিষ্ট নেই।
গায়াতুল মামুনের কুটিলতাপূর্ণ বক্তব্যের খণ্ডনঃ
টিকাঃ (১) এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলাে(নামগত সাদৃশ্য)। আর তা হচ্ছে মূল ও সত্তাগত ভিন্নতার ভিত্তিতে গুনগত পার্থক্যের ক্ষেত্রে অগ্রগণ্যতা। আর আমি তােমাদের প্রতারণকারীদের কঠোর দুর্ভাগ্যজনক লিখা সম্পর্কে অবগত করছি। আমি বলছি, এ হলাে আমাদের ঈমান আমাদের প্রতিপালকের উপর যে, তাঁর সত্তায় কোন অংশীদার নেই। জেনে রাখুন, আল্লাহ ব্যতীত কোন মাবুদ নেই। না তিনি কাউকে জন্ম দিয়েছেন,। আর না কেউ তাঁকে জন্ম দিয়েছেন, আর না কেউ তাঁর সমকক্ষ হতে পারে তাঁর গুণাবলীসমূহে। তাঁরই জন্য সকল প্রশংসা। তাঁর ন্যায় কোন বস্তু নেই, না তাঁর নামসমূহে (কেউ তাঁর ন্যায় হতে পারে)। কেউ তাঁর সমকক্ষ হতে পারে না তাঁর রাজ্যে। আল্লাহরই জন্য, যা কিছু আসমান ও জমীনে রয়েছে। আল্লাহ ব্যতীত তােমরা যাদের আহবান করাে, তারা কোন নগণ্য বস্তুরও মালিক নয়, আর না তাদের কোন মালিকানা রয়েছে তাঁর কর্মসমূহে। আল্লাহ ব্যতীত কি অন্য কোন সৃষ্টিকর্তা রয়েছে? যে একটি নাম তাঁর জন্য ব্যবহৃত হয়, তা কি অন্য কোন সৃষ্টির মধ্যে দেখা যায়? যেমন – (সর্বজ্ঞ) (প্রজ্ঞাময়), (অত্যন্ত ধৈর্যশীল), (দয়ালু),(সর্বশ্রোতা) (সর্বষ্টা), এমনি আরাে অনেক নাম রয়েছে। যাতে শুধুমাত্র শাব্দিক সাদৃশ রয়েছে, অর্থগতভাবে অংশীদার নয়। সুতরাং * ফতােয়ায়ে সিরাজিয়া, তাতারখানীয়া, মানহুল গাফফার, দুররােল মােখতার ইত্যাদিতে রয়েছে- এমন নাম রাখা যা কুরআনে কারীমে আল্লাহর জন্য ব্যবহৃত হয়েছে। যেমন আলী, কবীর, রশীদ ও বদী’ ইত্যাদি জায়েজ। কেননা, এ (একান্নভুক্ত নামসমূহ) গুলাে আল্লাহর জন্য যে অর্থে প্রযােজ্য, সে... অর্থে বান্দার জন্য প্রযােজ্য নয়। গোপন সংখ্যা। 🔴
ইমাম আবু ইউসুফ (رحمة الله) বলেন, আফআলুন ও ফয়ীলুম পদদ্বয় আল্লাহর গুণাবলীতে একই অর্থবােধক। যেমন হেদায়া গ্রন্থে রয়েছে। ইনায়ায়’ উল্লেখ আছে-‘আল্লাহর গুণাবলীতে কোন অতিরিক্ততা স্বীকার করা উদ্দেশ্য নয়। কেননা, মৌলিক মর্যাদা ও মহত্বের মধ্যে কেউ তাঁর বরাবর নয়, যদিও অতিরিক্ততার জন্য হয়। যেমন বান্দার গুণাবলীর মধ্যে হয়। সুতরাং উভয় সমান। বরং ওলামায়ে কিরাম অনেক স্থানে বলেছেন। যে, ২১ দ্বারা মূল ক্রিয়া শরীকবিহীন উদ্দেশ্য হয়, যেমন আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন-“আজ জান্নাতবাসীরা উত্তম বাসস্থান এবং উত্তম দ্রিাস্থানে রয়েছে।” তিনি। আরাে বলেন-“শ্রেষ্ঠ কে! আল্লাহ, না ওরা- যাদেরকে তারা শরীক সাব্যস্ত করে। তাঁর বাণী-- “কোন সম্প্রদায় শান্তির হকদার যদি তােমাদের জ্ঞান থাকে।” অথচ এরপর ইরশাদ করেন- “যারা ঈমান এনেছে, তারা নিজেদের ঈমানকে জুলুমের সাথে সংমিশ্রন করেনি, তারাই শান্তিতে রয়েছে এবং তারাই হিদায়তপ্রাপ্ত।” কিন্তু আশ্চর্য তাদের জন্য, যারা আমাদের বিন্যাসকৃত ও(সত্তাগত জ্ঞান)(প্রদত্ত জ্ঞান), (পরিবেষ্টনকারী) ও (পরিবেষ্টনবিহীন) জ্ঞানকে দার্শনিক বক্তব্য এবং ওলামা কিরামের নিকট অগ্রহণযােগ্য বক্তব্য বলে আখ্যায়িত করে। অথচ অধিকাংশ ওলামা কিরাম এর বিশ্লেষণ করেছেন। তাঁদের এ সকল বর্ণনা আমি স্বীয় পুস্তিকা “মালিউল হাবীব বেউলুমিল গায়বে” সন্নিবেশিত করেছি। আর যথেষ্ট সংখ্যক বর্ণনা “খালেসুল ইতেকাদ” নামক গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে যেমন উপরে বর্ণিত হয়েছে। ঐ। গ্রন্থে আল্লামা হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম গাজ্জালী (رحمة الله) থেকে পার্থক্য বর্ণনা করা হয়েছে। যে, আল্লাহর জ্ঞান পরিবেষ্টনকারী আর সৃষ্টির জ্ঞান পরিবেষ্টনকারী নয়। বরং তিনিই এর বিশ্লেষণ করে দিয়েছেন। যেমন সামনেই বর্ণিত হচ্ছে ইনশাআল্লাহ। কিন্তু যখন ঐ ব্যক্তি। স্বীয় প্রমাণ বাতিল হতে দেখেছে এবং স্বীয় দলীলের রাস্তা বন্ধ হতে দেখেছে, তখন অস্বীকার করে বসেছে এবং দাবী করছে যে, আল্লাহর জ্ঞান দ্বারা উদ্দেশ্য হলাে শরীয়তের আয়াতসমূহে মুতলাক ইরাক (শর্তহীন জ্ঞান) এবং শব্দের ব্যবহার আল্লাহ তায়ালার আয়াতসমূহ এবং এ বাণীতে “আল্লাহ ও রাসূল অধিক অভিজ্ঞ” দ্বারা সনদ গ্রহণ করেছেন এবং বলে দিয়েছেন যে, আরবী সাহিত্যে এর অর্থ হলাে ৯ (যাকে মর্যাদা দেয়া হয়েছে) এবং (যার উপর তাকে মর্যাদা দেয়া হয়েছে) অর্থগত দিক দিয়ে। উভয় শরীক রয়েছে। অর্থের অতিরিক্ততায় (মর্যাদা প্রাপ্তির) অংশ খাছ। এটা বলেছে কিন্তু এর পরিণাম কিছুই বুঝেনি। যদি এর শাস্তি সম্পর্কে জ্ঞাত হতাে, তাহলে অবশ্যই বলতাে আমার-তার, আর তার আমার মধ্যে দ্বন্দ্ব কিসের? কেননা, তাতে দু’টি বড় মুসিবত। পড়ে রয়েছে। প্রথম মুসিবত, তার থেকে জিজ্ঞেস করাে জ্ঞান ও এর অনুরূপ আল্লাহর প্রশংসায় যার বর্ণনা শরীয়তের প্রমাণ ও আয়াতসমূহে রয়েছে, তা আল্লাহ তায়ালার পরিপূর্ণ গুণাবলী কিনা? যদি বলে হাঁ, যা প্রত্যেক মুসলমান থেকেই আশা করা যায়। তাহলে প্রথমতঃ তাকে বলে দাও, (আল্লাহর পবিত্রতা) যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর আয়াতসমুহে ঈমান আনে, আর তাঁর সাথে তাঁর গুণাবলীতে সৃষ্টিকে অংশীদার করে এবং চিৎকার করে, বলে যে, তাঁর গুণাবলীতে সৃষ্টির সামঞ্জস্যতা রয়েছে। হাঁ, অতিরিক্ত আল্লাহরই জন্য খাস। এ ধরনের বক্তব্যসমূহের দ্বারা এ ধারণা প্রবল হয় যে, এ পুস্তিকার যদি কোন ভিত্তি। ছিলােই, তাহলে ওহাবীদের হাতই তা পরিবর্তন করে দিয়েছে। কেননা, তারা এমন, উক্তিসমূহ আবিস্কারে সাহসকারী। যেমন, রাসুলে পাক (ﷺ)-এর জ্ঞানকে পাগল, অবুঝ, শিশু, চতুষ্পদ ও হিংস্ৰজন্তুর জ্ঞানের সাথে অংশীদার করার দুঃসাহস দেখিয়েছে। আমি সন্দেহের ভিত্তি অর্থাৎ আল্লাহর গুণাবলীতে সৃষ্টিকে শরীক করা ওহাবীদের উধ্বর্তন। পেশাওয়াদের ব্যতীত কাউকে দেখছিনা। হযরত ইব্রাহীম (আঃ) যখন নমরুদকে। বলেছিলেন “আমার প্রতিপালক হলেন তিনিই, যিনি জীবিত করেন ও মত প্রদান। করেন”। তখন নমরূদ বললাে-“আমিও মৃতকে জীবিত আর জীবিতকে মারতে পারি।”
দ্বিতীয়তঃ পুস্তিকায় যা উল্লেখ করা হয়েছে, তা ভিত্তিহীন পদ্ধতি নয়। বরং অবশ্যই অনুসরণযােগ্য প্রমাণ যা তুলনা করার অবস্থায় পাথর ও নিশুপ হয়ে যাওয়ার নয়। না হয়। এটাই আল্লাহর সাথে মাখলুকের তাঁর মহানত্ব, সম্মান ও নির্দেশ ইত্যাদি শরীক স্থির করা বুঝাবে যাতে এর প্রয়ােগ আমাদের মহান প্রতিপালকের উপর করা হয়েছে। যেমন আমরা বলি- (আল্লাহ মহান) (সর্বশ্রেষ্ঠ) (তিনি শ্রেষ্ঠতম) (তিনি অতি মহান) ও (সর্বশ্রেষ্ঠ বিচারক)। এ ছাড়া আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন(তাঁর নির্দেশে কেউ শরীক নেই) হাদীসে কুদসীতে রয়েছে (“গর্ব আমার চাঁদর, মর্যাদা আমার ভূষণ। সুতরাং যে আমার সাথে জগড়া করবে এ দু’টোর কোন একটিতে, তাকে আমি আগুনে নিক্ষেপ করবাে
আরেকটি জঘন্য উক্তির খন্ডনঃ
তৃতীয়তঃ এ পুস্তিকায় আল্লাহ তায়ালার গুণাবলীকে (মূল অর্থের) উপর প্রয়ােগ করা হয়েছে। আর মৌলিক অর্থ ধ্বংসাত্মক, অস্তিত্বহীন ও মরণশীল বিষয়ের সাথেই সম্পৃক্ত। অথচ, আল্লাহর গুণাবলী তা থেকে পবিত্র ও বহু উর্ধ্বে।
যদি ‘না’ বলে, তাহলে নিশ্চয়ই সে স্থির করেছে যে, দ্বীনী নস’ ও কুরআনের আয়াতসমূহ যেখানে আল্লাহ তায়ালার প্রশংসা ইত্যাদি দ্বারা করা হয়েছে সেগুলিতে সে, পরিপূর্ণ গুণাবলী দ্বারা তাঁর প্রশংসা করে না। বরং প্রশংসা করে ঐ সাধারণ বস্তু দ্বারা যা প্রত্যেক ভাল, মন্দ, ভদ্র, হীন, মুমিন ও কাফির নির্বিশেষে হাসিল হয়। কোন মুসলমান এ ধরনের দুঃসাহস দেখাতে পারে না। বরং তারা (মুসলমান) প্রশংসা করে মর্যাদাশীল, উচ্চ ও মহান গুণাবলী দ্বারা, যা তার পবিত্র সত্ত্বায় নব আবিষ্কৃত ত্রুটিসমূহ এবং তার নিদের্শর্নাবলী থেকে পবিত্র।
দ্বিতীয় মুসিবত এই যে, যেখানে তিনি পরিবেষ্টনের ইচ্ছেয়ও রাজী হয়নি সেখানে সত্তাগত-এর প্রশ্নই উঠে না। কেননা, উভয়কে দর্শন বলে কুরআন ও সুন্নাহর অর্থকে অগ্রহণযােগ্য করে দিয়েছে। আর উভয়কে বাহ্যিক অর্থ থেকে বহির্ভূত নসসমূহ এবং অধিকাংশ নসকে একেবারে পরিত্যক্ত আখ্যায়িত করার দিকে পথ প্রদর্শনকারী, মুসলমানদের মহা ফিতনায় নিক্ষেপকারী, দ্বীনের সুদৃঢ় ও মজবুত রঞ্জুকে পরিত্যাগকারী বলেছে এবং স্বীকৃতি দিয়েছে যে, শর্তহীন জ্ঞানই আয়াতসমূহে উদ্দেশ্য, যাতে সৃষ্টিকর্তা ও সৃষ্টি উভয় শামিল রয়েছে। সুতরাং সে আয়াতে করীমাকে পরস্পর বিরােধ ও বিপরীত (আখ্যায়িত করে ত্যাগ করেছে। আপনাদের নিকট প্রতীয়মান হলাে যে, কুরআন ও হাদীসে ইলমে গায়বের স্বীকৃতি-অস্বীকৃতি উভয় আয়াত বিদ্যমান। আর তার মতে এ গুলাের দ্বারা উদ্দেশ্য শর্তহীন জ্ঞান। অতএব, স্বীকৃতি-অস্বীকৃতি উভয় আয়াত একই অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। আর বৈপরিত্যের নিক্তির কাঁটায় পরিমাপকারীদের রক্ত পিপাসু থাবা আল্লাহ তায়ালার আয়াতের উপর খুব জমে গিয়েছে। আর প্রত্যেক হক পরিত্যাগকারী এমনই যেন বাতিল বাতিলকেই সাহায্য করে। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে হেফাজত
একটি কুটিলতাপূর্ণ বক্তব্যের খন্ডনঃ
অপর একটি কঠিন মুসিবত হলাে, এ অপবাদদাতার পুস্তিকার ২৩ পৃঃ রয়েছে প্রত্যেক জ্ঞানসমূহ বলতে আল্লাহ তায়ালার আলমে শাহাদাতের জ্ঞানই (উদ্দেশ্য)}
আমি বলছি, এটা কঠিন ভূল। সত্য এ ছিলাে যে, প্রত্যেক অস্তিত্বময় বস্তুসমূহ : বলা। কেননা, আল্লাহ তায়ালার জ্ঞানসমূহ এ অস্তিত্বহীনদেরকে যারা অস্তিত্বের জামা পরিধান করেনি, আর না কিয়ামত পর্যন্ত কখনাে অস্তিত্বে পৌছতে পারবে বরং সকল প্রকার অসম্ভব বস্তুসমূহেও ব্যাপৃত রয়েছে।
কোন " এর বিশ্লেষণ ‘আকৃায়েদের কিতাব সমূহে বিদ্যমান রয়েছে। আর আল্লাহ তায়ালা সম্পর্কে অসম্ভব যদি আলমে শাহাদাত থেকে হতাে, তাহলে অবশ্যই উপস্থিত, সাক্ষী, সৃষ্ট। ও বিদ্যমান হতাে। আর এ থেকে অধিক নিকৃষ্ট আর কি হতে পারে যে, আল্লাহ তায়ালা স্বীয় অংশীদার, মৃত্যু এবং দুর্বলতা ও মুখতা ইত্যাদি প্রত্যক্ষ করেন? এ ছাড়া আরাে : অনেক মুসিবত রয়েছে যা থেকে আল্লাহ মহান ও বহু উর্ধ্বে " ওলামায়ে কিরাম বিশ্লেষণ করেছেন যে, দর্শন অস্তিত্বের উপর মওকুফ ও নির্ভরশীল। আর অস্তিত্বের বস্তু আল্লাহ তায়ালাকে প্রত্যক্ষ করতে পারেনা। মতবিরােধ শুধু এতেই। রয়েছে যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা অস্তিত্বময় বস্তু অস্তিত্বের সময় দেখেন অথবা আজলে প্রত্যেক ঐ বস্তুকে যা অস্তিত্বহীন থেকে অস্তিত্বে আসবে (তা) দেখেন। সুতরাং এতে সকলেই একমত যে, আল্লাহকে প্রত্যক্ষ করা অসম্ভবের সাথে সম্পর্কিত নয়। এ সম্পর্কে আমি “সুবহানুস সুলুহ আন আয়বে কিযবে মাক্বুহ" গ্রন্থে সুস্পষ্টরূপে বর্ণনা করেছি। সাবধান! সম্ভবতঃ এ ত্রুটিসমূহ এমনিই যেমন তার পুস্তিকা কতেক ইমাম সম্পর্কে উক্ত করেছে (১২ পৃঃ) যে, নিশ্চয়ই তিনি মাযহাবগতভাবে সুন্নী ছিলেন। কিন্তু এ মাসয়ালায় তাঁর ত্রুটি হয়েছে। আল্লাহর কাছেই ক্ষমাপ্রার্থী। লা হাওলা ওয়ালা কুয়াতা ইল্লা বিল্লাহিল আলীয়্যিল আজীম।
✦ইমাম কাজী আয়াজ (رحمة الله) শিফা শরীফে উল্লেখ করেন-“বিশ্বাস রাখতে হবে আল্লাহ তায়ালা স্বীয় সম্মান, মহান, সালতানাত ও স্বীয় পবিত্রতম নাম ও মহান গুণাবলীতে সৃষ্টিজগতের মধ্যে না কারাে অনুরূপ, আর না তার ন্যায় অন্য কেউ রয়েছে। আর যার ব্যবহার পবিত্র শরীয়ত সৃষ্টিকর্তা ও সৃষ্টি উভয়ের উপর করেছে, এগুলােতে মৌলিক অর্থে কোন সাদৃশ্য নেই। অনুরূপ তাঁর গুণাবলীর সাথে মাখলুকের কোন তুলনাই হতে পারে না।
✦অতঃপর ইমাম ওয়াসেতী (رحمة الله) থেকে বর্ণনা করেন- তাঁর পবিত্রতম সত্তার ন্যায় কোন সত্তা নেই, না - তাঁর পবিত্রতম নামের ন্যায় কোন নাম। আর তাঁর কর্মের সাদৃশ্য কোন কর্ম এবং তাঁর গুণের নায় কোন গুণও হতে পারেনা। কিন্তু শাব্দিক সাদৃশ্য থাকতে পারে।
✦আরাে উল্লেখ করেন-“এ হলাে আহলে হক ও আহলে সুন্নাত জামাতের অভিমত নিন , আমি বলছি,
হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম গাজ্জালী (رحمة الله) কৃত ‘ইমলা আলাল আহইয়াহ’ গ্রন্থে হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ)-এর সূত্রে বর্ণিত ‘পরকালে মানুষের নিকট নাম ব্যতীত কোন জ্ঞান নেই। সুতরাং আল্লাহ সম্পর্কে তােমাদের কি ধারণা?
সুতরাং এ অবস্থায় সৃষ্টির পক্ষে স্রষ্টার জ্ঞান পরিবেষ্টন করা কিভাবে বিশুদ্ধ হতে পারে? অকাট্য দলীলাদি দ্বারা প্রমাণ করছি যে, সৃষ্টির পক্ষে আল্লাহ। তায়ালার জ্ঞানসমূহ বেষ্টনকারী হওয়া যুক্তিগত ও শরীয়ত উভয় দৃষ্টিতে নিশ্চিতরূপে ভ্রান্ত। ওহাবীরা যখন ইমামের অনুসারীদের কাছ থেকে শুনে যে, তারা ইমামদের অনুসরণ ও কুরআন হাদীসের অনুসরণের দ্বারা রাসুলে সৈয়দে। আলম(ﷺ)-এর জন্য প্রথম দিন থেকে শেষ দিন পর্যন্ত সকল অতীত ও বর্তমানের জ্ঞান প্রমাণ করে, তখন তারা তাদের উপর শিরক ও কুফরের হুকুম প্রয়ােগ করে এবং দাবী করে যে, এরা আল্লাহর জ্ঞান ও নবীর জ্ঞানকে সমান। করে ফেলেছে। এ হুকুম প্রয়ােগকারী মূলতঃ নিজেই ভুল ও ভ্রান্ত ধারণায় নিমজ্জিত এবং তারাই কুফর ও শিরকের গর্তে পতিত। এ কারণে যে, যখন তারা এ সীমাবদ্ধ, পরিবেষ্টিত ও অল্প সংখ্যক জ্ঞান প্রমাণ করতে আল্লাহর জ্ঞানের সাথে সাম্য স্থির করছে, তখন তারাই সাক্ষ্য দিয়েছে যে, আল্লাহ তায়ালার জ্ঞান খুবই নগণ্য, ক্ষুদ্র, ছােট, কম ও অল্প পরিমাণই। কেননা, তাদের মতে আল্লাহর জ্ঞান যদি এ পরিমাণ থেকে বেশী হতাে, তাহলে অধিক জ্ঞান অল্পের সমান কিভাবে হতে পারে? সুতরাং তারা সমতার হুকুম প্রয়ােগ করতাে না।
কিন্তু তারা যখন এ হুকুম প্রয়ােগ করছে, তবে তারা আল্লাহর জ্ঞানের সাথে বিদ্রুপই করছে, গায়ের জোরে তাঁকে অসম্পূর্ণ বলছে। আল্লাহ তাদের মৃত্যু ঘটাক। কোথায় উপুড় হয়ে যাবে! আমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছি তাদের। ফিতনা থেকে রক্ষার জন্য।
তৃতীয় নজর
‘হিফজুল ঈমান গ্রন্থকার থানবীর উপর ক্বিয়ামত কুবরা কায়েমঃ
হে আল্লাহ! তােমার ক্ষমা আমরা প্রত্যক্ষ করছি এতদসত্ত্বেও যে, সমগ্র। জগত অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে যাচ্ছে, সীমাতিক্রম করছে, অনেক লােকের উপর গােমরাহ (ভ্রান্ত) মতবাদ ছেয়ে যাচ্ছে। আমি পূর্বেই আল্লাহতায়ালার সত্ত্বাগত জ্ঞান এবং শর্তহীন সীমাবদ্ধ জ্ঞান সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা উক্ত করেছে। এ জ্ঞানসমূহ এবং আল্লাহর জন্যই খাস্ বান্দার জন্য নয়। কিন্তু শর্তহীন প্রদত্ত জ্ঞান প্রত্যেক মুসলমানেরই রয়েছে, আম্বিয়ায়ে কিরামদের কথা আর কি বলবাে। কারণ যদি এ জ্ঞান না হয়, তাহলে ঈমানও বিশুদ্ধ হবে না; যেমন ইতােপূর্বে আলােচিত হয়েছে। হয়তাে এ বর্ণনা দ্বারা কোন কোন সন্দেহকারীর মনে। সন্দেহের উদ্রেক হতে পারে যে, আমাদের ও আমাদের নবীর মধ্যে কেনি। পার্থক্যই রইলাে না। সুতরাং অন্যান্য আম্বিয়ায়ে কিরামদের ব্যাপারে কি ধারণা রাখতে পারি? যেমন জ্ঞান হুজুরের (ﷺ) ও অন্যান্য নবীদের রয়েছে, অনুরূপ। আমাদেরও অর্জিত হয়েছে। আর যে শ্রেণীর জ্ঞান আমাদের অর্জিত হয়নি তা তাদেরও অর্জিত হয়নি। সুতরাং আমরা সবাই সমান হয়ে গেছি। এটা যদিও এমন বক্তব্য যা কোন জ্ঞানবান ব্যক্তিতাে দূরের কথা, কোন বুদ্ধিমানের নিকট থেকেও আশা করা যায় না, কিন্তু তী ওহাবীদের থেকে আশা করা অসম্ভব নয়। এ কারণে যে, তারা বুদ্ধিহীন সম্প্রদায় এবং তাদের কেউ সঠিক পথে নেই। আমার কি হলাে যে, আনুমানিকভাবে বলছি যা সংঘটিতই হয়ে গেছে। আপনারা . কি শুনেননি যে, ইদানিং ওয়াহাবীদের মধ্যে সাধু, শেখ ও সুফীর দাবীদার এক অহংকারী আবির্ভূত হয়েছে, যে কিনা একগুয়ে হিন্দুদের অন্তর্ভূক্ত! সে একটি . পুস্তিকা রচনা করেছে, যা চার পৃষ্ঠাও হবে না। যদ্বারা সাত আসমান ফেটে পড়ার উপক্রম হয়েছে। এর নাম দিয়েছে ‘হিফজুল ঈমান’ (ঈমান সংরক্ষণকারী)। প্রকৃত পক্ষে তা ‘হিফজুল ঈমান নয় বরং “খিফদুল ঈমান’ তথা ঈমান হরণকারী। তাতে উপরােক্ত বর্ণনাই সুস্পষ্ট করা হয়েছে, কিয়ামত দিবসকে এতটুকু ভয় করেনি। এর ভাষ্য হলাে-‘অতঃপর কথা হলাে তাঁর পবিত্র সত্তায় অদৃশ্য জ্ঞানের হুকুম প্রয়োগ করা যদি যায়েদের কথামত বিশুদ্ধ হয়, তাহলে জিজ্ঞাসার বিষয় হলাে, হয়তাে এ গায়ব দ্বারা আংশিক গায়ব উদ্দেশ্য হবে কিংবা পূর্ণ গায়ব। যদি আংশিক উলুমে গায়ব (অদৃশ্য জ্ঞান) উদ্দেশ্য হয়, তাহলে তাতে। হুজুর (ﷺ) এর বৈশিষ্ট্য কি? এমন অদৃশ্য জ্ঞানতাে জায়েদ, ওমর এমনকি প্রত্যেক শিশু ও পাগল বরং সকল চতুষ্পদ জন্তুরও রয়েছে। যদি পূর্ণ অদৃশ্য জ্ঞান উদ্দেশ্য হয়, এভাবেই যে, এর একটি এককও বহির্ভুত নয়, তাহলে এর বাতুলতা। যুক্তি ও অকাট্য দলীল দ্বারা প্রমাণিত” এ গোয়ার ও মরদুদ জানেনা যে, গায়বের মধ্যে শর্তহীন প্রদত্ত জ্ঞান প্রকৃতপক্ষে আম্বিয়ায়ে কিরামের জন্য খাস। আল্লাহ তায়ালার এ বাণী মতে,“আল্লাহ অদৃশ্য জ্ঞান সম্পর্কে জ্ঞাত, তিনি তার নির্বাচিত নবীদের ব্যতীত অন্য কারাে কাছে তা প্রকাশ করেন না।” আর তাঁর এ ইরশাদ মতে,
• “আল্লাহর কাজ এটা নয় যে, তিনি তােমাদের স্বীয় গায়ব সম্পর্কে অবহিত করবেন, কিন্তু তাঁর পছন্দনীয় রাসুলদের মধ্যে যাকে ইচ্ছে এর জন্য নির্বাচিত করেন।” সুতরাং তিনি (আল্লাহ) ব্যতীত অন্যান্যদের যে জ্ঞান হাসিল হবে তা তার ফয়েজ, সাহায্য, কৃপা ও দানের দরুণ এবং পথ প্রদর্শনের দ্বারা অর্জিত হয়। সুতরাং সমান কিসের? এটা ব্যতীত আম্বিয়ায়ে কিরামের জ্ঞানসমূহ থেকে সামান্যতম ব্যতীত অন্য কেউ জানে না। তাঁদের গায়বের জ্ঞানসমূহের যে সমুদ্র প্রবাহিত হয়, এর সম্মুখে কোন গণনা বর্ণনার আওতায় আসে না। আম্বিয়া (আঃ) আদি থেকে অনন্তকাল পর্যন্ত যা হয়েছে ও যা হবে, সব কিছুই জানেন। বরং তারা সব কিছু দেখেন ও প্রত্যক্ষ করেন। আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন এভাবে আমি ইব্রাহীমকে আসমান ও পৃথিবীর সকল বাশাহী প্রত্যক্ষ করাই”।
ইমাম তাবরানী ‘মু’জামে কবীর ইবনে হাম্মাদ ‘কিতাবুল ফিতান' এবং আবু নঈম 'হুলইয়াতুল আওলিয়ায় হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (رضي الله عنه) থেকে রেওয়ায়েত করেন, নবীয়ে করিম (ﷺ) ইরশাদ করেছেন,
إن الله قد رفع لى الدنيا فانا انظر اليها و إلى ماهو كان فيها إلى يوم القيامة الم
“নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা আমার সম্মুখে দুনিয়া উত্তোলন করেন। আমি তা ও তাতে কিয়ামত পর্যন্ত যা কিছু সংঘটিত হবে সব এমনভাবেই দেখেছি যেভাবে এ হাতের তালুকে।”
এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি নূর, যা আল্লাহ তায়ালা স্বীয় নবীর জন্য প্রজ্জলিত করেছিলেন; যেভাবে পূর্বের নবীদের জন্য প্রজ্জলিত করেছেন। তাহলে ঐ ভ্রষ্ট যেখানে পূর্ণ ও আংশিকের ব্যবধান দেখিয়েছে তন্মধ্যে প্রথমটি বিদ্যমান নেই। আর দ্বিতীয়টিও সকলের জন্য শামিল বলে ধারণা করে হুকুম লাগিয়ে দিয়েছে। রাসুলুল্লাহ (ﷺ), যার জ্ঞানও সমগ্র বিশ্বব্যাপী প্রশস্ত, আল্লাহ তায়ালা তাঁকে তাই শিক্ষা দিয়েছেন, যা তিনি জানতেন না। আল্লাহর করুণা তার উপর। মহান। সুতরাং তিনি পূর্বাপর সকল কিছুর জ্ঞানী হয়েছেন। যা গত হয়েছে এবং ভবিষ্যতে হবে সব তিনি জেনেছেন, আর যা কিছু আসমান ও জমীনে রয়েছে। এসব ব্যাপারেও তিনি জ্ঞাত হয়েছেন। পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত সকল প্রকারের জ্ঞান তাঁর আয়ত্বে এসে গেছে এবং সব কিছু তার নিকট সুস্পষ্ট হয়ে গেছে। আল্লাহ তায়ালা তার জন্য প্রত্যেক বস্তু বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেছেন। কিন্তু ভ্রষ্ট তাঁর আল্লাহ প্রদত্ত এ জ্ঞানকে জায়েদ, ওমর বরং অবুঝ শিশু, পাগল এমনকি প্রত্যেক চতুষ্পদ জন্তুর সমান করে দিয়েছে। দুর্ভাগা জানেনি যে, আংশিকের মধ্যে বড়, ছােট, মধ্যমও রয়েছে, যাতে এক ছােট বৃষ্টির কণার পরিমাণ থেকে। আরম্ভ করে লাখাে-কোটি সমুদ্রের তরঙ্গের পরিমাণও শামিল রয়েছে, যা পরিবেষ্টন করা যায় না। না তার কোন পার্শ্ব আছে, না এর কোন শেষ রয়েছে। অতএব, এটা সম্পূর্ণ নয়, বরং আল্লাহর জ্ঞানের আংশিক এবং তা তার জ্ঞানে। বেষ্টন করে না। কিন্তু তিনি যতটুকু চান। অতএব, যদি শুধুমাত্র আংশিক সমান। ও সাম্য এবং বিশেষত্ব অস্বীকারের জন্য যথেষ্ট হতাে, যেমন এ মরদুদ ও বঞ্চিত ধারণা করেছে, তাহলে এ হুকুমও প্রয়ােগ করে দিক যে, আল্লাহ তায়ালার শক্তি। যায়েদ ও ওমর বরং প্রত্যেক অবুঝ শিশু ও পাগল এমনকি প্রতিটি চতুষ্পদ জন্তুর শক্তির (টিকা ১) সমান! কেননা, সকল জন্তু কোন না কোন কর্ম ও নড়াচড়ার উপর। শক্তি রাখে, যদিও তাদের সৃষ্টি করার শক্তি নেই।
টিকাঃ বান্দার ক্ষমতা
আমরা আহলে সুন্নাত জামাত-আল্লাহ তায়ালার প্রদানের মাধ্যমে ‘ধ্বংসশীল শক্তিই প্রমাণ করে থাকি। যদিও তা অর্জিত, সৃষ্টিকারী নয়। আর এর সম্পূর্ণ বিপরীত জাহম ইবনে সাফওয়ানের মাযহাব যেমন মাওয়াকিফ ও এর ব্যাখ্যাগ্রন্থে রয়েছে। আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন-অর্থাৎ তারা প্রত্যুষে মদীনা যাওয়ার প্রতিজ্ঞা করেছে। অথচ, তাদের দান করার ও উপকার করার শক্তি ছিলাে। আল্লামা আবু মাসউদ স্বীয় তাফসীর “ইরশাদুল আকল আসসালীম” গ্রন্থে লিখেছেন-'এর অর্থ হলাে তারা চেয়েছিলাে মিসকীনদের উপর শক্তি প্রয়ােগ করবে এবং তাদের বঞ্চিত করবে অথচ তাদের উপকার করার শক্তি ছিলাে। আর আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন-- যাতে কিতাবধারীরা জানে যে, আল্লাহর সামান্যতম অনুগ্রহের উপরও তাদের কোন ক্ষমতা নেই। তাফসীরে কবীরে রয়েছে যে, দ্বিতীয় উক্তি এই যে, লা শব্দটি অতিরিক্ত নয়। সুতরাং সর্বনাম রাসুলুল্লাহ (ﷺ) -এর প্রতি ইঙ্গিত বহন করে এবং তাঁর আসহাবদেরদের প্রতিও। আর শক্তি’ এভাবেই যে, যেন আহলে কিতাব না জানে যে, নবী ও মুসলমানগণ আল্লাহর অনুগ্রহ ক্রমে কোন বস্তুর উপর শক্তি রাখেনা। তারা যখন ওদের শক্তিশালী জ্ঞান করেনি, তাহলে নিজেদের শক্তিশালী জ্ঞান করেছে। আর জেনে রাখুন যে, এ তাফসীরই (উক্তি) সর্বোৎকৃষ্ট।'
যদি বলা হয় যে, আল্লাহ তায়ালার কুদরত আজলী (অনন্তকালীন) আবদী (চিরস্থায়ী) ওয়াজিব (অপরিহার্য) ও সৃষ্টিকারী, আর বান্দার কুদরত এমন নয়। তাহলে আমি বলবাে, এটা সম্পূর্ণ ও আংশিক কর্মসূহের অন্তর্ভূক্ত নয়। আলােচনা উভয়ের মাঝামাঝি। ঐ প্রতারক কি বিশ্বাস করে যে, পাগল ও চতুষ্পদ জন্তুর উপর মুহাম্মদ (ﷺ) এর জ্ঞানের অনেক আধিক্যতা রয়েছে সিফাত (গুণাবলী), অবস্থাবলী, পরিবেষ্টনকারী ও উপকারী এবং গৌরবময় মর্যাদা সম্পন্ন, অধিক উপকারী, সৃষ্টিগত দিক দিয়ে প্রথম ও সাহায্যের ক্ষেত্রে উসিলা হওয়ার মধ্যে? এছাড়া জ্ঞানের অংশীদারিত্ব ব্যতীত আরও অনেক। পার্থক্যাবলী রয়েছে, যা ঐ প্রতারকের নিকট কোন দিকেই পাগল ও চতুষ্পদ জন্তুর চেয়ে। বেশী নয়। (নাউজুবিল্লাহ)
অন্য দিকে তার কুফর খুবই স্পষ্ট হয়ে গেছে। কেননা, সে অভিশপ্ত, ধুর্তবাজ ও মরদুদ নিজের জ্ঞানকে বলদ, গাধা, ষাঁড়, কুকুর ও শুকরের জ্ঞানের উপর অনেক মর্যাদা ও প্রাচুর্য হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করেছে। প্রথমতঃ সে (প্রতারক) সমান হবার হুকুমের ভিত্তি শুধুমাত্র আংশিকের মধ্যে অংশীদারে যখন নবীজির জ্ঞানের বিশেষত্বকে অস্বীকার করেছে। এ বিশ্বাস থাকা সত্বেও যে, রাসুলে পাক (ﷺ) -এর জ্ঞানসমূহের জন্য তার জ্ঞানের উপর ভিন্ন কারণে অধিক ও অসীম ফজিলত রয়েছে। সুতরাং আল্লাহর কুদরতের সাথে অসম্ভব হওয়া পূর্ণ হয়েছে। আর অতিরিক্তসমূহ দ্বারা বর্ণনা করা যা পূর্ণ ও আংশিকের বহিভূর্ত তা কোন উপকারে আসেনি। অতএব, জেনে নাও! আল্লাহই অধিক জ্ঞাত।
তাহলে আংশিক সাব্যস্ত হয়েছে। আর আল্লাহ এ থেকে অনেক উর্দ্ধে যে, স্বীয় পবিত্রতম সত্তা ও স্থায়ী গুণাবলীর উপর শক্তিশালী হবেন না। কেননা, এমনটি সম্ভব হলেতাে (ঐ সময়) তিনি আল্লাহই থাকেন না। তখন আল্লাহ ও তার গুণাবলীসমূহও মাখলুক, নব আবিষ্কৃত (টিকা ১) ও অস্থায়ী সাব্যস্ত হবে। এ কারণে যে, যা শক্তি দ্বারা সৃষ্টি হয়েছে তা সৃষ্টি করার দ্বারাও সৃষ্টি হয়।
আর যা সৃষ্টি করার মাধ্যমে সৃষ্টি হয় তা প্রথমে সৃষ্টি হয়। সুতরাং এখানেও আংশিক সাব্যস্ত হয়েছে যে, সকল বস্তুর বেষ্টন এখানেও নেই। অতএব, সমান হওয়া ও সকল ত্রুটি আবশ্যক হয়ে পড়েছে । আমি একটি দৃষ্টান্ত বর্ণনা করছি।
এক শক্তিমান বাদশাহ পরিপূর্ণ দুনিয়ার মালিক হলাে এবং প্রত্যেক ছােট বড় ধনভান্ডার তার মালিকানায় ছিলাে আর তার কিছু খলিফা (মন্ত্রী) ছিলাে। তাদের নিকট দিল্লীর ন্যায় এক একটি রাজ্যের (ধন-ভান্ডারের) চাবিকাঠি সােপর্দ করলাে যেন গরীব দুঃখীদের সাহায্য করে, মিসকীনদের দান করে। আর সকলের উপর একজন প্রধান খলিফা (মন্ত্রী) নির্বাচন করলাে, যার উপর বাদশাহ ব্যতীত আর কেউ নেই।
টিকা ১:
(১) অর্থাৎ সৃষ্টি করা ও অস্তিত্বহীন থেকে অস্তিত্বে আনা সম্পর্কে আহলে সুন্নাত জামাতের ঐকমত্যের ভিত্তিতে। (আল্লাহ তায়ালা তাঁদের প্রত্যেক অপবাদ থেকে হেফাজতে রাখুন)। আর মতবিরােধ এতেই রয়েছে যে, এর কোন অজুদগত প্রভাব কোন অতিরিক্ত বস্তুর মধ্যে রয়েছে কিনা? যেমন-نسبت(নিসবত) اضافة(এজাফত) اعتبارت(এতেবারাত) এর মধ্যে। কতেক এর নাম حال (হাল) রেখেছেন। আর অন্যরা এর অস্বীকারকারী নন যে, এতেবারগত বিষয়ে যাদের জন্য বাস্তবতার একটি অংশ রয়েছে, তা শুধুমাত্র কাল্পনিক আবিস্কার নয়, ভয়ানক বিপদের ন্যায়। আর যদি তাদের বক্তব্য, অবস্থাদি এবং অস্তিত্বহীনের মধ্যে মাধ্যম প্রমাণ করার মধ্যে দ্বন্দ্ব হয়, তাহলে তা শাব্দিক দ্বন্দ্ব। যেমন মুহাক্কেকীনে কিরাম এর বিশ্লেষণ করেছেন। আর অধিকাংশ আশারিয়া তা শর্তহীন বলে স্বীকার করেননি। তাঁদের মতে কর্ম নশ্বর ও ধ্বংসশীল শক্তির জন্য নয়, তা কেবল সাথেই থাকে। বান্দার জন্য তা স্থানই হয়ে থাকে। আর হানাফীরা ধারণা করেছেন যে, কুদরত ও শক্তি অস্বীকারের জন্য যথেষ্ট নয়। তারা এর জন্য সৃষ্টি ইচ্ছার মধ্যে প্রমাণ করেছেন। আর ইচ্ছে হলাে নিশ্চিতরূপে امر اضافي (অমৌলিক কম), মূল সৃষ্ট (বস্তু নয়। সুতরাং এর দিকে সৃষ্টির সম্পর্ক হয় না। কেননা, তা না মুলের সম্পর্ক, না সৃষ্টবস্তুর সম্পর্ক। আর পদস্খলনের কোন নিশ্চয়তা ও গ্রহণযােগ্যতা নেই। কতেক আশারিয়াও এ মতামত পছন্দ করেছেন। যেমন ইমামুচ্ছুনাহ আল্লামা কাজী আবু বকর বাঙ্কুলানী (رحمه الله تعالي)। এর বিপরীতে আমার জ্ঞানে না কোন নস (প্রমাণ) রয়েছে, না কোন ঐকমত্য। এসব কিছু আমি স্বীয় রচিত “তাহবীরুল হিবর বিকাসমিল জবর” নামক গ্রন্থে বর্ণনা করেছি। কিন্তু আমি তাদের মধ্যে নয় যারা তাতে গভীরভাবে অনুসন্ধান করেন। আল্লাহরই জন্য স্তুতিবন্দনা । আমার ঈমান (বিশ্বাস) তাই, যা কুরআন দ্বারা প্রমাণিত এবং যাতে উভয় সম্প্রদায় একমত পােষণ করেছেন, এর উপর সাক্ষ্য প্রদান করেছেন এবং অকাট্য দলীল যে দিকেই রয়েছে। এখন না বাধ্যবাধকতা রয়েছে, না শক্তি প্রয়ােগ, কিন্তু কর্ম উভয়ের মধ্যবর্তীতে রয়েছে। আয়ত্ব, কম্পন, আরােহন করা ও অবতীর্ণ হওয়া, লম্ফ প্রদান করা এবং নিমজ্জিত হওয়া ইত্যাদির নড়াচড়াসমূহের মধ্যে প্রত্যক্ষ পার্থক্য রয়েছে। মানুষের বিবেক এ থেকে অজ্ঞ নয় যে, কোন শিশু কোন জন্তু ও বান্দার জন্য সৃষ্টি থেকে কোন একটি বাক্যও নেই। তারা নিজের মধ্যে যে শক্তি, ইচ্ছা ও ইখতিয়ার অনুভব করে তা সবই আল্লাহর সৃষ্ট। যাতে না কারাে ইখতিয়ার (স্বাধীনতা) রয়েছে, না কারাে কুদরত, আর না কোন ইচ্ছে, যা তার আপন হবে। তােমরা কি করতে চাও কিন্তু আল্লাহ যা ইচ্ছে তাই করেন। বস্তুতঃ তাই হয়, যা তিনি করতে চান, যদিও তা পরিহারের জন্য সমগ্র জাহান জড়াে হয়। তিনি যা চান না তা হবেই না, যদিও তা সফল করার জন্য সকল পূর্ববর্তী জ্বিন ও মানুষ শেষ প্রচেষ্টা চালায়। আল্লাহই আপনাদের সৃষ্টি করেছেন, আর যা কিছু আপনারা করছেন সবই তিনি সৃষ্টি করেছেন। তিনি যাকে ইচ্ছে পুণ্য প্রদান করেন। পূণ' হলাে তার করুণা। আর তিনি যাকে ইচ্ছে শাস্তি প্রদান করেন। শাস্তি হলাে তাঁর সুবিচার। আল্লাহ তাদের উপর যুলুম করেননা। কিন্তু তারা নিজেরাই জালিম । তারা যা অর্জন করে এর প্রতিদানই দেয়া
* সুতরাং কষ্ট সত্য, আর প্রতিদান এবং শাস্তিও হক। হুকুম হলাে সুবিচার! আর ইসলামের উপর আপত্তি উত্থাপন করা কুফর, ভ্রষ্টতা ও পাগলামী। আর পাগলেরও অনেক শ্রেণী বিভাগ ও বিষয় রয়েছে। আর কারাে জন্য আল্লাহর উপর কোন দলীল নেই যে, তিনি কি করেছেন? আল্লাহর জন্যই সুস্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে। তার থেকে কোন কর্ম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে না যে, তিনি কি করেছেন, বান্দাদের থেকেই জিজ্ঞেস করা হবে। এটাই হলাে, আমাদের ঈমান। এতে আমরা কিছুই বৃদ্ধি করবােনা। আর যা আমাদের থেকে জিজ্ঞেস করা হবে তাছাড়া অন্যান্য সব ব্যাপারে আমরা বলে দেবাে যে আমরা জানিনা। এর জন্য আমাদের কষ্ট দেয়া হবে না। আমরা এমন সমুদ্রে প্রবিষ্ট হবােনা যাতে সাঁতার কাটার শক্তি আমাদের নেই। আর আমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছি দ্বীনে হক তথা সত্য দ্বীনের উপর অটল থাকার জন্য। আল্লাহর জন্যই সকল প্রশংসা, যিনি সমগ্র জাহানের প্রতিপালক।
টিকা শেষ___________
এখন বাদশাহ সকল রাজকীয় চাবিকাঠি তার কাছে হস্তান্তর করলাে এবং তাকে এগুলাে ব্যবহারে ইখতিয়ার দিয়ে দিলাে এবং নিজের সত্ত্বা ব্যতীত সব লেনদেন তাকে সােপর্দ করে দিলাে। অতঃপর এ প্রধানমন্ত্রীই অন্য সব মন্ত্রীদের উপর বন্টন করেন এবং তার নিম্ন পদস্থদের মধ্যে মর্যাদানুসারে বন্টন করেন। এমন কি শেষ পর্যন্ত তা ফকীরদের কাছেও পৌঁছে যায় এবং প্রত্যেকেই এর অংশ পায়। আর ঐ ফকিরদের মধ্যে এক দুর্ভাগা, মরদুদ যে বাদশাহ ও তাঁর মন্ত্রীদের সাথে ঝগড়ায় লিপ্ত হয়, সে না তার উপর বিশ্বাস রাখে, না তাকে সম্মান করে, তাঁকে নিজ থেকে মর্যাদাবান মনে করে; অথচ সে একটি রুটির মুখাপেক্ষী, নিঃস্ব, দরিদ্র, ক্ষুধার্ত ও মিসকীন। তার মন্ত্রীদের বন্টনের দ্বারা শুধুমাত্র একটি পয়সা অর্জিত হয়। আর সেও বলে, আমি ও প্রধানমন্ত্রী উভয় ধন ও সম্পদে সমান। এজন্য যে, যদি সমস্ত মালের মালিকানা সাব্যস্ত করা হয়, তাহলে তা প্রধানমন্ত্রীরও হাসিল হয়না। আর যদি আংশিক সাব্যস্ত করা হয়, তাহলে এতে খলিফার (প্রধানমন্ত্রী) বিশেষত্ব কোথায়? আংশিকেরতাে আমিও মালিক, পয়সা কি আমার মালিকানায় নেই? তাহলে এ দুর্ভাগা, অকৃতজ্ঞ, পরমুখাপেক্ষী, অহংকারী ও গর্বিত, সে না খলিফার প্রদত্তকে স্বীকার করলাে, না খিলাফতের মান-মর্যাদা অক্ষুন্ন রাখলাে, না তার একটি নগন্য পয়সা ও পরিপূর্ণ ধন-ভান্ডার যা পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত পরিপূর্ণ তাতে পার্থক্য করলাে। বরং সে ঐ শক্তিশালী বাদশাহর মর্যাদার পরিচয় লাভ যেমন করেনি তেমনি তার এবং তাঁর খেলাফত ও হুকুমতের মর্যাদাকেও নগন্য জ্ঞান করলাে ।
সুতরাং সে বড় দুঃখজনক ও কঠোর মার এবং দীর্ঘ শাস্তির উপযােগী হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা হলেন বাদশাহ, আর তাঁর মহান খলিফা হলেন প্রিয় নবী (ﷺ), আর মন্ত্রী হলেন আম্বিয়া ও আওলিয়ায়ে কিরাম। আমরা হলাম তার দরবারের ফকির, আমরা তাঁর নিকট ভিক্ষা প্রার্থনাকারী। আর গালীদাতা মরদুদ (বিতাড়িত), নির্ধন-কাঙ্গাল, বহিস্কৃত, গোয়ার এবং কঠোর ফ্যাসাদ সৃষ্টিকারী। আমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি। লা হাওলা ওয়ালা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহিল আলিয়্যিল আজীম। "
হে মুসলমানগণ! আল্লাহ আপনাদের রক্ষা করুন, আপনাদের কি এ ধারণা যে, এ হীন ও অপমানিত ব্যক্তি এ সহজ পার্থক্যও জানে না? নিশ্চয়ই ভাল করে জানে। কিন্তু নবীয়ে করীম (ﷺ) -এর ফজিলতের অস্বীকারের জন্যই এ প্রতিরােধ করছে। যদি আপনারা এর হাকীকত দেখতে চান, তাহলে কাছে গিয়ে দেখুন এবং তাকে এভাবেই সম্বােধন করুন-“হে জ্ঞান ও মর্যাদায় কুকুর ও শুকরের সমান ব্যক্তি’! তাকে দেখবেন-ক্রোধে জ্বলবে। এমনকি ক্রোধে মরার উপক্রম হবে। তখন তার কাছে জিজ্ঞাসা করবেন, আপনার জ্ঞান কি প্রত্যেক বস্তুকে পরিবেষ্টনকারী? যদি বলে, হাঁ! তাহলে নিঃসন্দেহে সে কাফির। যদি বলে, না, তাহলে বলবেন, এ জ্ঞানে আপনার বিশেষত্ব কি? আংশিক জ্ঞানতাে প্রত্যেক কুকুর ও শুকরের কাছেও রয়েছে। কি কারণে আপনাকে আলিম বলা হয়? কুকুর। ও শুকরের মত বলেনা কেন? এমনিভাবে সম্মানের ব্যাপারেও যে, সকল মর্যাদা তাে আপনার জন্য নয়, কুকুর ও শুকরতাে এমন আংশিক (মর্যাদা) থেকে শুণ্য। নয়। এ কারণে যে, কাফেররা তাদের থেকেও অধিক অপমানিত ও লজ্জিত। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন-“তারা সমগ্র সৃষ্টি জগতের চেয়ে অধ' নিকৃষ্ট।” ঐ সময়ই কম ও বেশী ঈমানের পার্থক্য হয়ে যাবে। পার্থক্য হয়ে যাবে আসলী, প্রকৃত, মধ্যস্থিত, প্রদত্ত ও ভিক্ষা প্রার্থনার। কারণ, কুকুর তার থেকে জ্ঞান হাসিল করেনি, শুকর তার মধ্যস্থতায় নয়, কিন্তু সমগ্র জাহানের ওলামায়ে কিরামের (টিকা ১) কাছে যা কিছু অর্জিত হয়েছে, মুহাম্মদ(ﷺ) -এর সাহায্যেই অর্জিত হয়েছে।
যেমন আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন-
لتبين للناس ما نزل اليهم.
“যেন তােমরা লােকদের কাছে বর্ণনা করে দাও। যা কিছু তাঁর কাছে অবতীর্ণ হয়েছে।” আর ‘কসিদায়ে বুরদায়’ ইমাম বুসিরীর বক্তব্য শুনেছেন “রাসুলুল্লাহ (ﷺ) থেকেই ছােটবড় সকলেই প্রার্থনাকারী।” পংক্তিদ্বয়ের শেষ পর্যন্ত খােতবায় উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহর জন্যই সকল প্রশংসা।
(টিকা ১) ইমাম আবদুল ওয়াহাব রচিত ‘আল ইওয়াক্কীত ওয়াল জাওয়াহির ফিল আকাঈদিল আকাবিরের ৩৩ তম পরিচ্ছেদে রয়েছে- যদি আপনারা বলেন, এখানে কি এমন কোন বশর রয়েছে, যে মুহাম্মদ (ﷺ) -এর মধ্যমবিহীন কোন জ্ঞান হাসিল করবে? জবাব তাই যা শেখ (رضى الله تعالي عنه) ১৯১ তম পরিচ্ছেদে বর্ণনা করেছেন- এমন কোন ব্যক্তি নেই যে দুনিয়াতে মুহাম্মদ (ﷺ) -এর রুহানিয়ত ও মাধ্যমবিহীন সামান্যতম জ্ঞানও হাসিল করবে। তিনি নবী, ওলী এবং আলিমগণ যেই হােকনা কেন এবং তা তাদের বেলায়ত ও নুবয়তের পূর্বাপর যে অবস্থায়ই হােক। (তাঁর মাধ্যম বিহীন কেউ জ্ঞান পান না)।
আমি বলবাে, প্রশ্নের বক্তব্য ও الانسان (মানুষ) الدنيا (দুনিয়াতে) উভয়ের ভাবার্থ বিপরীত নয়। কেননা, মুহাম্মদ (ﷺ) আল্লাহর সবচেয়ে মহান প্রতিনিধি এবং প্রতিটি বস্তুর বন্টনকারী। সুতরাং সমগ্র কায়েনাতে দুনিয়া ও আখেরাতের সব নিমাত তাঁর মােবারক হস্ত থেকেই অর্জিত হয়। যেমন এর বিশ্লেষণ করেছেন শীর্ষস্থানীয় ওলামা কিরাম। আর আমি এসব ব্যাখ্যা ও অভিমতসমূহ সালতানাতুল মােস্তফা ফি মালাকুতে কুল্লিল ওয়ারায় উল্লেখ করেছি।