দশম অধ্যায়: রাসূল (ﷺ)-এর রওযা মোবারক যিয়ারত



হাদিস নং-১: যে আমার রওযা যিয়ারত করবে তার জন্য আমার শাফায়াত ওয়াজিব:


ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর “হাদীসের নামে জালিয়াতি” গ্রন্থের ৫৭৯ পৃষ্ঠা হতে ৫৮১ পৃষ্ঠা পর্যন্ত দীর্ঘ আলোচনা করে নিম্নের সহীহ হাদিসকে দ্বঈফ ও মওদ্বু প্রমাণ করার অনেক চেষ্টা করেছেন, কিন্তু তা প্রমাণ করতে পারেন নি। কারণ ইবনে তাইমিয়া, আলবানী ছাড়া কোনো নির্ভরযোগ্য মুহাদ্দিস উক্ত হাদিসটিকে জাল বা বানোয়াট বলে উলে­খ করেননি।  পৃথিবীর বিখ্যাত ভুয়া তাহকীকারী আলবানী পৃথিবীর সমস্ত মুহাদ্দিসদের রায়কে উপক্ষো করে এ সহীহ হাদিসকে জাল বলে আখ্যায়িত করেছেন। (আলবানী, ইরওয়াউল গালীল, ৪/৩৩৫-৩৩৬ পৃ. হা/১১২৮, আলবানী, যঈফু জামেউস সগীর, হা/৫৬০৭)


সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! এ হাদিসটির একাধিক সনদ বিদ্যমান, ভিন্ন সনদের হুকুমও ভিন্ন, একাধিক সনদ থাকার কথা আলবানী (আলবানী, ইরওয়াউল গালীল, ৪/৩৩৫-৩৩৬ পৃ. হা/১১২৮) এবং ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীরই নিজেই স্বীকার করেছেন তার গ্রন্থের ৫৮০-৫৮১ পৃষ্ঠায়। তারপরও তিনি হাদিসটিকে ‘হাসান’ বলে ঘোষণা দিতে কষ্টবোধ হয়েছে। 


প্রথম সূত্র:


ইমাম দারা কুতনীসহ আরও অনেক ইমাম সংকলন করেন-


حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ مَعْبَدِ بْنِ نُوحٍ قَالَ: حَدَّثَنَا مُوسَى بْنُ هِلَالٍ، قَالَ: حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ عُمَرَ أَبُو عَبْدِ الرَّحْمَنِ، أَخُو عُبَيْدِ اللَّهِ عَنْ نَافِعٍ عَنِ ابْنِ عُمَرَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ زَارَ قَبْرِي وَجَبَتْ لَهُ شَفَاعَتِي 


-“হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত।  রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, যে আমার রওযা মোবারক জিয়ারত করবে তার জন্য আমার শাফায়াত তার প্রাপ্য হবে।”  ১

➥১. ইমাম বায়হাকী : শুয়াবুল ঈমান : ৬/৫১ পৃষ্ঠা, হাদিস,  ৩৮৬২, কাজী আয়াজ আল-মালেকী, আশ্-শিফা শরীফ : ২/৮৩ পৃষ্ঠা, দারেকুতনী, আস-সুনান, ৩/৩৩৪ পৃঃ, হাদিস,  ২৬৬৫, মুয়াস্সাতুল রিসালা, বয়রুত, লেবানন, বায্যার, আল মুসনাদ, ২/২৪৮ পৃষ্ঠা, হাকিম তিরমিযী, নাওয়ারিদুল উসূল ফি আহাদিসুর রুসুল,  ২/৬৭ পৃষ্ঠা, ইমাম ইস্পাহানী, তারগীব ওয়াত তারহীব, ২/২৭ পৃঃ হাদিস, ১০৮১, ইবনে আদি, আল-কামিল, ৮/২৬৯ পৃষ্ঠা, ক্রমিক নং.১৮৩৪ ও ৪/১৯০-১৯১ পৃষ্ঠা, সুয়ূতি, জামিউল আহাদিস, ২০/৩৪ ৮পৃষ্ঠা, হাদিস,  ২২৩০৪, সুয়ূতি, জামিউস-সগীর : ২/৬০৫ পৃষ্ঠা, হা/৮৭১৫, ইমাম হায়সামী : মাযমাউদ যাওয়াইদ : ৪/২ পৃষ্ঠা, হাদিস, ৫৮৪১ ও কাশফুল আশতার, ২/৫৭ পৃঃ হাদিস:১১৯৮, সাখাভী : মাকাসিদুল হাসানা : ৪১৯ পৃঃ হাদিস নং ১১২৫, আযলূনী,  কাশফুল খাফা, ১/২২৪ পৃঃ হা/২৪৮৭, মুসলিম আনসারী আদ্-দাওলাবী, কানাঈ আসমাউল দাওলাবি, ২/৮৪৬ পৃঃ হাদিসঃ ১৪৮৩, দারুল ইবনে হাযম, বয়রুত, লেবানন, ইমাম দিনওয়ারী (ওফাত. ৩৩৩ হি.), মাজালিসুল ওয়া জাওয়াহিরুল ইলম, ১/৪৩১ পৃঃ হাদিসঃ ১/৪৩১ পৃঃ হা/১২৯, ইবনে আসাকির, ইত্তাহাফুল যায়েরাহ ওয়াতরাফাল মুকিম, ১/২০ পৃঃ ও ১/২১ পৃঃ,  মহিবুদ্দীন ইবনে রাশেদ আল-ফিহরী সুবতী, মালাইল গিবাত, ১/৩২ পৃঃ ইমাম যাহাবী, মিযানুল ই’তিদাল, ২/৪৩৫ পৃঃ ক্রমিক নং, ৫২৬৭, যাহাবী, এসবাতুল শাফাআ‘ত, ১/৫২ পৃঃহাদিসঃ ৪৬, আবুল হাসান খিলঈ শাফেয়ী, আল-সাবেঈ মিন খিলঈয়্যাত, হাদিসঃ ৫৩, খিলঈ, ফাওয়াইদুল হাসান সিহাহ ওয়াল গারায়েব, ১/৭০ পৃঃ হা/৬৯, খিলঈ, আল-ফাওয়াইদুল মুনতাকাত,  ১/২২২ পৃঃহাদিস:২৮৪, ইবনুস্-সাকান, হাদিসু সাকান বিন জা‘মে, ১/৪১৯ পৃঃ হাদিসঃ ১/৪১৯ পৃঃ ক্রমিক নং-৪, ইবনে নাজ্জার, আল-দুররাতুল সামিয়্যাত, ১/১৫৫ পৃঃ কাস্তাল্লানী, মাওয়াহেব লাদুন্নীয়া : ২/৫৭১ পৃষ্ঠা, ইমাম জুরকানী, শরহুল মাওয়াহেব, ১২/১৮০ পৃষ্ঠা, দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, ইবনুল মুলাক্কিন, আল-বদরুল মুনীর, ৬/২৯৬ পৃঃ ও তুহফাতুল মুহতাজ, ২/১৮৯পৃঃ হা/১১৪৯, তিনি বলেন ‘ইবনে খুযায়মার সনদ সহীহ, ইরাকী, তাখরীজে ইহইয়াউল উলূম, ১/১৮৭৩ পৃঃ ইমাম সুয়ূতি,  আল-আলীল মাসনূ, ১৪০ পৃষ্ঠা, মোল্লা আলী ক্বারী, আসারুল মারফ‚আ, ২০৭ পৃঃ শায়খ ইউসূফ বিন নাবহানী : জাওয়াহিরুল বিহার :২/২০৬ পৃঃ, মোল্লা আলী ক্বারী : শরহে শিফা :২/১৫০ পৃঃ, আল্লামা শায়খ ইউসূফ বিন নাবহানী : জাওয়াহিরুল বিহার : ২/২০৬ পৃষ্ঠা, ইমাম আব্দুর রউফ মানাবী : ফয়যুল ক্বাদির : ৬/১৪০ পৃঃ হা/৮৭১৫, তিনি বলেন, ইমাম সুবকী বলেছেন, হাদিসটি হাসান অথবা সহীহ। নুরুদ্দীন সানাদী, হাশীয়ে সানাদী আ‘লা সুনানি ইবনে মাজাহ, ২/২৬৮ পৃঃ ইমাম উকায়লী : আদ্-দ্বঈফাউল কাবীর : ৪/১৭০ পৃষ্ঠা,  আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী : তালখীসুল হুবাইর : ২/৫৬৯ পৃ: তিনি বলেন, ইবনে খুযায়মা সহীহ সনদে, ইমাম নববী, আল-ঈযাহ : ৪৮৮ পৃষ্ঠা, ইমাম তকি উদ্দিন সুবকী : শিফাউস সিকাম ফি যিয়ারাতিল খায়রি আনাম : ১৫ পৃষ্ঠা, আল্লামা শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী : জযবুল কুলুব : ৬১পৃঃ, মুফতী আমিমুল ইহসান : ফিকহুস সুনানি ওয়াল আছার : ১/৪১৩ পৃ: হা/১১৭৯, ই.ফা.বা, হতে প্রকাশিত, আল্লামা মুত্তাকী হিন্দী : কানযুল উম্মাল : ১৫/৬৫১ পৃঃ হা/৪২৫৮৩, আল্লামা শিহাবুদ্দীন খিফফাযি : নাসিমুর রিয়াদ্ব : ২/১৫০ পৃঃ শাওকানী, নায়লুল আউতার, ৫/১১৩পৃঃ মোবারকপুরী, মেরআ‘তুল মাফাতিহ, ৯/৫৫৬পৃঃ হাদিস,  ২৭৮২, ইবনে হাজার আসকালানী, ইত্তিহাফুল মুহরাত, ৯/১১৪পৃঃ হাদিস:১০৬৬২ ও ৯/১২৩ পৃঃহাদিস, ১০৬৬৪।


সনদ পর্যালোচনা:


এ হাদিসের কোনে রাবী নিয়ে সমালোচনা নেই, আমাদের আহলে হাদিস আলবানী রাবী ‘মূসা ইবনে হিলাল’ কে মাজহুল বা অজ্ঞাত পরিচায়ক বলে সনদটিকে মুনকার বলতে চান। আলবানীসহ অনেকের দাবী যে-


قَالَ ابْنُ أَبِي حَاتِمٍ: سَأَلْتُ أَبِي عَنْهُ فَقَالَ: مَجْهُولٌ.


-‘‘ইমাম ইবনে আবি হাতেম (رحمة الله) বলেন, রাবী ‘মূসা’ সম্পর্কে আমি আমার পিতাকে জিজ্ঞেস করলে অতঃপর তিনি বলেন, সে মাজহুল বা অজ্ঞাত।’’  ২

➥২. ইমাম যাহাবী,  তারিখুল ইসলাম, ৫/২০৫ পৃঃ ক্রমিক- ৩৭৯, আলবানী, ইরওয়াউল গালীল, ৪/৩৩৫-৩৩৬ পৃঃ হা/১১২৮


সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! ইমাম যাহাবী (رحمة الله) এটি উল্লেখ করে সাথে সাথে লিখেছিলেন-


قُلْتُ: لَمْ أَجِدْ أحدا ذكره بتضعيف


-‘‘আমি তাকে কোনো মুহাদ্দিস দ্বঈফ বলেছেন তা আমি পাইনি।’’  ৩

➥৩. ইমাম যাহাবী,  তারিখুল ইসলাম, ৫/২০৫ পৃঃ ক্রমিক- ৩৭৯


ইমাম যাহাবী (رحمة الله) তার আরেক গ্রন্থে ইবনে আবি হাতেমের অভিমত পেশ করে তাঁর অভিমতে যেন কেউ ধোঁকা না খায় এজন্য সম্পষ্ট করে দেন-


قلت: هو صالح الحديث.


-‘‘আমি (ইমাম যাহাবী) বলি, তিনি হাদিস বর্ণনার ক্ষেত্রে সৎ ব্যক্তি।’’  ৪

➥৪. ইমাম যাহাবী, মিযানুল ই‘তিদাল,  ৪/২২৬ পৃষ্ঠা, ক্রমিক নং.৮৯৩৭


এখানে তিনি এ রাবীর বিষয়ে স্পষ্ট করে দিলেন এ রাবী নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। তারপরও তিনি আরও উল্লেখ করেছেন, ইমাম ইবনে আদী (رحمة الله) বলেন وأرجو أَنَّهُ لا بأس بِهِ. -‘‘নিশ্চয় আমি আশা রাখি তাঁর হাদিস গ্রহণ করতে অসুবিধা নেই।’’ ৫

➥৫. ইমাম ইবনে আদি,  আল-কামিল, ৮/২৬৯ পৃষ্ঠা,  ক্রমিক নং.১৮৩৪, ইবনে কাসির, তাকমীল ফি জারহু ওয়া তা‘দীল, ১/২৮২ পৃঃ ক্রমিক- ৪৪৭, আলবানী, ইরওয়াউল গালীল, ৪/৩৩৫-৩৩৬ পৃঃ হা/১১২৮


আল্লামা নুরুদ্দিন ছামহুদী (رحمة الله) বলেন: 


وقد روى عنه ستة منهم الإمام أحمد، ولم يكن يروي إلا عن ثقة،


-“তার থেকে ছয়জন হাদিস বর্ণনা করেছেন এর মধ্যে ইমাম আহমদ (رحمة الله) একজন। ইমাম বিশ্বস্ত রাবী ব্যতীত কারো কাছ থেকে হাদিস বর্ণনা করেননি।” (আল্লামা ছামহুদী: আল-ওফাউল ওফা, ২/২০০ পৃ.)


অতএব, হাদিসটি সর্বনি¤œ হাসান অথবা সহীহ্ হওয়ার যোগ্যতা রাখে। কারণ ইমাম আবু হাতেম  তাকে না চিনলেও ইমাম ইবনে আদী (رحمة الله)সহ আরও অনেকে তাকে চিনেন ও তাকে গ্রহণযোগ্য রাবী বলেছেন। ইমাম যাহাবী (رحمة الله) তার হাদিস গ্রহণযোগ্য বলেছেন। ইমাম ইবনুল মুলাক্কীন (رحمة الله) এ সম্পর্কে লিখেন-


وَهَذَا إِسْنَاد جيد، لَكِن مُوسَى هَذَا قَالَ أَبُو حَاتِم الرَّازِيّ بعد أَن ذكر أَن جمَاعَة رووا عَنهُ: هُوَ مَجْهُول.


-“এই হাদিসের সনদ শক্তিশালী কিন্তু মূসা সম্পর্কে আবু হাতেম রাজী (رحمة الله) বলেন: তার থেকে একদল রেওয়াত করেছেন আর সে মাজহুল রাবী।” (আল্লামা ইবনে মুলাক্কিন: বাদরুল মুনীর, ৬ষ্ঠ খণ্ড, ২৯৬ পৃ:)


বাস্তবে বর্ণনাকারী অন্যান্য ইমামদের দৃষ্টিতে মাজহুল নয় বরং মারুফ বা প্রসিদ্ধ। শুধু তাই নয় আহলে হাদিসদের ইমাম শাওকানী রাবী মূসা’ সম্পর্কে উল্লেখ করেন- وَقَالَ أَحْمَدُ: لَا بَأْسَ بِهِ -‘‘ইমাম আহমদ (رحمة الله) বলেন, তার হাদিস গ্রহণ করতে কোনো অসুবিধা নেই।’’ (শাওকানী, নায়লুল আউতার, ৫/১১৪ পৃ.) তাই প্রমাণিত হয়ে গেল যে, এ হাদিসের সনদের মান ‘সহীহ’ তাতে কোনো সন্দেহ নেই।


দ্বিতীয় সূত্র:


ইমাম বায্যার (رحمة الله)সহ আরও অনেকে সংকলন করেন-


حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ، ثنا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ إِبْرَاهِيمَ، ثنا عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ زَيْدٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ زَارَ قَبْرِي حَلَّتْ لَهُ شَفَاعَتِي


-“হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি নবী করিম (ﷺ) থেকে বর্ণনা করেন, প্রিয় নবীজি (ﷺ) ইরশাদ করেন, যারা আমার রওজা যিয়ারত করবে তাদের জন্য আমার শাফায়াত বৈধ হয়ে গেল।” (মুসনাদে বায্যার; কাশফুল আসতার আনিজ জাওয়াইদিল বায্যার, ২য় খণ্ড, ৫৭ পৃ:; ইমাম তক্বীউদ্দিন সুবকী: শিফাউছ সিকাম, ১৭ নং পৃ:)।


সনদ পর্যালোচনা:


এই হাদিসের সনদের অন্যতম বর্ণনাকারী ‘আব্দুল্লাহ ইবনে ইব্রাহিম’ সামান্য দুর্বল রাবী। এজন্যই আল্লামা ইবনে হাজার হাইসামী (رحمة الله)  উক্ত হাদিসটি সংকলন করে লিখেছেন, 


الْبَزَّارُ وَفِيهِ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ إِبْرَاهِيمَ الْغِفَارِيُّ، وَهُوَ ضَعِيفٌ رَوَاهُ


-‘‘উক্ত হাদিসটি ইমাম বায্যার বর্ণনা করেছেন আর সনদে “আবদুল্লাহ বিন ইবরাহিম আল-গিফারী” নামক দুর্বল রাবী রয়েছেন।’’ ৬

➥৬. আল্লামা ইবনে হাজার হায়সামী : মাযমাউয-যাওয়ায়েদ : ৪/২ পৃঃ হা/৫৮৪১


এজন্যই ইমাম ইবনে সালেহ শামী (رحمة الله) মুসনাদে বায্যারের সনদ সম্পর্কে লিখেন,


وعن ابن عمر أيضا أن النبي صلى الله عليه وسلم قال: من زار قبري حلّت له شفاعتي رواه البزار بسند ضعيف


-“হযরত ইবনে উমর (رضي الله عنه) হতে এরূপ বর্ণিত আছে, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, যে আমার রওজা যিয়ারত করবে তার জন্য আমার শাফায়াত আবশ্যক হয়ে যাবে।’ ইমাম বায্যার (رحمة الله) দুর্বল সনদে ইহা বর্ণনা করেছেন।” (ইমাম ইবনে সালেহী: সুবুলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, ১২তম খণ্ড, ৩৭৯ পৃ:)।


এ হাদিসের অন্য কোনো বর্ণনাকারীকে মুহাদ্দিসগণ দুর্বলতায় টানেননি, যা আমরা ইতোপূর্বে দেখলাম। কিন্তু ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর তার গ্রন্থের ৫৭৯ পৃষ্ঠায় এই হাদিসের সনদে থাকা عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ زَيْدِ بْنِ أَسْلَمَ ‘আব্দুর রহমান ইবনে জায়েদ ইবনে আসলাম’ রাবীকেও অত্যন্ত যঈফ বলে চালিয়ে দিয়েছেন। তবে হ্যাঁ, তার ব্যাপারে কেউ কেউ সমালোচনা করেছেন তবে ইমাম মিযযী (رحمة الله) উল্লেখ করেছেন,


وَقَال أَبُو أَحْمَد بْن عدي: له أحاديث حسان. وهو ممن احتمله الناس، وصدقه بعضهم. وهو ممن يكتب حديثه. 


-“ইমাম আবু আহমদ ইবনে আদী (رحمة الله) বলেন: তার অনেক হাদিস ‘হাসান’ রয়েছে। সে এমন ব্যক্তি যার রেওয়ায়েত লোকেরা গ্রহণ করেছেন এবং অনেকে তাকে সত্যবাদী বলেছেন এবং সে ব্যক্তির হাদিস লিখেছেন।” (ইমাম মিযযী: তাহজিবুল কামাল, ১৭/১১৯ পৃ. রাবী নং ৩৮২০)


ইমাম যাহাবী (رحمة الله) বলেন: وهو صاحب حَدِيثِ -“সে ছাহেবুল হাদিস।” (ইমাম যাহাবী: তারিখে ইসলামী, রাবী নং ২০১)


তার পিতা ‘যায়েদ ইবনে আসলাম’ বুখারী ও মুসলিমের রাবী। অতএব, বর্ণিত এ হাদিসটির সনদ উপরের হাদিসের শাওয়াহেদ থাকায় কমপক্ষে ‘হাসান’ হওয়ার মর্যাদায় উন্নিত। 


তৃতীয় সূত্র:


ইমাম যাহাবী (رحمة الله) উল্লেখ করেন-


أخبرنا أبو الحسن الهاشمي قال: أخبرنا ابن روزبة قال: أخبرنا أبو الوقت قال: أخبرنا أبو إسماعيل الأنصاري قال: أخبرنا أبو الحسين ابن العالي قال: حدثنا بشر بن أحمد قال: حدثنا ابن ناجية قال: حدثنا عبيد بن محمد الوراق قال: حدثنا مُوسَى بْنُ هِلالٍ الْعَبْدِيُّ، عَنْ عَبْد اللَّه بْن عُمَر، عَنْ نَافِعٍ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ زَارَنِي بَعْدَ مَوْتِي وَجَبَتْ لَهُ شَفَاعَتِي


-‘‘হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, যে আমার ওফাতের পর আমার রওজা যিয়ারত করবে তার জন্য আমার শাফায়াত ওয়াজিব।’’ (ইমাম যাহাবী, তারিখুল ইসলাম, ৪/৬৬৩ পৃ. ক্রমিক.১১৫) এ হাদিসটি প্রথম সূত্রের ন্যায় মর্যাদা রাখে। রাবী ‘মূসা’ মাজহুল নন, যা ইতোপূর্বে আলোচনা করা হয়েছে। তাই এ সনদটি সহীহ বলে বুঝা যায়।


বিজ্ঞ মুহাদ্দিস ইমাম মার‘ঈ মুকাদ্দাসী হাম্বলী (رحمة الله) (ওফাত. ১০৩৩ হি.) এ হাদিসটি নিয়ে পর্যালোচনা তুলে ধরেন-


قَالَ الذَّهَبِيُّ: طُرُقُهُ كُلُّهَا لَيِّنَةٌ يُقَوِّي بَعْضُهَا بَعْضًا.


-‘‘ইমাম যাহাবী (رحمة الله) বলেন, সবগুলো সূত্রই কিছুটা শিথিলতাপূর্ণ, তবে অনেক সূত্রে বর্ণিত হওয়ায় একটি সূত্র আরেকটি সূত্রকে শক্তিশালী করেছে (হাসান স্তরে উপনীত হয়েছে)।’’ (আল-ফাওয়াইদুল মাওদ্বুআত ফি আহাদিসিল মাওদ্বুআত, ৭৮ পৃ. হা/১৭)


আল্লামা তাহের পাটনী (رحمة الله) তার সুপ্রসিদ্ধ গ্রন্থে লিখেন-


قَالَ الْبَيْهَقِيّ طرقه كلهَا لينَة وَلَكِن يتقوى بَعْضهَا بِبَعْض


-‘‘ইমাম বায়হাকী (رحمة الله) বলেন, সবগুলো সূত্রই কিছুটা শিথিলতাপূর্ণ, তবে অনেক সূত্রে বর্ণিত হওয়ায় একটি সূত্র আরেকটি সূত্রকে শক্তিশালী করেছে(হাসান স্তরে উপনীত হয়েছে)।’’ (আল্লামা তাহের পাটনী, তাযকিরাতুল মাওদ্বুআত, ৭৫ পৃ.)


আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) লিখেন-


)عن ابن عمر) فيما رواه ابن خزيمة والبزار والطبراني وله طرق وشواهد حسنه الذهبي لأجلها


-‘‘(হাদিসটি ইবনে উমর (রা.) হতে বর্ণিত) এটি ইমাম ইবনে খুজায়মা, বায্যার, তাবরানী বিভিন্ন পদ্ধতিতে বর্ণনা করেছেন, এটির শাওয়াহেদও রয়েছে, ইমাম যাহাবী (رحمة الله) এটির মর্যাদা ‘হাসান’ স্তরে নির্ধারণ করেছেন।’’  (মোল্লা আলী ক্বারী, শরহে শিফা, ২/১৫০ পৃ.)


এ হাদিসের বিষয়ে বিভিন্ন ইমাম ও মুহাদ্দিসদের অভিমত:


১. দশম শতাব্দীর মুজাদ্দিদের অন্যতম, আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) আরো বলেন,


رواه الدارقطني وغيره وصححه جماعة من أئمة الحديث


-‘ইমাম দারাকুতনী (رحمة الله) এবং অন্যান্য ইমামগণ বর্ণনা করেছেন। হাদিস শাস্ত্রের এক জামাত ইমামগণ উক্ত হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন।’’ ৭

➥৭. আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী : শরহে শিফা : ২/১৫০ পৃঃ, দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন।


২. আল্লামা শায়খ ইউসুফ নাবহানী (رحمة الله) উক্ত হাদিস সম্পর্কে লিখেন- 


صححه جماعة من ائمة الحديث-  


-“এক জামাত ইমামগণ উক্ত হাদিসকে সহীহ বলে মেনে নিয়েছেন।”  ৮

➥৮.আল্লামা শায়খ ইউসুফ নাবহানী : শাওয়াহিদুল হক্ব : ৭৭ পৃঃ


৩. তিনি আরো বলেন,  وابن السكن و صححه


-“ইমাম ইবনে সাকান (رحمة الله) উক্ত হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন।’’ ৯

➥৯.আল্লামা শায়খ ইউসুফ নাবহানী : শাওয়াহিদুল হক্ব : ৭৭ পৃঃ


৪. ইমাম ইবনে খোযায়মা উক্ত হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন,  তাঁর হাদিস গ্রন্থে। আল্লামা ইমাম তকী উদ্দীন সুবকী (رحمة الله) তার “শিফাউস সিকাম ফি যিয়ারাতিল খায়রিল আ’নাম” এর ১১ পৃষ্ঠায় বলেন, “উক্ত হাদিসটি উক্ত সনদে (দারে কুতনীর) বর্ণনায় হাসানের মর্যাদা রাখে। আর একাধিক তরিকায় বর্ণিত হওয়ায় শক্তিশালী হওয়ার দরুন صحيح لغيره এর মর্যাদা রাখে।”


৫. শুধু তাই নয় আল্লামা ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতি (رحمة الله) তার ‘মানাহিলুস সাফা ফি তাখরীজে আহাদিসিস শিফা’ গ্রন্থে লিখেন-


وله طرق وشواهد حسنه الذهبي لأجلها الذهبي.


-‘‘এটি অনেক সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, শাওয়াহেদের কারণে যাহাবী (رحمة الله) এটিকে ‘হাসান’ মর্যাদায় নির্ধারণ করেছেন।’’ (ইমাম সুয়ূতি, মানাহিলুস সাফা ফি তাখরীজে আহাদিসিস শিফা, ২০৮ পৃ., হা/১১১৫)


৬. ইমাম ইবনে সাকান (رحمة الله) তার السنن الصحاح ما ثورة عن رسول الله ﷺ এ বলেন হাদিসটি সহীহ। আল্লামা ইমাম হাজার মক্কী (رحمة الله) তার الجوهر المنظم فى زيارة القبر الشريف النبوى المكرم এর ৪২ পৃষ্ঠায় বলেন- 


صححه جماعة من ائمة الحديث -‘‘এক জামাত ইমামগণ উক্ত হাদিসটি সহীহ বলেছেন। 


৭. আল্লামা শিহাবুদ্দীন খিফ্ফাযি (رحمة الله) তার “নাসিমুর রিয়াদ্ধ শরহে শিফা” এর ২/২৪৮ পৃষ্ঠায়ও অনুরূপ বক্তব্য দিয়েছেন। 


৮. ইমাম কাস্তালানী (رحمة الله) বলেন-


رواه عبد  الحق فى احكامه الوسطى و فى الصغرى و سكت عنه و سكوته عن الحديث فيهما دليل على صحته-


-‘‘আল্লামা শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিস (رحمة الله) তার দুটি গ্রন্থে হাদিসটি বর্ণনা করেন,  আর তিনি উক্ত হাদিসের বিষয়ে চুপ ছিলেন, আর তার চুপ থাকা সহীহ হওয়ার উপরে দালালত করে।’’ ১০

➥১০. ইমাম জুরকানী: শরহুল মাওয়াহেব : ১২/১৮০ পৃঃ


১০. এর ব্যাখ্যায় ইমাম যুরকানী বলেন,  تحققت و ثبتت- ‘তার (কাস্তালানীর) এই তাহকীক দ্বারা হাদিসটি দৃঢ় বা শক্তিশালী প্রমাণিত হয়েছে।’  ১১

➥১১.ইমাম জুরকানী : শরহুল মাওয়াহেব : ১২/১৮০ পৃঃ


১১. অপরদিকে আল্লামা সান‘আনী (رحمة الله) লিখেন-


وقال السبكي: بل حسن أو صحيح


-‘‘ইমাম তকীউদ্দীন সুবকী (رحمة الله) বলেন, উক্ত হাদিস ‘হাসান’ লিজাতিহী অথবা সহীহ লিগাইরিহী এর মর্যাদা রাখে।’’  ১২

➥১২. আল্লামা সান‘আনী, তানভীর শরহে জামেউস সগীর, ১০/২৪১ পৃঃ হা/৮৬৯৬, ইমাম জুরকানী : শরহুল মাওয়াহেব : ১২/১৮০ পৃঃ


আল্লামা সান‘আনী (رحمة الله) আরও উল্লেখ করেন-


وقال الذهبي: طرقه كلها لينة لكن يتقوى بعضها ببعض


-‘‘ইমাম যাহাবী (رحمة الله) বলেন, সবগুলো সূত্রই কিছুটা শিথিলতাপূর্ণ, তবে অনেক সূত্রে বর্ণিত হওয়ায় একটি সূত্র আরেকটি সূত্রকে শক্তিশালী করেছে (হাসান লিগাইরিহী স্তরে উন্নিত হয়েছে)।’’ ১৩

➥১৩. আল্লামা সান‘আনী, তানভীর শরহে জামেউস সগীর, ১০/২৪১ পৃঃ হা/৮৬৯৬, ইমাম জুরকানী : শরহুল মাওয়াহেব : ১২/১৮০ পৃঃ


১২. ইমাম যুরকানী (رحمة الله) বলেন,  ان ابن خزيمة صححه- -‘‘নিশ্চয়ই ইবনে খুযায়মা (رحمة الله) উক্ত হাদিসটিকে সহীহ সূত্রে বর্ণনা করেন।’’  ১৪

➥১৪. ইমাম জুরকানী : শরহুল মাওয়াহেব : ১২/১৮০ পৃঃ


১৩. ইমাম ইবনুল মুলাক্কিন (رحمة الله) বলেন وَهَذَا إِسْنَاد جيد -‘‘উক্ত সনদটি শক্তিশালী।  ১৫

➥১৫.ইমাম ইবনুল মুলাক্কিন : আল-বদরুল মুনীর : ৬/২৯৬ পৃঃ


১৪. ইমাম নুরুদ্দীন সানাদী (رحمة الله) বলেন,


رَوَاهُ الدَّارَقُطْنِيُّ وَغَيْرُهُ وَصَحَّحَهُ عَبْدُ الْحَقِّ


-‘‘ইমাম দারেকুতনী ও অন্যান্যরা হাদিসটি বর্ণনা করেছেন, আর মুহাদ্দিস আবদুল হক  হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন।’’১৬

➥১৬. ইমাম নুরুদ্দীন সানাদী : হাশীয়াতুল সানাদী আ‘লা সুনানে ইবনে মাযাহ: ২/২৬৮ পৃঃ


১৪. আল্লামা হাফিজ ইবনে হাজার মক্কী (رحمة الله) বলেন-


وصححه جماعة من أئمة الحديث


-“হাদিস শাস্ত্রের একদল ইমাম এই হাদিসকে সহীহ্ বলেছেন।” (জাওয়াহিরুল মুনাজ্জাম, ৪২ পৃ:)।


১৫. আহলে হাদিসদের ইমাম শাওকানী লিখেন-


وَقَدْ صَحَّحَ هَذَا الْحَدِيثَ ابْنُ السَّكَنِ وَعَبْدُ الْحَقِّ وَتَقِيُّ الدِّينِ السُّبْكِيُّ


-‘‘এ হাদিসকে ইমাম ইবনে সাকান (رحمة الله), আব্দুল হক (رحمة الله) এবং তকী উদ্দিন সুবকী (رحمة الله) সহীহ বলেছেন।’’ (শাওকানী, নায়লুল আউতার, ৫/১১৪ পৃ.)


১৬. আল্লামা মানাভী (رحمة الله) লিখেন-


وقال السبكي: بل حسن أو صحيح. وقال الذهبي: طرقه كلها لينة لكن يتقوى بعضها ببعض


-‘‘ইমাম তকীউদ্দীন সুবকী (رحمة الله) বলেন, উক্ত হাদিস ‘হাসান’ লিজাতিহী অথবা সহীহ লিগাইরিহী এর মর্যাদা রাখে। ইমাম যাহাবী (رحمة الله) বলেন, সবগুলো সূত্রই কিছুটা শিথিলতাপূর্ণ, তবে অনেক সূত্রে বর্ণিত হওয়ায় একটি সূত্র আরেকটি সূত্রকে শক্তিশালী করেছে (হাসান লিগাইরিহী স্তরে উন্নিত হয়েছে)।’’ (মানাভী, ফয়যুল ক্বাদীর, ৬/১৪০ পৃ. হা/৮৭১৫)


১৭. ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) লিখেন-


فَائِدَةٌ طُرُقُ هَذَا الْحَدِيثِ كُلُّهَا ضَعِيفَةٌ لَكِنْ صَحَّحَهُ مِنْ حَدِيثِ ابْنِ عُمَرَ أَبُو عَلِيِّ بْنُ السَّكَنِ فِي إيرَادِهِ إيَّاهُ فِي أَثْنَاءِ السُّنَنِ الصِّحَاحِ لَهُ وَعَبْدُ الْحَقِّ فِي الْأَحْكَامِ فِي سُكُوتِهِ عَنْهُ وَالشَّيْخُ تَقِيُّ الدِّينِ السُّبْكِيُّ مِنْ الْمُتَأَخِّرِينَ بِاعْتِبَارِ مَجْمُوعِ الطُّرُقِ.


-‘‘ফায়েদা: এ হাদিসটি যতগুলো সূত্রে বর্ণিত হয়েছে সবগুলোতেই কিছুটা দুর্বলতা বিদ্যমান, তবে ইমাম আলী ইবনে সাকান (رحمة الله) ইবনে উমর (رضي الله عنه)-এর সূত্রকে সহীহ বলেছেন, এমনিভাবে আল্লামা আব্দুল হক (رحمة الله) তার আহকামুল কোবরা গ্রন্থে এ হাদিসের সনদ সমালোচনায় নীরব ছিলেন (তার নীরবতা দ্বারা এটি গ্রহণযোগ্য বলে বুঝা যায়), এমনিভাবে শায়খ, ইমাম তকী উদ্দিন সুবকী (رحمة الله) এ হাদিসের সবগুলো সূত্র বর্ণনা করেছেন।’’ (ইবনে হাজার আসকালানী, তালখিসুল হুবাইর, ২/৫৭০ পৃ. হা/১০৭৫)


১৮. ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতি (رحمة الله) লিখেন-


قال الذهبي: طرقه كلها لينة يقوى بعضها بعضاً، لأن ما في رواتها متهم بالكذب.


-‘‘ইমাম যাহাবী (رحمة الله) বলেন, সবগুলো সূত্রই কিছুটা শিথিলতাপূর্ণ, তবে অনেক সূত্রে বর্ণিত হওয়ায় একটি সূত্র আরেকটি সূত্রকে শক্তিশালী করেছে (হাসান লিগাইরিহী স্তরে উন্নিত হয়েছে), তবে সনদে কোনো মিথ্যাবাদী রাবী নেই।’’ (ইমাম সুয়ূতি, আদ-দুররুল মুনতাসিরাহ ফি আহাদিসিল মুশতাহিরাহ, ১/১৯০ পৃ. হা/৪০৮)


১৯. ইমাম সাখাভী (رحمة الله) লিখেন-


قال الذهبي: طرقه كلها لينة، لكن يتقوى بعضها ببعض، لأن ما في روايتها متهم بالكذب،


-‘‘ইমাম যাহাবী (رحمة الله) বলেন, সবগুলো সূত্রই কিছুটা শিথিলতাপূর্ণ, তবে অনেক সূত্রে বর্ণিত হওয়ায় একটি সূত্র আরেকটি সূত্রকে শক্তিশালী করেছে (হাসান লিগাইরিহী স্তরে উন্নিত হয়েছে), তবে সনদে কোনো মিথ্যার অভিযুক্ত কোনো রাবী নেই।’’ (ইমাম সাখাভী, মাকাসিদুল হাসানা, ৬৪৮ পৃ. হা/১১২৫)


২০. আহলে হাদিস শাওকানী ইমাম বায়হাকী (رحمة الله)-এর উদ্ধিৃতি দিয়ে লিখেন-


وَقَالَ: إِنَّ طُرُقَهُ كُلَّهَاَ لَيِّنَةٌ لَكِنْ يُقَوِّي بَعْضُهَا بَعْضًا


-‘‘এবং তিনি আরও বলেন, সবগুলো সূত্রই কিছুটা শিথিলতাপূর্ণ, তবে অনেক সূত্রে বর্ণিত হওয়ায় একটি সূত্র আরেকটি সূত্রকে শক্তিশালী করেছে (হাসান লিগাইরিহী স্তরে উন্নিত হয়েছে)।’’ (শাওকানী, ফাওয়াইদুল মাজমূআ, ১১৭ পৃ. হা/৩৫)


২১. আল্লামা আজলূনী (رحمة الله) লিখেন-


وقال الذهبي طرقه كلها لينة لكن يتقوى بعضها ببعض لأن ما في رواتها متهم بالكذب.


-‘‘ইমাম যাহাবী (رحمة الله) বলেন, সবগুলো সূত্রই কিছুটা শিথিলতাপূর্ণ, তবে অনেক সূত্রে বর্ণিত হওয়ায় একটি সূত্র আরেকটি সূত্রকে শক্তিশালী করেছে (হাসান লিগাইরিহী স্তরে উন্নিত হয়েছে), তবে সনদে কোনো মিথ্যার অভিযুক্ত কোনো রাবী নেই।’’ (আজলূনী, কাশফুল খাফা, ২/২৫১ পৃ. হা/২৪৮৯)


ধোঁকাবাজদের চিনে রাখুন!


এ হাদিসকে যিনি সর্বপ্রথম জাল বলেছেন তার পরিচয় তুলে ধরেন আল্লামা সান‘আনী (رحمة الله) এভাবে-


وبالجملة فقول ابن تيمية: موضوع، غير صواب.


-‘‘ইবনে তাইমিয়া এ হাদিসকে জাল বলে আখ্যায়িত করেছেন, তার এ সিদ্ধান্ত সঠিক নয়।’’ (সান‘আনী, তানভীর শরহে জামেউস সগীর, ১০/২৪২ পৃ. হা/৮৬৯৬)


আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) এ হাদিসের আলোচনায় লিখেন-


وقد فرط ابن تيمية من الحنابلة حيث حرم السفر لزيارة النبي صلى الله تعالى عليه وسلم كما أفرط غيره حيث قال كون الزيارة قربة معلوم من الدين بالضرورة وجاحده محكوم عليه بالكفر


-‘‘পৃথিবীর ইতিহাসে একক হাম্বলী মাযহাবের অনুসারীদের মাঝে (পথভ্রষ্ট) ইবনে তাইমিয়া রাসূল (ﷺ)-এর রওজা যিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর করাকে হারাম বলে ফাতওয়া দিয়েছিল.......।’’ (মোল্লা আলী ক্বারী, শরহে শিফা, ২/১৫২ পৃ.) 


আহলে হাদিসদের ইমাম ইবনে তাইমিয়া তার সুপ্রসিদ্ধ ফাতওয়ার গ্রন্থে রাসূল (ﷺ)-এর রওজা যিয়ারত বিষয়ক হাদিস প্রসঙ্গে লিখেন-


فِي زِيَارَةِ قَبْرِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَهُوَ ضَعِيفٌ وَلَيْسَ فِي زِيَارَةِ قَبْرِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَدِيثٌ حَسَنٌ وَلَا صَحِيحٌ


-‘‘রাসূল (ﷺ)-এর রওজা যিয়ারত সম্পর্কিত হাদিস যঈফ, নবীজী (ﷺ)-এর রওজা যিয়ারতের পক্ষে না কোনো সহীহ হাদিস রয়েছে না হাসান।’’ (ইবনে তাইমিয়া, মাজমাউল ফাতওয়া, ২৪/৩৫৬ পৃ.) ভয়ংকর ফিতনাবাজ আরও লিখেছেন-


بَلْ عَامَّةُ مَا يُرْوَى فِي ذَلِكَ أَحَادِيثُ مَكْذُوبَةٌ مَوْضُوعَةٌ


-‘‘বরং এ বিষয়ে অধিকাংশ বর্ণনায় মিথ্যাবাদী রাবী রয়েছেন এবং জাল।’’ (ইবনে তাইমিয়া, মাজমাউল ফাতওয়া, ২৪/৩৫৭ পৃ.) সে আরেক স্থানে লিখেন-


وَلِهَذَا ذَكَرَهُ غَيْرُ وَاحِدٍ مِنْ الْمَوْضُوعَاتِ وَلَمْ يَرْوِهِ أَحَدٌ مِنْ أَهْلِ الْكُتُبِ الْمُعْتَمَدِ عَلَيْهَا مَنْ كُتُبِ الصِّحَاحِ وَالسُّنَنِ وَالْمَسَانِيدِ.


-‘‘একদল মুহাদ্দিগণ এ বিষয়ক হাদিসকে জাল বলেছেন, এ সমস্ত হাদিস নির্ভরযোগ্য সহীহ, সুনান এবং মাসানীদ সংক্রান্ত প্রণেতাগণ কেহই বর্ণনা করেননি।’’ (ইবনে তাইমিয়া, মাজমাউল ফাতওয়া, ২৭/২৫ পৃ.) সে আরও লিখেছে-


وَلِأَنَّ السَّفَرَ إلَى زِيَارَةِ قُبُورِ الْأَنْبِيَاءِ وَالصَّالِحِينَ بِدْعَةٌ لَمْ يَفْعَلْهَا أَحَدٌ مِنْ الصَّحَابَةَ وَلَا التَّابِعِينَ وَلَا أَمَرَ بِهَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَلَا اسْتَحَبَّ ذَلِكَ أَحَدٌ مِنْ أَئِمَّةِ الْمُسْلِمِينَ. فَمَنْ اعْتَقَدَ ذَلِكَ عِبَادَةً وَفَعَلَهَا فَهُوَ مُخَالِفٌ لِلسُّنَّةِ وَلِإِجْمَاعِ الْأَئِمَّةِ.


-‘‘নিশ্চয় সফরের উদ্দেশ্যে নবী এবং নেককারদের মাজার যিয়ারত করা বিদ‘আত, এমনটি কোনো সাহাবী, তাবেয়ী এমনটি করেননি এবং রাসূল (ﷺ) আদেশও করেননি, কোনো মুসলিম একজন ইমামও একে মুস্তাহাব বলেননি। আর যে (সফরের উদ্দেশ্যে নবী, ওলীর মাজার যিয়ারতকে) এটাকে ইবাদত (সাওয়াবের কাজ) মনে করবে তা হবে রাসূল (ﷺ)-এর সুন্নাহ এবং মুসলিম উম্মাহের ইজমা বিরোধী আক্বিদা।’’ (ইবনে তাইমিয়া, মাজমাউল ফাতওয়া, ২৭/২২০ পৃ.) 


এ মিথ্যাবাদী আহলে ইলমের নাম ব্যবহার করে সে লিখে-


وَمَا ذَكَرَهُ السَّائِلُ مِنْ الْأَحَادِيثِ فِي زِيَارَةِ قَبْرِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَكُلُّهَا ضَعِيفَةٌ بِاتِّفَاقِ أَهْلِ الْعِلْمِ بِالْحَدِيثِ بَلْ هِيَ مَوْضُوعَةٌ.


-‘‘আহলে ইলমগণ রাসূল (ﷺ)-এর রওজা যিয়ারত সংক্রান্ত হাদিসের বিষয়ে বলেছেন এগুলো সবই যঈফ, বরং এগুলো সবই জাল।’’ (ইবনে তাইমিয়া, মাজমাউল ফাতওয়া, ২৭/২২১ পৃ.)


সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! এ বেঈমান ধোঁকাবাজ ইবনে তাইমিয়াকে আমাদের দেশের কতিপয় আলেমগণ, ইমাম, শায়খুল ইসলাম বলে থাকেন, শরীয়তের কাঠ গড়ায় তাদের অবস্থান কি হবে!


আরেক ধোঁকাবাজ মুফতি ইবনে বায এ বিষয়ক হাদিস প্রসঙ্গে লিখেন-


لم يثبت منها شيء عن النبي ﷺ.


-‘‘রাসূল (ﷺ)-এর রওজা যিয়ারত সংক্রান্ত কোনো হাদিসই সাব্যস্ত নয়।’’ (ইবনে বায, মাজমূআয়ে ফাতওয়ায়ে ইবনে বায, ১৬/১১৩ পৃ.) এ ধোঁকাবাজ মুফতি নিজের মনগড়া ফাতওয়া শক্ত করার জন্য দলিল হিসেবে পেশ করেছে-


وجزم شيخ الإسلام ابن تيمية رحمه الله، أن هذه الأحاديث كلها موضوعة.


-‘‘শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রাসূল (ﷺ)-এর রওজা যিয়ারত সংক্রান্ত যত হাদিসই বর্ণিত হয়েছে তার সবগুলোকেই তিনি জাল বা বানোয়াট বলেছেন।’’ (ইবনে বায, মাজমূআয়ে ফাতওয়ায়ে ইবনে বায, ১৬/১১৪ পৃ.) সে আরও লিখেছে-


ليست زيارة قبر النبي صلى الله عليه وسلم واجبة ولا شرطا في الحج كما يظنه بعض العامة وأشباههم، بل هي مستحبة في حق من زار مسجد الرسول صلى الله عليه وسلم أو كان قريبا منه.


أما البعيد عن المدينة فليس له شد الرحل لقصد زيارة القبر، ولكن يسن له شد الرحل لقصد المسجد الشريف


-‘‘রাসূল (ﷺ)-এর রওজা যিয়ারত ওয়াজিব বা অপরিহার্য কোনো বিষয় নয়, এটা হজ্জের কোনো শর্তও নয়, যেমনটি কিছু আম জনতা মনে করে থাকে, বরং রাসূল (ﷺ)-এর রওজা যিয়ারত তখন মুস্তাহাব যখন তার মসজিদের (মসজিদের নববীর) কাছে আসবে অথবা তার কাছাকাছি আসবে। আর যখন কোনো লোক মদিনা থেকে অনেক দূরে থাকবে তখন সে কেবল রাসূল (ﷺ)-এর রওজা যিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর করবে না, তবে সুন্নাত হলো সে মসজিদে নববীর নিয়ত করে সফর করবে।’’ (ইবনে বায, মাজমূআয়ে ফাতওয়ায়ে ইবনে বায, ১৬/১১১ পৃ.)


ইবনে তাইমিয়ার এ বাতিল মতবাদকে প্রচারকারীর অন্যতম শায়খ নাসিরুদ্দীন আলবানী রাসূল (ﷺ)-এর রওজা যিয়ারত সম্পর্কে লিখেছেন-


وأحاديث زيارة قبره صلى الله عليه وسلم كلها ضعيفة لا يعتمد على شيء منها في الدين، ولهذا لم يروأهل الصحاح والسنن شيئا منها، وإنما يرويها من يروي الضعاف كالدارقطني والبزار وغيرهما.


-‘‘রাসূল (ﷺ)-এর রওজা যিয়ারত সম্পর্কিত সকল হাদিস যঈফ, এগুলোর উপর দ্বীন নির্ভর করতে পারে না। এ বিষয়ক হাদিস নির্ভরযোগ্য সহীহ, সুনান কোনো গ্রন্থ প্রণেতা বর্ণনা করেননি। বর্ণিত হতে আমি দেখিনি, এগুলো বর্ণিত হয়েছে বিভিন্ন দুর্বল হাদিসের গ্রন্থে যেমন-দারাকুতনী, বায্যার প্রমুখ।’’ (আলবানী, সিলসিলাতুল আহাসিদ দ্বঈফাহ, ১/১২৩ পৃ. হা/৪৭) 


সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! রাসূল (ﷺ)-এর রওজা যিয়ারতের বিরোদ্ধে যত কূটকৌশলই রয়েছে সবই প্রয়োগ করছে এ ইবনে তাইমিয়ার বাতিল মতবাদ প্রচারকারী এবং টাকার কিনা এ মুফতিগণ।


পাঠকবৃন্দের কাছে আমার একটাই জিজ্ঞাসা যে রাসূল (ﷺ)-এর রওজা যিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফরকে যে কুফুরী, হারাম যারা বলে শরিয়তে তাদের স্থান কি হতে পারে বলে আপনি মনে করেন! ইসলামী শরিয়তে কোনো হালালকে যে হারাম বলবে সে নিঃসন্দেহে কাফির; কিন্তু হারামও নয় বরং সে যদি কুফুরী বলে তখন কি হতে পারে তার শরিয়তে হুকুম! 


ধারাবাহিকভাবে ইবনে তাইমিয়ার মতবাদের প্রচারকারীর সংখ্যা বেড়েই চলছে, বাংলাদেশে তার অন্যতম উত্তরসূরি ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর জীবনপ্রাণ দিয়ে এ বিষয়ক হাদিসগুলোকে অত্যন্ত যঈফ বা জাল প্রমাণের চেষ্টা চালিয়েছিলেন, কিন্তু সত্য যে চাপা থাকে না তাই তিনি এক পর্যায়ে উপরের এ হাদিস বিষয়ে লিখে ফেলেন-’’সর্বাবস্থায় এ সনদটি দুর্বল হলেও এতে কোনো মিথ্যাবাদী বা মিথ্যা বর্ণনার অভিযোগে অভিযুক্ত বা পরিত্যক্ত রাবী নেই।’’ (হাদিসের নামে জালিয়াতি,  পৃ. ৫৮১)


উসূলে হাদিসের একটি সুপ্রসিদ্ধ নীতিমালা হলো যঈফ সনদ, যে সনদে কোনো মিথ্যাবাদী রাবী থাকবে না অনুরূপ সনদের হাদিস যখন একাধিক সূত্রে বর্ণিত হয় তা ‘হাসান লিগাইরিহি’ স্তরে উন্নিত হয়, যা দ্বারা শরীয়তের যে কোনো দলিল হিসেবে দাঁড় করানো যাবে। এ নীতিমালা কিতাবের শুরুতে আমি বিস্তারিত প্রমাণসহ উল্লেখও করেছি, এমনকি ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর তার গ্রন্থের ১৩৫ পৃষ্ঠায় নিজেও নীতিমালাটি নিজেও স্বীকার করেছেন। আফসোস! রাসূল (ﷺ)-এর রওজা যিয়ারতের মত একটি গূরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ক্ষেত্রে আমানতধারী রক্ষা না করার জন্য। তিনি কি একদম ভুলে গেলেন যে, হাশরের ময়দানে এক দিন তার এ বিষয়ের যথাযথ হিসাব প্রদান করতে হবে!


সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! ধোঁকাবাজির চিত্র এখানেই শেষ নয়, মুফতি আমিমুল ইহসান (رحمة الله) সুপ্রসিদ্ধ গ্রন্থ ‘ফিকহুস সুনানি ওয়াল আছার’ গ্রন্থে উক্ত হাদিসটি সংকলন করেছেন, অথচ এটির বাংলা অনুবাদ প্রকাশ করেছেন স্বয়ং ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর। এ সত্য গোপনকারী এ হাদিসের বিষয়ে আমানতধারী রক্ষা না করতে পারলেও এ কিতাবের বাংলা অনুবাদ করতে গিয়ে এ হাদিসের সনদের হুকুম প্রসঙ্গ নিজেই অনুবাদ করেন যে-“উক্ত হাদিসটি ইমাম দারেকুতনী (رحمة الله), ইবনুস সাকান (رحمة الله),  আল্লামা আব্দুল হক মুহাদ্দিস (رحمة الله), ইমাম সুবকী (رحمة الله) সহীহ বলেছেন, আল্লামা নীমাবী হাদিসটিকে ‘হাসান’ বলেছেন। তাবরানী হাদিসটি সংকলন করেছেন ও ইবনুস সাকান সহীহ বলেছেন।” 


সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর মত বড় বড় পিএইচডি ডিগ্রিধারী লোকেরাই যদি সত্য গোপন করে সাধারণ মানুষ কাদের কাছে সত্য খুঁজে পাবে! আমার এ লিখায় কোনো কঠোরতা হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইল।


হাদিস নং-২: যে ব্যক্তি আমার রওযা শরীফ যিয়ারত করবে কিয়ামতের দিন আমি তার জন্য শাফায়াতকারী ও সাক্ষী হবো:


“হাদীসের নামে জালিয়াতি” গ্রন্থের ৫৮১ পৃষ্ঠায় উক্ত হাদিসটিকে জাল প্রমাণ করার অপচেষ্টা চালিয়েছেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোন মুহাদ্দিস উক্ত হাদিসটিকে জাল বা বানোয়াট বলেননি। কোন মুহাদ্দিস জাল বলেছেন তার প্রমাণও ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর উলে­খ করতে পারেন নি। 


প্রথম সূত্র: 


ইমাম আবূ দাউদ তায়লসী (رحمة الله)সহ আরও অনেকে সংকলন করেন-


حَدَّثَنَا أَبُو دَاوُدَ قَالَ: حَدَّثَنَا سَوَّارُ بْنُ مَيْمُونٍ أَبُو الْجَرَّاحِ الْعَبْدِيُّ، قَالَ: حَدَّثَنِي رَجُلٌ مِنْ آلِ عُمَرَ، عَنْ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: مَنْ زَارَ قَبْرِي أَوْ قَالَ: مَنْ زَارَنِي كُنْتُ لَهُ شَفِيعًا أَوْ شَهِيدًا وَمَنْ مَاتَ فِي أَحَدِ الْحَرَمَيْنِ بَعَثَهُ اللَّهُ فِي الْآمِنِينَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ


-‘‘হযরত উমর ইবনে খাত্তাব (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী করীম (ﷺ) কে একথা বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি আমার রওযা যিয়ারত করবে,  তার জন্য আমি শাফায়াতকারী এবং সাক্ষী হব। যে ব্যক্তি দুই হারামাঈন শরীফের মাঝে মৃত্যুবরণ করবে আল্লাহ্ তা‘য়ালা তাকে নিরাপত্তা সহ হাশরে উঠাবেন।’’  ১৭

➥১৭. ইমাম তায়লসী : আল-মুসনাদ : ১/৬৬ পৃ : হা/৬৫, ইমাম বায়হাকী : আস সুনানে কোবরা : ৫/২৪৫ পৃঃ,  ইমাম উকাইলী : আদ-দ্বঈফাহ : ৪/৩৬২ পৃঃ ইমাম বায়হাকী, শুয়াবুল ঈমান : ৬/৪৮ পৃঃ হা/৩৮৫৭, ইমাম তকী উদ্দিন সুবকী : আস-সুনান : ১৫ পৃঃ, ইমাম কাস্তাল্লানী : মাওয়াহেবে লাদুন্নিয়া : ৪/৫৭১ পৃঃ ইমাম জুরকানী : শরহুল মাওয়াহেব : ১২/১৮০ পৃঃ,  ইমাম দারেকুতনী : আস সুনান : ১/২১৭ পৃ : হা/২৬৬৮, আল্লামা কাস্তাল্লানী : মাওয়াহেবে লাদুন্নিয়া : ৩/১৮৪ পৃঃ, ইমাম তকি উদ্দিন সুবকী : সিফাউস সিকাম : ১৮ পৃঃ, মোল্লা আলী ক্বারী : শরহে শিফা : ২/১৫০ পৃঃ, কাযী আয়ায : শিফা শরীফ : ২/১০২ পৃঃ,  ইমাম আবু ই‘য়ালা : আল-মুসনাদ, আল্লামা আজলূনী : কাশফুল খাফা : ২/২২৪ পৃঃ হা/২৪৮৭, ইমাম সাখাভী : মাকাসিদুল হাসানা : ৪১৯ পৃঃ হা/১১২৫, ইমাম ইবনুল মুলাক্কিন : আল-বদরুল মুনীর : ৬/২৯৮ পৃঃ ইবনে আসাকির, ইত্তাহাফুল যায়েরাহ ওয়াতরাফাল মুকিম, ১/২৩ পৃঃ কেনানী, ইত্তেহাফুল খায়রাত,  ৩/২৫৮ পৃঃ হাদিস:২৬৯১।


সনদ পর্যালোচনা:


সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! এ হাদিসের সনদের সমস্ত রাবী সিকাহ, শুধু ‘সিওয়্যার ইবনে মায়মুন’ তার শায়খের নাম এখানে প্রকাশ করেননি, কিন্তু এখানে তিনি পরিপূর্ণ গোপনও করেননি, কে হতে পারে তার তিনি আভাসও দিয়েছেন। এই হাদিস সম্পর্কে আল্লামা আবুল আব্বাস বুছুরী কেনানী (رحمة الله) বলেন,


وَلَهُ شَاهِدٌ مِنْ حَدِيثِ سُبَيْعَةَ رَوَاهُ أبو يعلى والطبراني في الكبير بسند صحيح. 


-“ইহার জন্য ৭টি হাদিস সাক্ষ্য রয়েছে, ইমাম আবু ইয়ালা (رحمة الله) এবং ইমাম তাবারানী (رحمة الله) তার কবীরে সহীহ্ সনদে বর্ণনা করেছেন।” (ইত্তেহাফুল খাইরাতিল মিহরাত, হাদিস নং ২৬৯১)


দ্বিতীয় সূত্র:


আরেকটি সূত্রে সামান্য শাব্দিক ব্যবধানে ইমাম আবু নুয়াইম ইস্পাহানী (رحمة الله) এভাবে বর্ণনা করেছেন,


حَدَّثَنَا أَبُو مُحَمَّدِ بْنُ حَيَّانَ، ثنا مُحَمَّدُ بْنُ أَحْمَدَ بْنِ سُلَيْمَانَ الْهَرَوِيُّ، ثنا مُسْلِمُ بْنُ حَاتِمٍ الأَنْصَارِيُّ، ثنا مُسْلِمُ بْنُ سَالِمٍ الْجُهَنِيُّ، حَدَّثَنِي عَبْدُ اللَّهِ يَعْنِي: الْعُمَرِيَّ حَدَّثَنِي نَافِعٌ، عَنْ سَالِمٍ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ جَاءَنِي زَائِرًا لَمْ تَنْزِعْهُ حَاجَةٌ إِلا زِيَارَتِي، كَانَ حَقًّا عَلَى اللَّهِ أَنْ أَكُونَ لَهُ شَفِيعًا يَوْمَ الْقِيَامَةِ


-“হযরত ইবনে উমর (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলে পাক (ﷺ) ইরশাদ করেন: যে ব্যক্তি আমার কাছে শুধু যিয়ারতের উদ্দেশ্যে আসবে অন্য কোন উদ্দেশ্যে নয়, তাহলে কেয়ামতের দিন তার জন্য শাফায়াত কারী হওয়া আমার জন্য আবশ্যক হয়ে যাবে।” (ইমাম আবু নুয়াইম: তারিখে ইস্পাহান, ২য় খণ্ড, ১৯০ পৃ:)


দুইটি সুত্র মিল হাদিসটি আরো শক্তিশালী হবে। ফলে হাদিসটি সহীহ্ হওয়াতে কোন বাধা থাকবে না। সনদে রাবী ‘মুসলিম বিন সালেম’ রয়েছেন, তিনিও নির্ভরযোগ্য, তাঁর বিষয়ে চতুর্থ হাদিসে আলোকপাত করা হয়েছে।


উক্ত হাদিসের যে দুটি সূত্র রয়েছে তার দুটি সূত্রেই দুর্বলতা ধরে নেওয়া হলেও তার একটি সূত্র অপর সূত্রকে শক্তিশালী করেছে। তাই হাদিসটি লিগাইরিহি হওয়াতে কোনো বাঁধা নেই। 


হাদিস নং-৩: যে ব্যক্তি ইচ্ছাপূর্বক আমার রওযা শরীফ জিয়ারত করবে, কিয়ামতের দিন সে আমার প্রতিবেশী হবে:


“হাদীসের নামে জালিয়াতি” গ্রন্থের ৫৮২ পৃষ্ঠায় উক্ত হাদিসটিকে জাল প্রমাণ করার জন্য অনেক অপচেষ্টা চালিয়েছেন।


প্রথম সূত্র: 


ইমাম বায়হাকী (رحمة الله)সহ আরও অনেকে সংকলন করেন-


أَخْبَرَنَا أَبُو عَبْدِ اللهِ الْحَافِظُ، أَخْبَرَنِي عُمَرُ بْنُ عَلِيٍّ الْحَافِظُ، حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ مُحَمَّدٍ الْحَافِظُ، حَدَّثَنِي دَاوُدُ بْنُ يَحْيَى، حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ الْحَسَنِ التِّرْمِذِيُّ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الْمَلِكِ بْنُ إِبْرَاهِيمَ الْجُدِّيُّ، حَدَّثَنَا شُعْبَةُ، عَنْ سَوَّارِ بْنِ مَيْمُونٍ، حَدَّثَنَا هَارُونُ بْنُ قَزَعَةَ، عَنْ رَجُلٍ مِنْ آلِ الْخَطَّابِ: عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: مَنْ زَارَنِي مُتَعَمِّدًا كَانَ فِي جِوَارِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ


-“হযরত খাত্তাবের বংশধরের এক ব্যক্তি রাসূল (ﷺ) থেকে বর্ণনা করেন,  তিনি বলেন, যে ব্যক্তি ইচ্ছাপূর্বক আমার জিয়ারত করবে, কিয়ামতের দিন সে আমার প্রতিবেশী হবে।’’ ১৮

➥১৮. ইমাম বায়হাকী : শুয়াবুল ঈমান : ৬/৪৭ পৃ: হা/৩৮৫৬, আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী : লিসানুল মিযান : ৬/১৮০ পৃঃ, ইমাম যাহাবী : মিযানুল ই‘তিদাল, ৪/২৬২ পৃ: রাবী নং : ৯৬৬৫ (উক্ত রাবীর আলোচনায়, খতিব তিবরিযী : মেশকাতুল মাসাবীহ : ২/৫১২ পৃ : হা/২৭৫৫, আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী : মেরকাত : ৫/৬৩৮ পৃঃ হা/২৭৫৫, ইমাম সাখাভী : মাকাসিদুল হাসানা : ৪১৯ পৃঃ হা/১১২৫, আল্লামা আজলূনী : কাশফুল খাফা : ২/২২৪ পৃঃ হা/২৪৮৭


এ হাদিসেও তিনি হাতেব (رضي الله عنه)-এর বংশের লোকের নাম রাবী ‘হারুন ইবনে কাযা‘আ’ উল্লেখ করেননি, তিনি তাবেয়ী, তাই তার মুরসাল বর্ণনা হিসেবে এটি গ্রহণযোগ্য। আর তিনি সিকাহ তাবেয়ী, যা এ বিষয়ক অষ্টম হাদিসের পর্যালোচনায় বিস্তারিত উল্লেখ করেছি। তাই এটি মুরসাল শক্তিশালী।


দ্বিতীয় সূত্র: 


এ হাদিসটির আরেকটি সূত্র রয়েছে, ইমাম বায়হাকী (رحمة الله) সংকলন করেন-


أَخْبَرَنَا أَبُو عَبْدِ اللهِ الْحَافِظُ، أَخْبَرَنِي عُمَرُ بْنُ عَلِيٍّ الْحَافِظُ، حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ مُحَمَّدٍ الْحَافِظُ، حَدَّثَنِي دَاوُدُ بْنُ يَحْيَى، حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ الْحَسَنِ التِّرْمِذِيُّ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الْمَلِكِ بْنُ إِبْرَاهِيمَ الْجُدِّيُّ، حَدَّثَنَا شُعْبَةُ، عَنْ سَوَّارِ بْنِ مَيْمُونٍ، حَدَّثَنَا هَارُونُ بْنُ قَزَعَةَ، عَنْ رَجُلٍ مِنْ آلِ الْخَطَّابِ: عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: مَنْ زَارَنِي مُتَعَمِّدًا كَانَ فِي جِوَارِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ


-‘‘তাবেয়ী হারুন ইবনে কুযা‘আহ (رحمة الله) তিনি হযরত উমর (رضي الله عنه)-এর বংশের এক লোকের মাধ্যমে রাসূল (ﷺ) হতে বর্ণনা করেন, তিনি ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি ইচ্ছাপূর্বক আমার জিয়ারত করবে, কিয়ামতের দিন সে আমার প্রতিবেশী হবে।’’ (ইমাম বায়হাকী, শুয়াবুল ঈমান, ৬/৪৭ পৃ. হা/৩৮৫৬, ইবনে হাজার, লিসানুল মিযান, ৮/৩০৯ পৃ. ক্রমিক. ৮২০৬) 


এ সনদটির মান ‘হাসান’ পর্যায়ের। তাবেয়ী ‘আবু কুযা‘আহ’ এটি মুরসাল রূপে বর্ণনা করেছেন। ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর তার গ্রন্থের ৫৮৭ পৃষ্ঠায় এ সূত্রের সবচেয়ে আপত্তিকর দিক হিসেবে রাবী ‘আবূ কুযা‘আহ’ এর ছাত্র ‘সিওয়্যার ইবনে মায়মুন’ কে দোষী করেছেন, তার দাবী তিনি মাজহুল বা অপরিচিত। আসমাউর রিজাল সম্পর্কে যাদের জ্ঞান আছে তারা জানেন যে ইমাম শু‘বা (رحمة الله) কোনো যঈফ, মাজহুল রাবী থেকে হাদিস বর্ণনা করতেন না, তাহলে তিনি কিভাবে সিওয়্যার থেকে বর্ণনা করলেন!


ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর তার গ্রন্থের ৫৮৭ পৃষ্ঠায় এ সূত্র সম্পর্কে লিখেছেন-‘‘এ সনদটি প্রথম সনদের চেয়েও দুর্বল।’’ পাঠকবর্গ! এবার আমরা তার গবেষণার বাস্তবতা দেখবো। বায়হাকীর সনদের ‘সিওয়্যার ইবনে মায়মুন’ নামক রাবী সম্পর্কে লিখেন- سَوَّارُ بْنُ مَيْمُونٍ، وَقِيلَ مَيْمُونُ بْنُ سَوَّارٍ -‘‘সিওয়্যার ইবনে মায়মুন কে মুহাদ্দিসগণের কেউ কেউ তাকে মায়মুন ইবনে সিওয়্যারও বলে থাকেন।’’ (বায়হাকী, শুয়াবুল ঈমান, ৬/৪৬ পৃ. হা/৩৮৫৫) 


বুঝা গেল মুহাদ্দিসগণ তাকে দুই নামেই চিনতেন। বিখ্যাত আসমাউর রিজালবিদ, হাদিসের ইমাম, ইমাম ইবনে হিব্বান (رحمة الله) রাবী ‘মায়মুন ইবনে সিওয়্যার’ কে সিকাহ রাবীর তালিকায় স্থান দিয়েছেন। (ইমাম ইবনে হিব্বান, কিতাবুস সিকাত, ৯/১৭৩ পৃ. ক্রমিক.১৫৮৩৮) 

বুঝা গেল এ রাবী মাজহুল নন বরং সুপরিচিত এবং সিকাহ।


হাদিস নং-৪: যে ব্যক্তি অন্য কোন উদ্দেশ্য ছাড়া একমাত্র আমার রওযা শরীফ যিয়ারত করার উদ্দেশ্যে আসবে কিয়ামতে তার জন্য আমি সুপারিশকারী হব:


“হাদীসের নামে জালিয়াতি” গ্রন্থের ৫৮২-৫৮৩ পৃষ্ঠায় উক্ত হাদিসকে জাল প্রমাণ করার অনেক চেষ্টা করেছেন কিন্তু পারেন নি। উক্ত হাদিসটির একজন রাবী ‘মুসলিম ইবনুল সালিম আল জুহায়নী’ সম্পর্কে সে মন্তব্য করেছেন তিনি দুর্বল, অথচ দেখুন উক্ত রাবী সম্পর্কে মতভেদ রয়েছে, যা সামনে আলোকপাত করা হবে। 


ইমাম তাবরানী (رحمة الله)সহ আরও অনেকে সংকলন করেন-


حَدَّثَنَا عَبْدَانُ بْنُ أَحْمَدَ قَالَ: نَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مُحَمَّدٍ الْعِبَادِيُّ الْبَصْرِيُّ قَالَ: نَا مَسْلَمَةُ بْنُ سَالِمٍ الْجُهَنِيُّ قَالَ: حَدَّثَنِي عُبَيْدُ اللَّهِ بْنُ عُمَرَ، عَنْ نَافِعٍ، عَنْ سَالِمٍ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ جَاءَنِي زَائِرًا لَا تُعْمِلُهُ حَاجَةٌ إِلَّا زِيَارَتِي، كَانَ حَقًّا عَلَيَّ أَنْ أَكُونَ لَهُ شَفِيعًا يَوْمَ الْقِيَامَةِ 


-‘‘হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। রাসূল (ﷺ) বলেন যে ব্যক্তি আমার কাছে যিয়ারত কারী হিসেবে আগমন করবে,  আমার যিয়ারত ছাড়া অন্য কোনো প্রয়োজন তাকে ধাবিত করবে না, তার জন্য আমার দায়িত্ব হবে যে, আমি কিয়ামতের দিন তার শাফায়াত করবো।’’ ১৯

➥১৯. ইমাম তাবরানী : মুজামুল কাবীর : ১২/২৯১ পৃঃ হা/১৩১৪৯, ইমাম তাবরানী : মু‘জামুল আওসাত : ৫/১৬ পৃঃ,  হা/৪৫৪৬, ইমাম ইবনে হাজার হায়সামী : মাযমাউদ যাওয়াইদ : ৪/২পৃঃ হাদিস: ৫৮৪২, ইমাম দারেকুতনী : আস্-সুনান : ২/২৭৮ পৃঃ, ইমাম তকিউদ্দনি সুবকী : সিফাউস সিকাম : ১৩ পৃঃ,  ইমাম যাহাবী : মিযানুল ই‘তিদাল : ৪/৯৬ : রাবী নং : ৮৯৬৪, দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী : লিসানুল মিযান : ৮/৫০ পৃঃ ক্রমিক নং.৭৭০৫, জীবনী: মুসলিম বিন সালেম,  ও তার অপর গ্রন্থ তালখিসুল হুবাইর, ২/৫৬৯ পৃঃ, ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতি, আদ্দুররুল মুনতাসিরাহ : ১/২৩৭ পৃঃ, ইমাম সাখাভী : মাকাসিদুল হাসানা : ৪১৯ পৃঃ হা/১১২৫, আজলূনী : কাশফুল খাফা : ১/৪২৬ পৃঃ হা/২৪৮৭, ইবনে নাজ্জার,  আখবারে মদিনা, ১/১৫৫ পৃঃ নুরুদ্দীন সানাদী, হাশীয়ায়ে সানাদী আ‘লা সুনানি ইবনে মাজাহ, ২/২৬৮ পৃঃ ইবনুল মুলাক্কিন, বদরুল মুনীর, ৬/২৯৮পৃঃ খিলঈ, আল-সাবেঈ মিনাল খিলাআ‘ত, ৫২পৃঃ হাদিস, ৫২, ফাওয়াইদুল হাসান সিহাহ ওয়াল গারায়েব, ১/৬৯পৃঃ হাদিস:৬৮, ও আল-ফাওয়াইদুল মুনতাক্বাত, ১/২২২ পৃ. হাদিস:২৮৩।


মুহাদ্দিসদের অভিমত:


এই হাদিস সম্পর্কে হাফিজ ইরাকী (رحمة الله) এর অভিমত,


قال العراقي: رواه الطبراني من حديث ابن عمر وصححه ابن السكن .. وكذا صححه عبد الحق في سكوته عنه والسبكي في رد مسألة الزيارة لابن تيمية


-“হাফিজ ইরাকী (رحمة الله) বলেন, ইমাম তাবারানী (رحمة الله) ইবনে উমর (رضي الله عنه) এর হাদিসটি বর্ণনা করেছেন এবং ইমাম ইবনে সুকান (رحمة الله) ইহাকে ছহীহ্ বলেছেন। অনুরূপভাবে ইমাম আব্দুল হাক্ব (رحمة الله) ইহার থেকে চুপ থেকে সহীহ্ বলেছেন। ইমাম তাজউদ্দিন সুবকী (رحمة الله) ইবনে তাইমিয়ার যিয়ারতের রদের মাসয়ালায় হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন।” (হাফিজ ইরাকী: তাখরিজু আহাদিছিল এহইয়া, ১ম খণ্ড, ৩০৬ পৃ: ৪ নং হাদিস; তাখরিজু আহাদিসি এহ্ইয়ায়ে উলুমুদ্দিন, ৭৭২ নং হাদিসের ব্যাখ্যায়)


তাই উক্ত হাদিস সম্পর্কে ইমাম সুয়ূতি (رحمة الله) বলেন,  وصححه ابن السكن--‘‘ইমাম ইবনে সাকান (رحمة الله) উক্ত হাদিসকে সহীহ বলেছেন।’’ (ইমাম সুয়ূতি, আদ্দুররুল মুনতাসিরাহ, ১/২৩৭ পৃ.)


এ সূত্র সম্পর্কে ইমাম কাস্তালানী (رحمة الله) ও ইমাম যুরকানী (رحمة الله) বলেন- صححه ابن السكن অর্থাৎ- ইমাম ইবনুস্-সাকান (رحمة الله) নিম্নোক্ত সনদকে সহীহ বলেছেন।২০


আল্লামা নুরুদ্দীন সানাদী (رحمة الله) লিখেন-


رَوَاهُ الْجَمَاعَةُ مِنْهُمُ الْحَافِظُ أَبُو عَلِيِّ بْنُ السَّكَنِ فِي كِتَابِهِ الْمُسَمَّى بِالسُّنَنِ الصِّحَاحِ، فَهَذَانِ إِمَامَانِ صَحَّحَا هَذَيْنِ الْحَدِيثَيْنِ 


-‘‘এ হাদিসটি এক জামাত ইমামগণ বর্ণনা করেছেন, এর মধ্যে ইমাম আলী ইবনে সাকান (رحمة الله) তাঁর ‘সুনানিস সিহাহ’ ইমামগণ এ হাদিসদ্বয়কে সহীহ বলেছেন।’’ (হাশিয়ায়ে সানাদী, ২/২৬৮ পৃ.)


দ্বিতীয় সূত্র:


হাদিসটি ‘মুসলিম ইবনে ছালিম জুহানী’ থেকে ভিন্ন আরেকটি সূত্রে সামান্য শাব্দিক ব্যবধানে ইমাম আবু নুয়াইম ইস্পাহানী (رحمة الله) এভাবে বর্ণনা করেছেন,


حَدَّثَنَا أَبُو مُحَمَّدِ بْنُ حَيَّانَ، ثنا مُحَمَّدُ بْنُ أَحْمَدَ بْنِ سُلَيْمَانَ الْهَرَوِيُّ، ثنا مُسْلِمُ بْنُ حَاتِمٍ الأَنْصَارِيُّ، ثنا مُسْلِمُ بْنُ سَالِمٍ الْجُهَنِيُّ، حَدَّثَنِي عَبْدُ اللَّهِ يَعْنِي: الْعُمَرِيَّ حَدَّثَنِي نَافِعٌ، عَنْ سَالِمٍ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ جَاءَنِي زَائِرًا لَمْ تَنْزِعْهُ حَاجَةٌ إِلا زِيَارَتِي، كَانَ حَقًّا عَلَى اللَّهِ أَنْ أَكُونَ لَهُ شَفِيعًا يَوْمَ الْقِيَامَةِ


-“হযরত ইবনে উমর (رضي الله عنه) বলেন রাসূলে পাক (ﷺ) বলেছেন: যে ব্যক্তি আমার কাছে শুধু যিয়ারতের উদ্দেশ্যে আসবে অন্য কোন উদ্দেশ্যে নয়, তাহলে কেয়ামতের দিন তার জন্য শাফায়াত কারী হওয়া আমার জন্য আবশ্যক হয়ে যাবে।” (ইমাম আবু নুয়াইম: তারিখে ইস্পাহান, ২য় খণ্ড, ১৯০ পৃ:)


দুইটি সুত্র মিল হাদিসটি আরো শক্তিশালী হবে। ফলে হাদিসটি সহীহ্ হওয়াতে কোন বাধা থাকবে না।


একটি আপত্তি ও নিষ্পত্তি:


আমাদের কতিপয় আহলে হাদিস ভাইদের দাবী যে, এ সনদ প্রসঙ্গে ইমাম হাইসামী (رحمة الله) বলেছেন,  


رَوَاهُ الطَّبَرَانِيُّ فِي الْأَوْسَطِ، وَالْكَبِيرِ وَفِيهِ مَسْلَمَةُ بْنُ سَالِمٍ، وَهُوَ ضَعِيفٌ. 


-‘‘উক্ত হাদিসটি ইমাম তাবরানী (رحمة الله) তার মু‘জামুল আওসাত ও কাবীরে বর্ণনা করেছেন। উক্ত সনদে ‘মাসলামা বিন সালিম’ তিনি দ্বঈফ বা দুর্বল।’’  ২১

➥২১. আল্লামা ইবনে হাজার হাইসামী,  ৪/২ পৃঃ হাদিস, ৫৮৪২


আমি বলবো ভাই আপনি যে ইমাম হাইসামী (رحمة الله)-এর তথ্য দিয়েছেন আমিও উনার আরেকটি তথ্য আপনাদের সামনে তুলে ধরছি একই কিতাব থেকে। ইমাম হাইসামী (رحمة الله) উক্ত রাবী সম্পর্কে আরেক স্থানে লিখেন-


 رَوَاهُ الطَّبَرَانِيُّ فِي الْأَوْسَطِ، وَفِيهِ مُسْلِمُ بْنُ سَالِمٍ، وَيُقَالُ: مَسْلَمَةُ بْنُ سَالِمٍ، ضَعَّفَهُ أَبُو دَاوُدَ، وَذَكَرَهُ ابْنُ حِبَّانَ فِي الثِّقَاتِ 


-‘‘ইমাম তাবরানী (رحمة الله) হাদিসটি বর্ণনা করেছেন, আর উক্ত সনদে ‘মাসলামা বিন সালেম’ রাবি রয়েছেন ইমাম আবু দাউদ (رحمة الله) তাকে কিছুটা দুর্বল বলেছেন, কিন্তু ইমাম ইবনে হিব্বান (رحمة الله) তাকে সিকাহ রাবীর তালিকায় অর্ন্তভুক্ত করেছেন।’’  ২২

➥২২. আল্লামা ইবনে হাজার হাইসামী,  ১/১৯৫ পৃঃহাদিস, ৯৪৪


২. ইমাম যাহাবী (رحمة الله) উল্লেখ করেছেন- فوثقه ابن معين. -‘‘ইমাম ইয়াহইয়া ইবনে মাঈন (رحمة الله) তাকে সিকাহ বা বিশ্বস্ত বলেছেন।’’ ২৩

➥২৩. যাহাবী :মিযানুল ই‘তিদাল : ৪/১০৪ পৃষ্ঠা,  ক্রমিক নং.৮৪৮৯


৩. ইমাম যাহাবী (رحمة الله) তার আরেক গ্রন্থেও এমনটি উল্লেখ করেছেন। (ইমাম যাহাবী: তারিখুল ইসলাম, রাবী নং ২৭৩)


৪-৬. ইমাম আবু হাতিম (رحمة الله) ও ইয়াকুব ইবনে সুফিয়ান (رحمة الله) বলেছেন, তার ব্যাপারে অসুবিধা নেই। ইমাম ইবনে শাহিন (رحمة الله) তাকে বিশ্বস্ত বলেছেন। (ইমাম মুগলতাঈ: ইকমালু তাহজিবুল কামাল, রাবী নং ৪৫৩৮) 


তাই তাকে সরাসরি দ্বঈফ বলা যাবে না। তার হাদিসের মান ‘হাসান’ পর্যায়ের।


হাদিস নং-৫: যে সাওয়াবের আশায় আমার রওজা যিয়ারত করবে আমি তার সাক্ষী ও সুপারিশকারী হবো:


ইমাম বায়হাকী (رحمة الله)সহ আরও অনেকে সংকলন করেন-


أَخْبَرَنَا أَبُو سَعِيدِ بْنُ أَبِي عَمْرٍو، حَدَّثَنَا أَبُو عَبْدِ اللهِ الصَّفَّارُ، حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي الدُّنْيَا، حَدَّثَنِي سَعِيدُ بْنُ عُثْمَانَ الْجُرْجَانِيُّ، حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ إِسْمَاعِيلَ بْنِ أَبِي فُدَيْكٍ، أَخْبَرَنِي أَبُو الْمُثَنَّى سُلَيْمَانُ بْنُ يَزِيدَ الْكَعْبِيُّ، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: مَنْ زَارَنِي بِالْمَدِينَةِ مُحْتَسِبًا كُنْتُ لَهُ شَهِيدًا وَشَفِيعًا يَوْمَ الْقِيَامَةِ


-‘‘হযরত আনাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নিশ্চয় রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি একাগ্রচিত্তে মদীনা মুনাওয়ারা হাজির হয়ে আমার যিয়ারত করবে কিয়ামত দিবসে আমি তার সাক্ষী এবং শাফায়াত কারী হব।’’  ২৪

➥২৪. ইমাম বায়হাকী : শুয়াবুল ঈমান : ৬/৫০পৃঃহা/৩৮৭০,  ইমাম সুবকী : শিফাউস সিকাম-ফি যিয়ারাতিল খায়রিল আনাম :১৫পৃঃ,  ইমাম যাহাবী : মিযানুল ইতিদাল : ৩/৩২১পৃঃরাবি, ৩৫২৪, ইবনে হাজার আসকালানী : তালখিসুল হাবীর : ২/২৬৭ পৃঃ,  ইমাম জুরজানী : তারীখে জুরজান :১/২২০ পৃঃ, কাজী শাওকানী : নায়লুল আউতার : ৫/১৭৯ পৃঃ, ইমাম সূয়তী : জামেউস সগীর : ২/৬০৫ পৃঃ হা/৮৭১৬,  জালালুদ্দীন সূয়তী : জামিউল আহাদিস, ২০/৩৪৯ পৃঃ হাদিস, ২২৩০৬, শায়খ ইউসূফ নাবহানী : জাওয়াহিরুল বিহার : ২/২০৬ পৃঃ, মোল্লা আলী ক্বারী : শরহে শিফা : ২/১৫০ পৃঃ,  ইমাম কাজী আয়াজ : শিফা শরীফ : ২/১০২ পৃঃ, মুত্তাকী হিন্দী : কানযুল উম্মাল : ১৫/৬৫১ পৃঃ হা/৪২৫৮৪, জুরজানী, তারীখে জুরজান, ১/৪৩৩পৃ, ইবনে হাজার আসকালানী, তালখিসুল হুবাইর,  ২/২৬৭পৃঃও ৫৭০ পৃঃ ক্রমিক নং.১০৭৫, ইমাম ইরাকী, তাখরীজে ইহইয়াউল উলূম, ২/৬৬৬পৃঃ শায়খ ইউসুফ নাবহানী, ফতহুল কাবীর, ৩/১৮৬ পৃঃ হাদিস:১১৮২৩, যিয়া মুকাদ্দাসী, আল মুনতাকী মিনাল মুসমুআত, ১/২৭৭ পৃঃহাদিস,  ৫১৫, আলবানী, সিলসিলাতুল আহাদিসুদ্ দ্বঈফাহ, ১০/১১২ পৃঃ হাদিস:৪৫৯৮, তিনি বলেন হাদিসটির সনদ দ্বঈফ।


সনদ পর্যালোচনা:


ইমাম সুয়ূতি (رحمة الله) বলেন, এই হাদিসটি হাসান।  ২৫

➥২৫. ইমাম সূয়তী : জামেউস সগীর ২/৬০৫ : হা/৮৭১৬, ইমাম সুয়ূতি : জামিউল আহা/৪/৩৬ পৃ 


আল্লামা মানাভী (رحمة الله) তার সমাধান মেনে নিয়ে লিখেন-


رمز الْمُؤلف لحسنه ونوزع


-‘‘গ্রন্থকার (ইমাম সুয়ূতি ) এ সনদকে ‘হাসান’ বলে সনাক্ত করেছেন।’’ (মানাভী, তাইসীর, ২/৪২০ পৃ.) 

তিনি এ অভিমত ব্যাখ্যা করে কোনো সমালোচনা করেননি। আল্লামা সান‘আনী (رحمة الله) ইমাম সুয়ূতির মতামত উল্লেখ করেন এভাবে- رمز المصنف لحسنه -‘‘ গ্রন্থকার (ইমাম সুয়ূতি ) এ সনদকে ‘হাসান’ বলে সনাক্ত করেছেন।’’ (সান‘আনী, তানভীর শারহে জামেউস সগীর, ১০/২৪২ পৃ. হা/৮৬৯৭)


আপত্তি ও নিষ্পত্তি:


“হাদীসের নামে জালিয়াতি” গ্রন্থের ৫৮৩ পৃষ্ঠায় উক্ত সহীহ হাদিসকে ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর উক্ত হাদিসের এক বর্ণনাকারী ‘আবুল মুসান্না সুলাইমান ইবনু ইয়াযিদ’ নামক রাবীকে দ্বঈফ প্রমাণ করার অপচেষ্টা চালিয়েছেন। অথচ পৃথিবী বিখ্যাত তিনজন আসমাউর রিজালবিদ, ইমাম যাহাবী (رحمة الله), ইমাম মিয্যী (رحمة الله) এবং ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) তার জীবনীতে উল্লেখ করেন-


وَذَكَرَهُ ابْنُ حِبَّانَ فِي تَارِيخِ الثِّقَاتِ


-‘‘ইমাম ইবনে হিব্বান (رحمة الله) তাকে সিকাহ রাবীর জীবনী গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন।’’ (ইমাম যাহাবী, তারিখুল ইসলাম, ৪/৫৬৩ পৃ. ক্রমিক.৪৭২, মিয্যী, তাহযিবুল কামাল, ৩৪/২৫৩ পৃ. ক্রমিক.) 

এমনকি আহলে হাদিসদের ইমাম শাওকানী রাবী ‘সুলাইমান ইবনে ইয়াযিদ’ সম্পর্কে উল্লেখ করেছেন-


وَذَكَرَهُ ابْنُ حِبَّانَ فِي الثِّقَاتِ


-‘‘ইমাম ইবনে হিব্বান (رحمة الله) তাকে সিকাহ রাবীর তালিকায় স্থান দিয়েছেন।’’ (শাওকানী, নায়লুল আউতার, ৫/১১৪ পৃ.)


উক্ত রাবীর বিষয়ে ইমামদের অভিমত খুব কম পাওয়া যায়, তাকে কয়েকজন মুহাদ্দিস দ্বঈফ বলেছেন, আবার কতিপয় মুহাদ্দিস সিকাহ বা বিশ্বস্ত বলেছেন। 


ইমাম মিয্যী (رحمة الله)  বলেন, 


روى له التِّرْمِذِيّ، وابْن مَاجَهْ


-‘‘তার হাদিস সুনানে তিরমিযি এবং ইবনে মাযাহ শরীফে বর্ণিত হয়েছে।’’ ২৬

➥২৬. ইমাম মিয্যী, তাহযীবুল কামাল, ৩৪/২৫৩ পৃঃ ক্রমিক নং.৭৬০২


(উক্ত রাবীর বর্ণিত হাদিস দেখুন-সুনানে তিরমিযি, হা/১৪৯৩, সুনানে ইবনে মাজাহ, ৩১২৬, তিনি বলেন, হাদিসটি হাসান, গরীব।) 


ইমাম তিরমিযি (رحمة الله)-এর মত মহান ইমাম তার হাদিস ‘হাসান’ বলেছেন, তাই ইমাম সুয়ূতি (رحمة الله) তার মতকে গ্রহণ করেছেন।


হাদিস নং-৬: যে আমার ওফাতের পর হজ্জ করতে এসে আমার রওজা যিয়ারত করলো...:


ইমাম তাবরানী (رحمة الله)সহ এক জামাত ইমামগণ সংকলন করেন-


حَدَّثَنِي أَبُو الْقَاسِمِ بْنُ سَعِيدٍ قَالَ: ثنا سَعْدٌ قَالَ: ثنا حَفْصُ بْنُ سُلَيْمَانَ، عَنْ لَيْثٍ، عَنْ مُجَاهِدٍ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ حَجَّ فَزَارَ قَبْرِي بَعْدَ وَفَاتِي كَانَ كَمَنْ زَارَنِي فِي حَيَاتِي


-‘‘হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি হজ্জ করতে এসে আমার ওফাতের পরে আমার রওজা যিয়ারত করলো, সে যেন আমার জীবদ্দশাতেই আমার জিয়ারত বা সাক্ষাত করলো।’’  ২৭

➥২৭. বায়হাকী : সুনানে কোবরা : ৫/২৪৬ পৃঃ,  বায়হাকী : শুয়াবুল ঈমান : ৩/৪৮৯ পৃঃ হা/৪১৫৪,  ইমাম তাবরানী : মু’জামুল কাবীর : ১২/৪০৬ পৃঃ হা/১৩৪৯৭,  তাবরানী : মু’জামুল আওসাত : ১/৯৫ পৃঃ হা/২৮৭, ইমাম দারেকুতনী : আস সুনান : ১/২১৭ পৃঃ হা/২৬৬৭, ইমাম যাহাবী : মিযানুল ই‘তিদাল : ১/৫৫০ পৃঃ রাবী : ২৩৬৯, ইমাম তকি উদ্দিন সুবকী : শিফাউস সিকাম ফি যিয়ারতি খাইরিল আনাম ১৭ পৃ, হায়সামী : মাযমাউদ যাওয়াইদ : ৪/২ পৃঃ, সুয়ুতী : জামেউস সগীর : ২/৫২৪ পৃ: হা/৮৬২৮, ইমাম সূয়তী : জামেউল আহাদিস, ৭/১৯ পৃ: হা/২০৫৫১, কাজী শাওকানী : নায়লুল আওতার : ৫/১১৩পৃঃ, মুত্তাকী হিন্দী, কানযুল উম্মাল : ১৫/৬১৫ পৃঃ হা/৪২৫৮২, ইবনে নাজ্জার, আখবারে মদিনা, হা/১৫৬১, ইস্পাহানী, তারগীব ওয়াতারহীব, ২/২৭ পৃঃ হা/১০৮০, ইবনুল মুলাক্কিন, বদরুল মুনীর, ৬/২৯৩পৃঃ ভূয়া তাহকীককারী আহলে হাদিস আলবানী, দ্বঈফাহ, হা/৪৭ এ তিনি বলেন, হাদিসটির সনদটি জাল।


সনদ পর্যালোচনা:


সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! এ হাদিসটির মান ‘হাসান’, ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর তার গ্রন্থের ৫৮৫ পৃষ্ঠায় এবং আমাদের আরও কতিপয় আহলে হাদিসদের দাবী যে আল্লামা নুরুদ্দীন হাইসামী (رحمة الله) এ সনদ সম্পর্কে বলেছেন,  


رَوَاهُ الطَّبَرَانِيُّ فِي الْكَبِيرِ، وَالْأَوْسَطِ وَفِيهِ حَفْصُ بْنُ أَبِي دَاوُدَ الْقَارِئُ؛ وَثَّقَهُ أَحْمَدُ، وَضَعَّفَهُ جَمَاعَةٌ مِنَ الْأَئِمَّةِ. 


-‘‘উক্ত হাদিসটি ইমাম তাবরানী মু‘জামুল কাবীর ও মু‘জামুল আওসাত গ্রন্থে বর্ণনা করেন। উক্ত হাদিসের সনদে ‘হাফস বিন আবি দাউদ ক্বারী’ রয়েছেন , তাকে ইমাম আহমদ (رحمة الله) সিকাহ বা বিশ্বস্ত বলেছেন, কিন্তু এক জামাত মুহাদ্দিসগণ তাকে দুর্বল বলেছেন।’’  ২৮

➥২৮.ইমাম হায়সামী, মাযমাউয যাওয়েদ, ৪/২পৃঃ


ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর তার গ্রন্থের ৫৮৫ পৃষ্ঠায় উক্ত রাবী সম্পর্কে তিনি লিখেন-‘‘তবে তিনি হাদীস বর্ণনায় অত্যন্ত দুর্বল ছিলেন।’’ তিনি একজন সিকাহ রাবীর বিষয়ে এ ধরনের কথা কিভাবে লিখতে পারলাম তা দেখে আমি অবাক! আমরা এখানে দেখলাম যে, আল্লামা হাইসামী (رحمة الله) উক্ত রাবীকে সিকাহ বলার পক্ষে একক ইমাম আহমদের নাম পেশ করেছেন, কিন্তু সেই একই গ্রন্থে অন্য এক হাদিসের তাহকীকে উক্ত রাবী সম্পর্কে তিনি লিখেন-


رَوَاهُ الطَّبَرَانِيُّ، وَفِيهِ حَفْصُ بْنُ سُلَيْمَانَ الْقَارِئُ، وَثَّقَهُ وَكِيعٌ وَغَيْرُهُ، وَضَعَّفَهُ الْجُمْهُورُ، وَبَقِيَّةُ رِجَالِهِ ثِقَاتٌ


-‘‘উক্ত হাদিসটি ইমাম তাবরানী (رحمة الله) বর্ণনা করেছেন, সনদে রাবী ‘হাফস বিন সুলায়মান ক্বারী’ নামক একজন রাবী রয়েছেন, তাকে ইমাম ওকী এবং অন্যান্য ইমামগণ সিকাহ বা বিশ্বস্ত বলেছেন, আবার অনেক মুহাদ্দিসগণ দুর্বল বলেছেন।’’ ২৯

➥২৯. আল্লামা ইবনে হাজার হায়সামী : মাযমাউদ যাওয়ায়েদ : ১০/১৬৩  পৃ:


এখানে আমরা তাকে সিকাহ বলার পক্ষে ইমাম ওয়াকী ইবনে র্জারাহ (رحمة الله) সহ আরও অন্যান্যকেও পেলাম। আল্লামা হাইসামী (رحمة الله) আরেক স্থানে লিখেন- وَوَثَّقَهُ أَحْمَدُ وَابْنُ حِبَّانَ -‘‘তাকে ইমাম আহমদ (رحمة الله) এবং ইবনে হিব্বান (رحمة الله) সিকাহ বা বিশ্বস্ত বলেছেন।’’ (হাইসামী, মাযমাউয-যাওয়াইদ, ১/৩২৮ পৃ. হা/১৮৫০) 


এখানে আমরা তাকে সিকাহ বলার পক্ষে ইমাম ইবনে হিব্বান (رحمة الله) কেও পেলাম। আসমাউর রিজালের কিতাবসমূহে উক্ত রাবীর জীবনী অনুসন্ধান করলে দেখা যায় যে মাত্র ২-৩ জন মুহাদ্দিস তাকে হাদিসে দুর্বল বলেছেন, আর তাদের বক্তব্য হলো, তিনি পৃথিবীর সাতজন শ্রেষ্ঠ ক্বারীর অন্যতম, তবে তিনি কেরাতের প্রতি বেশী মনোযোগ থাকায় হাদিসের প্রতি বেশী যতœবান বা পরিশ্রমী হননি; এজন্য তিনি তাদের নিকট দুর্বলতাপূর্ণ বর্ণনাকারীদের অর্ন্তভুক্ত হন। 


ইমাম যাহাবী (رحمة الله) তার জীবনীতে উল্লেখ করেন, قال وكيع: كان ثقة. -“ইমাম ওয়াকী (رحمة الله) বলেন, সে ছিল বিশ্বস্ত বর্ণনাকারীর একজন।’’ (ইমাম যাহাবী: মিযানুল ই‘তিদাল, রাবী: ২১২১) 


ইমাম যাহাবী ও মিয্যী (رحمة الله) তার জীবনীতে উল্লেখ করেন,


قَالَ أَحْمَدُ بْنُ حَنْبَلٍ: مَا بِهِ بَأْسٌ.


-“ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (رحمة الله) বলেন, তার হাদিস গ্রহণের ব্যাপারে কোনো অসুবিধা নেই।” 

(ইমাম যাহাবী: তারিখুল ইসলাম, রাবী নং ৫৭; ইমাম যাহাবী: মিযানুল ই‘তিদাল, রাবী: ২১২১; ইমাম মিযযী: তাহজিবুল কামাল, রাবী নং ১৩৯০) 


ইমাম মিয্যী (رحمة الله) তার জীবনীতে উল্লেখ করেন-


عن عَبد اللَّهِ بن أحمد بْن حنبل، عَن أبيه: صالح.


-‘‘মুহাদ্দিস আব্দুল্লাহ ইবনে আহমদ ইবনে হাম্বল (رحمة الله) তার সম্মানিত পিতা হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, সে হাদিস বর্ণনায় একজন সৎ ব্যক্তি।’’ (ইমাম মিযযী: তাহজিবুল কামাল, রাবী: ১৩৯০) 


ইমাম মিয্যী (رحمة الله) তার জীবনীতে উল্লেখ করেন-


قال وكيع: كان ثقة. روى له: التِّرْمِذِيّ، والنَّسَائي في مسند علي متابعة، وابْن مَاجَهْ.


-“আবু আমর আদ দানী বলেন, ওয়াক্বী বলেছেন: সে বিশ্বস্ত রাবী। ইমাম নাসাঈ তার থেকে ‘মুসনাদে আলী’ এর মধ্যে হাদিস বর্ণনা করেছেন ও ইবনে মাজাহ তার থেকে হাদিস বর্ণনা করেছেন।” (ইমাম মিযযী: তাহজিবুল কামাল, রাবী নং ১৩৯০) 

সবমিলিয়ে তার হাদিসকে সহীহ না বলা গেলেও ‘হাসান’ বলতে কোনো অসুবিধা নেই। 


আরেকটি আপত্তি ও নিষ্পত্তি:


এই হাদিসে উপরের আলোচিত রাবীর উস্তাদ রাবী لَيْثُ بنُ أَبِي سُلَيْمٍ (লাইস ইবনে আবী সুলাইম) রয়েছেন। আহলে হাদিস আলবানীর দাবী যে ইমামগণ তার সমালোচনা করেছেন। আমরা এখন তার গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে আলোচনা করবো। 


ইমাম সামসুদ্দীন যাহাবী (رحمة الله) বলেন-


لَيْثُ بنُ أَبِي سُلَيْمٍ الكوفي: حسن الحديث


-“লাইছ ইবনে আবী সুলাইমান কুফী হাসানুল হাদিস।” (ইমাম যাহাবী: দিওয়ানুদ দোয়াফা, রাবী নং ৩৫০৩)


وَقَالَ ابْن معِين أَيْضا لَا بَأْس بِهِ


-“অনুরূপভাবে ইমাম ইবনে মাঈন (رحمة الله) বলেছেন: তার ব্যাপারে অসুবিধা নেই।” 

(ইমাম যাহাবী: আল মুগনী ফিদ দ্বুয়াফা, রাবী নং ৫১২৬)


وَقَالَ أَبُو دَاوُدَ: سَأَلْتُ يَحْيَى عَنْ لَيْثٍ، فَقَالَ: لَيْسَ بِهِ بَأْسٌ. 


-“ইমাম আবু দাউদ (رحمة الله) বলেন, আমি ইয়াহইয়া (رحمة الله) কে লাইস সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, তার হাদিস গ্রহণ করতে কোনো অসুবিধা নেই।” 

(ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী: তাহজিবুত তাহজিব, রাবী নং ৮৩৫; ইমাম যাহাবী: সিয়ারু আ’লামীন নুবালা, রাবী নং ৮৪)


وقال بن عدي له أحاديث صالحة


-“ইমাম ইবনে আদী (رحمة الله) বলেন, তার হাদিস গুলো গ্রহণযোগ্য।” (ইমাম আসকালানী: তাহজিবুত তাহজিব, রাবী নং ৮৩৫; ইমাম যাহাবী: তারিখুল ইসলাম, রাবী নং ৫০১৭) 


وَقَالَ البَرْقَانِيُّ: سَأَلْتُ الدَّارَقُطْنِيَّ عَنْهُ، فَقَالَ: صَاحِبُ سُنَّةٍ، يُخَرَّجُ حَدِيْثُه.


-“বারকানী বলেন, আমি ইমাম দারাকুতনী (رحمة الله) কে লাইছ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন: সে সুন্নাহর অনুসারী ও তার হাদিস বর্ণনা করি।” 

(ইমাম আসকালানী: তাহজিবুত তাহজিব, রাবী নং ৮৩৫; ইমাম যাহাবী: তারিখুল ইসলাম, রাবী নং ৫০১৭; ইমাম যাহাবী: সিয়ারে আ’লামী নুবালা, ৬/১৮১, রাবী নং ৮৪)


وَقَدِ اسْتَشْهَدَ بِهِ البُخَارِيُّ فِي الصحيح، وروى له في كتا رفع اليدين فِي الصلاة، وغيره.


-“ইমাম বুখারী তার ‘আস-সহীহ’ গ্রন্থে তার ব্যাপারে সাক্ষ্য প্রদান করেছেন এবং ‘রাফ‘উল ইয়াদাইন ফিস সালাত’ ও অন্যান্য গ্রন্থে লাইস থেকে রেওয়ায়েত করেছেন।” 

(ইমাম যাহাবী: তারিখুল ইসলাম, রাবী নং ৫০১৭; ইমাম যাহাবী: সিয়ারু আ’লামীন নুবালা, ৬/১৮১ পৃ., রাবী নং ৮৪) 


ইমাম ইবনে হাজার (رحمة الله) আরও উল্লেখ করেন-


قال الساجي وكان أبو داود لا يدخل حديثه في كتاب السنن الذي ضعفه كذا قال وحديثه ثابت في السنن لكنه قليل 


-“ইমাম ছাজী (رحمة الله)  বলেন, ইমাম আবু দাউদ (رحمة الله) লাইস এর দুর্বল হাদিস গুলো তার সুনান গ্রন্থে উল্লেখ করেননি। যেমনটি তিনি বলেছেন এবং তার হাদিস গুলো সহীহ্ প্রমাণিত যেগুলো সুনান গ্রন্থে রয়েছে কিন্তু এগুলোর সংখ্যা কম।” (ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী: তাহজিবুত তাহজিব, রাবী নং ৮৩৫)


আফসোস! তাদের জন্য যারা সত্য জানার পরও ধোঁকাবাজ আলবানীকে অন্ধভাবে অনুসরণ করেন, আর বলে বেড়ান মাযহাব অনুসরণকারী অন্ধ তাকলীদের অনুসারী, বিচার মহান রবের দরবারেই রইল। আলবানী এ হাদিসটিকে (موضوع) জাল বলে আখ্যায়িত করেছে, উপরের দুই রাবীকে সমালোচিত বানিয়ে এ হাদিসকে জাল বলে আখ্যায়িত করেছে। (আলবানী, সিলসিলাতুল আহাদিসি দ্বঈফাহ, ১/১২০ পৃ. হা/৪৭)


আমরা এবার এ হাদিসটির আরেকটি সূত্র নিয়ে আলোকপাত করবো, ইনশা আল্লাহ।


হাদিস নং-৭: যে হজ্জ করতে এসে আমার রওজা যিয়ারত করলো সে যেন আমার জাহেরী হায়াতেই যিয়ারত করলো:


হাদিসের নামে জালিয়াতি গ্রন্থের ৫৮৬ পৃষ্ঠায় একটি গ্রহণযোগ্য হাদিসকে অগ্রহণযোগ্য বলে উলে­খ করেছেন। হাদিসটি হল : 


ইমাম তাবরানী (رحمة الله)সহ আরও অনেকে সংকলন করেন-


حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ رِشْدِينَ قَالَ: نا عَلِيُّ بْنُ الْحَسَنِ بْنِ هَارُونَ الْأَنْصَارِيُّ قَالَ: حَدَّثَنِي اللَّيْثُ ابْنُ ابْنَةِ اللَّيْثِ بْنِ أَبِي سُلَيْمٍ قَالَ: حَدَّثَتْنِي عَائِشَةُ ابْنَةُ يُونُسَ، امْرَأَةُ لَيْثِ بْنِ أَبِي سُلَيْمٍ، عَنْ مُجَاهِدٍ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: مَنْ زَارَ قَبْرِي بَعْدَ مَوْتِي، كَانَ كَمَنْ زَارَنِي فِي حَيَاتِي


-‘‘হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি আমার ওফাতের পর আমার রওযা শরীফ যিয়ারত করবে, সে যেন আমার জীবিত ন্যায়ই সাক্ষাত করলো।’’ ৩০

➥৩০. ইমাম তাবরানী : মু’জামুল কাবীর : ১২/৪০৬ : হা/১৩৪৯৬, ইমাম তাবরানী : মু’জামুস আওসাত : ১/৯৪ : হা/২৮৯, ইমাম তাবরানী : মু’জামুস সগীর : ১/২০৯ পৃঃ, ইমাম হায়সামী : মাযমাউদ যাওয়ায়েদ : ৪/২ পৃ, আল্লামা তাহের সালাফী : মাশায়েখে বাগদাদিয়্যাহ : ২/৫৪ পৃঃ ইবনে নাজ্জার, আখবারে মদিনা, ১/১৫৫পৃঃ তবে তিনি হযরত আনাস এর সূত্রে বর্ণনা করেছেন, মোবারকপুরী, মিরআ‘ত, ৯/৫৫৬পৃঃ হাদিস:২৭৮২।


সনদ পর্যালোচনা:


এ হাদিসটির মান ‘হাসান’, কেননা উপরের সূত্রটি এটিকে শক্তিশালী করেছে। আহলে হাদিস আলবানী এবং ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীরের দাবী হলো, আল্লামা হাইসামীর একটি বক্তব্য। আল্লামা ইবনে হাজার হাইসামী (رحمة الله) এ হাদিসের সনদ প্রসঙ্গে বলেন, 


رَوَاهُ الطَّبَرَانِيُّ فِي الصَّغِيرِ، وَالْأَوْسَطِ وَفِيهِ عَائِشَةُ بِنْتُ يُونُسَ وَلَمْ أَجِدْ مَنْ تَرْجَمَهَا.


-‘‘হাদিসটি ইমাম তাবরানী (رحمة الله) তার মুজামুস সগীর এবং মু‘জামুল আওসাত গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন। এ সনদে ‘আয়েশা বিনতে ইউনূস’ নামক একজন রাবী রয়েছেন, আমি কোথাও তাঁর জীবনী পাইনি।’’ (হাইসামী, মাযমাউয-যাওয়াইদ, ৪/২ পৃ. হা/৫৮৪৪)


সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! এ সনদে আর কোনো রাবী নিয়ে সমালোচনা নেই, তবে আলবানী রাবী ‘লাইস ইবনে আবি সুলাইম’ কেও অত্যন্ত যঈফ বুঝাতে চেয়েছিলেন, তার গ্রহণযোগ্যতা ইতোপূর্বের হাদিসে আমি উল্লেখ করে এসেছি।


বাস্তবে কী রাবী ‘আয়েশা বিনতে ইউনূস’ কি অপরিচিত?


বাস্তবতা হলো আমরা আসমাউর রিজালের কিতাব গবেষণা করলে দেখতে পাই রাবী ‘আয়িশা’ কোনো মাজহুল দূরের কথা কোনো যঈফ রাবীও নন। বিখ্যাত আসমাউর রিজালবিদ ইমাম সামসুদ্দীন যাহাবী (رحمة الله) লিখেন-


عائشة بنت يونس امرأة ليث بن أبي سليم عن ليث حدثني مجاهد


-‘‘রাবী আয়িশা বিনতে ইউনুস হলেন বিখ্যাত হাফেযুল হাদিস, মুহাদ্দিস লাইস বিন আবি সুলাইম (رحمة الله)-এর স্ত্রী এবং ছাত্রী, তিনি তাঁর স্বামী থেকে তিনি তাবেয়ী ইমাম মুজাহিদ (رحمة الله) হতে হাদিস বর্ণনা করতেন।’’ 

(ইমাম যাহাবী, তাযকিরাতুল হুফ্ফায, ১/৩০১ পৃ. ক্রমিক.৪১৭) 


শায়খ আকরাম বিন মুহাম্মদ তার আসমাউর রিজাল বিষয়ক কিতাবে উল্লেখ করেন-


عائشة بنت يونس بن عبيد، امرأة الليث بن أبي سليم، من السابعة، ذكرها ابن حبان في (الثقات)


-‘‘রাবী আয়িশা বিনতে ইউনুস হলেন বিখ্যাত হাফেযুল হাদিস, মুহাদ্দিস লাইস বিন আবি সুলাইম (رحمة الله)-এর স্ত্রী এবং ছাত্রী, তিনি সপ্তম তবকার রাবী, ইমাম ইবনে হিব্বান (رحمة الله) তাকে সিকাহ রাবীর তালিকায় স্থান দিয়েছেন।’’ (المعجم الصغير لرواة الإمام ابن جرير الطبري , ২/৮৩৭ পৃ. ক্রমিক.৬৬৪৬) 


এবার আমরা দেখবো ইমাম ইবনে হিব্বান (رحمة الله) তার জীবনীতে কি লিখেছেন-


عَائِشَة بنت يُونُس بن عبيد امْرَأَة لَيْث بن أبي سليم تروى عَن زَوجهَا حَدثنِي عبد اللَّهِ بْنُ جَابِرٍ بِطَرْسُوسَ


-‘‘রাবী আয়িশা বিনতে ইউনুস হলেন বিখ্যাত হাফেযুল হাদিস, মুহাদ্দিস লাইস বিন আবি সুলাইম (رحمة الله)-এর স্ত্রী এবং ছাত্রী .......।’’ (ইমাম ইবনে হিব্বান, কিতাবুস সিকাত, ৮/৫২৮ পৃ. ক্রমিক. ১৪৮৪১)


ইমাম ইবনে হিব্বান (رحمة الله)-এর যে হাদিসটি রাবী ‘আয়িশা’ এর জীবনীতে উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন সে হাদিসটি মুহাদ্দিসগণ হযরত আনাস ইবনে মালিক (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেছেন। (বায়হাকী, বা‘আস ওয়ান নুশুর, ১/২১৯ পৃ. হা/৩৫৩) 


আহলে হাদিস আলবানীর অবস্থা দেখুন তিনি উক্ত মহিলা রাবীর বিষয়ে লিখেছেন-


لم أجد من ذكرها


-‘‘কেউ তার জীবনী আলোচনা করেছেন বলে আমি পাইনি।’’ ৩১

➥৩১. আলবানী : সিলসিলাতুল আহাদিসিদ দ্বঈফাহ : ১/১২৩ পৃঃ হা/৪৭


অথচ নিজেই এ গ্রন্থের অন্যস্থানে লিখেছেন-


عائشة بنت يونس امرأة الليث بن أبي سليم، عن ليث بن أبي سليم، عن مجاهد، عن أبي أمامة


-‘‘রাবী আয়িশা বিনতে ইউনুস হলেন বিখ্যাত হাফেযুল হাদিস, মুহাদ্দিস লাইস বিন আবি সুলাইম (رحمة الله)-এর স্ত্রী এবং ছাত্রী, তিনি তাঁর স্বামী থেকে তিনি তাবেয়ী ইমাম মুজাহিদ (رحمة الله) হতে তিনি সাহাবী আবূ উমামা বাহেলী (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করতেন।’’ (আলবানী, সিলসিলাতুল আহাদিসিদ দ্বঈফাহ : ৮/৩৩ পৃ. হা/৩৫৩৯)


পাঠকবৃন্দ! এ ধরনের সত্য গোপনকারীদের কথা যারা অন্ধভাবে অনুসরণ করে তাদের বিষয়ে কি পরামর্শ থাকতে পারে!


তাই কোনো সন্দেহ নেই এ সনদটি গ্রহণযোগ্য এবং ‘হাসান’। অপরদিকে আমরা গবেষণা করে এ বিষয়ক আরেকটি হাদিস দেখতে পাই। ইমাম ইবনে সালেহ শামী (رحمة الله) উল্লেখ করেন-


وعن علي بن أبي طالب رضي الله عنه قال: قال النبي صلى الله عليه وسلم: من زار قبري بعد موتي فكأنما زارني في حياتي، ومن لم يزر قبري فقد جفاني.


-“হযরত আলী (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলে পাক (ﷺ) ইরশাদ করেন, যারা আমার ওফাতের পরে যিয়ারত করবে সে যেন আমার জিবদ্দশায় যিয়ারত করলো। যে আমার যিয়ারত না করবে সে যেন আমার উপর যুলুম করলো।” (ইমাম আবূ সাদ খারকুশী নিশাপুরী: শরফুল মুস্তফা, হাদিস নং ৮৬২, ৩য় খণ্ড, ১৭২ পৃ:; ইবনে সালেহ শামী: সুবুলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, ১২তম খণ্ড, ৩৭৭ পৃ:)।


হাদিস নং-৮: যে আমার ওফাতের পর রওজা যিয়ারত করলো সে যেন আমি নবীর সাথে জাহেরী হায়াতের ন্যায়ই যিয়ারত করলো:


হাদীসের নামে জালিয়াতি গ্রন্থের ৫৮৭ পৃষ্ঠা আলোচনা করে একটি গ্রহণযোগ্য হাদিসকে ইবনে তাইমিয়া এবং নাসিরুদ্দিন আলবানীর বক্তব্যের মাধ্যমে জাল প্রমাণ করার অনেক অপচেষ্টা চালিয়েছে। ইমাম বায়হাকী (رحمة الله)সহ আরও অনেকে সংকলন করেন-


أَخْبَرَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ الْحَارِثِ الْأَصْبَهَانِيُّ الْفَقِيهُ، أَخْبَرَنَا أَبُو الْحَسَنِ عَلِيُّ بْنُ عُمَرَ الْحَافِظُ، حَدَّثَنَا أَبُو عُبَيْدٍ، وَالْقَاضِي أَبُو عَبْدِ اللهِ، وَابْنُ مَخْلَدٍ، قَالُوا: حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ الْوَلِيدِ الْبُسْرِيُّ، حَدَّثَنَا وَكِيعٌ، حَدَّثَنَا خَالِدُ بْنُ أَبِي خَالِدٍ، وَابْنُ عَوْنٍ، عَنِ الشَّعْبِيِّ، وَالْأَسْوَدِ بْنِ مَيْمُونٍ، عَنْ هَارُونَ أَبِي قَزَعَةَ، عَنْ رَجُلٍ مِنْ آلِ حَاطِبٍ، عَنْ حَاطِبٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ زَارَنِي بَعْدَ مَوْتِي فَكَأَنَّمَا زَارَنِي فِي حَيَاتِي


-‘‘হযরত হাতেব (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন,  যে ব্যক্তি আমার ওফাতের পর আমার রওযা যিয়ারত করল সে যেন আমার জীবিত অবস্থাতেই আমার জিয়ারত করলো।’’ ৩২

➥৩২. বায়হাকী, শুয়াবুল ঈমান, ৩/৪৮৮পৃঃ হাদিস,  ৪১৫১, বায়হাকী : সুনানে কোবরা : ৫/২৪৫, দারেকুতনী : সুনান : ২/২৭৮ পৃঃ হা/১৯৩, ইবনে হাজার আসকালানী :  লিসানুল মিযান : ৬/১৮০ পৃঃ তিনি হযরত ইবনে উমর হতে, যাহাবী : মিযানুল ইতিদাল : ৪/২৬২ পৃঃ রাবী : ৯৬৬৫, তাবরানী : মু'জামুল কাবীর : ১২/৩১০ পৃ: হা/১৩৪৯৭, সাখাভী : মাকাসিদুল হাসানা : ৪৭৩ পৃঃ হা/১১২৩,  আজলূনী : কাশফুল খাফা : ২/২২৪ পৃঃ হা/২৪৮৭, কাজী শাওকানী : নায়লুল আওতার : ৫/১৭৯ পৃঃ, ইবনে হাজার আসকালানী : তালখিসুল হুবাইর : ২/২৬৭ পৃঃ ইবনে আসাকীর, ইত্তিহাফুল জায়েরা, ১/২৫ পৃঃইবনে হাজার আসকালানী, ইত্তিহাফুল মুহরাত, ৪/১৯৬পৃঃ হা/৪১২৫, সুয়ূতি, জামিউল আহাদিস: ২০/৩৪৯ পৃঃ হা/২২৩০৭ 


সনদ পর্যালোচনা:


হাদিসটির দুটি সনদ রয়েছে, একটি সনদ হযরত হাতেব (رضي الله عنه) হতে অপরটি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (رضي الله عنه) হতে। দুটি সূত্রেই একজন করে মাজহুল রাবী রয়েছেন। এজন্য আহলে হাদিস শাওকানী এ সনদ প্রসঙ্গে লিখেছেন-


وَفِي إسْنَادِهِ الرَّجُلُ الْمَجْهُولُ


-‘‘এ সনদে একজন রাবী রয়েছেন যিনি অজ্ঞাত।’’ (শাওকানী, নায়লুল আউতার, ৫/১১৩ পৃ.) 


হাদিসটিকে গ্রহণযোগ্য কোন মুহাদ্দিস জাল বা বানোয়াট বলেননি। আহলে হাদিসদের ইমাম ইবনে তাইমিয়া ও নাসিরুদ্দিন আলবানীই শুধু জাল বলার অপচেষ্টা চালিয়েছেন। “হারুন আবু কুযা‘আহ” সম্পর্কে আল্লামা শায়খ ওয়াদায়ী লিখেন-


وقال ابن حبان في  الثقات : هارون أبو قزعة يروي عن رجل من آل حاطب المراسيل


-‘‘ইমাম ইবনে হিব্বান (رحمة الله) তার কিতাবুস সিকাত গ্রন্থে বলেন, রাবী হারুন উপনাম আবূ কুযা‘আহ হাতেব (رضي الله عنه)-এর বংশের লোকের মাধ্যমে মুরসাল রূপে হাদিস বর্ণনা করতেন।’’ (শায়খ ওয়াদায়ী, তারাজামু রিজালিল দারাকুতনী ফি সুনানিহী, ১/৪৬৬ পৃ. ক্রমিক. ১২০৪) 


এ আলোচনা থেকে বুঝা যায় যে, এ রেওয়ায়েতটি মুরসাল, আর মুরসাল জমহুর ওলামাদের নিকট হুজ্জাত হিসেবে দাঁড় করানো বৈধ, যা আমি এ গ্রন্থের শুরুতে বিস্তারিত আলোকপাত করেছি। অনেকে হয়তো বলতে পারেন সিকাহ রাবীর মুরসাল গ্রহণযোগ্য, যেহেতু রাবী ‘আবূ কুযা‘আহ’ যঈফ রাবী তাই এ মুরসাল যঈফ। আমি বলবো, ইমাম ইবনে হিব্বান (رحمة الله) উক্ত রাবীকে সিকাহ এবং এ মুরসালকে গ্রহণযোগ্য বলেছেন। (ইমাম ইবনে হিব্বান, কিতাবুস সিকাত, ৭/৫৮০ পৃ. ক্রমিক. ১১৫৬৪) 


তাই এ মুরসাল শক্তিশালী হতে আর কোনো বাঁধা থাকলো না। তাই আমার মতে ইমাম সুবকী (رحمة الله) এ হাদিসের বিষয়ে যা বলেছেন তাই সঠিকতর। এ সনদ প্রসঙ্গে ইমাম সুবকী বলেন- بل حسن او صحيحه -‘‘উক্ত হাদিসটি ‘হাসান’ অথবা সহীহ এর মর্যাদা রাখে।’’ ৩৩

➥৩৩. ইমাম জুরকানী : শরহুল মাওয়াহেব : ১২/১৮০ পৃঃ


এ হাদিসটির আরেকটি সূত্র রয়েছে, ইমাম বায়হাকী (رحمة الله) সংকলন করেন-


أَخْبَرَنَا أَبُو عَبْدِ اللهِ الْحَافِظُ، أَخْبَرَنِي عُمَرُ بْنُ عَلِيٍّ الْحَافِظُ، حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ مُحَمَّدٍ الْحَافِظُ، حَدَّثَنِي دَاوُدُ بْنُ يَحْيَى، حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ الْحَسَنِ التِّرْمِذِيُّ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الْمَلِكِ بْنُ إِبْرَاهِيمَ الْجُدِّيُّ، حَدَّثَنَا شُعْبَةُ، عَنْ سَوَّارِ بْنِ مَيْمُونٍ، حَدَّثَنَا هَارُونُ بْنُ قَزَعَةَ، عَنْ رَجُلٍ مِنْ آلِ الْخَطَّابِ: عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: مَنْ زَارَنِي مُتَعَمِّدًا كَانَ فِي جِوَارِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ


-‘‘তাবেয়ী হারুন ইবনে কুযা‘আহ (رحمة الله) তিনি হযরত উমর (رضي الله عنه)-এর বংশের এক লোকের মাধ্যমে রাসূল (ﷺ) হতে বর্ণনা করেন, তিনি ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি ইচ্ছাপূর্বক আমার জিয়ারত করবে, কিয়ামতের দিন সে আমার প্রতিবেশী হবে।’’ (ইমাম বায়হাকী, শুয়াবুল ঈমান, ৬/৪৭ পৃ. হা/৩৮৫৬, ইবনে হাজার, লিসানুল মিযান, ৮/৩০৯ পৃ. ক্রমিক. ৮২০৬) 


এ সনদটির মান ‘হাসান’ পর্যায়ের। তাবেয়ী ‘আবু কুযা‘আহ’ এটিও মুরসাল রূপে বর্ণনা করেছেন। ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর তার গ্রন্থের ৫৮৭ পৃষ্ঠায় এ সূত্রের সবচেয়ে আপত্তিকর দিক হিসেবে রাবী ‘আবূ কুযা‘আহ’ এর ছাত্র ‘সিওয়্যার ইবনে মায়মুন’ কে দোষী করেছেন, তার দাবী তিনি মাজহুল বা অপরিচিত। আসমাউর রিজাল সম্পর্কে যাদের জ্ঞান আছে তারা জানেন যে ইমাম শু‘বা (رحمة الله) কোনো যঈফ, মাজহুল রাবী থেকে হাদিস বর্ণনা করতেন না, তাহলে তিনি কিভাবে সিওয়্যার থেকে বর্ণনা করলেন!


ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর তার গ্রন্থের ৫৮৭ পৃষ্ঠায় এ সূত্র সম্পর্কে লিখেছেন-‘‘এ সনদটি প্রথম সনদের চেয়েও দুর্বল।’’ পাঠকবর্গ! এবার আমরা তার গবেষণার বাস্তবতা দেখবো। 


বায়হাকীর সনদের ‘সিওয়্যার ইবনে মায়মুন’ নামক রাবী সম্পর্কে লিখেন- سَوَّارُ بْنُ مَيْمُونٍ، وَقِيلَ مَيْمُونُ بْنُ سَوَّارٍ -‘‘সিওয়্যার ইবনে মায়মুন কে মুহাদ্দিসগণের কেউ কেউ তাকে মায়মুন ইবনে সিওয়্যারও বলে থাকেন।’’ (বায়হাকী, শুয়াবুল ঈমান, ৬/৪৬ পৃ. হা/৩৮৫৫) 

বুঝা গেল মুহাদ্দিসগণ তাকে দুই নামেই চিনতেন। 


বিখ্যাত আসমাউর রিজালবিদ, হাদিসের ইমাম, ইমাম ইবনে হিব্বান (رحمة الله) রাবী ‘মায়মুন ইবনে সিওয়্যার’ কে সিকাহ রাবীর তালিকায় স্থান দিয়েছেন। (ইমাম ইবনে হিব্বান, কিতাবুস সিকাত, ৯/১৭৩ পৃ. ক্রমিক.১৫৮৩৮) বুঝা গেল এ রাবী মাজহুল নন বরং সুপরিচিত এবং সিকাহ।






Top