বিষয় নং-১৬: প্রসিদ্ধ মতানুযায়ী ১২ ই রবিউল আউয়াল রাসূল (ﷺ) এর শুভাগমনের দিন:
‘হাদীসের নামে জালিয়াতি’ গ্রন্থের ৫১৮-৫২০ পৃষ্ঠায় ১২টি মত উল্লেখ করে দাবী করা হয়েছে যে, ১২ই রবিউল আউয়াল রাসূল (ﷺ) এর শুভাগমনের তারিখের মত অত্যন্ত দুর্বল। তিনি তার গ্রন্থে রীতিমত দুর্বল বলে প্রমাণ করার অনেক অপচেষ্টা চালিয়েছিলেন, কিন্তু তা নির্ভরযোগ্য কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেননি। অপরদিকে দেওবন্দী আলেম মাওলানা নূরুল ইসলাম ওলীপূরী তার ‘বিভ্রান্তির অবসান’ বইয়ে অনুরূপ ১২ই রবিউল আউয়াল রাসূল (ﷺ)-এর শুভাগমনকে বিনা প্রমাণে দুর্বল বলে উল্লেখ করেছেন। আমি তাদের জবাবে নির্ভরযোগ্য ইমাম, মুহাদ্দিস এবং ঐতিহাসিকগণের মতামত পেশ করার চেষ্টা করবো, ইনশা আল্লাহ।
এ বিষয়ে সাহাবী ও তাবেয়ীদের অভিমত:
(১) ইমাম হাফেয আবু বকর ইবনে আবী শায়বাহ (رحمة الله) (ওফাত ২৩৫ হি.) সহীহ সনদ সহকারে বর্ণনা করেছেন এভাবে-
وَقَالَ أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ حَدَّثَنَا عُثْمَانُ عَنْ سَعِيدِ ابن مِينَا عَنْ جَابِرٍ وَابْنِ عَبَّاسٍ. قَالَا: وُلِدَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ عَامَ الْفِيلِ يَوْمَ الِاثْنَيْنِ الثَّانِيَ عَشَرَ مِنْ رَبِيعٍ الْأَوَّلِ. ـ
-‘‘ইমাম ইবনে আবি শায়বাহ তিনি তাঁর উস্তাদ মুহাদ্দিস উসমান থেকে তিনি মুহাদ্দিস সাঈদ ইবনে মিনা থেকে বর্ণনা করেন, যথাক্রমে হযরত জাবের (رضي الله عنه) ও হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন, তাঁরা বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর বিলাদত শরীফ ঐতিহাসিক হস্তী বাহিনী বর্ষের বছর ১২ ই রবিউল আউয়াল হয়েছিল।’’ ২৩৬
২৩৬.আল্লামা ইবনে কাসীর : বেদায়া ওয়ান নিহায়া : ৩/১০৯ পৃ. এবং সিরাতে নববিয়্যাহ, ১/১৯৯ পৃ., শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দেস দেহলভী : শরহে ফতহুর রব্বানী : ২/১৮৯ পৃ.
✧ উক্ত বর্ণনার সনদ এর মধ্যে প্রথম বর্ণনাকারী হযরত উসমান সম্পর্কে মুহাদ্দিস গণ বলেছেন, উসমান একজন উচ্চ পর্যায়ের নির্ভরযোগ্য ইমাম, প্রবল স্মরণ শক্তি সম্পন্ন ও দৃঢ় প্রত্যয়সম্পন্ন ব্যক্তিত্ব। ২৩৭
২৩৭. খোলাসাতুত তাহযীব, পৃ-২৬৮, (বয়রুত হতে মুদ্রিত) ২য় বর্ণনাকারী সাঈদ ইবনে মীনা। তিনি অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য। (খোলাসাহ : ২/১৪৩ এবং তাকরীবুত তাহযীব : ২/১২৬ পৃ.)
✧ এ হাদিসটির আরেকটি সূত্র ইমাম ইবনে কাসীর বর্ণনা করেছেন সনদবিহীনভাবে এভাবে-
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ وَجَابِرٍ أَنَّهُ وُلِدَ عَلَيْهِ السَّلَامُ، فِي الثَّانِي عَشَرَ مِنْ رَبِيعٍ الْأَوَّلِ يَوْمَ الِاثْنَيْنِ
-‘‘হযরত জাবের (رضي الله عنه) ও হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তাঁরা বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর বিলাদত শরীফ ১২ ই রবিউল আউয়াল হয়েছিল।’’ ২৩৮
২৩৮. আল্লামা ইবনে কাসীর : বেদায়া ওয়ান নিহায়া : ৩/৬ পৃ. দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত।
পর্যালোচনা:
আমরা দুজন মুজতাহিদ তবকার সাহাবীদের অভিমত জানতে পারলাম যে, তাঁরা ১২ই রবিউল আউয়ালে রাসূল (ﷺ)-এর বিলাদাত শরীফের কথা বলেছেন। রাসূল (ﷺ)-এর বিষয়ে সাহাবীদের চেয়ে অধিক জ্ঞাত কেউ নেই। তাঁরা যেখানে মত প্রকাশ করেছেন সেখানে ঐতিহাসিকদের অভিমতের কোন মূল্য নেই। ম
✧ আল্লামা ইবনে কাসির (رحمة الله) এ বর্ণনা উল্লেখ করে কোনো সমালোচনা না করে লিখেন-
وَهَذَا هُوَ الْمَشْهُورُ عِنْدَ الْجُمْهُورِ وَاللَّهُ أَعْلَمُ.
-‘‘জমহুর (অধিকাংশ) ঐতিহাসিকদের কাছে এ মতটিই সুপ্রসিদ্ধ, মহান আল্লাহই এ বিষয়ে সবচেয়ে ভাল জানেন।’’ (আল্লামা ইবনে কাসীর, সিরাতে নববিয়্যাহ, ১/১৯৯ পৃ.)
(২) উক্ত হাদিসের ন্যায় শক্তিশালী সনদে ইমাম হাকিম নিশাপূরী (رحمة الله) বর্ণনা করেন এভাবে-
عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ إِسْحَاقَ، قَالَ: وُلِدَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ لِاثْنَتَيْ عَشْرَةَ لَيْلَةً مَضَتْ مِنْ شَهْرِ رَبِيعٍ الْأَوَّلِ – رواه الحاكم و قال : اسناد صحيح لم يخرجاه و قال الامام الذهبى في التلخيص: على شرط مسلم-
-‘‘বিখ্যাত তাবেয়ী, ঐতিহাসিক, ইমাম মুহাম্মদ বিন ইসহাক (رحمة الله) বলেন, রাসূল (ﷺ) ১২ই রবিউল আউয়াল এর রাতে শুভাগমন করেন। ইমাম হাকিম বলেন, উক্ত হাদিসটি সহীহ। ইমাম যাহাবী তাঁর তালখীছ গ্রন্থে বলেন, ইমাম মুসলিমের শর্ত অনুযায়ী হাদিসটি সহীহ।’’ ২৩৯
২৩৯. ইমাম হাকেম নিশাপুরী : আল-মুস্তাদরাক : ২/৬৫৯ পৃ., কিতাবুল মানাকিব : হা/৪১৮২
✧ ইমাম ইবনে ইসহাক (ওফাত. ১৫১ হি.)-এর কথা সরাসরি তাবেয়ী ছিলেন। ইমাম যাহাবী (رحمة الله) তাঁর জীবনীতে লিখেন-
وَرَأَى: أَنَسَ بنَ مَالِكٍ بِالمَدِيْنَةِ، وَسَعِيْدَ بنَ المُسَيِّبِ.
-‘‘তিনি মদিনা শরীফে হযরত আনাস ইবনে মালিক (رحمة الله) এবং তাবিয়ীকূল সম্রাট হযরত সাঈদ ইবনুল মুসায়্যিব (رحمة الله) কে দেখেছেন।’’ (ইমাম যাহাবী, সিয়ারু আলামিন নুবালা, ৭/৩৪ পৃ. ক্রমিক.১৫)
তাই তিনি এ অভিমত সাহাবী অথবা উচ্চ পর্যায়ের তাবেয়ী থেকে শিখেছেন, কারণ তাঁর সকল উস্তাদ সাহাবী, তাবেয়ী। ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর তার গ্রন্থের ৫২০ পৃষ্ঠায় লিখেছেন-‘সনদসহ প্রথম শতাব্দীর কোনো সাহাবী তাবিয়ী থেকে মতটি বর্ণিত নেই’। বুঝা গেল তিনি একজন সুস্পষ্ট মিথ্যাবাদী ছিলেন।
বিখ্যাত ঐতিহাসিকদের বর্ণনা:
(৩) বিশ্ববিখ্যাত মুহাদ্দিস, ঐতিহাসিক, ইমাম কাস্তালানী (رحمة الله) মাওয়াহেবে লাদুন্নীয়া গ্রন্থের মধ্যে ১২ই রবিউল আউয়ালের উপরে মত প্রকাশ করে তার গ্রহণযোগ্যতা সম্পর্কে বলেন,
والمشهور: أنه ولد يوم الاثنين ثاني عشر ربيع الأول، وهو قول ابن إسحاق وغيره.
-‘‘প্রসিদ্ধ মতানুযায়ী নিশ্চয়ই নবী করীম (ﷺ) ১২ই রবিউল আউয়াল সোমবার দুনিয়ায় শুভাগমন করেছেন এবং এ মত হল প্রসিদ্ধ ঐতিহাসিক ইমামুল মাগাযী, ইমাম ইবনে ইসহাক (ওফাত. ১৫১ হি.)ও অন্যান্যদের।’’ ২৪০
২৪০. ইমাম কাস্তাল্লানী, মাওয়াহিবুল্লাদুনিয়্যাহ, ১/৮৫ পৃ., জুরকানী: শরহুল মাওয়াহেব: ১/২৪৮ পৃ.
ইমাম কাস্তালানী (رحمة الله) আরও উল্লেখ করেন,
وعليه عمل أهل مكة فى زيارتهم موضع مولده فى هذا الوقت
-‘‘১২ রবিউল আউয়াল তারিখেই পবিত্র মক্কা নগরীর অধিবাসীদের মধ্যে রাসূল (ﷺ) এর পবিত্র জন্মস্থান যিয়ারত করার আমল বর্তমান সময়ে পর্যন্ত অব্যাহত রয়েছে।’’ ২৪১
২৪১. ইমাম কাস্তাল্লানী, মাওয়াহিবুল্লাদুনিয়্যাহ, ১/৮৫ পৃ., জুরকানী: শরহুল মাওয়াহেব: ১/২৪৮ পৃ.
(৪) উক্ত গ্রন্থের ব্যাখ্যা গ্রন্থ শরহুল মাওয়াহেবের ১ম খণ্ডের ২৪৮ পৃষ্ঠায় ইমাম যুরকানী (رحمة الله) বলেন,
قال ابن كثير: وهو المشهور عند الجمهور
-‘‘প্রখ্যাত ঐতিহাসিক, মুহাদ্দিস, মুফাসসির, ফকীহ, আল্লামা ইবনে কাসীর (رحمة الله) বলেন, ১২ রবিউল আউয়াল তারিখেই নবী করীম (ﷺ) এর দুনিয়ায় আগমনের তারিখ হিসেবে জমহুর উলামায়ে কিরামের নিকট প্রসিদ্ধ।’’
ইমাম জুরকানী আরও বলেন,
وابن الجزار فنقلا فيه الإجماع وهو الذي عليه العمل
-‘‘উক্ত ১২ই রবিউল আউয়াল তারিখই রাসূল (ﷺ) এর শুভাগমন তারিখ হিসেবে সবাই আমল বা পালন করে আসছে।’’ ২৪২
২৪২. ইমাম জুরকানী : শরহুল মাওয়াহেব, ১/২৪৮ পৃ.
(৫) ইমাম ইবনে ইসহাক (رحمة الله)(৮৫-১৫১ হি:) বলেন-
وُلِدَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ لِاثْنَتَيْ عَشْرَةَ لَيْلَةً مَضَتْ مِنْ شَهْرِ رَبِيعٍ الْأَوَّلِ
-‘‘রাসূল (ﷺ) এর জন্ম তারিখ ১২ই রবিউল আউয়ালের আমুল ফিল (হস্তী বাহিনীর বছর) রাতের শেষ ভাগে হয়েছে।’’ ২৪৩
২৪৩. ইমাম ইবনে জওজী : কিতাবুল ওয়াফা-৮৭ পৃ : দারুল কুতুব ইসলামিয়্যাহ, বয়রুত লেবানন, ইমাম ইবনে হিশাম : সিরাতে নবুবিয়্যাহ, ১/১৫৮ পৃ.
(৬) আল্লামা ইমাম ইবনে হিশাম (ওফাত ২১৩ হি:) বলেন,
وُلِدَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ الِاثْنَيْنِ، لِاثْنَتَيْ عَشْرَةَ لَيْلَةً خَلَتْ مِنْ شَهْرِ رَبِيعٍ الْأَوَّلِ، عَامَ الْفِيلِ
-‘‘রাসূল (ﷺ) রবিউল আউয়ালের ১২ তারিখ আমুল ফিল (হস্তী বাহিনীর বছর) রাতের শেষ ভাগে জন্মগ্রহণ করেন।’’২৪৪
২৪৪. ইমাম ইবনে হিশাম : সিরাতে নবুবিয়্যাহ, ১/১৫৮ পৃ.
(৭) ইমাম ইবনে জারীর আত-তবারী (رحمة الله) বলেন- (২২৪-৩১০ হি: ওফাত) বলেন-
ولد رسول الله ص يَوْمَ الاثْنَيْنِ عَامَ الْفِيلِ لاثْنَتَيْ عَشْرَةَ مَضَتْ مِنْ شَهْرِ رَبِيعٍ الأَوَّلِ
-‘‘হুযূর (ﷺ) রবিউল আউয়ালের ১২ তারিখ হস্তীবাহিনীর বছর রাতের শেষ ভাগে শুভাগমন করেন।’’ ২৪৫
২৪৫. ইবনে জারীর আত-তবারী, তারিখে উমুম ওয়াল মুলুক, ২/১৫৬ পৃ.
(৮) আল্লামা আবুল হাসান বিন মুহাম্মদ মাওয়ারিদী (رحمة الله) (ওফাত. ৪২৯ হি.) বলেন,
لأنه ولد بعد خمسين يوما من الفيل وبعد موت أبيه في يوم الاثنين الثاني عشر من شهر ربيع الأول ـ
-‘‘হস্তী বাহিনীর বছরের ৫০ দিন পর এবং রাসূল (ﷺ)-এর পিতার ওফাতের পর রবিউল আউয়ালের ১২ তারিখে রাসূল (ﷺ) জন্মগ্রহণ করেন।’’ ২৪৬
২৪৬. আল্লামা আবুল হাসান বিন মুহাম্মদ মাওয়ারিদী : আ‘লামুলন নবুওয়াত : ১/২০৭ পৃ.
(৯) ইমাম হাফেয আবুল ফাত্তাহ আন্দলুসী (رحمة الله) (ওফাত ৭৩৪ হি.) বলেন,
وَوُلِدَ سَيِّدُنَا وَنَبِيُّنَا مُحَمَّدٌ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ يَوْمَ الاثْنَيْنِ لاثْنَتَيْ عَشْرَةَ لَيْلَةً مَضَتْ مِنْ شَهْرِ رَبِيعٍ الأَوَّلِ عَامَ الْفِيلِ، قِيلَ: بَعْدَ الْفِيلِ بِخَمْسِينَ يَوْمًا.
-‘‘রাসূল (ﷺ) রবিউল আউয়ালের ১২ তারিখ রাতের শেষ ভাগে আমুল ফিল বছরের ৫০ দিন পর জন্মগ্রহণ করেন।’’২৪৭
২৪৭. আল্লামা আবুল ফাত্তাহ আন্দুলুসী, আইনুল আসার, ১/৩৩ পৃ.
(১০) ইমাম ইবনে খালদুন ইশবিলী (رحمة الله) (ওফাত. ৮০৮ হি.) বলেন-
ولد رسول الله صلى الله عليه وسلم عام الفيل لاثنتي عشرة ليلة خلت من ربيع الأوّل، لأربعين سنة من ملك كسرى أنوشروان
-‘‘রাসূল (ﷺ) আমুল ফিলের বছর ১২ই রবিউল আউয়াল তারিখে রাত্রে শুভাগমন করেন। তখন ছিল বাদশা নওয়াশেরের ক্ষমতা।’’ ২৪৮
২৪৮.
ক. ইবনে খালদুন : তারীখে খালদুন : ২/৪০৭ পৃ :
খ. ইবনে খালদুন : সিরাতে নবুবিয়্যাহ : ৮১ পৃ.
(১১) আল্লামা সাদেক ইবরাহীম আরযুন (رحمة الله) বলেন-
قد صح من طرق كثيرة ان محمدا عليه السلام ولد يوم الاثنين لاثنتى عشرة مضت من شهر ربيع الاول عام الفيل فى زمان كسرى انو شيروان ويقول اصحاب التوفيقات التاريخية ان ذلك يوافق اليوم المكمل للعشرين من شهر اغسطس ٥٧٠م بعد ميلاد المسيح عليه السلام ـ محمد رسول الله:১২০/১
-‘‘বিভিন্ন সনদের মাধ্যমে এই কথাই শুদ্ধভাবে প্রমাণিত হলো যে, হুযূর আকরাম (ﷺ) সোমবার ১২ রবিউল আউয়াল সুবহে সাদিকের সময় হাতি বাহিনীর বছরে বাদশা নওশেরের হুকুমতের সময় শুভাগমন করেন, এটা তারিখ (ইতিহাস) বিষয়ে যারা অভিজ্ঞ তারা ২০ই আগষ্ট ৫৭০ খ্রীষ্টাব্দে ঈসা (আ:) এর জন্মের পর মতামত দিয়েছেন। (আরযুন, মুহাম্মাদুর রাসূল্লাহ, ১/১২০ পৃ.)
(১২) আল্লামা শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী (رحمة الله) তার বিখ্যাত গ্রন্থ “মাদারেজুন নবুয়তে” বর্ণনা করেন-
بداں كہ جمہور اہل سير وتواريخ برآ نند كہ تولد آنحضرت صلى الله عليه وسلم در عام الفيل بود بعد از چہل روز يا پنجاه وپنج روز وايں قول اصح اقوال است مشہور آنست كہ در ربيع الاول بود بعضے علماء دعوى اتفاق بريں قول نموده ودوازد هم ربيع الاول بود ـ
-‘‘জমহুর সিরাত ইতিহাস বিদগণের মতে রাসূল (ﷺ) এর বিলাদাতের সময় হলো আমুল ফিল (হস্তী বর্ষের) ৫৫ দিন পর ছিল। এই কওল হলো সর্বাধিক প্রসিদ্ধ। আর তা ছিল রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখ আর অধিকাংশ আলেম ও ইতিহাসবিদগণ এই মতামতই গ্রহণ করেছেন এবং এই তারিখের উপর একমত হয়েছেন।’’ ২৪৯
২৪৯ .শায়খ আল্লামা আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী : মাদারেজুন নবুওয়াত (ফার্সী) পৃ-২/১৪
(১৩) শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী (رحمة الله) স্বীয় “মা সাবাতা বিস্ সুন্নাহ” (উদূ) গ্রন্থের ৮১ পৃষ্ঠায় বলেন-
بارهويں ربيع الاول تاريخ ولادت رسالت مآب صلى الله عليه وسلم مشہور ہے- اور اہل مكة كا عمل يهى كہ وه اس تاريخ كو مقام ولادت رسالت مآب صلى الله عليه وسلم كى اب تك زيارة كرتے ہيں –
-‘‘নবী করীম (ﷺ) এর শুভাগমনের তারিখ হিসাবে ১২ই রবিউল আউয়াল তারিখই প্রসিদ্ধ। এবং মক্কাবাসীদের আমল হলো, উক্ত তারিখেই তারা নবী করীম (ﷺ) এর জন্মস্থান যিয়ারত করতেন যা বর্তমান সময় [মুহাদ্দিস (رحمة الله) এর সময়কাল] পর্যন্ত প্রচলিত রয়েছে।’’ ২৫০
২৫০ .আল্লামা শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী : মা সাবাতা বিস্ সুন্নাহ : ৮১ পৃ:
(১৪) শায়খ মুহাদ্দিস (رحمة الله) উক্ত কিতাবে আরও উল্লেখ করেন-
طيبى كا بيان ہے تمام مسلمانوں كا اس امر پر اتفاق ہے كہ رسالت مآب صلى الله عليه وسلم ١٢ ربيع الاول كو اس دنيا ميں رونق افروذ ہوئے –
-‘‘আল্লামা ইমাম তিব্বী (رحمة الله) বলেন, সমস্ত মুসলমানগণ এ বিষয়ের উপর একমত যে, রাসূলে করীম (ﷺ) ১২ ই রবিউল আউয়াল এ দুনিয়ায় শুভাগমন করেছেন।’’ ২৫১
২৫১ .আল্লামা শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী : মা-সাবাতা বিস সুন্নাহ : পৃ-৮২
(১৫) মক্কা শরীফের বিখ্যাত মুফতী আল্লামা এনায়েত আহমদ (رحمة الله) তাঁর প্রসিদ্ধ গ্রন্থ তাওয়ারিখে হাবীবে ইলাহ (উর্দু অনুবাদ) গ্রন্থের ১১ পৃষ্ঠায় বলেন-
بارهويں تاريخ ربيع الاول كى اسى سال ميں جس ميں قصة اصحاب فيل واقع ہوا تها ـ بروز دوشنبه بوقت صبح صادق جناب محمد مصطفى صلى الله عليه وسلم پيدا ہو ئے ـ
-‘‘যে বছর আবরাহার হস্তী বাহিনীর ধ্বংস হয়েছিল। ঐ বছর ১২ই রবিউল আউয়াল সোমবার সুবহে সাদিকের সময় নবী করীম (ﷺ) দুনিয়ায় শুভাগমন করেছেন।’’
(১৬) আহলে হাদিস ও ওহাবীদের শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তিত্ব নওয়াব মুহাম্মদ সিদ্দিক হাসান খাঁন ভূপালী বলেন-
ولادت شريف مكة مكرمة ميں وقت طلوع فجر بروز دو شنبه شب دوازدهم ربيع الاول عام الفيل كو ہوتى جمہور علماء كا قول يهى ہے ابن جوزى نے اس پر اتفاق نقل كيا ہے – (الشمامة العنبرير فى مولد خير البرية : صـ ٧)
-‘‘রাসূল (ﷺ) এর বিলাদাত শরীফ মক্কা মুকাররমায় বাদশা আবরাহার হস্তী বাহিনীর বছর ১২ই রবিউল আউয়ালের সুবহে সাদিকের সময় হয়েছে, এটার উপর জমহুর উলামায়ে কেরাম একমত এবং এটার উপর ইমাম ইবনে যওযী (رحمة الله) বর্ণনা করেছেন ও ঐক্যমত পোষণ করেছেন।’’ ২৫২
২৫২ .নওয়াব মুহাম্মদ সিদ্দিক হাসান খান ভূপালী, শামামাতু আনবার ইয়ার ফি মাওলিদে খায়রিল বারিয়্যাহ, পৃ. ৭
তবে সর্বশেষ ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর ১২ তারিখের বিষয়ে তার গ্রন্থের ৫২০ পৃষ্ঠায় কৌশলে লিখেতে বাধ্য হয়েছেন যে, ‘তা সত্ত্বেও পরবর্তী যুগে এ মতটিই প্রসিদ্ধ লাভ করেছে।’’