পঞ্চম পরিচ্ছেদ


(বিরুদ্ধমতাবলম্বীগণের ভাষ্য থেকে ‘ইলমে গায়ব’ এর সমর্থন প্রসঙ্গ)


এতক্ষণ পর্যন্ত ইলম গায়বের সমর্থনকারীদের ভাষ্য সমূহ থেকে হুযুর আলাইহিস সালামের ‘ইলমে গায়ব’ এর বিষয়টি প্রমাণ করা হলো। এবার এর অস্বীকারকারীদের মাননীয় মুরব্বীদের ভাষ্য সমূহ পেশ করা হচ্ছে, যদ্বারা ইলমে গায়ব সম্পর্কিত সমস্যার সুরু সমাধান হয়ে যায়।


❏হাজী ইমদাদুল্লাহ সাহেব (রহমতুল্লাহে আলাইহে) তাঁর রচিত ‘শামায়েলে ইমদাদিয়া’ গ্রন্থের ১১০ পৃষ্ঠায় বলেছেন, লোকে বলে, ‘নবী ওলীগণ অদৃশ্য জ্ঞানের অধিকারী হন না। আমি বলি, সঠিক পথের পথিকগণ যে দিকে দৃষ্টি দেন, অদৃশ্য বিষয়াদি সম্পর্কে অবহিত হন। আসলে এ জ্ঞান আল্লাহ প্রদত্ত জ্ঞান। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) হুদাইবিয়ার ঘটনা ও হযরত আয়েশা (রাদিআল্লাহু আনহা) সম্পর্কিত ঘটনার ব্যাপারে অজ্ঞাত ছিলেন- এ বিষয়টিকে বিরুদ্ধবাদীগণ তাদের দাবীর অনুকূলে মনে করেন। এ রূপ ধারণা ভ্রান্ত। কেননা কোন কিছু জানার জন্য একাগ্রতা প্রয়োজন। 

(‘আনোয়ারে গায়বিয়া’ গ্রন্থের ২৫ পৃষ্ঠা হতে সংগৃহীত।)


❏মৌলভী রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী সাহেব লাতায়েফে রশিদিয়া গ্রন্থের ২৭ পৃষ্ঠায় লিখেছেন- নবীগণ সব সময় অদৃশ্য বিষয়াদি দর্শন করেন, আল্লাহর সান্নিধ্যে রয়ে সবকিছুর প্রতি সজাগ ও সচেতন থাকেন। যেমন হযরত আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত, নবী আলাইহিস সালাম ফরমান-


لَوْ تَعْلَمُونَ مَا أَعْلَمُ لَضَحِكْتُمْ قَلِيلًا، وَلَبَكَيْتُمْ كَثِيرًا


-‘‘আমি যা জানি, তা যদি তোমরা জানতে, নিশ্চয়ই তোমরা কম হাসতে এবং বেশী করে কাঁদতে।’’  

{বুখারী, আস্-সহিহ,২/৩৪পৃ. হাদিসঃ ১০৪৪, কাযি আয়াজ, শিফা শরীফ, ১/২৮৪পৃ. এ হাদিস সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আমার লিখিত ‘‘প্রমাণিত হাদিসকে জাল বানানোর স্বরূপ উন্মাচন’’ এর ১ম খন্ডের ১৫৯-১৬৯পৃষ্ঠা পর্যন্ত দেখুন-শহিদুল্লাহ বাহাদুর।}

  

আরও ইরশাদ করেছেন- 


اِنِّىْ اَرىَ مَالاَتَرَوْنَ 


অর্থাৎ- নিশ্চয়ই আমি যা দেখি, তা তোমরা দেখ না।’’  

{তিরমিযি, আস্-সুনান, ৪/১৩৪পৃ. হাদিস, ২৩১২, এ হাদিস সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আমার লিখিত ‘‘প্রমাণিত হাদিসকে জাল বানানোর স্বরূপ উন্মাচন’’ এর ১ম খন্ডের ১৫৯-১৬৯পৃষ্ঠা পর্যন্ত দেখুন-শহিদুল্লাহ বাহাদুর।}

(আনোয়ারে গায়বিয়া’ ৩২ পৃষ্ঠা)


❏মৌলভী আশরাফ আলী থানবী সাহেব ‘তকমীলুল ইয়াকীন’ গ্রন্থের (হিন্দুস্থান প্রিন্টিং প্রেস থেকে মুদ্রিত) ১৩৫ পৃষ্ঠায় বলেন- শরীয়তে বর্ণিত আছে যে, রাসূল ও ওলীগণ অদৃশ্য বিষয় ও ভবিষ্যতের ঘটনাবলীর খবর দিয়ে থাকেন। কেননা যখন আল্লাহ তা’আলা গায়ব ও ভবিষ্যতের বিষয়াদি জানেন, সেহেতু সবকিছুই তার জানা মতে, তাঁর ইচ্ছানুসারে, তাঁরই উদ্যোগ গ্রহণের ফলেই সংঘটিত হয়ে থাকে। সুতরাং, আল্লাহ যদি তার রাসূল ও ওলীগণের মধ্যে যাকে ইচ্ছা করেন, তাঁকে গায়ব বা ভবিষ্যতের ঘটনাবলীর খবর দেন, তবে প্রতিবন্ধকতা কিসের? যদিও বা আমরা এ ধারণা পোষণ করি যে গায়বী বিষয় সমূহের কোন কিছু সত্ত্বাগতভাবে জানা মানব প্রকৃতি সজ্ঞাত নয়, কিন্তু আল্লাহ যদি কাউকে অবহিত করেন, তখন প্রতিরোধ করার কে আছে? সুতরাং, যা কিছু তাঁরা জানেন, তা আল্লাহ তা’আলা কর্তৃক জানানোর ফলেই জানতে পেরে, অন্যান্যদেরকে খবর দেন। উনাদের মধ্যে এমন কেউ নেই, যিনি সত্ত্বাগত ইলমে গায়বের দাবীদার। মুহাম্মদী শরীয়তে (বান্দার জন্য) সত্বাগত ইলমে গায়বের দাবী করা সর্বোচ্চ পর্যায়ের নিষিদ্ধ বিষয় সমূহের মধ্যে গণ্য হয় এবং যে এরূপ দাবী করে, তাকে ‘কাফির’ বলা হয়।


❏মৌলভী কাসেম নানুতবী ‘তাহযীরুন নাস’ গ্রন্থের ৪ পৃষ্ঠায় উল্লে­খ করেছেন, “পূর্বব র্তীদের জ্ঞান এক ধরনের, আর পরব র্তীদের জ্ঞান ভিন্ন ধরনের। কিন্তু সে সমুদয় জ্ঞান আল্লাহ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) এর মধ্যে পুঞ্জিভূত করা হয়েছে। অতএব রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) হলেন প্রত্যক্ষ জ্ঞানী এবং অন্যান্য নবী ও ওলীগণ হলেন পরোক্ষ জ্ঞানী।”

এ বক্তব্যের শেষ অংশটুকুর প্রতি লক্ষ্য করা দরকার যে, মৌলভী কাসেম সাহেব হুযুর আলাইহিস সালামের মধ্যে পূর্বব র্তী ও পরব র্তীগণের জ্ঞানের সমাবেশ স্বীকার করেছেন। পূর্বব র্তীগণের মধ্যে হযরত আদম (আঃ), হযরত খিযির (আলাইহিস সালাম), হযরত ইব্রাহীম (আলাইহিস সালাম), আরশ বহনকারী ও লওহে মাহফুজের দায়িত্বপ্রাপ্ত ফিরিশতাগণও অন্তভুর্ক্ত। সুতরাং, উল্লে­খিত সবার জ্ঞানের তুলনায় হুযুর আলাইহিস সালামের জ্ঞান বেশী হওয়া চাই। হযরত আদম (আলাইহিস সালাম) এর জ্ঞান সম্পর্কে আমি পূর্বেই আলোকপাত করেছি।

Top