২১- كِتَابُ الْفَضَائِلَ وَالشَّمَائِلِ
১- بَابُ مَا جَاءَ فِي فَضْلِ النَّبِيِّ
٣٥٤- أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنِ الْـهَيْثَمِ، وَرَبِيْعَةَ، عَنْ أَنَسٍ ، أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قُبِضَ، وَهُوَ ابْنُ ثَلَاثٍ وَسِتِّيْنَ، وَقُبِضَ أَبُوْ بَكْرٍ وَهُوَ ابْنُ ثَلَاثٍ وَسِتِّيْنَ، وَقُبِضَ عُمَرُ وَهُوَ ابْنُ ثَلَاثٍ وَسِتِّيْنَ.
২১. ফযীলত ও চরিত্র অধ্যায়
বাব নং ১৮৩. ১. নবী করমি (ﷺ) এর মর্যাদা প্রসঙ্গে
৩৫৪. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা হায়শাম ও রবীয়া থেকে, তারা আনাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, রাসূল (ﷺ) তেষট্টি বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন। আর হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) ও হযরত ওমর (رضي الله عنه)ও তেষট্টি বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন।
٣٥٥- أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ يَحْيَىٰ بْنِ سَعِيْدٍ، عَنْ أَنَسٍ ، قَالَ: بُعِثَ رَسُوْلُ اللهِ عَلَىٰ رَأْسِ أَرْبَعِيْنَ سَنَةً، فَأَقَامَ بِمَكَّةَ عَشْرًا، وَبِالْـمَدِيْنَةِ عَشْرًا، وَتُوُفِّيَ رَسُوْلُ اللهِ ، وَمَا فِيْ لِـحْيَتِهِ وَرَأْسِهِ عِشْرُوْنَ شَعْرَةً بَيْضَاءَ.
৩৫৫.অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা ইয়াহিয়া ইবনে সাঈদ থেকে, তিনি আনাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) ’র নবুয়ত প্রকাশ হয় চলিশ বছর বয়সে। অতঃপর দশ বছর মক্কায় এবং দশ বছর মদীনায় অবস্থান করেন। যখন তাঁর ইন্তেকাল হয়, তখন তাঁর দাঁড়ি ও মাথার বিশটি চুল মোবারকও সাদা হয়নি।
(মুসান্নিফে ইবনে আবি শায়বা, ১৩/৫৪/৩৪৫৯১)
ব্যাখ্যা: এ হাদিস থেকে প্রতীয়মান হয় যে, রাসূল (ﷺ) ’র বয়স ছিল ষাট বছর। মুসলিম ও তিরমিযী শরীফের বর্ণনায় এর সাথে এটাও অতিরিক্ত আছে যে, তিনি ষাট বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন। তবে তাঁর বয়স তেষট্টি বছর হওয়াটাই অধিক বিশুদ্ধ।
٣٥٦- أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ أَبِي الزُّبَيْرِ، عَنْ جَابِرٍ ، قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ يُعْرَفُ بِرِيْحِ الطِّيْبِ إِذَا أَقْبَلَ مِنَ اللَّيْلِ.
৩৫৬. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা আবু যুবাইর থেকে, তিনি জাবির (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, নবী করমি (ﷺ) রাত্রে আগমন করলে তাঁর পবিত্র দেহের সুগন্ধি দ্বারা তাঁকে চেনা যেত।
(মুসনাদে বাযযার, ২/৩৩৬/৭১১৮)
ব্যাখ্যা: রাসূল (ﷺ) ’র পবিত্র দেহ মোবারক যে সুগন্ধি এ বিষয়ে অনেক হাদিস বর্ণিত আছে। তাঁর সুগন্ধির দ্বারা বুঝা যেত তিনি কোন রাস্তা দিয়ে গমণ করেছেন। এমন কি তাঁর পবিত্র দেহ থেকে নির্গত ঘামও সুগন্ধি ছিল যা বিয়ে-শাদীতে ব্যবহৃত হত।
٣٥٧- أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ حَمَّادٍ، عَنْ إِبْرَاهِيْمَ، عَنْ عَلْقَمَةَ، عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُوْدٍ ، أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ كَانَ يُعْرَفُ بِاللَّيْلِ إِذَا أَقْبَلَ إِلَى الْـمَسْجِدِ بِرِيْحِ الطِّيْبِ.
৩৫৭.অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা হাম্মাদ থেকে, তিনি ইব্রাহীম থেকে, তিনি আলকামা থেকে, তিনি আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, রাসূল (ﷺ) রাতে তাশরীফ আনলে তাঁর পবিত্র সুগন্ধি দ্বারা তাঁকে চেনা যেত।
(দারেমী, ১/৪৫/৬৫)
٣٥٨- أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ مُحَارِبٍ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ ، قَالَ: كَانَ لِيْ عَلَى النَّبِيِّ دَيْنٌ فَقَضَانِيْ، وَزَادَنِيْ.
৩৫৮.অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা মুহারিব থেকে, তিনি ইবনে ওমর (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, নবী করমি (ﷺ) এর নিকট আমার কিছু কর্জ ছিল। তিনি তা আমাকে আদায় করে দেন এবং আরো কিছু অতিরিক্ত প্রদান করেন।
(মুসলিম, ২/১৫৫/১৬৮৯)
٣٥٩- أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ إِبْرَاهِيْمَ، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ ، قَالَ: مَا مَسَسْتُ بِيَدِيْ خَزًّا وَلَا حَرِيْرًا أَلْيَنَ مِنْ كَفِّ رَسُوْلِ اللهِ . وَفِيْ رِوَايَةٍ: مَا رُؤِيَ رَسُوْلُ اللهُ مَادًّا رُكْبَتَيْهِ بَيْنَ جَلِيْسٍ لَهُ قَطُّ.
৩৫৯.অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা ইব্রাহীম থেকে, তিনি আনাস ইবনে মালিক (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি আমার হাত দ্বারা এমন কোন খায্ (উল ও রেশম মিশ্রিত কাপড়) এবং কোন রেশম স্পর্শ করিনি যা রাসূল (ﷺ) এর পবিত্র হাত থেকে অধিক কোমল।
অন্য এক বর্ণনায় আছে, নবী করমি (ﷺ) কে তাঁর উপবিষ্ট সঙ্গীদের সামনে হাঁটু ছড়িয়ে বসতে কেউ দেখেনি।
(মুসনাদে আহমদ, ২১/৭৭/১৩৩৭৪)
٣٦٠- أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ إِبْرَاهِيْمَ، عَنْ أَبِيْهِ، عَنْ مَسْرُوْقٍ، أَنَّهُ سَأَلَ عَائِشَةَ عَنْ خُلُقِ رَسُوْلِ اللهِ ، فَقَالَتْ: أَمَا تَقْرَأُ الْقُرْآنَ؟!
৩৬০.অনুবাদ: ইমাম আবুু হানিফা ইব্রাহীম থেকে, তিনি তার পিতা থেকে, তিনি মাসরূক থেকে, তিনি হযরত আয়েশা (رضي الله عنه) এর নিকট রাসূল (ﷺ) এর চরিত্র সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে, উত্তরে তিনি বলেন, তুমি কি কুরআন পাঠ করনা?
(মুসনাদে আহমদ, ৪১/৩০৮/২৪৮০০)
ব্যাখ্যা: বর্ণিত হাদিসে হযরত আয়েশা (رضي الله عنه) প্রশ্ন করে এটা বুঝাতে চেয়েছেন যে, পবিত্র কুরআন রাসূল (ﷺ) এর উত্তম অভ্যাস ও প্রশংসিত চরিত্রের সঠিক ব্যাখ্যা করে থাকে এবং তাঁর চারিত্রিক জীবন ও সীরাতে পাকের অত্যন্ত সুস্পষ্ট ভাবে চিত্র পেশ কারী। অথবা এটাও বলা যায় যে, রাসূল (ﷺ) স্বীয় পুত চরিত্র পছন্দনীয় অভ্যাস ও মনোনীত আমলের দ্বারা কুরআনে করীমের সঠিক ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করেছেন। সুতরাং যে তাঁর চরিত্র সম্পর্কে অজ্ঞ, সে মূলত কুরআন মাজীদ সম্পর্কে অজ্ঞ। বস্তুত এক কুরআন লিখিত ছিল আর দ্বিতীয় কুরআন হলো স্বয়ং রাসূল (ﷺ) ।
٣٦١- أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ مُسْلِمٍ، عَنْ أَنَسٍ ، قَالَ: كَانَ رَسُوْلُ اللهِ يُجِيْبُ دَعْوَةَ الْـمَمْلُوْكِ، وَيَعُوْدُ الْـمَرِيْضَ، وَيَرْكَبُ الْـحِمَارَ.
৩৬১.অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা মুসলিম থেকে, তিনি আনাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) গোলামের দাওয়াত কবুল করতেন, রোগীর সেবা করতেন এবং গাধার উপর আরোহণ করতেন।
(আল মুস্তাদরাক, ২/৫০৬/৩৭৩৪)
ব্যাখ্যা: উপরোক্ত হাদিসে গোলাম দ্বারা আযাদকৃত গোলামকে বুঝানো হয়েছে। অথবা গোলাম যদি তার মনিবের পক্ষে দাওয়াত করত, তাহলেও তিনি তা কবুল করতেন। যদিও আল্লাহ তায়ালা তাঁকে দ্বীন-দুনিয়ার বাদশাহী দান করেছিলেন তবুও তাঁর মধ্যে অহংকার, রাজ প্রতাপ, জাঁকজমক এবং মিথ্যা আস্ফালন মোটেও ছিল না। বরং কাজ-কর্মে, আচার-ব্যবহারে নম্রতা ও ভদ্রতা প্রকাশ পেত। যেমন একেবারে নিঃস্ব গরীব লোকের দাওয়াত কবুল করতেন। অত্যন্ত সাধরণ মুসলমান অসুস্থ হলে তার সেবা করার জন্য যেতেন এবং তাকে সান্তনা দিতেন। আরোহণের জন্য কখনো গাধা ব্যবহার করতেন। অথচ আরবের আমীরগণ উট ও ঘোড়ার উপর আরোহণ করতেন। তিনি বিনয়ের কারণে গাধার উপরও আরোহণ করতেন।
٣٦٢- أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ حَمَّادٍ، عَنْ إِبْرَاهِيْمَ، عَنِ الْأَسْوَدِ، عَنْ عَائِشَةَ ، قَالَتْ: كَأَنِّيْ أَنْظُرُ إِلَىٰ بَيَاضِ قَدَمَيْ رَسُوْلِ اللهِ ، حَيْثُ أَتَى الصَّلَاةَ فِيْ مَرَضِهِ.
৩৬২.অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা হাম্মাদ থেকে, তিনি ইব্রাহীম থেকে, তিনি আসওয়াদ থেকে, তিনি আয়েশা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি যেন এখনো রাসূল (ﷺ) এর পা মোবারকের শুভ্রতা দেখতে পাচ্ছি, যখন তিনি অসুস্থ অবস্থায় নামাযের জন্য গমন করেছেন।
ব্যাখ্যা: নবী করমি (ﷺ) ’র অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো, তিনি মৃত্যু রোগে আক্রান্ত অবস্থায়ও নামাযের জন্য মসজিদে গমন করতেন। আর এটাই হযরত আয়েশা (رضي الله عنه)’র দৃশ্যপটে তখনো বিদ্যমান ছিল।
٣٦٣- أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ حَمَّادٍ، عَنْ إِبْرَاهِيْمَ، عَنِ الْأَسْوَدِ، عَنْ عَائِشَةَ : أَنَّ النَّبِيَّ لَـمَّا مَرِضَ الْـمَرَضَ الَّذِيْ قُبِضَ فِيْهِ، اسْتَحَلَّ أَنْ يَكُوْنَ فِيْ بَيْتِيْ، فَأَحْلَلْنَ لَهُ، قَالَتْ: فَلَـمَّا سَمِعْتُ ذَلِكَ قُمْتُ مُسْرِعَةً فَكَنَسْتُ بَيْتِيْ، وَلَيْسَ لِيْ خَادِمٌ، وَفَرَشْتُ لَهُ فِرَاشًا حَشْوُ مِرْفَقَتِهِ الْإِذْخِرُ، فَأَتَىٰ رَسُوْلُ اللهِ ، يُهَادِيْ بَيْنَ رَجُلَيْنِ، حَتَّىٰ وُضِعَ عَلَىٰ فِرَاشِيْ.
৩৬৩.অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা হাম্মাদ থেকে, তিনি ইব্রাহীম থেকে, তিনি আসওয়াদ থেকে, তিনি আয়েশা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, রাসূল (ﷺ) যখন মৃত্যু রোগে আক্রান্ত, তখন তিনি বিবিগণ থেকে আমার ঘরে থাকার অনুমতি চাইলেন। তখন তারা তাঁকে অনুমতি প্রদান করেন। তিনি বলেন, যখন আমি এটা শুনলাম, তখন দ্রুত গিয়ে ঘর ঝাড়– দিয়ে পরিস্কার করলাম। আর আমার কোন খাদেম ছিলনা। তাঁর জন্য এমন বিছানা বিছালাম, যার কনুই রাখার বালিশে ইযখার ঘাস ভর্তি ছিল। অতঃপর রাসূল (ﷺ) দু’জন লোকের সহায়তায় (আমার ঘরে) আগমন করেন এমনকি তিনি আমার বিছানায় তাশরিফ রেখেছেন।
٣٦٤- أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ يَزِيْدَ، عَنْ أَنَسٍ ، أَنَّ أَبَا بَكْرٍ رَأَىٰ عَنْ رَسُوْلِ اللهِ خِفَّةً، فَاسْتَأْذَنَهُ إِلَى امْرَأَتِهِ بِنْتِ خَارِجَةَ، وَكَانَتْ فِيْ حَوَائِطِ الْأَنْصَارِ، وَكَانَ ذَلِكَ رَاحَةَ الْـمَوْتِ وَلَا يَشْعُرُ، فَأَذِنَ، ثُمَّ تُوُفِّيَ رَسُوْلُ اللهِ تِلْكَ اللَّيْلَةَ، فَأَصْبَحَ، فَجَعَلَ النَّاسُ يَتَرَامَوْنَ، فَأَمَرَ أَبُوْ بَكْرٍ غُلَامًا يَسْتَمِعُ، ثُمَّ يُخْبِرُهُ، فَقَالَ: أَسْمَعُهُمْ يَقُوْلُوْنَ: مَاتَ مُحَمَّدٌ ، فَاشْتَدَّ أَبُوْ بَكْرٍ، وَهُوَ يَقُوْلُ: وَاقَطْعَ ظَهْرَاهُ، فَمَا بَلَغَ أَبُوْ بَكْرٍ الْـمَسْجِدَ، حَتَّىٰ ظَنُّوْا أَنَّهُ لَـمْ يَبْلُغْ، وَأَرْجَفَ الْـمُنَافِقُوْنَ، فَقَالُوْا: لَوْ كَانَ مُحَمَّدٌ نَبِيًّا لَـمْ يَمُتْ، فَقَالَ عُمَرُ : لَا أَسْمَعُ رَجُلًا يَقُوْلُ: مَاتَ مُحَمَّدٌ ، إِلَّا ضَرَبْتُهُ بِالسَّيْفِ.
فَكَفُّوْا لِذَلِكَ، فَلَـمَّا جَاءَ أَبُوْ بَكْرٍ، وَالنَّبِيُّ مُسَجًّى، كَشَفَ الثَّوْبَ عَنْ وَجْهِهِ، ثُمَّ جَعَلَ يَلْثَمُهُ، فَقَالَ: مَا كَانَ اللهُ لِيُذِيْقَكَ الْـمَوْتَ مَرَّتَيْنِ، أَنْتَ أَكْرَمُ عَلَى اللهِ مِنْ ذَلِكَ، ثُمَّ خَرَجَ أَبُوْ بَكْرٍ، فَقَالَ: يَا أَيُّهَا النَّاسُ! مَنْ كَانَ يَعْبُدُ مُحَمَّدًا فَإِنَّ مُحَمَّدًا قَدْ مَاتَ، وَمَنْ كَانَ يَعْبُدُ رَبَّ مُحَمَّدٍ فَإِنَّ رَبَّ مُحَمَّدٍ لَا يَمُوْتُ، ثُمَّ قَرَأَ: [وَمَا مُحَمَّدٌ إِلَّا رَسُوْلٌ قَدْ خَلَتْ مِنْ قَبْلِهِ الرُّسُلُ أَفَإِنْ مَاتَ أَوْ قُتِلَ انْقَلَبْتُمْ عَلَى اعْقَابِكُمْ وَمَنْ يَنْقَلِبْ عَلَىٰ عَقِبَيْهِ فَلَنْ يَضُرَّ اللهَ شَيْئًا وَسَيَجْزِي اللهُ الشَّاكِرِيْنَ] {آل عمران: ১৪৪}، قَالَ: فَقَالَ عُمَرُ : لَكَأَنَّا لَـمْ نَقْرَأْهَا قَبْلَهَا قَطُّ، فَقَالَ النَّاسُ مِثْلَ مَقَالَةِ أَبِيْ بَكْرٍ مِنْ كَلَامِهِ وَقِرَاءَتِهِ، وَمَاتَ لَيْلَةَ الْاِثْنَيْنِ، فَمَكَثَ لَيْلَتَيْنِ وَيَوْمَيْنِ، وَدُفِنَ يَوْمَ الثُّلَاثَاءِ، وَكَانَ أُسَامَةُ بْنُ زَيْدٍ وَأَوْسُ بْنُ خَوْلِيٍّ يَصُبَّانِ وَعَلِيٌّ وَالْفَضْلُ يُغَسِّلَانِهِ .
৩৬৪.অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা ইয়াযিদ থেকে, তিনি আনাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) যখন রাসূল (ﷺ) কে একটু সুস্থ দেখেছেন, তখন তিনি তাঁর স্ত্রী বিনতে খারিজার নিকট যাওয়ার অনুমতি প্রার্থনা করেন, রাসূল (ﷺ) থেকে এসময় তাঁর স্ত্রী ছিল আনসারের বাগানে। আর এই সুস্থতা ছিল মৃত্যুর সুস্থতা, যা তিনি (আবু বকর রা.) বুঝতে পারেননি। নবী করমি (ﷺ) তাঁকে অনুমতি দান করেন। অতঃপর রাসূল (ﷺ) ঐ রাতেই ইন্তেকাল করেন। সকাল হলে লোকজন একত্রিত হতে লাগল। হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) এক গোলামকে আদেশ দিলেন যে, সংবাদ শুনে যেন তাঁকে অবহিত করে। সে বলল, আমি লোকজনকে বলতে শুনেছি যে, মুহাম্মদ ইন্তেকাল করেছেন। তখন তিনি (আবু বকর রা.) দ্রুত রওয়ানা হলেন এবং বলতে লাগলেন, হায় আফসোস! কোমর ভেঙ্গে গেল। হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) এখনো মসজিদে নববীতে পৌঁছেন নি, ফলে লোকেরা ধারণা করল যে, তিনি এখনো সংবাদ পাননি। ইত্যবসরে মুনাফিকরা রটাচ্ছিল যে, মুহাম্মদ যদি নবী হতেন তাহলে মৃত্যু বরণ করতেন না। অতঃপর হযরত ওমর (رضي الله عنه) বলেন, মুহাম্মদ যে ইন্তেকাল করেছেন এ কথা যেন আমি কাউকে বলতে না শুনি। অন্যথায় তাকে আমি তলোয়ার দিয়ে হত্যা করব। ফলে মুনাফিক দল এরূপ অনর্থক কথা বলা থেকে থেমে গেল।
অতঃপর যখন হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) আগমন করেন, তখন রাসূল (ﷺ) ’র পবিত্র দেহ কাপড় দ্বারা আবৃত ছিল। তিনি তাঁর চেহারা মোবারক থেকে কাপড় সরিয়ে কপালে চুমু খেয়ে বললেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা দু’টি মৃত্যুর কষ্ট আপনাকে আস্বাদন করাবেন না। আপনি আল্লাহর নিকট এর চেয়ে অধিক সম্মানিত (একথার দ্বারা হযরত ওমর (رضي الله عنه)’র কথার খণ্ডন করা উদ্দেশ্য ছিল) এরপর তিনি বাইরে এসে বললেন, হে লোক সকল! যে ব্যক্তি মুহাম্মদের ইবাদত করত, তিনি ইন্তেকাল করেছেন, আর যে ব্যক্তি মুহাম্মদের প্রভূর ইবাদত করত, (তোমরা যেনে রাখ) মুহাম্মদের প্রভূ কখনো ইন্তেকাল করবেন না। তারপর তিনি এই আয়াত তিলাওয়াত করেন:
وَمَا مُحَمَّدٌ إِلَّا رَسُولٌ قَدْ خَلَتْ مِنْ قَبْلِهِ الرُّسُلُ أَفَإِنْ مَاتَ أَوْ قُتِلَ انْقَلَبْتُمْ عَلَى أَعْقَابِكُمْ وَمَنْ يَنْقَلِبْ عَلَى عَقِبَيْهِ فَلَنْ يَضُرَّ اللَّهَ شَيْئًا وَسَيَجْزِي اللَّهُ الشَّاكِرِينَ
“মুহাম্মদ একজন রাসূল (ﷺ)ব্যতীত আর কেউ নন, নিশ্চয়ই তাঁর পূর্বেও অনেক রাসূল (ﷺ)পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন। যদি তিনি ইন্তেকাল করেন, কিংবা নিহত হন, তাহলে তোমরা পিছন দিকে ফিরে যাবে? অর্থাৎ তোমরা কি পূর্বের ধর্মে ফিরে যাবে? তারা কখনো আল্লাহর কোন ক্ষতি করতে পারবেনা। অচিরেই আল্লাহ কৃতজ্ঞ বান্দাদেরকে বিনিময় দান করবেন।”
(সূরা আলে ইমরান, আয়াত, ১৪৪)
রাবী বলেন, হযরত ওমর (رضي الله عنه) বলেন, আমরা যেন এর পূর্বে কখনো এই আয়াত তিলাওয়াত করিনি। এরপর সবাই হযরত আবু বকর (رضي الله عنه)’র কথার ন্যায় বলতে লাগলেন এবং ঐ আয়াত পাঠ করতে লাগলেন।
রবিবার দিবাগত রাতে সোমবার রাতে তিনি ইন্তেকাল করেন আর দু’দিন ও দু’রাত পর মঙ্গল বারে দাফন করা হয়। হযরত উসামা ইবনে যায়েদ (رضي الله عنه) ও হযরত আউস ইবনে খাওলা (رضي الله عنه) পানি ঢালেন আর হযরত আলী ও হযরত ফযল ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) তাঁকে গোসল দিয়েছেন।
ব্যাখ্যা: রাসূল (ﷺ) ’র ওফাত দিবস যে সোমবার এতে কারো দ্বিমত নেই, আর এটাই বুখারী শরীফে হযরত আয়েশা ও আনাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত। তবে দাফনের দিন নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে। সাঈদ ইবনে মুসায়্যিব ও আবু সালমা ইবনে আব্দুর রহমান (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত আছে যে, মঙ্গল বারে দাফন কাজ সম্পন্ন হয়। ইবনে কাসীর (رضي الله عنه) এই মতটিকে গরীব বলেছেন। ইবনে সা’দ ইকরামা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, সোমবারে রাসূল (ﷺ) ইন্তেকাল করেন। ঐ দিন এবং এর পরের রাতের পরে ও মঙ্গল বারেও দাফন করা হয়নি। এর পরের রাতে অর্থাৎ মঙ্গলবার দিবাগত বুধবার রাতে দাফন করা হয়েছে। ইবনে কাসীর বলেন-এটাই অধিকাংশের মত। ইবনে সাদ ওসমান ইবনে মুহাম্মদ ইবনে মুগীরা থেকে বর্ণনা করেন, রাসূল (ﷺ) সোমবার ইন্তেকাল করেন আর বুধবারে দাফন করা হয়েছে। বুধবারের রেওয়াত সমূহ সনদের দিক দিয়ে দুর্বল। তবুও ওলামায়ে কেরামগণ এভাবে সমাধান দিয়েছেন যে, রাসূল (ﷺ) কে মঙ্গল ও বুধবার মধ্যবর্তী রাতে দাফন করা হয়েছে। এ কারণে কেউ এটাকে মঙ্গলবার আবার কেউ এটাকে বুধবার বলেছেন। ২০১
মাওলানা আব্দুর রউফ কাদেরী, আসাহহুস সিয়ার , পৃষ্ঠাঃ ৫৪৪