পাগড়ীর বর্ণনা
মাসআলাঃ পাগড়ী বাঁধার মধ্যে যদি মধ্যস্থিত অংশ খালি থেকে যায় তাহলে উহার সাথে নামায পড়া মাকরূহ। রাসূল (ﷺ) এভাবে পাগড়ী বাঁধতে নিষেধ করেছেন। নবী করীম (ﷺ) উহা নিষেধ করেছেন এবং উহা হল- মাথা বাঁধা বা মাথায় পাগড়ী এমনভাবে ঘুরিয়ে আনা যে, মধ্যস্থিত অংশকে খোলা রেখে দেয়। ১০৪
➥১০৪. রদ্দুল মুহতার, পৃষ্ঠা-৬৫২, ১ম খণ্ড, বাবু মা-ইয়াফসুদুস্ সালাত ওয়ামা ইয়াক্রাহু।
আল্লামা হাসান শরনবুলালী বলেন, ই’তিজার (পাগড়ী বাধা) মাকরূহ হবে, আর উহা হল রুমাল দিয়ে মাথা বাঁধা কিংবা মাথার চতুর্দিকে পাগড়ী বাঁধা মধ্যস্থিতা অংশ খালি রাখা। ১০৫
➥১০৫. মারাকিল ফালাহ, ফসলুল মাকরূহাতিস্ সালাত, পৃষ্ঠা-২৮৪, ফতওয়ায়ে হক্কানীয়া, ৩য় খণ্ড, পৃষ্ঠা- ১৯৭।
মাসআলাঃ ‘আমামা’ পাগড়ীকে বলা হয়। পাগড়ী বাধার মধ্যে সুন্নাত হল- সাদা হওয়া যার মধ্যে অন্য রঙ্গের মিশ্রণ না হওয়া। হুজুর মুস্তফা (ﷺ)-এর পাগড়ী মুবারক অধিকাংশ সময় সাদা থাকত।
কতিপয় আলেমগণ বলেছেন- যুদ্ধের সময় নবীজীর মাথা মুবারকে কাল পাগড়ী থাকত।
কতিপয় আলেমগণ বলেছেন- শিরস্ত্রাণের দরুণ যা তিনি যুদ্ধে পরিধান করতেন, পাগড়ীর রং কাল ও ময়লা হয়ে যেত নতুবা মূলত উক্ত পাগড়ী সাদা থাকত। কিন্তু এটাই প্রমাণিত যে, মুস্তফা (ﷺ) কখনো কাল রঙ্গের পাগড়ী পরিধান করতেন।
রাসূল (ﷺ) এর ঘরে পরিধান করার পাগড়ী সাত বা আট গজ বর্ণিত হয়েছে। পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের পাগড়ী বার গজ এবং ঈদ ও জুমার দিনের পাগড়ী চৌদ্দ গজ, যুদ্ধের সময়ের পাগড়ী পনের গজ। ওলামায়ে মুতাআখ্খীরিন অনুমোদন দিয়েছেন যে, বাদশা, কাজী, মুফতী, ফকীহ-মাশায়েখ ও গাজী স্বীয় মাহাত্ম্য, গাম্ভীর্য, সম্মান ও মর্যাদা বজায় রাখার জন্য একত্রিশ গজ পর্যন্ত লম্বা পাগড়ী পরিধান করা জায়েয আছে।
পাগড়ীর সুন্নাত ত্বরীকা হল- পাগড়ী লম্বা হওয়া অধিক ছোট না হওয়া। পাগড়ীর প্রস্থ আধা গজ হওয়া উচিত, উহা থেকে কিছু কম বেশ হলে ক্ষতি নেই এবং উহার দৈর্ঘ্য কমপক্ষে সাত গজ হবে। ঐ গজের হিসাব অনুযায়ী চব্বিশ আঙ্গুল হয়।
সুন্নাত হল- পাগড়ী পবিত্র অবস্থায় বাঁধা, কিবলামুখী হয়ে দাঁড়িয়ে বাধবে, আর যখন খুলীবে তখন প্যাচে-প্যাচে খুলবে একবারে নামিয়ে ফেলবে না। বাঁধার সময় যখন প্যাচে-প্যাচে বাঁধা হয়েছে তাই খুলার ক্ষেত্রেও এ তারতীব রক্ষা করা উচিত। পাগড়ী বাঁধার পর আয়না বা পানি কিংবা অন্য কোন প্রতিবিম্বিত বস্তু দেখে উহা ঠিক করে নিবে এবং পাগড়ীর প্রান্তস্থিতকারু রেখে পাগড়ী বাঁধবে।
ফকীহ আলেমগণের মাঝে পাগড়ীর প্রান্তস্থিত কারু এর ব্যাপারে মতবিরোধ রয়েছে। অধিকাংশ সময় হুজুর মুস্তফা (ﷺ) এর পিছনে থাকত, কখনো কখনো ডান হাতের দিকে এবং বাম হাতের দিকে পাগড়ীর প্রান্থস্থিতকারু রাখা বিদআত।
পাগড়ীর প্রান্তস্থিত কারুর দৈর্ঘ্য কমপক্ষে চার আঙ্গুল, বেশীর মধ্যে এক হাত, পিঠের দিকে অধিক লম্বা করা বিদআত। পাগড়ীর প্রান্তস্থিত কারুকে নামাযের সময়ের সাথে নির্দিষ্ট মনে করা ও সুন্নাত নয়, পাগড়ীর প্রান্তস্থিত কারু লটকানো মুস্তাহাব, রাসূল (ﷺ) কখনো পাগড়ীর প্রান্তস্থিত কারু লটকাতেন আর কখনো লটকাতেন না।
ফুকাহায়ে কিরামের নিকট কারু লটকানোর কিয়াসী অনেক দলীল রয়েছে।
কতিপয় আলেমের মতে কারু লটকানো সুন্নাতে মুয়াক্কাদা নয়। কতিপয় আলেম বাম পাশে লটকানোকে উপযোগী মনে করেন। কিন্তু উহার সনদ তথা প্রমাণ শক্তিশালী ও নির্ভরযোগ্য নয়।
মুতায়াখ্খিরীন আলেমগণ জাহেল লোকদের ঠাট্টা-বিদ্রুপের দরুণ পাঁচ ওয়াক্ত নামায ব্যতীত অন্য সময়ে কারু লটকানো আবশ্যক মনে করতেন না।
ফতাওয়ায়ে হুজ্জত ও জামিউর রুমুজ গ্রন্থে লেখা আছে- কারু না রাখা গুনাহ এবং কারু সহকারে দুই রাকাত নামায পড়া কারু ব্যতীত সত্তর রাকাত থেকে উত্তম।
কারু এর প্রকারঃ কাজী (জজ) এর জন্য পঁয়ত্রিশ আঙ্গুল কারু, খতীবদের জন্য একুশ আঙ্গুল, ছাত্রদের জন্য সতের আঙ্গুল আর সর্ব-সাধারণের জন্য চার আঙ্গুল।
মাসআলাঃ পাগড়ীকে বসে না বাঁধা। হাদীস শরীফে এসেছে- যে ব্যক্তি বসে পাগড়ী বাঁধবে কিংবা দাঁড়িয়ে পায়জামা পরিধান করবে আল্লাহ তা’আলা তাকে এমন বলা-মসীবতে লিপ্ত করে দিবেন যা দূর হবে না।
অপারগ ব্যক্তির হুকুম- “জরুরত অবৈধ কাজ সমূহকে বৈধ করে দেয়” এর ভিত্তিতে জায়েয। হুজুর মুস্তফা (ﷺ) টুপির উপর পাগড়ী বাঁধতেন কখনো টুপি ছাড়া পাগড়ী বেঁধে নিতেন। পাগড়ীর আকৃতি গম্বুজের ন্যায় গোলাকার হত। যেমন- ওলামা ও আরবের ভদ্র লোকেরা এ পদ্ধতিতে পাগড়ী বেঁধে থাকেন।
হযরত শায়খ আবদুল হক্ব মুহাদ্দিস দেহলভী (رحمة الله)’র পুস্তিকা ‘‘কাশফুল ইলতিবাস ফী শাকলিল্ লিবাস” থেকে সংগৃহিত।
মাসআলাঃ পাগড়ী বেঁধে নামায পড়া উত্তম, টুপি ছাড়া বা খালি মাথায় নামায পড়াকে কতিপয় ফকীহ মাকরূহ বলেছেন। কিন্তু যদি বিনয় ও নম্রতার উদ্দেশ্যে হয় তাহলে অসুবিধা নেই। আজকাল শিক্ষিত মুসলমানরা খালি মাথায় নামায পড়ে, এরূপ করা খৃস্টানদের সাথে এক প্রকারের সাদৃশ্য যারা গীর্জায় গিয়ে খালি মাথায় পড়ে।
আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন- خُذُوا زِينَتَكُمْ عِنْدَ كُلِّ مَسْجِدٍ “মসজিদে যাওয়ার সময় তোমরা সুন্দর কাপড় পরিধান কর এজন্য ভালমানের কাপড় ও পাগড়ী বেঁধে নামায পড়া উত্তম।” ১০৬
➥১০৬. ইসলামী পয়টিয়া, পৃষ্ঠা-৫১৪, মাহবুবুল আলম।
মাসআলাঃ পাগড়ী বাঁধার মধ্যে যদি মাথার উপরিভাগ খালি থেকে যায়, আর সেই অবস্থায় নামাজ আদায় করলে মাকরূহ হবে। রাসূলে আকরাম (ﷺ) এধরণের পাগড়ী বাঁধতে নিষেধ করেছেন। ১০৭
➥১০৭. মারাকিউল ফালাহ, ফছলুল মাকরুহাতিস্ সালাত, পৃষ্ঠা-২৮৪ ও ফতোয়ায়ে হক্কানীয়া, ৩য় খণ্ড, পৃষ্ঠা-১৯৭
نهىٰ النبى صلّى الله عليه وسلّم عنه وهو شد الراس او تكوير عمامة على راسه ترك وسطه مكشوخا، (ردالمحتار، جلد-১، صفحة ৬৫২، باب مايفسد الصلوة ومايكره)
قال العلامة حسن الشرنبلالى ويكره الاعتحار وهو شد الراس بالمنديل اوتكوير عمامة على راسه (مراقى الفلاح، فصل المكروهات الصلوة، صفحة ২৮৪، فتوى حقانيه، صفحة ১৯৭، جلد-৩)
মাসআলাঃ কুরআন মাজীদ খুব দ্রুত গতিতে পাঠ করা- অর্থাৎ উচ্চারণ শুদ্ধ ও বর্ণসমূহের মধ্যে কম না হওয়ার শর্তে যদি দ্রুতবেগে পাঠ করা হয় তাহলে নামায ভঙ্গ হয় না। তবে এত দ্রুত পাঠ করা, যাতে উচ্চারণে ভুল অথবা কম-বেশী হয়ে গেলে জায়েয নেই। ১০৮
➥১০৮. ফতওয়ায়ে শামী, খণ্ড-২য়, পৃষ্ঠা-৪৭।
এ উম্মত ক্বিরাতের মন্দ বিষয়সমূহ থেকে বিরত থাকবে। ইবনে আবেদীন (শামী রহ.) বলেন, অর্থাৎ অর্থবোধক বাক্য ও ক্বিরাতে তাড়াতাড়ি করা, ক্বিরাত ও রুকনসমূহ আদায়ে তাড়াতাড়ি করা মাকরূহ হবে। সিরাজিয়া গ্রন্থে এরূপ উল্লেখ রয়েছে।
মাসআলাঃ ফতোয়া শামী ও তাহতাবী শরীফে আছে, ‘ইমাম আযম আবু হানিফা (رحمة الله) ও ইমাম আবু ইউসুফ (رحمة الله) এর মতে, সূরা ফাতিহার পরে জন্মে সূরার পূর্বে অর্থাৎ সূরা ফাতিহা পাঠ শেষে অপর সূরা পাঠের পূর্বে বিসমিল্লাহ পাঠ করা সুন্নাত নয়। ইমাম মোহাম্মদ (رحمة الله) বলেছেন যে, চুপে চুপে ক্বিরাত পড়ার সময় বিসমিল্লাহ পড়া সুন্নাত, জেহ্রী বা উচ্চু আওয়াজে পড়ার সময় নয়। বাদায়েউস সানায়ে‘ কিতাবে প্রথম মতকে বিশুদ্ধ বলা হয়েছে। ১০৯
➥১০৯. ফতোয়া শামী, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-৩২৬, দেওবন্দের ছাপা; তাহতাবী, মিশরী ছাপা; বাহারুর রায়েক্ব, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-৩১২, ফতোয়া মাহমুদিয়া, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-১২৪।