বিষয় নং-৩: ১২ই রবিউল আউয়াল মিলাদুন্নবীই, ওফাতুন্নবী নয়:
“বিভ্রান্তির অবসান” গ্রন্থের ২২ পৃষ্ঠায় দেওবন্দী মৌলভী নূরুল ইসলাম ওলীপুরী লিখেছেন যে, ১২ই রবিউল আউয়ালে মিলাদুন্নবী (ﷺ) পালন করা হয় কিন্তু ১২ই রবিউল আউয়ালে কেন ওফাত দিবস পালন করা হয় না? তার দীবী রাসূল (ﷺ) একই দিনে ওফাত বরণ করেছিলেন। তাই আমি আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের অনুসারীরা কেন ১২ই রবিউল আউয়াল ওফাতুন্নবী পালন করে না তার যথাযথ কারণ সমূহ উল্লেখ করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছি। নিম্নে সংক্ষেপে কারণগুলো উল্লেখ করা হল-
ওফাতুন্নবী পালন না করার প্রথম কারণ:
তাদের অনেকেই বিভ্রান্তিকর বিভিন্ন গ্রন্থে দাবী করেছেন ১২ই রবিউল আউয়াল রাসূল (ﷺ) এর ওফাত হয়েছিল। অথচ তাদের নির্ভরযোগ্য কোন প্রমাণ নেই এবং কিয়ামত পর্যন্ত দিতেও পারবে না, ইনশাআল্লাহ।
১২ ই রবিউল আউয়াল রাসূল (ﷺ)‘র ওফাত হওয়ার গ্রহণযোগ্যতা :
১২ই রবিউল আউয়াল রাসূল (ﷺ) এর বিলাদত শরীফ যার বর্ণনা আমি সামনে বিস্তারিত উল্লেখ করবো। কিন্তু বিশুদ্ধ বর্ণনা মতে ১২ই রবিউল আউয়াল রাসূল (ﷺ) এর ওফাতের দিন নয়, কিন্তু ভ্রান্তবাদীরা ১২ ই রবিউল আউয়াল জাল রেওয়ায়েত দিয়ে রাসূল (ﷺ) এর ওফাত শরীফ প্রমাণ করতে অপচেষ্টা চালিয়ে থাকেন। কথিত কিছু বক্তা বলে থাকেন যে, ১২ই রবিউল আউয়াল রাসূল (ﷺ)-এর ওফাত তাতে কোন সন্দেহ নেই। নাউযুবিল্লাহ
অথচ এ বিষয়ে ১২-১৩টিরও বেশি মত বর্ণিত হয়েছে।
✦ এমনকি ইমাম বদরুদ্দীন আইনী (رحمة الله) বলেন-
وروى الْبَزَّار من حَدِيث ابْن مَسْعُود، رَضِي الله تَعَالَى عَنهُ: توفّي فِي إِحْدَى وَعشْرين من رَمَضَان
-‘‘ইমাম বায্যার (رحمة الله) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) ১১ই রমযান ওফাত বরণ করেন।’’ (আইনী, উমদাতুল ক্বারী, ১৬/৯৯ পৃ.)
✦ কেউ কেউ আরও দলিল হিসেবে উল্লেখ করেন যে, ইমাম ইবনে সা‘দ (রহ.) ও ইবনে কাসির (رحمة الله) সংকলন করেন-
عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ: تُوُفِّيَ رَسُولُ اللَّهِ - ﷺ - يَوْمَ الاثْنَيْنِ لاثْنَتَيْ عَشْرَةَ مَضَتْ مِنْ رَبِيعٍ الأَوَّلِ.
-‘‘হযরত আয়েশা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখ ওফাত বরণ করেন।’’ ৩৬
৩৬. ইবনে সা‘দ, আত-তবকাতুল কোবরা, ২/২০৯ পৃ. দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন, ওয়াক্বেদী, কিতাবুল মাগাজী, ২/২৪২ পৃ., ইবনে হাজার আসকালানী, ফতহুল বারী, ৮/১৩০ পৃ. হা/৪৪২৪, ইবনে কাসির, বেদায়া ওয়ান নিহায়া, ৫/২৫৬ পৃ.
✦ একই সনদে হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতেও আরেকটি মত বর্ণিত আছে।
সনদ পর্যালোচনা:
এখন আমি এ হাদিস দু’টির সনদ পর্যালোচনা করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছি।
● উক্ত হাদিসটি দুটির মধ্যে (مُحَمَّدُ بْنُ عُمَرَ) ‘মুহাম্মদ ইবনে ওমর আল ওয়াক্বেদী (ওফাত. ২০৭ হি.)’ নামক একজন বর্ণনাকারী রাবী রয়েছেন, যার ব্যাপারে মুহাদ্দিসগণ চরম সমালোচনা করেছেন। ইমাম যাহাবী (رحمة الله) লিখেন-
وقال ابن معين: ليس بثقة.
وقال - مرة: لا يكتب حديثه / وقال البخاري وأبو حاتم: متروك.
وقال أبو حاتم أيضا والنسائي: يضع الحديث.
وقال الدارقطني: فيه ضعف.
وقال ابن عدي: أحاديثه غير محفوظة والبلاء منه.
-‘‘ইমাম ইয়াহইহয়া ইবনে মাঈন (رحمة الله) বলেন, ওয়াক্বেদী সিক্বাহ নয় অর্থাৎ- নির্ভরযোগ্য নয়। তাঁর থেকে অন্য বর্ণনায় এসেছে, আমরা তাঁর হাদিস লিপিবদ্ধ করতাম না। ইমাম বুখারী (رحمة الله) ও আবু হাতেম রাযী (رحمة الله) বলেছেন, ওয়াক্বেদী মাতরুক অর্থাৎ পরিত্যক্ত রাবী। অপর বর্ণনায় এসেছে, ইমাম আবু হাতেম আল রাযী (رحمة الله) এবং ইমাম নাসাঈ (رحمة الله) সর্ব সম্মতভাবে বলেছেন, ওয়াক্বেদী নিজ থেকেই হাদিস সমূহ রচনা করতো বা জাল হাদিস বানাতো। ইমাম দারাকুতনী (رحمة الله) বলেন, তার অধিকাংশ বর্ণনাই দুর্বল। ইমাম ইবনে আদি (رحمة الله) বলেন, তার হাদিস সংরক্ষিত নয়, তার হাদিসে রয়েছে অনেক বালা মসিবত।’’ ৩৭
৩৭. ইমাম যাহাবী : মিযানুল ই‘তিদাল : ৩/৬৬৫ : রাবী: ৭৯৯৩, ইমাম ইবনে আদী : আল-কামিল : ৭/৪৮১ : রাবী: ১৭১৯
● ইমাম যাহাবী (رحمة الله) আরও উল্লেখ করেন-
وقال أبو غالب ابن بنت معاوية بن عمرو: سمعت ابن المديني يقول. الواقدي يضع الحديث.
-‘‘মুহাদ্দিস আবু গালিব বলেন, আমি হাদিসের অন্যতম ইমাম আলী ইবনে মাদীনী (رضي الله عنه) কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, ওয়াক্বেদী জাল হাদিস রচনা করতো।’’ ৩৮
৩৮. ইমাম যাহাবী : মিযানুল ই‘তিদাল : ৩/৬৬৩ : রাবী: ৭৯৯৩
● ইমাম যাহাবী (رحمة الله) আরও উল্লেখ করেছেন-
وقال ابن راهويه: هو عندي ممن يضع الحديث.
-‘‘ইমাম ইসহাক ইবনে রাহুয়াই (رحمة الله) বলেন, আমাদের নিকট ওয়াক্বেদী জাল হাদিস রচনাকারীদের একজন।’’৩৯
৩৯. ইমাম যাহাবী : মিযানুল ই‘তিদাল : ৩/৬৬৩ : রাবী: ৭৯৯৩, ইমাম যাহাবী, তারিখুল ইসলাম, ৫/১৮২ পৃ. ক্রমিক.৩৩৪, ইমাম ইবনে আদী : আল-কামিল : ৭/৪৮১ : রাবী: ১৭১৯
● ইমাম ইবনে আদি (رحمة الله) লিখেন-
قَالَ معاوية قَال لي أحمد بْن حنبل هُوَ كذاب.
-‘‘মুহাদ্দিস মুয়াবিয়া (رحمة الله) বলেন, ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (رحمة الله) ওয়াক্বেদী সম্পর্কে বলেছেন, ‘ওয়াক্বেদী কায্যাব অর্থাৎ মিথ্যাবাদী।’’ ৪০
৪০. ইমাম ইবনে আদী : আল-কামিল : ৭/৪৮১ পৃ. রাবী: ১৭১৯
● ইমাম যাহাবী (رحمة الله) তার আরেক পুস্তকে লিখেন-
وقال ابن نُمَيْر، ومسلم، وأبو زُرْعة: متروك الحديث.....وقال ابن أبي حاتم: حدثنا يونس قَالَ: قَالَ لي الشّافعيّ: كُتُب الواقديّ كذِب.
-‘‘ইমাম ইবনে নুমাইর, মুসলিম, আবু যারওয়া (রহ.) বলেন, ওয়াক্বেদী মাতরুক অর্থাৎ পরিত্যক্ত রাবী।.....ইমাম ইবনে আবি হাতেম (رحمة الله) বলেন, আমাকে মুহাদ্দিস ইউনুস বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, ইমাম শাফেয়ী (رحمة الله) বলেছেন, ওয়াক্বেদী একজন মিথ্যাবাদী লিখক।’’ (ইমাম যাহাবী, তারিখুল ইসলাম, ৫/১৮২ পৃ. ক্রমিক.৩৩৪)
সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! বুঝতে বাকি রইল না যে ১২ই রবিউল আউয়াল রাসূল (ﷺ)-এর ওফাত এটা জাল বর্ণনা, কেননা এটা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নামে জাল হাদিস রচনাকারীরই একটি রচনা।
রাসূল (ﷺ) সোমবার দিনে পৃথিবীতে এসেছেন এবং সোমবার দিনে ওফাত বরণ করেছেন তাতে কোন সন্দেহ নেই, কেননা এ বিষয়ে সহীহ হাদিস বর্ণিত হয়েছে। রাসূল (ﷺ) এর ওফাত শরীফের তারিখ ১২ই রবিউল আউয়াল নয়, এ সম্পর্কে সর্বশেষ সিদ্ধান্ত দেন -
❏ বিখ্যাত ইতিহাসবিদ আল্লামা ইমাম আবুল কাশেম আব্দুর রহমান সুহাইলী (رحمة الله)। তিনি বলেন,
وَكَيف مَا دارت الْحَال على هَذَا الْحساب فَلم يكن الثَّانِي عشر من ربيع الأول يَوْم الْإِثْنَيْنِ بِوَجْه
-‘‘এই হিসাবের উপর যে কোন অবস্থাই প্রদক্ষিণ করুক, কিন্তু (একই সাথে) ১২ই রবিউল আউয়াল সোমবার ওফাত দিবস কোন মতেই হতে পারে না।’’ (আল্লামা আইনী, উমদাতুল ক্বারী, ১৬/৯৯ পৃ.)
❏ এ বিষয়বস্তুটিই (অভিমত) অতি শক্তিশালী ভাষায় সুপ্রসিদ্ধ মুসলিম দার্শনিক ও ইতিহাস বেত্তা ইমাম মুহাম্মদ শামসুদ্দীন আল-যাহাবী (رحمة الله), ইবনে আসাকির (رحمة الله), ইবনে কাসীর (رحمة الله), ইমাম নূরুদ্দীন আলী ইবনে আহমদ আল সামহুদী (رحمة الله), আলী ইবনে বোরহান উদ্দিন আল হালাবী (رحمة الله), আল্লামা বদরুদ্দিন আইনী (رحمة الله) ও ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) প্রমুখও বর্ণনা করেছেন। ৪১
৪১.
ক. ইমাম যাহাবী : তারিখ-ই-ইসলাম, অধ্যায়: আস সীরাত আন্-নবভিয়্যাহ, পৃষ্ঠা :৩৯৯-৪০০
খ. আল্লামা ইমাম ইবনে জওজী : ওয়াফা আল ওয়াফা : ১ম খণ্ড : ৩১৮ পৃ.
গ. আল্লামা ইবনে কাসীর : বেদায়া ওয়ান নিহায়া : ৫/২৫৬ পৃ.
ঘ. ইমাম বোরহান উদ্দিন হালবী : সিরাতে হালবিয়্যাহ : ৩/৪৭৩ পৃ.
ঙ. আইনী, উমদাতুল ক্বারী, ১৩/১৯১ পৃ. হা/৩৫৩৬
চ. ইবনে হাজার আসকালানী, ফতহুল বারী, ৮/৪৮৩ পৃ. হা/৪৪২৪
মোট কথা, ১২ই রবিউল আউয়াল রাসূল (ﷺ) এর পবিত্র ওফাত দিবস হওয়া কোন মতেই প্রমাণিত হয় না, না যুক্তি-তর্কে, না কোন সুস্পষ্ট দলীলের উদ্ধৃতির ভিত্তিতে, না কোন নির্ভরযোগ্য রাবীর বর্ণনার ভিত্তিতে, না কারো চিন্তা-ভাবনা বা গবেষণার ভিত্তিতে। অবশ্যই “সোমবার” ওফাত শরীফ হওয়ার ব্যাপারে কারো দ্বিমত নেই। এর পক্ষে বুখারী, মুসলিমে প্রমাণ পাওয়া যায়। তাই বলে ১২ই রবিউল আউয়াল রাসূল (ﷺ) এর ওফাত হয়েছে এমন কোন নির্ভরযোগ্য দলীল নেই। এমনকি ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর তার বইয়ের ৫২০-৫২১ পৃষ্ঠায় তা অকপটে স্বীকার করেছেন।
❏ তবে ইমাম বদরুদ্দীন আইনী (رحمة الله) লিখেন-
وَعَن الْخَوَارِزْمِيّ: توفّي صلى الله عَلَيْهِ وَسلم فِي أول يَوْم من ربيع الأول، قَالَ: وَهَذَا أقرب إِلَى الْقيَاس
-‘‘ইমাম খাওয়ারেজমী (رحمة الله) বলেন, রাসূল (ﷺ) রবিউল আউয়াল মাসের ১ তারিখ ওফাত বরণ করেন, তিনি বলেন, এটিই (বিভিন্ন হাদিসের বর্ণনা মতে ১লা রবিউল আউয়াল হওয়াটা) যুক্তিসংঙ্গত।’’ (আল্লামা আইনী, উমদাতুল ক্বারী, ১৬/৯৯ পৃ.)
সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! বুঝা গেল রাসূল (ﷺ)-এর ওফাত শরীফ ১২ তারিখ প্রমাণিত নয়, তাই ঐ তারিখ ওফাত দিবস পালনের কোন যুক্তিকতাই হতে পারে না।
ওফাতুন্নবী (ﷺ) পালন না করার দ্বিতীয় কারণ:
ইসলামী শরীয়তে তিন দিনের বেশী শোক প্রকাশ করা বৈধ নয়। কারণ রাসূল (ﷺ) নিষেধ করেছেন, যাতে কেউ তিন দিনের বেশী শোক পালন না করে। এর প্রমাণে অনেক প্রামাণ্য হাদিসে পাক রয়েছে।
❏ ইমাম বুখারী (رحمة الله) বর্ণনা করেন-
عَنْ حَفْصَةَ، عَنْ أُمِّ عَطِيَّةَ، عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَتْ: كُنَّا نُنْهَى أَنْ نُحِدَّ عَلَى مَيِّتٍ فَوْقَ ثَلاَثٍ، إِلَّا عَلَى زَوْجٍ أَرْبَعَةَ أَشْهُرٍ وَعَشْرًا
-‘‘হযরত হাফসা (رضي الله عنه) তিনি হযরত উম্মে আতিয়্যাহ (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন, তিনি নবী করীম (ﷺ) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে যেন আমরা কোন ওফাত প্রাপ্তের উপর তিনদিনের পর আর শোক প্রকাশ না করি, কিন্তু স্ত্রী তার স্বামীর জন্য (৪ মাস দশদিন পর্যন্ত) শোক প্রকাশ করতে পারে।’’ ৪২
৪২. ইমাম বুখারী, আস-সহীহ, ১/৬৯ পৃ. হা/৩১৩, পরিচ্ছেদ: بَابٌ: الطِّيبُ لِلْمَرْأَةِ عِنْدَ غُسْلِهَا مِنَ المَحِيضِ
বিশ্ববিখ্যাত মুহাদ্দিসীনে কেরাম (এর বিরাট জামাআত) নির্ভরযোগ্য সহীহ সনদ সহকারে এবং সাহাবায়ে কেরাম উম্মাহাতুল মুমিনীন-
১)হযরত আয়েশা সিদ্দীকাহ (رضي الله عنه) ৪৩,
২)হযরত উম্মে সালামাহ (رضي الله عنه) ৪৪,
৩)হযরত যয়নব বিনতে যাহ্শ (رضي الله عنه) ৪৫,
৪)হযরত উম্মে হাবীবাহ (رضي الله عنه) ৪৬,
৫)হযরত হাফসাহ (رضي الله عنه) ৪৭ ,
৬)অনুরূপভাবে উম্মে আতিয়াহ আল আনসারীয়্যাহ (رضي الله عنه) ৪৮ ,
৭)হযরত আবু সাঈদ আল খুদরী (رضي الله عنه)৪৯ ,
৮)হযরত আনাস ইবনে মালিক (رضي الله عنه) ৫০ থেকে সরাসরি নবী করীম (ﷺ) হতে মারফু সূত্রে প্রায় সকল বর্ণনাগুলো কাছাকাছি বচনে হাদিস বর্ণিত আছে।
৪৩. ইমাম ইবনে মাযাহ, আস-সুনান, ৩/২৩০ পৃ. হা/২০৮৫, পরিচ্ছেদ: بَابُ هَلْ تُحِدُّ الْمَرْأَةُ عَلَى غَيْرِ زَوْجِهَا , ইমাম আহমদ, আল-মুসনাদ, ৪৩/২২২ পৃ. হা/২৬১২১
৪৪. ইমাম তাবরানী, মু‘জামুল কাবীর, ২৩/৩৫৮ পৃ. হা/৮৪২
৪৫. ইমাম ইমাম বুখারী, আস-সহীহ, ২/৭৮ পৃ. হা/১২৮২, পরিচ্ছেদ: بَابُ إِحْدَادِ المَرْأَةِ عَلَى غَيْرِ زَوْجِهَا
৪৬. ইমাম ইমাম বুখারী, আস-সহীহ, ২/৭৮ পৃ. হা/১২৮০, পরিচ্ছেদ: بَابُ إِحْدَادِ المَرْأَةِ عَلَى غَيْرِ زَوْجِهَا
৪৭. ইমাম ইবনে আবি শায়বাহ, আল-মুসান্নাফ, ৪/১৯৯ পৃ. হা/১৯২৮৬, ইমাম আহমদ, আল-মুসনাদ, ৪৪/৫০ পৃ. হা/২৬৪৫২ এবং হা/২৬৪৫৪
৪৮. ইমাম বুখারী, আস-সহীহ, ১/৬৯ পৃ. হা/৩১৩, পরিচ্ছেদ: بَابٌ: الطِّيبُ لِلْمَرْأَةِ عِنْدَ غُسْلِهَا مِنَ المَحِيضِ
৪৯. ইমাম মুত্তাকী হিন্দী, কানযুল উম্মাল, ৯/৬৪৯ পৃ. হা/২৭৮১৮
৫০. ইমাম বায্যার, আল-মুসনাদ, ১৩/৩৯ পৃ. হা/৬৩৫০
ওফাতুন্নবী (ﷺ) পালন না করার তৃতীয় কারণ
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আক্বিদা হল, সমস্ত নবীগণ তাদের নিজ নিজ মাজারে জীবিত এবং সেখানে তাঁরা রিযিকপ্রাপ্ত হন। শুধু তাই নয় কুরআনে সূরা বাক্বারায় শহীদগণও জীবিত থাকার কথা বলা হয়েছে।
❏ হযরত আনাস ইবনে মালিক (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন-
الْأَنْبِيَاءُ أَحْيَاءٌ فِي قُبُورِهِمْ يُصَلُّونَ.
-‘‘সমস্ত নবীগণ তাদের মাজারে জীবিত, সেখানে তাঁরা সালাত আদায় করেন।’’ ৫১
৫১.
ক. ইমাম আবূ ইয়ালা, আল মুসনাদ, ৬/১৪৭ পৃ. হা/৩৪২৫
খ. ইমাম বায্যার, আল-মুসনাদ, ১৩/২৯৯ পৃ. হা/৬৮৮৮
গ. ইবনে হাজার হাইসামী, মাযমাউয যাওয়াইদ, ৮/২১১ পৃ.
✦ এ সনদ প্রসঙ্গে আল্লামা ইবনে হাজার হাইসামী (رحمة الله) লিখেন-
رَوَاهُ أَبُو يَعْلَى وَالْبَزَّارُ، وَرِجَالُ أَبِي يَعْلَى ثِقَاتٌ.
-‘‘উক্ত হাদিসটি ইমাম আবূ ই‘য়ালা ও বায্যার বর্ণনা করেছেন, ইমাম আবূ ই‘য়ালার সমস্ত রাবী সিক্বাহ।’’ (ইবনে হাজার হাইসামী, মাযমাউয যাওয়াইদ, ৮/২১১ পৃ.)
সুতরাং রাসূল (ﷺ) যেহেতু হায়াতুন্নবী তাই কোনো মতেই ওফাতুন্নবী পালন করা বৈধ হতে পারে না। তাই ওফাতুন্নবী পালন করা তাদের নীতি যারা রাসূল (ﷺ)-কে হায়াতুন্নবী বিশ্বাস করেন না।
ওফাতুন্নবী (ﷺ) পালন না করার চতুর্থ কারণ:
রাসূল (ﷺ) এর ওফাতের পর থেকে আজ পর্যন্ত কেউ ওফাত দিবস পালন করেছেন তার কোন নযির নেই, পালন করার ব্যাপারে রাসূল (ﷺ) এর আদেশ আছে, তারও কোন প্রমাণ নেই।
❏ এ প্রসঙ্গে মক্কা শরীফের তৎকালীন মুফতী এনায়েত আহমদ (رحمة الله) তার প্রসিদ্ধ তাওয়ারিখে হাবীবে ইলাহ (উর্দু অনুবাদ) গ্রন্থের ১২ নং পৃষ্ঠায় বর্ণনা করেন-
اور بهى علماءے لكها ہے كہ اس محفل ميں ذكر وفات شريف كا نہ چاہے اس لئے كہ يہ محفل واسطے خوشى ميلاد شريف كے منعقد ہوتى ہے ذكر غم جانكاه اس ميں محض نازيبا ہے – حرمين شريف ميں ہرگز اجازت ذكر قصة وفات كى نہیں ہے -
-‘‘আলেম সমাজ এ কথাই লিখেছেন যে, এই মাহফিলে রাসূলের ওফাত শরীফ বা ইন্তেকালের আলোচনা করা ঠিক নয়, এ জন্য যে এ রবিউল আউয়াল মাসে অনুষ্ঠিত মাহফিল মীলাদুন্নবী (ﷺ) এর খুশি উদযাপন করার জন্য অনুষ্ঠিত হয়। বিশেষ করে মক্কা মদীনা শরীফে রাসূল (ﷺ) এর ওফাত শরীফের আলোচনা করার অনুমতি কখনোই ছিল না।’’ ৫২
৫২ .মুফতী এনায়েত আহমদ : তাওয়ারিখে হাবীবে ইলাহ : পৃ: ১২
❏ বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাকার আল্লামা ইমাম কাস্তালানী (رحمة الله) “মাওয়াহেবুল্লা দুন্নীয়া” গ্রন্থে বলেন,
ولا زال أهل الاسلام يحتفلون بشهر مولوده صلى الله عليه وسلم ويعملون الولائم ويتصد قون فى لياليه بانواع الصدقات ويظهرون السرور ويزيدون فى المبرات ويعتنون بقرأة مولده الكريم ويظهر عليهم من بركاته كل فضل عميم –
-‘‘প্রতিটি যুগে মুসলমানগণ নবী করীম (ﷺ) এর বেলাদাত শরীফের মাসে মীলাদ মাহফিলের আয়োজন করে আসছে, উন্নত মানের খাবারের আয়োজন করেন, এর রাতগুলোতে বিভিন্ন ধরণের সাদক্বাহ খায়রাত করেন, আনন্দ প্রকাশ করতে থাকেন, পুন্যময় কাজ বেশি পরিমাণে করার প্রতি গুরুত্ব দিয়ে আসেন। ফলে আল্লাহর অসংখ্য বরকত ও ব্যাপক অনুগ্রহ প্রকাশ পায়।’’ ৫৩
৫৩. আল্লামা ইমাম জুরকানী : শরহুল মাওয়াহেব : ১ম খণ্ড : ২৬২ পৃষ্ঠা
❏ উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস আল্লামা শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলভী (رحمة الله) ‘ফয়যুল হারামাঈন’ কিতাবে বলেন,
وكنت قبل ذلك بمكة المسظمة فى مولد النبى صلى الله عليه وسلم فى يوم ولادته والناس يصلون على النبى صلى الله عليه وسلم ويذكرون ارهاصاته التى ظهرت فى وقت ولادته ومشاهده قبل بعثته فرأيت انوارا-
-‘‘আমি এর পূর্বে মক্কা মুআয্যামায় বেলাদত শরীফের বরকতময় ঘরে বেলাদাত শরীফের তারিখে উপস্থিত ছিলাম। আর সেখানে হাজার হাজার লোকজন সমবেত হয়ে হুযূর (ﷺ) এর উপর একত্রে দরূদ শরীফ পাঠ করে তাঁর মীলাদ বা শুভাগমনের সময়ের অলৌকিক ঘটনাবলী আলোচনা করছিলেন। তারপর আমি সেখানে এক মিশ্র নূরের ঝলক প্রত্যক্ষ করছিলাম।’’ ৫৪
৫৪. আল্লামা শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলভী : ফয়যুল হারামাঈন : ১৪২ পৃ.
অতএব বুঝা গেল, রাসূল (ﷺ) এর যামানা থেকে শাহ ওয়ালী উলাহ মুহাদ্দিস (رحمة الله) পর্যন্ত মীলাদুন্নবী পালন হতো, ওফাতুন্নবী নয়, আর মক্কা ও মদীনা শরীফের বর্তমানে ওহাবী মতবাদী সরকার সেখানে মীলাদ পাঠ বন্ধ করে দিয়েছে। তবে কিছু কিছু স্থানে এখনও হয়ে থাকে।
ওফাতুন্নবী (ﷺ) পালন না করার পঞ্চম কারণ
সর্বশেষ বলতে চাই, রাসূল (ﷺ) এর ওফাত শরীফও আমাদের জন্য নেয়ামত স্বরূপ।
❏ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি রাসূল (ﷺ) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন,
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ ؓ، .....وَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ : حَيَاتِي خَيْرٌ لَكَمْ تُحْدِثُونَ وَيُحَدَثُ لَكَمْ، وَوَفَاتِي خَيْرٌ لَكَمْ تُعْرَضُ عَلَيَّ أَعْمَالُكُمْ، فَمَا رَأَيْتُ مِنْ خَيْرٍ حَمَدَتُ اللَّهَ عَلَيْهِ، وَمَا رَأَيْتُ مِنْ شَرٍّ اسْتَغْفَرْتُ اللَّهَ لَكَمْ-
-‘‘আমার হায়াত তোমাদের জন্য উত্তম বা নেয়ামত স্বরূপ। কেননা আমি তোমাদের সাথে কথা বলি তোমরাও আমার সাথে কথা বলতে পারছ। এমনকি আমার ওফাতও তোমাদের জন্য উত্তম বা নেয়ামত স্বরূপ। কেননা তোমাদের আমল আমার নিকট পেশ করা হবে, ফলে যদি তোমাদের কোন ভাল আমল আমি করতে দেখবো তখন তা দেখে আল্লাহর নিকট প্রশংসা করবো, আর তোমাদের মন্দ কাজ দেখবো তখন আল্লাহর দরবারে তোমাদের জন্য গুনাহ মাফের ক্ষমা প্রার্থনা করবো।’’ ৫৫
৫৫. বায্যার, আল-মুসনাদ, ৫/৩০৮ পৃ. হা/১৯২৫, ইমাম সুয়ূতি, জামিউস সগীর, ১/২৮২ পৃ. হা/৩৭৭০-৭১, আল্লামা ইবনে কাছির, বেদায়া ওয়ান নিহায়া, ৪/২৫৭ পৃ., আল্লামা মুত্তাকী হিন্দী, কানযুল উম্মাল, ১১/৪০৭ পৃ. হা/৩১৯০৩, ইমাম ইবনে জওজী, আল-ওফা বি আহওয়ালি মোস্তফা, ২/৮০৯-৮১০ পৃ., আল্লামা ইবনে কাছির, সিরাতে নববিয়্যাহ, ৪/৪৫পৃ.
✦ উক্ত হাদিস প্রসঙ্গে ইমাম নুরুদ্দীন ইবনে হাজার হাইসামী (رحمة الله) বলেন-
رَوَاهُ الْبَزَّارُ، وَرِجَالُهُ رِجَالُ الصَّحِيحِ
-‘‘উক্ত হাদিসের সমস্ত রাবী বুখারীর বর্ণনাকারীর ন্যায়।’’ (হাইসামী, মাযমাউয-যাওয়াইদ, ৯/২৪ পৃ. হা/১৪২৫০)
তাই বুঝা গেল হাদিসটি সহীহ। ইমাম সুয়ূতি (رحمة الله) তিনি তাঁর গ্রন্থে উক্ত হাদিসটির দু‘টি সনদ উল্লেখ করে একে সহীহ বলেছেন। সর্বশেষ, আমি এ বিষয়ে দেওবন্দী এক মৌলভীর উদ্ধিৃতি দিয়ে আলোচনা ইতি টানবো ইন শা আল্লাহ। তথাকথিত কওমী আলেমদের মান্যবড় মুফতি মুহাম্মদ ইদরীস কাসেমী ওফাত দিবস পালন সম্পর্কে বলেন ‘‘ইসলামী শরীয়তে যাবতীয় জন্মবার্ষিকী, মৃত্যুবার্ষিকী পালনের কোন সম্পর্ক নেই।’’(নবী প্রেমের সমাপ্তি কিসে? পৃ.৪৪, ইদরীসিয়া ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট পলবী, মিরপুর, ঢাকা, প্রকাশ ২০১২) তাই ওলীপুরীকে তার কথা থেকে শিক্ষাগ্রহণ করার জন্য অনুরোধ রইল।