বিবাহ-শাদীর ক্ষেত্রে সমমর্যাদা


আল্লাহ তা‘আলা পৃথিবীতে প্রত্যেক বস্তুকে জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছেন। কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা বলেন-

 وَمِنْ كُلِّ شَيْءٍ خَلَقْنَا زَوْجَيْنِ 

আর প্রত্যেক বস্তুকে আমি জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছি।৩৪

৩৪.সূরা যারিয়াত, আয়াত: ৪৯

 

মানুষের বেলায়ও নর ও নারী সৃষ্টি করেছেন। যৌন ক্ষুধা উপশমের জন্য নারী পুরুষ একে অপরের প্রতি মুখাপেক্ষী এবং মানব বংশ বিস্তারের ক্ষেত্রেও একে অপরের প্রতি মুখাপেক্ষী। বিয়ের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ একে অপরকে পছন্দ করার বেলায়ও ইসলাম উভয়কে সমান অধিকার দান করেছে। ইসলামী বিয়েতে বর-কনে উভয়ের অনুমতি প্রযোজ্য। এমনকি নিজের পিতা বা অভিভাবক কনের অনুমতি ছাড়া তার ইচ্ছার বিরোদ্ধে বিবাহ দিলে ইসলাম তাকে বিবাহ বহাল রাখা কিংবা ভেঙ্গে দেয়ার ইখতিয়ার দিয়েছে।


মানুষ হিসাবে সমমর্যাদা


মানুষ বলতে নারী-পুরুষ উভয়ের সমষ্টিকে বুঝায়। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে-

 يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّا خَلَقْنَاكُمْ مِنْ ذَكَرٍ وَأُنْثَى وَجَعَلْنَاكُمْ شُعُوبًا وَقَبَائِلَ 

হে মানবজাতি! আমি তোমাদের সৃষ্টি করেছি এক পুরুষ ও এক নারী থেকে। এরপর তোমাদেরকে জাতি ও গোত্র বানিয়েছি যেন তোমরা একে অপরকে চিনতে পার। ৩৫

৩৫.সূরা হুজরাত, আয়াত: ১৩

 

উক্ত আয়াতে ঘোষিত হয়েছে যে, সকল মানবমণ্ডলীকে এক পিতা হযরত আদম (عليه السلام) ও এক মাতা হযরত হুাওয়া (عليه السلام) থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। এদিক দিয়ে হযরত আদম (عليه السلام) হলেন সকল নর-নারীর পিতা এবং হযরত হাওয়া (عليه السلام) হলেন সকল নর-নারীর মাতা। আর এই দু’জন ব্যতিত বাকী সকল মানবজাতি একে অপরের ভাই-বোন সম্পর্কীয়। এ যেন একই সত্ত্বার দু’টি রূপ। সুতরাং মানুষ হিসাবেও ইসলামে নারী-পুরুষ সমান বিবেচ্য।


পারিবারিক বিষয়ে সমমর্যাদা


পারিবারিক যে কোন বিষয়ে পুরুষ বুদ্ধিমতি ও বিজ্ঞ নারীর সাথে পরামর্শ ও মতবিনিময়ের মাধ্যমে কার্য সম্পাদন করলে সফলতা ও পারিবারিক সুখ-শান্তি সমৃদ্ধি হয়। এবং পরিবারে স্বৈরচারী শাসনের বিলুপ্ত ঘটে। সন্তানকে দুধপান করানোর সীমা নির্ধারণ, সন্তানের সুস্বাস্থ্য, লেখা-পড়া এবং বিয়ে-শাদীর বিষয়ে স্বামী-স্ত্রীর সাথে পরামর্শ ও মতামত প্রকাশ করার নারীর পূর্ণ অধিকার রয়েছে ইসলামে। 


মক্কার কুরাইশদের সাথে হুদায়বিয়ার সন্ধির সময় মুসলমানরা উমরা করতে পারেনি বিধায় মনক্ষুন্ন ছিলেন তারা। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সে সময় মুসলমানদেরকে কুরবানী দেয়ার আদেশ দিলে সাহাবীগণ কেউ তা করলেন না। তাদের অবস্থা দেখে রাসূলুল্লাহ ভীষম চিন্তিত হয়ে পড়লেন। এ ব্যাপারে তিনি এ বিষয়ে তাঁর সফর সঙ্গীনী স্ত্রী হযরত উম্মে সালমা (رضي الله عنه)’র কাছে পরামর্শ চাইলেন। তিনি তাঁকে সান্তনা দিয়ে পরামর্শ দিলেন যে, আগে আপনি কুরবাণী দিন। তারপর আপনার দেখা দেখিতে তারাও কুরবানী দিবেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তার পরামর্শ মতে কাজ শুরু করলে সাহবীগণও তাঁকে অনুসরণ করলেন এবং সামস্যা সমাধান হয়ে গেল।


যিনি ওহীর ধারক-বাহক তাঁর কারো পরামর্শের প্রয়োজন নেই। তবুও তিনি পরামর্শ করে জাতিকে শিক্ষা দিয়েছেন যেন তারাও তাঁর অনুসরণার্থে নারী-পুরুষ  কোন ভেদাভেদ না করে পরিবারে সবাইকে সমান গুরুত্ব দেয়। এতে নারী নিজেকে অসহায় বোধ করবেনা বরং পারিবারিক কাজে নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ ও দায়িত্ববান মনে করে নিজেকে পারিবারিক কাজে সম্পূর্ণরূপে উৎসর্গ করবে।


আমাদের সমাজে কিছু পুরুষকে দেখা যায় যে, তারা স্ত্রী কিংবা নারী জাতিকে পাত্তাই দিতে চায়না। নারীদেরকে কেবল রান্নাঘর ও বেডরুমের মধ্যে সীমাবদ্ধ করে রাখতে চায়। পরিবারে অনেক বিষয়ে নারীর গ্রহণযোগ্য ও যুক্তিসংগত পরামর্শ ও মত থাকলেও অগ্রাহ্য হবে ভেবে বলে না। ফলে অনেক ক্ষেত্রে পরিবারে অশান্তি সৃষ্টি হয়। পরিবার ক্ষতি ও বিপদগ্রস্থ হয়।


মানব সমাজের মূলভিত্তি হলো পরিবার। পরিবারের কেন্দ্রস্থল পরিবার কর্তার-স্ত্রী নিজে। পরিবারের ভিত্তি সুদৃঢ় হলে সমাজের বুনিয়াদ মযবুত হয়ে থাকে। এই পরিবারের দৃঢ়তার কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে নারী বা গৃহকর্ত্রী। সুতরাং একটি শান্তিপূর্ণ ও সুশিক্ষিত এবং আদর্শ সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজন একজন চরিত্রবান, আদর্শবান, সুশিক্ষিতা ও সুস্থ নারী।


বিশ্ব সমাজের প্রাথমিক ইউনিট পরিবার যত স্বচ্ছ, নিষ্ঠাবান ও আদর্শ হবে মানব সমাজের সামগ্রিক ইউনিট বিশ্ব সমাজও হবে ততই সুন্দর, আদর্শবান ও মানবতার মূর্ত প্রতীক। আর তেমন একটি পরিবার ও সমাজ গড়ে উঠতে পারে একজন সৎ, চরিত্রবান ও আদর্শ নারীর মাধ্যমে।

Top