কোরবানী সম্পর্কে আরো কতিপয় মাসআলা



মাসআলাঃ কোরবানীর জন্তুর চামড়া সদকা করে দেবে। কেননা চামড়াও উহার অংশ। অথবা চামড়া সংশোধন করে ঘরে ব্যবহার করবে এ জন্য যে, চামড়া থেকে ফায়িদা হাসিল করা হারাম নয়। চামড়া বিক্রি করা যদিও জায়েয কিন্তু তা মাকরুহ কেননা মালিকানা বিদ্যমান আছে এবং দিয়ে দেয়ার উপরও ক্ষমতা রাখে কেননা হুজুর (ﷺ) বলেছেন- যে ব্যক্তি কোরবানীর চামড়া বিক্রি করেছে তার কোন কোরবানী হয়নি। ১৫৬

 ➥১৫৬. সুনানে বায়হাক্বী, ৯ম খণ্ড, ২৯৪পৃষ্ঠা।


মাসআলাঃ কসাই এর পারিশ্রমিক কোরবানীর জন্তু থেকে দিতে পারবে না। কেননা হযরত সায়্যিদুনা মাওলা আলী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন রাসূল (ﷺ) আমাকে জন্তু দেখা-শুনা এবং উহার চামড়া ও কাপড় সমূহ বন্টন করার জন্য আমাকে দায়িত্ব দিয়েছেন এবং আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন যে, আমি যেন কসাইকে উহার মধ্য থেকে কিছু না দিয়ে থাকি এবং বলেছেন আমরা যেন কসাইকে নিজের পক্ষ থেকে দিয়ে থাকি। ১৫৭

 ➥১৫৭. সুনানে বায়হাক্বী, ৯ম খণ্ড, ২৯৪পৃষ্ঠা।


অতএব, যদি সে ফকীর হয়ে থাকে তাহলে আমরা উহার মধ্য থেকে তাকে দিব এবং তাকে তার পারিশ্রমিক দেয়া হয়েছে।


মাসআলাঃ লোম বিশিষ্ট জন্তুর লোম যবেহ করার পূর্বে কাটা এবং উহা দ্বারা উপকৃত হওয়া মাকরূহ।


মাসআলাঃ উত্তম হল- কোরবানীর জন্তু নিজের হাতে যবেহ করা যদি যবেহ করার নিয়ম ভালভাবে জানা থাকে। কেননা হযরত আনাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেছেন- রাসূল (ﷺ) দুই শিং বিশিষ্ট ভেড়া কাল সাদা রঙের কোরবানী করেছেন উহাকে নিজ হাত দ্বারা যবেহ করেছেন ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবর’ বলে নিজ পা উহার ঘাড়ের উপর রাখলেন।১৫৮  

 ➥১৫৮. সহীহ মুসলিম শরীফ, ৩য় খণ্ড, ৫৫৬পৃষ্ঠা।

 

মাসআলাঃ যদি ভালভাবে যবেহ করতে না জানে তাহলে উত্তম হল অন্যের সাহায্য-সহযোগীতা নেয়া এমতাবস্থায় নিজে উপস্থিত থাকা উচিত। কেননা হুজুর (ﷺ) বলেছেন- হে ফাতিমা তুমি নিজ কোরবানীর জন্তুর দিকে অগ্রসর হও এবং উহার সামনে উপস্থিত থাক, তাহলে রক্তের প্রথম ফোটার সময়ে তোমার সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। আর তুমি এরূপ বল আমার নামায ও আমার কোরবানী আমার জীবন ও মরণ সমগ্র বিশ্বের প্রতিপালকের জন্য তাঁর কোন শরীক নেই এবং ঐ ব্যাপারে আমাকে আদেশ দেয়া হয়েছে এবং প্রথম মুসলমানদের অন্তর্ভূক্ত। 


হযরত ইমরান বিন হোসাইন (رضي الله عنه) বলেছেন- আমি আরয করলাম হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ) এটা কি আপনার ও আপনার পরিবারের জন্য? উহার আহাল আপনি নাকি সমস্ত মুসলমান? 


হুজুর (ﷺ) বলেছেন নয়, বরং এ হুকুম সমস্ত মুসলমানদের জন্য।  ১৫৯

➥১৫৯. আল মুসতাদরক, ৪র্থ খণ্ড, ২৩৩পৃষ্ঠা।

 

মাসআলাঃ আহলে কিতাব দ্বারা কোরবানীর জন্তু যবেহ করা মাকরূহ। কেননা কোরবানী নৈকট্য লাভের একটি আমল। আর আহলে কিতাব উহার যোগ্য নয়। ১৬০

➥১৬০. ফিক্বহে হানাফী, ৩য় খণ্ড, ১৯৬পৃষ্ঠা।


মাসআলাঃ যে ব্যক্তি অন্যের কোরবানীর জন্তু ছাগল ডাকাতি করেছে অতপর উহা কোরবানী দিয়ে দিয়েছেন তাহলে সে উহার জরিমানা দিতে হবে এবং তার কোরবানী জায়েয হবে।


মাসআলাঃ যদি কোরবানীর জন্তু আমানত রেখে দিয়েছে, অতএব, আমানতদার ব্যক্তি উক্ত জন্তু কোরবানী করে দিয়েছে, তাহলে জরিমানা দিতে হবে এবং তার কোরবানী জায়েয হবেনা। কেননা যবেহ করার পরেই তার মালিকানা সাব্যস্থ হবে।


মাসআলাঃ যদি ভুলক্রমে একে অন্যের জন্তু যবেহ করে দেয় তাহলে উভয়ের পক্ষ থেকে যথেষ্ট হবে এবং উভয়ের উপর জরিমানা হবে না। কেননা প্রত্যেকটি জন্তু কোরবানীর জন্য নির্ধারিত ছিল। আর প্রত্যেকের উপর ওয়াজিব ছিল যে, সে কোরবানীর দিবস সমূহের মধ্যে উক্ত জন্তুরই কোরবানী করবে। আর অন্যের সাথে পরিবর্তন করা মাকরূহ। অতএব উক্ত মাসয়ালাতে প্রত্যেক ব্যক্তি যবেহ করানোর ক্ষেত্রে অপরের সাহায্য প্রার্থী হয়ে গেল। ১৬১

➥১৬১. ফিকহে হানাফী, ৩য় খণ্ড, ১৯৬পৃষ্ঠা।


[আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলই অধিক জ্ঞাত]


মাসআলাঃ যদি কোন ব্যক্তি বিছমিল্লাহ্ বলার ইচ্ছায় ‘আলহামদু লিল্লাহ’ বা ‘সুবহানাল্লাহ’ বলে যবেহ করে তাহলে যবেহকৃত প্রাণী হালাল হবে। যদি কোন ব্যক্তি যবেহ করার সময় ‘আল্লাহুম্মা তাক্বাব্বাল মিন ফুলানিন’ বলে তাহলে এটা খেলাফে সুন্নাত কেননা এটা কোরবানীর সময় সুন্নাত।


মাসআলাঃ নাবালেগ শিশুর মাল-সম্পদ থেকে সর্ব-সম্মতিক্রমে তথা ঐকমত্যের ভিত্তিতে কোরবানি করা ওয়াজিব নয়। কেননা কোরবানি হচ্ছে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা, কাজেই নাবালেগ ছেলের সম্পদ তার সাথে সম্পৃক্ত করা হবে না। ১৬২

 ➥১৬২. ফিকহে হানাফী, ৩য় খণ্ড, ১৯ পৃষ্ঠা।


মাসআলাঃ ফকির ও মোসাফিরের উপর কোরবানী ওয়াজিব নয়। ফকিরের উপর কোরবানী না হওয়াটার কারণ সুস্পষ্ট। আর মোসাফিরের উপর কোরবানী এজন্যই ওয়াজিন নয় যে, কোরবানী আদায় করাটা এমন কিছু সুনির্দিষ্ট বস্তুর সাথে সংশ্লিষ্ট, যা মোসাফিরের ক্ষেত্রে কষ্টকর ও দুসাধ্য। আর যেহেতু কোরবান নির্দিষ্ট তারিখে আদায় করতে হয়, নির্দিষ্ট তারিখ অতিবাহিত হওয়ার পর কোরবানী করা রহিত হয়ে যায়।


মাসআলাঃ হযরত সৈয়্যদুনা শেরে খোদা আলী মর্তুজা রাদ্বিআল্লাহু তাআলা আনহু হতে বর্ণিত আছে যে, মোসাফিরের উপর জুমার নামাজ ওয়াজিব নয় এবং কোরবানী করাও ওয়াজিব নয়। ১৬৩

 ➥১৬৩. নসবুর রেআয়া ২১১পৃষ্ঠা।


মাসআলাঃ যদি কেউ বন্যপ্রাণী যেমন- হরিণ অথবা নীল তথা লাল গাভী (যা জঙ্গলে থাকে) দ্বারা কোরবানী করে, তা জায়েয হবে না। হ্যাঁ যদিওবা তা পালিত হউক না কেন।


মাসআলাঃ কোরবানী করার নিয়ম হচ্ছে- কোরবানীর পশু এমন ভাবে শোয়াবে যাতে করে পশুর মুখ কেবলার দিকে হয়। অতঃপর নিম্নের দোয়াটি পাঠ করবে।


إِنِّي وَجَّهْتُ وَجْهِيَ لِلَّذِي فَطَرَ السَّمَوَاتِ وَالْأَرْضَ حَنِيفًا مُسْلِمًا وَمَا أَنَا مِنْ الْمُشْرِكِينَ إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ لَاشَرِيكَ لَهُ وَبِذَلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَا أَوَّلُ الْمُسْلِمِينَ، اللَّهُمَّ مِنْكَ وَلَكَ . 


অতপর بسم الله الله اكبر বলে ছুরি গলার উপর দিয়ে চালিয়ে যবেহ করবে। ১৬৪

 ➥১৬৪. ইসলামী ফিক্বহ, পৃষ্ঠা-৫২৫।


মাসআলাঃ কোরবানী করাটা একমাত্র আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে হওয়া আবশ্যক। অর্থাৎ সাওয়াব অর্জন এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি হাসিল করা। কেবলমাত্র কোরবানী করাটা তো মাংস খাওয়ার উদ্দেশ্যে যেন না হয়।

Top