দশম অধ্যায়


ঘরে প্রবেশ এবং বের হওয়া


 ১। ঘরে প্রবেশের সময় আল্লাহ ﷻ'র  নাম স্মরণ করা-  


 ‘যখন একজন ব্যক্তি ঘরে প্রবেশ করে এবং প্রবেশ করার সময় আল্লাহ ﷻ'র  নাম নেয় এবং খাবার সময়, শয়তান বলে (অন্য শয়তানকে) তোমাদের জন্য কোন বাসস্থান ও নেই এবং কোন খাবারও নয়।’ ১


عَنْ جَابِرٍ، أَنَّهُ سَمِعَ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ‏:‏ إِذَا دَخَلَ الرَّجُلُ بَيْتَهُ، فَذَكَرَ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ عِنْدَ دُخُولِهِ، وَعِنْدَ طَعَامِهِ، قَالَ الشَّيْطَانُ‏:‏ لاَ مَبِيتَ لَكُمْ وَلاَ عَشَاءَ، وَإِذَا دَخَلَ فَلَمْ يَذْكُرِ اللَّهَ عِنْدَ دُخُولِهِ قَالَ الشَّيْطَانُ‏:‏ أَدْرَكْتُمُ الْمَبِيتَ، وَإِنْ لَمْ يَذْكُرِ اللَّهَ عِنْدَ طَعَامِهِ قَالَ الشَّيْطَانُ‏:‏ أَدْرَكْتُمُ الْمَبِيتَ.


জাবের رضي الله عنه থেকে বর্ণিত। তিনি নবী ﷺ-কে বলতে শুনেছেনঃ কোন লোক তার ঘরে প্রবেশকালে এবং তার আহার গ্রহণকালে মহামহিম আল্লাহ ﷻ-কে স্মরণ করলে, শয়তান (তার সাঙ্গপাঙ্গকে) বলে, তোমরা রাত যাপনের স্থান ও রাতের আহার থেকে বঞ্চিত হলে। সে তার ঘরে প্রবেশকালে আল্লাহ ﷻ-কে স্মরণ না করলে শয়তান বলে, তোমরা রাত কাটানোর জায়গা পেয়ে গেলে। সে তার আহার গ্রহণকালে আল্লাহ ﷻ-কে স্মরণ না করলে শয়তান বলে, তোমাদের রাত কাটানোর জায়গা এবং রাতের আহার উভয়ের ব্যবস্থা হয়ে গেলো।” 


(মুসলিম, হাকিম, ইবনে হিব্বান, আবু আওয়ানা)



 ২। ঘরে প্রবেশের দো’আ পাঠ করা-


اَللهُمَّ اِنّيْ اَسْاَلُكَ خَيْرَ الْمَوْلَجِ وَ خَيْرَ المَخْرَجِ بِسْمِ اللهِ وَ بِسْمِ اللهِ لَجْنَا وخَرَجْنا وَعَلى ربِّنَا تَوَكَّلْنَا.


উচ্চারণঃ- আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা খায়রাল মাওলিজি ওয়া খায়রাল মাখরিজী বিসমিল্লাহি ওয়া বিসমিল্লাহি লাজনা ওয়া খারাজনা ওয়া আ'লা রাব্বিনা তাওয়াক্কালনা।


অর্থঃ‘ হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট সর্বোত্তম প্রবেশ এবং সর্বোত্তম বের হওয়া কামনা করি। আল্লাহ ﷻ'র  নামেই আমরা প্রবেশ করি এবং আল্লাহ ﷻ'র  নামেই আমরা বের হই এবং আমাদের রবের প্রতি আমরা তাওয়াক্কাল করি....অতঃপর ঘরের অধিবাসীদেরকে সালাম দেয়া।’ 


حَدَّثَنَا ابْنُ عَوْفٍ، حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ إِسْمَاعِيلَ، قَالَ حَدَّثَنِي أَبِي، - قَالَ ابْنُ عَوْفٍ وَرَأَيْتُ فِي أَصْلِ إِسْمَاعِيلَ - قَالَ حَدَّثَنِي ضَمْضَمٌ، عَنْ شُرَيْحٍ، عَنْ أَبِي مَالِكٍ الأَشْعَرِيِّ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ إِذَا وَلَجَ الرَّجُلُ فِي بَيْتِهِ فَلْيَقُلِ اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ خَيْرَ الْمَوْلِجِ وَخَيْرَ الْمَخْرَجِ بِسْمِ اللَّهِ وَلَجْنَا وَبِسْمِ اللَّهِ خَرَجْنَا وَعَلَى اللَّهِ رَبِّنَا تَوَكَّلْنَا ثُمَّ لْيُسَلِّمْ عَلَى أَهْلِهِ ‏"‏ ‏.


আবূ মালিক আল-আশ’আরী رضي الله عنه থেকে বর্ণিতঃ:


তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ ﷺ  বলেছেন: যখন কেউ নিজ ঘরে প্রবেশ করবে তখন সে যেন বলে: (অর্থ) “হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট আগমন ও প্রস্থানের কল্যান চাই। আপনার নামে আমি প্রবেশ করি ও বের হই এবং আমাদের রব আল্লাহ ﷻ'র  উপর ভরসা করি”। অতঃপর সে যেন তার পরিবারের লোকদের সালাম দেয়।


(সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৫০৯৬)



 ৩। মিসওয়াক করা।


وَحَدَّثَنِي أَبُو بَكْرِ بْنُ نَافِعٍ الْعَبْدِيُّ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّحْمَنِ، عَنْ سُفْيَانَ، عَنِ الْمِقْدَامِ بْنِ شُرَيْحٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ عَائِشَةَ، أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم كَانَ إِذَا دَخَلَ بَيْتَهُ بَدَأَ بِالسِّوَاكِ ‏.‏


‘আয়িশাহرضي الله عنه থেকে বর্ণিতঃ:


নবী ﷺ  (বাইরে থেকে এসে) বাড়িতে প্রবেশ করে সর্বপ্রথম মিসওয়াক করতেন। 


(সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৪৭৯) (ই.ফা.৪৮২)



 ৪। সালাম দেয়া। 


فَاِذَا دَخَلۡتُمۡ بُیُوۡتًا فَسَلِّمُوۡا عَلٰۤی اَنۡفُسِکُمۡ تَحِیَّۃً مِّنۡ عِنۡدِ اللّٰہِ مُبٰرَکَۃً  طَیِّبَۃً ؕ کَذٰلِکَ یُبَیِّنُ اللّٰہُ لَکُمُ الۡاٰیٰتِ لَعَلَّکُمۡ تَعۡقِلُوۡنَ.


অতঃপর  যখন   কোন  ঘরে    প্রবেশ  করো   তখন    আপন লোকদের   প্রতি   সালাম   করো   সাক্ষাতের   সময়   মঙ্গল  কামনা   স্বরূপ,  (যা)  আল্লাহ‌র  নিকট  থেকে  কল্যাণময়,  পবিত্র। এভাবেই  আল্লাহ‌ তোমাদের নিকট আয়াতসমূহ  বিশদভাবে বর্ণনা করেন, যাতে তোমরা বুঝতে পারো।


(সূরা, আন নুর ২৪ঃ৬১)।



 ৫। নিন্মের দো’আ পাঠ করে ঘর থেকে বে হওয়াঃ


بِـسْـمِ الـلـهِ تَـوَكَّـلْـتُ عَـلَـى الـلـهِ لاَ حَـوْلَ وَلاَ قُــوَّةَ اِلاَّ بِـالـلـهِ


উচ্চারণঃ- বিসমিল্লাহি তাওয়াক্কালতু আ'লাল্লাহি লা হাওলা ওয়া লা ক্বুওয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহি।


অর্থঃ ‘আল্লাহ ﷻ'র  নামে, আমি আল্লাহ ﷻ'র ই উপর তাওয়াক্কাল করছি এবং আল্লাহ ব্যতীত কোন সামর্থ এবং শক্তি নেই।’


 যে এটা বলে তাকে বলা হয়ঃ


 ‘তোমার জন্য যথেষ্ট হবে এবং তুমি নিরাপত্তা পাবে এবং শয়তান পশ্চাদপসরণ করেছে।’ 


حَدَّثَنَا ابْنُ عَوْفٍ، حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ إِسْمَاعِيلَ، قَالَ حَدَّثَنِي أَبِي، - قَالَ ابْنُ عَوْفٍ وَرَأَيْتُ فِي أَصْلِ إِسْمَاعِيلَ - قَالَ حَدَّثَنِي ضَمْضَمٌ، عَنْ شُرَيْحٍ، عَنْ أَبِي مَالِكٍ الأَشْعَرِيِّ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ إِذَا وَلَجَ الرَّجُلُ فِي بَيْتِهِ فَلْيَقُلِ اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ خَيْرَ الْمَوْلِجِ وَخَيْرَ الْمَخْرَجِ بِسْمِ اللَّهِ وَلَجْنَا وَبِسْمِ اللَّهِ خَرَجْنَا وَعَلَى اللَّهِ رَبِّنَا تَوَكَّلْنَا ثُمَّ لْيُسَلِّمْ عَلَى أَهْلِهِ ‏"‏ ‏.


আবূ মালিক আল-আশ’আরী رضي الله عنه থেকে বর্ণিতঃ:


তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ ﷺ  বলেছেন: যখন কেউ নিজ ঘরে প্রবেশ করবে তখন সে যেন বলে: (অর্থ) “হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট আগমন ও প্রস্থানের কল্যান চাই। আপনার নামে আমি প্রবেশ করি ও বের হই এবং আমাদের রব আল্লাহ ﷻ'র  উপর ভরসা করি”। অতঃপর সে যেন তার পরিবারের লোকদের সালাম দেয়।


(সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৫০৯৬ এবং আত তিরমিজি, হা/ ৩৪২৬)



৬। যখন ঘর থেকে বের হবেন তখন এই দুআ পড়ুন “বিসমিল্লাহি তাওক্কাল্তু আলাল্লাহি লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহি” অনুবাদঃ - আল্লাহর নামে আরম্ভ, আমি আল্লাহর উপর ভরসা করছি। আল্লাহ প্রদত্ত ক্ষমতা ব্যতীত কোন সামর্থ্য ও শক্তি নেই। 


(আবু দাউদ, খন্ড-৪, পৃ-৪২০, হাদীস নং-৫০৯৫) 


ইনশা’আল্লাহ্  এ দুআ পড়ার বরকতে সঠিক পথে থাকবে বিপদ আপদ থেকে মুক্ত থাকবে। আল্লাহর সাহায্যের আওতায় থাকবে। ঘরে প্রবেশের দুআঃ- 

“আল্লাহুম্মা ইন্নী আস্আলুকা খাইরাল্ মাউলাযী ওয়া খাইরাল মাখরাযী বিসমিল্লাহি ওয়ালায্না ওয়াবিস্মিল্লাহি খারায্না ওয়া আলাল্লাহি রাব্বিনা তাওক্কালনা ”।


অনুবাদঃ হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট প্রবেশকালে এবং বের হওয়ার সময় মঙ্গল প্রার্থনা করছি আল্লাহর নামে আমি (ঘরে) প্রবেশ করছি এবং তারই নামে বের হই এবং আপন প্রভুর উপর আমরা ভরসা করছি। 


(প্রাগুক্ত, হাদীস-৫০৯৬)


৭। এ দুটি পড়ে ঘরের অধিবাসীদের সালাম করুন। অতঃপর নবী করিম ﷺ এর দরবারে সালাম পেশ করুন এরপর সুরা ইখলাস পাঠ করুন ইনশা’আল্লাহ্  ঘরে বরকত ও পারিবারিক কলহ থেকে মুক্ত থাকবে।


৮। নিজের ঘরে আসা যাওয়াতে মুহরিম মুহরিমাদেরকে (যেমন মা-বাবা, ভাই- বোন, সন্তান-সন্ততি ইত্যাদি) সালাম করুন।


৯। আল্লাহর নাম নেওয়া বিভিন্ন যেমন “বিসমিল্লাহ” বলা ব্যতীত যে ব্যক্তি ঘরে প্রবেশ করবে শয়তানও তার সাথে প্রবেশ করে।


১০। যদি এমন ঘরে (চাই নিজের খালি ঘরে হোক) যাওয়া হয় যাতে কেউ নেই তবে এভাবে বলুন ঃ “আস্সালামু আলাইকা ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিচ্ ছোয়ালিহিন্ ” (অর্থাৎ আমাদের ও আল্লাহর নেক বান্দাদের উপর সালাম) ফিরিশতা এ সালামের উত্তর প্রদান করে। 


(দুররুল মুখতার, খন্ড-৯ম, পৃ-৬৮২) 


অথবা এভাবে বলুন “আস্সালামু আলাইকা ইয়া আইয়্যুহান্নাবীয়্যু ” (হে নবী আপনার উপর সালাম) কেননা হুযুর নবী করিম ﷺ এর নজর মুবারক প্রতিটি মুসলমানের ঘরে উপস্থিত থাকে। 


(বাহারে শরীয়াত, খন্ড-১৬তম, পৃ-৯৬, শরহুস শিফা লিল কারী খন্ড-২য়, পৃ-১১৮)


১১। যখনই কারো ঘরে প্রবেশ করতে চান তখন এভাবে বলুন “আস্সালামু আলাইকুম ” আমি কি ভিতরে আসতে পারি ?


১২। যদি ভিতরে যাওয়ার অনুমতি পাওয়া না যায় সন্তুষ্টচিত্তে ফিরে যান হতে পারে কোন অপরাগতার কারণে ভিতরে আসার অনুমতি দেয় নি।


১৩। যখন আপনার ঘরে কেউ করাঘাত করে তবে সুন্নাত হচ্ছে এভাবে জিজ্ঞাসা করা কে? করাঘাতকারীর উচিত যে নিজের নাম বলা যেমন বলুন, মুহাম্মদ ইলইয়াস নাম বলার পরিবর্তে মাদীনা, আমি! দরজা খুলুন ইত্যাদি বলা সুন্নাত নয়।


১৪। উত্তরে নাম বলার পর দরজা থেকে সরে দাঁড়ান যাতে দরজা খুলতেই ঘরের ভিতরে দৃষ্টি না পড়ে।


১৫। কারো ঘরে উঁকি মারা নিষেধ। অনেকের ঘরের সামনে নিচে অন্যান্য ঘর থাকে সুতরাং ব্যালকনি ইত্যাদি থেকে দেখার সময় এদিকে খেয়াল করা উচিত যেন তাদের ঘরে দৃষ্টি না পড়ে।


১৬। কারো ঘরে গেলে সেখানের ব্যবস্থাপনার ব্যাপারে অহেতুৃক মন্তব্য করবেন না এতে তার মনে কষ্ট আসতে পারে।


১৭। বিদায়ের সময় মালিককে দুআ ও শুকরিয়া জ্ঞাপন করুন এবং সালাম করে সম্ভব হলে কোন সুন্নাতে ভরা রিসালা ইত্যাদি উপহার দিন।

Top