বাব নং ২২৩. ৩. জ্যোতির্বিজ্ঞানে দৃষ্টি দেয়া নিষিদ্ধ


৩- بَابُ مَا جَاءَ فِي النَّهْيِ عَنِ النَّظْرِ فِي النُّجُوْمِ

٤٦٢- أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ عَطَاءٍ، عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ ، قَالَ: نَهَىٰ رَسُوْلُ اللهِ  عَنِ النَّظَرِ فِي النُّجُوْمِ.


৪৬২. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা আতা থেকে, তিনি আবু হোরায়রা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ)  জ্যোতির্বিদ্যার দিকে দৃষ্টিপাত করতে নিষেধ করেছেন। 

(আল মু’জামুল আওসাত, ৮/১৩১/৮১৮২)


ব্যাখ্যা: জ্যোতির্বিজ্ঞান নিয়ে গবেষণা ও চিন্তায় মগ্ন হওয়া শরীয়তের দৃষ্টিতে অন্যায়। দায়লামী হযরত আবু হোরায়রা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, জ্যোতির্বিজ্ঞানকে পর্যবেক্ষণকারী হলো সূর্যের গোলকের দিকে দর্শনকারীর মত। এর দিকে যে পরিমাণ দেখবে সে পরিমাণ দৃষ্টি দুর্বল হয়ে যাবে। 


❏দারেকুতনী ইবনে ওমর (رضي الله عنه) থেকে মারফু হাদিস বর্ণনা করেন, জল ও স্থলের পথে অন্ধকারে দিক নির্ণয়ের জন্য যতটুকু প্রয়োজন, তোমরা ততটুকু জ্যোতির্বিজ্ঞান শিখতে পার। তবে অতিরিক্ত শিক্ষা থেকে বিরত থাক। মুসলিম ও আবু দাউদ শরীফে বর্ণিত আছে, যে জ্যোতির্বিজ্ঞান শিক্ষা করল; সে যেন যাদুবিদ্যা শিক্ষা করল।


٤٦٣- أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ أَبِي الزُّبَيْرِ، عَنْ جَابِرِ ، قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللهِ  : لَا يَحِلُّ لِرَجُلٍ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ أَنْ يَدْخُلَ الْـحَمَّامَ إِلَّا بِمِئْزَرٍ، وَمَنْ لَـمْ يَسْتُرْ عَوْرَتَهُ مِنَ النَّاسِ، كَانَ فِيْ لَعْنَةِ اللهِ وَالْـمَلَائِكَةِ وَالْـخَلْقِ أَجْمَعِيْنَ.


৪৬৩. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা আবু যুবাইর থেকে, তিনি জাবির (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ)  এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস করে তার জন্য গোসলখানায় লুঙ্গী ব্যতীত প্রবেশ করা বৈধ নয়। আর যে ব্যক্তি স্বীয় সতর গোপন না রাখে তার উপর আল্লাহ, ফেরেস্তা এবং সমস্ত সৃষ্টির লানত বর্ষিত হয়। 

(জামেউল আহাদীস, ১৭/৬১/১৭৫৬৮)


ব্যাখ্যা:  উলঙ্গ গোসল করা ভদ্রতা ও লজ্জাশীলতার বিপরীত যদিও গোসলখানায় গোসল করে। কারণ মানুষের চোখে না পড়লেও ফেরেশতাদের চোখে পড়ে। আর সতর গোপন রাখা ফরয এবং খোলা রাখা পাপ।


٤٦٤- أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ نَافِعٍ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ ، قَالَ: كَانَ أَحَبَّ الْأَسْمَاءِ إِلَىٰ رَسُوْلِ اللهِ  عَبْدُ اللهِ وَعَبْدُ الرَّحْمٰنِ.


৪৬৪. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা নাফে থেকে, তিনি ইবনে ওমর (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন রাসূল (ﷺ)  এর অধিক প্রিয় নাম হলো আবদুল্লাহ ও আবদুর রহমান। 

(কানযুল উম্মাল, ১৬/৪১৯/৪৫২০২)


ব্যাখ্যা: মিশকাত  শরীফে সহীহ মুসলিম শরীফের হাদিসে ইবনে ওমর (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-

قال رسول الله   ان احب اسمائكم الى الله عبد الله وعبد الرحمن- (رواه مسلم). 


“রাসূল (ﷺ)  এরশাদ করেন, আল্লাহর নিকট তোমাদের নামসমূহের মধ্যে সর্বাপেক্ষা প্রিয় নাম হলো আবদুল্লাহ ও আবদুর রহমান।”  ২১৬

➥ ইমাম মুসলিম (رحمة الله), (২৬১ হি), মুসলিম শরীফ, খন্ড ৬, পৃষ্ঠাঃ  ১৬৯, হাদীস নং ৫৭০৯


❏তিবরানী বলেন যে সব শব্দে আল্লাহর বান্দা হওয়ার অর্থ বহন করে, সে নামগুলোই উত্তম। যেমন আবদুর রহিম, আব্দুস সাত্তার, আবদুল গাফফার, আবদুর রাজ্জাক ইত্যাদি।

নাম ব্যক্তির উপর প্রভাব বিস্তার করে। তাই সুন্দর অর্থবোধক নাম রাখা প্রত্যেক পিতা-মাতার উপর আবশ্যক। হাদীস শরীফে আছে, নবী করিম (ﷺ)  অনেকের অর্থহীন নাম পরিবর্তন করে সুন্দর অর্থবোধক নাম রেখেছেন।


٤٦٥- أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ نَافِعٍ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ ، قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللهِ  : البِّرُّ لَا يَبْلَىٰ، وَالْإِثْمُ لَا يُنْسَىٰ.


৪৬৫. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা নাফে থেকে, তিনি ইবনে ওমর (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন রাসূল (ﷺ)  এরশাদ করেন, নেক ধ্বংস হয়না আর পাপ ভুলিয়ে দেয়া হয়না। 

(জামেউল আহাদীস, ১১/১৬৯/১০৪৯১)


ব্যাখ্যা: রাসূল (ﷺ)  এর বাণীর উদ্দেশ্যে হলো নেক ও কল্যাণ দুনিয়া ও আখেরাতে ফলাফল না দেখিয়ে থাকেনা এবং কখনো ধ্বংস হয়ে যায়না। বরং উত্তম ফলাফল সৃষ্টি করে থাকে এবং ভবিষ্যতকে উত্তম করে থাকে। এমনিভাবে পাপও দুনিয়া আখিরাতে কষ্ট, শাস্তি এবং ধ্বংসের কারণ হয়ে থাকে। মন্দ ফলাফল সামনে নিয়ে আসে এবং পাপীকে পাপের শাস্তি না দিয়ে ছাড়েনা।


٤٦٦- أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ سِمَاكٍ، عَنْ جَابِرِ بْنِ سَمُرَةَ ، قَالَ: كُنَّا إِذَا أَتَيْنَا النَّبِيَّ  قَعَدْنَا حَيْثُ انْتَهَىٰ بِنَا الْـمَجْلِسُ.


৪৬৬. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা সিমাক থেকে, তিনি জাবির ইবনে সামুরা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমরা যখন নবী করিম (ﷺ)  এর মজলিসে আগমন করতাম তখন মজলিশের শেষ প্রান্তে বসে যেতাম। 

(মুয়াত্তা ইমাম মালিক, ৩/৩৩৬/৮৭৪)


ব্যাখ্যা: উপরোক্ত হাদিসে মজলিসে বসার আদব বর্ণনা করা হয়েছে। মজলিশে বসার আদব হলো শালীনতার সাথে বসা, খালি জায়গায় বসা, অপরকে উঠিয়ে না বসা, বিনা অনুমতিতে দু’জনের মাঝখানে না বসা, মজলিস চলাকালে যথাসম্ভব নড়াচড়া না করা রৌদ্র-ছায়ায় না বসা এবং পরে আসলে মজলিসের শেষ প্রান্তে বসে যাওয়া। এগুলোকে আদাবুল মজলিস বলা হয়।


٤٦٧- أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ عَطِيَّةَ، عَنْ أَبِيْ سَعِيْدٍ الْـخُدْرِيِّ ، قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللهِ  : لَا يَشْكُرُ اللهَ مَنْ لَا يَشْكُرُ النَّاسَ.


৪৬৭. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা আতিয়্যা থেকে, তিনি আবু সাঈদ খুদুরী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ)  এরশাদ করেন, যে মানুষের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেনা সে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেনা। 

(আমসালুল হাদীস, ১/৪২/৯৮)


ব্যাখ্যা: মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله)এর কারণ বর্ণনা করে বলেন, যে ব্যক্তি কোন বান্দার সামান্য ইহসানের স্বীকৃতি দেয় না এবং তার শোকরিয়া জ্ঞাপন করে না সে কিভাবে আল্লাহ তায়ালার বিপুল পরিমাণের ইহসানের শোকরিয়া আদায় করবে? অথবা এর অর্থ হলো বান্দার ইহসানও মূলত আল্লাহরই ইহসান। সুতরাং যে বান্দার ইহসানের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না, সে যেন আল্লাহরই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেনা।


٤٦٨- أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ عَطَاءٍ، عَنْ مُحَارِبِ بْنِ دِثَارٍ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ ، قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللهِ  : إِيَّاكَ وَالظُّلْمَ، فَإِنَّ الظُّلْمَ ظُلُمَاتٌ يَوْمَ الْقِيَامَةِ.


৪৬৮. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা আতা থেকে, তিনি মুহারিব ইবনে দিসার থেকে, তিনি ইবনে ওমর (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ)  এরশাদ করেন, তুমি অন্যের প্রতি যুলুম করা থেকে বিরত থাক। কেননা কিয়ামতের দিন যুলুম অন্ধকারের আকার ধারণ করবে। 

(মুসলিম, ৮/১৮/৬৭৪২)


٤٦٩- أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ عَاصِمِ عَنْ أَبِيْ بُرْدَةَ، أَنَّ النَّبِيَّ  زَارَ قَوْمًا مِنَ الْأَنْصَارِ فِيْ دِيَارِهِمْ، فَذَبَحُوْا لَهُ شَاةً، وَصَنَعُوْا لَهُ مِنْهَا طَعَامًا، فَأَخَذَ مِنَ اللَّحْمِ شَيْئًا فَلَاكَهُ، فَمَضَغَهُ سَاعَةً لَا يُسِيْغُهُ، فَقَالَ : مَا شَأْنُ هَذَا اللَّحْمِ؟ فَقَالُوْا: شَاةٌ لِفُلَانٍ ذَبَحْنَاهَا حَتَّىٰ يَجِيْءَ، فَنُرْضِيَهِ مِنْ ثَمَنِهَا، قَالَ: فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ  : أَطْعِمُوْهَا الْأُسَرَاءَ.

وَفِيْ رِوَايَةٍ: عَنْ عَاصِمِ بْنِ كُلَيْبِ، عَنْ أَبِيْهِ: أَنَّ رَجُلًا مِنْ أَصْحَابِ مُحَمَّدٍ  صَنَعَ طَعَامًا، فَدَعَاهُ، فَقَامَ إِلَيْهِ النَّبِيُّ ، وَقُمْنَا مَعَهُ، فَلَـمَّا وَضَعَ الطَّعَامَ تَنَاوَلَ النَّبِيُّ  بِضْعَةً مِنْ ذَلِكَ اللَّحْمِ، فَلَاكَهَا فِيْ فِيْهِ طَوِيْلًا، فَجَعَلَ لَا يَسْتَطِيْعُ أَنْ يَأْكُلَهَا، فَأَلْقَهَا مِنْ فِيْهِ، وَأَمْسَكَ عَنِ الطَّعَامِ، فَقَالَ : أَخْبِرْنِيْ عَنْ لَـحْمِكَ هَذَا، مِنْ أَيْنَ هُوَ؟ قَالَ: يَا رَسُوْلَ اللهِ! شَاةٌ كَانَتْ لِصَاحِبٍ لَنَا، فَلَـمْ يَكُنْ عِنْدَنَا فَنَشْتَرِيَهَا مِنْهُ، وَعَجِلْنَا بِهَا، وَذَبَحْنَاهَا، وَصَنَعْنَاهَا لَكَ حَتَّىٰ يَجِيْءَ، فَنُعْطِيَ ثَمَنَهَا، فَأَمَرَ النَّبِيُّ  بِرَفْعِ هَذَا الطَّعَامِ وَأَمَرَ أَنْ يُطْعِمَهُ الْأُسَرَاءَ.أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ عَاصِمِ عَنْ أَبِيْ بُرْدَةَ، أَنَّ النَّبِيَّ  زَارَ قَوْمًا مِنَ الْأَنْصَارِ فِيْ دِيَارِهِمْ، فَذَبَحُوْا لَهُ شَاةً، وَصَنَعُوْا لَهُ مِنْهَا طَعَامًا، فَأَخَذَ مِنَ اللَّحْمِ شَيْئًا فَلَاكَهُ، فَمَضَغَهُ سَاعَةً لَا يُسِيْغُهُ، فَقَالَ : مَا شَأْنُ هَذَا اللَّحْمِ؟ فَقَالُوْا: شَاةٌ لِفُلَانٍ ذَبَحْنَاهَا حَتَّىٰ يَجِيْءَ، فَنُرْضِيَهِ مِنْ ثَمَنِهَا، قَالَ: فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ  : أَطْعِمُوْهَا الْأُسَرَاءَ.

وَفِيْ رِوَايَةٍ: عَنْ عَاصِمِ بْنِ كُلَيْبِ، عَنْ أَبِيْهِ: أَنَّ رَجُلًا مِنْ أَصْحَابِ مُحَمَّدٍ  صَنَعَ طَعَامًا، فَدَعَاهُ، فَقَامَ إِلَيْهِ النَّبِيُّ ، وَقُمْنَا مَعَهُ، فَلَـمَّا وَضَعَ الطَّعَامَ تَنَاوَلَ النَّبِيُّ  بِضْعَةً مِنْ ذَلِكَ اللَّحْمِ، فَلَاكَهَا فِيْ فِيْهِ طَوِيْلًا، فَجَعَلَ لَا يَسْتَطِيْعُ أَنْ يَأْكُلَهَا، فَأَلْقَهَا مِنْ فِيْهِ، وَأَمْسَكَ عَنِ الطَّعَامِ، فَقَالَ : أَخْبِرْنِيْ عَنْ لَـحْمِكَ هَذَا، مِنْ أَيْنَ هُوَ؟ قَالَ: يَا رَسُوْلَ اللهِ! شَاةٌ كَانَتْ لِصَاحِبٍ لَنَا، فَلَـمْ يَكُنْ عِنْدَنَا فَنَشْتَرِيَهَا مِنْهُ، وَعَجِلْنَا بِهَا، وَذَبَحْنَاهَا، وَصَنَعْنَاهَا لَكَ حَتَّىٰ يَجِيْءَ، فَنُعْطِيَ ثَمَنَهَا، فَأَمَرَ النَّبِيُّ  بِرَفْعِ هَذَا الطَّعَامِ وَأَمَرَ أَنْ يُطْعِمَهُ الْأُسَرَاءَ.

قَالَ عَبْدُ الْوَاحِدِ: قُلْتُ لِأَبِيْ حَنِيْفَةَ: مِنْ أَيْنَ أَخَذْتَ هَذَا: الرَّجُلُ يَعْمَلُ فِيْ مَالِ الرَّجُلِ بِغَيْرِ إِذْنِهِ، يَتَصَدَّقُ بِالرِّبْحِ؟ قَالَ: أَخَذْتُهُ مِنْ حَدِيْثِ عَاصِمٍ.

قَالَ عَبْدُ الْوَاحِدِ: قُلْتُ لِأَبِيْ حَنِيْفَةَ: مِنْ أَيْنَ أَخَذْتَ هَذَا: الرَّجُلُ يَعْمَل فِيْ مَالِ الرَّجُلِ بِغَيْرِ إِذْنِهِ، يَتَصَدَّقُ بِالرِّبْحِ؟ قَالَ: أَخَذْتُهُ مِنْ حَدِيْثِ عَاصِمٍ.


৪৬৯. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা আসেম থেকে, তিনি আবু বুরদা থেকে বর্ণনা করেন, নবী করিম (ﷺ)  আনসারদের এক দলের সাথে তাদের ঘরে সাক্ষাত করেন। তারা তার মেহেমানদারীর জন্য একটি বকরী যবেহ করেন এবং এরদ্বারা খাবার তৈরি করেন। তিনি গোশতের টুকরা মুখে দিয়ে কিছুক্ষণ চিবালেন কিন্তু গলধঃকরণ করতে পারলেন না। তখন তিনি বললেন, এটা কিসের গোশত? লোকজন বলল, এটা অমুক ব্যক্তির বকরী। (তার অনুমতি ব্যতীত) আমরা এটা যবেহ করেছি, এ উদ্দেশ্যে যে, মালিক আসলে তাকে বকরীর মূল্য প্রদান করে সম্মত করিয়ে নেব। রাবী বলেন, তখন রাসূল (ﷺ)  এরশাদ করেন, এই গোশত বন্দীদেরকে খাওয়াও।


অপর বর্ণনায় আসেম ইবনে কুলাইব তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, মুহাম্মদ (ﷺ) ’র এক সাহাবী খানা তৈরি করে তাঁকে দাওয়াত করলেন। তিনি তাশরীফ নিলেন, আমরাও তার সঙ্গে গিয়েছি। যখন খানা সামনে রাখা হলো, তখন তিনি গোশতের একটি টুকরা মুখে নিলেন এবং অনেক্ষণ চিবালেন কিন্তু গলধঃকরণ করতে পারলেন না। তখন তিনি তা মুখ থেকে ফেলে দিলেন এবং খানা খাওয়া থেকে বিরত রইলেন আর বললেন, এই গোশত কোথা থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে আমাকে বল। মেজবান বলল, হে আল্লাহর রাসূল! এটা আমাদের এক সাথীর বকরী ছিল। সে আমাদের নিকট ছিলনা যে, তার থেকে ক্রয় করে নিব। আমরা তাড়াতাড়ি এটাকে যবেহ করে আপনার খেদমতে উপস্থিত করেছি। সে আসলে বকরীর মূল্য তাকে আদায় করে দেবো। তখন নবী করিম (ﷺ)  ঐ খাদ্য নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন এবং ঐ খাবার বন্দীদেরকে খাওয়ানোর আদেশ দান করলেন।

আবদুল ওয়াহেদ বলেন, আমি হযরত আবু হানিফা (رحمة الله) কে বললাম, আপনি এ মাসয়ালা কোথা থেকে বের করলেন যে, যদি কেউ কারো মাল মালিকের অনুমতি ব্যতিত ব্যবহার করে, তখন সে এর লাভ সদকা করে দেবে। উত্তরে তিনি বলেন, হযরত আসেম (رضي الله عنه)’র হাদিস থেকে।


ব্যাখ্যা: কোন ব্যক্তি যদি অন্য কোন ব্যক্তির বকরী অনুমতি ব্যতীত যবেহ করে তাহলে তার উপর এর মূল্য আদায় করা আবশ্যক হবে এবং এটা সদকা করা ওয়াজিব হবে। তাছাড়া যতক্ষণ পর্যন্ত বকরীর মূল্য আদায় না করবে, ততক্ষণ পর্যন্ত এ বকরী দ্বারা কোন উপকৃত হওয়া যাবে না। এ অবস্থায় বকরী মালিকের মালিকানা থেকে বেরিয়ে যায়। নতুবা রাসূল (ﷺ)  এটাকে সদকা করতে নির্দেশ দিতেন না। বরং মালিককে ফিরিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করতেন অথবা তার হাতে বিক্রয়ের ব্যবস্থা করতেন এবং মূল্য মালিকের জন্য হেফাযতে রাখার নির্দেশ দিতেন। কেননা জরুরী অবস্থায় কারো মাল বিক্রি করার ক্ষমতা আমীরের রয়েছে।


٤٧٠- أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ عَلْقَمَةَ، عَنِ ابْنِ بُرَيْدَةَ، عَنْ أَبِيْهِ، قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللهِ  : اَلدَّالُّ عَلَى الْـخَيْرِ كَفَاعِلِهِ.


৪৭০. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা আলকামা থেকে, তিনি ইবনে বুরাইদা থেকে, তিনি তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ)  এরশাদ করেন, কল্যাণমূলক কাজের প্রতি পথপ্রদর্শনকারী ব্যক্তি আমলকারী ব্যক্তির ন্যায় (সওয়াব প্রাপ্ত হবে)। 

(আমসালুল হাদীস, ১/৬৪/১৫০)


ব্যাখ্যা: দারেকুতনী ও অন্যান্য কিতাবে ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে মারফু হাদিস বর্ণিত আছে,   


كل معروف صدقة والدال على الخير كفاعله والله يحب اغاثة اللهفان


“প্রত্যেক ভাল কাজ হলো সদকা আর কল্যাণের দিকে পথ প্রদর্শনকারী আমলকারীর সমান সওয়াব পাবে। যে বিপদ গ্রস্থ লোককে সাহায্য করে আল্লাহ তাকে ভালবাসেন”।


٤٧١- أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ ، قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللهِ  : اَلدَّالُّ عَلَى الْـخَيْرِ كَفَاعِلِهِ.


৪৭১. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা আনাস ইবনে মালেক (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ)  এরশাদ করেন, ভাল কাজের দিকে পথ প্রদর্শনকারী আমলকারীর সমান সওয়াব পাবে। 

(ইত্তেহাফ, ১/১৯৫/২৫৬)


ব্যাখ্যা: যেমন কোন ব্যক্তি অন্য একজন ব্যক্তিকে নামাযের জন্য মসজিদে নিয়ে গেল। সে নামায পড়ে যা সওয়াব পাবে ততটুকু সওয়াব যে তাকে মসজিদে নামাযের জন্য নিয়ে গিয়েছিল সেও সমপরিমাণ সওয়াব পাবে।


٤٧٢- أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ عَلْقَمَةَ، عَنِ ابْنِ بُرَيْدَةَ، عَنْ أَبِيْهِ، عَنِ النَّبِيِّ ، قَالَ : جَاءَهُ رَجُلٌ فَاسْتَحْمَلَهُ، فَقَالَ: مَا عِنْدِيْ مَا أَحْمِلُكَ عَلَيْهِ، وَلَكِنْ سَأَدُلُّكَ عَلَىٰ مَنْ يَحْمِلُكَ، انْطَلِقْ إِلَىٰ مَقْبَرَةِ بَنِيْ فُلَانٍ، فَإِنَّ فِيْهَا شَابًّا مِنَ الْأَنْصَارِ يَتَرَامَىٰ مَعَ أَصْحَابٍ لَهُ وَمَعَهُ بَعِيْرٌ لَهُ، فَاسْتَحْمِلْهُ، فَإِنَّهُ سَيَحْمِلُكَ، فَانْطَلَقَ الرَّجُلُ، فَإِذَا بِهِ يَتَرَامَىٰ مَعَ أَصَحابٍ لَهُ، فَقَصَّ عَلَيْهِ الرَّجُلُ قَوْلَ النَّبِيِّ ، فَاسْتَحْلَفَهُ بِاللهِ، لَقَدْ قَالَ هَذَا رَسُوْلُ اللهِ ؟ فَحَلَفَ لَهُ مَرَّتَيْنِ، أَوْ ثَلَاثًا، ثُمَّ حَمَلَهُ، فَمَرَّ بِهِ عَلَى النَّبِيِّ ، فَقَالَ: فَأَخْبَرَهُ الْـخَبَرَ، فَقَالَ النَّبِيُّ  : انْطَلِقْ، فَإِنَّ الدَّالَّ عَلَى الْـخَيْرِ كَفَاعِلِهِ.

وَفِيْ رِوَايَةٍ: أَنَّ رَجُلًا جَاءَ يَسْتَحْمِلُهُ، فَقَالَ: وَاللهِ، مَا عِنْدِيْ مِنْ شَيْءٍ أَحْمِلُكَ عَلَيْهِ، وَلَكِنِ انْطَلِقْ فِيْ مَقْبَرَةِ بَنِيْ فُلَانٍ، فَإِنَّكَ سَتَجِدُ ثَمَّةَ شَابًّا مِنَ الْأَنْصَارِ يَتَرَامَىٰ مَعَ أَصْحَابٍ، فَاسْتَحْمِلْهُ، فَإِنَّهُ سَيَحْمِلُكَ، فَانْطَلَقَ الرَّجُلُ حَتَّى اتَى الْـمَقْبَرَةَ قَالَ لَهُ رَسُوْلُ اللهِ ، فَقَصَّ عَلَيْهِ الْقِصَّةَ، فَاسْتَحْلَفَهُ، فَقَالَ: وَالَّذِيْ لَا إِلٰهَ إِلَّا هُوَ، إِنَّ رَسُوْلَ اللهِ  أَرْسَلَنِيْ إِلَيْكَ، فَأَعْطَاهُ بَعِيْرًا لَهُ، فَانْطَلَقَ بِهِ الرَّجُلُ، فَأَتَى النَّبِيَّ ، فَقَالَ لَهُ رَسُوْلُ اللهِ  : انْطَلِقْ فَإِنَّ الدَّالَّ عَلَى الْـخَيْرِ كَفَاعِلِهِ.


৪৭২. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা আলকামা থেকে, তিনি ইবনে বুরাইদা থেকে, তিনি তার পিতা থেকে, তিনি নবী করিম (ﷺ)  থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি তাঁর নিকট একটি সওয়ারী চাইলে তিনি বলেন, তোমাকে দেওয়ার মত আমার কাছে কোন সওয়ারী নেই। তবে তোমাকে এমন ব্যক্তির প্রতি পথপ্রদর্শন করতে পারি, যে তোমাকে সওয়ারী দিতে পারে। অমুক গোত্রের কবরস্থানে যাও, সেখানে একজন আনসারী যুবককে দেখবে, যে তার সঙ্গীদের সাথে তীরন্দাযী করছে। তার সাথে একটি উট আছে। তুমি তার কাছে সেটা চাও, সে তোমাকে এটা দিয়ে দেবে।

লোকটি সেখানে গিয়ে দেখল ঐ যুবক তার সাথীদের সাথে তীরন্দাযী খেলায় ব্যস্ত আছে। লোকটি যুবককে রাসূল (ﷺ)  ’র কথা বর্ণনা করলে যুবক তাকে কসম দিয়ে জিজ্ঞাসা করল যে, সত্যিই কি রাসূল (ﷺ)  এরূপ বলেছেন? লোকটি দুই বা তিনবার কসম করলে যুবক উটটি তাকে দিয়ে দিল। অতঃপর লোকটি উট নিয়ে নবী করিম (ﷺ)  এর নিকট এসে তাঁর নিকট সমস্ত ঘটনা বর্ণনা করল। তখন নবী করিম (ﷺ)  বললেন, ভাল কাজের প্রতি পথপ্রদর্শনকারী ভাল কাজকারীর সমান সওয়াব পাবে।


অন্য এক বর্ণনায় আছে, এক ব্যক্তি রাসূল (ﷺ)  ’র নিকট এসে একটি সওয়ারী চাইলে তিনি বলেন, আল্লাহর কসম! তোমাকে দেওয়ার মত কোন সওয়ারী আমার কাছে নেই। তবে তুমি অমুক গোত্রের কবরস্থানে যাও। সেখানে একজন আনসারী যুবককে দেখবে, সে তার সঙ্গীদের সাথে তীরন্দাযী করছে। তুমি তার কাছে সওয়ারী চাও। সে তোমাকে সওয়ারী দেবে।

লোকটি সে কবরস্থানে গেল যার ঠিকানা তাকে রাসূল (ﷺ)  বলেছিলেন। অতঃপর তাকে সমস্ত ঘটনা বর্ণনা করলে সে তার কাছে শপথ কামনা করল। সে বলল, ঐ আল্লাহর শপথ, যিনি ব্যতীত কোন মাবুদ নেই। রাসূল (ﷺ)  আমাকে তোমার নিকট পাঠিয়েছেন। তখন আনসারী যুবক তাকে উটটি দিয়ে দিল। লোকটি উট নিয়ে নবী করিম (ﷺ)  ’র নিকট এসে উপস্থিত হলে তিনি তাকে বললেন, এবার চলে যাও, নিশ্চয়ই ভাল কাজের দিকে পথ প্রদর্শনকারী ঐ কাজের আমলকারীর মত পূণ্যলাভ করবে।


٤٧٣- أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ عَلْقَمَةَ، عَنِ ابْنِ بُرَيْدَةَ، عَنْ أَبِيْهِ، أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ، قَالَ : أَفْضَلُ الْـجِهَادِ كَلِمَةُ حَقٍّ عِنْدَ سُلْطَانٍ جَائِرٍ.


৪৭৩. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা আলকামা থেকে, তিনি ইবনে বুরাইদা থেকে, তিনি তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, রাসূল (ﷺ)  এরশাদ করেন। অত্যাচারী বাদশাহর সামনে সত্য কথা বলা উত্তম জিহাদ। 

(আল মু’জামুল আওসাত, ৭/৫২/৬৮২৪)


ব্যাখ্যা: বাদশাহর সামনে সত্য কথা বলাকে উত্তম জিহাদ বলার কারণ হলো, প্রচলিত জিহাদে মুসলমান দলবদ্ধ হয়ে সামরিক শক্তি নিয়ে শান শওকতের অধিকারী হয়ে জয় পরাজয় উভয়ের সম্মুখীন হয়ে থাকে। পক্ষান্তরে অত্যাচারী বাদশাহর সামনে সত্য বলা অত্যন্ত অসহায় ও সামর্থহীন অবস্থায় হয়ে থাকে। কেবল ধ্বংস ও মৃত্যুর চিত্র তার সামনে থাকে। কিন্তু তারপরও এ অসহায় ব্যক্তি শুধু স্বীয় দ্বীন ও মাযহাবের স্বার্থে জীবন নিয়ে খেলতে থাকে এবং সত্য বলার সাহসিকতা প্রদর্শন করে। সুতরাং এটাই উত্তম জিহাদ।


٤٧٤- أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ شَيْبَانَ، عَنْ عَبْدِ الْـمَلِكِ، عَمَّنْ حَدَّثَهُ، عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ ، قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللهِ  : مَنِ اسْتَشَارَكَ، فَأَشِرْهُ بِالرُّشْدِ، فَإِنْ لَـمْ تَفْعَلْ، فَقَدْ خُنْتَهُ.


৪৭৪. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা শায়বান থেকে, তিনি আবদুল মালিক থেকে, তিনি এক ব্যক্তির মাধ্যমে আবু হোরায়রা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ)  এরশাদ করেন, কেউ তোমার কাছে পরামর্শ চাইলে তাকে সৎ পরামর্শ দাও। যদি তুমি তা না কর তবে তুমি তার সাথে খিয়ানত করেছ। 

(মশকিলুল আসার, ৯/৩১৪/৩৬৪৯) 


ব্যাখ্যা: যার কাছে পরামর্শ চাওয়া হয় তাকে আমানতদার মনে করা হয় এবং তার উপর পূর্ণ ভরসা করা হয়। ঐ ব্যক্তি যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ দেয় এবং সঠিক পরামর্শ না দেয় বরং ভুল পরামর্শ দেয় তবে সে বড় খেয়ানতকারী হিসেবে সাব্যস্ত হবে।


٤٧٥- أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنِ الْـحَسَنِ، عَنِ الشَّعْبِيِّ، قَالَ: سَمِعْتُ النُّعْمَانَ، يَقُوْلُ: سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ ، يَقُوْلُ : مَثَلُ الْـمُؤْمِنِيْنَ فِيْ تَوَادِّهِمْ وَتَرَاحُمِهِمْ كَمَثَلِ جَسَدٍ وَاحِدٍ، إِذَا اشْتَكَى الرَّأْسُ تَدَاعَىٰ لَهُ سَائِرُهُ بِالسَّهَرِ وَالْـحُمَّىٰ.


৪৭৫. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা হাসান থেকে, তিনি শা’বী থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি নু’মানকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, আমি নবী করিম (ﷺ) কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, মু’মিনদের পরস্পরের মধ্যে ভালবাসার উদাহরণ হলো একটি দেহের মত। যখন মাথায় ব্যথা হয় তখন সমস্ত দেহে ব্যথা ও জ্বর অনুভূত হয়। 

(মুসলিম, ৮/২০/৬৭৫১)


٤٧٦- حَمَّادٌ: عَنْ أَبِيْهِ، عَنْ عَبْدِ الرَّحْمٰنِ بْنِ حَزْمٍ، عَنْ أَنَسٍ ، قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللهِ  : مَا زَالَ جِبْرِيْلُ يُوْصِيْنِيْ بِالْـجَارِ حَتَّىٰ ظَنَنْتُهُ أَنَّهُ يُوَرِّثُهُ، وَمَازَالَ جِبْرِيْلُ يُوْصِيْنِيْ بِقِيَامِ اللَّيْلِ حَتَّىٰ ظَنَنْتُ أَنَّ خِيَارَ أُمَّتِيْ لَا يَنَامُوْنَ إِلَّا قَلِيْلًا.


৪৭৬. অনুবাদ: হাম্মাদ তার পিতা থেকে, তিনি আবদুর রহমান ইবনে হাযম থেকে, তিনি আনাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ)  এরশাদ করেন, হযরত জিব্রাঈল (আ.) আমাকে সর্বদা প্রতিবেশীর হক সম্পর্কে এতবেশী ওসীয়ত করে থাকেন যে, আমি ধারণা করেছি, তাদেরকে আমার ওয়ারিশ বানিয়ে দেয়া হবে। আর জিব্রাঈল (আ.) আমাকে সর্বদা রাত্রি জাগরণ তথা তাহাজ্জুদের নামাযের জন্য এত বেশী ওসীয়ত করতেন যে, আমার ধারণা হয়, আমার উম্মতের উত্তম লোকজন খুব কমই নিদ্রা যাবে। 

(বুখারী, ৫/২২৩৯/৫৬৬৯)


ব্যাখ্যা: প্রতিবেশী আত্মীয়-স্বজনের চেয়ে অধিক কাজে আসে। আত্মীয়-স্বজন তো সবাই কাছে থাকে না। প্রতিবেশীরাই বিপদে-আপদে, দুঃখ-দুর্দশায় প্রথমে এগিয়ে আসে। বিয়ে,শাদীসহ অনুরূপ সবকাজে প্রতিবেশীর ভূমিকা থাকে উলে­খযোগ্য। কুরআন মাজীদে সকল প্রকার প্রতিবেশীর সাথে সদাচরণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। 


❏কুরআনে বলা হয়েছে,والجار ذى القربى والجار الجنب والصاحب بالجنب “নিকট প্রতিবেশী দূর প্রতিবেশী এবং সঙ্গী সাথীদের সাথে সদ্ব্যবহার করবে।” 

(সূরা নিসা, আয়াত: ৩৬)


❏রাসূল (ﷺ) এরশাদ করেন- من كان يومن بالله واليوم الاخر فلا يوذ جاره “যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়।”  ২১৭

➥  বুখারী ও মুসলিম, সূত্র: রিয়াদুস সালেহীন, পৃষ্ঠাঃ  ১৫৬


❏তিনি আরো বলেছেন,والله لايؤمن والله لايؤمن والله لايؤمن قيل من يا رسول الله    قال لا يأمن جاره بوائقه  “আল্লাহর কসম! সে ব্যক্তি ঈমানদার নয়, আল্লাহর কসম! সে ব্যক্তি ঈমানদার নয়, আল্লাহর কসম! সে ব্যক্তি ঈমানদার নয়। প্রশ্ন করা হলো হে আল্লাহর রাসূল! সে ব্যক্তি কে? জবাবে তিনি বললেন, যার প্রতিবেশী তার অনিষ্ট থেকে নিরাপদ থাকতে পারে না।”  ২১৮

 ➥ বুখারী ও মুসলিম, সূত্র: মিশকাত, পৃষ্ঠাঃ  ৪২২


❏তিনি আরো বলেছেন,ليس المؤمن الذى يشبع وجاره جائع الى جنبه “ঐ ব্যক্তি ঈমানদার নয়, যে তৃপ্তি সহকারে খায় আর তার প্রতিবেশী তার পাশে পড়ে থাকে অভুক্ত অবস্থায়।”  ২১৯

 ➥ বায়হাকী, শুআবুল ঈমান, সূত্র:- মিশকাত, পৃষ্ঠাঃ  ৪২৪


❏প্রতিবেশীর হক সম্পর্কে তিনি বলেছেন, اذا طبخت مرقة فاكثر ما ئها وتهد جير انك “যখন তুমি তরকারী রান্না করবে তখন তাতে পানি (ঝোল) বেশী দিবে; আর তোমার প্রতিবেশীকে হাদিয়া দিবে।”  ২২০

 ➥ ইমাম মুসলিম (رحمة الله), (২৬১ হি), মুসলিম শরীফ, খন্ড ৮, পৃষ্ঠাঃ  ৩৭, হাদীস নং ৬৮৫৫


প্রতিবেশী তিন প্রকার: যথা , 

১. এক হক বিশিষ্ট প্রতিবেশী, যারা আত্মীয়ও নয় মুসলিমও নয়। 

২. দুই হক বিশিষ্ট প্রতিবেশী, যারা আত্মীয় নয় কিন্তু মুসলিম। 

৩. তিন হক বিশিষ্ট প্রতিবেশী, যারা আত্মীয় ও মুসলিম। অতএব, প্রতিবেশী যে কোন ধর্মের, বর্ণের ও আদর্শের অনুসারী হোক না কেন, সর্বাবস্থায় প্রতিবেশীর সাথে সদ্ব্যবহারের প্রতি ইসলাম উদ্ধুদ্ধ করে। 


তাহাজ্জুদের নামায সূরা মুয্যাম্মিলের দ্বিতীয় আয়াত قم الليل الا قليلا দ্বারা ফরয ছিল। পরবর্তীতে ফরয রহিত হয়ে গেলেও সুন্নত হিসেবে এর গুরুত্ব ও ফযীলত অপরিসীম। রাসূল (ﷺ)  এরশাদ করেন, ফরয নামাযের পর সবচেয়ে উৎকৃষ্ট নামায হচ্ছে রাতের তাহাজ্জুদের নামায (মুসলিম)। তিনি নিয়মিত তাহাজ্জুদের নামায আদায় করতেন। আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের জন্য এই নামায অত্যন্ত ফলপ্রসূ। 


٤٧٧- أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ أَنَسٍ ، قَالَ: سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ ، يَقُوْلُ : إِنَّ اللهَ يُحِبُّ إِغَاثَةَ اللَّهْفَانِ.


৪৭৭. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা আনাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি রাসূল (ﷺ) কে বলতে শুনেছি, নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা অসহায় ব্যক্তিকে সাহায্য করাকে পছন্দ করেন। 

(জামেউল আহাদীস, ৮/২৩৩/৭২০০)


ব্যাখ্যা: হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (ﷺ)  এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি দুনিয়াতে তার মুসলমান ভাইয়ের দোষ গোপন করবে আল্লাহ তায়ালা দুনিয়া-আখিরাতে তার দোষ গোপন রাখবেন। যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের দুনিয়ার কোন কষ্ট দূর করে দেবে, আল্লাহ তায়ালা কেয়ামতের দিন তার কষ্ট দূর করে দেবেন। বান্দা যতক্ষণ তার মুসলমান ভাইয়ের সহযোগীতায় লিপ্ত থাকে ততক্ষণ আল্লাহ সেই বান্দার সহযোগিতায় থাকেন। ২২১

➥ ফকীহ আবুল লাইস সমরকন্দী (رحمة الله), তাম্বীহুল গাফেলীন



Top