যাকাতের বর্ণনা
মাসআলাঃ যে সমস্ত ধন-সম্পদ মানুষের মৌলিক প্রয়োজনের অন্তর্ভূক্ত তা-যতই মূল্যবান হোক না কেন তা যাকাত থেকে পৃথক (অর্থাৎ উক্ত ধন-সম্পদের উপর যাকাত ফরয হবে না)।
এ জন্য সে ব্যক্তি শুধুমাত্র মৌলিক প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদের যাকাত দিবেন, গাড়ীর মূল্যের উপর যাকাত ওয়াজিব (ফরয) নয়।
ফতওয়ায়ে শামীর মধ্যে উল্লেখ রয়েছেঃ বসবাসের ঘরসমূহ, পরিধানের কাপড়সমূহ, ঘরের আসবাব পত্র, আরোহনের জন্তু সমূহ, সেবার দাস-দাসী ও ব্যবহারের হাতিয়ার বা সমরাস্ত্র এর মধ্যে যাকাত নেই। ১২৯
➥১২৯. ফতওয়ায়ে শামী, পৃষ্ঠা-২৬৬, খণ্ড-২য়, কিতাবুয্ যাকাত, হিদায়া, পৃষ্ঠা-১৬৬, খণ্ড-১ম, কিতাবুয্ যাকাত।
মাসআলাঃ এক ব্যক্তির কাছে আমি কর্জ পাব কিন্তু সে ব্যক্তি তা অস্বীকার করছে, আমার কাছে লিখিত কোন প্রমাণ নেই এবং আমার কাছে কোন সাক্ষীও নেই। এমতাবস্থায় উক্ত কর্জের যাকাত দেয়া আমার উপর ওয়াজিব (ফরয) হবে কি-না?
যখন কর্জ উদ্ধারের জাহেরীভাবে কোন সম্ভাবনা না থাকে তখন এ সম্পদ ‘যিমার’ (যা ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা নেই) এর অন্তর্ভূক্ত। যেহেতু মালে যিমার (যে সম্পদ উদ্ধার হওয়ার সম্ভাবনা নেই) এর মধ্যে যাকাত ওয়াজিব (ফরয) নয় সেহেতু প্রশ্নের ধরণ অনুযায়ী আপনার উপরও যাকাত ওয়াজিব (ফরয) নয়। শরীয়তের মধ্যে ঐ কর্জের উপর যাকাত ওয়াজিব যা দাইনে ক্বাভী (শক্তিশালী কর্জ) অথবা দাইনে মুতাওয়াচ্ছিত (মধ্যম পর্যায়ের কর্জ) হয় অর্থাৎ কর্জদাতার কাছে সাক্ষী অথবা লিখিত প্রমাণ থাকে। অতঃপর কর্জ গৃহিত- কর্ম স্বীকার করে এবং কর্জদাতা কর্জ উদ্ধারে সক্ষমতাও রাখে তাহলে যাকাত ওয়াজিব হবে। নতুবা এ কর্জ মালে যিমারের হুকুমের অন্তর্ভূক্ত। যার উপর যাকাত ওয়াজিব নয়। ১৩০
➥১৩০. তাহত্বাভী আলাদ্দুররিল মুখতার, কিতাবুয্ যাকাত, পৃষ্ঠা-৩৯৩, আল বাহ্রুর রায়িক, পৃষ্ঠা-২০৭, কিতাবুয্ যাকাত।
প্রশ্নঃ এ নতুন মাসয়ালার ক্ষেত্রে ওলামায়ে দ্বীন কি বলেন- এ নতুন যুগে বা সময়ে যৌথ ব্যবসা অগ্রগামী, যার মধ্যে যৌথ সম্পদ যাকাতের নিসাব থেকে কয়েক গুণ বেশী হয়। কিন্তু যদি বন্টন করা হয় তাহলে কতিপয় অংশিদার এর অংশ নিসাব পর্যন্ত পৌঁছে। আর কতিপয় অংশিদারের অংশ নিসাব পর্যন্ত পৌঁছেনা। তাহলে এ ক্ষেত্রে যাকাতের হুকুম কি? যে বস্তুর যতক্ষণ পর্যন্ত পূর্ণ মালিকানা ও নিসাবের মালিক অর্জিত না হয় ঐ সময় পর্যন্ত উহার উপর কি যাকাত নেই?
উত্তরঃ আল্লাহর উপর ভরসাঃ যাকাতের ক্ষেত্রে যেরূপ সম্পদ নিসাব পর্যন্ত পৌঁছা জরুরী অনুরূপভাবে যাকাত দাতারও নিসাবের মালিক হওয়া জরুরী। এমনকি যদিও যৌথ সম্পদ যাকাতের নিসাব থেকে বেশী কিন্তু বন্টনের পর কতিপয় অংশিদারদের অংশ যাকাতের নিসাব পর্যন্ত পৌঁছে। আর কতিপয় অংশিদারদের অংশ পৌঁছেনা এজন্য অংশিদারী কাজে যৌথ সম্পদের উপর যাকাত নেই। বরং প্রত্যেক অংশিদারের অংশের উপর যাকাত ফরয এ শর্তের ভিত্তিতে যে, অংশিদার নিসাবের মালিক বনতে পারে।
শামী ২য় খণ্ড, ৩০৪ পৃষ্ঠায় রয়েছে- সায়িমা (জমিনে বিচরণশীল প্রাণী) ও ব্যবসার সম্পদে যৌথ নিসাবে আমাদের হানাফী মযহাব মতে যাকাত ফরয হবেনা যদিও উহাতে সংমিশ্রণ সহী হয় আর যদি একাধিক নিসাব হয় তাহলে সব নিসাবের উপর যাকাত ফরয হবে।
প্রশ্নঃ লিমিটেড কোম্পানীদের উপর যাকাতের বিধানঃ
কতিপয় লোক যৌথ ব্যবসা করে এবং যার সম্পদ যাকাতের নিসাব থেকেও বেশী কিন্তু যদি উহাকে বন্টন করা হয় তাহলে প্রত্যেকের অংশের সম্পদ যাকাতের নিসাব থেকে কম এমতাবস্থায় উহার উপর যাকাত আদায় করা ফরয হবে কিনা?
উত্তরঃ যাকাতের জন্য যেভাবে সম্পদ নিসাব পর্যন্ত পৌঁছা জরুরী অনুরূপভাবে যাকাতদাতা নিসাবের মালিক হওয়াও জরুরী। প্রশ্নে উল্লেখিত সূরতে যদিও যৌথ সম্পদ যাকাতের নিসাব থেকে বেশী কিন্তু বন্টনের পর প্রত্যেকের অংশ নিসাব পর্যন্ত না পৌঁছলে তাহলে যৌথ সম্পদে যাকাত নেই কিন্তু সম্পদ যদি এ পরিমাণ হয় যে, যদি উহাকে বন্টন করা হয় এবং প্রত্যেকের অংশ বা যার অংশ নিসাব পর্যন্ত পৌঁছে তাহলে তার উপর যাকাত ফরয।
ইমাম আবু বকর কাসানী (رحمة الله) বলেছেন- অতএব যদি উহা দুই ব্যক্তির মাঝে অংশিদারিত্ব হয়।
মাসআলাঃ যাকাত ও ফিতরার টাকা মসজিদ বানানোর মধ্যে খরচ করবেনা কেননা উহা গরীবদের অধিকার।
[আল্লাহ্ অধিক জ্ঞাত]
যাকাত দেয়ার ক্ষেত্রে কাকে অগ্রাধিকার দেবেঃ
মাসআলাঃ যাকাত ইত্যাদি সাদকা এর ক্ষেত্রে উত্তম হল- প্রথমে আপন ভাই বোনদের দিবে, অতঃপর তাদের সন্তানদেরকে দিবে, অতঃপর চাচা ও ফুফুদেরকে, অতঃপর তাদের সন্তানদেরকে, অতঃপর মামু ও খালাকে, অতঃপর তাদের সন্তানদেরকে, অতঃপর নিজ গ্রাম বা শহরের অধিবাসীদেরকে। ১৩১
➥১৩১. জাওহারী, আলমগীরী।
মাসআলাঃ ঐ ধর্ম ত্যাগীদেরকে দিলেও যাকাত আদায় হবেনা। যিনি মুখে ইসলামের দাবী করেন কিন্তু আল্লাহ্ ও রসূলের মর্যাদা ক্ষুন্ন করে বা অন্য কোন ধর্মীয় আবশ্যক বিষয়কে অস্বীকার করে। ১৩২
➥১৩২. বাহারে শরীয়ত, কানোনে শরীয়ত ইত্যাদি।