কবরে আহাদনামা লিখা ও পবিত্র বস্তু রাখা প্রসঙ্গে আলোচনা
এখানে দু’টি মাসআলা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে- একটি হচ্ছে কবরে শাজরা, কাবা শরীফের গিলাফ, ও অন্যান্য পবিত্র বস্তু রাখা, অপরটি হচ্ছে মৃতব্যক্তির কাফন বা কাফনের উপর অঙ্গুলি বা মাটি বা অন্য কিছু দিয়ে আহাদ নামা বা কলেমা তৈয়্যবা লিখা। এ দু’টি কাজ জায়েয এবং বিশুদ্ধ হাদীছ ও ফকীহগণের উক্তি থেকে প্রমাণিত আছে। কিন্তু বিরোধিতাকারীরা তা স্বীকার করে না। তাই এ আলোচনাটা দুটি অধ্যায়ে বিভক্ত করা হয়েছে। প্রথম অধ্যায়ে এ সবের প্রমাণ এবং দ্বিতীয় অধ্যায়ে আপত্তিসমূহের উত্তর দেয়া হয়েছে।
প্রথম অধ্যায়
পবিত্র বস্তু রাখা ও আহাদনামা লিখার প্রমাণ
কবরে বুযুর্গানেদীনের পবিত্র বস্তু, কাবা শরীফের গিলাফ, শাজরা বা আহাদনামা রাখা মৃতব্যক্তি মাগফিরাতের সহায়ক।
❏ কুরআন কারীম ইরশাদ ফরমান-
وَابْتَغُوا إِلَيْهِ الْوَسِيلَةَ.
-তাঁর নৈকট্য লাভের উপায় অন্বেষণ কর। ২৯৯
{সূরা মায়েদা, আয়াত নং-৩৫}
❏ হযরত ইউসুফ (عليه السلام) তাঁর ভাইদেরকে বলেছিলেন-
اذْهَبُوا بِقَمِيصِي هَذَا فَأَلْقُوهُ عَلَى وَجْهِ أَبِي يَأْتِ بَصِيرًا.
-আমার এ জামাটি নিয়ে গিয়ে আমার পিতার মুখমণ্ডলের উপর রাখিও, তিনি দৃষ্টি শক্তি ফিরে পাবেন। ৩০০
{➥300. সূূরা ইউসুফ, আয়াত নং-৯৩।}
বোঝা গেল যে, বুযুর্গানে কিরামের পোশাক আরোগ্য দান করেন। উলেখ্য যে ওটা হযরত ইব্রাহীম (عليه السلام) এর জামা ছিল। তাই আশা করা যায়, বুযুর্গদের নামের বরকতে মৃত ব্যক্তির জ্ঞান খোলে এবং উত্তর সমূহ স্মরণ আসে।
❏ মিশকাত শরীফের غسل الموت শীর্ষক অধ্যায়ে হযরত উম্মে আতিয়া (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত আছে- যখন আমরা যয়নব বিনতে রসূল আলাইহিস সালামের গোসলের কাজ শেষ করলাম, তখন নবী করীম আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালামকে খবর দিলাম। তিনি (ﷺ) আমাদেরকে তাঁর তোহবন্দ শরীফ প্রদান করলেন এবং বললেন একে তোমরা কাফনের ভিতরে মইয়তের গায়ে জড়িয়ে দিবে। ৩০১
{ইমাম বুখারী, আস-সহীহ, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-১৬৮}
❏ এর প্রেক্ষাপটে ‘লুমআত’ গ্রন্থে উলেখিত আছে-
هذا الحديث اصل فى التبرك باثار الصالحين ولباسهم كما يفعل بعض مريدى المشائخ من ليس اقمصهم فى القبر.
-নেক বান্দাদের বস্তু এবং কাপড়সমূহ থেকে বরকত গ্রহণের উৎস হচ্ছে এ হাদীছ। যেমন মশায়েখের কতেক মুরিদাকে কবরে মশায়েখের জামা পড়িয়ে দেয়া হয়। ৩০২
{শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী, লুম’আতুল তানকীহ শরহে মিশকাতুল মাসাবীহ, খণ্ড-৪, পৃষ্ঠা-৩১৮}
❏ একই হাদীছ প্রসঙ্গে “আশআতুল লুমআত” শরীফে বর্ণিত আছে-
دريں جا استحباب تبرك است بلباس صلحين وآثار ايشاں بعد از موت در قبر چنانچه قبل از موت نيز همچنيں بوده.
এর থেকে প্রমাণিত হলো যে নেক বান্দাদের পোশাক এবং তাঁদের পবিত্র বস্তুসমূহ দ্বারা মৃত্যুর পর কবরের মধ্যেও বরকত গ্রহণ করা মুস্তাহাব, যেমন মৃত্যুর আগে স্বীয় সম্মানিত পিতা হযরত সাইফুদ্দিন কাদেরী (কুঃ সিঃ) এর জীবনী বর্ণনা প্রসঙ্গে বলেন-
چوں وقت رحلت قريب ترآمد فرمود ند كه بعض ابيات وكلمات كه مناسب معنى عفو ومغفرت باشد در كاغذے نبويسى وباكفن همراه كنى.
যখন তাঁর ইন্তিকালের সময় ঘনিয়ে আসে, তখন তিনি বলেন- কেউ ওই শে’র ও বাক্যগুলো, যেগুলো ক্ষমা ও মাগফিরাতের সহায়ক, কোন কাগজে লিখে আমার কাফনের মধ্যে রেখে দিবে।)
❏ শাহ আবদুল আযীয ছাহেব (কুঃ সিঃ) স্বীয় ফাতওয়ার কিতাবে বলেছেন-
شجره در قبر نهادن معمول بزرگان است ليكن ايں را دو طريق است اول اينكه برسينه مرده درون كفن يا بالائے كفن گذار ندايں طريق رافقهاء منع مى كنند وطريق دوم ايں است كه جانب سر مرده اندرون قبر طاقچه بگزارند ودراں كاغذ شجره رانهند.
কবরে শাজরা রাখাটা বুযুর্গানে দ্বীনের অনুসৃত নীতি। তবে এটা রাখার দু’টি পদ্ধতি আছে-একটি হচ্ছে মৃত ব্যক্তির বুকের উপর কাফনের নিচে বা উপরে রাখা। একে ফকীহগণ নিষেধ বলেন। অপরটি হচ্ছে মৃত ব্যক্তির মাথার দিকে কবরে একটি তাক করে ওখানে শাজরার কাগজ রাখা। মিশকাত শরীফের غسل الميت শীর্ষক অধ্যায়ে হযরত জাবের (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত আছে যে হুযুর ﷺ আবদুল্লাহ ইবনে উববীর কবরে তশরীফ নিয়ে যান। যে মুহুর্তে তাকে কবরে রাখা হচ্ছিল, তিনি (ﷺ) তাকে বের করালেন, তার মুখে থুথু ফেললেন এবং নিজের পবিত্র জামা তাকে পরিয়ে দিলেন। বুখারী শরীফের প্রথম খণ্ড কিতাবুল জনায়েয শীর্ষক অধ্যায়ে বর্ণিত আছে যে, এক দিন হুযুর ﷺ হুযুর ﷺ থেকে সেই তোহবন্দ শরীফটা চেয়ে নিয়ে নিলেন। সাহাবায়ে কিরাম তাঁকে বললেন-ওই সময় হুযুর আলাইহিস সালামের তোহবন্দটার প্রয়োজন ছিল কিন্তু কোন প্রার্থীকে বিমুখ করা তাঁর স্বভাব নয়। আপনি কেন চেয়ে নিলেন? উত্তরে তিনি (সাহাবী) বললেন-
وَاللَّهِ، مَا سَأَلْتُهُ لِأَلْبَسَهُ، إِنَّمَا سَأَلْتُهُ لِتَكُونَ كَفَنِي، قَالَ سَهْلٌ: فَكَانَتْ كَفَنَهُ.
খোদার কসম, আমি এটা পরিধানের জন্য লই নাই। আমি তো এ জন্যেই নিয়েছি যে, এটা আমার কাফন হবে। হযরত সাহল (رضي الله عنه) বলেছেন যে ওটা ঠিকই তার কাফন হয়েছিল। ৩০৩
{ইমাম বুখারী, আস-সহীহ, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-৪২৯, হাদিস- ১২৭৭, ইমাম ইবনে মাযাহ, আস-সুনান, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-১১৭৭, হাদিস-৩৫৫৫, ইমাম আহমদ, আল-মুসনাদ, খণ্ড-৫, পৃষ্ঠা-৩৩৩, হাদিস-২২৮৭৬।}
❏ হযরত আবু নয়ীম (رضي الله عنه) ‘মাআরিফাতুন সাহাবা’ গ্রন্থে এবং হযরত দায়লমী (رضي الله عنه) তাঁর ‘মসনদুল ফিরদাউসে’ হযরত হাসান আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) এর বরাত দিয়ে বর্ণনা করেছেন যে সৈয়্যদুনা হযরত আলী (رضي الله عنه) এর মাতা ছাহেবানী ফাতিমা বিনতে আসাদকে হুযুর ﷺ স্বীয় জামা দিয়ে কাফন দিয়েছেন এবং কিছু সময় ওর কবরে নিজেই শুয়ে থাকেন। অতঃপর ওকে দাফন করেন। সাহাবায়ে কিরাম এর রহস্য জানতে চাইলে তিনি ফরমান-
أَلْبَسْتُهَا قَمِيصِي ; لِتَلْبَسَ مِنْ ثِيَابِ الْجَنَّةِ، وَاضْطَّجَعْتُ مَعَهَا فِي قَبْرِهَا ; خُفِّفَ عَنْهَا مِنْ ضَغْطَةِ الْقَبْرِ.
-‘‘জামা এ জন্য পরায়েছি যে যেন সে বেহেশতের পোশাক পায় এবং তার কবরে এ জন্য শুয়েছি যে যেন কবরের সংকীর্ণতা দূরীভূত হয়।’’৩০৪
{ইমাম আবু নুয়াইম, মা’রিফাতুল সাহাবা, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-২৭৮-২৭৯, হাদিস-২৮৮, মাকতাবাতু দারুল মদিনা, মদিনা মুনওয়ারা, ইমাম হাইছামী, মাযমাউয-যাওয়াইদ, খণ্ড-৯, পৃষ্ঠা-২৫৭, হা/১৫৪০০, মাকতুবাতুল কুদসী, কায়রু, মিশর।}
❏ হযরত ইবনে আবদুল র্বা ‘কিতাবুল ইস্তিয়াব ফি মা‘আরিফাতিল আসহাব’ গ্রন্থে উলেখ করেছেন যে হযরত আমীর মুয়াবিয়া (رضي الله عنه) মৃত্যু সায়াহেৃ ওসীয়ত করেছিলেন- আমাকে হুযুর ﷺ তার একটি জামা দান করেছেন। ওটাকে আমি এ সময়ের জন্য রেখে দিয়েছি। এ পবিত্র জামাটা আমার কাফনের নিচে রেখে দিবেন।
وَخُذْ ذَلِكَ الشَّعْرَ وَالْأَظْفَارَ فَاجْعَلَهُ فِي فَمِي، وَعَلٰى عَيْنِي وَمَوَاضِعِ السُّجُوْدِ مِنِّي.
-‘‘এই পবিত্র চুল ও নখগুলো নাও। এগুলোকে আমার মুখে, চোখের উপর এবং আমার সিজদার অঙ্গ সমূহে রাখবে।’’ ৩০৫
{➥305. ইমাম আব্দুুল বার, আল-ইস্তিয়াব ফি মা’রিফাতুল আসহাব, খণ্ড-৩, পৃষ্ঠা-১৪১৯, দারু জালীল, বয়রুত, লেবানন।}
❏ ইমাম যায়লাঈ (رحمة الله) সংকলন করেন-
قُلْت: أَخْرَجَ الْحَاكِمُ فِي الْمُسْتَدْرَكِ عَنْ حُمَيْدٍ بْنِ عبد الرحمن الرواسي ثَنَا الْحَسَنُ بْنُ صَالِحٍ عَنْ هَارُونَ بْنِ سَعِيدٍ عَنْ أَبِي وَائِلٍ، قَالَ: كَانَ عِنْدَ عَلِيٍّ رضي الله عنه مِسْكٌ، فَأَوْصَى أَنْ يُحَنَّطَ بِهِ، وَقَالَ: هُوَ فَضْلُ حَنُوطِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.
-‘‘হযরত হাকিম (رحمة الله) ‘আল-মুস্তাদারক লিল হাকিম’ গ্রন্থে হযরত হামিদ ইবনে আবদুর রহমান রওয়াসী (رحمة الله) থেকে উদ্বৃতি করেছেন যে হযরত আলী (رضي الله عنه) এর কাছে কিছু মেশক ছিল। তিনি ওসীয়ত করেছেন ‘আমাকে এর থেকে সুগন্ধি দিবে’ এবং বলেছেন ‘এটা হুযুর আলাইহিস সালামের মেশকের অবশিষ্টাংশ’।’’ ৩০৬
{ইমাম হাকেম নিশাপুরী, আল-মুস্তাদরাক, কিতাবুল জানাইয, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-৩৬১, দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন, যায়লাঈ, নাসবুর রায়্যাহ, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-২৫৯, ইমাম বায়হাকী, আস-সুনানুল কোবরা, ৩/৫৬৯, হা/৬৭০৭,
☞ইমাম যায়লাঈ (رحمة الله) এ হাদিস প্রসঙ্গে লিখেন-
وَرَوَاهُ الْبَيْهَقِيُّ فِي سُنَنِهِ، قَالَ النَّوَوِيُّ: إسْنَادُهُ حَسَنٌ.
-‘‘ইমাম বায়হাকী হাদিসটি তার সুনানে সংকলন করেছেন, ইমাম নববী (رحمة الله) বলেন, এই সনদটি হাসান।’’ (যায়লাঈ, নাসবুর রায়্যাহ, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-২৫৯)}
এগুলো ছাড়াও আরও প্রমাণ দেয়া যায়। কিন্তু এতটুকুই যথেষ্ট মনে করি। যদি কেউ আরো বিস্তারিত ভাবে জানতে চান, তাহলে আলা হযরতের ‘আল হরফুল হাসন’ কিতাবটি অধ্যয়ন করতে পারেন।
মইয়তের কপালে বা কাফনের উপরে আহাদ নামা বা কলেমা তৈয়্যবা লিখা এবং অনুরূপ আহাদ নামা কবরে রাখা জায়েয। এটা আঙ্গুল দিয়ে বা অন্য কিছু দিয়ে লিখা জায়েয আছে।
❏ ইমাম তিরমিযী হাকিম মুহাম্মদ ইবনে আলী ‘নওয়াদেরুল উসুলে’ বর্ণনা করেন যে, হুযুর ﷺ ইরশাদ ফরমান-
فِي التِّرْمِذِيِّ أَنَّهُ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - قَالَ مَنْ كَتَبَ هَذَا الدُّعَاءَ وَجَعَلَهُ بَيْنَ صَدْرِ الْمَيِّتِ وَكَفَنِهِ فِي رُقْعَةٍ لَمْ يَنَلْهُ عَذَابُ الْقَبْرِ وَلَا يَرَى مُنْكَرًا وَنَكِيرًا.
-‘‘যে কেউ এ দুআটা কোন কাগজে লিখে মৃত ব্যক্তির বুক ও কাফনের মাঝখানে রাখলে ওর কবর আযাব হবে না এবং সে মুনকার নকিরকে দেখবে না।’’ ৩০৭
{ইমাম ইবনে হাজার হাইতামী, আল-ফাতওয়াতুল ফিকহিয়্যাতুল কোবরা, ২/৬ পৃ:মাকতুবাতুল ইসলামী, বয়রুত, লেবানন, ইমাম হাকেম তিরমিযি, নাওয়াদিরুল উসূল, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-২১৭,}
❏ ফাত্ওয়ায়ে কুবরা লিল মক্কীতে এ হাদীস উদ্ধৃতি করে বলা হয়েছে-
أَنَّ هَذَا الدُّعَاءَ لَهُ أَصْلٌ وَأَنَّ الْفَقِيهَ ابْنَ عُجَيْلٍ كَانَ يَأْمُرُ بِهِ ثُمَّ أَفْتَى بِجَوَازِ كِتَابَتِهِ قِيَاسًا عَلَى كِتَابَةِ اللَّهِ فِي نَعَمِ الزَّكَاةِ.
(এ হাদীছটা) এ দুআর এবং ফকীহ ইবনে আজিল এর নির্দেশ দিতেন এবং যাকাতের উটসমূহের গায়ে যে ‘আল্লাহ’ লিখা হয়, এর উপর অনুমান করে এ দুআ লিখা জায়েয বলে ফাত্ওয়া দিতেন। ৩০৮
{ইমাম ইবনে হাজার হাইতামী, আল-ফাতওয়াতুল ফিকহিয়্যাতুল কোবরা, ২/৬ পৃ:মাকতুবাতুল ইসলামী, বয়রুত, লেবানন।}
❏ সেই দুআটা হচ্ছে-
لَا إلَهَ إلَّا اللَّهُ وَاَللَّهُ أَكْبَرُ لَا إلَهَ إلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ لَا إلَهَ إلَّا اللَّهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ لَا إلَهَ إلَّا اللَّهُ وَلَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إلَّا بِاَللَّهِ الْعَلِيِّ الْعَظِيمِ.
আল হরফুল হাসনে তিরমীযী থেকে উদ্ধৃতি করে বলা হয়েছে যে, হযরত সিদ্দীক আকবর (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত আছে যে, কেউ যদি এ আহাদ নামা পাঠ করে, তাহলে ফিরিশতা সেটা সীল করে কিয়ামতের জন্য রেখে দেবে। যখন বান্দাদেরকে কবর থেকে উঠানো হবে, তখন ফিরিশতা সেই চিরকুট নিয়ে ডাক দিবে অমুক আহাদ ওয়ালা কোথায়? অতঃপর এ আহাদনামা তাকে দেয়া হবে।
❏ ইমাম তিরমিযী বলেন-
وَعَن طَاوس: أَنه أَمر بِهَذِهِ الْكَلِمَات فَكتبت فِي كَفنه.
-‘‘হযরত তাউস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি হুকুম দিয়েছেন, তাই তাঁর কাফনে কলেমাসমূহ লিখা হয়েছে।’’ ৩০৯
{ইমাম সুয়ূতি, আদ্-দুররুল মানসূূর, ৫/৫৪৩ পৃ:, দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন, ইমাম আহমদ রেযা, আল হারফে হাসান, পৃষ্ঠা-৪, বেরলভী হতে প্রকাশিত। }
❏ কিতাবুল ইসতিহসানে উলেখিত আছে-
وَذَكَرَ الْإِمَامُ الصَّفَّارُ لَوْ كُتِبَ عَلَى جَبْهَةِ الْمَيِّتِ أَوْ عَلَى عِمَامَتِهِ أَوْ كَفَنِهِ عَهْدُ نَامَهْ يُرْجَى أَنْ يَغْفِرَ اللَّهُ - تَعَالَى - لِلْمَيِّتِ وَيَجْعَلَهُ آمِنًا مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ.
-‘‘ইমাম সফ্ফার (رحمة الله) বলেন, যদি মইয়তের কপালে বা পাগড়ীতে বা কাফনের উপর আহাদনামা লিখা হয়, তাহলে আশা করা যায় যে আল্লাহ মইয়তের মাগফিরাত এবং কবর আযাব থেকে রেহাই দেবেন।’’ ৩১০
{ইবনে আবেদীন শামী, ফাতওয়ায়ে শামী, ২/২৪৬ পৃ: ফাতওয়ায়ে বায্যাজিয়াহ, খণ্ড-৬, পৃষ্ঠা-৩৭৯, নূরানী কুতুবখানা, পেশওয়ার, পাকিস্তান।}
❏ দুররুল মুখতারের প্রথম খণ্ড الشهيد অধ্যায়ের একটু আগে উলেখিত আছে-
كُتِبَ عَلَى جَبْهَةِ الْمَيِّتِ أَوْ عِمَامَتِهِ أَوْ كَفَنِهِ عَهْدُ نَامَهْ يُرْجَى أَنْ يَغْفِرَ اللَّهُ لِلْمَيِّتِ.
মইয়তের কপালে বা পাগড়ীতে বা কাফনের উপর আহাদ নামা লিখা হলে আশা করা যায় যে আল্লাহ একে ক্ষমা করবেন। ৩১১
{ইমাম আলাউদ্দিন হাসকাফী, দুররুল মুখতার, সালাতুল জানাইয, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-১২৬।}
দুররুল মুখতারে এ জায়গায় একটি ঘটনার উলেখ আছে-জনৈক ব্যক্তি ওসীয়ত করেছিলেন যে তার বুকে বা কপালে যেন বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম লিখে দেয় হয়। সুতরাং তাই করা হয়েছিল। একজন স্বপ্নে ওকে কি অবস্থায় আছে জিজ্ঞাসা করেছিল। এর উত্তর সে বলে যে দাফনের পর তার কাছে আযাবের ফিরিশতা এসেছিল কিন্তু বিসমিল্লাহির লিখা দেখে বলেছে, তুমি আল্লাহর আযাব থেকে বেঁচে গেছ।
❏ ফাতওয়ায়ে বায্যাযিয়া কিতাবুল জনাযাতের একটু আগে উলেখিত আছে-
وَذَكَرَ الْإِمَامُ الصَّفَّارُ لَوْ كُتِبَ عَلَى جَبْهَةِ الْمَيِّتِ أَوْ عَلَى عِمَامَتِهِ أَوْ كَفَنِهِ عَهْدُ نَامَهْ يُرْجَى أَنْ يَغْفِرَ اللَّهُ - تَعَالَى - لِلْمَيِّتِ وَيَجْعَلَهُ آمِنًا مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ. قَالَ نُصَيْرٌ: هَذِهِ رِوَايَةٌ فِي تَجْوِيزِ ذَلِكَ، وَقَدْ رُوِيَ أَنَّهُ كَانَ مَكْتُوبًا عَلَى أَفْخَاذِ أَفْرَاسٍ فِي إصْطَبْلِ الْفَارُوقِ: حَبِيسٌ فِي سَبِيلِ اللَّهِ.
-‘‘ইমাম সাফফার (رحمة الله) উলেখ করেছেন যে যদি কপালে বা পাগড়ী বা কাফনের উপরে আহাদ নামা লিখা হয়, তাহলে আশা করা যায় যে, আল্লাহ ওকে ক্ষমা করবেন এবং কবর আযাব থেকে মুক্ত রাখবেন। ইমাম নসীর (رضي الله عنه) বলেছেন, এ বর্ণনা থেকে বোঝা গেল যে এ ধরনের লিখাটা জায়েয আছে এবং বর্ণিত আছে যে, হযরত ফারুকে আযম (رضي الله عنه) এর ঘোড়াশালের ঘোড়াগুলোকে উরুতে حَبِيسٌ فِي سَبِيلِ اللَّهِ লিখা ছিল।’’ ৩১২
{ইবনে আবেদীন শামী, ফাতওয়ায়ে শামী, ২/২৪৬ পৃ: ফাতওয়ায়ে বায্যাজিয়াহ, খণ্ড-৬, পৃষ্ঠা-৩৭৯, নূরানী কুতুবখানা, পেশওয়ার, পাকিস্তান।}
এ ছাড়া ফকীহগণের আরও অনেক রিওয়ায়েত পেশ করা যায়। কিন্তু এতটুকুই যথেষ্ট মনে করলাম। অতিরিক্ত বিশ্লেষণের জন্য আল-হরফুল হাসান বা ফাতওয়ায়ে রজভীয়া শরীফ অধ্যয়ন করুন।
বিবেকও বলে যে, কয়েকটি কারণে আহাদ নামা ইত্যাদি লিখা বা কবরে রাখা জায়েয হওয়া চাই।
প্রথমতঃ কবরের উপরে সবুজ ঘাস ও ফুলের তাসবীহের বদৌলতে যদি মইয়তের উপকার হতে পারে, তাহলে কবরের ভিতরে লিখিত তাসবীহ ইত্যাদির ফায়দা কেন পৌঁছবে না?
দ্বিতীয়তঃ কবরের বাহির থেকে মইয়তের তলকীন করার অর্থাৎ যাতে পরীক্ষাতে কামিয়াব হতে পারে, সে জন্য মইয়তের কানে আল্লাহর নাম পৌঁছিয়ে দেয়ার নির্দেশ আছে। তাহলে এটাকে এক প্রকার তলকীন বলা যায়। কারণ আল্লাহর নাম লিখিত দেখলে মইয়তের কাছে মুনকার নকিরের প্রশ্নের উত্তর স্মরণ হতে পারে। হাদীছ শরীফে لَقِّنُوْا مَوْتَكُمْ বাক্য দ্বারা অনির্দিষ্ট তলকীনকে বোঝানো হয়েছে। তাই লিখিত বা মৌখিক সব রকমের তলকীন জায়েয আছে।
তৃতীয়তঃ আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের নামের বরকতে মুসীবত দূরীভূত হয়, জ্বলন্ত অগ্নি নিভে যায় এবং ভীত সন্ত্রস্ত আত্মা সান্ত্বনা লাভ করে।
❏ আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ ফরমান আল্লাহর -
أَلَا بِذِكْرِ اللَّهِ تَطْمَئِنُّ الْقُلُوبُ.
যিকিরের ফলে আত্মার শান্তি লাভ হয়। ৩১৩
{সূরা রা’দ, আয়াত নং-২৮।}
❏ তফসীরে নিশাপুরী ও রূহুল বয়ানে সূরা কাহাফের ২২ নং আয়াত مَا يَعْلَمُهُمْ إِلَّا قَلِيلٌ এর ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে এবং তফসীরে সাবীতে একই আয়াত প্রসঙ্গে বর্ণিত আছে যে, আসহাবে কাহাফের নাম অনেক কাজে উপকার আসে। যেমন হারানো জিনিস তালাশ করা, যুদ্ধের সময় পালিয়ে যাবার সময়, আগুন নিভানোর জন্য একটি কাগজে লিখে আগুনে নিক্ষেপ করুন, শিশু কান্নাকাটি করলে লিখে দোলনায শিশুর মাথার নিচে রেখে দিবেন, ভাল ফলনের জন্য কোন কাগজ লিখে ক্ষেতের মাঝখানে লাঠিতে টাঙিয়ে দিবেন। জ্বর, মাথাব্যথার জন্যও উপকারী, বিচারকের সামনে যাবার সময় লিখে ডান উরুতে বাঁধবেন, মালের হিফাজতের জন্য, সামুদ্রিক যাত্রার সময়, এবং খুনখারাবী থেকে রক্ষা পাবার জন্যও খুবই উপকারী (আল হরফুল হাসান, তফসীরে খাজাযেনুল ইরফান ও জুমুল দ্রষ্টব্য) হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস বলেন যে, আসহাবে কাহাফ সংখ্যায় ছিলেন সাত জন ইয়ামলিখা, কমছিলিনা, মছলিনা মারনুস, বরনুস, শাজনুশ ও মরতুশ।
(রূহুল বয়ান সূরা কাহাফের আয়াত ,৩১৪
مَا يَعْلَمُهُمْ إِلَّا قَلِيلٌ এর ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য)।
{সূরা কাহাফ, আয়াত নং-২২।}
❏ মুহাদ্দেছীনে কিরাম কোন কোন সময় বিশুদ্ধ সনদ উদ্ধৃতি করে বলেন,
لو قرءت هذه الاسناد على مجنون لبرء من جنته.
-‘‘যদি এ সনদ কোন পাগলের জন্য পাঠ করা হয়, তাহলে সে ভাল হয়ে যাবে।’’
সনদের মধ্যে বুযুর্গানে দীন ও হাদীছ বর্ণনাকারীদের নামইতো আছে। আসহাবে বদরের নামের উপর ওজীফা পাঠ করা হয়। এসব বুযুর্গানে কিরামের মুবারক নাম কেবল জীবিতদের জন্য উপকারী, এবং মৃতদের জন্য নয় এ রকম কখনও হতে পারে না। নিশ্চয়ই মৃতব্যক্তিদেরও উপকার হবে। তাই মইয়তের জন্য কাফন ইত্যাদিতেও নিশ্চয় যেন আহাদ নামা লিখা হয়।