সায়্যিদুনা হযরত সিদ্দীকে আকবার (রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু)'র আক্বীদা
জমিন কর্তৃক সুরাকার ঘোড়া গ্রাসকরণ-
সায়্যিদুনা হযরত সিদ্দীকে আকবর (رضي الله عنه) বলেন, হিজরতকালে নবীজি (ﷺ) কিছুক্ষণ আরাম করে যখন নিদ্রা জাগ্রত হলেন এবং জিজ্ঞাস করলেন সাওর পর্বত ছেড়ে মদিনাপানে যাত্রার সময় হলো কিনা। তখন আমি বললাম- হ্যাঁ, হয়েছে তবে সূর্যের ঢলে গেলে আমরা যাত্রা করবো। এমন সময় দেখলাম সুরাকা পাশেই চলে এল। আমি নবীজি (ﷺ) কে বললাম-
ইয়া রাসূলাল্লাহ! শত্র“ তো এসে গেছে! আল্লাহর প্রিয় হাবীব (ﷺ) ইরশাদ করেন-
لَا تَحْزَنْ إِنَّ اللَّهَ مَعَنَا
-“হে আবু বাকর, ব্যথিত হয়ো না মহান আল্লাহ তা‘আলা তো আমাদের সাথে আছেন।”
فَدَعَا عَلَيْهِ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَارْتَطَمَتْ بِهِ فَرَسُهُ إِلَى بَطْنِهَا فِي جَلَدٍ مِنَ الْأَرْضِ
-‘‘অতঃপর নবীজি (ﷺ) সুরাকার জন্য বদ্ দু‘আ করলেন, ফলে তার ঘোড়া শক্ত মাঠেতে পেট পর্যন্ত ধসে গেল!
এ করুণ দৃশ্য দেখে সুরাকা বলে উঠল-
إِنِّي أَرَاكُمَا دَعَوْتُمَا عَلَيَّ فَادْعُوَا لِي
আমি বুঝতে পেরেছি যে, আপনারা দুজন আমার জন্য বদদু‘আ করেছেন, এখন আমার পক্ষে একটু দো‘আ করুন।
আমি আল্লাহর শপথ করে বলছি- সুরাকার সাথে পেছনে আসা অন্য কুরাইশরা এ ঘটনা দেখে পেছনেই পালিয়ে গেল।
فَدَعَا لَهُ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَنَجَا
-‘পরিশেষে নবীজি (ﷺ) তার জন্য দো‘আ করলেন। আর সুরাকার ঘোড়া মুক্তি পেল।’ তারপর সে গুহামুখ থেকে বিমুখ হয়ে ফিরে গেল। এবং তার সাথে যত আগন্তুকের সাক্ষাৎ হয়েছিল সবাইকে বলেছিল- আমি ঐ দিক (সাওরপর্বত) থেকে আসছি, ওখানে কেউ নেই। তার সাথে আসা সঙ্গীদের নিয়ে মক্কা ফেরত গেল। ৫
{৫. ইমাম মুসলিম, আস-সহীহ, ৪/২৩০৯ পৃ. হা/২০০৯, ইমাম বুখারী, আস-সহীহ, ৪/২০১ পৃ. হা/৩৬১৫, খতিব তিবরিযি, মিশকাতুল মাসাবীহ, ৩/১৬৪২ পৃ. হা/৫৮৬৯}
‘আক্বীদা
ভূ-পৃষ্ঠেও নবীজি (ﷺ) এর রাজত্ব বিদ্যমান। আর ভূ-পৃষ্ঠও তাঁর (ﷺ) আদেশ মান্য করল আর সুরাকাও ঘটিত মহাকান্ড থেকে জানতে পারল যে, তিনি আল্লাহ প্রেরিত নবী। এজন্য সে বলেছিল (হে আল্লাহর নাবী!) আপনার দো‘আর কারণেই আমার ঘোড়া মাটিতে ধসে গেল। আর বলেছিল আমার এই বিপদ-বিপন্নতা থেকে পরিত্রাণের জন্য আপনি দো‘আ করুণ। তখন নবীজি (ﷺ) এর দো‘আর বদৌলতেই ভূ-পৃষ্ঠ তার ঘোড়া উদ্গিরণ করে দিয়েছে।
❏ ইমামে আহলে সুন্নাত আ‘লা হযরত শাহ আহমাদ রেযা খাঁন বেরলভী (رحمة الله) বলেন-
وهى نور حق وهى ظل رب هے انهيں كاسب ہے انهيں سےسب
نهيں ان كى ملك مي آسماں ك زمين نهيں كے زماں نهيں
-‘‘তিনিই খোদার জ্যোতি, ছায়া কুদরতি
সে তো সবার তরে, তারই তো সবি।
তিনি অতুল অতি, অনুরূপ নয় সৃজনরাজি
না আকাশ না ভুবনরাজি, না তো সময়াদি।’’ ৬
{ ৬. ইমাম আহমদ রেযা খাঁন বেরলভী, হাদায়েকে বখশীস,}
রাসূল (ﷺ)-এর ইলমে গায়বের মাধ্যমে ইসলাম গ্রহণ-
❏ হযরত রাবী‘আ ইবনে কা‘ব (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
كَانَ إِسْلَامُ أَبِي بَكْرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ شَبِيهًا بِوَحْيٍ مِنَ السَّمَاءِ، وَذَلِكَ أَنَّهُ كَانَ تَاجِرًا بِالشَّامِ، فَرَأَى رُؤْيَا، فَقَصَّهَا عَلَى بَحِيرَا الرَّاهِبِ، فَقَالَ لَهُ: مَنْ أَيْنَ أَنْتَ؟ قَالَ: مِنْ مَكَّةَ، قَالَ: مِنْ أَيِّهَا؟ قَالَ: مِنْ قُرَيْشٍ، قَالَ: فَإِيشِ أَنْتَ؟ قَالَ: تَاجِرٌ، قَالَ: إِنْ صَدَّقَ اللَّهُ رُؤْيَاكَ فَإِنَّهُ سَيَبْعَثُ نَبِيًّا مِنْ قَوْمِكَ تَكُونُ وَزِيرَهُ فِي حَيَاتِهِ وَخَلِيفَتَهُ بَعْدَ مَوْتِهِ، فَأَسَرَّ أَبُو بَكْرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ هَذِهِ، حَتَّى بُعِثَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَجَاءَهُ، فَقَالَ: يَا مُحَمَّدُ مَا الدَّلِيلُ عَلَى مَا تَدَّعِي؟ قَالَ: الرُّؤْيَا الَّتِي رَأَيْتَ بِالشَّامِ ، فَعَانَقَهُ، وَقَبَّلَ بَيْنَ عَيْنَيْهِ، وَقَالَ: أَشْهَدُ أَن لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، وَأَشْهَدُ أَنَّكَ رَسُولُ اللَّهِ
-‘‘হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) ওহীর মাধ্যমে ইসলাম গ্রহণ করেন। তিনি ব্যবসার কাজে শাম দেশে ছিলেন। তিনি সেখানে একটি স্বপ্ন দেখেন। তিনি তার স্বপ্নের ঘটনা পাদরীর কাছে খুলে বললেন। অতঃপর তিনি তা শুনে বললেন, তুমি কোথায় থেকে এসেছো? তিনি বলেন, মক্কা হতে। তিনি আরও জিজ্ঞেস করলেন, মক্কার কোন গোত্রের? আবু বকর (رضي الله عنه) বললেন, কুরাইশ। পাদরী বললেন, তুমি কি কর? তিনি বললেন, আমি ব্যবস্যা করি। পাদরী বললেন, আপনাকে আল্লাহ তা‘আলা সত্য দেখিয়েছেন। নিশ্চয় তোমার কওমে একজন নবীর আবির্ভাব হচ্ছে এবং শীঘ্রই তার সাথে তোমার দেখা হবে এবং তাঁর ওফাতের পরে তুমি তাঁর খলিফা হবে। তিনি এ কথাটি রাসূল (ﷺ)-এর কাছে যাওয়ার আগ পর্যন্ত পরিবারের কাছে গোপন রাখলেন। অতঃপর তিনি রাসূল (ﷺ) এর কাছে গেলেন এবং তাকে বললেন, হে মুহাম্মদ ! আপনি যে নবী তার প্রমাণ পেশ করুন? রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করলেন, আমি নবী তার জলন্ত প্রমাণ হলো তোমার দেখা সিরিয়ার স্বপ্ন। অতঃপর তিনি রাসূল (ﷺ)-এর সাথে মু‘আনাকা করলেন এবং তাঁর দুচোখের মধ্যখানে চুমু খেলেন এবং বললেন-
أَشْهَدُ أَن لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، وَأَشْهَدُ أَنَّكَ رَسُولُ اللَّهِ
-’’আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই এবং আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি আপনি আল্লাহর রাসূল।’’ ৭
{ ৭.ইমাম ইসমাঈল ইবনে মুহাম্মদ ইস্পাহানী (ওফাত. ৫৩৫ হি.), সিরু সালফে সালেহীন, ১/৫১ পৃ., ইমাম ইবনে আসাকির, তারিখে দামেস্ক, ৩০/৩০ পৃ. ক্রমিক. ৩৩৯৮, মুহিবুদ্দীন তবারী, রিয়াদুন নাদ্বারা ফি মানাকিবে আশারা, ১/৮৪ পৃ., আল্লামা আব্দুর রহমান ছাফুরী, নুযহাতুল মাজালিস, ২/১৪৭ পৃ., ইমাম ইবনে সালেহ শামী, সবলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, ১/১২৪ পৃ. ইমাম সুয়ূতি, খাসায়েসুল কোবরা, ১/৫১ পৃ.}
আক্বিদা
সিদ্দীকে আকবর (رضي الله عنه) প্রথম খলিফা হওয়াটা আগে থেকে নির্ধারিত ছিল। তাওরাত ও ইনজিল বিশারদগণও এ ব্যাপারে অবহিত ছিলেন। এর পরও যারা তাঁর খিলাফতকে অস্বীকার করে, তারা বড় অজ্ঞ। এ হাদিস থেকে প্রমাণিত হল যে, আমাদের হুযূর (ﷺ) আগ-পরের এবং দিন-রাতের সব বিষয় জানতেন, তাঁর কাছে কোন বিষয় অদৃশ্য ছিল না। ৮
{৮.সম্পাদক কর্তৃক সংযোজিত।}
পিতা-মাতার ওফাতের পরে সন্তানের কর্তব্য-
❏ নবম শতাব্দির মুজাদ্দিদ, হাফেযুল হাদিস, ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতি (رحمة الله) সংকলন করেন-
وَأَخْرَج اِبْنِ النَجَّار فِي تَارِيْخه عَنْ أَبِي بَكْر الصِّديق قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اَللهِ صَلَّى اَلله عَلَيْهِ وَسَلَّم مَنْ زَارَ قَبْر وَالِديْهِ أَو أَحَدِهُمَا فِي كُلِّ جُمُعَة فَقَرَأَ عِنْدَهَا (يس) غَفَرَ اَلله لَهُ بِعَدَد كُل حَرْف مِنْهَا
-‘‘ইমাম ইবনে নাজ্জার (رحمة الله) তার ‘তারিখে মাদিনা’ গ্রন্থে হযরত আবু বকর সিদ্দিক (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি প্রত্যেক জুম‘আর দিন তার পিতা-মাতার অথবা তাদের যে কোন একজনেরও কবর যিয়ারত করবে এবং তার কবরের নিকটে সূরা ইয়াসিন পাঠ করবে তাহলে তার প্রত্যেক হরফের পরিমান গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে।’’ ৯
{৯.ইমাম সুয়ূতি, তাফসিরে আদ-দুররুল মানসূর, ৭/৪০ পৃ., ইমাম আইনি, উমদাতুল ক্বারী, ৩/১১৮ পৃ., এ হাদিসটির আরও দুটি যঈফ সূত্র রয়েছে। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে আমার লিখিত ‘প্রমাণিত হাদিসকে জাল বানানোর স্বরূপ উন্মোচন’ ১ম খণ্ড দেখুন।}
আক্বিদা
এ হাদিস থেকে প্রমাণিত হল যে জিবিত সন্তানরা মৃত পিতা-মাতার জন্য কোরআন তিলাওয়াত অথবা কোন নেক কাজ ঈসালে সাওয়াব হিসেবে পাঠালে পৌঁছে।
❏ এ প্রসঙ্গে আল্লামা মানাভী (رحمة الله) এ হাদিসের ব্যাখ্যায় লিখেছেন-
وَفِيه أَن الْمَيِّت تَنْفَعهُ الْقِرَاءَة عِنْده وَكَذَا الدُّعَاء وَالصَّدَقَة
-‘‘এ হাদিস থেকে বুঝা যায় যে, মায়্যিতের কবরের নিকট কিরাত পড়লে তার উপকার হয় এবং যেমনিভাবে দোয়া সাদকা করলে হয়।’’ ১০
{১০. আল্লামা মানাভী, তাইসির, ২/৪২০ পৃ.}
❏ বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাকার আল্লামা বদরুদ্দীন আইনি (رحمة الله) লিখেন-
فَذهب أَبُو حنيفَة وَأحمد، رَضِي الله تَعَالَى عَنْهُمَا، إِلَى وُصُول ثَوَاب قِرَاءَة الْقُرْآن إِلَى الْمَيِّت
-‘‘ইমাম আবু হানিফা (رضي الله عنه) এবং ইমাম আহমদ (رضي الله عنه) এ মত পোষণ করেছেন যে কোরআনের তিলাওয়াতের সাওয়াব মৃত্যু ব্যক্তির কাছে পৌঁছে।’’ ১১
{ ১১. আল্লামা আইনী, উমদাতুল ক্বারী, ৩/১১৮ পৃ.}
এ হাদিস থেকে ঈসালে সাওয়াব এবং নির্দিষ্ট দিনে কবর যিয়ারতের প্রমাণ পাওয়া গেল। ১২
{ ১২ . সম্পাদক কর্তৃক সংযোজিত।}
রাসূলের নামের তা‘যিম-
❏ ইমাম দায়লামি (رحمة الله) সংকলন করেন-
حَدِيثِ أَبِي بَكْرٍ الصِّدِّيقِ أَنَّهُ لَمَّا سَمِعَ قول المؤذن أشهد أن محمد رَسُولُ اللَّه قَالَ هَذَا، وَقَبَّلَ بَاطِنَ الأُنْمُلَتَيْنِ السَّبَّابَتَيْنِ وَمَسَحَ عَيْنَيْهِ، فَقَالَ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ فَعَلَ مِثْلَ مَا فَعَلَ خَلِيلِي فَقَدْ حَلَّتْ عَلَيْهِ شَفَاعَتِي- رواه الديلمى المسند الفردوس
-‘‘হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি মুয়ায্যিনকে ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার’ রাসূলুল্লাহ বলতে শোনলেন, তখন তিনিও তা বললেন এবং বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয়ে চুমু খেয়ে তা চোখে বুলিয়ে নিলেন। তা দেখে রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন : যে ব্যক্তি আমার বন্ধুর ন্যায় আমল করবে, তার জন্য আমার সুপারিশ বৈধ হয়ে গেল।’’ ১৩
{১৩ .ইমাম আবদুর রহমান সাখাভী : মাকাসিদুল হাসানা : ৩৮৩ পৃ. : হা/১০২১, আল্লামা আজলূনী, কাশফুল খাফা : ২/২৫৯ পৃ. হা/২২৯৬, আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী : আসরারুল মারফূ : ৩১২ পৃষ্ঠা : হাদিস : ৪৫৩, আল্লামা তাহতাভী : মারাকিল ফালাহ : ১৬৫ পৃ. : কিতাবুল আযান, আল্লামা শাওকানী : ফাওয়াইদুল মাজমু‘আত : ১/৩৯ পৃ., ইসমাঈল হাক্কী : তাফসীরে রুহুল বায়ান : ৭/২২৯ পৃ., তাহের পাটনী : তাযকিরাতুল মওদ্বুআত : ৩৪ পৃ., জালালুদ্দীন সূয়তী : লাআলীল মাসনূ আ : ১৬৮-১৭০ পৃ., আব্দুল হাই লাক্ষনৌভী : আছারুল মারফু‘আ: ১৮২ পৃ., শায়খ নাসিরুদ্দীন আলবানী : সিল..দ্বঈফাহ : ১/১০২ পৃ. হাদিস : ৭৩}
বাতিলপন্থীদের একটি ধোঁকা:
বাতিলপন্থীদের দাবি হল ইমাম সাখাভী (رحمة الله) হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) এর বর্ণিত হাদিসটি সংকলন করে বলেন, لَايَصِحُّ ‘হাদিসটি সহীহ নয়।’ ১৪
{১৪. ইমাম সাখাভী : মাকাসিদুল হাসানা : ৩৮৪ পৃ. : হাদিস : ১০২১}
সমস্ত মুহাদ্দিসগণ একমত যে হাদিসটি ‘সহীহ নয়’ শব্দ দ্বারা হাদিসটি ‘হাসান’ বুঝায়।
❏ আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) বলেন-
وَقَالَ ابْنُ الْهَمَّامِ: وَقَوْلُ مَنْ يَقُولُ فِي حَدِيثٍ أَنَّهُ لَمْ يَصِحَّ إِنْ سَلِمَ لَمْ يُقْدَحْ ; لِأَنَّ الْحُجَّةَ لَا تَتَوَقَّفُ عَلَى الصِّحَّةِ، بَلِ الْحَسَنُ كَافٍ،– فصل الثانى من باب: ما يجوز من العمل فى الصلاة
-‘‘ইমাম কামালুদ্দীন ইবনু হুমাম (رحمة الله) বলেন, কোন হাদিস সম্পর্কে কোন মুহাদ্দিস যদি বলেন যে এ হাদিসটি সহীহ (বিশুদ্ধ) নয়, তাদের কথা সত্য বলে মান্য করা হলেও কোন অসুবিধা নেই, যেহেতু (শরীয়তের) দলীল বা প্রমাণ হিসেবে সাব্যস্ত হওয়ার জন্য শুধু (হাদিস) সহীহ বা বিশুদ্ধ হওয়া নির্ভরশীল নয়। সনদ বা সূত্রের দিক দিয়ে ‘হাসান’ হলেও (হাদিসটি শরীয়তের দলীল হিসেবে সাব্যস্ত হওয়ার জন্য) যথেষ্ট।’’ ১৫
{১৫ . আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী : মিরকাত : ৩/৭৭পৃ, হাদিস : ১০৮, দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন।}
❏ আল্লামা ইবনে হাজার মক্কী (رحمة الله) তার কিতাবে লিখেন-
وَقَول أَحْمد إِنَّه حَدِيث لَا يَصِحُّ أَيْ لِذَاتِه فَلَا يَنْفِي كَوْنه حَسْنًا لِغَيْرِه وَالْحَسَن لِغَيْرِه يَحْتَجُّ بِهِ كَمَا بَيْنَ فِي عِلْمِ الْحَدِيْث -(الصَّوَاعِقُ الْمُحْرِقَة عَلى أَهْل الرفض والضلال والزندقة: خاتمة الفصل الاول من الباب: الحادى عشر:২২৮)
-‘‘ইমাম ইবনে হাজার মাক্কী (رحمة الله) বলেন, ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (رحمة الله)‘র একটি হাদিস প্রসঙ্গে বক্তব্য হাদিসটি لَايَصِحُّবিশুদ্ধ নয় এর অর্থ হবে সহিহ লিজাতিহী তথা জাতি বা প্রকৃত অর্থে সহীহ নয় উক্ত হাদিসটি (সনদের দিক দিয়ে) হাসান লিজাতিহী বা অন্য সনদে হাসান লিগায়রিহী (জাতিগত সহীহ না হওয়া; সংশ্লিষ্ট বিষয়ের সহীহ’র কারণে নিজে সহীহ হওয়া।) হওয়াকে মানা (নিষেধ) করে না। আর হাসান লিগায়রিহীও (শরিয়তের) প্রমাণ হিসেবে গ্রহণ করা যায়। যা ইলমে হাদিস তথা হাদিসশাস্ত্র হতে জানা যায়।’’ ১৬
{১৬. ইবনে হাজার মক্কী : আস-সাওয়ায়েকুল মুহরিকা, ২য় খণ্ড, পৃ-৫৩৬, মুয়াস্সাতুর রিসালা, বয়রুত, লেবানন।}
❏ আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) তাঁর গ্রন্থে ইমাম সাখাভী (رحمة الله)‘র রায় পেশ করে সমাধানের কথা বলেন যে-
قُلْتُ وَإِذَا ثَبَتَ رَفْعُهُ عَلَى الصَّدِّيقِ فَيَكْفِي الْعَمَلُ بِهِ لِقَوْلِهِ عَلَيْهِ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ عَلَيْكُمْ بِسُنَّتِي وَسِنَّةِ الْخُلَفَاءِ الرَّاشِدِين
-‘‘আমার কথা হলো, এ হাদিসটির সনদ যেহেতু হযরত আবু বকর সিদ্দিক (رضي الله عنه) পর্যন্ত প্রসারিত (মাওকুফ), সেহেতু আমলের জন্য এতটুকুই যথেষ্ট। কেননা হুযুর (ﷺ) ইরশাদ ১৭
{১৭ .ক. ইমাম আবু দাউদ : আস্-সুনান : হাদিস : ৪৬০৭, হযরত উমর (رضي الله عنه) এর সূত্রে, তিরমিযী : আস্-সুনান : হাদিস : ২৬৭৬, ইবনে মাজাহ : আস্-সুনান : হাদিস : ৪২, ইমাম ইবনুল র্বা : জামিউল বায়ান ওয়াল ইলমে বি ফাদ্বলিহী : ২/৯০ পৃ. ইমাম আহমদ : আল মুসনাদ : ৪/১২৭ পৃষ্ঠা হযরত ইরবায বিন সারিয়া (رضي الله عنه) এর সূত্রে।}
করেছেন, তোমরা আমার সুন্নাত এবং আমার খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাতকে আকড়ে ধরো।’’ ১৮
{১৮. আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী : আসরারুল মারফ‘‚আ : ২১০ পৃ., হা/৮২৯, আল্লামা আজলূনী : কাশফুল খাফা : ২/২৭০ পৃ. : হা/২২৯৬}
আক্বিদা
এ হাদিস থেকে জানা গেল রাসূল (ﷺ)-এর নাম মুবারককে তা‘যিম করা ইসলামের প্রথম খলিফার সুন্নাত এবং রাসূল (ﷺ)-এর শাফায়াত লাভ করার মাধ্যম। ১৯
{১৯. সম্পাদক কর্তৃক সংযোজিত।}