পানি পান করার ৬টি সুন্নাতি পদ্ধতিঃ-
(১) ডান হাতে পান করা।
حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، وَمُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ نُمَيْرٍ، وَزُهَيْرُ بْنُ حَرْبٍ، وَابْنُ، أَبِي عُمَرَ - وَاللَّفْظُ لاِبْنِ نُمَيْرٍ - قَالُوا حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، عَنْ أَبِي بَكْرِ بْنِ عُبَيْدِ، اللَّهِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ عَنْ جَدِّهِ ابْنِ عُمَرَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ " إِذَا أَكَلَ أَحَدُكُمْ فَلْيَأْكُلْ بِيَمِينِهِ وَإِذَا شَرِبَ فَلْيَشْرَبْ بِيَمِينِهِ فَإِنَّ الشَّيْطَانَ يَأْكُلُ بِشِمَالِهِ وَيَشْرَبُ بِشِمَالِهِ " .
ইবনু ‘উমার رضي الله عنه থেকে বর্ণিতঃ:
রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেনঃ যখন তোমাদের কেউ খাদ্য খায়, তখন সে যেন ডান হাতে খায় আর যখন পান করে, সে যেন ডান হাতে পান করে কারণ শাইতান বাম হাতে খায় ও পান করে।
(সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৫১৬০) (ই.ফা. ৫০৯৩)
(২) বসে পান করা।
وَحَدَّثَنَا زُهَيْرُ بْنُ حَرْبٍ، وَمُحَمَّدُ بْنُ الْمُثَنَّى، وَابْنُ، بَشَّارٍ - وَاللَّفْظُ لِزُهَيْرٍ وَابْنِ الْمُثَنَّى - قَالُوا حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ سَعِيدٍ، حَدَّثَنَا شُعْبَةُ، حَدَّثَنَا قَتَادَةُ، عَنْ أَبِي عِيسَى الأُسْوَارِيِّ، عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم نَهَى عَنِ الشُّرْبِ قَائِمًا .
আবূ সা‘ঈদ খুদ্রী رضي الله عنه থেকে বর্ণিতঃ:
রাসুলুল্লাহ ﷺ দাঁড়িয়ে পান করতে বারণ করেছেন।
(সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৫১৭৩) (ই.ফা. ৫১০৬)
(৩) পান করার পূর্বে বিসমিল্লাহ বলা।
حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، وَأَبُو كُرَيْبٍ قَالاَ حَدَّثَنَا أَبُو مُعَاوِيَةَ، عَنِ الأَعْمَشِ، عَنْ خَيْثَمَةَ، عَنْ أَبِي حُذَيْفَةَ، عَنْ حُذَيْفَةَ، قَالَ كُنَّا إِذَا حَضَرْنَا مَعَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم طَعَامًا لَمْ نَضَعْ أَيْدِيَنَا حَتَّى يَبْدَأَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَيَضَعَ يَدَهُ وَإِنَّا حَضَرْنَا مَعَهُ مَرَّةً طَعَامًا فَجَاءَتْ جَارِيَةٌ كَأَنَّهَا تُدْفَعُ فَذَهَبَتْ لِتَضَعَ يَدَهَا فِي الطَّعَامِ فَأَخَذَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم بِيَدِهَا ثُمَّ جَاءَ أَعْرَابِيٌّ كَأَنَّمَا يُدْفَعُ فَأَخَذَ بِيَدِهِ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " إِنَّ الشَّيْطَانَ يَسْتَحِلُّ الطَّعَامَ أَنْ لاَ يُذْكَرَ اسْمُ اللَّهِ عَلَيْهِ وَإِنَّهُ جَاءَ بِهَذِهِ الْجَارِيَةِ لِيَسْتَحِلَّ بِهَا فَأَخَذْتُ بِيَدِهَا فَجَاءَ بِهَذَا الأَعْرَابِيِّ لِيَسْتَحِلَّ بِهِ فَأَخَذْتُ بِيَدِهِ وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ إِنَّ يَدَهُ فِي يَدِي مَعَ يَدِهَا " .
হুযাইফাহ رضي الله عنه থেকে বর্ণিতঃ:
তিনি বলেন, কোন খাবার অনুষ্ঠানে যখন আমরা রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর সাথে উপবিষ্ট হতাম। যতক্ষণ তিনি স্বীয় হাত রেখে আরম্ভ না করতেন ততক্ষণ আমরা আমাদের হাত (আহারে) রাখতাম না। একবার আমরা তাঁর সাথে এক খাবার অনুষ্ঠানে উপস্থিত হলাম। এমনি মুহূর্তে একটি মেয়ে এলো। (মনে হচ্ছিল) যেন তাকে তাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। সে খাবারে হাত দিতে গেলে রাসুলুল্লাহ ﷺ তার হাত ধরে নিলেন। অতঃপর একজন বেদুঈন এলো। (মনে হচ্ছিল) যেন তাকে তাড়িয়ে দেয়া হচ্ছিল। তিনি তারও হাত ধরে নিলেন। অতঃপর রাসুলুল্লাহ ﷺ বললেনঃ আল্লাহর নাম স্মরণ করা না হলে শাইতান সে খাদ্যকে হালাল করে ফেলে। আর সে এ মেয়েটিকে নিয়ে এসেছে যাতে করে (এ খাদ্যকে) তার দ্বারা হালাল করতে পারে। অতঃপর আমি তার হাত ধরে ফেললে সে এ বেদুঈনকে নিয়ে এসেছে। যাতে করে (এ খাদ্যকে) তার দ্বারা হালাল করতে পারে। কিন্তু আমি তারও হাত ধরে ফেলেছি। সে সত্তার কসম! যাঁর হাতে আমার জীবন! অবশ্যই তার (শাইতানের) হাত মেয়েটির হাতসহ আমার হাতের মুঠোয়।
(সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৫১৫৪) (ই.ফা.৫০৮৯)
(৪) পান করার পূর্বে পানি দেখে পানকরা।
(৫) ৩ নিঃশ্বাসে পান করা অর্থাৎ এক ঢোকে পান না করে ৩ বারে পান করা উত্তম।
أَبُو عَاصِمٍ وَأَبُو نُعَيْمٍ قَالاَ حَدَّثَنَا عَزْرَةُ بْنُ ثَابِتٍ قَالَ أَخْبَرَنِي ثُمَامَةُ بْنُ عَبْدِ اللهِ قَالَ كَانَ أَنَسٌ يَتَنَفَّسُ فِي الإِنَاءِ مَرَّتَيْنِ أَوْ ثَلاَثًا وَزَعَمَ أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم كَانَ يَتَنَفَّسُ ثَلاَثًا.
সুমামা ইবনু ‘আবদুল্লাহ رحمة الله থেকে বর্ণিতঃ:
তিনি বলেনঃ আনাস رضي الله عنه-এর নিয়ম ছিল, তিনি দুই কিংবা তিন নিঃশ্বাসে পাত্র হতে পানি পান করতেন। তিনি মনে করতেন যে, নবী ﷺ তিন নিঃশ্বাসে পানি পান করতেন।
(সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৫৬৩১) (ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১১৬)
❏ তিন শ্বাসে পানি পান না করলে নিম্নে বর্ণিত রোগ ব্যাধি জন্ম নিতে পারেঃ
১। শ্বাসনালীতে পানি ঢুকে শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে মৃত্যু ঘটে যেতে পারে।
২। এমন বিঘ্নতা অধিক হলে মাথার খুলির ভিতর চাপ পড়ে। কারণ পানির শিরাসমূহ মাথার পর্দার সাথে সম্পৃক্ত থাকে। আবার মাথার ভিতর ফ্লয়েড আছে যার সম্পর্ক থাকে পানির সাথে। যদি চুষে বা ধীরে ধীরে পানি পান করা হয় তবে বিপদ ও ক্ষতিকর প্রভাব কখনও মাথার উপর পড়ে না।
৩। পাকস্থলীতে অতিরিক্ত পানি বেশী পরমিাণ জমা হলে বিভিন্ন প্রকার রোগ হয়। যথা পানি যখন ভিতরে ছড়িয়ে পড়ে তখন উপর থেকে চাপ পড়লে হার্ট ও লান্সের ক্ষতি হয়। ডান দিক থেকে চাপ হলে যকৃত এবং বাম থেকে চাপ পড়লে নাড়ি-ভূড়ি উল্টেপাল্টে যায়, এভাবে নানাবিধ ক্ষতি হয়।
(৬) পান করা শেষে কমপক্ষে আলহামদুলিল্লাহ বলা।
তিন শ্বাসে পান করা। একটু পান করার পর পাত্র মুখ থেকে দুরে সরিয়ে নিয়ে শ্বাস নিবে। অতঃপর দ্বিতীয়বার এরপর একই ভাবে তৃতীয়বার।
যেমন আনাস رضي الله عنه-এর হাদীসে এসেছ―
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পান করার মাঝে তিনবার শ্বাস নিতেন। মুসলিম শরীফের অপর এক বর্ণনায় আছে, তিনি বলতেন: এইভাবে পান করা অধিক পিপাসা নিবারণকারী অধিক নিরাপদ অধিক তৃপ্তিদায়ক।
أَبُو نُعَيْمٍ حَدَّثَنَا شَيْبَانُ عَنْ يَحْيٰى عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ أَبِي قَتَادَةَ عَنْ أَبِيهِ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِذَا شَرِبَ أَحَدُكُمْ فَلاَ يَتَنَفَّسْ فِي الإِنَاءِ وَإِذَا بَالَ أَحَدُكُمْ فَلاَ يَمْسَحْ ذَكَرَه“ بِيَمِينِه„ وَإِذَا تَمَسَّحَ أَحَدُكُمْ فَلاَ يَتَمَسَّحْ بِيَمِينِهِ.
‘আবদুল্লাহর পিতা আবূ ক্বাতাদা رضي الله عنه থেকে বর্ণিতঃ:
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেনঃ তোমাদের কোন ব্যক্তি যখন পানি পান করবে সে যেন তখন পানির পাত্রে নিঃশ্বাস না ফেলে। আর তোমাদের কেউ যখন প্রস্রাব করে, সে যেন ডান হাতে তার লজ্জাস্থান স্পর্শ না করে এবং তোমাদের কেউ যখন শৌচ কার্য করে তখন সে যেন ডান হাতে তা না করে।
(সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৫৬৩০) (ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১১৫)
❏ হাদীসে পানির পাত্রের মধ্যে শ্বাস ত্যাগ করতে নিষেধ করা হয়েছে। এ থেকে বুঝা যায় নবী ﷺ কতইনা সূক্ষ সতর্কতা অবলম্বন করতেন। এর কারণ হল, পানির পাত্রের মধ্যে শ্বাস ত্যাগ করলে যে কোন মুহূর্তে পানি শ্বাসনালীর মধ্যে প্রবেশ করে শ্বাস আদান-প্রদানে বিঘ্ন ঘটাতে পারে। অনুরূপভাবে নাকের নালীর মধ্যে পানি প্রবেশ করতে পারে। ফলে নাক ও মাথার পর্দার মধ্যে ফুলা ধরতে পারে।
পানাহারের শেষে আল্লাহ ﷻ'র নেয়ামতের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ স্বরূপ তাঁর প্রশংসা করবে। সর্বনিম্ন স্তর হচ্ছে অন্তত আলহামদুলিল্লাহ বলা।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : যে ব্যক্তি খাবারের পর আল্লাহ ﷻ'র প্রশংসা করে।অনুরূপ পান করার পর আল্লাহ ﷻ'র প্রশংসা করে। আল্লাহ সে বান্দার প্রতি সন্তুষ্ট হন।