রোযার বর্ণনা
মাসআলাঃ রমযান শরীফ ব্যতীত বিতিরের নামায জামাতে মাকরূহ। ১২৩
➥১২৩. হিদায়া।
মাসআলাঃ নিয়তের অর্থ কি? যেভাবে অন্যান্য ইবাদতে বলা হয়েছে যে, নিয়ত অন্তরের ইচ্ছার নাম, মুখে বলা কোন জরুরী নয়, রোযার ক্ষেত্রেও উহাই উদ্দেশ্য তবে মুখে বলা মুস্তাহাব।
মাসআলাঃ যদি রাতে নিয়ত করে তাহলে এভাবে নিয়ত করবে “আমি আল্লাহ্ তায়ালার জন্য এ রমযানের ফরয রোযা রাখব।” আর যদি দিনে নিয়ত করে তাহলে এ বলে নিয়ত করবে- “আমি আল্লাহর জন্য আজ দিনের রমযানের ফরয রোযা রাখব।” ১২৪
➥১২৪. জাওহারাতুন নায়্যিরা।
মাসআলাঃ দিনে নিয়ত করলে জরুরী হল- এভাবে নিয়ত করবে আমি আজ সুবহে সাদিক থেকে রোযাদার। আর যদি এ নিয়ত হয় যে, এখন থেকে রোযাদার সুবহে সাদিক থেকে নয় তাহলে রোযা হবেনা। ১২৫
➥১২৫. ফতোয়ায়ে শামী।
প্রশ্নঃ ওলামায়ে শরীয়তের অভিমত কি? দীর্ঘ দিন বিশিষ্ট রাষ্ট্র সমূহের অধিবাসীদের রোযা রাখার পদ্ধতি কিরূপ হয় বর্ণনা করুন।
উত্তরঃ আল্লাহর নিকট সাহায্য প্রার্থী। যে সমস্ত দেশে চব্বিশ ঘন্টার চেয়ে দিন বড় হয় তাহলে ঐ সমস্ত দেশে বসবাসকারী মুসলমানদেরকে নিকটবর্তী দেশ ও এলাকার সময় অনুযায়ী রোযা রাখতে হবে। সাধারণ ভাবে মানুষ চব্বিশ ঘন্টা রোযা রাখা সহ্য করতে পারে না। তবে যদি চব্বিশ ঘন্টার দিন এ পরিমাণ ছোট হয় যে, সেহেরী ও ইফতারীর সময় পাওয়া যায়, এবং সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তও হয় তাহলে এদেশের সময় অনুযায়ী রোযা রাখতে হবে। অবশ্য শরীয়তে প্রত্যেক সময়ের প্রতি দৃষ্টি পাওয়া যায়। ১২৬
➥১২৬. শামী, ১ম খণ্ড, ২৩৯পৃষ্ঠা, তাহত্বাভী আলা মারাকিয়িল ফালাহ, ১ম খণ্ড, ৫৫৮পৃষ্ঠা; বাদায়ি উস্ সানায়ি, ৩য় খণ্ড, ১০২পৃষ্ঠা।
এটা এ জন্য যে, নিকটবর্তী লোক সাধারণত এত বড় দিন সহ্য করে থাকে এজন্য ঐ স্থানে নিজের দিন হিসেবে ধর্তব্য হবে। অন্য কোন হিসাবের প্রয়োজন নেই। যেভাবে মাজমুয়ায়ে ফাতওয়ায়ে আবদুল হাই এ উল্লেখ আছে, ১ম খণ্ড, ৬৯৬ পৃষ্ঠায়।
প্রশ্নঃ তোমরা চাঁদ দেখে রোযা রাখ এ হাদীসের দলীলের ভিত্তিতে রমযানের রোযার সবব তথা কারণ চন্দ্র দর্শন নাকি ‘‘তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি রমযান মাস পাবে সে যেন রোযা রাখে” এ আয়াতের দলীলের ভিত্তিতে রমযান মাস উপস্থিত হওয়া রোযার সবব তথা কারণ? এ ব্যাপারে ওলামায়ে দ্বীনের মন্তব্য কি? এবং চন্দ্র উদয়ের ভিন্নতা বিস্তারিত বর্ণনা করুন।
উত্তরঃ আল্লাহর নিকট সাহায্য প্রার্থী এবং আল্লাহা তাওফীকদাতা: “তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এ মাসটি পাবে সে যেন অবশ্য রোযা রাখে,” এ আয়াতের ভিত্তিতে রমযান মাস উপস্থিত হওয়ার উপর রোযা ফরয হওয়া নির্ভরশীল, এতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু হাদীসে কুরাইব যা আবু দাউদ শরীফে উল্লেখ আছে- তোমরা চাঁদ দেখে রোযা রাখ” এ হাদীসের ভিত্তিতে বুঝা যায় যে, চন্দ্র দেখার উপর নির্ভরশীল। এ জন্য উভয়ের মাঝে সামাঞ্জস্য এর দিক হল- মাস উপস্থিত হওয়া চন্দ্র দর্শনের উপর নির্ভরশীল। আর চন্দ্র দেখা দুইভাবে হতে পারে-
১ম হল- প্রত্যেক ব্যক্তি নিজে চাঁদ দেখা ধর্তব্য হবে অন্য কারো দেখা যথেষ্ট ও ধর্তব্য হবেনা। এমতাবস্থায় অন্ধ, ক্ষীণ দৃষ্টিসম্পন্ন ব্যক্তি, আর এমন ব্যক্তি যিনি এমন স্থানে অবস্থান করে যে স্থানে প্রথম রাতে চাঁদ দেখতে পারে না। মেঘাচ্ছন্ন, ধূলাবালি ও ধোয়া সম্পন্ন জায়গায় অবস্থান করার কারণে। এ সমস্ত লোকেরা রোযা রাখার হুকুম থেকে বাদ পড়ে যাবে। আর এটা বাতিল হওয়া সুস্পষ্ট বিষয় ও ঐক্যমতের বিষয়। আর দ্বিতীয় অবস্থা হল- কতিপয় লোকের চাঁদ দেখা সকলের ক্ষেত্রে ধর্তব্য ও যথেষ্ট হবে শরীয়ত নির্ধারিত পদ্ধতি ও মূলনীতি গ্রহণযোগ্য ও সাক্ষ্য হাসিল হয়ে যায়। এ শর্তের ভিত্তিতে, আর এটাই সঠিক। অতএব যে ব্যক্তি শরয়ী সাক্ষ্যের মাধ্যমে চাঁদ দেখার সংবাদ অবগত হয়েছে তার ক্ষেত্রেও মাস উপস্থিত হয়ে গেছে তাই এরূপ বলা যে, বিশ্বের পূর্ব প্রান্তের চাঁদ দেখা বিশ্বের পশ্চিম প্রান্তের মাস উপস্থিত হয় না, এটা ভুল। যেভাবে নিকটবর্তী স্থানের সাক্ষ্যের ভিত্তিতে শরীয়তের বিধান জারী হয়, দূর নিকটের পার্থক্যের দরুণ জারী হয়না। এর দৃষ্টান্ত পাওয়া খুবই কঠিন। অতএব, হানাফী মাযহাব অকাট্য নস ও হাদীসের সাথে সামাঞ্জস্যশীল। তাফসীরে সাভীতে উল্লেখ আছে- “তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এ মাসটি পাবে” যদি তা দ্বারা দিন সমূহ উদ্দেশ্য হয় তখন অর্থ হবে উহার কিছু অংশ উপস্থিত হওয়া আর যদি তা দ্বারা নতুন চাঁদ উদ্দেশ্য হয় তখন অর্থ হবে হয়তো সে চাঁদ দেখবে অথবা তার নিকট সাব্যস্থ হবে। এ মাসয়ালাতে গাইরে মুকালিদ এর ইমাম শাওকানী ও হানাফীদের মত অভিমত দিয়েছেন। তিনি হাদীসে কুরাইবের প্রতি উত্তর দিয়েছেন। আওজাযুল সমসালিক শরহে মুয়াত্তায়ে মালিক, ৩য় খণ্ড, দ্র:।
ইমাম ইয়াহ্ইয়া বিন সাঈদ আল কাত্বতান- যিনি জরাহ ও তা’দীলের ইমাম ছিলেন- তিনি বলেছেন- আল্লাহর শপথ এ উম্মতের মধ্যে কুরআন ও হাদীসের জ্ঞানের সবচেয়ে বড় আলেম ছিলেন আবু হানীফা।
ইমামে আযম (رحمة الله) হাদীস সংকলনে যাচাই-বাচাই ও ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের পরে কিতাবুল আছার চলিশ হাজার হাদীস থেকে নির্বাচন করে লিখেছেন। তাঁর থেকে তার ছাত্র ইমাম যুফর, ইমাম আবু ইউচুফ, ইমাম মুহাম্মদ ইমাম হাসান বিন যিয়াদ ইত্যাদি মুহাদ্দিস ও ফকিহ্গণ উহা রিওয়ায়াত করেছেন। ইমাম ইয়াহইয়া বিন সাঈদ আল ক্বাত্বতান বড় মুহাদ্দিস ছিলেন, রাবী পরিচিতি বিষয়ে সুদক্ষ ছিলেন, ইমাম আহমদ, আলী বিন আল মাদীন ইত্যাদি আদব সহকারে দাঁড়িয়ে তাঁর থেকে হাদীস শিখতেন, আসরের নামাযের পর থেকে মাগরিব পর্যন্ত যা তার শিক্ষা দেয়ার সময় ছিল বরাবর দাঁড়িয়ে থাকতেন, ইমাম সাহেবের শিক্ষার মজলিসে অংশগ্রহণ করতেন এবং ইমাম সাহেবের ছাত্র হওয়ার কারণে গর্ব করতেন। সমস্ত সহীহ গ্রন্থে তাঁর থেকে হাদীস বর্ণিত আছে। হযরত আবদুল্লাহ বিন মুবারক (رضي الله عنه) হাদীস শাস্ত্রের বড় রুকুন, বুখারী ও মুসলিমে তাঁর থেকে হাজারো হাদীস বর্ণিত আছে। ১২৭
➥১২৭. তাযকিরাতুন নুমান, ১ম খণ্ড, ৯৫ পৃষ্ঠা।