পঞ্চম পরিচ্ছেদ
(যুক্তি নির্ভর দলীলাদির সাহায্যে ‘হাযির-নাযির’ এর প্রমাণ)
ইসলাম ধর্মের অনুসারীগণ এ বিষয়ে একমত যে, হুযুর সাইয়্যিদ আলম (ﷺ) এর পবিত্র সত্ত্বা যাবতীয় গুণাবলীতে ভূষিত। অর্থাৎ যে সব গুণাবলী অন্যান্য সম্মানিত নবী কিংবা ভবিষ্যতে আগমনকারী উচ্চ পর্যায়ের ওলীগণ বা কোন সৃষ্টিজীব লাভ করেছেন বা করবেন, সে সমস্ত গুণাবলী, বরং তার চেয়েও বেশী গুণাবলীতে হুজুর (ﷺ)কে ভূষিত করা হয়েছে। বরং অন্যান্য সকলেই যা কিছু অর্জন করেছেন, তা সব হুজুর (ﷺ) এর বদৌলতে।
❏ কুরআন করীমে ইরশাদ করেছেন,
فَبِهُدَ هُمُ اقْتَدِهِ
-‘‘আপনি পূর্ববর্তী নবীগনের পথে চলুন।’’
{সূরাঃ আনআম, আয়াতঃ ৯০, পারাঃ ৭}
❏ তাফসীরে রূহুল বয়ানে এ কথার ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে-
فَجَمَعَ اللهُ كُلَّ خَصْلَةٍ فِىْ حَبِيْبِهِ عَلَيْهِ السَّلاَمُ
-‘‘আল্লাহ হুজুর (ﷺ)কে প্রত্যেক নবীর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যে মন্ডিত করেছেন।
{আল্লামা ইসমাঈল হাক্কীঃ তাফসীরে রুহুল বায়ানঃ ৩/৮১ পৃ.}
❏ এ কথাটুকু মওলানা জামী (رحمة الله) এর কবিতার নিম্নোক্ত পংক্তিদ্বয়েও বিধৃত হয়েছে
حسن يوسف دم عيسى يد بيضاء دارى
آنچه خوباں همه دارند تو تنهادا رى
স্বনামধন্য কবি হুজুর (ﷺ)কে সম্বোধন করে বলেছেন, হে নবী!
আপনি হযরত ইউসুফ (عليه السلام) এর অপূর্ব সৌন্দর্য রাশিতে ভুষিত, হযরত ঈসা (আলাইহিস সালাম) এর ফুঁক দিয়ে জীবন দানের ক্ষমতা সম্পন্ন ও হযরত মুসা (عليه السلام) এর ‘য়াদে বায়যার’ (একটি হাত বগলের নিচে এনে বের করলে উজ্জ্বলরূপে ভাস্বর হওয়ার মু’জিযা) অধিকারী। যে সব গুণাবলী পূর্ববর্তী নবীগণ পৃথক পৃথকভাবে লাভ করেছিলেন, সে সব গুণাবলী আপনার মধ্যে সামগ্রিকরূপে সন্নিবেশিত করা হয়েছে।]
❏ মওলভী কাসেম সাহেব তাঁর রচিত ‘তাহযীরুন্নাস’ গ্রন্থের ৪৯ পৃষ্ঠায় লিখেছেন, ‘অন্যান্য নবীগণ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) থেকে গ্রহণ করেই তাঁদের নিজ নিজ উম্মতকে ফয়েয দান করেছেন। মোট কথা অন্যান্য নবীগণের মধ্যে যেসব গুণাবলী নিহিত আছে, সেগুলি হচ্ছে মুহাম্মদ (ﷺ) এর গুণাবলীর ছায়া বা প্রতিফলিত রূপ”। এ প্রসঙ্গে কুরআন-হাদীছ ও সুপ্রসিদ্ধ আলেমগণের উক্তি থেকে অনেক প্রমাণ উপস্থাপন করা যেতে পারে, কিন্তু ভিন্ন মতাবলম্বীগণও এ কথাটি স্বীকার করেন বিধায় সে কথার প্রতি সবিশেষ গুরুত্ব আরোপ নিষ্প্রয়োজন। এখন স্বীকৃত সিদ্ধান্ত হলো, কেউ যদি পূর্ণতা জ্ঞাপক কোন গুণের অধিকারী হয়ে থাকেন, তাহলে সে গুণে পূর্ণরূপে ভুষিত হয়েছেন হুজুর (ﷺ)। এ নিয়মানুযায়ী সব জায়গায় ‘হাযির-নাযির’ হওয়ার ক্ষমতা যেহেতু অনেক মাখলুককে দান করা হয়েছে, সেহেতু স্বীকার করতেই হয় যে, এগুণও হুজুর (ﷺ)কে দান করা হয়েছে।
‘হাযির-নাযির’ হওয়ার ক্ষমতা কোন্ কোন্ সৃষ্ট জীবকে দান করা হয়েছে, সে প্রসঙ্গে এখন আলোকপাত করার প্রয়াস পাচ্ছি। আমি ‘হাযির-নাযির’ শীর্ষক আলোচনার ভূমিকায় বলেছি যে, ‘হাযির-নাযির’ হওয়ার তিনটি মানে আছেঃ এক জায়গায় থেকে সমস্ত জগতকে হাতের তালুর মত দেখতে পাওয়া, নিমেষেই সমগ্র জগত পরিভ্রমণ করা ও শত শত ক্রোশ দূরে অবস্থানকারী কাউকে সাহায্য করা এবং পার্থিব শরীর কিংবা অনুরূপ শরীর নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় বিদ্যমান হওয়া। এসব গুণাবলী অনেক সৃষ্টজীবের মধ্যেও নিহিত আছে।
(১) তাফসীরে ‘রূহুল বয়ান’ ও ‘খাযেন’ এবং ‘তাফসীরে কবীর’ ইত্যাদি তাফসীর গ্রন্থ সমূহে ৭ম পারার সুরা ‘আন’আম এর
{সূরাঃ আনআম, আয়াতঃ ৬১, পারাঃ ৭}
حَتَّى اِذَا جَاءَ اَحَدَ كُمُ الْمَوْتُ تَوَفَّتْهُ رُسُلُنَا
এর ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে উলেখিত আছেঃ
جُعِلَتِ الْاَرْضُ لِمَلَكِ الْمَوْتِ مِثْلَ الطًَّشْتِ يَتَنَاوَلُ مِنْ حَيْثُ شَآءَ
-‘‘মালাকুল মাওত আযরাঈল (عليه السلام)‘র জন্য সমগ্র ভূ-খন্ডকে এমন একটি থালার মত করে দেওয়া হয়েছে যে, তাঁর ইচ্ছানুযায়ী সেই থালা থেকে তিনি নিতে পারেন।’’
{ইমাম বগভীঃ মা’আলিমুত তানযীলঃ ৩/৪৯৯ পৃ.}
❏ ‘তাফসীরে রূহুল বয়ানে’ এ জায়গায় আরও বলা হয়েছে
لَيْسَ عَلَى مَلَكِ الْمَوْتِ صَعُوْبَةٌُ فِيْ قَبْضِ الْاَرْوَاحِ وَاِنْ كَثُرَتْ وَكَانَتْ فِيْ اَمْكِنَةٍ مُتَعَدِّدَةٍ
-‘‘মলকুল মওতের রূহসমূহ কব্জ করতে কোন বেগ পেতে হয় না, যদিও রূহ সংখ্যায় বেশী হয় ও বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষিপ্তভাবে থাকে।’’
{আল্লামা ইসমাঈল হাক্কীঃ তাফসীরে রুহুল বায়ানঃ ৬/২২৩ পৃ.}
❏ ‘তাফসীরে খাযেনে’ সে একই আয়াতের নিচে লিখা হয়েছেঃ
مَا مِنْ اَهْلِ بَيْتِ شَعْرٍ وَّلاَ مَدَرٍ اِلاَّمَلَكُ الْمَوْتِ يُطِيْفُ بِهِمْ يَوْمًا مَرَّتَيْنِ
-‘‘প্রতিটি তাঁবু বা ঘরে বসবাসকারী এমন কোন জীব নেই, যার কাছে মালাকুল মওত দিনে দু’বার না যান।’’
{ইমাম খাযেনঃ তাফসীরে খাযেনঃ ৩/৪৯৯ পৃ.}
❏ মিশকাত শরীফের باب فضل الاذان শীর্ষক অধ্যায়ে হযরত জাবের (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত আছেঃ যখন আযান ও তকবীর বলা হয়, তখন শয়তান (মদীনা শরীফ হতে) ৩৬ মাইল দূরে পালিয়ে যায়।
{ক. খতিব তিবরিযীঃ মেশকাতুল মাসাবীহঃ ১/৬৬ঃ তৃতীয় পরিচ্ছেদ হাদিসঃ ৬৭৪ হযরত জাবের (رضي الله عنه) হতে
খ. মুসলিমঃ আস-সহীহঃ ১/২৯০ পৃ. হাদিসঃ ৩৭৭ এবং ১৫}
আবার যখন আযান-তকবীরের পালা শেষ হয়ে যায়, সে পুনরায় উপস্থিত হয়। আগুন হতে সৃষ্ট জীবের গতির এ অবস্থা।
আমরা যখন ঘুমাই, তখন আমাদের একটি রূহ শরীর থেকে বের হয়ে জগতের এদিক সেদিক বিচরণ করে। এ রূহকে বলা হয় ‘রূহে সাইরানী’ (বিচরণকারী রূহ), যার প্রমাণ কুরআন পাকেও রয়েছে وَيُمْسِكُ اُخْرى (আল্লাহ অপর রূহকে আবদ্ধ রাখেন।) যে মাত্র কেউ ঘুমন্ত ব্যক্তির শরীরের পাশের্ব দাঁড়িয়ে তাকে ঘুম থেকে উঠাল, তখনই সে রূহ, যা মক্কায় কিংবা পবিত্র মদীনায় বিচরণ করছিল, তৎক্ষণাৎ শরীরে পুনঃ প্রবেশ করল, ঘুমন্ত ব্যক্তি জেগে উঠল।
❏ ‘তাফসীরে রূহুল বয়ানে’ وَهُوَ الَّذِيْ يَتَوَفَّكُمْ ِاللَّيْلِ الخ আয়াতের ব্যাখ্যায় উলেখিত আছেঃ
{সূরাঃ আনআম, আয়াতঃ ৬০, পারাঃ ৭}
فَاِذَا اِنْتَبَهَ مِنَ النَّوْمِ عَادَتِ الرُّوْحُ اِلَى جَسَدٍ بِاَسْرَعَ مِنْ لَّخْظَةٍ
-‘‘মানুষ যখন ঘুম থেকে জেগে উঠে, এক মুহূর্তের চেয়েও কম সময়ে সে রূহ শরীরে ফিরে এসে যায়।’’
{আল্লামা ইসমাঈল হাক্কীঃ তাফসীরে রুহুল বায়ানঃ ৩/৫৮ পৃ.}
আমাদের দৃষ্টির নূর মুহূর্তেই আসমানের উপর গিয়ে আবার যমীনে ফিরে আসে। আমাদের ধ্যান নিমেষেই সমস্ত জগত পরিভ্রমণ করে। বিদ্যুৎ, তার, টেলিফোন ও লাউড স্পীকারের গতিশক্তির অবস্থা হচ্ছে, আধা সেকেন্ডে ভূ-খন্ডের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত অতিক্রম করে ফেলে। হযরত জিব্রাইল (عليه السلام) এর গতির অবস্থা হলো, হযরত ইউসুফ (عليه السلام) যখন কূপের অর্ধেক অংশ থেকে নিচের দিকে পতিত হচ্ছিলেন, সে মুহুর্তেই হযরত জিব্রাইল (عليه السلام) ‘সিদরাতুল মুনতাহা’ থেকে যাত্রা করলেন, আর নিমেষেই হযরত ইউসুফ (عليه السلام) এর কূপের তলায় পতিত হওয়ার পূর্বেই তাঁর নিকট পৌঁছে গেলেন।
❏ এ প্রসঙ্গে তাফসীরে রূহুল বয়ানে আয়াত
اَنْ يَّجْعَلُوْاهُ فِيْ غَيَابَةِ الْجُبِّ এর ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য।
{সূরাঃ ইউসূফ, আয়াতঃ ১৫, পারাঃ ১২}
হযরত ইব্রাহীম খলীল (عليه السلام) হযরত ইসমাঈল (عليه السلام) এর গলায় ছুরি চালালেন, ছুরি চলার আগেই জিব্রাইল (عليه السلام) সিদ্রা হতে দুম্বা সমেত হযরত খলীলুল্লাহ (عليه السلام) খিদমতে হাযির হয়ে গেলেন। হযরত সুলাইমান (عليه السلام) এর উযীর আসিফ বিন বরখিয়া এক পলকেই রাণী বিলকিসের সিংহাসন ইয়ামন থেকে সিরিয়ায় হযরত সুলাইমান (عليه السلام) এর নিকট নিয়ে এলেন,
যার প্রমাণ কুরআন করীমেই রয়েছে। বলা হয়েছেঃ
اِنَّا اَتِيْكَ بِهِ قَبْلَ اَنْ يَّرْ تَدَّ اِلَيْكَ طَرْفُكَ
অর্থাৎ আমি আপনার চোখের পলক ফেলার আগেই সেটি নিয়ে আসছি।
{সূরাঃ নাহল, আয়াতঃ ৪০, পারাঃ ৯}
এ থেকে জানা গেল যে, হযরত আসিফের এ খবরও ছিল যে সিংহাসনটি কোথায় ছিল। লক্ষ্য করুন, নিমিষেই তিনি ইয়ামন গেলেন আর এত ভারী একটি সিংহাসন নিয়ে ফিরে এলেন। এখন প্রশ্ন হলো হযরত সুলাইমান (عليه السلام) এর সিংহাসন আনার এ ক্ষমতা ছিল কিনা? এ প্রসঙ্গে অত্র আলোচনার ২য় অধ্যায়ে ইনশা আল্লাহ আলোকপাত করব।
মিরাজের সময় সমস্ত নবী (عليه السلام) বায়তুল মুকাদ্দাসে হুজুর (ﷺ) এর পিছনে নামায আদায় করেছেন। নামাযের পর হুজুর (ﷺ) ‘বুরাকে’ আরোহণপূর্বক অগ্রসর হচ্ছিলেন। বুরাকের গতির অবস্থার প্রতি লক্ষ্য করুন। তার দৃষ্টি সীমার শেষ প্রান্তে তার এক পা পড়তো। অন্য দিকে নবীগণের দ্রুত গতির প্রতি লক্ষ্য করুন এখনই বায়তুল মুকাদ্দাসে তাঁরা ছিলেন মুক্তাদী, এখনই তাঁরা বিভিন্ন আসমানে পৌঁছে গেলেন। হুজুর (ﷺ) ইরশাদ করেন, আমি অমুক আসমানে অমুক পয়গাম্বরের সঙ্গে সাক্ষাত করেছি। এ থেকে জানা যায় যে, বিদ্যুতের গতি সম্পন্ন বুরাক অপেক্ষাকৃত মন্থর গতিতেই অগ্রসর হচ্ছিল। কারণ দুলহা বা বর ঘোড়ায় চড়ে একটু ধীর গতিতেই অগ্রসর হয়ে থাকে। পক্ষান্তরে, মিরাজ উপলক্ষে অন্যান্য নবীগণের করণীয় কাজের সময় সুনির্দিষ্ট ছিল বিদায় তাঁরা এখন ছিলেন বায়তুল মুকাদ্দাসে, আবার মুহুর্তেই পৌঁছে গেলেন বিভিন্ন আসমানে।
❏ প্রখ্যাত শাইখ আবদুল হক মুহাদ্দিছ দেহলবী (رحمة الله) ‘আশিআতুল লুমআত’ গ্রন্থে ‘যিয়ারাতুল কুবুর’ শিরোনামের অধ্যায়ের শেষে লিখেছেন প্রতি বৃহস্পতিবার মৃত ব্যক্তিবর্গের রূহ সমূহ নিজ নিজ আত্মীয়-স্বজনদের কাছে গিয়ে তাদের ইসালে ছওয়াব এর প্রত্যাশী হয়। তাহলে যদি কোন মৃতব্যক্তির পরিবারবর্গ বা আত্মীয়-স্বজন বিদেশে থাকে, সেখানেও তাঁর রূহ পৌঁছবে।
আমার এসব বক্তব্য থেকে দ্বিধাহীনভাবে জানা গেল যে, সমস্ত জগতের উপর নজর রাখা, মাঝে মাঝে প্রত্যেক জায়গায় পরিভ্রমণ করা, একই সময়ে কয়েক জায়গায় বিদ্যমান থাকা ইত্যাদি এমন কতগুলো গুণ বা শক্তি যা মহাপ্রভু নিজ বান্দাদেরকে দান করেছেন।
এ বক্তব্য থেকে নিম্নোক্ত দু’টি বিষয় অবশ্যম্ভাবীরূপে প্রতীয়মান হয়ঃ
(ক) কোন বান্দাকে প্রত্যেক জায়গায় ‘হাযির-নাযির’ জ্ঞান করা ‘শির্ক’ নয়। ‘শির্ক’ হচ্ছে খোদার সত্ত্বা ও গুণাবলীতে অন্য কাউকে অংশীদার জ্ঞান করা। এখানে তা’ হচ্ছে না।
(খ) হুজুর (ﷺ) এর খাদিমগণের মধ্যে প্রত্যেক জায়গায় বিদ্যমান থাকার শক্তি নিহিত আছে, তাই হুজুর (ﷺ) এর মধ্যে এ গুণটি যে সর্বাধিক পরিমাণে আছে, তা বলাই বাহুল্য।
(২) পৃথিবীতে প্রত্যেক জায়গায় দানাপানি নেই বরং বিশেষ বিশেষ স্থানে তা বিক্ষিপ্তভাবে ছড়ানো রয়েছে। পানিতো কূপ, পুকুর, নদী ইত্যাদিতে রয়েছে, আর খাদ্য শস্য আছে ক্ষেত খামারে বা ঘরবাড়ী ইত্যাদিতে। কিন্তু বায়ু ও রোদ জগতের প্রত্যেক জায়গায় রয়েছে। দার্শনিক ও বৈজ্ঞানিকদের নিকট বায়ু শূন্য স্থানের অস্তিত্বই অসম্ভব। তাই স্বীকার করতে হবে যে, প্রত্যেক জায়গায় বায়ু রয়েছে। কারণ প্রত্যেক বস্তুর জন্য সবসময় আলো বাতাসের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। অনুরূপ, খোদার প্রত্যেক মাখলুকের জন্য সদা-সর্বদা হাবীবে খোদা আলাইহিস সালাম এর প্রয়োজনীয়তা আছে বৈকি, যা তাফসীরে রূহুল বয়ান ইত্যাদি গ্রন্থের বরাত দিয়ে প্রমাণ করেছি। সুতরাং, হুজুর (ﷺ) যে সব জায়গায় বিরাজমান, তা অবশ্যম্ভাবীরূপে প্রতীয়মান হয়।
(৩) হুজুর (ﷺ) হচ্ছেন সমস্ত সৃষ্টিজগতের মূল।
তিনি ইরশাদ করেছেন-
وَكُلُّ الْخَلْقِ مِنْ نُوْرِىْ
‘‘সমস্ত সৃষ্টি আমার নূর থেকে সৃষ্ট।’’
{ক. ইমাম জওজীঃ বয়ানুল মিলাদুন্নবীঃ ২২ পৃ.
খ. ইমাম আব্দুল গণী নাবালুসীঃ হাদীকাতুল নাদিয়াঃ ২/৩৭৫ পৃ. এ হাদিসের বিষয়ে বিস্তারিত জানতে ‘প্রমাণিত হাদিসকে জাল বানানোর স্বরূপ উন্মোচন’ ১ম খণ্ড দেখুন।}
শাখা প্রশাখায় মূলের অস্তিত্ব, শব্দাবলীর বিবিধ রূপের মধ্যে শব্দ-মূলের অস্তিত্ব এবং সমস্ত সংখ্যার মধ্যে মৌলিক ‘এক’ সংখ্যার অস্তিত্ব একান্ত জরুরী।
❏ এ প্রসঙ্গে জনৈক কবি খুব সুন্দর কথাই বলেছেন-
هر يك ان سے هے وه هروه هريك ميں هيں ايك علم حساب كے
بنے دوجهاں كى وه هى بناء وه نهيں جوان سں بنا نهيں،
অর্থাৎ সৃষ্টি মাত্রই তাঁর থেকে, তিনি প্রত্যেক কিছুতেই বিদ্যমাণ। তিনি যেন অংক শাস্ত্রের মৌল সংখ্যা ‘১’ (এক)। তিনিই দু’জাহানের ভিত্তি মূল। এমন কিছু নেই, যা তাঁর থেকে সৃষ্ট হয়নি।