বিষয় নং-২১: সমস্ত নবীগণ তাদের নিজ নিজ সমাধীতে জীবিত এবং সেখানে তাঁরা সালাতে রত:
সাম্প্রতিক কালে আহলে হাদিস নামক এক বাতিল মতবাদ প্রবল বেগে গজিয়ে উঠেছে। তাদের বাতিল আক্বিদার অন্যতম হলো রাসূল কে হায়াতুন্নবী না মানা। তারা অনেক সহীহ হাদিসটিও গোপন করে বলে থাকে, সমস্ত প্রাণীই মরণশীল আর তারা হাশরের ময়দান ছাড়া আর কোন সময়ই জীবিত হবে না। নাউযুবিল্লাহ! অনুরূপ টেলিভিশনের আলোচনায়ও কিছু নামধারী আলেমগণও এমনটি বলে থাকেন। তাই এ বিষয়ে কতিপয় হাদিসে পাক উল্লেখ করার জন্য আমাকে অনেকে অনুরোধ করেন। তাই এখানে কিছু হাদিসে পাক এবং সনদ পর্যালোচনা তুলে ধরছি। সুযোগ হলে বিস্তারিত গ্রন্থও লিখবো ইনশাআল্লাহ।
হাদিস নং-১
ইমাম বায্যার এবং আবূ ই‘য়ালা (رحمة الله)সহ আরও অনেকে সংকলন করেন-
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ - ﷺ -: الْأَنْبِيَاءُ أَحْيَاءٌ فِي قُبُورِهِمْ يُصَلُّونَ-
-‘‘হযরত আনাস বিন মালিক (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, নিশ্চয় আম্বিয়ায়ে কিরাম (আলাইহিমুস সালাম) তাঁদের নিজ নিজ কবরে জীবিত এবং তারা সেখানে নামায আদায় করেন।’’ ২৮১
২৮১.
ইমাম আবু ই‘য়ালা : আল মুসনাদ : ৬/১৪৭ পৃ: হা/৩৪২৫, ইমাম বায়হাকী : হায়াতুল আম্বিয়া : ৬৯-৭০পৃ., ইমাম হায়সামী : মাযমাউদ যাওয়াইদ : ৮/২১১ পৃ. হা/১৩৮১২, ইমাম আবু নুয়াইম ইস্পাহানী : তবকাতে ইস্পাহানী : ২/৪৪ পৃ:, ইমাম ইবনে আদী, আল-কামিল : ২/৭৩৯ পৃ:, ইমাম জালালুদ্দীন সূয়ুতী: আল-জামেউস সগীর : ১/২৩০ পৃ: হা/৩০৮৯, ইমাম জালালুদ্দীন সূয়ুতী: শরহুস সুদূর: পৃ. ২৩৭, আহলে হাদিস নাসিরুদ্দীন আলবানী: সিলসিলাতুস সহীহা: হাদিস নং- ৬২২, আহলে হাদিস নাসিরুদ্দীন আলবানী : সাহীহুল জামে : হা/২৭৯০, দায়লামী, আল-ফিরদাউস, ১/১১৯ পৃ. হা/৪০৩
সনদ পর্যালোচনা:
ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতি (رحمة الله) বলেন, হাদিসটি ‘হাসান’। আর আহলে হাদিসের অন্যতম ইমাম নাসিরুদ্দীন আলবানী তার দুটি গ্রন্থে হাদিসটি সহীহ বলে মত প্রকাশ করেছেন। (আলবানী: সিলসিলাতুল আহাদিসুল সহীহা: হা/৬২২, এবং সাহীহুল জামে : হা/২৭৯০)
অপরদিকে আল্লামা ইবনে হাজার হাইসামী (رحمة الله) উক্ত হাদিসটির সনদ সর্ম্পকে বলেন,
رَوَاهُ أَبُو يَعْلَى وَالْبَزَّارُ، وَرِجَالُ أَبِي يَعْلَى ثِقَاتٌ
-‘‘উক্ত হাদিসটি ইমাম আবু ই‘য়ালা ও ইমাম বায্যার (رحمة الله) বর্ণনা করেছেন, আর ইমাম আবু ই‘য়ালার বর্ণনার সকল রাবী সিকাহ বা বিশ্বস্ত।’’ (ইমাম হায়সামী : মাযমাউদ যাওয়াইদ : ৮/২১১পৃ. হা/১৩৮১২)
হাদিস নং-২
এ প্রসঙ্গে সহীহ মুসলিম শরীফে আনাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। যেখানে বর্ণিত আছে মি‘রাজে মূসা (عليه السلام)এর কবরের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় রাসূল (ﷺ) দেখেন-
مَرَرْتُ عَلَى مُوسَى وَهُوَ يُصَلِّي فِي قَبْرِهِ
-‘‘তিনি মুসা (عليه السلام) তাঁর কবরের মাঝে দাঁড়িয়ে সালাত পড়ছেন।’’ ২৮২
এ হাদিস থেকে সুস্পষ্ট প্রমাণিত হল হযরত মূসা (আ.) তাঁর মাজারে জিবীত বলেই রাসূল (ﷺ) দেখেছেন।
হাদিস নং-৩
হযরত আনাস বিন মালিক (رضي الله عنه) এর সূত্রে কিছু শব্দ বৃদ্ধি করে আরো হাদিস আছে এভাবে-
مَرَرْتُ - عَلَى مُوسَى لَيْلَةَ أُسْرِيَ بِي عِنْدَ الْكَثِيبِ الْأَحْمَرِ، وَهُوَ قَائِمٌ يُصَلِّي فِي قَبْرِهِ
-‘‘রাসূল (ﷺ) বলেন, আমি মি‘রাজের রাতে মূসা (عليه السلام)-এর কবরের পাশ দিয়ে যেতে গিয়ে দেখি তিনি রক্তিম লাল বালুর স্তুপের নিকট কবরে দাঁড়িয়ে নামায পড়ছেন।’’ ২৮৩
হাদিস নং-৪
অনুরূপ হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। আরও সহীহ হাদিস রয়েছে, তাতে পরিষ্কার হয়ে যাবে বিষয়টি-
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولَ اللهِ ﷺ :وَقَدْ رَأَيْتُنِي فِي جَمَاعَةٍ مِنَ الْأَنْبِيَاءِ، فَإِذَا مُوسَى قَائِمٌ يُصَلِّي، فَإِذَا رَجُلٌ ضَرْبٌ، جَعْدٌ كَأَنَّهُ مِنْ رِجَالِ شَنُوءَةَ، وَإِذَا عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ عَلَيْهِ السَّلَامُ قَائِمٌ يُصَلِّي، أَقْرَبُ النَّاسِ بِهِ شَبَهًا عُرْوَةُ بْنُ مَسْعُودٍ الثَّقَفِيُّ، وَإِذَا إِبْرَاهِيمُ عَلَيْهِ السَّلَامُ قَائِمٌ يُصَلِّي، أَشْبَهُ النَّاسِ بِهِ صَاحِبُكُمْ - يَعْنِي نَفْسَهُ - فَحَانَتِ الصَّلَاةُ فَأَمَمْتُهُمْ-
-‘‘রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, মি‘রাজের রাত্রে আম্বিয়া (আলাইহিমুস সালাম) এর এক বিরাট জামাতকে দেখেছি, মুসা (عليه السلام) কে তার কবরে সালাত পড়তে দেখেছি। তাকে দেখতে মধ্য আকৃতির চুল কোকরানো সানওয়া দেশের লোকের মত। আমি ঈসা (عليه السلام) কে দণ্ডামান অবস্থায় নামায পড়তে দেখেছি, তিনি দেখতে ওরওয়া ইবনে মাসউদ সাকাফীর মত ........... তার পরে নামাযের সময় আসলো আমি সকল নবী (আলাইহিমুস সালাম)-এর ইমামতি করলাম।’’ ২৮৪
হাদিস নং-৫
হযরত আবু দারদা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হুযূর (ﷺ) ইরশাদ করেন-
لَيْسَ مِنْ عَبْدٍ يُصَلِّي عَليّ إِلَّا بَلَغَنِيْ صَوْتُه حَيْثُ كَانَ قُلْنَا وَبَعْدَ وَفَاتِكَ قَالَ وَبَعْدَ وَفَاتِي إِنَّ اَللهَ حَرَّمَ عَلَى الْأَرْضِ أَنْ تَأْكُلَ أَجْسَادَ الْأَنْبِيَاءِ
-‘‘এমন ব্যক্তি নেই, যে আমার প্রতি দরূদ পাঠ করে যার আওয়াজ আমার কাছে পৌঁছে না (অর্থাৎ আমি তার আওয়াজ সরাসরি শুনি) সে যেখানে থাকুন না কেনো। সাহাবীগণ আরজ করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনার ওফাতের পরও শুনবেন? তিনি বললেন, আমার ওফাতের পরও। কেননা আল্লাহ তা‘আলা নবীদের দেহ ভক্ষণ করা যমীনের জন্য হারাম করে দিয়েছেন।’’ ২৮৫
পর্যালোচনা
এ হাদিস থেকে বুঝা গেল, রাসূল (ﷺ) হায়াতুন্নবী হওয়ার কারণে সরাসরি তাঁর রওজা মুবারক হতে আমাদের সবার দরূদের আওয়াজ শুনেন, আর এটাই ছিল সাহাবায়ে কিরামের আক্বিদা।
হাদিস নং-৬
হযরত আবু দারদা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হুযূর (ﷺ) একজনের প্রশ্নের জবাবে ইরশাদ করেন-
إِنَّ اللَّهَ حَرَّمَ عَلَى الْأَرْضِ أَنْ تَأْكُلَ أَجْسَادَ الْأَنْبِيَاءِ، فَنَبِيُّ اللَّهِ حَيٌّ يُرْزَقُ
-‘‘নিশ্চয় মহান রব তা‘আলা নবীদের শরীরকে যমীনের জন্য খাওয়া হারাম করে দিয়েছেন। ফলে নবীরা তাদের মাজারে জীবিত এবং সেখানে তাদের রিযিক দেয়া হয়।’’২৮৬
২৮২. ইমাম মুসলিম : আস-সহীহ : ৪/১৮৪৫ : হা/২৩৭৫, ইমাম নাসায়ী : সুনান : ৩/১৫১ : হা/১৬৩৭, ইমাম আহমদ : মুসনাদ : ৩/১২০ পৃ:, ইমাম বগভী : শরহে সুন্নাহ : ১৩/৩৫১ : হা/৩৭৬০, ইমাম ইবনে হিব্বান : আস-সহীহ : ১/২৪১ : হা/৪৯, ইমাম আবি শায়বাহ : আল মুসান্নাফ : ১৪/৩০৮ : হা/১৮৩২৪, ইমাম নাসায়ী : সুনানে কোবরা : ১/৪১৯ : হা/১৩২৯, ইমাম আবু ই’য়ালা : আল-মুসনাদ : ৭/১২৭ : হা/৪০৮৫, ইমাম মানাবী : ফয়যুল কাদীর : ৫/৫১৯ পৃ: হা/৩০৮৯, আল্লামা মুকরিযি : ইমতাঈল আসমা’আ : ১০/৩০৪ পৃ:
২৮৩. ইমাম মুসলিম : কিতাবুল ফাযায়েল : ৪/১৮৪৫ পৃ. : হা/২৩৭৫, ইমাম আহমদ : আল মুসনাদ : ৩/১৪৮ পৃ:, ইমাম বায়হাকী : দালায়েলুল নবুয়ত : ২/৩৮৭ পৃ:, ইমাম মানাবী : ফয়যুল কাদীর : ৫/৫১৯ পৃ:, ইমাম সুবকী : সিফাস সিকাম: ১৩৭ পৃ. ইমাম মুকরিযি : ইমতাঈ আসমা : ৮/২৫০ পৃ:, ইমাম মুকরিযি : ইমতাঈল আসমা : ১০/৩০৪ পৃ:, ইমাম সুয়ূতি : হাবীলিল-ফাতওয়া : ২/২৬৪ পৃ:, ইমাম সাখাভী : ক্বওলুল বদী : ১৬৮ পৃ, ইমাম আব্দুর রায্যাক : আল-মুসান্নাফ : ৩/৫৭৭ পৃ. হা/৬৭২৭
২৮৪. ইমাম মুসলিম : সহীহ : ফাদ্বায়েলে মূসা (আঃ) : ১/১৫৭ : হা/১৭৩, খতিব তিবরিজী : মিশকাতুল মাসাবীহ : ৩/২৮৭ : হা/৫৮৬৬, ইমাম বায়হাকী : দালায়েলুল নবুয়ত : ২/৩৮৭ পৃ:, ইমাম তকি উদ্দিন সুবকী :শিফাউস-সিকাম : ১৩৫-১৩৮পৃ. ইমাম সূয়ূতী : আল-হাভীলিল ফাতওয়া : ২/২৬৫পৃ:, ইমাম সাখাভী : কওলুল বদী : ১৬৮পৃ., ইমাম মুকরিজী : ইমতাঈল - আসমা: ৮/২৪৯ পৃ:
২৮৫. আল্লামা ইবনুল কাইয়্যুম জাওযিয়্যাহ, জালাউল আফহাম, ১৮১ পৃ. হা/১৪৪, দারু ইবনে জাওযী, বয়রুত, লেবানন।
২৮৬. ইমাম ইবনে মাযাহ, আস-সুনান, ১/৫২৪ পৃ. হা/১৬৩৭, খতিব তিবরিযি, মিশকাত, ১/৪৩১ পৃ. হা/১৩৬৬, আহলে হাদিস আলবানীও একে সহীহ বলেছেন।
পর্যালোচনা
এ হাদিস থেকে সুস্পষ্ট বুঝা গেল যে, শুধু আমাদের নবীই নন বরং সমস্ত নবীরাই তাদের মাজারে জীবিত এবং সেখানে তাদের রিজিক দেয়া হয়। আর এ বিষয়ে সকলে একমত যে দেহ এবং রুহ একসাথে না হলে রিজিক গ্রহণ করার কথা আসে। তাই দেহ ও রূহ এসাথে ছাড়া রিযকের কথা যারা বলেন তাদের কথা হাস্যকরের ন্যায়।
হাদিস নং-৭
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন-
حَيَاتِي خَيْرٌ لَكَمْ تُحْدِثُونَ وَيُحَدَثُ لَكَمْ، وَوَفَاتِي خَيْرٌ لَكَمْ تُعْرَضُ عَلَيَّ أَعْمَالُكُمْ، فَمَا رَأَيْتُ مِنْ خَيْرٍ حَمَدَتُ اللَّهَ عَلَيْهِ، وَمَا رَأَيْتُ مِنْ شَرٍّ اسْتَغْفَرْتُ اللَّهَ لَكَمْ-
-‘‘আমার হায়াত তোমাদের জন্য উত্তম বা রহমত। কেননা আমি তোমাদের সাথে কথা বলি তোমরাও আমার সাথে কথা বলতে পারছ। এমনকি আমার ওফাতও তোমাদের জন্য উত্তম বা নেয়ামত। কেননা তোমাদের আমল আমার নিকট পেশ করা হবে এবং আমি তা দেখবো। যদি তোমাদের কোন ভালো আমল দেখি তাহলে আমি আল্লাহর নিকট প্রশংসা করবো, আর তোমাদের মন্দ কাজ দেখলে আল্লাহর কাছে তোমাদের জন্য (তোমাদের পক্ষ হতে) ক্ষমা প্রার্থনা করবো।’’ ২৮৭
২৮৭.
বায্যার, আল-মুসনাদঃ ৫/৩০৮পৃ. হাদিসঃ ১৯২৫, সুয়ূতি, জামিউস সগীরঃ ১/২৮২পৃ. হাদিসঃ ৩৭৭০-৭১, ইবনে কাছির, বেদায়া ওয়ান নিহায়া, ৪/২৫৭পৃ. মুত্তাকী হিন্দী, কানযুল উম্মাল, ১১/৪০৭পৃ. হা/৩১৯০৩, ইমাম ইবনে জাওযী, আল-ওফা বি আহওয়ালি মোস্তফা, ২/৮০৯-৮১০পৃ. আল্লামা ইবনে কাছির, সিরাতে নববিয়্যাহ, ৪/৪৫পৃ. উক্ত হাদিস প্রসঙ্গে ইমাম হাইসামী (رحمة الله) বলেন-
رَوَاهُ الْبَزَّارُ، وَرِجَالُهُ رِجَالُ الصَّحِيحِ.
-‘‘উক্ত হাদিসের সমস্ত বর্ণনাকারী সিকাহ বা বিশ্বস্ত।’’ (ইমাম হাইছামী, মাযমাউয-যাওয়াইদ, ৯/২৪পৃ. হা/১৪২৫০)
পর্যালোচনা
এ হাদিস থেকে প্রমাণ হল রাসূল (ﷺ) তাঁর আপন রওজা শরীফে জীবিত এবং সেখান থেকে তিনি আমাদের ভাল মন্দ সব কর্ম অবলোকন করেন।
হাদিস নং-৮
ইমাম আহমদ ও ইমাম হাকিম নিশাপুরী (رحمة الله) সংকলন করেন-
حَدَّثَنَا حَمَّادُ بْنُ أُسَامَةَ، قَالَ: أَخْبَرَنَا هِشَامٌ، عَنْ أَبِيهِ عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ: كُنْتُ أَدْخُلُ بَيْتِي الَّذِي فِيهِ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ، وَإِنِّي وَاضِعٌ ثَوْبِي وَأَقُولُ: إِنَّمَا هُوَ زَوْجِي وَأَبِي، فَلَمَّا دُفِنَ عُمَرُ مَعَهُمْ فَوَاللَّهِ مَا دَخَلْتُ إِلَّا وَأَنَا مَشْدُودَةٌ عَلَيَّ ثِيَابِي حَيَاءً مِنْ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ
-“হযরত আয়িশা (رضي الله عنه) বলেন, ইতোপূর্বে আমি রাসূল (ﷺ) এর ঘরে (রওজায়) প্রবেশ করতাম সাধারণ কাপড় পরিধান করে এবং বলতাম, ইনি আমার স্বামী ও ইনি আমার পিতা। আর যখন হযরত উমর (رضي الله عنه) কে সেখানে দাফন করা হল, আল্লাহর কসম! আমি আমার কাপড় অত্যন্ত সতর্কতার সাথে পরিধান করে সেখানে প্রবেশ করতাম, যেমনটি হযরত উমর (رضي الله عنه) জীবিতকালে করতাম।” ২৮৮
২৮৮. মুসনাদে আহমদ, হা/২৫৬৬০; ইমাম হাকিম, আল-মুস্তাদরাক, হা/৪৪০২; ইমাম আবু বকর খিলাল, আস-সুন্নাহ, হা/৩৬৪; মিশকাত, হা/১৭৭১; ইমাম হায়সামী: মাযমাউয যাওয়াইদ, হা/১২৭০৪; জামেউল ফাওয়াইদ, হা/৭৮৬
✧ এই হাদিস সম্পর্কে ইমাম হাকিম নিশাপুরী (رحمة الله) বলেন-
هَذَا حَدِيثٌ صَحِيحٌ عَلَى شَرْطِ الشَّيْخَيْنِ
-‘‘এই হাদিস বুখারী ও মুসলিম (رحمة الله) এর শর্ত অনুযায়ী সহীহ্।’’ (আল-মুস্তাদরাক, হা/৪৪০২)
✧ ইমাম নুরুদ্দীন হায়সামী (رحمة الله) বলেন:
رَوَاهُ أَحْمَدُ، وَرِجَالُهُ رِجَالُ الصَّحِيحِ
-“ইমাম আহমদ (رحمة الله) ইহা বর্ণনা করেছেন, সকল রাবীগণ বিশুদ্ধ।” (ইমাম হায়সামী: মাযমাউয যাওয়াইদ, হা/১২৭০৪)
পর্যালোচনা
এই হাদিস দ্বারা দুটি বিষয় প্রমাণিত হয়।
প্রথমত. উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা (رضي الله عنه) স্বয়ং রাসূল (ﷺ), হযরত আবু বকর সিদ্দিক (رضي الله عنه) এবং হযরত উমর (رضي الله عنه)‘র মাজারের কাছে যেতেন এবং যিয়ারত করতেন। তাই মহিলাদের যিয়ারত প্রমাণিত। দ্বিতীয়ত. যখন হযরত উমর (رضي الله عنه) কে আবু বকর (رضي الله عنه)‘র সাথে দাফন করা হলো তখন থেকে মা আয়িশা (رضي الله عنه) যিয়ারত করার সময় পর্দার দিকে খিয়াল বা সতর্কতা অবলম্বন করতেন; তিনি এটি এজন্যই করতেন তাঁর আক্বিদা ছিল যে তাঁরা সকলেই দুনিয়ার জীবনের ন্যায় তাকে দেখতেছেন এবং তাঁর আওয়াজ শুনতেছেন।
❏ আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) লিখেন-
قَالَ الطِّيبِيُّ: فِيهِ أَنَّ احْتِرَامَ الْمَيِّتِ كَاحْتِرَامِهِ حَيًّا
-‘‘ইমাম তিব্বী (رحمة الله) বলেন, (এ হাদিস থেকে বুঝা গেল) ওফাত হওয়ার পরে তেমনই তা‘যিম করতে হবে যেমনটি জীবিত অবস্থায় (জাহিরী হায়াতে) করা হতে।’’ (মোল্লা আলী ক্বারী, মেরকাত, ৪/১২৬০ পৃ. হা/১৭৭১)
হাদিস নং-৯
হযরত সালমা (رضي الله عنه) বলেন-
دَخَلْتُ عَلَى أُمِّ سَلَمَةَ، وَهِيَ تَبْكِي فَقُلْتُ: مَا يُبْكِيكِ؟ قَالَتْ: رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي الْمَنَامِ يَبْكِي وَعَلَى رَأْسِهِ وَلِحْيَتِهِ التُّرَابُ، فَقُلْتُ: مَا لَكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ قَالَ: شَهِدْتُ قَتْلَ الْحُسَيْنِ آنِفًا
-‘‘আমি উম্মাহাতুল মু‘মিনীন মা উম্মে সালামা (رضي الله عنه)‘র হুজরা শরীফে প্রবেশ করলাম এবং দেখলাম যে তিনি কাঁদছেন। আমি বললাম, আপনি কাঁদছেন কেন? তিনি বললেন, একটু আগে আমি রাসূল (ﷺ) কে স্বপ্নে দেখলাম যে তাঁর মাথা মুবারকে এবং দাঁড়ি মুবারকে ধুলা বালি লেগে আছে। অতঃপর আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনার এ অবস্থা কেন? তিনি বললেন, এই মাত্র আমি হুসাইনের শাহাদাতের স্থানে উপস্থিত ছিলাম।’’ ২৮৯
২৮৯. ইমাম হাকেম নিশাপুরী, আল-মুস্তাদরাক, ৪/২০ পৃ. হা/৬৭৭৪, পরিচ্ছেদ:
ذِكْرُ أُمِّ الْمُؤْمِنِينَ أُمِّ سَلَمَةَ بِنْتِ أَبِي أُمَيَّةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا ,
তিনি একে সহীহ বলেছেন-
سكت عنه الذهبي في التلخيص
-‘‘ইমাম যাহাবী (رحمة الله) তার তালখীছ গ্রন্থে এ সনদের বিষয়ে নীরব ছিলেন।’’ ইমাম তিরমিযি, আস-সুনান, ৬/১২০ পৃ. হা/৩৭৭১, পরিচ্ছেদ,
: بَابُ مَنَاقِبِ أَبِي مُحَمَّدٍ الْحَسَنِ بْنِ عَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ وَالْحُسَيْنِ بْنِ عَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا ,
ইমাম তাবরানী, মু‘জামুল কাবীর, ২৩/৩৭৩ পৃ. হা/৮৮২, খতিব তিবরিযি, মিশকাত, ৩/১৭৭৩ পৃ. হা/৬১৬৬, মোল্লা আলী ক্বারী, মেরকাত, ৯/৩৯৮০ পৃ. হা/৬১৬৬, তিনি বলেন-
قَوِّي -‘
‘এ হাদিসটি শক্তিশালী।’’ এবং ৯/৩৯৮৬ পৃ. হা/৬১৮০, ইমাম ইবনে আছির, জামেউল উসূল, ৯/৩৫ পৃ. হা/৬৫৬৭
পর্যালোচনা
এ হাদিস থেকে বুঝা গেল যে, কারবালায় কি ঘটছে তা আল্লাহর নবী (ﷺ) তাঁর আপন রওজা মোবারক থেকেই দেখতে পেয়েছেন, এজন্যই তিনি সেখানে উপস্থিত হয়েছেন। এ হাদিসের (شَهِدْتُ) এর ব্যাখ্যায় আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) লিখেছেন- أَيْ: حَضَرْتُ -‘‘অর্থাৎ আমি উপস্থিত ছিলাম।’’ ২৯০
২৯০. মোল্লা আলী ক্বারী, মেরকাত, ৯/৩৯৮০ পৃ. হা/৬১৬৬
এ হাদিস থেকে বুঝা গেল পৃথিবীর যে কোন প্রান্তে রাসূল (ﷺ)‘র উপস্থিত হওয়া তাঁর ইখতিয়ারাধীন। তাই হায়াতুন্নবী না হলে তা কিভাবে সম্ভব!
হাদিস নং-১০
সুবিখ্যাত হাদিস গ্রন্থ ‘মিশকাত’ শরীফের ‘ইছবাতু আযাবিল কবর’ শীর্ষক অধ্যায়ে হযরত আনাস বিন মালেক (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, কবরে যখন মৃত ব্যক্তিকে শায়িত করা হবে তখন-
فَيَقُولَانِ مَا كُنْتَ تَقُولُ فِي هَذَا الرَّجُلِ لِمُحَمَّدٍ ﷺ
-‘‘মুনকার-নকীর ফিরিশতাদ্বয় কবরে শায়িত মৃত ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসা করবেন, ওনার (মুহাম্মদ রাসূলুল্লাহ ) সম্পর্কে দুনিয়ায় তুমি কি ধারণা পোষণ করতে? ২৯১
২৯১. খতিব তিবরিযীঃ মেশকাতঃ ১/৪৫ পৃ. হাদিসঃ ১২৬, মুসলিমঃ আস-সহীহঃ ৪/২২০০ হাদিসঃ ১৮৭০, বুখারীঃ আস-সহীহঃ ৩/২০৫, হাদিসঃ ১৩৩৮, মুসলিমঃ আস-সহীহঃ ১/৪৪২ পৃ. হাদিসঃ ৭০, নাসায়ীঃ সুনানে কোবরাঃ ৪/৯৭ পৃ. হাদিসঃ ২০৫১, আবু দাউদঃ আস্-সুনানঃ ৫/১১৪ পৃ. হাদিসঃ ৪৭৫২
পর্যালোচনা
❏ এ হাদিস প্রসঙ্গে ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতি (رحمة الله) লিখেন-
قَالَ النَّوَوِيّ قيل يكْشف للْمَيت حَتَّى يرى النَّبِي صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهِي بشرى عَظِيمَة لِلْمُؤمنِ ان صَحَّ
-‘‘মুসলিম শরিফের ব্যাখ্যাকার ইমাম নববী (رحمة الله) বলেন, মৃত ব্যক্তির দৃষ্টি থেকে আবরণ উঠিয়ে নেয়া হয়, যার ফলে সে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সরাসরি দেখতে পায়। এটা তার জন্য বড়ই শুভ সংবাদ। যদি সে সঠিক পথে থাকে।’’ ২৯২
২৯২. ইমাম সুয়ূতি, শরহে সুনানে ইবনে মাযাহ, ১/৩১৬ পৃ. হাশীয়ায়ে মেশকাতঃ ২৪ পৃ. নূর মুহাম্মদ কুতুবখানা, করাচী, পাকিস্তান।
তাই রাসূল (ﷺ) সর্ব অবস্থায়ই হাযির-নাযির আছেন। আমরা আমাদের পাপ রাশির কারণে দেখি না।
❏ ইমাম কাস্তালানী (رحمة الله) এ হাদিসের ব্যাখ্যায় লিখেন-
فَقِيْلَ يُكْشَفُ لِلْمَيِّتِ حَتَّى يَرْىَ النَّبِىَّ عَلَيْهِ السَّلاَمُ وَهِىَ بَشْرَى عَظِيْمَةُ لِلْمُؤْمِنِ اِنْ صَحَّ.
-‘‘এও বলা হয়েছে যে, তখন মৃত ব্যক্তির দৃষ্টির আবরণ অপসারণ করা হয়, যার দরুণ সে নবী আলাইহিস সালামকে দেখতে পায়। এটি মুসলমানদের জন্য বড় সুখের বিষয়, যদি সে সঠিক পথে থাকে।’’ ২৯৩
২৯৩.ইমাম কাস্তাল্লানীঃ ইরশাদুস্-সারীঃ ২/৪৬৪ পৃ.
✧ আহলে হাদিসদের ইমাম আযিমাবাদী এবং মোবারকপুরীও অনুরূপ তাদের হাদিসের ব্যাখ্যা গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। ২৯৪
২৯৪. আযিমাবাদী, আওনুল মা‘বুদ, ১৩/৬২ পৃ. মোবারকপুরী, তুহফাতুল আহওয়াজী, ৪/১৫৫ পৃ.
তাই প্রমাণিত হল যে রাসূল (ﷺ) হায়াতুন্নবী হওয়ার কারণে তিনি প্রত্যেক কবরে উপস্থিত হতে পারবেন, এটাই সঠিক আক্বিদা।
হাদিস নং-১১
প্রসিদ্ধ একটি হাদিস
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ؓ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ ﷺ قَالَ: مَا مِنْ أَحَدٍ يُسَلِّمُ عَلَيَّ إِلَّا رَدَّ اللَّهُ عَلَيَّ رُوحِي حَتَّى أَرُدَّ عَلَيْهِ السَّلَامَ
-‘‘হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নিশ্চয় রাসূলে পাক (ﷺ) ইরশাদ করেন, যখন কোনো উম্মত আমার প্রতি সালাম প্রেরণ করে, আমার রূহ মোবারককে আল্লাহ্ তা‘য়ালা (যেহেতু অতীতে) আমার নিকট ফিরত দিয়েছেন যে, ফলে আমি তাদের প্রদানকৃত সালামের জওয়াব দেই।’’ ২৯৫
২৯৫.
ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল : আল মুসনাদ : ২/৫২৭ পৃ. হা/১০৮৬৭, ইমাম তাবরানী : মুজামুল আওসাত : ৩/২৬২ পৃ. : হা/৩০৯২ এবং ৯৩২৩, বায়হাকী, আস-সুনানুল কোবরা, ৫/২৪৫ পৃ. হা/১০০৫০ ও দাওয়াতুল কাবীর, ১/২৬১ পৃ. হা/১৭৮, ইমাম বায়হাকী : শুয়াবুল ঈমান : ৬/৫২ পৃ. হা/৫১৮১ এবং ৪১৬১, আল্লামা মানাবী : ফয়জুল কাদীর : ৫/৪৬৭ পৃ., ইমাম মুনযির : আত্-তারগীব ওয়াত্-তারহীব : ২/৩৬২ পৃ : হা/২৫৭৩, ইমাম ইবনে হাজার হায়সামী : মাযমাউয যাওয়াইদ : ১০/১৬২ পৃ., ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী : আল হাজীলীল্ ফাত্ওয়া : ১/২০০ পৃ. এবং হুসনুল মাকাসিদ ফি আমালিল মওলুদ : ৭-৮ পৃ., ইমাম সাখাভী : কওলূল বদী : ১৪২ পৃ. এবং মাকাসিদুল হাসানা: ৪২৭ পৃ. হাদিস- ৯৮২, আল্লামা আজলূনী: কাশফুল খাফা: ২/১৭৩ পৃ. হা/২২৪৫, জালালুদ্দীন সুয়ূতি: আদদুররুল মানছুর: ১/২৩৭ পৃ., ইমাম আবূ দাউদ, আস্-সুনান, ২/২১৮পৃ. হা/২০৪১, ইমাম রাহবিয়্যাহ, আস্-সুনান, ১/৪৫৩ পৃ. হা/৫২৬.
উক্ত হাদিসে দরূদ শরীফে সালাম ফিরিশতারা রাসূল (ﷺ) এর নিকট পৌঁছে দেন উল্লেখ নেই, বরং রাসূল (ﷺ) পৌঁছানো ছাড়া নিজেই শুনেন এবং তার জবাব দেন। তাই প্রমাণিত হয় তিনি হায়াতুন্নবী বলেই আমাদের সালাম শুনতে পান।
❏ ইমাম সাখাভী (رحمة الله) ও আল্লামা আজলূনী (رحمة الله) বলেন,
أحمد وأبو داود عن أبي هريرة به مرفوعا، وهو صحيح
-‘‘উক্ত হাদিসটি ইমাম আহমদ ও ইমাম আবু দাউদ (رحمة الله) হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) হতে মারফূ (নবীজীর বাণী হিসেবে) সূত্রে বর্ণনা করেছেন, উক্ত হাদিসটির সনদ সহীহ বা বিশুদ্ধ।’’ ২৯৬
২৯৬.
ক. ইমাম সাখাভী, মাকাসিদুল হাসানা: ৪২৭ পৃ. হা/৯৮২
খ. আল্লামা আজলূনী, কাশফুল খাফা: ২/১৭৩, হা/২২৪৫
গ. ইমাম জুরকানী, শারহুল মাওয়াহেব, ১২/২০২ পৃ.
হাদিস নং-১২
ইমাম দারাকুতনী এবং সুয়ূতি (رحمة الله)সহ আরও অনেকে সংকলন করেন-
عَن ابْن عمر ؓ قَالَ كُنَّا مَعَ رَسُول الله ﷺ فَرفع رَأسه إِلَى السَّمَاء فَقَالَ وَعَلَيْكُم السَّلَام وَرَحْمَة الله فَقَالَ النَّاس يَا رَسُول الله مَا هَذَا قَالَ مر بِي جَعْفَر بن أبي طَالب فِي مَلأ من الْمَلَائِكَة فَسلم عَليّ
-‘‘হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, (একদা) আমরা হুযূর পুরনুর (ﷺ) এর খেদমতে উপস্থিত ছিলাম। হঠাৎ হুযূর (ﷺ) তার মাথা মোবারক তুলে ফরমালেন, ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রাহ্মাতুল্লাহ। অতপর উপস্থিত লোকেরা (সাহাবীরা) বলল, ইয়া রাসূলুল্লাহ (ﷺ)! আপনি কার সালামের জবাব দিলেন। তিনি বললেন, হযরত জাফর ইবনে আবু তালিব (رضي الله عنه) ফিরেশতাদের একটি দলসহ আমার নিকট দিয়ে গমন করেছিলেন, তিনি আমাকে সালাম প্রদান করেছেন। আমি তার উত্তর দিলাম।’’ ২৯৭
২৯৭.
ক.ইমাম জালালুদ্দীন সূয়তী : খাসায়েসুল কোবরা : ১/৪৬০-৪৬১ পৃ. হা/১৪৩৫-১৪৩৬
খ. ইমাম দারাকুতনী, গারায়েবু মালেক, ১/৫৫ পৃ.
গ. ইমাম বুরহানুদ্দীন হালাবী, সিরাতে হালাবিয়্যাহ, ৩/১০০ পৃ.
ঘ. ইমাম ইবনে সালেহ শামী, সবলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, ১১/১০৯ পৃ.
ঙ. ইমাম জুরকানী, শারহুল মাওয়াহেব, ৩/৩৫২ পৃ.
পর্যালোচনা:
উক্ত হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হলো, সাহাবী যা শুনেন নি রাসূল (ﷺ) তা শুনতেন এবং আরো প্রমাণিত হল ওফাতের পরও সাহাবীরা যেখানে ইচ্ছা সেখানে যেতে পারেন। তাহলে রাসূল (ﷺ) এর অবস্থা কিরূপ হবে!
হাদিস নং-১৩
ইমাম বায়হাকী (رحمة الله)সহ আরও অনেক ইমাম হযরত আনাস ইবনে মালেক (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন-
إِنَّ الْأَنْبِيَاءَ لَا يُتْرَكُونَ فِي قُبُورِهِمْ بَعْدَ أَرْبَعِينَ لَيْلَةً وَلَكِنَّهُمْ يُصَلُّونَ بَيْنَ يَدَيِ اللَّهِ حَتَّى يُنْفَخَ فِي الصُّورِ
-‘‘নবীগণকে ৪০ রাতের পরে তাঁদের কবরের মধ্যে রাখা হয় না; কিন্তু তারা মহান আল্লাহর সামনে সালাতে রত থাকেন; শিংগায় ফুঁক দেয়া পর্যন্ত।’’ ২৯৮
২৯৮. ইমাম দায়লামী, আল-ফিরদাউস, ১/২২২ পৃ. হা/৮৫২, ইমাম কাস্তাল্লানী, ইরশাদুস সারী, ২/৪৩৩ পৃ., ইমাম সুয়ূতি, আল-হাভীলিল ফাতওয়া, ২/১৭৯ পৃ., জুরকানী, শারহুল মাওয়াহেব, ১/২০ পৃ., ইবনে সালেহ শামী, সবলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, ১২/৩৫৮ পৃ., ইমাম মুকরীযি, ইমতাউল আসমা, ১০/৩৩০ পৃ.
ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর তার ‘হাদীসের নামে জালিয়াতি’ গ্রন্থের ৩৬৭ পৃষ্ঠায় এ হাদিসটিকে জাল প্রমাণের অনেক অপচেষ্টা করেন। তিনি দাবী করেন এ সনদে ‘আহমদ ইবনু আলী আল-হাসনবী’ মিথ্যাবাদী রাবী রয়েছেন অথচ কোনো মুহাদ্দিস এমনটি বলেননি।
✧ তবে আল্লামা জুরকানী (رحمة الله) এ হাদিস বিষয়ে লিখেন-
وَأَخْرَجَ أَيْضًا مِنْ رِوَايَةِ مُحَمَّدِ بْنِ أَبِي لَيْلَى عَنْ ثَابِتٍ عَنْ أَنَسٍ رَفَعَهُ:.....وَمُحَمَّدٌ سَيِّئُ الْحِفْظِ.
-‘‘মুহাম্মদ ইবনে আবি লাইলা (رحمة الله) হযরত সাবিত বুনানী (رحمة الله) হতে তিনি হযরত আনাস ইবনে মালিক (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন, তিনি এটি মারফু হিসেবে বর্ণনা করেন, ..........সনদে মুহাম্মদ ইবনে আবি লাইলা হেফযে বা স্মরণশক্তিতে ক্রুটি রয়েছে।’’(জুরকানী, শরহে মুয়াত্তায়ে মালেক, ৪/৪৪৭ পৃ.)
✧ ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) এ হাদিসটি উল্লেখ করেন এবং লিখেন-
وَأَخْرَجَهُ الْبَيْهَقِيُّ أَيْضًا مِنْ رِوَايَةِ مُحَمَّدِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ أَبِي لَيْلَى أَحَدِ فُقَهَاءِ الْكُوفَةِ عَنْ ثَابِتٍ بِلَفْظٍ آخَرَ ...... وَمُحَمَّدٌ سَيِّئُ الْحِفْظِ
-‘‘মুহাম্মদ ইবনে আবি লাইলা (رحمة الله) যিনি কুফা নগরীর একজন বিজ্ঞ ফকীহ ছিলেন, তিনি হযরত সাবিত বুনানী (رحمة الله) হতে তিনি হযরত আনাস ইবনে মালিক (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন, তিনি এটি মারফু হিসেবে বর্ণনা করেন, ..........সনদে মুহাম্মদ ইবনে আবি লাইলা হেফ্যে বা স্মরণশক্তিতে ক্রুটি রয়েছে।’’ (ইবনে হাজার আসকালানী, ফতহুল বারী, ৬/৪৮৭ পৃ.)
✧ আল্লামা জুরকানী (رحمة الله) তার আরেকটি গ্রন্থে লিখেছেন-
قال الحافظ في سنده: محمد بن عبد الرحمن بن أبي ليلى سيئ الحفظ
-‘‘হাফেয ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) সনদ সম্পর্কে বলেন, মুহাম্মদ বিন আব্দুর রহমান রয়েছেন তাঁর হেফ্যে ক্রটি রয়েছে।’’ (শারহুল মাওয়াহেব, ৭/৩৭০ পৃ.)
✧ রাবী ‘ইবনে আবি লাইলা’ অনেক বড় আলিম ছিলেন, তবে শেষ বয়সে কেউ কেউ বলেছেন স্মৃতিশক্তিতে লোপ পেয়েছিল। ইমাম যাহাবী (رحمة الله) তাঁর জীবনীতে লিখেন-
ابنُ أَبِي لَيْلَى، العَلاَّمَةُ، الإِمَامُ، مُفْتِي الكُوْفَةِ، وَقَاضِيهَا
-‘‘ইবনে আবি লাইলা: তিনি ছিলেন আল্লামা, যুগের ইমাম, কুফার মুফতি এবং কাযি।’’ (ইমাম যাহাবী, সিয়ারু আলামিন নুবালা, ৬/৩১০ পৃ. ক্রমিক.১৩৩)
✧ তিনি আরও লিখেন-
حَدَّثَ عَنْهُ: شُعْبَةُ، وَسُفْيَانُ بنُ عُيَيْنَةَ، وَزَائِدَةُ، وَالثَّوْرِيُّ
-‘‘তাঁর থেকে হাদিস বর্ণনা করেছেন ইমাম শু‘বা, সুফিয়ান ইবনে উয়াইনা, যায়েদা এবং ইমাম সুফিয়ান সাওড়ী (রহ.) প্রমুখ।’’(ইমাম যাহাবী, সিয়ারু আলামিন নুবালা, ৬/৩১০ পৃ. ক্রমিক.১৩৩)
✧ সকল মুহাদ্দিসদের নিকট প্রসিদ্ধ যে ইমাম শু‘বা (رحمة الله) দুর্বল রাবী থেকে হাদিস বর্ণনা করতেন না। যাহাবী (رحمة الله) আরও লিখেন- كَانَ أَفْقَهَ أَهْلِ الدُّنْيَا.
-‘‘তিনি দুনিয়ার তাঁর যামানার সবচেয়ে বড় ফকীহ ছিলেন।’’(ইমাম যাহাবী, সিয়ারু আলামিন নুবালা, ৬/৩১১ পৃ. ক্রমিক.১৩৩)
❏ তিনি আরও লিখেন-
قَالَ العِجْلِيُّ: كَانَ فَقِيْهاً، صَاحِبَ سُنَّةٍ، صَدُوقاً، جَائِزَ الحَدِيْثِ، وَكَانَ قَارِئاً لِلْقُرْآنِ، عَالِماً بِهِ....قَالَ أَبُو زُرْعَةَ: هُوَ صَالِحٌ، لَيْسَ بِأَقوَى مَا يَكُوْنُ. وَقَالَ أَبُو حَاتِمٍ: مَحَلُّهُ الصِّدْقُ، وَكَانَ سَيِّئَ الحِفظِ، شُغلَ بِالقَضَاءِ، فَسَاءَ حِفْظُه
-‘‘ইমাম ইজলী (رحمة الله) বলেন, তিনি ছিলেন একজন মুজতাহিদ ফকীহ, সুন্নাতের অনুসারী, সত্যবাদী, তাঁর হাদিস গ্রহণ করা বৈধ, তিনি কুরআনের ক্বারী ছিলেন এবং এ বিষয়ে জ্ঞানী (মুফাসসির) ছিলেন, .....ইমাম আবূ যারওয়া (رحمة الله) বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় সৎ ব্যক্তি, ইমাম আবু হাতেম (رحمة الله) বলেন, তিনি সত্যবাদীদের একজন, তবে হেফ্যে সামান্য ক্রটিছিল, কেননা তিনি কাযির পদে বেশি ব্যস্ত থাকতেন তাই হেফ্যে সামান্য ক্রুটি দেখা দেয়।’’(ইমাম যাহাবী, সিয়ারু আলামিন নুবালা, ৬/৩১২ পৃ. ক্রমিক.১৩৩)
সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! আমি এ গ্রন্থের শুরুতে আলোচনা করেছি যে, রাবীর হেফ্যে সামান্য ক্রটি থাকলে তার হাদিসের মান ‘হাসান লিজাতিহী’ পর্যায়ে হয়ে যায়। সে নীতিমালা অনুসারে এ হাদিসের মান কমপক্ষে ‘হাসান’।
✧ আল্লামা মানাভী (رحمة الله) লিখেন-
له شواهد ترقيه إلى درجة الحسن
-‘‘এ হাদিসটির শাওয়াহেদ বা সাক্ষ্য রয়েছে, সেহেতু হাদিসটির মান ‘হাসান’।’’ (মানাভী, ফয়যুল ক্বাদীর, ৫/৫০১ পৃ. হা/৮১১৫)
❏ এ হাদিসটি উল্লেখ করে ইমাম কাস্তালানী (رحمة الله) লিখেন-
وله شواهد فى صحيح مسلم منها: قوله- صلى الله عليه وسلم-: مررت بموسى وهو قائم يصلى فى قبره
-‘‘এ হাদিসটির শাওয়াহেদ পাওয়া যায় সহীহ মুসলিমের এক হাদিসে, সেখানে রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, আমি মূসা (عليه السلام)-এর কবরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম দেখতে পেলাম তিনি দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করছেন।’’ (আল-মাওয়াহিবুল্লাদুনিয়্যাহ, ৩/৬০০ পৃ.)
❏ আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) এ হাদিসের ব্যাখ্যায় লিখেছেন-
فَإِنْ صَحَّ فَالْمُرَادُ أَنَّهُمْ لَا يُتْرَكُونَ يُصَلُّونَ إِلَّا هَذَا الْمِقْدَارَ ثُمَّ يَكُونُونَ مُصَلِّينَ بَيْنَ يَدَيِ اللَّهِ تَعَالَى
-‘‘নিশ্চয় বিশুদ্ধ কথা হলো এ হাদিস দ্বারা উদ্দেশ্য এ নির্ধারিত দিন ছাড়া তাঁরা (কবরে) সালাত বন্ধ করেন না, নির্ধারিত সময় অতিবাহিত হওয়ার পর তাঁরা মহান রবের দরবারে সালাত আদায় করেন।’’ (জামেউল ওসায়েল, ১/৫৩ পৃ.)
❏ ইমাম ইবনুল হজ্জ ‘আল-মাদখাল’ গ্রন্থে ও ইমাম শিহাবুদ্দীন কাস্তালানী (رحمة الله) তার ‘মাওয়াহেবুল্লাদুন্নিয়া’ গ্রন্থে “বাবুল জিয়ারাতুল কুবুর শরীফ” শীর্ষক অধ্যায়ে বলেছেন-
وَقَدْ قَالَ عُلَمَاؤُنَا رَحْمَةُ إذْ لَا فَرْقَ بَيْنَ مَوْتِهِ وَحَيَاتِهِ أَعْنِي فِي مُشَاهَدَتِهِ لِأُمَّتِهِ وَمَعْرِفَتِهِ بِأَحْوَالِهِمْ وَنِيَّاتِهِمْ وَعَزَائِمِهِمْ وَخَوَاطِرِهِمْ، وَذَلِكَ عِنْدَهُ جَلِيٌّ لَا خَفَاءَ فِيهِ.
-‘‘আমাদের সুবিখ্যাত উলামায়ে কিরাম বলেন যে, হুযূর (ﷺ) এর জীবন ও ওফাতের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। তিনি নিজ উম্মতকে দেখেন, তাদের অবস্থা, নিয়ত, ইচ্ছা ও মনের কথা ইত্যাদি জানেন। এগুলো তার কাছে সম্পূর্ণ রূপে সুস্পষ্ট, বরং এই কথার মধ্যে কোন রূপ অস্পষ্টতা ও দুর্বোধ্যতার অবকাশ নেই।’’ ২৯৯
২৯৯.
ক. আল্লামা ইমাম কাস্তাল্লানী : মাওয়াহেবে লাদুন্নীয়া : দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ : ৪/৫৮০ পৃ.
খ. আল্লামা ইবনুল হাজ্ব : আল মাদখাল, ১/২৫২ পৃ.
গ. আল্লামা ইমাম জুরকানী : শরহুল মাওয়াহেব : ৪/৩১২ পৃ:
ঘ. আল্লামা মুফতী আহমদ ইয়ার খাঁন নঈমী : জা‘আল হক, ১/২৪২ পৃ:
উক্ত বিষয়ে শত শত হাদিস রয়েছে কিতাব দীর্ঘ হওয়ার আশংকায় সব হাদিস উল্লেখ করা সমীচীন মনে করি নি।
❏ এ প্রসঙ্গে আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ূতি (رحمة الله) বলেন,
وَالْأَنْبِيَاءُ أَوْلَى بِذَلِكَ، فَهُمْ أَجَلُّ وَأَعْظَمُ، وَمَا نَبِيٌّ إِلَّا وَقَدْ جَمَعَ مَعَ النُّبُوَّةِ وَصْفَ الشَّهَادَةِ، فَيَدْخُلُونَ فِي عُمُومِ لَفْظِ الْآيَةِ.
-‘‘আম্বিয়ায়ে কেরাম জীবিত থাকার ব্যাপারে শহীদগণ অপেক্ষা উত্তম, উন্নত ও শ্রেষ্ঠতম। নিঃসন্দেহে আল্লাহ্ তা‘য়ালা প্রত্যেক নবীর মধ্যে নবুওয়াত ও শাহাদাত উভয় গুণকে একত্রিত করেছেন। সুতরাং আম্বিয়ায়ে কেরামও আয়াতের ব্যাপকতায় অন্তর্ভূক্ত।’’৩০০
৩০০.
ক. আল্লামা আব্দুর রহমান জালালুদ্দীন সূয়তী, আল-হাভীলিল ফাতাওয়া, ২/১৮০ পৃ.
খ. আল্লামা আব্দুর রহমান জালালুদ্দীন সূয়তী : শরহুস সুদুর : ২৫৬ পৃ.
❏ আল্লামা জালালুদ্দীন সূয়ূতি (رحمة الله) সর্বশেষ হায়াতুন্নবী (ﷺ)-এর হাদিসের মানের অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে উল্লেখ করেন-
حَيَاةُ النَّبِيِّ ﷺ فِي قَبْرِهِ هُوَ وَسَائِرِ الْأَنْبِيَاءِ مَعْلُومَةٌ عِنْدَنَا عِلْمًا قَطْعِيًّا لِمَا قَامَ عِنْدَنَا مِنَ الْأَدِلَّةِ فِي ذَلِكَ وَتَوَاتَرَتْ الْأَخْبَارُ، وَقَدْ أَلَّفَ الْبَيْهَقِيُّ جُزْءًا فِي حَيَاةِ الْأَنْبِيَاءِ فِي قُبُورِهِمْ، فَمِنَ الْأَخْبَارِ الدَّالَّةِ عَلَى ذَلِكَ
-“হায়াতুন্নবী (ﷺ) তথা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) স্বীয় রওযা মোবারকে জীবিত এবং সমস্ত নবীগণই জীবিত যা অকাট্য জ্ঞান দ্বারা পরিজ্ঞাত। কেননা, এ ব্যাপারে আমাদের নিকট দলীল প্রমাণ অকাট্য এবং এ প্রসঙ্গে অনেক মুতাওয়াতির হাদিস বর্ণিত হয়েছে।” ৩০১ (আনবিয়াউল আযকিয়া)
৩০১. আল্লামা আব্দুর রহমান জালালুদ্দীন সূয়তী : আল হাভীলিল ফাতাওয়া : ২/১৭৮ পৃ.
সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! উপরের আলোচনা থেকে প্রমাণিত হল যে, আমাদের নবীসহ সকল নবীগণ তাদের আপন আপন মাজারে জীবিত, তাতে কোনো সন্দেহ নেই, যে এটা অস্বীকার করবে সে কাফির তাতেও কোনো সন্দেহ নেই, কেননা এ বাতিল আক্বিদা ধারণ মানে মুতাওয়াতির হাদিসের বিরোধীতা করা।