◾মোল্লা আলী ক্বারী (رضي الله عنه) মিরকাতে বলেছেন-“সব সংঘটিত বস্তু যা লওহে মাহফুজে রক্ষিত আছে। এতে হিকমত এ যে, ফেরেস্তা আগামী বস্তুর সম্পর্কে অবগত হন। যখন ঐ কথাগুলাে লিখিত বস্তুর মােতাবেক সংঘটিত হয়, তখন তাদের ঈমান ও তাসদীক বৃদ্ধি পায় এবং (তাঁরা) ফেরেস্তারা জেনে নেন, কে প্রশংসার উপযােগী আর কে তিরস্কারের। সুতরাং তারা প্রত্যেকের পরিচয় জেনে নেন।”
◾শাহ আবদুল আজীজ (رحمة الله) তাফসীরে “ফতহুল আজীজে”বর্ণনা করেন-“লাওহে মাহফুজ সম্পর্কে অবগত হওয়ার উদ্দেশ্য হলাে, বস্তুতঃ যেসকল কর্মসমূহ সংঘটিত হওয়ার আছে তা বাইরে সংঘটিত হওয়ার পূর্বেই এর জ্ঞান হয়ে যাওয়া, তা লওহ-এর লিখা দেখে হােক কিংবা তা ব্যতীত হােক। আর এটা আল্লাহর ওলীদেরও হাসিল হয়। এটাও বলা হয়েছে, লওহে মাহফুজ অবগত হওয়া হলাে এর নকসাসমূহ অবগত হওয়া। এটাও কতেক আউলিয়ায়ে কিরাম থেকে পরম্পরাগতভাবে বর্ণিত আছে।”
◾ইমাম সাতনুফী (رحمة الله)'র ন্যায় ইমামগণ রাসুলুল্লাহ (ﷺ)-এর অধস্তন পুরুষ যিনি জ্বিন ও মানব উভয়ের সাহায্য ও প্রার্থনা শ্রবণকারী এবং উভয় জাহানের ফরিয়াদ প্রেরণকারী, আমাদের আকা গাউছে আজম আবু মুহাম্মদ আবদুল কাদের আল হাসানী ওয়াল-হােসাইনী জিলানী (رضي الله عنه) আল্লাহ তাঁর উপর সন্তুষ্ট এবং তাকেও আমাদের উপর সন্তুষ্ট রাখুন। উভয় জাহানে আমাদের উপর তার প্রতিপালকের নুরের ফয়েজ প্রদান করুন; তাঁর নিকট হতে বিশুদ্ধ সনদে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলে থাকতেন, ‘আমার চক্ষু লওহে মাহফুজে।
"আমি বলছি, এটাই হলাে আমাদের প্রতিপালকের বাণী তিনি বরকতময় রাত শবে বরাত সম্পর্কে বলেছেন-
◾“এ রাত্রে বন্টন করা হয় সব হিকমতময় কর্ম আমার নির্দেশে।”
আল্লাহর এ সাক্ষ্য দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, ঐ পঞ্চ অদৃশ্য জ্ঞানসমূহ থেকে কিয়ামতের জ্ঞান ব্যতীত অপর চারটির সকল এককসমূহ তা' সংঘটিত হবার পূর্বেই আল্লাহ তায়ালা সে ফেরেস্তাদের অবগত করেন, যারা সে কর্মের কার্য নির্বাহক।
আমি বলছি, অনুরূপভাবে হযরত ইসরাফীল
(عليه السلام) কিয়ামতের নির্দিষ্ট সময় নির্ণয় পূর্বক সংঘটিত হবার পূর্বেই তা অবগত হবেন, যদিও তা মুহূর্তের জন্য হয়! আর তা সে দিন যখন সিঙ্গা ফুঁক দেয়ার নির্দেশ প্রদান করা হবে এবং তিনি নিজের অপর পাখাও বিছিয়ে দেবেন। তাঁর একটি পাখা রাসুলে সৈয়দে আলম হুজুর পুরনূর (ﷺ)-এর শুভ পদার্পনের সময় বিছিয়ে দিয়েছিলেন। সুতরাং তিনি তা নিক্ষেপ করার সাথে সাথেই ফিরিস্তা তাঁর নীচ থেকে সিঙ্গা মুখে উঠিয়ে নেবেন।
◾রাসুলে পাক (ﷺ) ইরশাদ করেন- “আমি কিভাবে বিশ্রাম করবাে সিঙ্গা বাহকতাে সিঙ্গা মুখে নিয়ে নিয়েছেন এবং কান লাগিয়ে রয়েছেন, আর কপাল নুয়ে অপেক্ষা করছেন কখন ফুৎকারের নির্দেশ দেয়া হবে।”
এ হাদীস ইমাম তিরমিজী হযরত আবু সাঈদ খুদরী
(رضي الله عنه)থেকে বর্ণনা করেছেন।
আর ঐ ফিরিস্তা স্বীয় দু’উরুর উপর দন্ডায়মান হয়েছে, ইসরাফীলের ঐ পাখার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে রয়েছেন যা এখনও তিনি বিস্তৃত করে রেখেছেন। সুতরাং যখন তিনি তাঁর ঐ পাখা পতিত করবেন, তখন এ সিঙ্গায় ফুঁক দিবেন। সিঙ্গা ফুৎকারের অনুমতি এবং কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার মধ্যে তাঁর পাখা নিক্ষেপই হলাে ফয়সালা। আর এটা একটি নড়াচড়া। আর এ নড়াচড়া কালের মধ্যেই হয়, তাহলে অবশ্যই কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার পূর্বেই তাঁর কাছে এর জ্ঞান হয়ে যাবে যদিও এক মুহূর্তের জন্য হয়। সুতরাং এ জ্ঞান যখন একজন নৈকট্যবান ফিরিস্তার জন্য প্রতীয়মান হলো, তখন সকলের চেয়ে প্রিয় হাবীব মুহাম্মদ (ﷺ)-এর জন্য অসম্ভব উক্তিকারী কে? যিনি কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার আনুমানিক দু'হাজার বছর পূর্বেই তিনি সে সম্পর্কে জেনেছেন এবং যদিও হুজুরের কাছে নির্দেশ এসেছে তা অপরকে অবহিত না করার জন্য।
মুতাজিলারা যখন কারামাতে আউলিয়ার অস্বীকৃতিতে এ আয়াত থেকে দলীল গ্রহণ করেছেন “আল্লাহ গায়ব সম্পর্কে অবহিত, তিনি তাঁর পছন্দনীয় রাসুলদের ব্যতীত কাউকে এ সম্পর্কে অবহিত করেন না।” তখন জনৈক আল্লামা শরহুল মাকাসিদে তাদের উত্তরে বলেছেন “গায় এখানে ব্যাপক নয় বরং মুতলাক (শর্তহীন অথবা (معين) এক নির্দিষ্ট সময় অর্থাৎ কিয়ামতের সময় এবং এর জন্যই উপরােক্ত আয়াত :قرينة কারণ' (তাতে কিয়ামতের বর্ণনা রয়েছে)। আর ফিরিস্তা অথবা বশরের (মানুষের) কতেক রাসুল এ সম্পর্কে জ্ঞাত হওয়া অসম্ভব নয়।” অর্থাৎ এ প্রেক্ষিতে রাসুলগণের পৃথকীকরণ বিশুদ্ধ হয়েছে। এমতাবস্থায় আউলিয়ায়ে কিরামের জন্যই শুধু ক্বিয়ামতের জ্ঞান অস্বীকৃতি হবে। আর আল্লাহর পছন্দনীয়, রাসুলগণের জন্য এটাও প্রমাণিত হবে। পৃথকীকরণই এর পক্ষে দলীল।
◾বরং ইমাম কুস্তুলানী (رضي الله عنه) ইরশাদুস-সারী শরহে বুখারী’তে বলেছেন-
“আল্লাহ ব্যতীত কেউ জানেন না, কিয়ামত কখন সংঘটিত হবে কিন্তু তার পছন্দনীয় রাসুলগণ, তাঁদের মধ্যে আল্লাহ যাকে ইচ্ছে এ সম্পর্কে অবহিত করেন। আর আউলিয়া কিরাম হলেন, রাসুলের অনুসারী, তাঁরা তাঁর থেকেই জ্ঞান অর্জন করেন।”
◾(১) বরং শাহ আবদুল আজীজের (رحمة الله) পিতা শাহ ওয়ালী উল্লাহ (رحمة الله) “তাফহীমাতে ইলাহিয়্যায়” স্বয়ং নিজের অবস্থার বর্ণনা দিতে গিয়ে উল্লেখ করেন যে, তাঁকে বিশেষ অবস্থায় ঐ সময় বর্ণনা করা হয়েছে, যখন কিয়ামত সংঘটিত হবে এবং আসমান বিদীর্ণ হবে এবং অতঃপর যখন সংজ্ঞা ফিরে পেলেন, তখন তা সম্পূর্ণরূপে রক্ষিত থাকেনি। ঝাপসা স্বপ্নের ন্যায় হয়ে গেলো। এমন ওলীদের জন্য যখন এটা (কিয়ামতের জ্ঞান) প্রমাণিত হলাে তখন মুস্তফা (ﷺ)-এর প্রতিপালকের জন্য পবিত্রতা। সৈয়দুল আম্বিয়া (ﷺ) এর জন্য কেন তা অসম্ভব হবে? আরবাঈনে ইমাম নবীর ব্যাখ্যা গ্রন্থ “ফতুহাতে ইলাহিয়্যায়” এরূপ তাঁর দ্বিতীয় ব্যাখ্যা গ্রন্থ “ফতুহুল মুবীনের পাদটীকায় রাসুলে সৈয়দে আলম (ﷺ)-এর জন্য কিয়ামতের জ্ঞান হাসিল হওয়া সম্পর্কে উল্লেখ আছে। সত্যকথা হলাে, যেমন এক জমাত ওলামায়ে কিরাম বলেছেন যে, আল্লাহ তায়ালা আমাদের নবী (ﷺ)কে দুনিয়া থেকে উঠিয়ে নিবেন না, যতক্ষণ না হুজুরের নিকট যা কিছু গুপ্ত, রয়ে গেছে তা তাঁকে অবহিত করা হবে। হাঁ, কতেক বস্তু তাঁকে প্রকাশনা করার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে, আর কতেক প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছেন। অনুরূপ উসমাবী আসসালাতুল আহমদীয়ার ব্যাখ্যায় এটাকে সঠিক বলে ব্যক্ত করেছেন আমি বলছি, এগুলাে সব আল্লাহ তায়ালার এ বাণীর নুরের এক ঝলক “আমি তােমাদের উপর কুরআন অবতীর্ণ করেছি যা প্রত্যেক বস্তুর সুস্পষ্ট বিবরণ সম্বলিত।” যেমন আল্লাহ তায়ালা তার এ তকরীর আমাকে ইলহাম করেছেন। সুতরাং হক ভেসে উঠেছে কুরআনের নুর দ্বারা, যেমন সূর্য থেকে মেঘ চলে যায়।
টিকা——————————————
(১) আমি বড় আরিফ ও প্রসিদ্ধ ওলী আমার সরদার আবদুস সালাম আসমার (আল্লাহ তায়ালা আমাদের উপর তার ফয়েজ জারী রাখুন, আল্লাহ তার উপর সন্তুষ্ট হােন এবং তাঁর উসিলায় আমাদের এভাবে করুন) কালাম দেখেছি। তার বিশ্লেষণ এ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা হুজুর (ﷺ)কে কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার সময় শতাব্দী,সাল এবং মাস সম্পর্কে জ্ঞাত করেছেন। আর তা ইহসান প্রকাশের স্থলে উল্লেখ করেন এটা আল্লাহর জন্য কঠিন কিছু নয়। এটা লিখেছেন ফকীর হামদান জুয়েরী, মদীনায়ে হামদানিয়া। এটা ঐ সর্বশেষ টীকা যদ্বারা কিতাবের প্রথমভাগকে আল্লামা হামদান সৌন্দর্যময় করেছেন। বরং আমার কিতাবের বৃহৎ ভাগের শুভ্রতাকে আরাে উজ্জ্বল করেছেন। মহান অনুগ্রহকারী আল্লাহ তাঁর প্রচেষ্টাকে প্রশংসিত করুন আমীন। আর সকল প্রশংসা মহান প্রতিপালকের জন্য।
——————————————
যদি বিশুদ্ধকারীরা নিজ শব্দাবলীতে দাবীকে প্রত্যাবর্তন করে এবং বলে যে, উত্তরদাতা তার দলীলসমূহের বিশ্লেষণ করেছেন, তাহলে তার বাক্য দ্বারা দলীলসমূহেরই স্বীকৃতি বুঝা যায়। আর সম্ভব হবে, তারা মৌলিক দাবীতে কোন শব্দ পরিবর্তন কিংবা বাক্য বৃদ্ধি করা অথবা কোন বর্ণ বিয়ােগ করা পছন্দ করেছেন, এ কারণে তা নিজেদের বক্তব্যে বর্ণনা করেছেন। এটাও সম্ভব যে, তারা দাবীর পুনরাবৃত্তি অধিক ব্যাখ্যা, তাকীদ ও বিশ্লেষণের জন্য করেছেন। সুতরাং বিশুদ্ধকারীদের উপর কোন হুকুম প্রয়ােগ করা যাবে না যে, তারা মৌলিক দাবী স্থায়ী করে রেখেছেন অথবা এর উপর কিছু আপত্তি করেছেন। আর যখন মৌলিক দাবীতে এ উক্তি রয়েছে তাহলে তােমার ঐ বহির্ভূত ও অতিরিক্ত শব্দাবলীর কি ধারণা? যেগুলাে না দলীলের সাথে সম্পর্কিত, না দাবীর সাথে। এটা তাই, যা বিজ্ঞজনিত পদ্ধতির চাহিদা। এ বক্তৃতা থেকে আপনাদের নিকট সুস্পষ্ট হয়েছে। যে, আমি অভিমত লিখার সময় অতিরিক্ত বিষয়ের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দিই নি। আর এ মুহুর্তে আমার এটাও স্মরণে আসছে না যে, তার আসল পান্ডুলিপিতে কি শব্দ ছিলাে, কিন্তু এ পুস্তিকায় লেখক যে আরবী অনুবাদ করেছেন তাতে শব্দ এভাবে ছিলাে, দরুদ ও সালাম প্রেরণ করছি সে সত্ত্বার প্রতি, যিনি আদি-অন্ত, প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য এবং প্রত্যেক বস্তু সম্পর্কে জ্ঞাত। যিনি এ আয়াতের প্রকাশস্থল-(তিন আদি, তিনি অন্ত, তিনি জাহির, তিনি বাতিন আর তিনিই সকল বিষয় সম্পর্কে অবহিত) এতে কোন সন্দেহকারীর সন্দেহের অবকাশ নেই এবং এটা কোন আশ্চর্যের বিষয় নয় যে, মুদ্রণ জনিত বিভ্রাট مظير (প্রকাশস্থল) শব্দটি من هو দ্বারা পরিবর্তিত হয়েছে। কেননা, ঐ কাতিবতাে আমার অভিমতে ‘মুহাম্মদ (ﷺ) এর স্থলে (মাজমাউন) পর্যন্ত লিখে দিয়েছিলো। দেখুন, ২৯ পৃষ্ঠার শেষে ভুলে ২৬ পৃঃ দেখানাে হয়েছে। কথা যদি এমন হয়, তাহলে তাতাে খুবই চমৎকার। যদি আমরা মেনেও নিই যে, মৌলিক বক্তব্য তাই ছিলাে যা মুদ্রিত হয়েছে, তাহলেও আমি উত্তরদাতাকে জানাচ্ছি যে, ঐ আলিম সুন্নী বিশুদ্ধ আক্বীদা সম্পন্ন এবং ভ্রান্ত মাযহাব ও কুচক্রীদের জন্য ক্ষতিকারক। আর প্রত্যেক মুসলমানের উপর ফরযে আইন যে, স্বীয় ভাইয়ের উক্তিকে যথাসম্ভব উত্তম অর্থ ও বিশ্লেষণের উপর প্রয়ােগ করা। এ থেকে যেন বঞ্চিত না হন কিন্তু যারা হৃদয়ের নিরাপত্তা থেকে বঞ্চিত থেকেছে। যেমন শ্রদ্ধেয় ইমামগণ এর উপর সুস্পষ্ট উক্তি ব্যক্ত করেছেন।
অতঃপর দ্বিতীয় জবাব হলাে আপনাদের কি হয়েছে যে, ‘মান’ শব্দ সাকিন সহকারে ইসমে মাওসুল (সম্বন্ধবাচক সর্বনাম) বানিয়ে পড়ছেন? তা মানে নুনে তাশদীদ’ ও ‘যের' সহকারে আয়াতে করীমার দিকে সম্পর্ক করে কেন পড়ছেন না? অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালা তাঁর উপর দরুদ প্রেরণ করেন যিনি এ আয়াতের ভিত্তিতে (আমাদের জন্য) অনুগ্রহ, আর তিনি হলেন মুহাম্মদ (ﷺ) যেমন আল্লাহ তায়ালা কাফিরদের বলেন, “তারা পরিবর্তন করেছে আল্লাহর নি’মাত (অনুগ্রহ)কে"। রঈসুল মােফাসসেরীন হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) (এ আয়াতের ব্যাখ্যায়) বলেন-‘আল্লাহর নিমাত দ্বারা উদ্দেশ্য মুহাম্মদ (ﷺ) তিনি আল্লাহর বিশেষ নি’মাত এবং কুরআনের মিন্নাত (ইহসান)। আর বিশেষ করে এ আয়াতের উল্লেখ মর্যাদার উপযুক্ততার জন্যই করা হয়েছে। কেননা, রাসুল পাক (ﷺ) হলেন সমগ্র জাহানের প্রথম সৃষ্টি। অতএব, সকল সৃষ্টিসমূহ তাঁর সৃষ্টির কারণেই সৃষ্ট। তিনি (সৃষ্টির দিক দিয়ে) সকলের মধ্যে সর্ব প্রথম, আর প্রেরণের দিক দিয়ে সর্বশেষ রাসুল। অতএব, সকল নবীর প্রতি যত, প্রকার জ্ঞান অবতীর্ণ হয়েছে, তা সবই হুজুর (ﷺ)কে প্রদান করেছেন। আর তিনি স্বীয় মুজিজাবলী দ্বারা সমুজ্জল এবং তাতে তাঁর গায়বের সংবাদও দেয়া হয়েছে। আর হুজুর (ﷺ) স্বীয় জাত সম্পর্কে অপ্রকাশ্য যে, তিনি আল্লাহ তায়ালার জাত ও তাঁর চিরস্থায়ী গুণাবলীর প্রকাশস্থল।
সুতরাং হুজুর (ﷺ) আল্লাহ তাবারাকা ওয়াতায়ালার অবগত করার মাধ্যমে প্রথম দিবস থেকে শুরু করে শেষ দিবস, পর্যন্ত যা কিছু হয়েছে, আর যা কিছু হবে সব কিছু সম্পর্কে অবগত হয়েছেন। সুতরাং আল্লাহ তায়ালা এ উজ্জ্বল পাঁচটি নাম দ্বারা তাঁর উপর ইহসান করেছেন আর তাঁকে প্রেরণের মাধ্যমে আমাদের উপর মহা অনুগ্রহ করেছেন। কেননা, তিনি এ সম্মানিত আয়াতের ভিত্তিতে নি’মাত (অনুগ্রহ বিশেষ)।
তৃতীয় জবাবঃ এতে কোন সন্দেহ নেই যে, রাসুলে পাক (ﷺ) আল্লাহ তায়ালার অনেক সুন্দরতম গুণবাচক নাম দ্বারা মহিমান্বিত হয়েছেন। আমাদের সরদার (আমার) সম্মানিত পিতা নির্ভরযােগ্য গ্রন্থ “সুরুরুল কুলুবে ফি যিকরিল মাহবুব”-এ সাতষট্টিটি নাম গণনা করেছেন। এ অধম “আল উরুসুল আসমাউল হুসনা ফিমা লিনাবিয়্যেনা মিনাল আসমায়িল হুসনা” নামক গ্রন্থে পছন্দনীয়। সংখ্যক বৃদ্ধি করেছি এবং এর গুঢ়রহস্য, মূল উৎস ও মুলতত্ত্ব বর্ণনা করেছি। প্রকাশ থাকে যে,
اَوَّل(আদি) آخر(অন্ত) ظاهر (প্রকাশ্য) باطن(গুপ্ত)। পবিত্রতম নামগুলাে আল্লাহ তায়ালা স্বীয় মাহবুব
(ﷺ)কে প্রদান করেছেন। এরপরও আমার জরুরী নয় এ পঞ্চ অদৃশ্যজ্ঞানের অংশসমূহের বিস্তারিত বর্ণনা করি, যা আওলিয়ায়ে কিরামগণ বলে গিয়েছেন। তাঁদের সরদার এবং তাদের উপর দরুদ ও সালাম এটা ঐ সমুদ্র যার সীমা জানা নেই। এ গুলাের গভীরতা পরিমাপ করতে চাইলে বাক্য শৃঙখলা থেকে বের হয়ে যাবে। আর যাকে কুরআন আরােগ্য দান করে নি, তার রােগ কোথায় গেলে আরােগ্য লাভ করবে? আমরা আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি। প্রিয় হাবীব (ﷺ)-এর উপর দরুদ ও, সালাম।
- প্রথম খণ্ড সমাপ্তঃ
দ্বিতীয় ভাগ
আল্লাহর প্রশংসা! হক প্রকাশিত ও সত্য প্রতিভাত হয়েছে। হেদায়তের সূর্যের উপর কোন পর্দা অবশিষ্ট রইলােনা। এটা আমাদের ও মানুষের উপর আল্লাহর অনুগ্রহ। কিন্তু অনেক লােক শােকরিয়া জ্ঞাপন করেনা। আর যে ব্যক্তি এ নগন্য বান্দার বক্তব্যে এমন ব্যক্তির ন্যায় দৃষ্টিপাত করে যে গভীরভাবে চিন্তা ভাবনা, উপকারিতা হাসিল করতে চায়, প্রত্যক্ষদর্শী ও উপস্থিত হৃদয়ের সাথে শ্রবণ করে। তার নিকট মারমুখী গোয়ারের প্রত্যেক প্রশ্নের বিশুদ্ধ জবাব সুস্পষ্ট হয়ে যাবে ! কিন্তু বিশ্লেষণ অধিক উপকারী এবং বর্ণনার উপযুক্ত। সুতরাং আমরা যেন প্রতিটি প্রশ্নের উপর পৃথক পৃথক আলােচনা করি। আল্লাহর কাছেই সাহায্য প্রার্থী।
প্রথম প্রশ্নঃ
এ বক্তব্য সম্পর্কে সুশিক্ষিত ও বুদ্ধিজীবি’ যা আবুযযুকা সাহেব (আল্লাহ তায়ালা তাঁকে হেফাজত করুক) তার “আ’লামুল আযকিয়া” নামক হিন্দু স্থান থেকে সর্বশেষে প্রকাশিত পুস্তিকায় উল্লেখ করেছেন যে, আল্লাহ তায়ালা দরুদ প্রেরণ করুন তার উপর যিনি আদি অন্ত, প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য ও সকল বস্তু সম্পর্কে জ্ঞাত।
আমি বলছি, প্রথম জবাবঃ এ পুস্তিকার গ্রন্থকার (আল্লাহ তায়ালা তাঁকে হিফাজত করুক), আমার নিকট অভিমতের জন্য প্রেরণ করেছিলেন, আমিও তাতে অভিমত প্রদান করেছি, যা আপনাদের চক্ষুর সম্মুখে বিদ্যমান। যার বক্তব্য হলাে-“জায়েদের বক্তৃতা হক ও বিশুদ্ধ। আর বকরের ধারণা বাতিল ও পরিত্যক্ত। নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা স্বীয় হাবীব আকরাম (ﷺ)কে পূর্ব ও পরবর্তীদের সকল জ্ঞান প্রদান করেছেন। পূর্ব থেকে পশ্চিম, আরশ থেকে ফরশ পর্যন্ত সবই তাঁকে প্রত্যক্ষ করিয়েছেন, আসমান-জমিনের রাজত্বের প্রত্যক্ষদর্শী করেছেন। প্রথম দিবস থেকে শেষ দিবস পর্যন্ত সকল বর্তমান ভবিষ্যতের সব কিছুর জ্ঞান প্রদান করেছেন। যেমন বিজ্ঞ ও কামিল উত্তরদাতা প্রয়ােজনীয় প্রমাণাদী পূর্ণ বিশ্লেষণসহ সুস্পষ্টরূপে সীমা মুনিব তাঁকে হেফাজত করুন) বর্ণনা করেছেন। যদি তাও যথেষ্ট না হয়, তাহলে কুরআনে করীমই সাক্ষ্য, বিচারক। এবং হক-বাতিলের মধ্যে পার্থক্যকারী। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, “আমি আপনার উপর কিতাব অবতরণ করেছি, যা প্রত্যেক বস্তুর বিবরণ সম্বলিত।”
এ দলিলের শেষ পর্যন্ত যা আমি এ সম্মানিত অভিমত প্রার্থীর পক্ষে লিপিবদ্ধ ও বর্ণনা করেছি, আর সর্বসাধারণও যে হাঁটি হাঁটি পা পা করে সম্মুখে অগ্রসর হয়েছে সেও জানতে পারবে যে, আমি এ অভিমতে শুধুমাত্র এ উক্তিরই জিম্মা নিয়েছি, যে বিস্তারিত বিশ্লেষণ ও প্রয়ােজনীয় দলীলাদি উত্তরদাতা উল্লেখ করেছেন। আমি ঐ পুস্তিকার প্রতিটি বর্ণে দৃষ্টি দিইনি। এমনকি দাবীর পদ্ধতি তাতে যেভাবে বর্ণিত হয়েছে এর প্রতিও লক্ষ্য রাখা হয়নি। এ কারণে আমি নিজ বক্তব্যে দাবীর পদ্ধতি পৃথক পৃথকভাবে ব্যক্ত করেছি। আর যে ব্যক্তি জ্ঞানের খেদমত করেন অথবা বিবেক ও বিবেচনার (দৃষ্টিভঙ্গি) নিয়ে আলিমের সংস্পর্শে বসেন, তিনি অভিমত ও বিশুদ্ধকারীদের শব্দাবলীতে পার্থক্য করে নেন। কেননা, অভিমত প্রদানকারীরা যদি এটা বলে যে, আমরা এ পুস্তিকা অথবা ফতােয়া আদ্যোপান্ত চিন্তা-ভাবনা করে দেখেছি, যেমন গাঙ্গুহী সাহেব ‘বরাহীনে জ্বাতেয়ার’ অভিমতে লিপিবদ্ধ করেছেন। তাহলে তাঁরা এ পুস্তিকা কিংবা ফতােয়ায় যা কিছুর বর্ণনা রয়েছে সব বিশুদ্ধতার জিম্মা নিয়েছেন। আর সে সময় . তাতে যে সকল অর্থ ও বক্তব্য রয়েছে তা বই ঐ অভিমত দাতার, দিকে। সম্পর্কিত করা যাবে। আর যদি বলে, আমি এর সর্বত্রে দেখেছি এবং উপকার পেয়েছি, তাহলে নিঃসন্দেহে সে কিতাবের বিষয়ের সৌন্দর্য বর্ণনা করেছেন।
বাকী রইলাে, বর্ণনার পদ্ধতি, দলীলের বিশুদ্ধতা, শব্দাবলী এবং বক্তব্য; তাঁরা এগুলাে সম্পর্কে নিশ্ৰুপতা অবলম্বন করেছেন। অস্বীকার কিংবা স্বীকৃতি কোনটিই করেননি। অনুরূপ ফতােয়ার বিশুদ্ধতায় বিশুদ্ধকারীদের উক্তি যে, এর। হুকুম বিশুদ্ধ। বরং কখনাে একটি গুপ্ত দৃষ্টিতে এ দিকেই ইঙ্গিত করে যে, দলীল কিংবা শব্দাবলীতে কিছু অপছন্দনীয়তা রয়েছে তবুও শুধুমাত্র হুকুমকে বিশুদ্ধ বলেছেন অথবা মূল শব্দ বৃদ্ধি করে দিয়েছেন (যে, শব্দের হুকুম বিশুদ্ধ)। তাহলে। এটা ত্রুটির উপর অধিক দলীল হবে। দেখুন, মাওয়াহিব ও এর ব্যাখ্যাগ্রন্থ জুরক্বানী। এ চারটি নাম সম্বলিত একটি সুক্ষ্ম হাদিস ১ হযরত ইবনে আব্বাস
(رضي الله عنه) কর্তৃক বর্ণিত হয়েছছে।
(১) আল্লামা মােল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) শরহে শিফায়’ উল্লেখ করেন যে, তিলমাসানী হযরত ইবনে আব্বাস(رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসুলে পাক (ﷺ) ইরশাদ করেন, জিব্রাইল (عليه السلام) আমার নিকট আগমন করলেন অতঃপর বললেন اسلام عليك يااول اسلام عليك آخر اسلام عليك ظاهر اسلام عليك باطن (হে আদি আপনার উপর সালাম,, হে অন্ত আপনার উপর সালাম, হে জাহির (প্রকাশ্য) আপনার উপর সালাম, হে বাতিন (অপ্রকাশ্য) আপনার উপর সালাম) আমি তা অস্বীকার করলাম এবং বললাম, এ ‘গুণ’ নিঃসন্দেহে সৃষ্টিকর্তার (আল্লাহ তায়ালার)। তখন জিব্রাঈল (عليه السلام) বললেন, হে মুহাম্মদ (ﷺ) নিঃসন্দেহে আমি আদিষ্ট হয়েছি যে, আমি আপনাকে এ গুণাবলী দ্বারা সালাম করি। তিনি (আল্লাহ তায়ালা) এ গুণাবলী দ্বারা আপনাকে মর্যাদাবান করেছেন এবং সকল নবী ও রাসুলদের থেকে এ গুণাবলী দ্বারা আপনাকে বিশেষত্ব প্রদান করেছেন। আপনার জন্য নিজের নামে নাম এবং তাঁর গুণাবলী থেকে গুণ বের করেছেন এবং আপনার নাম ‘আউয়াল' (প্রথম) রেখেছেন। কেননা, আপনি সৃষ্টিগতভাবে সকল নবী থেকে প্রথম। আর ‘আখির' (শেষ) রেখেছেন। কেননা, আপনি শেষ যুগে নবীদের শেষ এবং নবীদের সমাপ্তকারী (খাতামুল আম্বিয়া) শেষ যুগের উম্মতের জন্য। আর আপনার নাম ‘বাতিন রেখেছেন। এ জন্য যে, আল্লাহ তায়ালা আপনার নামকে তাঁর নামের সাথে উজ্জ্বল নূর দ্বারা আরশের পায়ায় আপনার পিতা আদম (عليه السلام)কে সৃষ্টি করার দু'হাজার বছর পূর্বে লিখে রেখেছেন। আমাকে আপনার উপর অসংখ্য দরুদ ও সালাম প্রেরণের নির্দেশ দিয়েছেন। অতএব, আমি আপনার উপর দরুদ প্রেরণ করছি। শেষ পর্যন্ত হাজার হাজার বছর পর আল্লাহ তায়ালা আপনাকে সু-সংবাদদাতা, ভীতি প্রদর্শনকারী এবং আল্লাহর নির্দেশে তাঁর দিকে আহবানকারী ও উজ্জল প্রদীপ হিসেবে প্রেরণ করেন।তিনি আপনার নাম জাহির’ রেখেছেন। কেননা, আপনার যুগে আপনার এ দ্বীনকে অন্যান্য সকল দ্বীনের উপর বিজয়ী করেছেন এবং আপনার শরীয়তের প্রশংসা করেছেন। সুতরাং এমন কেউ নেই যে আপনার উপর দরুদ প্রেরণ করছেন না। স্বয়ং আল্লাহও আপনার উপর দরুদ প্রেরণ করছেন। সুতরাং এ ভিত্তিতে আপনার প্রতিপালক মাহমুদ (প্রশংসিত) আর আপনি মুহাম্মদ (উচ্চ প্রশংসিত)। আপনার প্রতিপালক প্রথম, শেষ জাহির ও বাতিন। আর আপনিও প্রথম, শেষ এবং জাহির ও বাতিন। অতঃপর রাসুলে পাক (ﷺ) ইরশাদ ফরমান- ‘স মহান সত্ত্বার প্রশংসা যিনি আমাকে সকল নবীর উপর ফজীলত ও মর্যাদা প্রদান করেছেন। এমনকি আমার নাম ও গুণাবলীতেও মর্যাদা প্রদান করেছেন। দুররাতুল ফুয়াস ও আল জাওয়াহির ওয়াদ্দোরার গ্রন্থদ্বয়ে ইমাম আবদুল ওয়াহাব শেরানী (رحمة الله) তাঁর শেখ সৈয়দী আলী খাওয়াস (رحمة الله) থেকে বর্ণনা করেন।যা রাসুলে পাক (ﷺ) এর শান ও মাহাত্মে ভরপুর। তাতে উল্লেখ আছে-“তিনি আদি, তিনি অন্ত, তিনি প্রকাশ্য; তিনি অপ্রকাশ্য।
আল্লাহ তায়ালা হযরত জিব্রাইল (عليه السلام)কে রাসুলে পাক (ﷺ)-এর নিকট - প্রেরণ করলেন। তিনি তাঁকে (ﷺ) এ চারটি নাম সহকারে আহবান করলেন এবং এসব নামের প্রত্যেকের কারণও বর্ণনা করলেন। সুতরাং مَنْমানকে مَنِّ) (সম্বন্ধবাচক বলে স্বীকার করো, আর تسيقএর-(সম্বন্ধ) ওয়াল বাতিন পর্যন্ত সমাপ্ত হয়ে গেছে। বাকী রইলাে, আল্লাহ তায়ালার বাণী-‘তিনি প্রত্যেক বস্তু সম্পর্কে সম্যক জ্ঞাত আমি তােমাদের জিজ্ঞেস করছি, এ আয়াতের সম্পর্ক রাসুলে পাক (ﷺ)-এর দিকে করা বিশুদ্ধ কিনা? যদি প্রথমটি নেয়া হয়, তাহলে তা হুজুরের জন্য হতে পারে না। সুতরাং সমতা কিভাবে? আর যদি দ্বিতীয়টি বিশুদ্ধ বলেন, তাহলে (তিনি) এর সর্বনাম রাসুলের দিকে কেন বলছাে, আল্লাহর দিকে বলছাে না কেন? কেননা, এ বাক্যে আল্লাহ তায়ালার বর্ণনাই উপরে . উল্লিখিত হয়ছে। তাহলে এখন অর্থ দাঁড়ায়-‘আল্লাহ তায়ালা দরুদ প্রেরণ করছেন তার উপর যিনি প্রথম, শেষ, প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য এবং আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেক বিষয়াদি সম্পর্কে অবহিত।
এ বাক্যের উপর তা শেষ করেছেন যেভাবে আল্লাহ তায়ালা স্বীয় ইরশাদ!! ولكن رسوالله (কিন্তু তিনি আল্লাহর রাসুল এবং সর্বশেষ নবীকে তাঁর বাণীর وهو بكل شئ (তিনি সর্ববিষয়ে পরিজ্ঞাত।) মাধ্যমে সমাপ্ত করেছেন।
যদি আপনারা এটা বলেন যে, এতে সর্বনামসমূহ বিক্ষিপ্ত হবে, আমি বলতে চাই-কখনাে না। বরং কথা হলাে, পূর্বোক্ত বাক্য হুজুর (ﷺ)-এর শানের উপযােগী নয়, যেমন আপনারা ধারণা করেছেন। সুস্পষ্টতর কারণ হলাে যে, এ সর্বনাম হুজুর (ﷺ)-এর জন্য নয়। আপনারা কি আল্লাহ তায়ালার এ ইরশাদ শুনেননি--- নিশ্চয়ই আমি আপনাকে উপস্থিত, পর্যবেক্ষণকারী (হাজের-নাজের) সুসংবাদদাতা ও ভয় প্রদর্শনকারী রূপে প্রেরণ করেছি, যেন তােমরা আল্লাহ ও রাসুলের উপর বিশ্বাস স্থাপন করাে এবং রাসুলের সম্মান ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন করো, আর সকাল সন্ধ্যা আল্লাহর উপর তাসবীহ পাঠ করো।) এখানেও এর সর্বনাম রাসুলের দিকে আর এর সর্বনাম আল্লাহর দিকে। একারণে ক্বারীগণ توقروه এর উপর থেমেছেন। অতএব, সর্বনামসমূহের বিক্ষিপ্ততা আবশ্যকীয় হয়নি। একারণে পবিত্রতা তার জন্য যিনি ব্যতীত কেউ তাসবীহ-এর উপযােগী নন। সুতরাং তা রাসুলে পাক (ﷺ)-এর জন্য হতে পারে না। স্পষ্টতর কারণ হবে যে, এ সর্বনাম আল্লাহ তায়ালার জন্য। সুতরাং তােমাদের কি হয়েছে, কি হুকুম প্রয়ােগ করবে?
চতুর্থ জবাবঃ
আমি স্বীকার করেছি যে, লেখক স্বীয় নিয়তে সকল জমীর (সর্বনাম) রাসূলে পাক (ﷺ)-এর দিকে প্রত্যাবর্তন করেছেন। অথচ, তােমাদের কারাে হৃদয়ে হুকুম প্রয়ােগের কোন অধিকার নেই। তাহলে আমাকে এখন বলাে, কিভাবে এ কারণে লেখককে ইসলাম অথবা আহলে সুন্নাতের বহির্ভূত বলে হুকুম প্রয়ােগ করা যাবে? এ কারণে যে, হুজুরে সৈয়দে আলম (ﷺ) জ্ঞানী হবার ব্যাপারে মুসলমানতাে দুরের কথা কোন কাফের তাে অস্বীকার করতে পারে না, যে ব্যক্তি হুজুর নবীয়ে আকরাম (ﷺ)-এর অবস্থাদি সম্পর্কে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পেরেছে।
এখন বাকী রইলাে কুলু শাঈ' (সকল বস্তু) শব্দ। আমি বলছি, এর বিভিন্ন ক্ষেত্র রয়েছে এবং এর প্রতিটি ব্যবহার কুরআনে করীমে এসেছে, আর আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন-“আল্লাহ প্রত্যেক বস্তু সম্পর্কে জ্ঞানী।” এটা কুলু’ (শব্দটি) ওয়াজিব’, মুমকিন ও মহাল সকল জ্ঞানকে অন্তর্ভুক্ত করে। আর এটা ঐ عام (ব্যাপক শব্দ) যা উসুলবিদদের এ বক্তব্য দ্বারা খাস (নির্দিষ্ট) যে, কোন ব্যাপক শব্দ এমন নেই যাতে কিছু না কিছু খাস করা হয়নি। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন-“নিশ্চয়ই আল্লাহ সকল বস্তু সম্পর্কে শক্তিমান।” এখানে সকল অসম্ভব বস্তু শামিল রয়েছে তা সৃষ্ট হােক কিংবা নাই হােক। আর অপরিহার্য ও অসম্ভবের দিকে তার কোন পন্থা নেই। যেমন সুবহানুস সুববুহু আন আইবে কিবে মাকুবুহু’ গ্রন্থে আমি এর তাহকীক ও ব্যাখ্যা করেছি। এ কারণে যে, যদি অপরিহার্যের উপর শক্তিমান হয়, তাহলে আল্লাহই অবশিষ্ট থাকে না। যেমন উপরে বর্ণিত হয়েছে। অথবা যদি অসম্ভবের উপর শক্তিমান হয় তাহলে ঐ অসম্ভব বস্তুর ধ্বংস হওয়াই স্বাভাবিক। অতএব, এর উপরও শক্তিশালী হওয়া, তা ধ্বংস হওয়ার সম্ভব্যতাকে অপরিহার্য করে দেয়। সুতরাং সে সময় তার অস্তিত্ব স্থায়ী হন। আর যিনি স্থায়ী নন তিনি খােদাই হতে পারেন না। ইরশাদ হচ্ছে-‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা সকল বস্তু দেখছেন”। এ বাক্যে সকল অস্তিত্বময় বস্তু শামিল রয়েছে। যাতে আল্লাহর জাত, সিফাত ও সম্ভাব্যময় সকল বস্তুই অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, অসম্ভব ও অস্তিত্বহীন বস্তু তাতে অন্তর্ভুক্ত নয়। কেননা, অস্তিত্বহীন বস্তু প্রত্যক্ষ করার উপযােগী নয়। যেমন আকাঈদের গ্রন্থাব্দীতে আমাদের ওলামায়ে কিরাম এর ব্যাখ্যা করছেন। তন্মধ্যে সৈয়্যদী আবদুল গণী নাবলুসী “মােতালেবুল। ওয়াফিয়ায়” উল্লেখযােগ্য।
আমি বলছি, দেখছােনা যার এমন বস্তু পরিদৃষ্ট হয়, যা বস্তুতঃ বিদ্যমান। যেমন ঘুর্ণিমান অগ্নিশিখায় কারাে মাথা ঘুরার দ্বারা গৃহও ঘুরাটা বলা তাকে এটাই বলা হবে যে, তার দৃষ্টি ভুল করেছে এবং যে বস্তুসমূহ দৃষ্ট হয়েছে, তা দৃষ্টির ভুলই বলা হবে। আর আল্লাহ তায়ালা ভুল-ত্রুটি থেকে সম্পূর্ণ পবিত্র। আরাে ইরশাদ করেন“আল্লাহ প্রত্যেক বস্তুর সৃষ্টিকর্তা”। অতএব, এটা শুধুমাত্র ঐ সম্ভাব্য বস্তুকে শামিল করবে, আর না ঐ সম্ভবপর বস্তু যা না কখনাে অস্তিত্ব লাভ করেছে এবং না অনন্তকাল পর্যন্ত কখনাে অস্তিত্ব লাভ করবে সেগুলােও শামিল করে নিবে। ইরশাদ হয়েছে-“প্রত্যেক বস্তু আমি সুস্পষ্ট পূর্ববর্তী কিতাবে গণনা করেছি। এখানে শুধু ধ্বংসশীল বস্তুই অন্তর্ভূক্ত, যা আদি থেকে অন্ত পর্যন্ত। সংঘটিত হয়েছে এবং হতে থাকবে, আর না তা অসীমকে অন্তর্ভুক্ত করবে, কেননা অসীমকে সসীম দ্বারা পরিবেষ্টন করা সম্ভব নয়। যেমন এর বর্ণনা গত হয়েছে।
এখন দেখুন! পাঁচই স্থানে একই শব্দ। আর প্রত্যেক স্থানে আ’মই (ব্যাপকতাই) উদ্দেশ্য। কিন্তু প্রত্যেক বাক্য এতটুকু বস্তুকে পরিবেষ্টন করেছে যা এর সীমায় রয়েছে, ঐ বস্তু নয় যা এর বহির্ভূত এবং এর উপযুক্ততা রাখেনা। আর তাতে কোন জ্ঞানীর সন্দেহ থাকতে পারেনা। সুতরাং বিজ্ঞ লেখক (উত্তরদাতা) কিভাবে সন্দেহ করবে? আমি এর বিশ্লেষণ যথাযথরূপে প্রমাণ করে এসেছি যে, কুরআন করীম ও বিশুদ্ধ হাদীসমূহই সাক্ষী যে, আদি থেকে অনন্তকালের সকল বর্তমান ভবিষ্যতের জ্ঞান অর্থাৎ লাওহে মাহফুজে লিপিবদ্ধ সকল জ্ঞান আমাদের প্রিয় নবী
(ﷺ)-এর অর্জিত হয়েছে। ওলামায়ে কিরাম এর বিষদ ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন। তন্মধ্যে সুপ্রসিদ্ধ আইন বিশারদ, যুগশ্রেষ্ট ইসলামী দার্শনিক, আইন গ্রন্থ প্রণেতা আল্লামা আলাউদ্দীন ‘দুররে মুখতারে উল্লেখ করেন-“যে নাম সৃষ্টিকর্তা ও সৃষ্টির মধ্যে একই অর্থবােধক, যেমন আলী, রশীদ ইত্যাদির ব্যবহার সৃষ্টির উপরও প্রযােজ্য। মাখলুকের জন্য এর অর্থ অন্যটিই নেয়া হবে, এ গুলাে ব্যতীত যা আল্লাহর উদ্দেশ্য হবে”। তাহলে এ উক্তি-“তিনি প্রত্যেক বস্তু সম্পর্কে জ্ঞানের দিকে সম্পর্ক করা যাবে। অতএব, তখন এর দ্বারা প্রথম অর্থই উদ্দেশ্য হবে। আর যদি নবী করীম (ﷺ) এর দিক নিসবত করা হয় তাহলে এর পঞ্চম অর্থ হবে। এতে না কোন মন্দ রয়েছে আর না কোন নিষেধাজ্ঞা।
পঞ্চম জবাবঃ
আমাদের সরদার, শেখ আবদুল হক মােহাদ্দেস দেহলভী বুখারী (রহঃ), যিনি শীর্ষস্থানীয় ওলামায়ে কিরামের অন্তর্ভুক্ত, সর্বত্র যিনি পরিচিত ও প্রসিদ্ধ, যার সুবাসে নগর ও ময়দান সুরভিত। নিশ্চয়ই আমাদের সরদার মক্কার ওলামায়ে কিরাম যার মর্যাদা, সম্মান ও উচ্চ মর্যাদা সম্পর্কে সচেতন, যার লিখিত গ্রন্থাবলীর সংখ্যা অনেক। দ্বীন ও শরীয়তে যাঁর গ্রন্থের উপকারীতা
অতুলনীয়। তন্মধ্যে -
(১) লুমআতুত তানকীহ শরহে মিশকাতুল মাসাবীহ
(২) আশআতুল লুমআ'ত যা চার খন্ডে বিভক্ত
(৩) জজবুল কুলুব
(৪) শরহে সাফরুস্সা'দাত যা দু’খন্ডে বিভক্ত
(৫) ফতহুল মান্নান ফি তায়ীদে মাজহাবিন নুমান
(৬) শরহে ফতহুল গায়ব। আর রাসুলে সৈয়দে আলম
(ﷺ)-এর জীবন চরিত বিষয়ক গ্রন্থ
(৭) মাদারেজুন্নবুয়ত যা দুই খন্ড
(৮) আখবারুল আখইয়ার
(৯) আদাবুচ্ছালেহীন
(১০) সংক্ষিপ্ত উসুলে হাদীস, এছাড়া আরাে অনেক গ্রন্থ রয়েছে। তাঁর ওফাতের তিনশ বছর গত হয়েছে। তাঁর মাজার দিল্লীতে অবস্থিত, যা জিয়ারত করা হয়। তা থেকে ফয়েজ ও বরকত হাসিল করা হয়।
এ মহাত্মা ‘মাদারেজুন্নবুয়তের খুতবাতে (১) এ আয়াত দ্বারা আরম্ভ করেছেন---- ----(তিনিই আদি, তিনি অন্তু, তিনি প্রকাশ্য, তিনি অপ্রকাশ্য এবং তিনিই সকলবস্তু সম্পর্কে জ্ঞাত) এবং বলেছেন, যেভাবে এ বাক্যগুলাে আল্লাহ তায়ালার প্রশংসা ও গুণকীর্তনে ভরপুর যে, আল্লাহ তায়ালা কুরআনে করীমে এ আয়াতে স্বীয় গুণকীর্তন বর্ণনা করেছেন, অনুরূপ রাসুলে করীম
(ﷺ)-এর প্রশংসা ও শান এতে বিদ্যমান। তার প্রতিপালক তাঁর এ নামগুলাে রেখেছেন এবং ঐ গুণাবলী দ্বারা তার প্রশংসা করেছেন। কুরআন মজীদ ও হাদীসে কুদসীতে আল্লাহ তায়ালার কতই সুন্দরতম নাম রয়েছে। যদ্বারা তিনি স্বীয় হাবীব (ﷺ)-এর নামও রেখেছেন। যেমন নুর, হক, হালীম, মুনির, মুহায়মিন, ওলী, হাদী, রাউফ, রাহীম।
টিকা_______________________
🔺(১) আর আমি তােমাদের জন্য আরাে একটি স্বাদ ও মিষ্টিময় বর্ণনা বৃদ্ধি করছি। আল্লামা শেখ আকবর (رحمة الله) ফতুহাতে মককীয়াহ ১ম খন্ড ১৭৭ পৃঃ দশম পরিচ্ছদে উল্লেখ : করেন 'রাসুলে পাক (ﷺ) এর প্রথম নায়েব ও খলীফা হলেন হযরত আদম (عليه السلام)। অতঃপর মানব প্রজন্ম বৃদ্ধি হতে লাগলাে এবং বংশ পরম্পরা চলতে লাগলো। প্রত্যেক যুগে খলীফা নির্ধারণ হতে লাগলাে, অবশেষে রাসুলে পাক (ﷺ) এর পবিত্র শরীর মােবারক সৃষ্টির যুগ এসে পৌছালো। তিনি উজ্জ্বল সূর্যের ন্যায় প্রকাশিত হলেন। প্রত্যেক নুর তাঁর নুরে প্রবেশ করলাে এবং প্রত্যেক নির্দেশ তার নির্দেশে উহ্য হয়ে গেলো। আর সব শরীয়ত তাঁর শরীয়তের দিকে চলে আসলো। আর তাঁর নেতৃত্ব, যা লুকায়িত ছিলাে,
টিকা_______________________
এগুলাে ছাড়াও চারটি নাম আওয়াল-আখির, জাহির-বাতিনও এর অন্তর্ভূক্ত। অতঃপর এ নামগুলাের কারণ বর্ণনা আরম্ভ করেছেন। অতঃপর বলেছেন “তিনি প্রত্যেক বস্তু সম্পর্কে জ্ঞানী।” রাসুলে সৈয়দে আলম (ﷺ) এর নিকট আল্লাহ তায়ালার সকল সত্ত্বার শান, মাহাত্ম্য, গুণাবলীর আহকাম, তাঁর নাম, কর্ম ও আসার (নিদর্শনসমূহের উদ্দেশ্য এবং সকল বস্তুর জ্ঞান রয়েছে এবং তিনি সব কিছুর আদি অন্ত, জাহির-বাতিনের জ্ঞানসমূহকে পরিবেষ্টন করে আছেন। তা এ আয়াতের ভিত্তিতে যে, “প্রত্যেক জ্ঞানীর উপর একজন জ্ঞানী রয়েছেন। তাঁর উপর সবচেয়ে উত্তম দরুদ ও পরিপূর্ণ সালাম। যদি এটা শরীয়তে পাপ হয়, তাহলে এ মহান ইমামের ১ পাপ উত্তরদাতার চেয়েও অনেক বেশী।
তা প্রকাশিত হয়ে গেলো। সুতরাং তিনি আদি, তিনি অন্ত, তিনিই প্রকাশ্য এবং তিনিই অপ্রকাশ্য এবং তিনি সকল বিষয় সম্পর্কে অবহিত। কেননা, তিনি (ﷺ) ইরশাদ করেছেন- ‘আমাকে সর্ব বিষয়ের জ্ঞান প্রদান করা হয়েছে। তিনি (ﷺ) স্বীয় রবের ইরশাদ বর্ণনা করেন-‘তিনি স্বীয় কুদরতী হস্ত আমার উভয় কাঁধের মধ্যখানে রেখেছেন অতঃপর আমি এর শীতলতা স্বীয় বক্ষে অনুভব করেছি। সুতরাং আমি পূর্বাপর সকল কিছুর জ্ঞান হাসিল করেছি'। অতএব, তার জন্য আল্লাহ তায়ালার গুণে গুণান্বিত পদ হাসিল হয়েছে। তিনি শুরু, তিনি শেষ, তিনি জাহির তিনিই বাতিন এবং তিনিই সকল বস্তু সম্পর্কে জ্ঞানী। এ আয়াত সুরা হাদীদে আরাে কঠিনতার সাথে এসেছে। আর মানুষের জন্য অসীম উপকার এ জন্য যে, হুজুর (ﷺ) তলােয়ারের সাথে প্রেরিত হয়েছেন এবং তাঁকে সমগ্র জাহানের করুণারূপে প্রেরণ করা হয়েছে।
টিকা_______________________
(১) আমি আরাে একটি তিক্ত ও কঠোর বিপদ বৃদ্ধি করেছি। আল্লামা নিজামুদ্দীন নিশাপুরী (رحمة الله) তাফসীর ‘গরায়েবুল কুরআন ওয়া রগায়েবুল ফোরকৃানে আল্লাহ তায়ালার বাণী آية الكرسی
(আয়াতুল কুরসীতে) উল্লেখিত সৰ্বর্নামসমূহ রাসুলে পাক (ﷺ)-এর দিকে বলে উল্লেখ করেছেন। (৩য় খন্ড ২৪ পৃঃ) যেখানে রয়েছে, সেখানেওاستشناء(পৃথকীকরণ)। রাসুলে পাক (ﷺ)-এর দিকে প্রত্যাবর্তিত, যেমন ইরশাদ হয়েছে কে আছে কিয়ামত দিবসে তাঁর (আল্লাহ) সমুখে শাফায়াত করবে তাঁর বান্দা মুহাম্মদ (ﷺ) ব্যতীত? তিনি শাফায়াতের ব্যাপারে অনুমতিপ্রাপ্ত। সত্য অঙ্গীকার যখন নিকটবর্তী যে, আপনার প্রতিপালক আপনাকে অতিসত্ত্বর মকামে মাহমুদ প্রদান করবেন। يعلم (তিনি জানেন। অর্থাৎ মুহাম্মদ (ﷺ) জানেন) (যা তাঁর সম্মুখে রয়েছে) মাখলুক সৃষ্টির পূর্বের প্রারম্ভিক কার্যদি। (যা তাঁর পিছনে রয়েছে) কিয়ামতের অবস্থাদি সম্পর্কে তাঁর জ্ঞান থেকে কোন বস্তু তারা পরিবেষ্টন করতে পারেনা এবং নিশ্চয়ই তিনি তাদের অবস্থাদি, জীবন চরিত, কার্যাবলী ও ঘটনাবলী সম্পর্কে জ্ঞাত আছেন। আর আপনার কাছে আমি সবই বর্ণনা করবাে নবীগণের সংবাদ। আর তিনি (নবীয়ে করিম (ﷺ)) আখেরাতের সকল কার্যাবলী, জান্নাত ও দোযখের অবস্থাদি সম্পর্কে অবগত আছেন, অথচ লােকেরা তা থেকে কিছুই জানেনা। (কিন্তু তিনি (নবী) যদি ইচ্ছে করেন) তাদের এ সম্পর্কে জ্ঞাত করান। এই (তাঁর সিংহাসন সমস্ত আসমান ও যমীনকে পরিবেষ্টন করে আছেন) আর স্বীয় মর্যাদা সহকারে একটি আকৃতির ন্যায় যা আসমান ও জমীনের মধ্যবর্তী ঝুলানাে। মুমিনের হৃদয়ের প্রশস্ততার সাথে সংযুক্ত। "(আর সেগুলােকে ধারণ করা তাঁর পক্ষে কঠিন নয়) অর্থাৎ মানুষের আত্মার পক্ষে আসমানসমূহ ও জমীনের রহস্য ধারণা করা কঠিন নয়। এবং তিনি আদমকে সকল কিছুর নাম শিখিয়েছেন। (সংক্ষেপিত) সুতরাং তাঁর উপর হুকুম প্রয়ােগ করাে, তিনি কি তােমাদের মতে কাফের অথবা সুস্পষ্ট ভাল আসে বসে ভ্রষ্টতার মধ্যে রয়েছেন?
আমি বলছি আমার অন্তরে ইলকা করা হয়েছে যে, এর উপর তাদের বর্ণনা এ যে, আল্লাহ তায়ালা এ দিকে ইঙ্গিত করেছেন যে, মুহাম্মদ (ﷺ) যিনি শাফায়াতের অনুমতি প্রাপ্ত, তিনিই এর দরজা উন্মুক্তকারী। তিনি ছাড়া কি অন্য কে। তৎপর প্রশ্নকারী উভয়কে খাস করার হিকমত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে উত্তর প্রদান করা হয়েছে, 'আল্লাহর দরবারে শাফায়াতকারীর অন্য শাফায়াতকৃত ব্যক্তির প্রত্যেক ঐ বিষয় যা সংঘটিত হয়েছে, আর যা সংঘটিত হবে এবং তার ঈমানী স্তর, বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীন কর্মসমূহ সম্পর্কেও অবগত হতে হবে, যেন প্রত্যেক ব্যক্তি যারা শাফায়াত করার উপযােগী তারা ঐ ব্যক্তিকে চিনে নেয় কার জন্য শাফায়াত প্রয়ােজন এবং সে প্রকৃতপক্ষে কোন প্রকার শাফায়াতের মুখাপেক্ষী। আল্লাহর দরবারে তার জন্য কোন ধরনের শাফায়াত প্রার্থনা করা উপযুক্ত। কেননা, শাফায়াতের অনেক শ্রেণী বিভাগ রয়েছে এবং এর অনেক স্থান ও অবস্থা রয়েছে। আর যে এ সম্পর্কে জ্ঞাত হবে না সে এ কর্মের উপযােগী নয়। তিনি আরাে বলেন, আল্লাহ তায়ালার এ বাণী-“কেউ তাঁর সম্মুখে কথা বলতে পারবেনা কিন্তু দয়াময় (আল্লাহ) যাকে অনুমতি প্রদান করেন এবং তিনিই সঠিক বলবেন।” আর মুহাম্মদ (ﷺ) সমগ্র জাহানের সকল বস্তু পরিবেষ্টনকারী। নিঃসন্দেহে তিনি সমগ্র জাহান সম্পর্কে জানেন এবং ঐ সকলবস্তু যে সম্পর্কে তিনি এ মুহুর্তে জানেন।يعلم ما بين ايدهيم (তিনি জানেন যা তাঁর সমুখে বর্তমান রয়েছে) ঐ বস্তু থেকে যা সংঘটিত হবে, আর যা তার পিছনে রয়েছে ঐ বস্তু থেকে যা পরকাল পর্যন্ত ঘটতে থাকবে স্বীয় পরাক্রমশালী মহাজ্ঞানী প্রতিপালকের অবগত করানাের দ্বারা। কেননা, ما كان وما يكون পূর্বাপর সকল বস্তুর জ্ঞান সম্পর্কে অবগত করানাের পূর্বে রাসুলে পাক (ﷺ)-এর জন্য খাস ছিলো। যেমন পূর্ববতী হাদীসে গত হয়েছে। অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালা আমার উপর (সব কিছু) প্রকাশ করে দিয়েছেন যেভাবে আমার পূর্বে সকল নবীর জন্য প্রকাশ করে দেয়া হয়েছিলো। তখন এভাবেই জবাব প্রদান করা হয়েছে যে, তাঁর শিক্ষা দেয়া ও সাহায্য ব্যতীত অবগত হননি। এগুলাে সত্ত্বেও তিনি তার অনুরূপ পরিবেষ্টন করেন নি। আর না তারা তাঁর (আল্লাহর) অনুরূপ জানতে" পেরেছে। এছাড়াও নিশ্চয়ই তাদের জন্য রয়েছে অনুগ্রহ ও পূর্ণতা।
(রাসুলে পাক (ﷺ)-এর জ্ঞান সীমা থেকে তারা কোন কিছুকেই পরিবেষ্টন করতে পারে না) (কিন্তু যতটুকু তিনি ইচ্ছা করেন)। কবি কতই চমৎকার বলেছেন- “(তিনি সম্মানের সূর্য, (আম্বিয়ায়ে কিরাম (عليه السلام)) তার নক্ষত্রসমূহ যে, অন্ধকার লােকদের জন্য স্বীয় জ্যোতিসমূহ প্রকাশ করেন)।” তিনি সৃষ্টির মূল আদি হওয়ার কারণে, আর তাতে তার উপর ভরসা, তিনিই পূর্ণ ও পরিপূর্ণ। তা তার, জন্য নিদিষ্ট, অন্য কারাে জন্য নয়। নিঃসন্দেহে বলা হয়েছে------------(যাদের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে সকল আদি ও অন্ত থেকে এমন বিপুল জনগােষ্ঠী রয়েছে যে, সংখ্যা তা পরিবেষ্টনে অক্ষম। মুহাম্মদ (ﷺ) যিনি একজন ব্যক্তিত্ব যাঁর হৃদয় কখনাে সংকীর্ণ হয়, তার থেকে এক ক্ষুদ্র শ্রেণী উপকৃত হয় এবং বাকীরা ধ্বংস হয়ে যায়। এর উত্তরে বলা হয়েছে যে, তাঁর হৃদয় কিভাবে সংকীর্ণ করবেন? অথচ وسع كرسيه السموت والارض(নিঃসন্দেহে তার কুরসী আসমান ও জমীনকে পরিবেষ্টন করে আছে)। তােমাদের কি ধারণা তাঁর হৃদয় মােবারক সম্পর্কে যাতে আরশের গম্বুজ মশার ন্যায়, আসমান ও জমীনের মধ্যখানে শূণ্যে উড়ছে, তখন তা যেন বলা হয়েছে হ্যা। কিন্তু আমরা ভয় করছি সম্ভবতঃ কেউ এ মহান আধিক্যকে ভুলে যাবে, যা তাদের জন্য ভুলকারী সাব্যস্ত হবে। আমি উত্তরে বলবাে, কিভাবে তাদের কেউ তা ভুলে যাবে? আর তা হলাে তাই যা তার পক্ষে ধারণ করা কঠিন নয় (উভয় আসমান ও জমীনের হেফাজত) ঐগুলাে সহ সৃষ্টিসমূহে যা ঐ দু'টিতে রয়েছে। আর অনুগ্রহ করেছেন তাদের উপর যাদের সুপারিশ করা হয়েছে। তা এমন এমনভাবে পুনরাবৃত্তি করেছেন, যা আল্লাহ ব্যতীত কেউ বেষ্টন করতে পারেন না। শেষ পর্যন্ত বক্তব্য পূর্ণ হলাে ও সন্দেহ দূরিভূত হয়ে গেলাে এবং তাদের জন্য পরিপূর্ণ আনন্দ হাসিল হলাে। তিনি ও তাঁর বংশধরদের উপর সবচেয়ে উত্তম
স্মর্তব্য যে, আমি এর দাবীদার নই যে, এটাই এ আয়াতের অর্থ, না মুফাসসির (رضي الله عنه) আয়াতের অর্থ তা নিয়েছেন। কিন্তু তা প্রকৃত পক্ষে ঐ ইঙ্গিতসমূহের অন্তর্ভুক্ত যা আহলে রাব্বানী ও আহলে বাতিনের জন্য প্রসিদ্ধ, আল্লাহ তায়ালা আমাদের এর বরকত দ্বারা উপকার করুন। যেমন তাদের বক্তব্য বিশুদ্ধ হাদীসে যে, ফিরিস্তা ঐ গৃহে প্রবেশ করেনা, যে গৃহে কুকুর রয়েছে। কেননা, হৃদয়ের গৃহ ও ফিরিস্তা আল্লাহর দুতি, আর কুকুর হলাে, কামভাব। আর তারা কখনাে প্রকাশ্য অর্থকে অপ্রকাশ্য অর্থের ন্যায় অস্বীকার করেনা। তাঁদের এ কর্ম শুধুমাত্র ঈমান ও পরিচয়ের পরিপূর্ণর্তা যেমন আল্লামা তাফতাজানী
(رحمة الله) শরহে আকায়েদ' গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। অনেক সময় এমন অভিমত নেয়া হয়, যা : আহলে জাহিরের দৃষ্টিতে অসম্ভব ও অদ্ভুদর। অতএব, তারা তাদের উপর ত্রুটি ও মিথ্যার অপবাদ দিচ্ছে। এটা বিনা কারণে কথায় কথায় অভিশাপ দেয়া ব্যতীত অন্য কিছু, নয়। আর এক বস্তু, অপর বস্তুর সাথে বর্ণিত হয়, আর হৃদয় একটি অক্ষর দ্বারাও নসিহত হাসিল করে। আর এটা বেশী দূরে নয় যে, তাদের প্রতিভা পরিবর্তন হয়.লাইলী, সালমা, ইজ্জা এবং সবিনা ইত্যাদি স্বাপ্নিক কবিদের গজল, কথন ও শ্রবণের দ্বারা, যা তারা তাদের প্রেমিকাদের সম্পর্কে লিখেছে।
হুজুর (ﷺ) ইহসানের তাফসীরে ইরশাদ করেন-‘আল্লাহর ইবাদত (এভাবেই) করবে যেন তুমি তাঁকে দেখতে পাচ্ছাে, তুমি যদিও তাঁকে দেখতে না পাও, অবশ্যই তিনি তােমাকে দেখছেন। কতেক আরিফ দ্বিতীয় (তুমি তাঁকে দেখছাে)-এর (তাফসীরে) নিশ্ৰুপ রয়েছেন, এ অর্থের ভিত্তিতে যে, তুমি যদি স্বীয় সত্ত্বাতে ধ্বংস হতে পারাে তবে তুমি তাঁকে দেখতে পাবে এবং আল্লাহ তায়ালাকে পর্যবেক্ষনের স্থান পর্যন্ত পৌঁছে যাবে। কেননা, তােমার সত্ত্বাই তােমার এবং আল্লাহর পর্যবেক্ষণের মধ্যকার পর্দা।
এর উপর ইমাম ইবনে হাজর আসক্বালানী (رحمة الله) এ আপত্তি করেছেন যে, যদি মর্মার্থ তাই হয় যা তাঁরা বলেছেন, তাহলে এর আলিফ বিলুপ্ত সহকারে হতাে আর خانه يوك উক্তি বিলুপ্ত হয়ে যেতো। কেননা, সে সময় এর পূর্বের সাথে কোন সম্পর্ক থাকেনা। অতঃপর হাদীস রেওয়াতের শব্দাবলী পরস্পর নেয়া হলে এ বিশ্লেষণের কোন অবকাশ থাকে না। যেমন كهمس এর রেওয়ায়েত (নিঃসন্দেহে যদিও তুমি তাকে দেখছাে না, কিন্তু তিনি তােমাকে দেখছেন)।
আর এর জবাব শেখ মােহাক্কেক আবদুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী (رحمة الله) “লুম’আতুত তানকীহ ফি শরহে মিশকাতিল মাসাবীহ” গ্রন্থে এভাবেই দিয়েছেন যে-জযম বিশিষ্ট মুদারে’তে (বর্তমান ভবিষ্যকাল জ্ঞাপক ক্রিয়াপদ) একটি প্রচলিত অভিধানে আলিফ রয়েছে। এ ভিত্তিতে ইবনে কাসীর থেকে কুমবুলের বর্ণনা আল্লাহর বাণীতে (এভাবে রয়েছে) আর আল্লাহ জায়লাির বাণী কবির উক্তি الم ياتيك এছাড়াও মাজী যখন شوط হয় তখন جواء তে জযম হওয়া আবশ্যক হয় না, যদিও অর্থ অর্থাৎ যেভাবে এখানে রয়েছে। আরخانه يوك এর মিলন দর্শনের সম্ভাব্যতা বর্ণনার জন্য,। যেমন প্রমাণ করা হয়েছে। কালাম শাস্ত্রে আল্লাহর দর্শনের সম্ভাব্যতা অর্থাৎ আমরা তাঁকে দেখা কোন দিক, স্থান ও (কিরণ বিকরিত হওয়া) ব্যতীত। দ্বিতীয় রেওয়ায়েত সমুহ روايت بالمعنی (হাদীস বর্ণনাকারীর বুঝ যা বর্ণনাকারী হাদীস দ্বারা বুঝেছেন) হওয়াও জায়েজ। এটাকে হাদীসের তাতীল (ব্যাখ্যারই) বলা যায়, মূল হাদীস নয়। বরং আরবের ওলামাদের মতে, তা (হাদীসের) মর্মার্থই। নিশ্চয় এটা একটি বস্তু যা প্রকাশ হয়ে যায় তাদের অপ্রকাশ্যতার উপর মােহনী শক্তি ও ধ্বংসের অবস্থার অগ্রগতির কারণে তাদের হৃদয়ের উপর, এটা এ বর্ণনায় এ শব্দের অন্তর্ভুক্ত নয়। আল্লামা আলী ক্বারী (رحمة الله) মিরকাতে’ এভাবেই খন্ডন করেছেন। কিন্তু প্রথম ও তৃতীয় বক্তব্যের জবাবে তিনি বিস্তারিত আলােচনা করেছেন। দ্বিতীয় জবাব সুস্পষ্টরূপে বর্ণনা করেন নি। যেখানে তিনি বলেছেন, যা বলা হয়েছে যে, আলিফের সাথে লিখন পদ্ধতি (রসমে খত) অনুকুল নয়। সুতরাং তা একটি অভিধানের ভিত্তিতে বাক্য থেকে পরিহার করা হয়েছে। অথবা হরকতের আধিক্যের অথবা (উদ্দেশ্য) বিলুপ্ত করার মাধ্যমে পরিহার করা হয়েছে। আর তা হলাে
(انت)'আনতা। আর জুমলায়ে ইসমিয়াহ جملة اسميةথেকে فا বিলুপ্ত করাও জায়েজ, যা فانه يرك এর স্থলে হয়। তিনি (আরাে) বলেছেন- তাঁর বাণী كلام سابق পূর্বের বাক্যের সাথে সম্পর্কিত। যদিও এর কিছু সম্পর্ক পরের সাথেও রয়েছে। তিনি আরাে বলেন, এ স্থানে আমি কিছু বিস্তরিত বর্ণনা কতেক ব্যাখ্যাগ্রন্থের ত্রুটি প্রকাশের জন্যই করেছি। আর তাও নিষেধ নয়, যা কতেক বর্ণনায় ব্যক্ত হয়েছে- 'যদিও তুমি তাকে না দেখ, তিনি তােমাকে দেখছেন--
فانه يركনিশ্চয়ই প্রথম উক্তিকারী হাদীসের মর্মার্থ তা হবার দাবী করেনি, যা হাদীসের (স্পষ্ট বক্তব্য দ্বারা বুঝা যায়। বরং এমন বক্তব্য উল্লেখ করেছেন, যা বাক্যের বিষয়বস্তু থেকে গৃহীত হওয়ার দিকে ইঙ্গিতবহ।
আমি বলছি, এ অধমের জন্য فانه يرك এর মধ্যে অন্যান্য কারণসমূহও প্রকাশিত হয়েছে। আশা করি যে, এটা অধিকতর স্বাদ ও সৌন্দর্যময় হবে। আর বাক্য তাতে দর্শন প্রমাণের উদ্দেশ্যে হবে, শূণ্য সম্ভাবনা নয়। প্রথম (অতএব, যদি তুমি না হও) এবং ধ্বংস হয়ে যাও ঐ শহুদের (উপস্থিত) কামনায় : تره (তখন) তুমি তাকে দেখবে) এবং গন্তব্যস্থলে পৌছে যাবে!فانه يرك (অতএব, নিঃসন্দেহে তিনি তােমাকে দেখছেন) আর তােমার থেকে এক মুহুর্তও অন্যমনস্ক নয়, যখন তিনি তােমাকে দেখেছেন, তখন তুমি তাঁর সন্ধানে স্বীয় জানকে বিলিন করে দিয়েছে। কেননা, তিনি কাউকে নৈরাশ করেন না। এ কারণে যে, ইহসানের (সৎকর্ম) স্থান পর্যন্ত . অতিবাহিত হয়ে গেছে, আর আল্লাহ তায়ালা মুহসেনীনদের (সৎকর্মশীল) বিনিময় ধ্বংস
করেন না।
দ্বিতীয়ঃ ‘অতঃপর যদি তুমি না হও তাহলে নিশ্চয়ই তাকে দেখবে’ কেননা, তুমি তাঁর মধ্যে বিলীন হয়েছে এবং তিনি অবশিষ্ট রয়েছেন। সুতরাং এখন তিনিই স্বীয় জাতের দর্শর্ন প্রার্থী। কেনইবা দেখবে না, তিনিতাে তােমাকে দেখছেন, আর তুমিওতাে তাঁর মধ্যে বিলীন হয়ে গেছো।
তৃতীয়ঃ ‘অতঃপর যদি তুমি না হও, তখন তুমি তাকে দেখবে। যেমন বুখারী শরীফে রয়েছে, -- “আর তাঁর চোখে পর্দা (অবশিষ্ট নেই। সুতরাং নিশ্চয়ই তিনি তােমাকে দেখছেন। আর তুমিতাে একটি কল্পিত বস্তুর প্রতিবিম্বের ধ্যানমগ্ন রয়েছে তখন কিভাবে তাঁকে দেখবেনা মৌলিক সৌন্দর্য ও উৎকর্ষ সহকারে? কিন্তু তাঁর উক্তি দ্বারা ঐ ঘটনার দিকে ইঙ্গিত রয়েছে যা ইমাম কাসীরী (رحمة الله) ইয়াহিয়া ইবনে রদী আলাভীর সূত্রে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আবু সুলাইমান দামেস্কী তাওয়াফের সময় ‘ইয়া সাতারবরী আওয়াজ শুনলেন। তিনি সংজ্ঞাহীন হয়ে লুটিয়ে পড়লেন। যখন সংজ্ঞা ফিরিয়ে ফেলেন জিজ্ঞেস করা হলাে, তিনি জবাব দিলেন আমার মনে হলাে তিনি বলছেন ‘ইস তারবিরী অর্থাৎ শব্দে জের সহকারে। এর অর্থ হলাে পূণ্য ও অনুগ্রহ। যদিও তাওয়াফকারী বা শব্দে জবর সহকারে বলেছেন। আর “আলমারী ফি মুনাকেবে সৈয়দ মুহাম্মদ আশরাফী” যা তার পৌত্র আবদুল খালেক ইবনে মুহাম্মদ ইবনে আহমদ ইবনে আবদুল ক্বাদের-এর লিখিত। তাতে উল্লেখ রয়েছে-এক ব্যক্তি মিশরের গলিতে (কোন বস্তু) বিক্রি করছেন আর বলছেন ‘ইয়া সাতারবারী। তাঁর এ কথার মর্মার্থ তিন ব্যক্তি বুঝতে পারলাে-প্রথম ব্যক্তি হেদায়তপন্থী। তিনি বুঝলেন-ইসতারবারী অর্থাৎ আমার অনুসরনের চেষ্টা করাে তখন আমার কারামতের দানসমূহ দেখতে পাবে।
দ্বিতীয়ঃ মধ্যপন্থী। তিনি বুঝলেন, ইয়া সায়াতু বিররী” অর্থাৎ কতই প্রশস্থ আমার উপকার, পূণ্য এবং ইহসান সে ব্যক্তির জন্য যে আমার সাথে ভালবাসা রাখে এবং আমার অনুসরণ করে।
তৃতীয়ঃ আহলে নিহায়াহ' অর্থাৎ শেষপন্থী। তিনি বুঝলেন----- আস সায়াত তাররী বাররী” অর্থাৎ সাহায্য এসেছে। অতএব, তিনজনই সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়লেন।
‘আহইয়া’ গ্রন্থে রয়েছে-অনারবীয় লােক কখনাে আরবী কবিতার আসক্তির কারণেও সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েন। কেননা, কখনাে কখনাে তাদের কতেক বর্ণ অনারবীয়দের বর্ণের ওজনেও ব্যবহৃত হয়, যদ্বারা অন্য মর্মার্থই হয়ে থাকে। যেমন কোন কবির (কবিতার একটি) পংক্তি অর্থাৎ আমি তার কাল্পনিক আকৃতির স্বপ্নে পরিদর্শন করেছি, অতএব আমি তাকে ‘আহলান-সাহলান ও মারহাবান’ বলে স্বাগতম ও শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেছি।' এ কথায় এক অনারবীয় সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়লেন তাকে এর কারণ জিজ্ঞেস করা হলে বললেন অর্থাৎ; مازا رلم ‘মৃত্যু নিকটবর্তী হয়েছি। আর এটা এমনই যেমন সে বলছিলাে যে, ; (যা-রা) শব্দটি ফাসী নিকটবর্তীদের উপর ব্যবহৃত হয়। আর এর দ্বারা তার সন্দেহ হলাে যে, আমরা সবাই ধ্বংসের কাছাকাছি, আর সে এ সময় আখেরাতের ধ্বংস ও ভয়ভীতিই বুঝেছে। প্রকৃতপক্ষে, আল্লাহর প্রেমে যারা বিভাের তাঁরা তাঁদের ধারণা অনুযায়ীই সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েন। মােট কথা হলাে, আমাদের প্রমাণ এখানে আয়াতে করীমার তাফসীরের দ্বারা নয়। বরং মুফাসসিরদের ভীলের দ্বারা এবং এ অর্থেরই উপর তাদের বিশ্বাস। এ কারণে তারা আয়াতে করীমাকে ঐ দিকে ইঙ্গিত করা বৈধ রেখেছেন। আর তােমাদের মতে, এখন তিনিই কুফরের অধিক উপযােগী। আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। এ কথা বলার উদ্দেশ্য এই যে, তােমরা মুহাম্মদ (ﷺ)-এর পরিচয় লাভের মধ্যখানে পর্দা হয়ে দাঁড়িয়েছে,। এমন পরিচয়েও বিশ্বাসী নও, যতটুকু জাহির ওলামারা রাসুলে পাক (ﷺ)-এর পরিচয়ে বিশ্বাসী। আওলিয়ায়ে কিরামের ধারণাতাে বহু উর্ধে। তােমরা মুসলমানদের কাফির বলছে, অজ্ঞতাবশতঃ অস্বীকার করছে এবং অস্বীকারকে ভাল জ্ঞান করছো। যেমন আল্লাহ তায়ালার ইরশাদ-বরং তারাইতাে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে, যা তারা জানেনি।' এ হলাে তাদের জ্ঞানের প্রশস্ততা। অতএব, আল্লাহ পাক যাকে নূর প্রদান করেন না, তার জন্ম নুর নেই। আমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।
(১) কওকাবুল আনােয়ার শরহে ইকুদুল জাওহার’ গ্রন্থে তাওকুীত থেকে উদ্ধৃত হয়েছে-- ‘আজল’ হলাে পদক্ষেপ (কদম) যার কোন শুরু নেই। আর রূপকার্থে এর ব্যবহার সে ব্যক্তির উপরও প্রযােজ্য, যার বয়স দীর্ঘ হয়। “জাওয়াহির ও দুরারে” আরিফ বিল্লাহ ইমাম আল্লামা সৈয়দী আবদুল ওয়াহাব শিরানী স্বীয় শেখ আরিফ বিল্লাহ সৈয়দী আলী খাওয়াস থেকে এ সম্পর্কে ফতােয়া নকল করেছেন। যার বক্তব্য এভাবে- তাঁকে বললাম, এ বাক্যের কি অর্থ যে,------(আল্লাহ তা লিখে নিয়েছেন আজলে) অথচ আজলের কোন বােধ শক্তি নেই। কিন্তু তা হলাে একটি কাল, আর কাল হচ্ছে মাখলুক (সৃষ্টি)। আর আল্লাহর লিখা হলাে চিরস্থায়ী। অতঃপর তিনি বলেন, 'আজলের লিখা দ্বারা উদ্দেশ্য হলাে আল্লাহ তায়ালার ঐ জ্ঞান যিনি তাতে সকল বস্তুসমূহ পরিবেষ্টন করে নিয়েছেন। কিন্তু আজল হলাে ঐ কাল যা আল্লাহর অস্তিত্ব ও বােধসম্পন্ন সৃষ্টি সমূহের অস্তিত্বের মধ্যখানে রয়েছে। এখন এতেই অস্তিত্বের অঙ্গিকার নেয়া হয়েছে। সুতরাং প্রশ্নকারী প্রকাশ করে দিয়েছেন যে, আজল অর্থ কাল নয়। বরং মাখলুক হাদিস ও গায়রে কদম (অস্থায়ী ও ধ্বংসশীল সৃষ্টি)! আর সৈয়দ আরিফ বিল্লাহ স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, কাল হলাে যাতে আল্লাহ তায়ালা অঙ্গিকার ব্যক্ত করেছেন।
সুতরাং সন্দেহ দূরিভূত হয়ে গেলাে এবং অদৃশ্য ত্রুটির দিকে ফিরে গেলো। ইমাম আহমদ ইবনে খতীব কুস্তুলানী (رحمة الله) মাওয়াহেবে লাদুনিয়া’ ২য় খন্ড, ৩৮০ পৃষ্ঠায় বলেন খুব চমঙ্কারই বলেছেন আল্লামা আবু মুহাম্মদ মুশাককর শুক্বরাতসী স্বীয় প্রসিদ্ধ কসীদায়- ‘সম্রাজ্য আল্লাহর জন্য, এ সম্মান ও মহামর্যাদা সে ব্যক্তির জন্য যার জন্য আজলে নবুয়ত বিধিবদ্ধ করা হয়েছে। সুতরাং যদি আজল দ্বারা কুদীম উদ্দেশ্য হয় তাহলে ঐ সময় আরশ কোথায় ছিল? তাঁর বক্তব্য শুনেছো। সুতরাং সুদৃঢ় থেকো এবং এ ধরনের ভ্রান্তিপূর্ণ বিষয়ে কর্ণপাত করােনা। ইনি হলেন উত্তরদাতার পেশওয়া, এখন তার উপর হুকুম প্রয়ােগ করাে এবং আমাকে বলাে তিনি কি তােমাদের মতে কাফির (নাউজুবিল্লাহ), অথবা গােমরাহ, পথভ্রষ্ট ও পথভ্রষ্টকারী? নাকি সুন্নী মুসলমান, মহান অলী, দ্বীনের স্তম্ভ এবং সৈয়দুল মুরছালীন (ﷺ)-এর উত্তরসুরী? শীঘ্রই জবাব দাও, আর, হামলাকারীরা নিকাবে মুখ লুকানাে থেকে পরিত্রান পাবেন।
দ্বিতীয় প্রশ্নঃ উত্তর দাতার এ উক্তি- নবী করীম (ﷺ) আজল (অনন্তকাল) থেকে আবদ (চিরকাল) পর্যন্ত (সৃষ্টি জগতে) যা কিছু সংঘটিত হয়েছে আর যা কিছু সংঘটিত হবে সর্ব বিষয়ে অবগত আছেন।'
আমি বলছি, প্রথম জবাব আপনারা উত্তরদাতার উক্তির এমন অনুবাদ করেছেন যা আপনাদের ন্যায় (কাল্পনিক ও সন্দিহানদের) সন্দেহ আরাে অধিক। বৃদ্ধির কারণ হবে। এ জন্য যে, আপনাদের বক্তব্যে চিরকাল এর সম্পর্ক يعلم (জানেন) এর সাথে হওয়ার অবকাশ রয়েছে। আর আজল’ শব্দকে যখন বাক্যের পরিভাষায় ব্যবহার করা হবে, তখন অর্থ হবে রসুলে পাক (ﷺ) এর জ্ঞান আজল (অনন্তকাল) থেকেই বিদ্যমান ছিলাে, যার কোন উৎপত্তি (সুচনা) নেই। এটা সুস্পষ্ট কুফর, যদ্বারা রাসুলে পাক (ﷺ) এর (চিরস্থায়ী) হওয়া আবশ্যকীয় হয়ে পড়বে। অথচ উত্তরদাতার উক্তিতে এমন সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। তবে বক্তব্য নিম্নরূপ (পৃষ্টা-৭) “নিশ্চয়ই যে সব কিছু সংঘটিত হয়নি আপনি তাও জানতেন ঐ সকল অদৃশ্য জ্ঞা:সমূহে শামিল রয়েছে যা আদি থেকে সংঘটিত হয়েছে, আর অনন্তকাল পর্যন্ত যা সংঘটিত, হবে।
বাকী রইলাে, রাসুলে সৈয়দে আলম (ﷺ)-এর জ্ঞানে আদি থেকে অনন্তকাল পর্যন্ত সকল কায়েনাত শামিল হওয়া।' জেনে রাখুন! যখন ‘আজল ও ‘আবদ’ ব্যবহৃত হয় তখন এর দ্বারা উদ্দেশ্য তাই হয় যা কালাম শাস্ত্রবিদদের। পরিভাষায় অর্থাৎ তা যার অস্তিত্বের সুচনা নেই এবং তা যার বাকীর অন্ত নেই। এ ভিত্তিতে সকল বস্তুর জ্ঞান অন্তর্ভুক্ত হওয়া সম্পর্কে (এ ধরনের জ্ঞান) আমি আপনাদের ব্যক্ত করেছি যে, এগুলাে পবিত্রতম আল্লাহর সাথেই খাস। বান্দাদের জন্য আকল ও শরীয়ত উভয় দিক দিয়ে অসম্ভব। কিন্তু তবুও এ উভয় শব্দের ব্যবহার পরিলক্ষিত হয়। আর তা দ্বারা ভবিষ্যতের দীর্ঘ কালই উদ্দেশ্য হয়। যেমন ‘আবদ’ শব্দের ব্যাখ্যায় কাজী বায়দাবী (رحمة الله) স্বীয় তাফসীরে উল্লেখ করেছেন।
আর আমার সরদার, আরিফ বিল্লাহ মাওলানা নিজামী (কুঃ সিঃ) রাসুলে সৈয়দে আলম (ﷺ)-এর প্রশংসায় বলেন, অর্থাৎ আদি থেকে অনন্তকাল পর্যন্ত যা কিছু বিদ্যমান রয়েছে এ জন্য অস্তিত্ব লাভ করেছে যে, মুহাম্মদ (ﷺ) এর নামের সৌন্দর্যে পরিণত হবে অর্থাৎ তাঁর খাদেম ও অনুচরবর্গ হবে এবং হুজুরের সম্মান ও মর্যাদার জুলুসে অন্তর্ভুক্ত হবে। এখন আপনাদের কি ধারণা যে, মাওলানা এখানে ‘আজল’ দ্বারা কি বুঝিয়েছেন? যদি আপনারা তা বাক্যের পরিভাষায় ব্যবহার করেন, তাহলে (আল্লাহর পানাহ) সুস্পষ্ট কুফর হবে। তাহলে আপনাদের ভাইয়ের বাক্যকে কেন এ অর্থে ব্যবহার করছেন না, যে অর্থে আরিফ বিল্লাহর বাক্যকে ব্যবহার করছেন? আমি এ ইচ্ছে করেছিলাম এ বক্তব্যকে বিশ্লেষন করার জন্য যে, আদি থেকে অন্ত পর্যন্ত এর স্থানে সৃষ্টির প্রথম দিবস থেকে কিয়ামত পর্যন্ত লিখে দেবো। অতএব, আমি তাই লিখেছি। কিন্তু আপত্তির কৌশল তাড়াতাড়ি ফ্যাসাদের অর্থেই নিয়ে যায়।
দ্বিতীয় জবাবঃ যদি আপনি নিজেই (১৬ পৃষ্ঠায়) উত্তরদাতার বর্ণনা দেখতেন, তাহলে আজল’ ও ‘আবদ’ শব্দের মর্মার্থ জানতে পারতেন, যেমন আমরা জেনে নিয়েছি। অতঃপর তিনি বলেন-“নিঃসন্দেহে লাওহে মাহফুজে লিপিবদ্ধ ও রক্ষিত রয়েছে সেসব বস্তু যা সংঘটিত হয়েছে আর যা আদি থেকে অনন্ত কাল পর্যন্ত হবে। এর পর কেউ কি সন্দেহ পােষণ করবে যে, তারা এমন বস্তুর যার সৃষ্টির না কোন শুরু আছে, না কোন শেষ, একটি সীমাবদ্ধ ও সসীম লাওহে অঙ্কিত স্বীকার করেছে? বরং এর অর্থ তাই যা আমি বলেছি যে, প্রথম | দিবস থেকে শেষ দিবস পর্যন্ত সকলবস্তুর বর্ণনা যেভাবে বিশুদ্ধ হাদীসে রাসুলে পাক (ﷺ) থেকে বর্ণনা এসেছে যে, -আবদ’ পর্যন্ত সকল বস্তু লাওহে বিদ্যমান আছে।” আর তাতেও নিশ্চয়ই সে মর্মার্থ যা আমরা ব্যক্ত করেছি।
তৃতীয় জবাবঃ আফসুস, যদি আপনি স্বয়ং উত্তরদাতার রিসালার ১১ পৃঃ দেখতেন যেখানে তিনি তাফসীরে রুহুল বয়ান’ থেকে বক্তব্য বর্ণনা করেছেন-“হে নবী (ﷺ)! আপনি স্বীয় প্রতিপালকের অনুগ্রহ থেকে গােপনীয় নন যে, যা কিছু আজল থেকে হয়েছে এবং যা কিছু আবদ পর্যন্ত হবে, তা থেকে আপনার কিছু গােপনীয় রয়েছে। কেননা (জানুন) শব্দের অর্থ গােপনীয়। বরং আপনি জানেন যা কিছু গত হয়েছে আর সংবাদদাতা যা কিছু সংঘটিত হবে সে সম্পর্কে।
সুতরাং এ শব্দে বিজ্ঞ মুফাসির (রুহুল বয়ান গ্রন্থকার) হলেন উত্তরদাতার পেশওয়া। যদি তা পাপ হয়ে থাকে তাহলে এ তাফসীরকারের গুণাহ উত্তরদাতার চেয়েও জঘন্যতর। এ কারণে যে, উত্তরদাতাতাে তাঁর বক্তব্য স্বীয় পুস্তিকায় উদ্ধৃত করেছেন, আর মুফাসসির (رضي الله عنه)তাে আল্লাহর কালামের তাফসীরই (ব্যাখ্যা) করেছেন। সুতরাং ঐ শব্দের ভিত্তিতে (তার উপর) কুফর-পথভ্রষ্ট যেই হুকুম প্রয়ােগ করুন না কেন, সর্ব প্রথম তা ঐ মহান তাফসীরকারের উপর প্রয়ােগ করুন। অতঃপর জ্ঞানী উত্তরদাতার দিকে অগ্রসর হােন।
তৃতীয় প্রশ্নঃ উত্তরদাতার এ উক্তি-রাসুলে পাক (ﷺ)-এর জ্ঞানে সকল অদৃশ্য বস্তুসমূহ শামিল রয়েছে, এটা বিশুদ্ধ কিনা?
জবাবঃ (সকল) এ অর্থের ভিত্তিতে যে, আল্লাহর সকল জ্ঞান বিস্তারিত, প্রকৃত পরিবেষ্টন ও পরিব্যাপ্ত হয়ে যাওয়া তা আমি আপনাদের বলিনি, এটা কোন মাখলুকের জন্য নিশ্চিত-অকাট্যভাবে যুক্তি ও শরীয়ত উভয় দৃষ্টিকোণ থেকে সম্পূর্ণভাবে অসম্ভব। আর এ অর্থের ভিত্তিতে-যা কিছু প্রথম দিবস থেকে সংঘটিত হয়েছে এবং শেষ দিবস পর্যন্ত হতে থাকবে এ সবের পরিব্যাপ্ত হওয়া, আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের ইরশাদ শ্রবণ ও স্বীকার করার ভিত্তিতে বিশুদ্ধ ও সঠিক। হায়রে দুঃখ! আল্লাহ তায়ালা যখন ইরশাদ করেছেন প্রত্যেক বস্তুর সুস্পষ্ট বর্ণনা আরাে ইরশাদ করেন প্রত্যেক কিছুর বিস্তারিত বর্ণনা’ রাসুলে (ﷺ) ইরশাদ করেন-“প্রত্যেক বস্তু আমার উপর সুস্পষ্ট হয়ে গেছে’ ওলামা কিরাম বলেন-“রাসুলে পাক (ﷺ)-এর সকল আংশিক ও পরিপূর্ণ জ্ঞান হাসিল হয়েছে এবং সব কিছু তিনি পরিবেষ্টন করেছেন। আরাে বলেন রাসুলে পাক (ﷺ) প্রত্যেক বস্তু বর্ণনা করেছেন। আরাে বলেছেন, রাসুলের জ্ঞান সমগ্র বিশ্ব পরিব্যাপ্ত। আরাে বলা হয়েছে পূর্বাপর সকল বস্তু যা সংঘটিত হয়েছে ও হবে, সব সম্পর্কে তিনি অবগত রয়েছেন। তিনি সব কিছু এভাবেই শুনেন ও দেখেন, যেন সব তাঁর চক্ষুর সামনে। তারা আরাে বলেন ‘রাসুলে সৈয়দে আরম (ﷺ) সকল বস্তু সম্পর্কে জ্ঞাত। তিনি প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য আদি-অন্ত সব কিছুর জ্ঞান বেষ্টন করে নিয়েছেন।
এ কথাও পূর্বে উল্লেখ হয়েছে যে, আল্লাহর পরিচয় লাভকারীর উপর সব কিছু স্পষ্ট হয়ে যায়। (একজন আরিফের অবস্থা যদি এমন হয়) তাহলে (রাসুলে পাক (ﷺ) এর জন্য) সকল অদৃশ্য জ্ঞান বললে কি অসাধারণ উক্তি হয়ে যায়? এর ব্যাপকতা কি আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর রাসুলের বাণী, ইমামদের উক্তি ও - ওলামায়ে কিরামের ঐ বক্তব্যের ব্যাপকতা থেকে অধিক জ্ঞান করছেন? যদি আপনারা বিবেক দ্বারা চিন্তা ভাবনা করেন তাহলে অধিকাংশ বাণী যা
অতিবাহিত হয়েছে, তা এর চেয়ে অপ্রশস্ত পাবেন। সুতরাং মর্মার্থ তাই, যা গত হয়েছে ও সাব্যস্ত হয়েছে। যদি তা কুফর, গােমরাহ, ভুল বা মুখতা হয়, তাহলে সর্বপ্রথম আল্লাহ ও রাসুলের কালাম পরিবর্তন করুন আর শীর্ষস্থানীয় আলিমদেরকেই কাফির, পথ ভ্রষ্ট এবং মুখ বলুন, তার পরেই উত্তরদাতার দিকে প্রত্যাবর্তন করুন।
চতুর্থ প্রশ্নঃ
রাসুলে করীম (ﷺ)-এর জ্ঞানের শুরু ও শেষ অন্য কোন সীমা দ্বারা সীমাবদ্ধ কিনা?
জবাবঃ শুরুতে অবশ্যই রয়েছে। এ কারণে যে, মাখলুকের জ্ঞান ধ্বংসশীল ছাড়া সম্ভব নয়। আর ‘শেষ’ এর দ্বারা যদি উদ্দেশ্য এটাই হয় যে, প্রত্যেক কালে রাসুলে পাক (ﷺ)-এর জ্ঞানের কোন সীমা রয়েছে, যা সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালাই অধিক জ্ঞাত। যদিও কোন ব্যক্তি ও ফিরিস্তা তা গণনা করতে পারে না, তাহলে এটা নিঃসন্দেহে বিশুদ্ধ। যদি এটা উদ্দেশ্য নেয়া হয় যে, রাসুলে পাক (ﷺ)-এর জ্ঞান কোন সীমায় গিয়ে তা অতিক্রম করতে পারে না; তাহলে এমন ধারণা অবশ্যই ভ্রান্ত। আল্লাহ তায়ালা তাতে সন্তুষ্ট নন। বরং আমাদের প্রিয় মাহবুব (ﷺ) (চিরকাল পর্যন্ত) আল্লাহ তায়ালার জাত ও সিফাতের জ্ঞান সম্পর্কে উন্নতি করতে থাকবেন। এ সম্পর্কে আমি প্রথম পরিচ্ছেদে বিস্তারিত বর্ণনা করেছি।
পঞ্চম প্রশ্নঃ অভিমতে আমার এ উক্তি যা প্রশ্নকর্তা আরবীতে অনুবাদ করার সময় এভাবেই বলেছেন যে, রাসুলে পাক (ﷺ)-এর জ্ঞান থেকে অনু পরিমাণও অদৃশ্য হয়নি। এদ্বারা তােমাদের উদ্দেশ্য এটাই যে, আদি থেকে অন্ত পর্যন্ত কোন বস্তু অনু পরিমাণও হুজুরে সৈয়দে আলম (ﷺ)-এর জ্ঞান থেকে অদৃশ্য নয়, অথবা অন্য কিছু। " আমি বলছি, প্রথম জবাব হলাে আমার বক্তৃতার অনুবাদতাে এটা নয়ই।
বাকী রইলাে, কোন অনু যা হুজুরের জ্ঞান বহির্ভূত হয়, তাহলে তা পরিষ্কার। অস্তিত্বহীন বস্তুর দিকে দৃষ্টমান কিন্তু তা প্রশ্নকারীর অনুবাদের বিপরীত, তিনি নিজপক্ষ থেকে মিসকাল (পরিমাণ) শব্দ বৃদ্ধি করেছেন। যা আমার বক্তৃতা নয়। নিঃসন্দেহে তারা এটাই চায় যে, সে খন্ডন ও সন্দেহ যা তার বাক্যে আদি থেকে অন্ত পর্যন্ত উদ্দেশ্য অথবা অল্প। আর এটা বিশুদ্ধ হয়ে যেতাে যদি সে ‘পরিমাণ’ শব্দটি বৃদ্ধি না করতাে এবং এটা জিজ্ঞেস করার জন্য দাঁড়াতো যে, আজলের কোন বস্তু কি হুজুরের জ্ঞান থেকে অদৃশ্য রয়েছে (যদি তা স্বীকার করে) তাহলে এ কথারই প্রমাণ বহন করতাে যে, সে আজলে অণুর অস্তিত্ব স্বীকার করছে, যা পরিস্কার ভ্রষ্ট এবং কুফর।
অথচ, সে শব্দ বৃদ্ধি করে দিয়েছে, জানতে পারেনি যে, আজলে এমন কোন বস্তু নেই যা ‘পাল্লা দ্বারা পরিমাণ করা যাবে, ওখানেতাে একমাত্র আল্লাহই এবং তার মহান গুণাবলীই রয়েছে সুতরাং তার বক্তব্য পরিত্যাজা এবং কুফরের আশংকার দিকে লক্ষ্যণীয় রয়ে গিয়েছে অথবা তাতে তাই প্রকাশিত হয়েছে। এটাই তার পরিণাম যা তার ভাইয়ের জন্য খনন করেছে, অতঃপর এখানে যে কথা হচ্ছে তা আমি বারংবার তােমাদের বলছি এবং পরিষ্কার ভাষায় প্রকাশ করে দিয়েছি। আর আজল’ শব্দের উল্লেখ না আমার বক্তৃতায় আছে, না এ অর্থে যা প্রশ্নকারীর সন্দেহে হয়েছে, যা .. আমার উদ্দেশ্য।
দ্বিতীয় জবাবঃ এখানে তিনটি স্তর রয়েছে। প্রথম স্তর মুসলমান, পুণ্যাত্মা, সুস্থ ব্যক্তিদের। এমন কোন মুসলমানের সাথে খারাপ ধারণা পােষণ করা যাবে।, ভাল ধারণাই রাখতে হবে যদি তিনি এমন কোন কিছু পান, যাতে অন্য দৃষ্টিকোণ রয়েছে, তাহলে তা ব্যাখ্যা করে দোষ-ত্রুটি থেকে প্রত্যাবর্তন করে দেন। দ্বিতীয় স্তর তারা, যারাতাে এর সামর্থ রাখেনা কিন্তু তাদের এক ধরণের সুবিচার রয়েছে। তাদের দ্বীন সামান্য সংরক্ষিত আছে। তারা নিজের ভাইয়ের অন্য নিজ থেকে অসম্ভব কিছু রচনা করেনা, যেন খারাপ ধারণা ও অপবাদের জন্য শক্তি পাওয়া যায়।
তৃতীয় স্তরঃ ঐ ব্যক্তি যারা নি’মাতসমূহ থেকে বঞ্চিতের সীমায় পৌছে গেছে। কিন্তু তাদের চক্ষে সামান্য লজ্জা অবশিষ্ট রয়েছে। সুতরাং খারাপ ধারণায় সে যার অপবাদ দেয় যদি সে তার বিরােধ ব্যাখ্যা পায় তখন তা নিয়ে আর অগ্রসর হয়না। এ জন্য যে, তার চক্ষুর সামনে ঐ বস্তু বিদ্যমান যা তার অপবাদকে খন্ডন করে দেয় এবং তার মুখে লাগাম পরিয়ে দেয়। কিন্তু যে ব্যক্তি হিংসা করেছে, ধ্বংস হয়ে গেছে এবং সীমা অতিক্রম করেছে। সে দেখে এবং মুখ ফিরিয়ে নেয়, আর শুনে ও আপত্তি করে। আর আমি হামলাকারীদের সতর্ক করছি এবং তাদের মৃত্যু শয্যা থেকে রক্ষা করেছি আর এমন মাসয়ালাসমূহের সংযােজন করেছি। তাদের সম্মুখে চমৎকার মাসয়ালা ব্যক্ত করেছি যে, প্রত্যেক। নীচ থেকে নিচতর লােকও তা না মেনে পারে না। কেনইবা মানবে না, আমার বক্তব্যেতাে এটুকুও ছিলােনা যে, এ শব্দ “আজল’ থেকে শুণ্য, বরং তাতে সর্বোৎকৃষ্ট বিশ্লেষণ দ্বারা ব্যাখ্যা ছিলাে যে, এর দ্বারা তাই উদ্দেশ্য যা আদি থেকে অন্ত পর্যন্ত সংঘটিত হয়েছে ও ভবিষ্যতে হবে।
সুতরাং এ বিশ্লেষণ কি খারাপ। ধারণার রাস্তা বন্ধ করে দেয়নি? কিন্তু হিংসা একটি বিষাক্ত কাটা, যার উপর বিদ্ধ হবে সে ধ্বংস হয়ে যাবে। অতএব, ধ্বংসের স্থান থেকে বেঁচে থেকো। আল্লাহর প্রশংসা, জবাব পরিপূর্ণ হয়েছে এবং পরিস্ফুটিত হয়েছে। আর এ খন্ড যখন একটি গ্রন্থাকার ধারণ করলাে, তখন আমি এর নাম ‘আদৌওলাতুল মককীয়া বিল মাদ্দাতিল গায়বিয়াহ’ রাখি। যেন এ নামটিও হয়ে যায়, আবার মাকসুদ, রচনা ও আবজাদ হিসাবনুযায়ী রচনাকালের সনের পরিচয়ও হয়ে যায়। আলহামদুলিল্লাহ!