মীলাদ শরীফে কিয়ামের বর্ণনা


এ আলোচনায় একটি ভুমিকা ও দু’টি অধ্যায় রয়েছে। কিয়াম সম্পর্কিত কিছু জরুরী কথা ভূমিকায় আলোকপাত করা হয়েছে। 


ভূমিকা


নামাযের মধ্যে দু’ধরনের ইবাদত পাওয়া যায়-মৌখিক ও শারীরিক। মৌখিক ইবাদত হচ্ছে কুরআন তিলওয়াত, রুকু সিজ্দায় তসবীহ, তাশাহুদ ইত্যাদি পাঠ করা। আর শারীরিক ইবাদত চার রকম-কিয়াম, রুকু, সিজ্দা ও বসা। কিয়ামের অর্থ হলো এভাবে সোজা দন্ডায়মান হওয়া যেন হাত হাঁটু পর্যন্ত পৌছতে না পারে আর রুকুর অর্থ হলো এতটুকু ঝোঁকা যেন হাত হাঁটু পর্যন্ত পৌছে যায়। এজন্যে বেশি কুঁজো লোকের পেছনে সুস্থ লোকের নামায পড়া জায়েয নয়। কেননা, সে কিয়াম করতে পারে না, সব সময় রুকুতেই খেকে যায়। সিজ্দার অর্থ হচ্ছে সাতটি অংগ মাটিতে লাগানো। অংগগুলো হচ্ছে দু’পায়ের তলা, দু’হাটু, দু’হাতের তালু, নাক ও কপাল। ইসলাম ধর্মের আগে অন্যান্য নবীগণের উম্মতদের মধ্যে কারো তাযীম বা সম্মানের জন্য দাড়াঁনো,  রুকু করা, সিজ্দা করা, বসা ইত্যাদি কাজ বৈধ ছিল। তবে ইবাদতের নিয়তে নয়, বরং সম্মানার্থে। 


যেমন আল্লাহ তা’আলা ফিরিশতাদের দ্বারা আদম (عليه السلام) কে সিজ্দায়ে তাযীমী করায়েছিলেন। হযরত ইয়াকুব (عليه السلام) এর অন্যান্য সন্তানেরা হযরত ইউসূফ (عليه السلام) কে তাযীমী সিজ্দা করেছিলে (কুরআন করীম)। কিন্তু ইসলাম তাযীমী কিয়াম ও তাযীমী বসাটাকে জায়েয রেখেছে এবং তাযীমী রুকু ও সিজ্দাকে হারাম করে দিয়েছে। এতে প্রতীয়মান হরো কুরআন হাদীছের দ্বারা রহিত হয়। কেননা খোদা ভিন্ন অপরের বেলায় তাযীমী সিজ্দা কুরআন দ্বারা প্রমাণিত রয়েছে কিন্তু এটাকে হাদীচ দ্বারা রহিত করা হয়েছে। এও স্বরণ রাখা দরকার যে কারো সামনে মাথা নত করা বা মাটিতে মাথা রাখা হারাম হবে, যুদ রুকু-সিজদার নিয়তে এ কাজ করে। কিন্তু যতি কোন বুযুর্গের জুতা সোজা করার উদ্দেশ্যে বা হাত-পা চুমো দেয়ার জন্য মাথা নত করে, তাহলে যদিওবা মাথা নত পাওয়া গেছে, কিন্তু এতে রুকুর নিয়ত না থাকায় তা রুকু হিসেবে গণ্য হবে না। তবে রুকুর মত ঝুঁকে সালাম করা হারাম অর্থাৎ” সম্মানার্থে রুকু পর্যন্ত নত হওয়া হারাম। তবে অন্য কাজের জন্য যেমন জুতা সোজা করার উদ্দেশ্যে সম্মান পূর্বক ঝুঁকা জায়েয। এ পার্থক্যটা যেন নিশ্চয় স্বরণ থাকে। এটি খুবই সুক্ষ্ম বিষয়। 


❏ ফত্ওয়ায়ে শামীর পঞ্চম খন্ডে কিতাবুল কারাহিয়ার অধ্যায়ের শেষে লিপিবদ্ধ আছে-


الْإِيمَاءُ فِي السَّلَامِ إلَى قَرِيبِ الرُّكُوعِ كَالسُّجُودِ وَفِي الْمُحِيطِ أَنَّهُ يُكْرَهُ الِانْحِنَاءُ لِلسُّلْطَانِ وَغَيْرِهِ


-‘‘সালাম দেয়ার সময় রুকু পর্যন্ত ঝুঁকে ইশারা করাটা সিজ্দার মত (হারাম)। মুহিত গ্রন্থে বর্ণিত আছে যে বাদশাহের সামনে মাথা নত করা মাকরূহ তাহরীমা।’’  ৫৯

➥〈 ফাতওয়ায়ে শামী, ৬/৩৮৩ পৃঃ  〉


প্রথম অধ্যায়

মীলাদ শরীফে কিয়ামের প্রমাণ


কিয়াম অর্থাৎ দন্ডায়মান হওয়া ছয প্রকার-জায়েয, ফরয, সুন্নাত, মুস্তাহাব, মাকরূহ ও হারাম। প্রত্যেক প্রকারের কিয়ামকে সনাক্ত করার নিয়ম আমি বাতলে দিচ্ছি, যার ফলে সহজেই বোঝা যাবে এ কিয়াম কি ধরনের। 


(১) পার্থিব প্রয়োজনে দাড়াঁনো জায়েয। এর হাজার হাজার উদাহরণ রয়েছে। যেমন-দাড়িঁয়ে দালান তৈরি করা এবং অন্যান্য দুনিয়াবি কাজকর্ম ইত্যাদি করা। 


❏ কুরআন মজিদে উলে­খিত আছে-


فَإِذَا قُضِيَتِ الصَّلَاةُ فَانْتَشِرُوا فِي الْأَرْضِ


-‘‘যখন জুমআর নামায হয়ে যাবে, তখন তোমরা জমিনে ছড়িয়ে পড়।’’

(সূরা জুম‘আ, আয়াত নং-১০) 


না দাঁড়িয়ে ছড়িয়ে পড়া কখনও সম্ভব নয়। 


(২) পাঁচ ওয়াক্তিয়া ও ওয়াজিব নামাজে দাড়াঁনো ফরয। যেমন-


وَقُومُوا لِلَّهِ قَانِتِينَ


-‘‘আল্লাহর সামনে আনুগত্য প্রকাশ করতঃ দন্ডায়মান হও।’’

(সূরা বাক্বারা, আয়াত নং-২৩৮) 


অর্থাৎ যদি কোন লোক সামর্থ্য থাকা সত্তেও বসে আদায় করে, তাহলে নামায হবে না। 


(৩) নফল নামাযে দন্ডায়মান হওয়া মুস্তাহাব। অবশ্য বসেও জায়েয। তবে দাঁড়িয়ে পড়াতে ছওয়াব বেশি।

 

(৪) কয়েকটি বিশেষ সময় দাঁড়ানো সুন্নাত। 


প্রথমতঃ ধর্মীয় মর্যাদাশীল জিনিসের সম্মানার্থে দাড়াঁনো। এ জন্য যমযমের পানি ও ওযুর অবশিষ্ট পানি দাঁড়িয়ে পান করা সুন্নাত। হুযুর আলাইহিস সালামের রওযা পাকে উপস্থিত হওয়া যদি আল্লাহ্ নসীব করেন, তখন নামাযের মত হাত বেঁধে দাড়ানো সুন্নাত। 


❏ ফাত্ওয়ায়ে আলমগীরীর প্রথম খন্ডে কিতাবুল হজ্জ্বের শেষে زِيَارَةِ قَبْرِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ শীর্ষক অধ্যায়ে উলে­খিত আছে- 


وَيَقِفُ كَمَا يَقِفُ فِي الصَّلَاةِ وَيُمَثِّلُ صُورَتَهُ الْكَرِيمَةَ الْبَهِيَّةَ كَأَنَّهُ نَائِمٌ فِي لَحْدِهِ عَالِمٌ بِهِ يَسْمَعُ كَلَامَهُ.


-‘‘পবিত্র রওযা শরীফের সামনে এমনভাবে দাঁড়াবে যেভাবে নামাযে দাঁড়ানো হয় এবং সেই পবিত্র চিত্র মনের মধ্যে এমনভাবে স্থাপন করবে, যাতে মনে হয়। হুযুর আলাইহিস সালাম রওযা পাকে আরাম ফরমাচ্ছেন, তাকে চিনছেন ও তার কথা শুনছেন।’’ 

(ফাতওয়ায়ে আলমগীরী, ১/২৬৫ পৃ.)


অনুরুপ মুমিনদের কবরে ফাতিহা পাঠ করার সময় কেবলার দিকে পিঠ এবং কবরের দিকে মুখ করে দাড়াঁনো সুন্নাত। 


❏ আলমগীরী কিতাবুল কারাহিয়ার زِيَارَةِ قَبْورِ অধ্যায়ে আছে-


يَخْلَعُ نَعْلَيْهِ ثُمَّ يَقِفُ مُسْتَدْبِرَ الْقِبْلَةِ مُسْتَقْبِلًا لِوَجْهِ الْمَيِّتِ


-‘‘প্রথমে জুতা খুলে ফেলুন। অতঃপর কাবার দিকে পিঠ করে এবং মৃত ব্যক্তির দিকে মুখ করে দাঁড়ান। রওযা পাক, যমযম ও ওযুর পানি, মুমিনের কবর সবই পবিত্র জিনিস। কিয়ামের দ্বারা এগুলোর তাযীম করানো হয়েছে। 

(ফাতওয়ায়ে আলমগীরী, ৫/৩৫০ পৃ.) 


দ্বিতীয়তঃ যখন কোন ধর্মীয় নেতা আসেন, তাঁর সম্মানার্থে দাড়িয়ে যাওয়া সুন্নাত। অনুরূপ কোন ধর্মীয় নেতা সামনে দাঁড়ালে তার জন্য দাড়িয়ে থাকা সুন্নাত। কিন্তু বসে থাকা বেআদবী। 


❏ মিশকাত শরীফের প্রথম খন্ড কিতাবুল জিহাদে কিয়াম ও হুকমুল ইসরা শীর্ষক অধ্যায়ে উলে­খিত আছে যে যখন হযরত সাআদ ইবনে মুআয ইবনে মুআয (رضي الله عنه) মসজিদে নববীতে উপস্থিত হন, তখন হুযুর আলাইহিস সালাম আনসারদেরকে হুকুম দিলেন-


قُومُوا إِلَى سَيِّدِكُمْ


-‘‘আপনাদের নেতার জন্য দাঁড়িয়ে যান।’’  ৬০

➥〈  ইমাম বুখারী, আস-সহীহ, কিতাবুল মাগাজী, ৪/১৫১১ পৃঃ  হা/৩৮৯৫, দারু ইবনে কাসির, বয়রুত, লেবানন, ইমাম মুসলিম, আস-সহীহ, কিতাবুয যিহাদ, ৩/১৩৮৮ পৃঃ  হা/১৭৬৮, দারু ইহ্ইয়াউস তুরাশুল আরাবী, বয়রুত, লেবানন, ইমাম আবু দাউদ, আস-সুনান, কিতাবুল আদাব, ৪/৩৫৫ পৃঃ  হা/৫২১৫, দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন, খতিব তিবিরিযি, মিশকাত, কিতাবুল আদাব, হা/৪৬৯৫ এবং হা/৩৯৬৩ 〉


এ দাঁড়ানো ছিল সম্মানবোধক। তাদেরকে বাধ্য করে দাঁড় করানো হয়নি। অধিকন্তু ঘোড়া থেকে নামানোর জন্য ২/১ জনই যথেষ্ঠ ছিল। কিন্তু সবাইকে কেন বললেন যে দাঁড়িয়ে যাও। আর ঘোড়া থেকে নামানোর জন্য মজলিসে আগ তাদের মধ্যে থেকে কাউকে ডাকা যেত। কিন্তু নির্দিষ্ট করে আনসারদেরকে কেন হুকুম করলেন? স্বীকার করতেই হবে যে, এ কিয়ামটা ছিল সম্মান বোধক। হযরত সাআদ আনসারদের নেতা ছিলেন। তাই তাদের দ্বারা তাযীম করানো হয়েছে। যাঁরা উপরোক্ত বাক্যে ব্যবহৃত إِلَى দ্বারা ধোঁকা দিয়ে বলেন যে, এ দাড়াঁনোটা ছিল রোগীর সাহাযার্থে, তারা তাহলে সূরা মায়েদার ৬ নং এ আয়াতের বিষয়ে কি বলবেন-


إِذا قُمْتُمْ إِلَى الصَّلاةِ


-‘‘যখন তোমরা নামাযের জন্য দাঁড়াবেন।’’ 


❏ আল্লামা শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দেসে দেহলভী (رحمة الله) তার আশিয়াতুল লুম‘আত গ্রন্থে এ হাদিসের ব্যাখ্যায় লিখেন-


حكمت در مراعات توقير واكرام سعد دريں مقام وامر تعظيم وتكريم او دريں ها آں باشد كه اورابرائے حكم كردن طلبيده بودند پس اعلان شان او دريں مقام اولى وانسب باشد.


-‘‘এখানে إِلَى হযরত সাআদের প্রতি তাযীম করানোর রহস্য হচ্ছে যে তাঁকে বনি কুরায়জার উপর শাসন করার জন্য ডাকা হয়েছিল। তাই এ জায়গায় তাঁর শান-মান প্রকাশের সঠিক সময় ও প্রয়োজন ছিল।’’  ৬১

➥〈 আশিয়াতুল লুম‘আত, কিতাবুল আদাব, কিয়াম পরিচ্ছেদ, ৪/৩০ পৃঃ  〉


❏ মিশকাত শরীফের কিয়াম অধ্যায়ে হযরত আবু হুরাইরা থেকে বর্ণিত আছে-


عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَجْلِسُ مَعَنَا فِي الْمَسْجِدِ يُحَدِّثُنَا فَإِذَا قَامَ قُمْنَا قِيَامًا حَتَّى نَرَاهُ قد دخل بعض بيُوت أَزوَاجه.


-‘‘যখন হুযুর আলাইহিস সালাম বৈঠক করে উঠতেন, তখন আমরা দাঁড়িয়ে যেতাম এবং এতটুকু পর্যন্ত দেখতাম যে তিনি তাঁর পবিত্র বিরি ঘরে প্রবেশ করছেন।’’  ৬২

➥〈  ইমাম বায়হাকী, শুয়াবুল ঈমান, ১১/২৭১ পৃঃ  হা/৮৫৩১, খতিব তিবরিযি, মিশকাতুল মাসাবীহ, ৩/১৩৩২ পৃঃ  কিতাবুল আদাব, হা/৪৭০৫, এ হাদিসটিকে আহলে হাদিসদের তথাকথিত ইমাম আলবানী মিশকাতের তাহকীকে যঈফ বলে উল্লেখ করেছেন; অথচ হাদিসটি সহীহ, যার জবাব আমি আমার লিখিত ‘প্রমাণিত হাদিসকে জাল বানানোর স্বরূপ উন্মোচন’ তৃতীয় খন্ডেখন্ডে দিয়েছি। 〉


❏ আশআতুল লুমআত কিতাবুল আদাবের কিয়াম শীর্ষক অধ্যায়ে قُومُوا إِلَى سَيِّدِكُمْ এর ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে উলে­খিত আছে-


اجماع كرده اند جماهير علماء باين حديث بر اكرام اهل فضل از علم يا صلاح يا شرف ونورى گفته كه ايں قيام مراهل فضل را وقت قدوم آوردن ايشاں مستحب است واحاديث دريں باب درود يافته ودر نهى ازا صريحا چيزے صحيح نه شده از قنيه نقل كرده كه مكرده نيست قيام جالس-از برائے كسى در آمده است بروے بجهت تعظيم.


-‘‘এ হাদীসের পরিপ্রেক্ষিতে অধিকাংশ উলামায়ে কিরাম পুণাত্ণা উলামায়ে কিরামের তাযীম করার ব্যাপারে ঐক্যমত পোষণ করেন। ইমাম নববী বলেন যে বুযুর্গানে কিরামের তাশরীফ আনয়নের সময় দাঁড়ানো মুস্তাহাব। এর সর্মথনে অনেক হাদীছ রয়েছে কিন্তু এর নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে সুষ্পষ্ট কোন হাদীছ নেই। ‘কীনা’ গ্রন্থ থেকে সংকলিত হয়েছে যে আগমনকারী কারো সম্মানার্থে বসে থাকা লোকের দাঁড়িয়ে যাওয়া মাকরূহ নয়।’’  ৬৩

➥〈 আশিয়াতুল লুম‘আত, কিতাবুল আদাব, কিয়াম পরিচ্ছেদ, ৪/৩০ পৃঃ  〉


❏ ফাতওয়ায়ে আলমগীরী কিতাবুল কারাহিয়ারملاقات الملوك শীর্ষক অধ্যায়ে বর্ণিত আছে- 


تَجُوزُ الْخِدْمَةُ لِغَيْرِ اللَّهِ تَعَالَى بِالْقِيَامِ وَأَخْذِ الْيَدَيْنِ وَالِانْحِنَاءِ


-‘‘খোদা ভিন্ন অন্য কাউকে দাঁড়িয়ে, কর্র্মদন করে বা নত হয়ে সম্মান করা জায়েয।’’  ৬৪

➥〈 নিযামুদ্দীন বলখী, ফাতওয়ায়ে আলমগীরী, ৫/৩৬৯ পৃঃ  〉


এখানে নত হওয়া বলতে রুকু থেকে কম নত হওয়াকে বোঝানো হয়েছে। কেননা রুকু পর্যন্ত নত হওয়াতো নাজায়েয। এ প্রসংগে আমি ভূমিকায় আলোকপাত করেছি। 


❏ দুররুল মুখতার গ্রন্থের পঞ্চম খন্ডে কিতাবুল কারাহিয়ার ‘ইসতাবরা’ অধ্যায়ের শেষে বর্ণিত আছে-


يَجُوزُ بَلْ يَنْدُبُ الْقِيَامُ تَعْظِيمًا لِلْقَادِمِ كَمَا يَجُوزُ الْقِيَامُ، وَلَوْ لِلْقَارِئِ بَيْنَ يَدَيْ الْعَالِمِ


-‘‘আগমনকারী কারো সম্মানার্থে দাঁড়ানো জায়েয এবং মুস্তাহাব যেমন আলিমের সামনে দাঁড়িয়ে যাওয়া কুরআন তিলওয়াতকারীর জন্য জায়েয।’’  ৬৫

➥〈 ইমাম ইবনে আবেদীন শামী, ফাতওয়ায়ে শামী, ৬/৩৮৪ পৃঃ  〉


এ থেকে বোঝা গেল যে কারো কুরআন তিলওয়াতরত অবস্থায় কোন ধর্মীয় আলিম আসলে তাঁর সম্মানার্থে দাঁড়িয়ে যাওয়া মুস্তাহাব। 


❏ এ প্রসংগে ফত্ওয়ায়ে শামীতে বলা হয়েছে-


وَقِيَامُ قَارِئِ الْقُرْآنِ لِمَنْ يَجِيءُ تَعْظِيمًا لَا يُكْرَهُ إذَا كَانَ مِمَّنْ يَسْتَحِقُّ التَّعْظِيمَ


-‘‘কুরআন তিলওয়াত রত অবস্থায় আগমনকারী কারো সম্মানার্থে দাঁড়িয়ে যাওয়া মাকরূহ নয়, যদি তিনি সম্মান পাওয়ার উপযোগী হন।’’ ৬৬

➥〈 ইমাম ইবনে আবেদীন শামী, ফাতওয়ায়ে শামী, ৬/৩৮৪ পৃঃ  〉


❏ ফত্ওয়ায়ে শামী প্রথম খন্ড الامامت শীর্ষক অধ্যায়ে বর্ণিত আছে যে যদি কেউ মসজিদের প্রথম কাতারে জামাতের অপেক্ষায় বসে আছেন। ইত্যবসরে কোন আলিম আসলে তাকে জায়গা ছেড়ে দিয়ে নিজে পিছনে যাওয়া মুস্তাহাব। বরং এর জন্য প্রথম কাতারে নামায পড়া থেকে এটা আফযল। এটাতো উলামায়ে উম্মতের তাযীমের জন্য, কিন্তু হযরত সিদ্দীক আকবর (رضي الله عنه) তো নামায পড়ানো অবস্থায় হুযুর আলাইহিস সালামকে তশরীফ আনতে দেখে নিজে মুক্তাদী হয়ে গেলেন এবং নামাযের মাঝামাঝি হুযুর আলাইহিস সালাম ইমাম হলেন। (মিশকাত শরীফেরمرض النبى অধ্যায়ে দ্রষ্টব্য) উপরোক্ত বিবরণ থেকে বোঝা গেল যে ইবাদতরত অবস্থায়ও বুযুর্গানে দ্বীনের তাযীম করা জায়েয। মুসলিম শীফের দ্বিতীয় খন্ডে بَابُ حَدِيثِ تَوْبَةِ كَعْبِ بْنِ مَالِكٍ وَصَاحِبَيْهِ অধ্যায়ে উলে­খিত আছে-


فَقَامَ طَلْحَةُ بْنُ عُبَيْدِ اللهِ يُهَرْوِلُ حَتَّى صَافَحَنِي وَهَنَّأَنِي


-‘‘অতঃপর তালহা ইবনে উবাইদুল্লাহ দাঁড়িয়ে গেলেন এবং দৌড়ে এসে আমার সাথে মুসাফা করলেন এবং ধন্যবাদ জ্ঞাপন করলেন।’’  ৬৭

➥〈 ইমাম মুসলিম, আস-সহীহ, ৪/২১২০ পৃঃ , হা/২৭৬৯ 〉


❏ এর প্রেক্ষাপটে ইমাম নববী (رحمة الله) মুসলিম শরীফের ব্যাখ্যা গ্রন্থে উলে­খ করেন-


فِيهِ اسْتِحْبَابُ مُصَافَحَةِ الْقَادِمِ وَالْقِيَامِ لَهُ إِكْرَامًا وَالْهَرْوَلَةِ إِلَى لِقَائِهِ


-‘‘এর দ্বারা প্রমাণিত হলো যে আগমনকারীর সাথে মুসাফা করা, এর সম্মানে দাঁড়িয়ে যাওয়া এবং দৌড়ে এর কাছে আসা মুস্তাহাব।’’  ৬৮

➥〈 ইমাম নববী, শরহে মুসলিম, ১৭/৯৬ পৃঃ  〉


তৃতীয়তঃ যখন নিজের কোন প্রিয়জন আসে, তখন এর আগমনের আনন্দে দাঁড়িয়ে যাওয়া, হাত-পা ইত্যাদি চুমু দেয়া সুন্নাত। 


❏ মিশকাত শরীফের কিতাবুল আদব মুসাফা শীর্ষক অধ্যায়ে বর্ণিত আছে যে হযরত যায়েদ ইবনে হারেছা (رضي الله عنه) মুস্তফা আলাইহিস সালামের পবিত্র দরজার সামনে আসলেন এবং দরজার কড়া নাড়লেন-


فقامَ إِلَيْهِ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عُرْيَانًا يَجُرُّ ثَوْبَهُ وَاللَّهِ مَا رَأَيْتُهُ عُرْيَانًا قَبْلَهُ وَلَا بَعْدَهُ فَاعْتَنَقَهُ وَقَبَّلَهُ. رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ


-‘‘হুযুর আলাইহিস সালাম চাদর বিহীন অবস্থায় তাঁর প্রতি দাঁড়িয়ে গেলেন। অতঃপর কোলাকুলি করলেন এবং চুমু খেলেন।’’  ৬৯

➥〈 ইমাম তিরমিযি, আস-সুনান, ৫/৭৬ পৃঃ  হা/২৭৩২, ইমাম তিরমিযি এ হাদিসটিকে ‘হাসান’ বলেছেন, খতিব তিবরিযি, মিশকাত, ৩/১৩২৭ পৃঃ  কিতাবুল আদাব, হা/৪৬৮২, এ হাদিসটিকে আহলে হাদিস আলবানী মিশকাতের তাহকীকে যঈফ বলেছেন; আর আমি অধম তার এ ভুয়া তাহকীকের জবাব আমার লিখিত ‘প্রমাণিত হাদিসকে জাল বানানোর স্বরূপ উন্মোচন’ তৃতীয় খন্ডখন্ড এ দিয়েছি। 〉


❏ একই অধ্যায়ে আরও বর্ণিত আছে যে যখনই হযরত খাতুনে জান্নাত ফাতিমা যুহুরা (رضي الله عنه) হুযুর আলাইহিস সালামের সমীপে হাযির হতেন- 


قَامَ إِلَيْهَا فَأَخَذَ بِيَدِهَا فَقَبَّلَهَا وَأَجْلَسَهَا فِي مَجْلِسِهِ


-‘‘তখন তার জন্য দাঁড়িয়ে যেতেন, হাত ধরে চুমু খেতেন এবং নিজের জায়গায় তাঁকে বসতে দিতেন। অনুরূপ হুযুর আলাইহিস সালাম যখন হযরত ফাতিমা যুহরা (رضي الله عنه) এর কাছে তশরীফ নিয়ে যেতেন, তণন তিনি (ফাতিমা) ও দাঁড়িয়ে যেতেন, দন্ত মুবারকে চুমু খেতেন এবং স্বীয় জায়গায় হুযুর আলাইহিস সালামকে বসাতেন।’’  ৭০

➥〈 ইমাম আবু দাউদ, আস-সুনান, ৪/৩৫৫ পৃঃ  হা/৫২১৭, খতিব তিবরিযি, মিশকাত, ৩/১৩২৯ পৃঃ  হা/৪৬৮৯ 〉


❏ মিশকাতের ব্যাখ্যা গ্রন্থ মিরকাতে المشئ بالجنازة অধ্যায়ের দ্বিতীয় পরিচ্ছেদে আছে- 


وَفِيهِ إِيمَاءٌ إِلَى نَدْبِ الْقِيَامِ لِتَعْظِيمِ الْفُضَلَاءِ وَالْكُبَرَاءِ


-‘‘জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তিদের সম্মানে দাঁড়ানো জায়েয।’’  ৭১

➥〈 ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী, মেরকাত, ৩/১২০৭ পৃঃ  হা/১৬৭২ 〉


চতুর্থতঃ যখন কোন প্রিয়জনের কথা শুনে বা অন্য কোন শুভ সংবাদ পায়, তখন সে সময় দাঁড়িয়ে যাওয়া মুস্তাহাব এবং সাহাবা ও পূর্ববর্তীগণের সুন্নাত। 


❏ মিশকাত শরীফের কিতাবুল ঈমানের তৃতীয় পরিচ্ছেদে হযরত উছমান (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত আছে, আমাকে হযরত সিদ্দীক আকবর (رضي الله عنه) যখন একটি শুভ সংবাদ শোনালেন-


فَقُمْت إِلَيْهِ فَقلت لَهُ بِأَبِي أَنْتَ وَأُمِّي أَنْتَ أَحَقُّ بِهَا


-‘‘তখন আমি দাঁড়িয়ে গেলাম এবং বললাম আপনার প্রতি আমার মা-বাপ কুরবান, আপনিই এর উপযোগী।’’  ৭২

➥〈 ইমাম খতিব তিবরিযি, মিশকাত, ১/১৯ পৃঃ  হা/৪১, ইমাম আহমাদ, আল-মুসনাদ, ১/২০১ পৃঃ  হা/২০ 〉


❏ তাফসীরে রুহুল বয়ানের ২২ পারায় সূরা ফাতহ এর ২৯ নং আয়াত مُحَمَّدٌ رَسُولُ اللهِ এর ব্যাখ্যা প্রসংগে উলে­খিত আছে যে, ইমাম তাকিউদ্দন সুবকী (رحمة الله) এর দরবারে উলামায়ে কিরামের একটি দল উপস্থিত ছিলেন একজন না’ত আবৃত্তিকারী দুটি রা’ত পাঠ করলেন- 


فَعِنْدَ ذَلِكَ قَامَ الاِمَامُ السُّبْكِىْ وَجَمِيْعَ مَنْ بِالمَجْلِس فحصل انس عظيم بِذَلِكَ المَجْلِسْ.


-‘‘তখন সাথে সাথে ইমাম সুবকী ও মজলিসে আগত সবাই দাঁড়িয়ে গেলেন এবং তাতে বেশ আনন্দ পাওয়া গেল।’’ ৭৩

➥{ইমাম ইসমাঈল হাক্কী, তাফসিরে রুহুল বায়ান, ৯/৫৬ পৃঃ }


পঞ্চমত: কোন কাফির যিনি স্বীয় সম্প্রদায়ের নেতা, যদি ইসলাম ধর্ম গ্রহণের প্রতি আগ্রহান্বিত হন, তাহলে তাঁর আগমনে তাঁর সম্মানার্থে দাঁড়ানো সুন্নাত। যেমন হযরত উমর (رضي الله عنه) যখন ইসলাম গ্রহণ করার জন্য হুযুরের 

(ﷺ) খিদমতে হাযির হলেন. তখন হুযুর আলাইহিস সালাম তাঁকে নিজের পবিত্র বুকের সাথে লাগালেন (ইতিহাস গ্রন্থ দ্রষ্টব্য)। 


❏ ফত্ওয়ায়ে আলমগীরীর কিতাবুল কারাহিয়া শীর্ষক  আহলুল জিম্মাহ অধ্যায়ে উলে­খিত আছে-


إذَا دَخَلَ ذِمِّيٌّ عَلَى مُسْلِمٍ فَقَامَ لَهُ إنْ قَامَ طَمَعًا فِي إسْلَامِهِ فَلَا بَأْسَ


-‘‘কোন যিম্মি কাফির মুসলমানের কাছে আসলো, মুসলমান তার ইসলাম গ্রহণের আশায় তার সম্মানে দাঁড়িয়ে গেলেন, এটা জায়েয।’’  ৭৪

➥{নিযামুদ্দীন বলখী, ফাতওয়ায়ে আলমগীরী, ৫/৩৪৮ পৃঃ}



(৫) কয়েক জায়গায় দাঁড়ানো মাকরূহ।


প্রথমতঃ যমযম ও ওযুর পানি ব্যতীত অন্যান্য পানি পান করার সময় বিনা কারণে দাঁড়ানো মাকরূহ। 


দ্বিতীয়তঃ পার্থিব লালসায় বিনা কারণে দুনিয়াবী লোকের সম্মানে দাঁড়ানো মাকরূহ।


তৃতীয়ত: ধনদৌলতের কারণে কাফিরের সম্মানার্থে দাঁড়ানো মাকরূহ।


❏ ফাতওয়ায়ে আলমগীরীর কিতাবুল কারাহিয়া শীর্ষক আহলে জিম্মাহ অধ্যায়ে বর্ণিত আছে- 


وَإِنْ قَامَ تَعْظِيمًا لَهُ مِنْ غَيْرِ أَنْ يَنْوِيَ شَيْئًا مِمَّا ذَكَرْنَا أَوْ قَامَ طَمَعًا لِغِنَاهُ كُرِهَ لَهُ ذَلِكَ كَذَا فِي الذَّخِيرَةِ.


-‘‘যদি কারো জন্য উলে­খিত অবস্থাদি ব্যতীত দাঁড়ানো হয় বা সম্পদের লালসায় দাঁড়ানো হয়, তাহলে তা মাকরূহ হবে। এমনটি জাখিরাহ গ্রন্থে রয়েছে।’’  ৭৫

➥{নিযামুদ্দীন বলখী, ফাতওয়ায়ে আলমগীরী, ৫/৩৪৮ পৃঃ }


চতুর্থত: যে ব্যক্তি নিজের তাযীমের জন্য লালায়ীত, তার সম্মানার্থে দাঁড়ানো নিষেধ।


পঞ্চমত: যদি কোন বড় লোক মাঝখানে বসা অবস্থায় আছে এবং তার চারদিকে বিনীতভাবে মানুষ দাঁড়িয়ে রইল। এ ধরনের দাঁড়ানো কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। নিজের জন্য কারো দাঁড়িয়ে থাকা পছন্দ করাটা নিষেধ। দ্বিতীয় অধ্যায়ে এর প্রমান দেয়া হবে ইনশা-আল্লাহ। এ প্রকারেেভদটা যেন স্বরণ থাকে। 


উপরোক্ত বিশ্লেষণ থেকে এটা নিঃসন্দেহে জানা গেল যে মীলাদ শরীপে পবিত্র বেলাদতের আলাচনা করার সময় কিয়াম করাটা সাহাবায়ে কিরাম ও পূর্ববর্তী নেককার বান্দাদের থেকে প্রমাণিত। আমি সুন্নাত কিয়ামের বর্ণনায় চতুর্থ পর্যায়ে সে ধরনের কিয়ামের কথা উলে­খ করেছি, যা কোন খুশির সংবাদ পেয়ে বা কোন প্রিয়জনের আলোচনার সময় করা হয় এবং প্রথম পর্যায়ে ওই ধরনের কিয়ামের কথা উলে­খ করেছি, যা ধর্মীয় মর্যাদাশীল কোন জিনিসের সম্মানে করা হয়। সুতরাং মীলাদ শরীফে কিয়াম কয়েক কারণে সুন্নাত। 


প্রথমতঃ এটা পবিত্র বেলাদতের আলোচনার সম্মানে করা হয়। 

দ্বিতীয়তঃ এ জন্য যে, মুসলমানের জন্য যিকরে বেলাদতের চেয়ে বড় খুশির বিষয় আর কি হতে পারে আর খুশির সংবাদে দাঁড়ানো সুন্নাত। 

তৃতীয়তঃ মুসলমানের কাছে নবী করীম 

(ﷺ) থেকে বেশী প্রিয় আর কে আছে? মা-বাপ, ধন-সম্পদ ইত্যাদি সব কিছু থেকে বেশি প্রিয়ভাজন হচ্ছেন হুযুর আলাইহিস সালাম। তাঁর যিকরের সময় দাঁড়ানো পূর্বসূরী নেকবান্দাদের সুন্নাত। 

চতুর্থতঃ পবিত্র বেলাদতের সময় ফিরিশতাগণ দুয়ারে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এজন্য পবিত্র বেলাদতের আলোচনার সময় দাঁড়ানো ফিরিশতাদের কাজের সাথে মিল রয়েছে। 

পঞ্চমতঃ আমি মীলাদ শরীফের আলোচনায় হাদীছ দ্বারা প্রমাণ করেছি যে, হুযুর আলাইহিস সালাম স্বীয় গুণাবলী ও বংশ পরিচয় মিম্বরে দাঁড়িয়ে বর্ণনা করেছেন। এতে কিয়ামের মূল বৈশিষ্ট পাওয়া যায়। 

ষষ্টতঃ শরীয়ত একে নিষেধ করেনি এবং প্রত্যেক দেশে সাধারণ মুসলমানগণ একে ছওয়াবের কাজ মনে করে পালন করে। যে কাজটা মুসলমানগণ ভাল কমনে করে, সে কাজ আল্লাহর কাছেও ভাল বলে গণ্য। আমি এর বিশ্লষণ মীলাদ ও বিদআতের আলোচনায় করেছি। অধিকন্তু প্রথমেই আরয করেছি যে. মুসলমান যে কাজটাকে মুস্তাহাব হিসেবে জানে, শরীয়তেও তা মুস্তাহাব হিসেবে গণ্য। 


❏ ফত্ওয়ায়ে শামীর তৃতীয় খন্ড কিতাবুল ওয়াকফের وقف منقولات শীর্ষক আলোচনায় বর্ণিত আছে-


لِأَنَّ التَّعَامُلَ يُتْرَكُ بِهِ الْقِيَاسُ لِحَدِيثِ مَا رَآهُ الْمُسْلِمُونَ حَسَنًا فَهُوَ عِنْدَ اللَّهِ حَسَنٌ


-‘‘ডেক্সি, জানাযার খাঁটিয়া ইত্যাদির ওয়াকফ ধারণামত নাজায়েয হওয়ার কথা। কিন্তু যেহেতু সাধারণ মুসলমানগণ এর অনুসারী, সেহেতু কিয়াসকে বাদ দেয়া হয়েছে এবং ওটাকে জায়েয বলে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে।’’  ৭৬

➥{ইমাম ইবনে আবেদীন শামী, ফাতওয়ায়ে শামী, ৪/৩৬৪ পৃঃ}


দেখুন, সাধারণ মুসলমানগণ যে কাজটাকে ভাল মনে করে এবং এর হারাম হওয়া সম্পর্কে সুষ্পষ্ট দলীল না থাকে, তখন কিয়াসকে বাদ দেয়া প্রয়োজন। 


❏ দুররুল মুখতারের পঞ্চম খন্ড কিতাবুল ইাজারাতের اجارة الفاسده অধ্যায়ে উলে­খিত আছে-


(وَجَازَ إجَارَةُ الْحَمَّامِ) لِأَنَّهُ - عَلَيْهِ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ - دَخَلَ حَمَّامَ الْجُحْفَةِ وَلِلْعُرْفِ. وَقَالَ - عَلَيْهِ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ - مَا رَآهُ الْمُسْلِمُونَ حَسَنًا فَهُوَ عِنْدَ اللَّهِ حَسَنٌ


- স্নানাগার ভাড়া দেয়া জায়েয, কেননা হুযুর আলাইহিস সালাম হাজফা শহরের স্নানাগার তশরীফ নিয়ে গিয়েছিলেন এবং এজন্য এটা প্রচলন হয়ে গেছে। হুযুর আলাইহিস সালাম ফরমা, যেটা মুসলমানগণ যে ভাল মনে করে, সেটা আল্লাহর কাছেও ভাল।  ৭৭

➥{ইমাম ইবনে আবেদীন শামী, ফাতওয়ায়ে শামী, ৬/৫১-৫২ পৃঃ }


এর প্রেক্ষাপট ফত্ওয়ায়ে শামীতে উলে­খিত আছে যে, হুযুর আলাইহিস সালামের হাজফা শহরের স্নানাগারে প্রবেশ করার বর্ণনাটি খুবই দুর্বল। কেউ কেউ একে মওজু বা বানাওট হাদীছ বলেছেন। সুতরাং স্নানাগার জায়েয হওয়ার একটি মাত্র দলীল অবশিষ্ট রইল অর্থাৎ সাধারণভাবে প্রচলনটাতো প্রমাণিত হলো। মুসলমানগণ যে কাজটা সাধারণভাবে বৈধ মনে করে, তা জায়েয। 


❏ একই জায়গায় শামীতে আরও উলে­খ আছে-


لِأَنَّ النَّاسَ فِي سَائِرِ الْأَمْصَارِ يَدْفَعُونَ أُجْرَةَ الْحَمَّامِ وَإِنْ لَمْ يُعْلَمْ مِقْدَارُ مَا يَسْتَعْمِلُ مِنْ الْمَاءِ وَلَا مِقْدَارُ الْقُعُودِ، فَدَلَّ إجْمَاعُهُمْ عَلَى جَوَازِ ذَلِكَ وَإِنْ كَانَ الْقِيَاسُ يَأْبَاهُ


-কেননা সব শহরগুলোতে মুসলমানগণ স্নানাগারের ফি দিয়ে থাকেন। সুতরাং তাদের ঐক্যমতের কারণে জায়েয হওয়াটা বোঝা গেল, যদিওবা এটা কিয়াসের বিপরীত। কিয়াস অনুসারে স্নানাগারের ফি নাজায়েয হওয়াটাই বাঞ্চনীয়। কেননা কতটুকু পানি ব্যবহার হবে তা জানা যায় না। অথচ ভাড়ার ব্যাপারে লাভ ক্ষতি সম্পর্কে জানাটা প্রয়োজন।  ৭৮

➥{ইমাম ইবনে আবেদীন শামী, ফাতওয়ায়ে শামী, ৬/৫২ পৃঃ }


কিন্তু যেহেতু মুসলমানগণ সাধারণভাবে একে জায়েয মনে করে, সেহেতু এটা জায়েয। মীলাদ শরীফে কিয়াম করাটা সর্বসাধারণ মুসলমানগণ মুস্তাহাব মনে করে। সুতরাং, এটা মুস্তাহাব।


সপ্তমতঃ এ জন্য যে, আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ ফরমান-


وَتُعَزِّرُوهُ وَتُوَقِّرُوهُ


-‘‘হে মুসলমানগণ, আমার নবীকে সাহায্য কর ও তাঁকে সম্মান কর।’’  ৭৯

➥{ সূরা ফাতহ, আয়াত নং-৯}


তাযীমের বেলায় কোন বাঁধা ধরা নিয়ম নেই, বরং যে যুগে বা যে জায়গায় তাযীমের যে রীতি প্রচলিত, সেভাবে তাযীম করুন, যদি শরীয়ত একে হারাম না করে থাকে। যেমন তাযীমী সিজ্দা ও রুকু করা হারাম। আমাদের যুগে রাজকীয় হুকুমাদিও দাঁড়িয়ে পাঠ করা হয়। সুতরাং হুযুর আলাইহিস সালামের যিকরও দাঁড়িয়ে করা চাই। দেখুন- كُلُوا وَاشْرَبُوا -‘‘খারা ও পান করুন।’’  ৮০

➥{সূূরা বাক্বারা, আয়াত নং-৬০}


বাখ্যে শর্তহীনভাবে খারা পিনার অনুমতি রয়েছে অর্থাৎ প্রত্যেক হালাল আহার্য গ্রহণ করুন। তাই বিরানী, জরদা কোরমা ইত্যাদি সবই কুরূনে ছালাছায় থাকুক বা না থাকুক হালাল। এ রকম  শব্দেও শর্তহীন নির্দেশ রয়েছে যে প্রত্যেক প্রকারের বৈধ তাযীম করুন কুরূনে ছালাছা থেকে এটা প্রমাণিত হোক বা না হোক। 


অষ্টমতঃ আল্লাহ তা’আলা উরশাদ ফরমান-


وَمَنْ يُعَظِّمْ شَعَائِرَ اللَّهِ فَإِنَّهَا مِنْ تَقْوَى الْقُلُوبِ


অর্থাৎ যে ব্যক্তি আল্লাহর নিশানা সমূহের সম্মান করে, তা হবে আত্মার সংযমশীলতার বহিঃপ্রকাশ।  ৮১

➥{সূরা আল-হাজ্জ, আয়াত নং-৩২}


❏ তাফসীরে রুহুল বয়ানে আয়াত ৮২


وَتَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَى وَلَا تَعَاوَنُوا عَلَى الْإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ


➥{সূরা মায়েদা, আয়াত নং-২}


এর ব্যাখ্যায় লিখা হয়েছে যে, যে জিনিসটা ধর্মীয় মর্যাদা লাভ করেছে, তা আল্লাহর নিশানা সমূহের অর্ন্তভুক্ত, সে সবের সম্মান করা প্রয়োজন। যেমন, কোন বিশেষ মাস, কোন বিশেষ দিন বা স্থান, কোন বিশেষ সময় ইত্যাদি। এ জন্যই সাফা-মারওয়া, কাবা মুয়াজ্জমা, মাহে রমযান, শবে কদরের তাযীম করা হয়। যিকরে বিলাদতও আল্লাহর নিশানাসমূহের অর্ন্তভুক্ত। অতএব এর তাযীমও করণীয়, যা কিয়অমের মাধ্যমে আদায় হয়। 


আমি আটটি দলিলের সাহায্যে কিয়াম মুস্তাহাব হওয়াটা প্রমাণ করলাম। কিন্তু বিরোধিতাকারীদের কাছে খোদার রহমতে হারাম প্রমাণ করার একটি দলীলও নেই। কেবল স্বীয় মনগড়া অভিমত দ্বারাই হারাম বলেন।

Top