ইলম বা জ্ঞানের কয়েকটি শ্রেণী বিভাগঃ
(টিকা ১) করা যায়। তন্মধ্যে একটি এর মাছদার তথা উৎপত্তি সূত্রের ভিত্তিতে দ্বিতীয় পদগত সম্পর্কের ‘লাম’ বর্ণের উপর জবর সহকারে এ থেকে আরাে একটি প্রকারও বের হয় যে, এর সম্পর্ক কিভাবে হয়েছে।
এ প্রথম প্রকার হলােঃ হয়তাে সত্তাগত (টিকা ২) হবে, যখন তা মূল জ্ঞানী সত্তা থেকে প্রকাশ পায় এবং তাতে না কারাে অংশ থাকবে, না তা কারাে প্রদত্ত হবে, কোন কার্যকারণগত হবে।
টিকা ১:
(১) এ প্রকারে গ্রন্থকারের প্রশংসাবলী আল্লাহর জন্য। তা অত্যন্ত সুস্পষ্ট ও খুব জ্ঞাতকারী বর্ণনায় পরিবেষ্টনকারী। যদ্বারা কোন গুবারের (ধুলােয় আচ্ছন্ন ব্যক্তি) আল্লাহর জ্ঞান ও বান্দার জ্ঞানে কলহ (মতভেদ) সৃষ্টি করার পথ অবশিষ্ট রইলােনা। আল্লাহর সাথে সমানত্বের মুখতা সুলভ বাক্যের ভিত্তিতে যে সন্দেহের সৃষ্টি হতাে তা সম্পূর্ণরূপে দুরিভূত করে দিয়েছেন। চমৎকার জৌতির্ময় বাক্য, আর কি সুন্দর সুক্ষদশী যুক্তি ও প্রমাণ। সত্যিই তাই, সত্যিই যদি এমন না হয়, তাহলে কোন কিছুই নয়। হামদান ওনাঈসী মালেকী (মুদাবৃরিস হারামে নববী শরীফ) এটা লিখেছেন। আল্লাহ তায়ালা তাঁর মাগফিরাত করুন, আমীন।
এ টীকা ঐ টীকাসমূহের মধ্যে সর্বপ্রথম যদ্বারা আমার কিতাবকে আল্লামা হামদান (আল্লাহ তায়ালা তাঁকে উত্তম প্রতিদান প্রদান করুন) মর্যাদাবান করেছেন। আর সকল প্রশংসা আল্লাহ তায়ালার জন্য, যিনি সমগ্র জাহানের প্রতিপালক।
টিকা ২:
(২) এ শ্রেণীবিন্যাস উজ্জ্বল ও সুস্পষ্ট। সম্মানিত ওলামা কিরাম বিভিন্ন স্থানে তা বর্ণনা করেছেন এবং স্বয়ং আমাদের এ অদৃশ্য জ্ঞানের মাসয়ালায় তা ব্যক্ত করেছেন। সত্বর এ সম্পর্কিত বর্ণনা শীর্ষস্থানীয় ইমাম আবু জাকারিয়া নবভী ও ইমাম ইবনে হাজর মককীর (رحمة الله) ব্যাখ্যা সহকারে উদ্ধৃত হবে যে, মাখলুক থেকে সত্ত্বাগত জ্ঞান ও সম্পূর্ণ পরিবেষ্টিত জ্ঞান নঞর্থক (অস্বীকারবােধক)। কিন্তু বিস্ময় তাদের থেকে যারা এ বিন্যাসগুলাের বিশুদ্ধতায় বিশ্বাস রাখে আবার তারাই এ গুঞ্জন করে যে, যদিও তা মূলতঃ বিশুদ্ধ কিন্তু দার্শনিকদের ঐসব সুক্ষ্ম বক্তব্য ও চিন্তার ফসল যা মহামান্য ওলামা কেরাম, বুদ্ধিজীবি ও সুস্থ বিবেক সম্পন্ন লােকেরা,
কুরআনে করীম ও রাসুলে করীম (ﷺ)-এর হাদীসের মর্মার্থের ব্যাপারে গ্রহণ করেন না। এটাও দাবী করে বসেছে যে, এটা মুসলমানদের মহান ফিতনায় নিমজ্জিত করা ও আল্লাহর দ্বীনের, শক্ত রঞ্জুকে বন্ধনমুক্ত , করে ছিন্ন ছিন্ন করে ফেলা ছাড়া আর কিছু নয়।
অতঃপর সামান্যতমই বিলম্বে স্বয়ং উক্ত বর্ণনা আল্লামা নবভী ও ইবনে হাজার প্রমুখ ইমামদ্বয়ের দিকে সম্পর্কিত করেছে। অথচ তাঁরা অস্বীকৃতি জ্ঞাপক আয়াতে জ্ঞানকে সত্ত্বাগতভাবে চিরস্থায়ী জ্ঞান এবং পরিপূর্ণরূপে পরিবেষ্টনকারী জ্ঞানের উপর প্রয়ােগ করেছেন। তাদের মতে, অবশ্যই এ ইমামদ্বয় না ওলামায়ে দ্বীনের অন্তর্ভূক্ত, না সুস্থ বিবেক সম্পন্ন, বরঞ্চ মুসলমানদের আশ্চর্যজনক ফিতনায় নিমজ্জিতকারী! আল্লাহর পানাহ!। যদি তারা দ্বীনের শক্ত রঞ্জুকে খুলে চুরমার করে দিয়েছেন (ইমামদ্বয়) এমন হন (আল্লাহ উভয়কে তা থেকে হিফাজতে রাখুন তাহলে কেন তারা তাঁদের থেকে সনদ গ্রহণ করেছেন তাঁদের ইমাম বানিয়েছেন এবং তাঁদের বাণী সনদ হিসেবে পেশ করেছেন! লা হাওলা ওয়ালা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ।
(টিকা শেষ)________________
দ্বিতীয় প্রকার প্রদত্ত, যা কারাে প্রদানের (টিকা ১) ভিত্তিতে হয়ে থাকে।
প্রথম প্রকার (সত্তাগত গায়ব) আল্লাহ তায়ালার জন্য খাস (নির্দিষ্ট), অন্যের জন্য তা অসম্ভব। যে কেউ এ প্রকারের গায়ব কারাে জন্য সাব্যস্ত করে তা যত অল্প পরিমানই হােক না কেন, সে অকাট্যভাবে মুশরিক হয়েছে এবং নিঃসন্দেহে ধ্বংস হয়েছে।
দ্বিতীয় প্রকার তাঁর বান্দাদের জন্য নির্দিষ্ট; যা আল্লাহর জন্য অসম্ভব। এ ধরনের জ্ঞান যদি কেউ আল্লাহর জন্য সাব্যস্ত করে, সে কাফির। কেননা, সে আল্লাহর জন্য এমন বস্তু সাব্যস্ত করেছে, যা শিরকে আকবর’ থেকেও জঘণ্য ও নিন্দনীয়। কেননা, মুশরিকতাে সে ব্যক্তিই যে আল্লাহর সাথে অন্যকে খােদার সমতুল্য জানে। অধিকন্তু সে (খােদা ব্যতীত) অন্যকে খােদার চেয়ে নিকৃষ্ট জ্ঞান করেছে যে, সে নিজের জ্ঞান ও শ্রেষ্ঠত্বের ফয়েজ আল্লাহর প্রতি পৌছিয়ে দিয়েছে।
__________________
(টিকা ১) জেনে রাখুন! যে বস্তু অপরের কারণে হয়, তা অবশ্যই অপরের দানের অন্তর্ভুক্ত হবে। কেননা, অপরের কারণ শুধুমাত্র মাখলুকের জ্ঞানেরই অন্তর্ভূক্ত। আর তা সবই আল্লাহর প্রদানের মাধ্যমেই হয়। যেমন শিক্ষক ছাত্রের জ্ঞানের কারণ হয়, কিন্তু দাতা হলেন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা। কেননা, সে চিন্তা করেনি যে, যা অপরের কারণে হয়, তা অপরের প্রদত্ত হয় না, যতক্ষণ না উভয়ের মধ্যকার মাধ্যম হয়। অতএব, তা প্রমাণিত হলাে।
দ্বিতীয় প্রকার জ্ঞান দু'প্রকারঃ
এক. মুতলাকুল ইলম বা ইলমের শর্তহীনতা।
এটা বলতে আমি ঐ শর্তহীন (জ্ঞান) বুঝিয়েছি যা উসুল শাস্ত্রের পরিভাষায় বিদ্যমান। এমন জ্ঞান প্রমাণ করার জন্য কোন একটি একক হওয়াই আবশ্যক। আর অস্বীকার করা প্রত্যেক একককেই অস্বীকার করা বুঝায়। আর এ মুতলাক’। হয় অনির্দিষ্ট একক, নতুবা প্রকৃত সত্ত্বা, যা কোন এককে পাওয়া যায়। যেমন এর বিশ্লেষণ আমার শ্রদ্ধেয় পিতা তাঁর রচিত ‘উলুমুর রাশাদ লিকময়ে মবানিয়িল ফাসাদ’ নামক গ্রন্থে বিশ্লেষণ করেছেন। সুতরাং এখানে বিষয়টির ইতিবাচকীয়তা হচ্ছে অংশতঃ। কারণ বিষয়টি সামগ্রিকতার ক্ষেত্রে ব্যাপক।
অপরদিকে, নেতিবাচকীয়তা হচ্ছে সামগ্রিক দুই ইলমে মুতলাক্ব (শর্তহীন ইলম) তা দ্বারা আমার উদ্দেশ্য হলাে ঐ জ্ঞান, যা সকল মৌলিক জ্ঞানকে শামিল করে নেয়। তা ততক্ষণ প্রমাণিত হয় না, যতক্ষণ না সকল একক (আফরাদ) বিদ্যমান হয় এবং যা কোন একটি এককের নিষেধের দ্বারা দূরিভূত হয়ে যায়। সুতরাং ইতিবাচক এখানে সামগ্রিক এবং নেতিবাচক অংশতঃ হবে।
আর এ জ্ঞানের সম্পর্ক দু’কারণের ভিত্তিতে হয়।
এক. এজমালী (সামগ্রিক),
দুই. তাফসীলী বা.বিস্তারিত, যাতে প্রত্যেক জ্ঞান পৃথক ও প্রত্যেক বােধগম্য বস্তু অন্যবস্তু থেকে আলাদা হবে।
অর্থাৎ জ্ঞানীর কাছে যত প্রকার জ্ঞান আছে, তা হয়ত সম্পূর্ণ কিংবা আংশিক। দ্বিতীয় প্রকারের ভিত্তিতে তা চার প্রকার হবে। তন্মধ্যে প্রথমটি আল্লাহ তায়ালার জন্য খাস, যা হলাে শর্তহীন বিস্তারিত জ্ঞান। এ আয়াতই এর প্রমাণ বহন করে-(আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেক বস্তু সম্পর্কে জ্ঞাত)। কেননা, আমাদের মহান প্রতিপালক তাঁর পবিত্রতম জাত (সত্ত্বা), অসীম গুণাবলী, সব ঘটনাবলী যা সংঘটিত হয়েছে ও কিয়ামত পর্যন্ত যা সংগঠিত হতে থাকবে এবং সকল সম্ভাব্য বস্তু যা না কখনাে অস্তিত্ব লাভ করেছে না অস্তিত্ব লাভ করবে বরং সকল অসম্ভাব্যতা সম্পর্কেও জ্ঞাত আছেন। সুতরাং, সকল জ্ঞান থেকে কোন জ্ঞান আল্লাহর নিকট লুকায়িত ও তার বহির্ভূত নয়। তিনি সবকিছুর জ্ঞান বিস্তারিতভাবে জানেন-আদি থেকে অনন্তকাল পর্যন্ত।
আর আল্লাহ তায়ালার পবিত্র সত্ত্বা এবং গুণাবলীও অসীম (গায়রে মুতান্নাহিয়া) * তন্মধ্যে এক একটি গুণ এবং সংখ্যার পরম্পরাসমূহও (টিকা ১) অসীম-অশেষ। আর 'অনুরূপ অনন্তকাল দিবস (টিকা ২) ও এর সময়-মুহুর্ত এবং জান্নাতের নিমাতসমূহ, জাহান্নামের প্রতিটি শাস্তি, জান্নাত ও জাহান্নামবাসীদের শ্বাস-প্রশ্বাস, চোখের পলক, নড়াচড়া (টিকা ৩) সহ অন্যান্য সব বস্তু এমন, যার শেষ নাই অসীম-অশেষ।
এ সব কিছুর পূর্বাপর সকল জ্ঞান বিস্তারিতভাবে তিনি ‘আজল ও আবদে’ জ্ঞাত আছেন। সুতরাং আল্লাহর জ্ঞানে সীমাহীনতার পরম্পরাসমূহ বারংবারই সীমাহীন ও অসীম।
বরং (টিকা ৪) আল্লাহ তায়ালার জন্য প্রতিটি ক্ষুদ্র থেকেও ক্ষুদ্রতর বস্তু ও অনু পরমানুতে অসীম' ও স্থায়ী জ্ঞান বিদ্যমান। এ কারণে যে, প্রত্যেক অতিক্ষুদ্র থেকেও ক্ষুদ্রতর যা সংঘটিত হয়েছে বা ভবিষ্যতে হবে বা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে অথবা যা কোন নিকটবর্তী, দূরবর্তী ও পার্শ্ববর্তীতে হবে এবং যা কালের পরিবর্তনে পরির্তিত হবে এবং এসব কিছু আল্লাহ তায়ালা সক্রিয়ভাবে জ্ঞাত আছেন। বুঝা গেলাে, আল্লাহ তায়ালার জ্ঞান অসীম থেকেও অসীমতর এবং অসীমতম। গণিত শাস্ত্রবিদদের পরিভাষায় তা অসীমিত্বের তৃতীয় পর্যায় তথা ঘনশক্তি যাকে মাকআব’ বলা হয়। সংখ্যাকে যখন তার মূলের সাথে গুণ করা হয়, তখন তা বর্গসংখ্যা হয়, আর যদি বর্গসংখ্যা, সে একই সংখ্যায় গুণ। করা হয়, তাহলে তা (মাকআব) বা ঘনসংখ্যা হয়। এসব সুস্পষ্ট বক্তব্য সে ব্যক্তিরই জন্য, ইসলামের সাথে যার সম্পর্ক রয়েছে এবং সুস্পষ্ট অংশ রয়েছে। স্মর্তব্য যে, কোন সৃষ্টি একই মুহুর্তে, একই সময়ে অসীমকে সক্রিয়ভাবে কোন ক্ষেত্রে কোন দিক থেকে পরিপূর্ণ স্বাতন্ত্রভাবে পরিবেষ্ট করতে পারে না। এ কারণে যে, স্বাতন্ত্র যখন হবে, তখন প্রত্যেক এককের পক্ষে এর বৈশিষ্টের প্রতি লক্ষ্য রাখতে হয়, আর অসীমের প্রতি লক্ষ্য রাখা এক মুহূর্তের জন্যও সম্ভব নয়। সুতরাং সৃষ্টির জ্ঞান যতই বেশী হউক এমনকি যদি আরশ (টিকা ৫) ও ফরশের মধ্যে প্রথম দিবস থেকে শেষ দিবস পর্যন্ত কোটি কোটি দৃষ্টান্তও যদি সব পরিবেষ্টিত হয়ে যায় তবুও (টিকা ৬) কার্যত সীমাবদ্ধই থাকবে।
কেননা, আরশ ও ফরশ দু'টি পরিবেষ্টিত সীমা। আর প্রথম দিবস থেকে শেষ দিবস পর্যন্ত এটারও দু'টি সীমা রয়েছে। আর যে বস্তু দু’টি সীমায় সীমাবদ্ধ হবে তা সসীম ব্যতীত হয় না। হাঁ, মাখলুকের জ্ঞান এ ভিত্তিতে অসীম হওয়া বিশুদ্ধ হতে পারে যে, ভবিষ্যতে কোন সীমার উপর যেন তা বাধাপ্রাপ্ত না হয় (সর্বাবস্থায় বৃদ্ধি পেতে থাকে)। আর এ অর্থের ভিত্তিতে আল্লাহর জ্ঞান অসীম হওয়া অসম্ভব। কেননা, তাঁর জ্ঞান ও গুণাবলী নতুন সৃষ্টি হওয়া থেকে পবিত্র ও অনেক উর্ধ্বে। সুতরাং প্রমাণিত হলাে, সক্রিয় অসীমতা আল্লাহ্ তায়ালার জ্ঞানের সাথেই খাস। আর ঐ অসীমিতুের বৃদ্ধি পাওয়া, কোন সময় বাধা প্রাপ্ত না হওয়া তাঁর বান্দাদের জ্ঞানের সাথেই নির্দিষ্ট। প্রথম প্রকারের জ্ঞান আল্লাহ তায়ালা ব্যতীত কারাে জন্য নয়।
_______________
(টিকা ১) আবদের’ (অনন্তকালীন) দিবসসমূহ ও তৎপরবর্তী বস্তু সম্পর্কে যখন আমাদের থেকে জিজ্ঞেস করা হলাে যে, আল্লাহ তায়ালা কি এর সংখ্যা সম্পর্কে জানেন? যদি না বলা হয়, তাহলে তা কতই না মন্দ অস্বীকৃতি! যদি হাঁ বলা হয়, তাহলে এ বস্তুসমূহ সসীম হওয়াই আবশ্যক হয়ে পড়বে। কেননা, স্থিরীকৃত সংখ্যা অসীম হয় না বরং সসীমই। তা দুটি সীমায় সীমাবদ্ধ। তার পূর্বে শুধুমাত্র একটি সংখ্যাই বৃদ্ধি করা যায় আর এভাবে তার পূর্বে এক পর্যন্ত আরাে বৃদ্ধি করা যায় সীমাবদ্ধতার মধ্যে সীমাবদ্ধ পর্যায়ে। সীমাবদ্ধতা এভাবেই বলা যায় যেমন ফতােয়ায়ে সিরাজিয়ায় উল্লেখ আছে- আল্লাহ তায়ালার জ্ঞান আছে, কিন্তু তাঁর জন্য কোন সংখ্যা নেই। আমি বলবাে, এটা আদবের প্রতি অনুসরণ যেমন আমি এ দিকে ইঙ্গিত করেছি। না হয় যার জন্য কোন সংখ্যা নেই তাঁর জন্য সংখ্যা নির্ধারণ করাও অজ্ঞতা। আর অজ্ঞতার অস্বীকৃতি আবশ্যক। সুতরাং যদি প্রথম মত গ্রহণ করা হয়, তাহলে তা আল্লাহর বাণীর অনুরূপই হবে- তারা বলে, এগুলাে হলাে আমাদের জন্য আল্লাহর সমীপে সাহায্যকারী, আপনি বলুন, তােমরা কি আল্লাহকে তা সম্পর্কে সংবাদ প্রদান করছে যে, তিনি জানেন না আসমান ও জমীনে যা কিছু রয়েছে? তারা যে শিরক করে তা থেকে আল্লাহ পবিত্র'।
(টিকা ২) বরং আমি বলবাে, এটা আল্লাহর অসীম থেকেও অসীমতর জ্ঞানের একটি। তাঁর অন্যান্য জ্ঞানের সমুদ্রেরতাে প্রশ্নই উঠেনা (তাতে গণনার বাইরে)। আর “সালাসিল” (পরম্পরাসমূহ) শব্দ বহুবচন বলার দ্বারা আমি এ দিকেই ইঙ্গিত করেছি। আর তা হলাে ১-২-৩ থেকে শেষ পর্যন্ত (সংখ্যা যতই নেয়া হােক তা) অসীম, আর বিজোড় সংখ্যা ১-৩-৫ থেকে শেষ পর্যন্ত নিলে তাও অসীম। আর জোড় সংখ্যা ২-৪-৬ থেকে শেষ পর্যন্ত তা অসীম। দ্রুপ ২-৫-৮-১১ শেষ পর্যন্ত নিলেও অসীম কিংবা ১ থেকে ৩টি করে বাদ দিয়ে ৫-৯-১৩শেষ পর্যন্ত অসীম অথবা ২ থেকে ৩টি করে সংখ্যা : বাদ দিয়ে ২-৬-১৯-১৪ নিলে তাও অসীম। অনুরূপ যত সংখ্যার পার্থক্যই হােক শেষ করা যাবেনা অনুরূপ প্রত্যেক সংখ্যা থেকে সেরূপ মিলিয়ে ১-২-৪-৮ শেষ পর্যন্ত গণতাতীত অথবা অনুরূপ ২টি সংখ্যা মিলিয়ে ১-৩-৯-২৭ শেষ পর্যন্তও অপরিসীম। আর এভাবে ৩ এর অনুরূপ সংখ্যা মিলিয়ে কিংবা ৪ থেকে শেষ পর্যন্ত তাও অসীম। আর যদি বিক্ষিপ্ত করে দেয়া হয় এবং কোন বিশেষ গঁৎ অনুসরণ করা না হয় তবুও অসীম থেকে অসীমতর। আর যদি পর্যায়ক্রমিকতা অনুসরন করা না হয় তখনও অসীম থেকে - অসীমতর। আর যদি বর্গসংখ্যা ১-৮-২৭-৬৪ শেষ পর্যন্ত নেয়া হয় তবুও অসীম। যদি ৩৬। (দ্রব্যসমূহ) ১-৪-৯-২৬ শেষ পর্যন্ত নেয়া হয়, তাহলে অসীম। আর (ঘনসমূহ) ১-৮-২৭-৬৪ শেষ পর্যন্ত নিলে তবুও অসীম। (দ্রব্যের দ্রব্য কিংবা(ঘন-এর দ্রব্য সমূহ) (ঘন-এর ঘন সমূহ) এর উপরের শক্তিসমূহের মধ্য থেকে অগণিত সংখ্যা পর্যন্ত নিলে সবই অসীম। আর যদি উল্লেখিত প্রত্যেক শক্তি উপরে আরােহনকারীর বিপরীত অবতীর্ণকারী শক্তিসমূহের পরম্পরা নিই যেমন ১২(বর্গমূল) কিংবা (ঘন এর অংশ) এবং (দ্রব্যের অংশ) তাও অসীম। আর ভগ্নাংশ যেমন (অর্ধেক), (এক তৃতীয়াংশ), (এক চতুর্থাংশ) পর্যন্ত অগণিত নিই, তাহলে সবই অসীম। আর এসবের পরম্পরা সবই অসীম থেকে অসীমতর এবং এ সব কিছুর জ্ঞান আল্লাহ তায়ালার জ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত। আর আজল’ থেকে ‘আবদ' পর্যন্ত সব কিছুর জ্ঞান পরিপূর্ণ বিস্তারিতভাবে তাঁর জ্ঞানে শামিল রয়েছে। আর এটা একটি মাত্র শ্রেণী বিন্যাস ঐ অসীম শ্রেণীসমূহ থেকে। সুতরাং পবিত্রতা ঐ সত্তার যাঁকে আকল ও বুদ্ধি দ্বারা পরিবেষ্টন করা যায় না। তিনি মহান ও পবিত্র বস্তু থেকে যে, তার সম্মানিত স্থান ও রাজদরবার পর্যন্ত যেখানে কাল্পনিক-স্বাপ্নিক ধারণা এবং কারাে অনুমান (সে পর্যন্ত) পৌছবে। সুতরাং তাঁর জন্যই সকল প্রশংসা। আর তাঁর নবীর উপর অগণিত দরূদ ও সালাম।
(টিকা ৩) দেখুন! ঐ বস্তুসমূহকে আমি অসীমই গণ্য করেছি। আর আমার বিশ্লেষণসমূহ হলাে মাখলুকের জ্ঞান অসীম কর্মসমূহকে সক্রীয়ভাবে পরিবেষ্টন করতে পারে না। আপনাদের নিকট ঐ প্রতারকের মিথ্যা উক্তি সুস্পষ্ট হয়ে যাবে, যে আমার উপর এ অপবাদ রটাতে চেয়েছিলাে যে, রাসুলে পাক(ﷺ)এর জ্ঞানের পরিবেষ্টন থেকে আল্লাহ তায়ালার জাত ও সিফাত ব্যতীত কোন বস্তু বাদ নেই। তাহলে সম্ভবতঃ সংখ্যা, দিন ও ঘন্টাসমূহ,, আয়াতসমূহ, জান্নাতের নি'মাত, দোযখের শাস্তি, শ্বাস-প্রশ্বাস, মুহূর্ত ও অঙ্গীভঙ্গিসমূহ সবকিছু তার মতে আল্লাহ তায়ালার জাত ও সিফাতের অন্তর্ভূক্ত। আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।
(টিকা ৪) আল্লাহ তায়ালার প্রশংসা। আমি এটা স্বীয় পক্ষ থেকে নিজ ঈমানী শক্তিবলে লিখে দিয়েছি। অতঃপর আমি তাফসীরে কবীরে' এর ব্যাখ্যা দেখেছি। তাতে এ আয়াতের ব্যাখ্যায় উল্লেখ আছে- ‘আমার শ্রদ্ধেয় পিতা মরহুম হযরত ইমাম ওমর জিয়াউদ্দিনকে বলতে শুনেছি যে, তিনি হযরত আবুল কাসেম আনসারী থেকে শুনেছেন। তিনি বলেছেন, আমি ইমামুল হারামাইন (رحمة الله) কে বলতে শুনেছি- “আল্লাহর জ্ঞান সকল ক্ষেত্রেই অসীম। এ জ্ঞানসমূহের মধ্য থেকে প্রতিটি একক সম্পর্কেও তাঁর জ্ঞান অসীম। কেননা, এককের সত্ত্বা পরিবর্তনের ভিত্তিতে অসীম বস্তুতে পাওয়া যাওয়া সম্ভব এবং তা পরিবর্তনের ভিত্তিতে অসীম গুণাবলীর সাথে প্রশংসিত হওয়াও সম্ভব। তিনি আরও বলেন- “আর অসীম জ্ঞানসমূহ একবার সৃষ্টির জ্ঞানে অর্জিত হওয়া অসম্ভব। সুতরাং এখন আল্লাহ তায়ালা প্রকাশ করা ব্যতীত ঐ জ্ঞানসমূহ অর্জিত হওয়ার কোন পন্থা নেই। তা কতেকের পর কতেক অর্জিত হতে থাকবে। এর শেষ সীমা নেই। আর না ভবিষ্যতেও তা শেষ পর্যন্ত অর্জন করা যাবে। এ কারণে আল্লাহ তায়ালা (তিনিই অধিক জ্ঞানী) ইরশাদ করেন নি; বরংঃ ইরশাদ করেছেন। বিশ্লেষকদের বাণী থেকেও তাই প্রমাণিত হয়। যেমন•(আল্লাহর দিকে সফরের সীমা রয়েছে) (কিন্তু আল্লাহর মধ্যে সফরের কোন সীমা নেই) আল্লাহ তায়ালাই সর্বাধিক জ্ঞাত।
(টিকা ৫) আল্লামা শেহাবুদ্দিন খফাযী এক আয়াত এর ব্যাখ্যায়। আল্লামা তৈয়বী (رحمة الله) থেকে উদ্ধৃত করে বলেন- আল্লাহ তায়ালার জ্ঞানসমূহ অসীম। আসমান ও জমীনের গায়কসমূহ যা তিনি প্রকাশ করেন, আর যা তিনি গােপন করেন, তাঁর জ্ঞানের এক বিন্দু মাত্র।