বিয়ের আনন্দ


উল্লেখ্য যে, বিবাহে শরীয়ত সম্মত পন্থায় সীমিত আকারে আনন্দ প্রকাশ বৈধ। উপদেশমূলক ও শিক্ষনীয় বিষয়বস্তু সম্বলিত কবিতা, আবৃতি, নাত, গযল পরিবেশন ও ইসলামী সাংস্কৃতি অনুষ্ঠান করে খুশি উদযাপন করা যেতে পারে। 


এ প্রসঙ্গে হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত আছে, হযরত আয়িশা (رضي الله عنه) তাঁর এক আনসারী আত্মীয়া মেয়েকে বিবাহ দিলেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাশরীফ আনলেন আর বললেন, মেয়েটাকে কী স্বামীর সাথে পাঠিয়ে দিয়েছো? উপস্থিত লোকেরা বলল, হ্যা। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, গান পারে এমন কাউকে তার সাথে পাঠিয়েছো কী? হযরত আয়িশা (رضي الله عنه) বললেন, না। তখন রাসূলুল্লাহ ইরশাদ করলেন, 


إِنَّ الْأَنْصَارَ قَوْمٌ فِيهِمْ غَزَلٌ فَلَوْ بَعَثْتُمْ مَعَهَا مَنْ يَقُولُ: أَتَيْنَا كُمْ أَتَيْنَاكُمْ فحيانا وحياكم ".


-আনসারীরা এমন সম্প্রদায় যাদের মধ্যে গযলের প্রবণতা রয়েছে। যদি তার সাথে এরূপ বলার লোক পাঠাতে যে বলত- আমরা তোমাদের কাছে এসেছি। আমরা তোমাদের কাছে এসেছি, আল্লাহ আমাদেরকে দীর্ঘজীবি করুন এবং তোমাদেরকেও দীর্ঘজীবি করুন। ৯২

৯২.ইবনে মাজাহ, সূত্র. মিশকাত, পৃ. ২৭২, হাদিস নং ৩০০৯

 

মুসনাদে আহমদে উল্লেখ আছে- প্রিয়নবী (ﷺ) নীরব বিয়েকে পছন্দ করতেন না, যতক্ষণ না তাতে দফ না বাজানো হয় এই গান না গাওয়া হয়- 


“এসেছি মোরা তোমাদের কাছে - এসেছি মোরা তোমাদের পাশে 

তাহলে, মোদের বল মারহাবা - তোমাদের মোরা বলি মারহাবা।”


হযরত আমের ইবনে সা’দ (رضي الله عنه) বলেন, আমি একদা এক বিবাহে হযরত কারযা 


ইবনে কা’ব আনসারী ও আবু মসঊদ আনসারী (رضي الله عنه) ’র কাছে পৌঁছলাম। তখন সেখানে দেখি কতেক মেয়ে গান গাইছে। এটা দেখে আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল (ﷺ) ’র সাহাবীদ্বয় এবং বদরযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সাহাবীদ্বয়! আপনাদের সামনে এরূপ করা হচ্ছে? (অর্থাৎ আপনারা নিষেধ করছেন না কেন?) তখন তাঁরা বললেন, তোমার ইচ্ছে থাকলে বস এবং আমাদের সাথে শোন, আর ইচ্ছে না হলে চলে যাও। কেননা বিয়ের সময় সীমিত আকারে আনন্দ প্রকাশের ব্যাপারে আমাদের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। ৯৩

৯৩.নাসাঈ, সূত্র. মিশকাত, পৃ. ২৭৩, হাদিস নং ৩০১৩‘


বিবাহ নিশ্চয় আনন্দের সময়। ইসলাম তার অনুসারীদের জীবনকে সত্যিকার আনন্দ উল্লাস থেকে বঞ্চিত করেনা বরং পরিচ্ছন্ন আনন্দ উল্লাসের সুযোগ দান করেছে, যেন তাদের জীবন শুষ্ক ও নিরানন্দ না হয়ে থাকে। ইসলামে স্থবিরতা ও বিরক্তির অবকাশ নেই। মানুষ তার স্বভাবের তাগিদে পরিচ্ছন্ন ও শালীনতার মধ্যে থেকে নির্দোষ আনন্দ উপভোগ করতে পারে। 


উপরোক্ত হাদিসে বিবাহ উপলক্ষে আনন্দ প্রকাশের নিমিত্তে গান-গযল ইত্যাদির অনুমতি প্রদান করার পাশাপাশি গান-গযলের ধরনও বর্ণিত হয়েছে। সুতরাং উক্ত হাদিসের উপর ভিত্তি করে লাগামহীন ও অশ্লীল গান ও বাদ্য-বাজনা সহ নারী পুরুষের অবাধ মেলামেশা করা সম্পূর্ণ হারাম। 


বর্তমান মেহেদী অনুষ্ঠান কিংবা গায়ে হলুদের নাম দিয়ে নাচ-গান, প্যাকেজ অনুষ্ঠান বিয়ের অপরিহার্য বিষয়ে পরিনত হয়ে পড়েছে। টাকা না থাকলে কর্জ করে হলেও দুই-তিন লক্ষ টাকা খরচ না করলে পারিবারিক স্টেটাস বজায় থাকে না। এক্ষেত্রে পরিবার প্রধান ধার্মিক হলেও অনেক ক্ষেত্রে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের কাছে পরাস্ত হতে হয়। 


একদা এরূপ এক পরিবার প্রধান অর্থাৎ বরের পিতা ইশার নামাযের পর মসজিদে আমাকে বলেছিলেন- হুজুর! আপনি আমাকে অনুমতি দিলে আজ রাতে আমি মসজিদে থাকতে চাই, আমি বললাম, আপনার বাসায় কী মেহমান বেশি এসেছে? উনি অত্যন্ত অসহায় সুরে বললেন, না হুজুর। তবে আমার বাসায় মেহেদী অনুষ্ঠানের গান-বাজনা হবে আজ রাত। আমি তাদেরকে অনেক নিষেধ করেছি কিন্তু আমার কথা কেউ শুনেনা। তাই আজ রাত মসজিদে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তার কথা শুনে মনে মনে ভাবলাম- মানুষ নিজের আপনজনের কাছেও কত অসহায়। নিজের বাড়ি ত্যাগ করতে হচ্ছে তবুও গান-বাজনা ও প্যাকেজ অনুষ্ঠান প্রতিরোধ করতে পারছে না। 


মু’মিনের ঘুমও ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত। আর এসব অশ্লীল ও বেহায়াপনা গান-বাজনা দ্বারা পুরো এলাকাবাসীর আরামের ঘুম হারাম হয়ে যায় এবং এলাকার যুবক-যুবতীদের চরিত্র হরণে বিশেষ ভূমিকা রাখে এসব অনুষ্ঠান। 


এসব বাজে কালচার প্রতিরোধ করতে হলে সমাজের নেতৃস্থানীয় , মুরুব্বীগণ সহ মসজিদের ইমাম-খতীবগণ সম্মিলিতভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে এবং এর বিপরীতে না’ত, গযল ও ইসলামী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের বিকল্প ব্যবস্থার প্রতি উৎসাহিত করতে হবে। 

Top