সাহাবায়ে কেরামের মর্যাদা কি আওলাদে রাসূলের মর্যাদার অন্তরায়?
যেমনটি শিয়ারা মনে করেঃ
বর্তমানে কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)'র পবিত্র বংশধরদের শান-মান বৃদ্ধি এবং তাঁদেরকে মহব্বতের নামে বাড়াবাড়ির পর্যায়ে তাঁর (ﷺ) পবিত্র সাহাবায়ে কেরামের শানে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে চরম বেয়াদবি করা হচ্ছে, যা অত্যন্ত গর্হীত। তারা সাহাবায়ে কেরামের মর্যাদাকে আওলাদে রাসূলের মর্যাদার অন্তরায় মনে করে। যেমন, ভ্রান্ত শিয়ারা মনে করে থাকে। আমাদের আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের মতে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর প্রত্যেক সাহাবাই সত্যের মাপকাটি। তাঁদের প্রত্যেকেই অনুসরণ ও অনুকরণযােগ্য।
কুরআনুল কারীমের বহু জায়গায় সাহাবায়ে কেরামের শান বর্ণনা করা হয়েছে। সাহাবায়ে কেরামের বর্ণিত কুরআনুল কারীমের কিছু আয়াতে করীমা নিম্নে উল্লেখ করা হল।
আয়াত ১ঃ
━━━━━━
محمد رسولُ اللّٰه والذین معه أشداءعلی الکفاررحملء بینهم تراهم رقعا سجدا بیتغون فضلامن الله ورضوانا سيماهم في وجوههم من أثر الشجود ذلك مثلهم في التوراة ومثلهم في الإنجيل کزرع أخرج شطأه فآزره فاستغلظ فاستوى على شوقه يعجب الزراع ليغيظ بهم الكفار وعد الله الذين آمنوا وعملوا الصالحات منهم مغفرة وأجرا عظیم -
(الفتح:29)
অর্থাৎ “মুহাম্মদ (ﷺ) আল্লাহর রাসূল। আর যারা তাঁর সাথে রয়েছেন তথা তাঁর সাহাবাগণ কাফেরদের ওপর অত্যন্ত কঠোর, নিজেদের মধ্যে পরস্পরের প্রতি খুবই সহানুভূতিশীল; আপনি তাঁদেরকে দেখবেন, তাঁরা আল্লাহ তা'আলার অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি কামনায় রুকু ও সিজদায় অবনত। তাঁদের লক্ষণ তাঁদের মুখমন্ডলে সিজদার প্রভাবে পরিস্ফুট থাকবে, এরকমই তাঁদের বর্ণনা রয়েছে তাওরাতে এবং এরকমই তাঁদের বর্ণনা রয়েছে ইঞ্জিলে। তাঁদের দৃষ্টান্ত একটি চারাগাছ, যা একটি কিশলয় বের করে অতঃপর ইহাকে শক্ত ও পরিপুষ্ট হয় এবং দৃঢ়ভাবে কান্ডের ওপর দাঁড়ায়, যা কৃষকের জন্য আনন্দদায়ক। এভাবে আল্লাহ তাআলা মুমিনদের সমৃদ্ধি দ্বারা কাফিরদের অন্তর্জ্বালা সৃষ্টি করেন। যারা ঈমান আনেন ও সৎকাজ করেন আল্লাহ তাঁদেরকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ক্ষমা ও মহাপুরস্কারের।”
[সূরা আল-ফাতহ আয়াত: ২৯]
আয়াত ২ঃ
━━━━━━
والسابقون الأولون من المهاجرين والأنصار والذين اتبعوهم بإحسان رضى الله عنهم ورضوا عنه رأعد لهم جنات تجرى تحتها الأنهار خالدين فيها أبدا ذلك الفوزالعظیم -
(التوبة:100)
অর্থাৎ, “মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে যারা অগ্রগামী এবং যারা নিষ্ঠার সাথে তাঁদেরকে অনুসরণ করেছে, আল্লাহ তা'আলা তাঁদের প্রতি সন্তুষ্ঠ এবং তাঁরাও আল্লাহ তা'আলার প্রতি সন্তুষ্ট। আর তিনি তাঁদের জন্য প্রস্তুত করেছেন জান্নাত, যার নিম্নদেশে ঝরণা প্রবাহিত। যেখানে তাঁরা চিরস্থায়ী হবে। এটাই মহাসফলতা।”
[সূরা আত-তাওবা; আয়াত: ১০০]
আয়াত ৩ঃ
━━━━━━
لقد رضي الله عن المؤمنين إذ يبايعونک تحت الشجرة…
(الفتح: 18)
অর্থাৎ,"আল্লাহ তাআলা তাে মুমিনদের প্রতি সন্তুষ্ঠ হলেন, যখন তাঁরা বৃক্ষের নিচে আপনার নিকট বাইয়াত গ্রহণ করল। তাঁদের অন্তরে যা ছিল তা তিনি (আল্লাহ) অবগত ছিলেন। অতঃপর তিনি তাঁদের প্রতি প্রশান্তি অবতীর্ণ করলেন এবং তাঁদেরকে পুরস্কার হিসেবে দিলেন আসন্ন বিজয়।”
[সূরা আল-ফাতহ; আয়াত: ১৮]
হাদিস ১ঃ
━━━━━━
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সাহাবায়ে কেরামের শান বর্ণনা করে ইরশাদ করেন,
عن أبی سعید الخدری رضی الله عنه قال : قال النبي صلى الله عليه وسلم: لا تسبوا أصحابي ، فلو أن أحدكم أنفق مثل أحد ذهبا ما بلغ مد أحدهم ولانصیفه۔رواهتمامه - البخری(3673),ومسلم(2540)
অর্থাৎ “হযরত আবু সাঈদ আল খুদরী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, তােমরা আমার সাহাবায়ে কিরামকে গালি দিওনা। কেননা, তােমাদের কেউ যদি ওহুদ পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণ (আল্লাহর রাস্তায়) ব্যয় কর, তবু তা তাঁদের (সাহাবায়ে কিরামের) এক মুদ্দ বা অর্ধমুদ্দ পরিমাণ ব্যয়ের সমান হবেনা।”
[সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম শরীফ]
উল্লেখ্য, এসব আয়াতে কারীমা ও হাদীছে সাধারণভাবে সাহাবায়ে কেরামের প্রশংসা করা হয়েছে এবং এতে আহলে বাইত তথা নবী করীম (ﷺ) এবং প্রশংসা বিদ্যমান। কেননা, তারাও রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সাহাবীদের অন্তর্ভুক্ত; বরং তাঁরা অন্যান্য সাহাবা থেকে অধিক নিকটবর্তী সাহাবী।
কাজেই কোন সাহাবার শানে বেয়াদবী করা মানে আহলে বাইতের শানে বেয়াদবি করা। যেমন, হযরত আলী (رضي الله عنه)'কে বা হযরত হাসান-হােসাইনকে কিংবা আহলে বাইতের অন্য সদস্যকে ভালবাসার নামে হযরত মুয়াবিয়া (رضي الله عنه)'কে দোষারােপ করা তাঁর প্রতি মিথ্যা অপবাদ দেয়া প্রকৃতপক্ষে হযরত আলী (رضي الله عنه) তথা আহলে বাইতকে কে দোষারােপ করার নামান্তর।
হযরত মুয়াবিয়া (رضي الله عنه) ছিলেন একাধারে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সাহাবীদের অন্তর্ভুক্ত, একজন সম্মানিত কাতেবে অহী, কুরাইশ বংশীয় এবং অন্যান্য বহু সাহাবায়ে কিরামের শ্রদ্ধারপত্র। যদিও হযরত আলী (رضي الله عنه)'র সাথে তাঁর ইজতিহাদী মতবিরােধ ছিল, কিন্তু সাহাবায়ে কিরাম সেটার সম্মানজনক মীমাংসা করে হযরত মুয়াবিয়া (رضي الله عنه)'কে তাঁর প্রাপ্য সম্মান দান করেছেন এবং তাঁকে কোনরুপ দোষারোপ থেকে বিরত থেকেছেন। যুগ যুগ ধরে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের ইমামগণ হয়রত মুয়াবিয়া (رضي الله عنه)'র বিরুদ্ধে কোন মন্তব্য করা তাে দূরে থাক, বরং তাকে যারা দোষারােপ করে তাঁদেরকে গােমরাহ বলেছেন।
হাদিস ২ঃ
━━━━━━
সহীহ বুখারী শরীফ প্রণেতা ইমাম বুখারী (رضي الله عنه) তাঁর ‘আত-তারীখুল কাবীর' এ এবং অন্যান্য হাদীছগ্রন্থে হযরত মুয়াবিয়া (رضي الله عنه)'র শানে বর্ণনা করেছেন যে,
قال عمیر بن سعد رضي الله عنه : لا تذكروا معاوية إلا بخير فإنی سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول: «اللهم أجعله هاديأ مهديأ وأهد به »
অর্থাৎ,“হযরত উমাইর ইবনু সা'আদ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তােমরা হযরত মুয়াবিয়া (رضي الله عنه)'র ব্যাপারে ভাল ছাড়া অন্য কিছু বলনা (অর্থাৎ, তাঁর বিরুদ্ধে কোন খারাপ মন্তব্য করা থেকে দূরে থাক) । কেননা, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)'কে (হযরত মুয়াবিয়া (رضي الله عنه)'র ব্যাপারে) বলতে শুনেছি যে, (তিনি তাঁর জন্য দোয়া করতেছেন) হে আল্লাহ! তুমি তাঁকে (হযরত মুয়াবিয়া (رضي الله عنه)'কে) হেদায়তকারী, হেদায়তপ্রাপ্ত কর। আর তাঁর দ্বারা অন্যদের ও হেদায়ত কর।
তথ্যসূত্রঃ
-
১. رواه البخ ری فی«التاریخ الکبیر»(240/5)
২. وأحمدفی«المسند »(17929)
৩. والترمذیفی«جامعه»(3843)
৩. والطبر انی فی«المعجم الأوسط»(656)
৪. وفی«مسند امشمین»(2198)
৫. وابن أبی عصم فی«الآحادوالمثنی»(3129)
৬. والأجری فی«الشرف یعة»(1914, 1915)
৭. والخطیب فی«تاریخه»(207/1)
৮. وأبو نعیم فی«الحلیة»(358/8)
৯. وفی«أخبرأصبهان (180/1)
১০. والخلال فی«السنة»(676)
(وهو صحیح.)