প্রশংসার স্থলে শর্তহীনভাবে খাস করা অপরিহার্য নয়ঃ



আমরা স্বীকার করিনা যে, শুধুমাত্র প্রশংসামূলকভাবে উল্লেখ করার দ্বারা খাস করাকে শর্তহীনভাবে আবশ্যক করে দেয়। অথচ আল্লাহ তায়ালা দৃষ্টি, কর্ণ ও জ্ঞান দ্বারা স্বীয় সত্ত্বার প্রশংসা করেছেন। আবার এগুলাে দ্বারা স্বীয় বান্দাদেরও 


(১) যে ব্যক্তি আমার উক্তিকে মুনাজারার পদ্ধতিতে চিন্তা ভাবনা করেনি, সে যা ইচ্ছে চিৎকার করতে পারবে। কেননা, এটা তার বক্তব্য যা শেষ পর্যন্ত পৌঁছেনি। অতঃপর চরম দুঃসাহসিকতা তার এ মিথ্যা দাবী যে, নবী করীম (ﷺ) এ আয়াতে করীমা দ্বারা হাছর (বিশিষ্টতা) বুঝিয়েছেন কিন্তু রাসুলে পাক(ﷺ) এটা তােমাদের কবে সংবাদ দিয়েছেন এ হুকুম প্রয়ােগ করা হুজুর(ﷺ)-এর উপর বড় অত্যাচার এবং মহাভ্রান্তি। বরং হুজুরﷺ, (গায়বের চাবিকাঠি) কে এই পাঁচটি দ্বারা তাফসীর করেছেন এবং এ আয়াতে করীমা। দ্বারা এর ব্যাখ্যা করেছেন। সুতরাং এখান থেকেই হাসর (বিশিষ্টতা) এসেছে। অতঃপর বিস্ময়ের ব্যাপার হলাে, সে ধারণা করেছে যে, এ দ্বিতীয় আয়াতই لا يعلمها الا هو (তারা জানে না আল্লাহ ব্যতীত) হাদীস সম্পৃক্ত করার দ্বারা বিশিষ্টতার (হাসর) নির্দেশ করছে। সুতরাং, আল্লাহরই জন্য পবিত্রতা। ঐ (অদ্ভুত) ব্যক্তির কথাকে যথেষ্ট মনে করবেন না, যতক্ষণ না আল্লাহর বাণী لا يعلمها الا هو ‘তিনি ব্যতীত কেউ জানেন’ -এর সাথে রাসুলে পাকের হাদীস لا يعلمهن الا هو তিনি ব্যতীত তারা জানেন না। মিলিয়ে দেখেন। অতঃপর আমার উপর অপবাদ যে, আমি নাকি দাবী করেছি দ্বিতীয় আয়াতে করীমা বিশিষ্টতা নির্দেশক নয়। অথচ আমার পুস্তিকা আপনাদের চক্ষুর সম্মুখে, যাতে উল্লিখিত এ আয়াতে করীমা সম্পর্কে কোন বর্ণনা নেই। তাতে শুধুমাত্র প্রথম আয়াতের উপরই আলােচনা করেছি। আর তাও মুনাজিরার রূপে, যেমন আপনারা। দেখেছেন। আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।' 





প্রশংসা করেছেন। যেমন ইরশাদ হয়েছে-“তিনি তােমাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন কান, চক্ষু ও অন্তরসমূহ। হযরত মুসা (عليه السلام) এর বাণীও এ পর্যায়ের-আমার প্রতিপালক প্রতারিত হন আর নবীগণও প্রতারণা থেকে মুক্ত! হে আমার সম্প্রদায় আমার মধ্যে কোন ভ্রষ্টতা নেই। | আর আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন-“নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা অনুপরিমাণও যুলুম করেন না। আর আম্বিয়া (عليه السلام)ও যুলুম থেকে পবিত্র। আল্লাহ তায়ালা আরাে বলেন-“আমার অঙ্গীকার জালিমদের কাছে পৌছেনা”। 




সংখ্যা অতিরিক্তকে অস্বীকার করে নাঃ


দ্বিতীয়তঃ ধরুন, আমি স্বীকার করে নিলাম কিন্তু তাতে পাঁচের এমন বিশেষত্ব কোথায় যে, আল্লাহ তায়ালা অবগত করার পরেও এর দিকে কোন পন্থা অবশিষ্ট নেই? কেননা, যদি এমনটি হয়, তাহলে তা মাফহুমুল লক্ব বা শিরােনাম ভিত্তিতে দলীল গ্রহণের ন্যায় হবে, (অর্থাৎ কতেক বস্তুর নাম উল্লেখ করে যে হুকুম বর্ণনা করা হয়, তা এরই প্রমাণ করা যে, ঐ হুকুম অন্য কিছুতে প্রযােজ্য হবে না।) অথচ তা বাতিল। উসুল শাস্ত্রে তা বাতিল হওয়ার উপর প্রমাণ স্থির হয়েছে। কেননা, আয়াতে ‘পাচ’ শব্দের কোন উল্লেখও নেই যা। বােধগম্য সংখ্যা ও হাদীসের দিকে প্রত্যাবর্তন করবে। সুতরাং যে অবস্থায়ই হােক। না কেন ‘পাঁচ’ শব্দের ব্যবহার এসে থাকে। যদিও তাতে মর্মার্থ তাই যা আমি বর্ণনা করেছি যে, হাদীসে আহাদ’ আক্বীদার মাসআলায় বিশ্বস্ততার ক্ষেত্রে উপকারী ও বিশুদ্ধ। আমরা স্বীকার করি না ১ যে, এমন স্থানের উদাহরণসমূহে কোন সংখ্যার উল্লেখ অতিরিক্ততাকে অস্বীকার করে। 

(১) অতঃপর আমি বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ ‘ইরশাদুসসারীর’ সুরা রা’দের তাফসীর। * দেখেছি। যার বক্তব্য হলাে- আয়াতে পচের কথাই বর্ণনা করেছেন, যদিও গায়ব অসীম। 

কেননা, সংখ্যা অতিরিক্ত হওয়াকে অস্বীকার করেনা অথবা এ জন্য যে, কাফেরেরা তা জানার দৃঢ় প্রত্যয় করছিলাে। আর এর শব্দাবলী সুরা আনআমে’ এভাবে যে, তারা তাঁর জ্ঞানের (মিথ্যা) দাবী করছিলাে। আর ‘উমদাতুল কারীর বাবুল ঈমানে রয়েছে- বলা হলাে এ পাঁচটিতে সীমাবদ্ধ তার কারণ কি? অথচ আল্লাহ ছাড়া কেউ জানেনা, এমন বিষয় অনেক রয়েছে। জবাব দেয়া হলাে এ কারণে যে, কাফেররা রাসুলুল্লাহ (ﷺ) থেকে এ পাঁচটি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিলাে। তাই তাদের জবাবে এ আয়াত অবতীর্ণ হলাে অথবা

 তুমি কি রাসুলুল্লাহ (ﷺ)-এর ঐ ইরশাদ শুনােনি-“আমাকে পাঁচটি এমন বিষয়ের জ্ঞান প্রদান করা হয়েছে, যা আমার পূর্বে কাউকে প্রদান করা হয়নি।” 

অথচ, রাসুলে করীম(ﷺ)-এর এমন অনেক প্রদত্ত বিশেষত্ব রয়েছে যা গণনা। করা অসম্ভব। হাদীসের অন্য বর্ণনায় এভাবেই এসেছে-“আমাকে অন্যান্য নবীর উপর ছয়টি কারণে শ্রেষ্ঠত্ব প্রদান করা হয়েছে।” এমতাবস্থায় পাঁচ ছয়কে নিষেধ করবে, তখন উভয় হাদীসে দ্বন্দ্ব এসে যাবে। অতঃপর ঐ ফজিলতসমূহ গণনা। করার মধ্যে উক্ত হাদীসদ্বয় পরস্পর ভিন্ন। প্রতিটি হাদীসে ঐ উক্তিরই উল্লেখ আছে যা অন্যটির মধ্যে পাওয়া যায় না। সুতরাং যদি স্বীকার করা হয় যে, সংখ্যা দ্বারা হাছর বা বিশিষ্টতার উপর জোর বুঝানাে হয়, তাহলে বিশুদ্ধ হাদীসমূহ যা ইমামদের মতে গ্রহণযােগ্য ও সন্দেহমুক্ত সেগুলাের বিভিন্ন স্থানে একটি অপরটির বিপরীত ও পরস্পর পরস্পরকে অস্বীকার করবে। নগন্য বান্দা যে সকল হাদীস এ সম্পর্কে ব্যক্ত করেছি তা “আল-বাহসুল। ফাহিস আন তুরকে আহাদীসিল খাসায়েস” নামক পুস্তিকায় সন্নিবেশিত করেছি। ঐ হাদীসমূহে দু’থেকে দশ পর্যন্ত সংখ্যার উল্লেখ পেয়েছি, আর প্রত্যেকটিতে তাই রয়েছে যা অন্যটিতে নেই। আর বিশেষত্ব যা তাতে উল্লেখ আছে তা ত্রিশকেও অতিক্রম করেছে। সুতরাং কোথায় পাঁচ-ছয়! আর যে ‘জামে সগীর'-এর। পাদটীকা ও জামউল জাওয়ামি' গ্রন্থে তিন, চার ও পাঁচের পরিচ্ছেদ ও এর দৃষ্টান্ত সন্ধান করবে, সে নিশ্চিত হয়ে যাবে যে, এমন স্থানে (বিশেষত্বের ক্ষেত্রে) এ জন্য যে, অন্যান্য সব বিষয়সমূহ এ পাঁচটির দিকে প্রত্যাবর্ততি'। সুতরাং গবেষণা করাে। আমি বলছি, এ পাঁচটি ছাড়া অন্যান্য সব বিষয়কে এর দিকে ফিরানাের কোন অর্থ নেই। কেননা, আল্লাহ তায়ালার জাত ও সিফাতের রহস্য তিনি ব্যতীত কেউ জানেন না। তিনি এ পাঁচটি থেকে কোনটির দিকে প্রত্যাবর্তন করেননি। যেমন তিনি এদিকেই স্বীয় উক্তি ফাইফহাম’ (অতএব চিন্তা করাে) দ্বারা ইঙ্গিত করেছেন। আর এভাবে আল্লামা কুলানী (رحمة الله)-এর উক্তিতে রয়েছেঃ কাফেররা এ পাঁচটির পরিচয়ের ইতিকৃাদ রাখছিলাে এবং তারা এগুলাে জানার (মিথ্যা) দাবী করছিলাে। এতে কিয়ামত সম্পর্কে চিন্তাভাবনা করার প্রতি সুস্পষ্ট দিক নির্দেশনা রয়েছে। কেননা, তারা এর প্রতি ঈমানই আনেনি। সুতরাং পরিচয় লাভের প্রশ্নই উঠেনা। এ সম্পর্কে উপকারী জবাব। হলাে তাই, যা আল্লাহ তায়ালা স্বীয় এ অধম বান্দার নিকট ইলকা (মনে মনে স্থিরকরণ)। করেছেন। যার বর্ণনা অতিসত্তর আসছে। 

এ পরি।

Top