❏ প্রশ্ন : এদেশে একটি বর্ণনা হাদীসে কুদসী হিসেবে প্রসিদ্ধ আছে। অনেক আলেমকে দেখা খেছে খুতবার মধ্যে পাঠ করে। শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলবী (رحمة الله) লিখিত কিতাব তাকমীলুল ঈমান কিতাবেও উল্লেখ আছে।

كلهم يطلبون رضائي وأنا أطلب رضاك يا محمد

‘সকলে আমার সন্তুষ্টি চায়। আমি তোমার সন্তুষ্টি চাই, হে মুহাম্মাদ।’


✍ জবাব : حامدا ومصليا ومسلما এর শুদ্ধতাও সনদ সম্পর্কে আমার জানা নেই। এর অর্থ ولسوف يعطيك ربك فترضى ‘অতিসত্ত্বর আপনার বর আপনাকে দান করবেন। ফলে আপনি সন্তুষ্ট হবেন।’ এই আয়াতের অর্থ উদ্দেশ্য হলে ঠিক আছে। (ফতোয়া রশিদিয়া, পূর্ণ : ৩৭৪)


উক্ত হাদীসটি শায়খ আল্লামা আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলবী (رحمة الله) উদ্ধৃত করেছন। যার অর্থ হলো, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, হে মুহাম্মাদ, সকলে আমার সন্তুষ্টির প্রত্যাশী। আর আমি তোমার সন্তুষ্টির প্রত্যাশী। (তাকমীলুল ঈমান : ৩২) 


শায়খ আব্দুর রহমান সফুরী আল্লামা ইবনুল জাওযী (رحمة الله) থেকে উদ্ধৃত করেছেন, আল্লাহ তা‘আলা মুহাম্মাদ (ﷺ) এর কাছে অহী পাঠিয়েছেন যে, হে মুহাম্মাদ, সকলে আমার সন্তুষ্টি চায়। আমি তোমার সন্তুষ্টি চাই। (নুযহাতুল মাজালিস : ২/১৩)


আহলে হাদীসের নেতা মৌলবী সানাউল্লাহ আমার তাসরীর উস্তাদ মৌলবী মাহমুদ হাসানের উস্তাদ মাওলানা রশিদ আহমদ গাঙ্গুহীর ফতোয়ার প্রশ্ন ও জবাব দ্রষ্টাব্য।


ইমাম ফখরুদ্দীন রাযী (رحمة الله)ও উল্লিখিত বর্ণনা উদ্ধৃত করেছেন। এরপর লিখেছেন, 

أنه تعالى يفعل كل ما يرضاه الرسول 

‘আল্লাহ তা‘আলা সেটাই করেন, যা তার রাসূল চায়।’ (তাফসীরে কাবীর : ৪/১০৬)


হযরত খাজা মা‘সুম কাইয়ুমী বিন ইমামে রব্বানী মুজাদ্দিদে আলফে সানী (رحمة الله) লিখেছেন, হাদীসে কুদসীতে আছে, 

 أنا أطلب رضاك يا محمد صلى الله عليه وسلم  

(হে মুহাম্মাদ, আমি তোমার সন্তুষ্টি চাচ্ছি।)

(মাকতুবাতে খাজা কাইয়ূমী : ৩৭)


ইমাম নাসাফী (رحمة الله) হাদীস উদ্ধৃত করেছেন, হযরত মূসা আ. কালীমুল্লাহ ও হাবীবুল্লাহর মাঝে পার্থক্য জিজ্ঞাসা করলে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

 الكليم يعمل برضاءمولاه والحبيب يعمل المولى برضاه‘

কালীম নিজ মাওলার সন্তুষ্টি মোতাবেক আমল করে। আর আল্লাহ তা‘আলা নিজ হাবীবের সন্তুষ্টি অনুযায়ী কাজ করে।’ (নুযহাতুল মাজালিস : ২/১৩৫)


মোল্লা আলী কারী (رحمة الله) খলীল ও হাবীবের মাঝে পার্থক্য বর্ণনা করেছেন, খলীরেল কাজ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হয়। আল্লাহর কাছ তার হাবীবের সন্তুষ্টির জন্য হয়। والحبيب يكون فعل الله برضاه (‘হাবীব হলো তিনি, আল্লাহর কাজ যার সন্তুষ্টিতে মোতাবেক হয়।’) (মেরকাত : ৫/৩৬৯)


এমনকি আল্লাহ তা‘আলা তার হাবীবের সন্তুষ্ট এতই চান যে, অনেক সময় আল্লাহ তা‘আলা তার হাবীবের সাথে পরামর্শ করেন।

إني أنا النبي استشار ربي في أمتي ماذا أفعل بهم

‘আমার রব আমার কাছে পরামর্শ চেয়েছেন, আমি তাদের সাথে কি আচরণ করবো।’ (হযরত হুসাইফা রাযি. থেকে বর্ণিত, ইমাম আহমদ বিন আসাকের)


মুহাদ্দিসীন ও মুফাসসিরীনের এই স্পষ্ট ব্যাখ্যার পর কেউ যদি মুহাম্মাদী স্তর এবং মুস্তফাবী সন্তুষ্টির মর্যাদা না বুঝবে তাহলে সে জানে।

তার কামও এমন যে, যার মন মতো হবে না সে জাল বলবে।

সুবহানাল্লাহ, শানে মুহাম্মাদী, মাকামে আহমদী ও মুস্তফাবী সন্তুষ্টির কি কথা। কিন্তু যেই বেদীন ও বেআদব মানুষের ভ্রান্ত আকীদা হবে যে, নবী (ﷺ) আমদের মানুষ। বড় ভাইয়ের মতো সম্মান করতে হবে। রাসূলের চাওয়ার দ্বারা কিছুই হয় না। তার মনের ইচ্ছা চলে না ইত্যাদি। এই সব কিছু ভ্রান্ত আকীদা। এমন মানুষ শানে মুহাম্মাদী কি বুঝবে। নাউযুবিল্লাহ।

(মাসিক রেযায়ে মোস্তফা, গুজরা নেওয়ালা, পাকিস্তান, জামাদাল ঊলা : ১৪১০ হিজরী পৃ. ৬)

Top