নারীর সাজসজ্জা
নারীর রূপচর্চা ও সাজসজ্জার ব্যাপারে ইসলামে কোনো বয়সের বিধিনিষেধ আরোপ করেনি। স্ত্রী তার স্বামীর পছন্দ মতো পোশাক পরিচ্ছদ, সুগন্ধি দ্রবাদি এবং অলংকারাদি ব্যবহার করতে পারে। তবে মনে রাখতে হবে যে, নারীর নারী সূলভ মানবিকতাই হচ্ছে তার আসল রূপ সৌন্দর্য এবং উৎকৃষ্ট অলংকার। নারীর নম্রতা, শিষ্টতা, চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য এবং সততাই হচ্ছে তার প্রকৃত গুণাবলী।
ইসলামে সোনা, রূপা, ইয়াকুত, জমরুদ, আশমাস প্রভৃতিহীরা-মুক্তা ব্যবহারে অনুমতি নারীর জন্য রয়েছে। তবে এসবকিছু কেবল স্বামীর উপস্থিতে তাকে আনন্দিত করার জন্য এবং তার মনে নিজের জন্যে ভালোবাসার আবেগ সৃষ্টি করার উদ্দশ্যে হতে হবে- কোনো পর পুরুষকে দেখানোর জন্য নয়।
হযরত আসমা বিনতে আবি বকর (رضي الله عنه) থেকে বণির্ত, তিনি একদা তাঁর বোন হযরত আয়িশা (رضي الله عنه)’র সঙ্গে দেখা করার জন্য গেলেন। এসময় (তাঁর স্বামী) যুবায়ের (رضي الله عنه) অনুপস্থিত ছিলেন।
فدخل النبى صلى الله عليه وسلم فوجد ريح طيب فقال ماعلى المرأة ان لا تتطيب وزوجها غائب
অতঃপর নবী করিম (ﷺ) ঘরে প্রবেশ করলে সুগন্ধি অনুভব করলেন। তারপর (আসমা (رضي الله عنه) কে উদ্দেশ্য করে) বললেন, স্বামী অনুপস্থিত থাকলে কোনো সুগন্ধি ব্যবহার করা মহিলাদের উচিত নয়। ২৩০
২৩০.নুর উদ্দিন আলী ইবনে আবি বকর ও (৮০৮ হি.) মাজমাউয যাওয়ায়েদ, খণ্ড. ৪, পৃ. ৩১৭)
হযরত ওসমান ইবনে মাযউন (رضي الله عنه)’র স্ত্রী আগে সুগন্ধি ব্যবহার করতেন। কিন্তু পরে তা বন্ধ করেছেন। একদিন সুগন্ধি বিহীন অবস্থায় তিনি হযরত আয়িশা (رضي الله عنه)’র নিকট যান। হযরত আয়িশা (رضي الله عنه) তাকে এ অবস্থায় দেখে অত্যন্ত বিস্মিত হন এবং সুগন্ধি দ্রব্য ব্যবহার বর্জনের কারণ জিজ্ঞাসা করলেন। তিনি প্রশ্নের উত্তরে বললেন, হে উম্মুল মু’মিনীন, ওসমান তো সংসার ত্যাগের তালে আছে। সংসারের দিকে পরিবার পরিজনের দিকে তার কোনো খেয়ালই নেই। একথা শুনে হযরত আয়িশা নবী করিম (ﷺ) কে গিয়ে সব কথা খুলে বললেন। এরপর তিনি একদা ওসমান (رضي الله عنه)’র দেখা পেলে জিজ্ঞাসা করলেন- হে ওসমান ! তুমি তো মু’মিন ও তৌহিদ বাদী নয় কি? উত্তরে ওসমান (رضي الله عنه) বললেন, নিশ্চয়ই, তখন নবী করিম ইরশাদ করলেন- তাহলে নিজের স্ত্রী ও সন্তানদের প্রতি লক্ষ্য এবং আগ্রহ দেখাও। ২৩১
২৩১.ইমাম আহমদ র (২৪১ হি.) মুসনাদ
عن ميمونة بنت سعد (مرفوعا) مامن امرأة تخرج فى شهرة من الطيب فيظر الرجال اليها الالم نزل فى سخط الله حتى ترجع الى بيتها
হযরত মাইমুনা বিনতে সা’দরা থেকে বর্ণিত, নবী করিম (ﷺ) ইরশাদ করেন, যে মহিলা সুগন্ধি ব্যবহার করে লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হয় তখন সে আল্লাহর গযবে প্রবেশ করে যতক্ষণ না সে তার ঘরে ফিরে যায়। ২৩২
২৩২.আলাউদ্দিন আলী ইবনে হুস্সামুদ্দিন’র (৯৭৫ হি.) কানযুল উম্মাল, খণ্ড- ১৬, পৃ. ১৪১
রাসূলুল্লাহ (ﷺ)'র খাদেমা হযরত মাইমূনা বিনতে সা’দ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন-
-مَثَلُ الرَّافِلَةِ فِي الزِّينَةِ فِي غَيْرِ أَهْلِهَا كَمَثَلِ ظُلْمَةِ يَوْمِ القِيَامَةِ لاَ نُورَ لَهَا.
যে মহিলা স্বামীকে দেখানো ব্যতিত সাজসজ্জা করে শহরে বন্দরে যেখানে সেখানে চলাফেরা করে সে কিয়ামতের দিন অন্ধকারে থাকবে। কোনো প্রকার আলো সে পাবে না। ২৩৩
২৩৩.ইমাম তিরমিযী র (২৭৯ হি.) সুনানে তিরমিযী, পৃ. ২৩০
নারী যখন বেপর্দা, টাইট জামা কাপড় পরিধান করে কিংবা কাটসাট অর্ধ উলঙ্গ পোশাক পরিধান করে বডি স্প্রে ও দুর্লভ সুগন্ধি সেন্ট ব্যবহার করে অলংকারের ঝনঝনানির শব্দ করে লোকালয়ে চলে তখন তাদের উদ্দেশ্য হয় লোকেরা তাকে দেখুক, তার সৌন্দর্য উপভোগ করুক এবং যুবক পুরুষরা তার প্রতি আকৃষ্ট হোক। এ সমস্ত মহিলা অন্যকে কুনজর ও ব্যভিচারে আহবান করে। বকাটে যুবকরা যখন তার দিকে চোখ তুলে তাকায় তখন তারা নিজেদের সুন্দরী মনে করে গর্বিত ও আনন্দিত হয়। কিন্তু যখন কোনো দুর্ঘটনার স্বীকার হয় তখন পুরুষের জন্য সর্বোচ্চ শাস্তির দাবী করে। এসব চরিত্রহীন নারীদের প্রতি অনেকের প্রশ্ন যে, তোমরা চলবে ইউরোপ আমেরিকার স্টাইলে আর বিচার চাইবে সৌদি বিধি মতে? এটাতো হতে পারে না।
আর এসব মহিলার স্বামীরাও আহমক। কারণ তাদের কষ্টের অর্জিত টাকা-পয়সা দিয়ে দামী পোশাক ও প্রসাধনী কিনে ব্যবহার করে তার কাছে সৌন্দর্য প্রকাশ না করে পরপুরুষকে রূপ-যৌবন প্রদর্শন করে আনন্দিত হচ্ছে। টাকা যাচ্ছে স্বামীর আর ভোগ করছে অন্যরা। অবিবাহিত নারীদের বেলায় পিতা-মাতা এবং বিবাহিত রমনীদের ক্ষেত্রে স্বামীদেরকে সজাগ থাকতে হবে এবং কঠোর ভূমিকা পালন করতে হবে। কলা যেমন আবরণে থাকলে মূল্য থাকে অনুরূপ নারী পর্দার আবরণে থাকলে নারীর মর্যাদা অক্ষুন্ন থাকে।
সাজ সজ্জার পদ্ধতি
সাধারণত সাজ সজ্জার দু’টি পদ্ধতি প্রচলিত আছে। ১. কৃত্রিম পদ্ধতি ২. স্বাভাবিক পদ্ধতি। প্রথমটি হচ্ছে শরীরের বিশেষ কোনো অংশকে ক্ষত করে বা কাটাকাটি করে চিত্র বা রেখা অঙ্কন করা। অথবা অন্য কোনোভাবে শরীরের স্বাভাবিক ত্বক নষ্ট করে কৃত্রিম কিছু লাগানো। এটা আল্লাহর সৃষ্টির পরিবর্তন সাধন করা হয় বলে সম্পূর্ণ নাজায়েয ও হারাম।
যেমন- দাঁতকে সরু করা এবং দাঁতকে ছোট করা। ইসলাম নারীর রূপচর্চা ও সাজ সজ্জাকে শুধু পছন্দই করেনা; বরং তাকে উৎসাহিতও করে এবং এই বিষয়টি ইসলামের প্রকৃতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণও। কিন্তু রূপচর্চার নামে এমন সীমালঙ্ঘন করা যাতে শরীরকেও বিগড়ে দেওয়া হবে- তা কোনো যুক্তিতেই গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ সে শরীরের মালিক নয় বরং আমানতদার। এরূপ করার মানে হলো সে আমানতের খিয়ানত করা। এ ধরনের কুৎসিত প্রবণতা মহত্তম উদ্দেশ্য ও ব্যক্তিমর্যাদার সম্পূর্ণ পরিপন্থি।
বর্তমান সমাজে নারীদের খোলা-মেলা নির্লজ্জ চাল-চলন, পোশাক পরিচ্ছদ পরন দ্বারা মনে হয় যে, পৃথিবীর সকল পুরুষ যেন তাদের স্বামী আর তারা সকলের স্ত্রী। তাদেরকে ভোগ করার অধিকার যেন সকল পুরুষের রয়েছে। আজকে নারী নির্যাতন, ইভটিজিং, এসিড নিক্ষেপ, ধর্ষণ জাতীয় অপরাধের সংঘটিত হওয়ার পেছনে নারীর ওদ্যত্বপূর্ণ আচরণই বহুলাংশে দায়ী। পবিত্র কুরআনে আছে- শয়তান বলেছিল- وَلَآمُرَنَّهُمْ فَلَيُغَيِّرُنَّ خَلْقَ اللَّهِআমি তাদেরকে আদেশ করবো আর তারা আল্লাহর সৃষ্ট আকৃতি বিকৃত করবে। ২৩৪
২৩৪.সূরা নিসা, আয়াত: ১১৯
عَنْ عَبْدِ اللهِ، قَالَ: ্রلَعَنَ اللهُ الْوَاشِمَاتِ وَالْمُسْتَوْشِمَاتِ، وَالنَّامِصَاتِ وَالْمُتَنَمِّصَاتِ، وَالْمُتَفَلِّجَاتِ لِلْحُسْنِ الْمُغَيِّرَاتِ خَلْقَ اللهِ قَالَ: فَبَلَغَ ذَلِكَ امْرَأَةً مِنْ بَنِي أَسَدٍ يُقَالُ لَهَا: أُمُّ يَعْقُوبَ وَكَانَتْ تَقْرَأُ الْقُرْآنَ، فَأَتَتْهُ فَقَالَتْ: مَا حَدِيثٌ بَلَغَنِي عَنْكَ أَنَّكَ لَعَنْتَ الْوَاشِمَاتِ وَالْمُسْتَوْشِمَاتِ، وَالْمُتَنَمِّصَاتِ وَالْمُتَفَلِّجَاتِ، لِلْحُسْنِ الْمُغَيِّرَاتِ خَلْقَ اللهِ، فَقَالَ عَبْدُ اللهِ: وَمَا لِي لَا أَلْعَنُ مَنْ لَعَنَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ وَهُوَ فِي كِتَابِ اللهِ فَقَالَتِ الْمَرْأَةُ: لَقَدْ قَرَأْتُ مَا بَيْنَ لَوْحَيِ الْمُصْحَفِ فَمَا وَجَدْتُهُ فَقَالَ: " لَئِنْ كُنْتِ قَرَأْتِيهِ لَقَدْ وَجَدْتِيهِ، قَالَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ: وَمَا آتَاكُمُ الرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوا
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- আল্লাহ তা’আলা অভিশাপ দিয়েছেন তাদেরকে যারা উল্কি অংকন করে বা করায়, ভ্রুর কেশ যারা সরু করে ও করায় এবং সৌন্দর্য্যের জন্য যারা দাঁতকে সরু করে ও করায় আর যারা আল্লাহর সৃষ্টিকে পরিবর্তন সাধন করে। বণি আসদের এক মহিলা তাঁর কাছে আসল যার নাম উম্মে ইয়াকুব। সে বলল, আমি সংবাদ পেলাম যে, আপনি উল্কী কারিণী বা যে করায়, ভ্রুর কেশ যারা উপড়ে ফেলে বা উপড়ায় এবং সৌন্দর্য্যরে জন্য যারা দাঁত সরু করে আর আল্লাহর সৃষ্টিকে পরিবর্তন সাধন করে এদের উপর আল্লাহর অভিশাপ বলেছেন? তিনি উত্তরে বললেন, কেন বলবোনা? যখন আল্লাহর কিতাবে আছে। ঐ মেয়ে বলল, আমি তো কুরআন পড়েছি, কিন্তু কুরআন শরীফে তো আমি তা পাইনি। ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) বললেন, তুমি যদি সত্যিকার অর্থে কুরআন পড়তে তাহলে অবশ্যই পেতে। আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেছেন- রাসূল তোমাদেরকে যা দিয়েছেন তা তোমরা ধারণ কর আর যা থেকে নিষেধ করেছেন তা থেকে বেঁচে থাক। ২৩৫
২৩৫.ইমাম মুসলিম র. (২৬১ হি.), সহীহ মুসলিম, খণ্ড ২, পৃ. ২০৫, মিশকাত; পৃ. ৩৮১
এইসব নাজায়েয হওয়ার কারণ হলো এগুলো এক প্রকারের ধোকাবাজী ও প্রতারণা। কারণ এর উদ্দেশ্য হলো বয়স্কা মহিলাকে অল্প বয়স্কা বুঝানো। তাছাড়া শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গসমূহ হলো আল্লাহর আমানত। এ গুলোতে পরিবর্তন সাধন আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো জন্য বৈধ নয়। সুতরাং বিউটি পার্লারে যারা এসব কাজে লিপ্ত থাকে তারাও সমানভাবে গুনাহগার হবে। বিউটি সার্জারী, বিউটি অপারেশন এবং প্লাস্টিক সার্জারী ইত্যাদি হারাম। তবে কোনো রোগের কারণে হলে তা বৈধ।
।وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: لَعَنَ اللَّهُ الْوَاصِلَةَ وَالْمُسْتَوْصِلَةَ والواشمة والمستوشمة
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (رضي الله عنه) নবী করিম (ﷺ) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, সে নারীর উপর আল্লাহর লা’নত যে নারী অন্য নারীর মাথায় কৃত্রিম চুল মিশ্রিত করে কিংবা নিজ মাথায় কৃত্রিম চুল মিশ্রিত করায় এবং অন্যের শরীরে উল্কী অংকন করে বা নিজের শরীরে উল্কী অংকন করায়। ২৩৬
২৩৬.বুখারী ও মুসলিম, সূত্র মিশকাত; পৃ. ৩৮১
হযরত আসমা বিনতে আবু বকর (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করিম (ﷺ)’র নিকট একজন মহিলা এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমার ছোট এক মেয়ে বউ হয়েছে, অসুস্থতার কারণে তার চুল পড়ে গিয়েছে। এখন আমি কি তার চুলের সাথে নতুন চুল গুজে দিব?فقال لَعَنَ اللَّهُ الْوَاصِلَةَ وَالْمُسْتَوْصِلَةَ
তিনি বললেন, আল্লাহ তা’আলা অভিশাপ দিয়েছেন যারা চুল লাগায় এবং যারা চুল লাগিয়ে দেয়।২৩৭
২৩৭.ইমাম মুসলিম র. (২৬১ হি.) সহীহ মুসলিম, খণ্ড ২, পৃ. ২০৫
ভালো কাজে সাহায্য করা যেমনি পূণ্যের কাজ তেমনি পাপ কাজে সাহায্য করাও পাপ। তাই যারা এসব পাপ কাজে সহযোগিতা করে অর্থাৎ বিউটিশিয়ানরাও পাপের অংশীদার হবে।
স্বাভাবিক পদ্ধতি
রূপচর্চার স্বাভাবিক পদ্দতি বলতে বুঝায় সুরমা, খিযাব এবং অন্যান্য প্রসাধনী দ্রব্যাদির (যা হালাল বস্তু দ্বারা তৈরি) মাধ্যমে কৃত ব্যবস্থাবলী। এ ধরনের দ্রব্যাদি ব্যবহারে কোনো আপত্তি নেই। যদিও এগুলো দ্বারা আল্লাহর প্রকৃত সৃষ্টির রূপ পরিবর্তন করে তবুও তা অবৈধ নয়, কারণ এই পরিবর্তন স্থায়ী নয়; বরং সাময়িক এবং খুই দ্রুত তা মুছে গিয়ে চেহারার আসল রূপ ধারণ করে। তবে এসব মেকাপের কারণে উযূর সময় যদি ত্বকে পানি না পৌঁছে কিংবা মেকাপ নষ্ট হয়ে যাবার ভয়ে উযূ করে নামায আদায় করেনা তবে তা নিশ্চিত হারাম। বর্তমান নাকি বিয়ের সময় নারীরা চোখের পানি পড়ে মেকাপ মুছে যাবার ভয়ে পিত্রালয় ছেড়ে যাওয়া পর্যন্ত ক্রন্দন করে না। আবার এরূপও হয় যে, বিয়ের দিন কৃত মেকাপ তিন/চার দিন পর্যন্ত রেখে দেওয়া হয় এবং মুখে পানি পর্যন্ত লাগায়না নব বধূরা। যে কাজের কারণে ফরয তরক হয় সে কাজও নিষিদ্ধ। তাছাড়া এসব প্রসাধনী সামগ্রীতে রাসায়নিক মেডিসিন ব্যবহার করা হয় এবং ভেজাল বস্তু মিশ্রিত হয় যা দ্বারা ত্বকে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সুতরাং এইসব প্রসাধনী সামগ্রীর মাধ্যমে সাময়িক ও কৃত্রিমভাবে সুন্দর হওয়ার মানসিকতা ত্যাগ করে নারীর আসল সৌন্দয্য, নম্রতা, কোমলতা, লাজুকতা, চারিত্রিক উৎকর্ষতা, ধার্মিকতা ও অন্তরের পবিত্রতা দ্বারা সৌন্দর্য্যমণ্ডিত হওয়ার দিকে মনোযোগী হওয়া উচিত যা স্থায়ী ও অক্ষয়।
ইসলামে স্বামীর সন্তুষ্টির জন্য স্ত্রীর রূপচর্চা ও সাজসজ্জা করা শুধু বৈধ নয় বরং উৎসাহিত করা হয়েছে। স্বামীর চাহিদা ও পছন্দ মতো স্ত্রী সাজসজ্জা করা এবং নিজেকে স্বামীর জন্য সর্বদা প্রস্তুত রাখা উচিত। নিজের উপর স্বামীর পছন্দকে প্রাধান্য দেওয়া উচিত। অনেক পরিবারে এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধে মনোমালিন্য পরিলক্ষিত হয়। এ কারণে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) পুরুষদেরকে সফর থেকে এসে হঠাৎ ঘরে প্রবেশ করতে নিষেধ করেছেন। কারণ এ সময় স্বামী সহবাসের জন্য মরিয়া হয়ে উঠবে আর স্ত্রী তখন অপ্রস্তুত থাকতে পারে কিংবা অগোছালো থাকতে পারে যা দেখে হয়তো স্বামী বিরক্তবোধ করবে।
عَنْ جابر أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: إِذَا دَخَلْتَ لَيْلًا فَلَا تَدَخُلْ عَلَى أهلك حَتَّى تستحد المغيبة وتمتشط الشعثة
হযরত জাবির (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (ﷺ) ইরশাদ করেন, যদি তোমরা (কোনো সফর থেকে) রাতের বেলায় তোমাদের এলাকায় প্রবেশ কর, তখনই নিজ স্ত্রীর কাছে যেয়োনা, যাতে তারা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হতে পারে এবং তাদের চুল চিরুনী দিয়ে সুবিন্যস্ত করে নিতে পারে। ২৩৮
২৩৮.বুখারী ও মুসলিম, সূত্র, মিশকাত; পৃ. ৩৩৯
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, দূরের সফর থেকে ফিরে এসে হঠাৎ করে বাড়িতে গিয়ে হাযির হওয়া উচিত নয়। কেননা, এতে সে স্ত্রীকে এমন অবিন্যস্ত ও অপছন্দনীয় অবস্থায় দেখার আশঙ্কা থাকে, যাতে তার অপছন্দ ও ঘৃণার উদ্রেক হতে পারে। ২৩৯
২৩৯.বুখারী ও মুসলিম