❏ প্রশ্ন : রাসূল (ﷺ)কে কুরআনে বাশার হেকমত কী?
✍ জবাব : عليه التكلان وهو المستعان আল্লাহ তা‘আলা إنما أنا بشر (আমি হলাম মানুষ) বলার হেকমত হলো, যেহেতু আমি মানুষের হেদায়াতের জন্য আল্লাহর হেকমতে মানুষের আকৃতিতে দুনিয়াতে এসেছি। যাতে মানুষ আমার অনুসরণ করে। তাই আমি দুই পক্ষের বর্ণনা ও দাবীর প্রমাণের উপর যে সমাধান সত্য মনে তা করবো। আমার বাতেনী ইলমের আলোকে সমাধান করি না। কারণ আমার উম্মাতের বিচারকগণের বাতেনী থাকবেও না এবং শরয়ী ইরমের উপর বাতেনী ইলম দলিলও হবে না। তাই তারা বাহ্যিক প্রমাণের উপর সমাধান করবে। আর উভয় পক্ষ এই সমাধান মানতে বাধ্য। এখন আমি যদি বাতেনী ইলম অনুযায়ী বাহ্যিক বিবরণ ও প্রমাণের বিপরীত সমাধান করি তাহলে হতে পারে, আল্লাহকে ভয় করে না এমন বিচারকদের জন্য জুলুম নির্যাতন এবং হকের বিরুদ্ধে সমাধান করার জন্য এটা একটা বাহানা হয়ে যাবে। একারণে আমি মানুষ হিসেবে বাহ্যিক প্রমাণ ও বিবরণের উপর সমাধান দিয়ে থাকি।
ইমাম আবু ইউসুফ (رحمة الله) বলেন, কাজীর বিচার শুধু বাহ্যিকভাবে বাস্তবায়ন হয়। অভ্যন্তরে বাস্তবায়ন হয় না। হযরত উম্মে সালমা রাযি. থেকে বর্ণিত আছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বলেন, একবার রাসূল (ﷺ) তার কামরার সামনে ঝগড়া শুনতে পেলেন। তিনি ঝগড়াকারীদের কাছে গেলেন। আর বলেন, আমি মানুষ। আমার কাছে ঝগড়াকারীরা আসে। তোমাদের মধ্যে অনেকে বেশি বাগ্মি হয়। (অর্থাৎ মনের কথা সুন্দর করে উপযুক্ত শব্দ দিয়ে মুগ্ধকর ভঙ্গিতে দলিল উপস্থাপন করতে পারে। তার কথা শুনে সত্য মনে হয়।) আমি মনে করি সে সত্য বলছে। তখন তার পক্ষে সমাধান দিয়ে দেই। যার জন্য কোনো মুসলমানের হকের ফয়সালা করবো এটা আগুনের টুকরা। মনে চাইলে নিতে পারে। মনে না চাইলে ছেড়ে দিতে পারে। (বুখারী) অথচ আল্লাহ তা‘আলা রাসূল (ﷺ)কে খায়রে কাসীর অর্থাৎ গায়বী জ্ঞান দান করেছেন। এমন মানুষ হিসেবে ঘটে যাওয়া ঘটনার কারণে আল্লাহ তা‘আলা রাসূল (ﷺ)কে সর্তকও করেছেনأن جاءه الأعمى এই আয়াতে। এই জাতীয় সতর্ক কুরআনে আরো উল্লেখ আছে। এ ব্যাপারে ওলামায়ে কেরাম বিভিন্ন আলোচনা করেছেন।
ড. ইমাদ আশশারবিনী খুব সুন্দর ব্যাখ্যা করেছেন,
إن عتاب الأنبياء عليهم السلام الواردة في القران الكريم هو في الظاهر عتاب وفي الحقيقة كرامة وقربة لله عز وجل وتنبيه لغيرهم ممن ليس في درجتهم من البشر
‘নবীগণ সম্পর্কে কোরআনের মধ্যে যে নিন্দা এসেছে তা প্রকাশ্য দৃষ্টিতে নিন্দা। আর বাস্তবে তা সম্মান, আল্লাহর নৈকট্য এবং অন্যদের জন্য সতর্কতা, যারা তাদের স্তরে নয়।’
الكوثر هو الخير الذي أعطاه الله إياه ‘আল্লাহ তা‘আলা রাসূল (ﷺ)কে প্রচুর কল্যাণ দান করেছেন। অর্থাৎ সকল কল্যাণ আল্লাহ তা‘আলা আপন হাবীবকে দান করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,ويعلم الحكمة হিকমতের মুআল্লিম রাসূল (ﷺ)। যিনি হেকমতের ঝর্না। যাকে হেকমত দান করা হয় তাকে প্রচুর কল্যাণ দান করা হয়। অন্য জায়গায় বলেন, ومن يؤتى الحكمة فقد اوتي خيرا كثيرا ‘আর যাকে হেকমত দান করা হয়েছে, তাকে প্রচুর কল্যাণ দান করা হয়েছে।’ রাসূল সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম খায়রে কাসীরের বাহক ও মালিক। কুরআনের আরেক জায়গায় বর্ণিত আছে, لو كنت أعلم الغيب لاستكثرت من الخير ‘আমি যদি গায়েব জানতাম তাহলে খায়রে কাসীর জমা করে ফেলতাম।’ জানা গেলো, গায়েব না থাকলে খায়রে কাসীরও নেই।
এই আয়াত দ্বারা গায়েব ও খায়রে কাসীর প্রমাণ ও স্পষ্ট হয়। কারণ এটা শর্ত প্রকাশক বাক্য। এখানে لو শর্তের শব্দ এসেছে। বাক্যের প্রথম অংশ ও দ্বিতীয় উভয়টি হাঁ বাচক। সুতরাং ফলাফল না বাচক হবে। শর্ত প্রকাশক বাক্যে দ্বিতীয় বাক্য না করা হলে প্রথম বাক্যও না হয়ে যায়। আরেক জায়গায় এসেছে, لا يظهر على غيبه أحدا الا من ارتضى من رسله ‘আল্লাহর গায়েব সম্পর্কে কেউ জানে না তবে তার রাসূলদের মধ্যে তাকে জানান।’ আল্লাহ তা‘আলা রাসূলকে গায়েবের বিষয় জানান। সরাসরি গায়েবের বিষয় জানেন আল্লাহ তা‘আলা। নবীগণ আল্লাহ তা‘আলা জানানোর দ্বারা গায়েব জানেন।