বিষয় নং-০৩: কোরআন সুন্নাহের আলোকে পবিত্র শবেই বরাত।


আজকাল বিভিন্ন বই পুস্তক, পত্রপত্রিকা, টিভি চ্যানেলে বলতে দেখা যায় শবেই বরাত বলতে ইসলামে কিছুই নেই। আবার কেউ বলে বেড়ান এটা বিদআত। তাই এ বিষয়ে সংক্ষিপ্ত আকারে কতিপয় হাদিস উলে­খ করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করলাম। কিতাব দীর্ঘায়িত হওয়ার আশংঙ্কায় এখানে আমি বিস্তারিত উল্লেখ করবো না, পরে সুযোগ হলে বিস্তারিত করে গ্রন্থ লিখবো ইন শা আল্লাহ। এখানে আমি যে কটি হাদিসই উল্লেখ করেছি প্রত্যেকটির সনদ বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করেছি।



শবে বরাতের অর্থ ও তাৎপর্য


শবে বারাআত شب برأت একটি ফার্সী শব্দ। শব অর্থ রাত। বারাআত অর্থ ভাগ্য। আরবীতে বলা হয় ليلة البرأة লাইলাতুল বারাআতে। শবে বারাআতের অর্থ شب جدائى শবে জুদায়ী (বিচ্ছেদের রাত) شب دورى শবে দূরী (দূরে চলে যাওয়ার রাত) شب فراق শবে ফেরাক (পৃথক হওয়ার রাত)। ১৬

➥{লোগাতে দে খোদা, খ- ৩০ পৃ, ১৯৮}



বারাআত অর্থ التفصى مما يكره مجاورته যার সাথে অবস্থান অপছন্দনীয়,  তার সঙ্গ থেকে দূরে থাকা। যেমন বলা হয়ে থাকে برأت من المرض আমি রোগের সঙ্গ থেকে মুক্ত হলাম। برأت من كريم আমি করিমের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করলাম। 


(সূত্র : মুফরাদাতে ইমাম রাগেব,  পৃ-৪৫)



(খ) শবে বারাআতের নামকরণ-


انما سميت ليلة البرأة لان فيها برأتين برأة للاشقياء من الرحمن وبرأة للاولياء من الخذلان- 


-‘‘লাইলাতুল বারাআত নামকরণের তাৎপর্য এরাতে দুধরনের বারাআত বা সম্পর্কচ্ছেদ হয়। অপরাধীরা আল্লাহ্ তা‘য়ালার রহমত থেকে বঞ্চিত থাকে। আর আল্লাহর ওলীগণ পার্থিব অপমান লাঞ্চনা থেকে মুক্ত হয়ে যান।’’  ১৭

➥{শায়খ আবদুল কাদের জিলানী : গুনিয়াতুত তালেবীন, পৃ-৩৬৫}



❏ পারিভাষিক অর্থে শবে বরাত বলতে বুঝায়-


 سب پانزهم شعبان كہ دراں شب ملائكہ بحكم الہى حساب عمر وتقسيم رزق ميكند- (دهخدا – ١٩٧)


-‘‘শাবান মাসের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাত যে রাতে ফেরেশতাগণ ‘‘আল্লাহ্ তা‘য়ালার নির্দেশে মানুষের বয়স ও রিযিক বন্টন করে থাকেন।’  ১৮

➥{দেহ খোদা পৃ-১৯৮ ও গিয়াসুল লুগাত}


অনেকে বলে থকেন শবে বারাআত কুরআন হাদিসে নাই, দেখুন কতবড় জাহেল হলে এ ধরনের কথা বলতে পারেন! শবে বারাআত হলো ফার্সী শব্দ আর কুরআন হাদিস হলো আরবী ভাষায়। তাই আরবী ভাষায় কি ফার্সী শব্দ পাওয়া যাবে? 


❏ ইমাম বদরুদ্দীন আইনী (رحمة الله) লিখেন-


لَيْلَة الْبَرَاءَة، وَهِي لَيْلَة النّصْف من شعْبَان


-‘‘লাইলাতুল বারা‘আত মানে হলো ১৫ ই শাবান।’’ 


(উমদাতুল ক্বারী, ২/১৭ পৃ.)


আরবীতে শবে বারাআতকে لَيْلَةُ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ শাবান মাসের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাতকে বুঝায়। এ প্রসঙ্গে ইমাম তিরমিযী (رحمة الله) ও ইবনে মাযাহ  তাদের স্ব-স্ব গ্রন্থে একটি অধ্যায় রচনা করেছেন।


শবে বরাতের নামের সংখ্যা:


❏ আল্লামা যামাখশারী  সূরা দুখানের ব্যাখ্যায় লিখেন-


وقيل: ليلة النصف من شعبان، ولها أربعة أسماء: الليلة المباركة، وليلة البراءة، وليلة الصكّ، وليلة الرحمة


-‘‘কোনো কোনো মুফাসসিরগণ ‘লাইলাতুল মোবারাকা’ দ্বারা ১৫ই শাবান (শবে বরাতকে) কে উদ্দেশ্য করেছেন, শবে বরাতের চারটি নাম রয়েছে,  যেমন-

১. লাইলাতুল মুবারাকা বা বরকত পূর্ণ রাত,  

২. লাইলাতুল বারায়াত তথা মুক্তি বা ভাগ্যের রাত. 

৩. লাইলাতুল ছক্কি বা ক্ষমা স্বীকৃতি দানের রাত এবং 

৪. লাইলাতুল ক্বদর বা ভাগ্য রজনী।’’ 


(আল্লামা যামাখশারী, তাফসিরে কাশ্শাফ, ৪/২৬৯ পৃ.)


❏ ইমাম আবু হাফস সিরাজুদ্দীন দামেস্কী (رحمة الله) লিখেন-


واحتج الآخرون على أنها ليلة النصف من شعبان بأنها لها أربعة أسماء: الليلة المباركة، وليلة البراءة، وليلة الصَكّ، وليلة الرحمة


-‘‘কোনো কোনো মুফাসসিরগণ ‘লাইলাতুল মোবারাকা’ দ্বারা ১৫ই শাবান (শবে বরাতকে) কে উদ্দেশ্য করেছেন, শবে বরাতের চারটি নাম রয়েছে,  যেমন- 

১. লাইলাতুল মুবারাকা বা বরকত পূর্ণ রাত,  

২. লাইলাতুল বারায়াত তথা মুক্তি বা ভাগ্যের রাত. 

৩. লাইলাতুল ছক্কি বা ক্ষমা স্বীকৃতি দানের রাত এবং 

৪. লাইলাতুল রহমত তথা রহমত বর্ষণ হওয়ার রাত।’’ 


(তাফসিরে লুবাব ফি উলূমিল কিতাব, ১৭/৩০৯ পৃ.)


❏ ইমাম কুরতুবী (رحمة الله) লিখেন-


وَيُقَالُ: لَيْلَةُ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ، وَلَهَا أَرْبَعَةُ أَسْمَاءٍ: اللَّيْلَةُ الْمُبَارَكَةُ، وَلَيْلَةُ الْبَرَاءَةِ، وَلَيْلَةُ الصَّكِّ، وَلَيْلَةُ الْقَدْرِ.


-‘‘কোনো কোনো মুফাসসিরগণ ‘লাইলাতুল মোবারাকা’ দ্বারা ১৫ই শাবান (শবে বরাতকে) কে উদ্দেশ্য করেছেন, শবে বরাতের চারটি নাম রয়েছে,  যেমন-

১. লাইলাতুল মুবারাকা বা বরকত পূর্ণ রাত,  

২. লাইলাতুল বারায়াত তথা মুক্তি বা ভাগ্যের রাত. 

৩. লাইলাতুল ছক্কি বা ক্ষমা স্বীকৃতি দানের রাত এবং 

৪. লাইলাতুল ক্বদর বা ভাগ্য রজনী।’’ 


(ইমাম কুরতুবী, তাফসিরে কুরতুবী, ১৬/১২৬ পৃ.)


❏ আহলে হাদিসদের ইমাম শাওকানী লিখেন-


وَلَهَا أَرْبَعَةُ أَسْمَاءٍ: اللَّيْلَةُ الْمُبَارَكَةُ، وَلَيْلَةُ الْبَرَاءَةِ، وَلَيْلَةُ الصَّكِّ، وَلَيْلَةُ الْقَدْرِ.


-‘‘কোনো কোনো মুফাসসিরগণ ‘লাইলাতুল মোবারাকা’ দ্বারা ১৫ই শাবান (শবে বরাতকে) কে উদ্দেশ্য করেছেন, শবে বরাতের চারটি নাম রয়েছে,  যেমন-

১. লাইলাতুল মুবারাকা বা বরকত পূর্ণ রাত,  

২. লাইলাতুল বারায়াত তথা মুক্তি বা ভাগ্যের রাত. 

৩. লাইলাতুল ছক্কি বা ক্ষমা স্বীকৃতি দানের রাত এবং 

৪. লাইলাতুল ক্বদর বা ভাগ্য রজনী।’’ 


(শাওকানী, ফতহুল কাদীর, ৪/৬৫৩ পৃ.)


❏ আল্লামা মানাভী (رحمة الله) লিখেন-


 ولها أربعة أسماء الليلة المباركة وليلة البراءة وليلة الصك وليلة الرحمة


-‘‘শবে বরাতের চারটি নাম রয়েছে,  যেমন- 

১. লাইলাতুল মুবারাকা বা বরকত পূর্ণ রাত, 

২. লাইলাতুল বারায়াত তথা মুক্তি বা ভাগ্যের রাত. 

৩. লাইলাতুল ছক্কি বা ক্ষমা স্বীকৃতি দানের রাত এবং 

৪. লাইলাতুল ক্বদর বা ভাগ্য রজনী।’’ 


(মানাভী, ফয়যুল কাদীর, ২/২৬৩ পৃ. হা/১৭৯৮)



লাইলাতুল বারাআত একটি সমীক্ষা পবিত্র কুরআনের আলোকে:


আল-কুরআনে আরেকটি একটি রজনীর কথা উলে­খ রয়েছে, তাকে বলা হয়েছে ‘লাইলাতুল মুবারাকা’ বা বরকতময়ী, কল্যাণময়ী রাত। যেমন-


❏ আল্লাহ্ তা‘য়ালা ইরশাদ করেন-


إِنَّا أَنْزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةٍ مُبَارَكَةٍ إِنَّا كُنَّا مُنْذِرِينَ


-‘‘আমি তাকে (কুরআন মাজীদকে) নাযিল করেছি এক বরকতময় রাতে,  নিশ্চয়ই আমি সতর্ককারী।’’ 


(সূরা : দুখান,  আয়াত,  ৩)



(১-৩) রঈসুল মুফাস্সিরীন হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه),  হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) এবং হযরত ইকরামা (رضي الله عنه) সহ বহু সংখ্যক সাহাবী তাবেয়ীনদের মতে উক্ত আয়াতে ‘লাইলাতুল মুবারাকা’ দ্বারা ১৫ই শাবান তথা চৌদ্দই শাবান দিবাগত রাত (শবে বারাআত) কে বুঝানো হয়েছে।


❏ তাফসিরে কাশফুল আসরারে রয়েছে-


عن عكرمة الليلة المباركة ليلة النصف من شعبان انزل الله جبرائيل الى السماء الدنيا فى تلك الليلة حتى املى القران على الكتبة وسماها مباركة لانها كثيرة  الخير والبركة لما ينزل فيها من الرحمة ويجاب فيها من الدعوة- 


-‘‘হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه)-এর ছাত্র হযরত ইকরামা (رضي الله عنه) বলেন, ‘লাইলাতুল মুবারাকা’ দ্বারা শাবান মাসের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাতকে বুঝানো হয়েছে, আল্লাহ্ তা‘য়ালা হযরত জিবরাঈল () কে ঐ রাতে প্রথম আবৃত্তি করতে পাঠান। এই রাতকে মুবারক নাম রাখার কারণ হলো এতে কল্যাণ,  বরকত ও আল্লাহর রহমত নাযিল হয় এবং রাতে দোয়া কবুল হয়।’’  ১৯

➥{তাফসীরে কাশফুল আসরার, ৯/৯৮.পৃ. }



❏ মুবারাকা বা বরকতময় বলার কারণ কি এ প্রসঙ্গে আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী (رحمة الله) লিখেছেন, 


الليلة المباركة لكثرة خيرها وبركتها على العاملين فيها الخير وان بركات جماله تعالى تصل الى كل ذرة من العرش الى الثرى كما فى ليلة القدر


-‘‘লাইলাতুল মুবারাকা বলা হয় এ রাতে অনেক খায়ের ও বরকত নাযিল হয়। সৃষ্টির প্রতি আল্লাহর সৌন্দর্যের বরকত আরশের প্রতি কণা থেকে ভূতলের গভীরে পৌঁছে যেমনটি শবে কদরের মধ্যে হয়ে থাকে।’’  ২০

➥{আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী : তাফসীরে রুহুল বায়ান : ৮/৪০২ পৃ.}



(৪) আল্লামা ইমাম সুয়ূতি (رحمة الله) আরও বলছেন, 


وَأخرج ابْن زَنْجوَيْه والديلمي عَن أبي هُرَيْرَة أَن رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم قَالَ: تقطع الْآجَال من شعْبَان إِلَى شعْبَان حَتَّى أَن الرجل لينكح ويولد لَهُ وَقد خرج اسْمه فِي الْمَوْتَى


-‘‘ইমাম ইবনে যানজুয়াই  এবং দায়লামী (رحمة الله) হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, নিশ্চয় রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, এক শাবান থেকে অপর শাবান পর্যন্ত মানুষের হায়াত চূড়ান্ত করা হয়। এমনকি একজন মানুষ বিবাহ করে এবং তার সন্তান হয় অথচ তার নাম মৃতের তালিকায় উঠে যায়।’’  ২১

➥{আল্লামা ইমাম জালালুদ্দীন সূয়তী : তাফসীরে দুররে মানসুর : ৭/৪০১ পৃ. দারুল ফিকর}



(৫) ইমাম কুরতুবী (رحمة الله) এই আয়াতের তাফসীরে লিখেছেন-


لَيْلَةُ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ، وَلَهَا أَرْبَعَةُ أَسْمَاءٍ: اللَّيْلَةُ الْمُبَارَكَةُ، وَلَيْلَةُ الْبَرَاءَةِ، وَلَيْلَةُ الصَّكِّ، وَلَيْلَةُ الْقَدْرِ. وَوَصَفَهَا بِالْبَرَكَةِ لِمَا يُنْزِلُ اللَّهُ فِيهَا عَلَى عِبَادِهِ مِنَ الْبَرَكَاتِ وَالْخَيْرَاتِ وَالثَّوَابِ.


-‘‘লাইলাতুল মুবারাকা দ্বারা অর্ধ শাবান (শবে বরাত) এর রাতকে বুঝানো হয়েছে। এই ১৫ই শাবানের রাত তথা শবে বরাতের চারটি নাম রয়েছে,  যেমন-

১. লাইলাতুল মুবারাকা বা বরকত পূর্ণ রাত,  

২. লাইলাতুল বারায়াত তথা মুক্তি বা ভাগ্যের রাত,

৩. লাইলাতুল ছক্কি বা ক্ষমা স্বীকৃতি দানের রাত এবং

৪. লাইলাতুল ক্বদর বা ভাগ্য রজনী।’ 

আর শবে বরাতকে বরকতের সঙ্গে এই জন্য সম্বন্ধ করা হয়েছে যেহেতু আল্লাহ্ পাক এই শবে বরাতে বান্দাদের প্রতি বরকত,  কল্যাণ এবং পূণ্য দানের জন্য দুনিয়ায় কুদরতীভাবে নেমে আসেন অর্থাৎ- খাস রহমত নাযিল করেন।’’  ২২

➥{ইমাম কুরতুবী : তাফসীরে কুরতুবী : ১৬/১২৬ পৃ.}



(৬) ইমাম কুরতবী (رحمة الله) আরও বলেন, 


وَقَالَ عِكْرِمَةُ: هِيَ لَيْلَةُ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ


-‘‘বিখ্যাত তাবেয়ী হযরত ইকরামা (رضي الله عنه) তিনি বলেন, লাইলাতুল মুবারাকা দ্বারা এখানে অর্ধ শাবান (শবে বরাতের) এর রাতকেই বুঝানো হয়েছে।’’  ২৩ 

➥{ইমাম কুরতুবী : তাফসীরে কুরতবী : ১৬/১২৬ পৃ.}



❏ তিনি আরও সামনে গিয়ে লিখেন-


وَقَالَ عكرمة: الليلة المباركة ها هنا لَيْلَةُ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ.


-‘‘এবং তাবেয়ী ইকরামা (رحمة الله) বলেন, লাইলাতুল মোবারাক হল শাবানের ১৫ তারিখ (শবে বরাত)।’’  ২৪

➥{ইমাম কুরতুবী : তাফসীরে কুরতবী : ১৬/১২৬ পৃ.}



(৭) ইমাম কুরতুবী (رحمة الله) আরও লিখেন-


وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ أَيْضًا: أَنَّ اللَّهَ تَعَالَى يَقْضِي الْأَقْضِيَةَ فِي لَيْلَةِ نِصْفِ شَعْبَانَ، وَيُسَلِّمُهَا إِلَى أَرْبَابِهَا فِي لَيْلَةِ الْقَدْرِ.


-‘‘প্রখ্যাত মুজতাহিদ সাহাবী, রঈসুল মুফাস্সির হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ্ তা‘য়ালা অর্ধ শাবান (শবে বরাতে) এর রাত্রিতে যাবতীয় বিষয়ের ভাগ্য তালিকা প্রস্তুত করেন। আর কদরের রাত্রিতে ঐ ভাগ্য তালিকা বাস্তবায়নকারী ফেরেশতাদের হাতে পেশ করেন।’’  ২৫

➥{ইমাম কুরতুবী: তাফসীরে কুরতুবী : ২০/১৩০ : পৃ:}



(৮) আল্লামা সৈয়দ মাহমুদ আলূসী (رحمة الله) “তাফসীরে রুহুল মায়ানীতে’’ সূরা দুখানের উক্ত আয়াতের তাফসীরে বলেন-


ووصف الليلة بالبركة لما أن إنزال القرآن مستتبع للمنافع الدينية والدنيوية بأجمعها أو لما فيها من تنزل الملائكة والرحمة وإجابة الدعوة وفضيلة العبادة أو لما فيها من ذلك وتقدير الأرزاق وفصل الأقضية كالآجال وغيرها وإعطاء تمام الشفاعة له عليه الصلاة والسلام، وهذا بناء على أنها ليلة البراءة، فقد روي أنه صلّى الله عليه وسلّم سأل ليلة الثالث عشر من شعبان في أمته فأعطى الثلث منها ثم سأل ليلة الرابع عشر فأعطى الثلثين ثم سأل ليلة الخامس عشر فأعطى الجميع إلا من شرد على الله تعالى شراد البعير


-‘‘লাইলাতুল মুবারাকা বরকতের রাত হিসেবে এবং দুনিয়াবী বহুবিদ কল্যাণের জন্য নাযিলের সিদ্ধান্ত দেয়া হয়েছে। ঐ রাতে সমস্ত ফেরেশতারা অবতরণ করেন এবং রহমত নাযিল হয়, বান্দাদের দোয়া কবুল করা হয়। বান্দাদের রিযিক বন্টন করা হয় এবং সমস্ত কিছুর ভাগ্য সমূহ পৃথক করা হয়। যেমন মৃত্যু এবং অন্যান্য সব বিষয়ের। এবং রাসূল (ﷺ) এর সমস্ত বিষয়ের সুপারিশ কবুল করা হয়। আর এই বরকতের রাতকে বরাতের রাত হিসেবেও নাম করণ করা হয়। যেহেতু এ সম্পর্কে হাদিস শরীফে বর্ণিত আছে যে,  আখিরী রাসূল (ﷺ) তিনি শাবান মাসের ১৩ তারিখ রাতে স্বীয় উম্মতের ক্ষমার জন্য আল্লাহ্ পাকের কাছে প্রার্থনা করেন। অতঃপর অনুরূপভাবে ১৪ই শাবান তথা  শবে বরাতেও মহান আল্লাহ্ পাকের কাছে হুযূর পাক (ﷺ) স্বীয় উম্মতের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন, তখন মহান আল্লাহ্ পাক তিনি শবে বরাতে তার উম্মতের দুই তৃতীয়াংশ উম্মতকে ক্ষমা করেন। অতঃপর অনুরূপভাবে ১৫ই শাবান তথা শবে বরাতেও মহান আল্লাহ্ পাকের কাছে হুযূর পাক (ﷺ) স্বীয় উম্মতের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন, তখন মহান আল্লাহ্ পাক তিনি সেই শবে বরাতে তার সমস্ত উম্মতগণকে ক্ষমা করে দেন। তবে ওই সমস্ত উম্মত ব্যতীত যারা মহান আল্লাহ্ পাক এর ব্যাপারে চরম বিভ্রান্তিতে পতিত হয়েছে।’’  ২৬

➥{আল্লামা আলুসী বাগদাদী: তাফসীরে রুহুল মায়ানী : ১৩/১১১ পৃ:}



(৯) ইমাম খাযেন (رحمة الله) রচিত ‘তাফসীরে লুবাবুত তাভীল’ এ উক্ত আয়াতের তাফসীরে উলে­খ আছে-


فِيها أي في تلك الليلة المباركة يُفْرَقُ أي يفصل كُلُّ أَمْرٍ حَكِيمٍ أي محكم....... وقيل هي ليلة النصف من شعبان يبرم فيها أمر السنة وينسخ الأحياء من الأموات، وروى البغوي بسنده أن النبي صلّى الله عليه وسلّم قال تقطع الآجال من شعبان إلى شعبان حتى إن الرجل لينكح ويولد له وقد خرج اسمه في الموتى وعن ابن عباس إن الله يقضي الأقضية في ليلة النصف من شعبان ويسلمها إلى أربابها في ليلة القدر


-‘‘ওই মুবারক তথা বরকত পূর্ণ রাত্রিতে অর্থাৎ- শবে বরাতের প্রত্যেক হিকমত পূর্ণ যাবতীয় বিষয় সমূহের ফায়সালা করা হয়। ......কোনো কোনো মুফাস্সিরগণ বলেছেন, লাইলাতুল মুবারাকা দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে অর্ধ শাবান তথা (শবে বরাত) এর রাত। এই শবে বরাতে আগামী এক বৎসরের যাবতীয় বিষয়ের ভাগ্য তালিকা প্রস্তুত করা হয় এবং তালিকা প্রস্তুত করা হয় মৃত ও জীবীতদের। ওই তালিকা থেকে কোন কম বেশি করা হয় না অর্থাৎ- পরিবর্তন হয় না। ইমাম বাগভী (رحمة الله) সনদ সহকারে রাসূল (ﷺ) হতে বর্ণনা করেন, তিনি ইরশাদ করেছেন, এক শাবান তথা ১৫ই শাবান থেকে পরবর্তী ১৫ই শাবান পর্যন্ত মৃতদের তালিকা প্রস্তুত করা হয়। এমনকি লোকেরা ওই বৎসরে বিবাহ, তার থেকে যে সন্তান জন্মগ্রহণ করবে, সেই বৎসর কখন মৃত্যু বরণ করবে, তার তালিকাও শবেই বরাতে প্রস্তুত করা হয়। প্রখ্যাত সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হযরত রাসূলে পাক (ﷺ) এর থেকে বর্ণনা করেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পাক অর্ধ-শাবানের রাত তথা শবেই বরাতে যাবতীয় বিষয়ে ফায়সালা করে থাকেন। আর শবে কদরে ওই নির্ধারিত ফায়সালা বাস্তবায়ন করার জন্য বাস্তবায়নকারী ফিরিশতাদের হাতে পেশ করেন।’’  ২৭

➥{ইমাম খাযেন, তাফসীরে লুবাবুত তাভীল : ৪/১১৬ পৃ., দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন।}



(১০) গাউসে সাকালাইন শায়খ আব্দুল কাদের জিলানী (رحمة الله) এ আয়াতের তাফসিরে লিখেন-


﴿فِي لَيْلَةٍ مُبَارَكَةٍ﴾ هى ليلة النصف من شعبان وهى ليلة البراءة


-‘‘লাইলাতুল মোবারাক হল শাবানের ১৫ তারিখ (শবে বরাত) এর রাত।’’ 


(শায়খ আব্দুল কাদির জিলানী, গুনিয়াতুত তালেবীন,  ৩৪৩ পৃ. দারুল কুতব ইলমিয়্যাহ,  বয়রুত,  লেবানন।)



(১১) মহিউস্ সুন্নাহ ইমাম বাগভী (رحمة الله) লিখেন-


وَقَالَ آخَرُونَ هِيَ لَيْلَةُ النِّصْفِ من شعبان.


-‘‘অনেক মুফাস্সিরীন বলেছেন, লাইলাতুল মোবারাকা সেটি হল শাবানের ১৫ তারিখের রাত (শবে বরাত)।’’ 


(ইমাম বাগভী, মা‘আলিমুত তানযিল,  ৪/১৭২ পৃ.) 



(১২) তিনি আরও উল্লেখ করেন-


وَقَالَ عِكْرِمَةُ: هِيَ لَيْلَةُ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ يُبْرَمُ فِيهَا أَمْرُ السَّنَةِ وَتُنْسَخُ الْأَحْيَاءُ مِنَ الْأَمْوَاتِ فَلَا يُزَادُ فِيهِمْ أَحَدٌ وَلَا يُنْقَصُ مِنْهُمْ أحد.


-‘‘তাবেয়ী ইকরামা (رحمة الله) বলেন, লাইলাতুল মুবারাকা দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে অর্ধ শাবান তথা (শবে বরাত) এর রাত। এই শবে বরাতে আগামী এক বৎসরের যাবতীয় বিষয়ের ভাগ্য তালিকা প্রস্তুত করা হয় এবং তালিকা প্রস্তুত করা হয় মৃত ও জীবিতদের। ওই তালিকা থেকে কোন কম বেশি করা হয় না অর্থাৎ- পরিবর্তন হয় না।’’ 


(ইমাম বাগবী, তাফসিরে মা‘লিমুত তানযিল, ৪/১৭৩ পৃ.) 



(১৩) তিনি আরও উল্লেখ করেন-


وَرَوَى أَبُو الضُّحَى عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عنهما: أَنَّ اللهَ يَقْضِي الْأَقْضِيَةَ فِي لَيْلَةِ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ، وَيُسَلِّمُهَا إِلَى أَرْبَابِهَا فِي لَيْلَةِ الْقَدْرِ.


-‘‘তাবেয়ী আবূ জুহা (رحمة الله) রঈসুল মুফাসসিরীন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পাক অর্ধ-শাবানের রাত তথা শবেই বরাতে যাবতীয় বিষয়ে ফায়সালা করে থাকেন। আর শবে কদরে ওই নির্ধারিত ফায়সালা বাস্তবায়ন করার জন্য বাস্তবায়নকারী ফিরিশতাদের হাতে পেশ করেন।’’ 


(ইমাম বাগভী, তাফসিরে মা‘লিমুত তানযিল, ৪/১৭৪ পৃ.)



(১৪) ইমাম ছালাভী (رحمة الله) লিখেন-


وقال الآخرون: هي ليلة النصف من شعبان.


-‘‘অনেক মুফাস্সিরীন বলেছেন, লাইলাতুল মোবারাকা হল শাবানের ১৫ তারিখের রাত (শবে বরাত)।’’ 


(ইমাম ছালাভী, তাফসিরে ছালাভী, ৮/৩৪৯ পৃ.)



(১৫) ইমাম ইবনে জারীর আত-তবারী (رحمة الله) লিখেন-


وَقَالَ آخَرُونَ: بَلْ هِيَ لَيْلَةُ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ


-‘‘অনেক মুফাস্সিরীন বলেছেন, লাইলাতুল মোবারাকা হল শাবানের ১৫ তারিখের রাত (শবে বরাত)।’’ 


(ইমাম তাবারী, তাফসিরে তবারী, ২১/৬ পৃ.)



(১৬) ইমাম আবু হাইয়্যান আন্দুলুসী (رحمة الله) এ আয়াতের তাফসিরে লিখেন-


وَقَالَ عِكْرِمَةُ وَغَيْرُهُ: هِيَ ليلة النصف من شعبان


-‘‘তাবেয়ী ইকরামা (رحمة الله)সহ আরও অনেকে বলেছেন, লাইলাতুল মোবারাকা সেটি হল শাবানের ১৫ তারিখের রাত (শবে বরাত)।’’ 


(তাফসিরে বাহারুল মুহিত, ৯/৩৯৭ পৃ.)



(১৭) ইমাম বাগভী (رحمة الله) আরও বলেন-


وَرَوَى أَبُو الضُّحَى عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عنهما: أَنَّ اللَّهَ يَقْضِي الْأَقْضِيَةَ فِي لَيْلَةِ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ، وَيُسَلِّمُهَا إِلَى أَرْبَابِهَا فِي لَيْلَةِ الْقَدْرِ.


-‘‘প্রখ্যাত সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত আছে যে, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ্ তা‘য়ালা অর্ধ শাবান (শবে বরাতে) এর রাত্রিতে যাবতীয় বিষয়ের ভাগ্য তালিকা প্রস্তুত করেন। আর কদরের রাত্রিতে ঐ ভাগ্য তালিকা বাস্তবায়নকারী ফেরেশতাদের হাতে পেশ করেন।’’  ২৮

➥{ইমাম বাগভী: তাফসীরে মা‘লিমুত তানযিল : ৪/১৭৪ : পৃ., তাফসিরে ছালাভী, ১০/২৪৮ পৃ., তাফসিরে লুবাব ফি উলূমিল কিতাব, ১৭/৩১১ পৃ., তাফসিরে মাযহারী, ৮/৩৬২ পৃ.}


(১৮) ইমাম আবুল হাসান ওয়াহেদী নিশাপুরী (ওফাত. ৪৬৮ হি.) লিখেন-


وقيل: ليلة النِّصف من شعبان


-‘‘কোনো কোনো মুফাসসির বলেছেন, লাইলাতুল মোবারাকা হল শাবানের ১৫ তারিখের রাত (শবে বরাত)।’’ 


(ইমাম ওয়াহেদী, তাফসিরে ওয়াহেদী, ১/৯৮১ পৃ.)



(১৯) ইমাম আবু মুজাফফর সাম‘আনী (ওফাত. ৪৮৯ হি.) তার তাফসিরে লিখেন-


وَالْقَوْل الثَّانِي: قَول عِكْرِمَة، وَهُوَ أَنَّهَا لَيْلَة النّصْف من شعْبَان، وسماها مباركة لِكَثْرَة الْخَيْر فِيهَا. وَالْبركَة: نَمَاء الْخَيْر، ونقيضة الشؤم: نَمَاء الشَّرّ. وَقيل: مباركة لِأَنَّهُ يُرْجَى فِيهَا إِجَابَة الدُّعَاء.


-‘‘এ আয়াতের লাইলাতুল মোবারাকা এর বিষয়ে দ্বিতীয় মত হলো, তাবেয়ী হযরত ইকরামা (رحمة الله)-এর মত, তিনি বলেছেন, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হল, শাবানের ১৫ তারিখের রাত (শবে বরাত)। এ রাতের নাম এজন্য লাইলাতুল মোবারাকা বলা হয়েছে যে, এ রাতে অনেক কল্যান নিহীত রয়েছে।.........কেউ কেউ এ রাতকে লাইলাতুল মোবারাক বলার কারণ হিসেবে বলেছেন, এ রাতে দোয়া কবুল হওয়ার আশা করা যায় একজন্য।’’ 


(ইমাম সাম‘আনী, তাফসিরে সাম‘আনী, ৫/১২১ পৃ.)



(২০) বিখ্যাত মুফাসসির ইমাম মাওয়ারিদী (رحمة الله) লিখেন-


[فِي لَيلَةِ مُّبَارَكَةٍ] فيها قولان: أحدهما: أنها ليلة النصف من شعبان؛ قاله عكرمة.


-‘‘এ আয়াতের লাইলাতুল মোবারাকা এর বিষয়ে মুফাস্সিরগণের দুটি মত রয়েছে, একটি মত হল, শাবানের ১৫ তারিখের রাত (শবে বরাত), যেমনটি তাবেয়ী ইকরামা (رحمة الله) বলেছেন।’’ 


(ইমাম মাওয়ারিদী, তাফসিরে মাওয়ারিদী, ৫/২৪৪ পৃ.)



(২১) ইমাম নাসাফী (رحمة الله) লিখেন-


[إِنَّآ أنزلناه فِى لَيْلَةٍ مباركة] أي ليلة القدر أو ليلة النصف من شعبان


-‘‘তাবেয়ী ইকরামা (رحمة الله)সহ আরও অনেকে বলেছেন, লাইলাতুল মোবারাকা হল লাইলাতুল ক্বদর অথবা শাবানের ১৫ তারিখের রাত (শবে বরাত)।’’ 


(ইমাম নাসাফী, তাফসিরে নাসাফী, ৩/২৮৬ পৃ.)


(২২) তাফসিরে ইয বিন আব্দুস সালামে রয়েছে-


[لَيْلَةٍ مُّبَارَكَةٍ] لما تنزل فيها من الرحمة، أو لما يجاب فيها من الدعاء ليلة النصف من شعبان


-‘‘(লায়লাতুল মোবারাক) এ রাতে রহমত নাযিল হয় অথবা এ রাতে দোয়া কবুল হয়, আর সেটি হল শাবানের ১৫ তারিখের রাত (শবে বরাত)।’’ 


(তাফসিরে ইয বিন আব্দুস সালাম, ৩/১৬৫ পৃ.)



(২৩) ইমাম আবু হাফস সিরাজুদ্দীন দামেস্কী (رحمة الله) লিখেন-


[لَيْلَةٍ مُّبَارَكَةٍ] لما تنزل فيها من الرحمة، أو لما يجاب فيها من الدعاء ليلة النصف من شعبان


-‘‘(লায়লাতুল মোবারাক) এটা সেই রাতে যে রাতে রহমত নাযিল হয় অথবা এ রাতের দোয়া কবুল হয়, আর সেটি হল শাবানের ১৫ তারিখের রাত (শবে বরাত)।’’ 


(তাফসিরে লুবাব ফি উলূমিল কিতাব, ১৭/৩০৮ পৃ.)



(২৪) ইমাম ইবনে কাসির (رحمة الله) লিখেন-


إِنَّهَا لَيْلَةُ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ كَمَا رُوِيَ عَنْ عِكْرِمَةَ


-‘‘লাইলাতুল মোবারাকা হল শাবানের ১৫ তারিখের রাত (শবে বরাত), যেমনটি তাবেয়ী ইকরামা (رحمة الله) হতে বর্ণিত আছে।’’ 


(তাফসিরে ইবনে কাসির, ৭/২২৫ পৃ., দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন।)



(২৫) আহলে হাদিসদের ইমাম শাওকানী লিখেন-


قَالَ عِكْرِمَةُ: اللَّيْلَةُ الْمُبَارَكَةُ هُنَا لَيْلَةُ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ.


-‘‘তাবেয়ী ইকরামা (رحمة الله) বলেন, লাইলাতুল মোবারাকা সেটি হল শাবানের ১৫ তারিখের রাত (শবে বরাত)।’’ 


(শাওকানী, ফতহুল কাদীর, ৪/৬৫৩ পৃ.)



(২৬) ইমাম ফখরুদ্দীন রাজী (رحمة الله) লিখেন-


وَقَالَ عِكْرِمَةُ وَطَائِفَةٌ آخَرُونَ: إِنَّهَا لَيْلَةُ الْبَرَاءَةِ، وَهِيَ لَيْلَةُ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ


-‘‘তাবেয়ী ইকরামা (رحمة الله)সহ আরও একজামাত মুফাস্সিরগণ বলেছেন, লাইলাতুল মোবারাকা সেটি হল শাবানের ১৫ তারিখের রাত (শবে বরাত)।’’ 


(ইমাম ফখরুদ্দীন রাজী, তাফসিরে কাবীর, ২৭/৬৫২ পৃ.)



(২৭) ইমাম ইবনে জাওযী (رحمة الله) তার তাফসিরে লিখেন-


والثاني: أنها ليلة النصف من شعبان، قاله عكرمة.


-‘‘এ আয়াতে ‘লাইলাতুল মোবারাকা’ এর বিষয়ে মুফাস্সিরগণের দ্বিতীয় মত হলো, এর দ্বারা শাবানের ১৫ তারিখের রাত (শবে বরাত) উদ্দেশ্য, এমনটি তাবেয়ী হযরত ইকরামা (رحمة الله)-এর মত।’’ 


(ইমাম ইবনে জাওযী, যাদুল মাইসীর ফি উলূমিত তাফসির, ৪/৮৭ পৃ.)



(২৮) আহলে হাদিস মোবারকপুরী লিখেন-


وَقِيلَ هِيَ لَيْلَةُ النصف من شعبان


-‘‘কোনো কোনো মুফাসসির বলেছেন, লাইলাতুল মোবারাকা হল শাবানের ১৫ তারিখের রাত (শবে বরাত)।’’  


(মোবারকপুরী, তুহফাতুল আহওয়াজী, ৩/৩৬৭ পৃ.)



(২৯) আহলে হাদিস মোবারকপুরী আরও লিখেন-


وَفِي الْمِرْقَاةِ شَرْحِ الْمِشْكَاةِ قَالَ جَمَاعَةٌ مِنَ السَّلَفِ إِنَّ الْمُرَادَ فِي الْآيَةِ هِيَ لَيْلَةُ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ


-‘‘মেরকাত শরহে মিশকাত গ্রন্থে আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) বলেছেন, এক জামাত সালফে সালেহীনগণ বলেছেন, এ আয়াতের লায়লাতুল মোবারাকা দ্বারা উদ্দেশ্য শাবানের ১৫ তারিখ রাত (শবে বরাত।’’ 


(তুহফাতুল আহওয়াজী, ৩/৩৬৭ পৃ.)



পবিত্র শবে বরাত হাদিসের আলোকে


১নং হাদিস পর্যালোচনা:


حَدَّثَنَا الْحَسَنُ بْنُ عَلِيٍّ الْخَلَّالُ قَالَ: حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّزَّاقِ قَالَ: أَنْبَأَنَا ابْنُ أَبِي سَبْرَةَ، عَنْ إِبْرَاهِيمَ بْنِ مُحَمَّدٍ، عَنْ مُعَاوِيَةَ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ جَعْفَرٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ عَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ ؓ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ: إِذَا كَانَتْ لَيْلَةُ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ، فَقُومُوا لَيْلَهَا وَصُومُوا نَهَارَهَا، فَإِنَّ اللهَ يَنْزِلُ فِيهَا لِغُرُوبِ الشَّمْسِ إِلَى سَمَاءِ الدُّنْيَا، فَيَقُولُ: أَلَا مِنْ مُسْتَغْفِرٍ لِي فَأَغْفِرَ لَهُ أَلَا مُسْتَرْزِقٌ فَأَرْزُقَهُ أَلَا مُبْتَلًى فَأُعَافِيَهُ أَلَا كَذَا أَلَا كَذَا، حَتَّى يَطْلُعَ الْفَجْرُ وفى رواية حتى تطلع الشمس- 


-‘‘হযরত আলী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত। রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, যখন শাবানের চৌদ্দ তারিখ আসবে, সে রাতে তোমরা কিয়াম করবে (নামায ইবাদত বন্দেগীতে কাটাবে) এবং দিনে রোযা রাখবে, আল্লাহ্ তা‘য়ালার রহমত এ রাতে সূর্যাস্তের সাথে সাথে প্রথম আকাশে অবতরণ করেন এবং বলতে থাকেন,  কেউ আছ কি? ক্ষমা চাইলে আমি গুনাহ ক্ষমা করে দেবো। কেউ রোগাগ্রস্ত আছ কি? (রোগ মুক্তি প্রার্থনা করলে) আমি আরোগ্য দান করব। কেউ রিযিক চাওয়ার আছ কি? আমি তোমাকে রিযিক (জীবন উপকরণ) দেব। কেউ আছ কি? কেউ আছ কি? এভাবে ফযর পর্যন্ত ঘোষণা আসতে থাকে। কোন কোন বর্ণনায় রয়েছে সূর্যাদোয় পর্যন্ত ঘোষণা চলতে থাকে।’’  ২৯

➥{ইবনে মাজাহ : আস্-সুনান : ১/৪৪৪ : হা/১৩৮৮ (২) ইমাম বায়হাকী : শুয়াবুল ঈমান : ৫/৩৫৪ পৃ. হা/৩৮২২ (৩) ইমাম বায়হাকী : ফাযায়েলুল ওয়াক্ত : হা/৩৩ (৪) দায়লামী : আল ফিরদাউস : ১/২৫৯ : হা/১০০৭ (৫) ইমাম মুনযির : তারগীব ওয়াত তারহীব : ২/৭৫ : হা/১৫৫ (৬) ইমাম খতিব তিবরিযী : মিশকাতুল মাসাবীহ : ২/২৪৫পৃ. : হা/১২৩৩ (৭) আল্লামা ইমাম আবু বকর কেনানী : মিসবাহুয যুজ্জাহ: ২/১০ পৃ. হা/৮০ (৮) আল্লামা আবু বকর কেনানী : মিসবাহুয যুজ্জাহ: ২/১০ : হা/৪৯১ (৯) মোল্লা আলী ক্বারী : মিরকাতুল মাফাতীহ : ৩/১৯৫ : হা/১৩০৮ (১০) সুয়ূতি : তাফসীরে র্দুররে মানসূর, : ৭/৪০২ পৃ. দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত (১১) শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী : আশিআতুল লুমআত : ৪/২১২ পৃ: হা/১২৩৩ (১২) ইমাম তিব্বী : শরহে মেশকাত : ৩/৪৪৮ পৃ: হা/১২৩৩ (১৩) ইমাম কুরতুবী : তাফসীরে কুরতুবী : ১৬/১২৬-১২৭ পৃ.(১৪) ইমাম ইবনে হিব্বান : আস-সহীহ : হা/১৩৮৮ (১৫) ইমাম তায়মী ইস্পাহানী, তারগীব ওয়াত তারহীব,  ২/৩৯৭ পৃ. হা/১৮৬০ (১৬) ইরাকী, তাখরীজে ইহইয়া, ১/২৪০ পৃ. শাওকানী,  ফাওয়াইদুল মাওদ্বুআত, ১/৫১ পৃ. (১৭) মাহমুদ মুহাম্মদ খলিল, মুসনাদে জামে, ১৩/২১৬ পৃ. হা/১০০৭০ (১৮) বদরুদ্দীন আইনী, উমদাতুল ক্বারী, ১১/৮২ পৃ. (১৯) মোবারকপুরী, মের‘আত, ৪/৩৪৩ পৃ. হা/১৩১৬ (২০) ইবনে জাওযী, আল-ইলালুল মুতানাহিয়্যাত, ২/৭১ পৃ. হা/৯২২ (২১) তাহের পাটনী, তাযকিরাতুল মাওদ্বুআত, ১/৪৫ পৃ. (২২) আবদুল হাই লাখনৌভী, ১/৮১ পৃ. (২৩) কাস্তাল্লানী, মাওয়াহেবে লাদুন্নীয়া, ৩/৩০০ পৃ. (২৪) জুরকানী, শরহুল মাওয়াহেব, ১০/৫৬১ পৃ. (২৫) ইমাম রমলী, ফাতওয়ায়ে রমলী, ২/৭৯ পৃ. (২৬) ইবনে হাজার মক্কী, ফাতওয়ায়ে ফিকহিয়্যাতুল কোবরা, ২/৮০ পৃ. (২৭) মুত্তাকী হিন্দী, কানযুল উম্মাল, ১২/৩১৪ পৃ. হা/৩৫১৭৭ (২৮) সুয়ূতি, জামেউস সগীর, ১/১৬৬৫ পৃ. হা/১৬৬৫ (২৯) জামিউল আহাদিস, ৩/৪৮৩ পৃ. হাদিস,  ২৬২১ (৩০) শায়খ ইউসুফ নাবহানী, ১/১৩৮পৃ. হাদিস,  ১৪১৮ (৩১) দায়লামী, আল-ফিরদাউস, ১/২৫৯ পৃ. হা/১০০৭ (৩২) বায়হাকী, ফাযায়েলুল ওয়াক্ত, ১/১২২ পৃ. হা/২৪ (৩৩) আলবানী, সিলসিলাতুল আহাদিসুদ্-দ্বঈফাহ, ৫/১৫৪ পৃ. হা/২১৩২ (৩৪) আবদুল আযিয বিন বায, মাজমূউল ফাতওয়া,  ১/১৯০ পৃ.}



বাতিল পন্থীদের  আপত্তি ও নিষ্পত্তি:


উক্ত হাদিসে আহলে হাদিসদের যে রাবী সম্পর্কে আপত্তি তিনি হচ্ছেন হাফেযুল কাবীর, ইমাম আব্দুর রাজ্জাক (رحمة الله)-এর উস্তাদ ‘ইবনু আবি সাবরা’। ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর তার লিখিত ‘হাদীসের নামে জালিয়াতি’ গ্রন্থের ৫৪৪ পৃষ্ঠায় উক্ত রাবীকে ব্যবহার করে এটি সম্পর্কে লিখেছেন-‘‘সনদটি বানোয়াট।’’ তারা বলে থাকেন তিনি নাকি জাল হাদিস বানাতেন। অধিকাংশ মুহাদ্দিসগণ নাকি তার সমালোচনা করেছেন। এখন আমরা দেখবো প্রকৃতপক্ষে তার সম্পর্কে কী বলা হয়েছে রিজাল শাস্ত্রের কিতাবে। 


❏ ইমাম যাহাবী (رحمة الله) তার জীবনীতে লিখেন-


الفَقِيْهُ الكَبِيْرُ، قَاضِي العِرَاقِ، أَبُو بَكْرٍ بنُ عَبْدِ اللهِ بنِ مُحَمَّدِ بنِ أَبِي سَبْرَةَ بنِ أَبِي رُهْمٍ - وَكَانَ جَدُّ أَبِيْهِ أَبُو سَبْرَةَ بَدْرِيّاً مِنَ السَّابِقِيْنَ المُهَاجِرِيْنَ - ابْنِ عَبْدِ العُزَّى القُرَشِيُّ، ثُمَّ العَامِرِيُّ.


تُوُفِّيَ: زَمَنَ عُثْمَانَ -رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا-


-‘‘তিনি অনেক বড় ফকীহ, ইরাকের কাযি ছিলেন......তার দাদা বদরী মুহাজীর সাহাবী ছিলেন, তিনি হযরত উসমান (رضي الله عنه)-এর যামানায় ওফাত বরণ করেন।’’  ৩০ 

➥{ইমাম যাহাবী : মিযানুল ইতিদাল : ৪/৪৬১ পৃ. রাবী নং- ১০৫১৭ এবং সিয়ারু আলামিন নুবালা, ৭/৩৩০ পৃ. ক্রমিক. ১১৬}



❏ ইমাম ইবনে আদী (رحمة الله)ও তার জীবনীতে লিখেছেন- مفتي المدينة -‘‘ তিনি মদিনা শরীফের মুফতি ছিলেন।’’ 


(ইমাম ইবনে আদী, আল-কামিল, ৯/১৯৭ পৃ. ক্রমিক. ২২০০)


❏ ইমাম যাহাবী (رحمة الله) লিখেন-


قَالَ أَبُو دَاوُدَ: كَانَ مُفْتِي أَهْلِ المَدِيْنَةِ.


-‘‘ইমাম আবু দাউদ (رحمة الله) বলেন, তিনি মদিনা শরীফের মুফতি ছিলেন।’’   ৩১

➥{ইবনে হাজার আসকালানী : তাহযীবুত তাহযীব : ১২/২৭ পৃ., যাহাবী, সিয়ারু আলামিন নুবালা, ৭/৩৩০ পৃ. ক্রমিক. ১১৬, ইমাম যাহাবী : মিযানুল ই’তিদাল : ৪/৪৬১ পৃ. তবে ইমাম বুখারী, ইমাম নাসায়ী আর কেউ কেউ তাকে দুর্বল বলেছেন বলে ইমাম যাহাবী উলে­খ করেছেন।}



সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! ইমাম আবু দাউদ (رحمة الله) এর মত এতবড় একজন ইমাম বললেন, তিনি মদিনা শরীফের মুফতি ছিলেন, আমি বলবো, জাল হাদিস বানোয়াটকারী কীভাবে এতবড় ফকীহ হন? ইমাম যাহাবী (رحمة الله) উলে­খ করেন, উনার ওফাতের পর ইমাম কাযি আবু ইউসূফ (رحمة الله) কাযী বা বিচারপতি হন। 


(যাহাবী, সিয়ারু আলামিন নুবালা, ৭/৩৩১ পৃ. ক্রমিক. ১১৬) 


❏ ইমাম যাহাবী  উলে­খ করেছেন,  তিনি বিখ্যাত তাবেয়ী আ‘রায,  হযরত আতা ইবন রিবাহ (رحمة الله) সহ অনেক তাবেয়ী থেকে হাদিস শুনেছেন এবং তার থেকে ইমাম আব্দুর রাজ্জাক, ইমাম আবু আছেম (رحمة الله) সহ এক জামাত হাদিস শাস্ত্রের ইমামগণ হাদিস শুনেছেন। ইমাম যাহাবী  বলেন,  মুহাদ্দিস আব্বাস দূরী (رحمة الله) তিনি ইমাম ইয়াইয়া ইবন মাঈন  হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন,  লোকেরা তার নিকট হাদিস শ্রবণ করার জন্য গিয়েছিলেন, আর তাদেরকে তিনি বলেছিলেন আমার নিকট সত্তর হাজার হাদিস রয়েছে যা আমি বিখ্যাত তাবেয়ী ইমাম ইবন জুরাইয (رحمة الله) থেকে যেভাবে অর্জন করেছি সেভাবেও তোমরা আমার থেকে গ্রহণ করলে করতে পারো অন্যথায় নয়।’’  ৩২

➥{ইমাম যাহাবী : মিযানুল ইতিদাল : ৪/৪৬১ পৃ. রাবী নং- ১০৫১৭}



❏ ইমাম যাহাবী (رحمة الله) লিখেন-


وَرَوَى: مَعْنٌ، عَنْ مَالِكٍ: قَالَ لِي أَبُو جَعْفَرٍ المَنْصُوْرُ: يَا مَالِكُ! مَنْ بَقِيَ بِالمَدِيْنَةِ مِنَ المَشْيَخَةِ؟ قُلْتُ: ابْنُ أَبِي ذِئْبٍ، وَابْنُ أَبِي سَبْرَةَ، وَابْنُ أَبِي سَلَمَةَ المَاجَشُوْنُ.


-‘‘মুহাদ্দিস মা‘নুন তিনি ইমাম মালেক (رحمة الله) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, একদা খলিফা আবূ জাফর মানসুর (رحمة الله) ইমাম মালেক (رحمة الله) কে লক্ষ্য করে বলেন, মদিনায় মাশায়েখগণের মধ্যে আর কে বাকি আছে? আমি বললাম, ইবনে আবি যিব, ইবনে আবি সাবরাহ, ইবনে আবি সালামা মাজাশুন (রহ.)।’’ 


(যাহাবী, সিয়ারু আলামিন নুবালা, ৭/৩৩১ পৃ. ক্রমিক. ১১৬)


সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! ইমাম মালেক (رحمة الله)-এর মত মহান ইমাম যার প্রশংসা করেছেন অন্যান্যরা যারা তার সমালোচনা তারা বহু পরের, তাই যারা তাঁর সমসাময়িক যুগে ছিলেন তাদের মতই অগ্রগণ্য হবে।


❏ ইমাম যাহাবী  আরও উল্লেখ করেন-


قَالَ أَحْمَدُ بنُ حَنْبَلٍ: قَالَ لِيَ الحَجَّاجُ:

قَالَ لِي ابْنُ أَبِي سَبْرَةَ: عِنْدِي سَبْعُوْنَ أَلفَ حَدِيْثٍ فِي الحَلاَلِ وَالحَرَامِ.


-‘‘ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (رحمة الله) বলেন, আমাকে মুহাদ্দিস হাজ্জাজ বলেছেন, তিনি বলেন, আমাকে ইবনে আবি সাবরাহ (رحمة الله) লক্ষ্য করে বলেছেন, আমার নিকট হালাল-হারাম সংক্রান্ত ৭০ হাজার হাদিস রয়েছে।’’ 


(যাহাবী, সিয়ারু আলামিন নুবালা, ৭/৩৩১ পৃ. ক্রমিক. ১১৬)


সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! ইমাম আহমদ (رحمة الله)-এর মত মহান ইমাম তাঁর বিষয়ে এমনটি উল্লেখ করে কোনো সমালোচনা করেননি, আর আজ কতিপয় আহলে হাদিসগণ উক্ত রাবীর সমালোচনা করে তাঁর থেকেও বড় মুহাদ্দিস সাজতে চাচ্ছেন। 


❏ ইমাম ইমাম যাহাবী (رحمة الله) বলেন- وَقَالَ البُخَارِيُّ: ضَعِيْفُ الحَدِيْثِ. -‘‘ইমাম বুখারী (رحمة الله) বলেন, হাদিস বর্ণনায় তিনি দুর্বল।’’


(যাহাবী, সিয়ারু আলামিন নুবালা, ৭/৩৩১ পৃ. ক্রমিক. ১১৬) 



উক্ত রাবীর দুর্বলতা কোথায়?


❏ ইমাম যাহাবী (رحمة الله) তার জীবনীতে লিখেন-


وَهُوَ ضَعِيْفُ الحَدِيْثِ مِنْ قِبَلِ حِفْظِه.


-‘‘তিনি হেফযের (স্মৃতিশক্তির) কারণে হাদিসে দুর্বল।’’ 


(ইমাম যাহাবী, সিয়ারু আলামিন নুবালা, ৭/৩৩০ পৃ. ক্রমিক. ১১৬) 

তবে আমার মনে হয় উক্ত রাবীর শেষ জীবনে স্মৃতিশক্তি দুর্বলতায় পড়েছিল। 


সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! আমি এ গ্রন্থের শুরুতে হাদিসের নীতিমালায় উল্লেখ করেছি যে, কোনো রাবীর হেফযে সামান্য দুর্বলতা থাকলে সে রাবীর হাদিসের মান ‘হাসান’ স্তরের বলে বিবেচিত হবে।


এ হাদিসের বিষয়ে মুহাদ্দিসগণের সিদ্ধান্ত:


একটি লক্ষণীয় বিষয় হলো আলবানী হাদিসটি জাল বলেছেন। অথচ আলবানীর দলের অনুসারী আবদুল আযিয বিন বায তার ফাতওয়ার কিতাবে সনদটিকে দ্বঈফ বলেছেন। আলবানীর পূর্বে একজন মুহাদ্দিসও হাদিসটিকে জাল বলেননি। তবে ইমাম কাস্তাল্লানী, সুয়ূতি, জুরকানী,  ইবনে ইরাকী, কিনানী,  ইবনে হাজার মক্কী,  ইমাম ইবনে আবেদীন শামী সকলেই তাদের স্ব স্ব গ্রন্থে দ্বঈফ বলেছেন; একজনও জাল বলেননি। 


❏ আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী (رحمة الله) লিখেন-


وَإِسْنَاده ضَعِيف، وَابْن أبي سُبْرَة هُوَ أَبُو بكر بن عبد الله بن مُحَمَّد بن سُبْرَة مفتي الْمَدِينَة وقاضي بَغْدَاد ضَعِيف


-‘‘এ সনদটি যঈফ, ইবনে আবি সাবরাহ......সে মদিনার মুফতী ছিলেন এবং বাগদাদের কাযি ছিলেন, তবে তিনি হাদিস বর্ণনায় দুর্বল।’’ 


(আল্লামা আইনী, উমদাতুল ক্বারী, ১১/৮২ পৃ.)


❏ আল্লামা নুরুদ্দীন সানাদী (رحمة الله) লিখেন-


إِسْنَادُهُ ضَعِيفٌ لِضَعْفِ ابْنِ أَبِي سبرَةَ


-‘‘এ সনদটি যঈফ, কেননা ইবনে আবি সাবরাহ রাবী হিসেবে যঈফ।’’ 


(হাশীয়ায়ে সানাদী আ‘লা সুনানি ইবনে মাযাহ, ১/৪২১ পৃ.)


❏ ইমাম শিহাবুদ্দীন কাস্তাল্লানী (رحمة الله) লিখেন-


وفى سنن ابن ماجه: بإسناد ضعيف، عن على مرفوعا


-‘‘এ সনদটি ইবনে মাযাহ (رحمة الله) সংকলন করেন, সনদটি যঈফ, যা হযরত আলী (رضي الله عنه) হতে মারফু সূত্রে সংকলন করেছেন।’’ 


(আল্লামা কাস্তাল্লানী, আল - মাওয়াহিবুল্লাদুনিয়্যাহ, ৩/৩০০ পৃ.)


উপরের আলোচনা থেকে প্রমাণিত হল এক জামাত হাদিসের ইমামগণ এ সনদকে শুধু মাত্র যঈফ বলেছেন, কেউ তাকে জাল বলেননি। তাই এ সনদটি যঈফ হলেও আরও অনেক শাওয়াহেদ থাকায় এ হাদিসকে শক্তিশালী করেছে।



২নং হাদিস:


❏ ইমাম আব্দুর রাজ্জাক (رحمة الله) সংকলন করেন-


قَالَ عَبْدُ الرَّزَّاقِ: وَأَخْبَرَنِي مَنْ، سَمِعَ الْبَيْلَمَانِيَّ يُحَدِّثُ عَنْ أَبِيهِ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ:  خَمْسُ لَيَالٍ لَا تُرَدُّ فِيهِنَّ الدُّعَاءَ: لَيْلَةُ الْجُمُعَةِ، وَأَوَّلُ لَيْلَةٍ مِنْ رَجَبٍ، وَلَيْلَةُ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ، وَلَيْلَتَيِ الْعِيدَيْنِ


-‘‘হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন,  পাঁচ রাত্রির দোয়া আল্লাহ্ ফিরত দেন না। 

১. জুম‘আর রাত্র,  

২. রজবের প্রথম রাত, 

৩. শাবানের ১৫ তারিখের রাত্র (শবে বরাত) এবং

৪-৫ দুই ঈদের রাত্র।’’  ৩৩

➥{ক. ইমাম আব্দুর রায্যাক : আল মুসান্নাফ : ৪/৩১৭ পৃ. হাদিস:৭৯২৭

খ. ইমাম বায়হাকী : শুয়াবুল ঈমান : ৫/২৮৮ পৃ. হাদিসঃ৩৪৪০ 

গ. ইমাম বায়হাকী : ফাযায়েলুল আওকাত, : ৩১১ পৃ. হা/১৪৯

ঘ. ইমাম বায্যার : আল মুসনাদ : হা/৭৯২৭

ঙ. সুয়ূতি: জামেউস সগীর : ১/৬১০ : হা/৮৩৪২, তিনি হযরত মুয়াজ বিন জাবাল (رضي الله عنه) এর সূত্রে।}



সনদ পর্যালোচনা


এ হাদিসটির সনদ ‘হাসান’ সনদের সমস্ত রাবী সিকাহ বা বিশ্বস্ত, তবে ইমাম আব্দুর রাজ্জাক (رحمة الله) এ হাদিসে তার শায়খের নাম গোপন করেছেন, তিনি বিশ্বস্ত হাদিসের ইমাম, তাই তার তাদলীস গ্রহণযোগ্য, তাঁর তাদলীস সমালোচিত বলে কেহই অভিমত পেশ করেননি। 


❏ অপরদিকে এ সনদেরর রাবী মুহাদ্দিস ‘বায়লামানী’ সম্পর্কে ইমাম যাহাবী (رحمة الله) লিখেন- وذكره ابن حبان في الثقات -‘‘ইমাম ইবনে হিব্বান  তাকে সিকাহ রাবীর তালিকায় স্থান দিয়েছেন।’’ 


(যাহাবী, মিযানুল ই‘তিদাল, ২/৫৫১ পৃ. ক্রমিক.৪৮২৭) 


তবে এ হাদিসটির শাওয়াহেদে আরেকটি যঈফ সনদের হাদিস রয়েছে, তাই এটির মান কমপক্ষে ‘হাসান’। 


❏ ইমাম ইবনে আসাকীর (رحمة الله) হযরত আবু উমামা (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন-


خَمْسُ لَيالٍ لَا تُرَدُّ فِيهِنَّ الدَّعْوَةُ أوَّلُ لَيْلَةٍ مِنْ رَجَبٍ وَلَيْلَةُ النِّصْفِ مِنْ شَعْبانَ وَلَيْلَةُ الجُمُعَةِ وَلَيْلَةُ الفِطْرِ وَلَيْلَةُ النَّحْرِ


-‘‘পাঁচ রাত্রির দোয়া আল্লাহ্ ফিরত দেন না। 

১. রজবের প্রথম রাত,  

২. শাবানের ১৫ তারিখের রাত্র (শবে বরাত), 

৩. জুম‘আর রাত্র,  

৪-৫ দুই ঈদের রাত্র।’’ 


(ইমাম ইবনে আসাকীর, তারিখে দামেস্ক, ১০/৪০৮ পৃ. ক্রমিক.৯৬৮, শায়খ ইউসুফ নাবহানী, ফতহুল কাবীর, ২/৮৭ পৃ. হা/৬০৭৫, ইমাম সুয়ূতি, জামেউস সগীর, হা/৩৯৩৬) 



সনদ পর্যালোচনা:


❏ আল্লামা মানাভী (رحمة الله) বলেন- باسناد ضَعِيف -‘‘এ সনদটি যঈফ।’’ (আল্লামা মানাভী, তাইসীর, ১/৫২০ পৃ.) তাই উভয় সনদ মিলিয়ে এটির মান কমপক্ষে ‘হাসান’ তাতে কোনো সন্দেহ নেই।


❏ ইমাম বায়হাকী (رحمة الله) সংকলন করেন-


قَالَ الشَّافِعِيُّ: وَبَلَغَنَا أَنَّهُ كَانَ يُقَالُ إِنَّ الدُّعَاءَ يُسْتَجَابُ فِي خَمْسِ لَيَالٍ فِي لَيْلَةِ الْجُمُعَةِ، وَلَيْلَةِ الْأَضْحَى، وَلَيْلَةِ الْفِطْرِ، وَأَوَّلِ لَيْلَةٍ مِنْ رَجَبَ، وَلَيْلَةِ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ.


-‘‘ইমাম শাফেয়ী (رحمة الله) বলেন, আমাকে বলা হয়েছে যে, আগের যুগে (সাহাবী, তাবেয়ীদের যুগে) বলা হতো, পাঁচ রাতের দোয়া আল্লাহ কবুল করেন, 

১. জুম‘আর রাতের দোয়া, 

২-৩. ঈদুল আযহা এবং ঈদুল ফিতরের রাতের দোয়া, 

৪. রযব মাসের প্রথম মাসের রাতের দোয়া এবং 

৫. শবে বরাতের দোয়া।’’ 


(ইমাম বায়হাকী, শুয়াবুল ঈমান, ৫/২৮৭ পৃ. হা/৩৪৩৮) 

বুঝা গেল সনদে একজন রাবী সমস্যা হলেও পৃথিবী বিখ্যাত ইমামদের নিকট হাদিসটি বিশুদ্ধ বলেই পৌঁছেছে।



৩নং হাদিস


❏ ইমাম বায়হাকী (رحمة الله)সহ আরও অনেক ইমাম সংকলন করেন-


أَخْبَرَنَا أَبُو الْحُسَيْنِ بْنُ بِشْرانَ، أَخْبَرَنَا أَبُو جَعْفَرٍ الرَّزَّازُ، حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ أَحْمَدَ الرِّيَاحِيُّ، حَدَّثَنَا جَامِعُ بْنُ صُبَيْحٍ الرَّمْلِيُّ، حَدَّثَنَا مَرْحُومُ بْنُ عَبْدِ الْعَزِيزِ، عَنْ دَاوُدَ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، عَنْ هِشَامِ بْنِ حَسَّانَ، عَنِ الْحَسَنِ، عَنْ عُثْمَانَ بْنِ أَبِي الْعَاصِؓ، عَنِ النَّبِيِّ ﷺ، قَالَ: إِذَا كَانَ لَيْلَةُ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ نَادَى مُنَادٍ: هَلْ مِنْ مُسْتَغْفِرٍ فَأَغْفِرَ لَهُ، هَلْ مِنْ سَائِلٍ فَأُعْطِيَهُ فَلَا يَسْأَلُ أَحَدٌ شَيْئًا إِلَّا أُعْطِيَ إِلَّا زَانِيَةٌ بِفَرْجِهَا أَوْ مُشْرِكٌ– وقال محققه عدنان عبد الرحمن : اسناده حسن- مكتبة المنارة مكة المكرمة


-‘‘হযরত উসমান ইবনে আবুল আস (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত।  মহানবী (ﷺ) ইরশাদ ফরমান, শাবান মাসের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাতে প্রথম আকাশে একজন ঘোষক অবতরণ করে ডাকতে থাকে। কেউ ক্ষমা চাওয়ার আছ কি? চাইলেই ক্ষমা করা হবে। কেউ কিছু চাওয়ার আছ কি? তাকে দেয়া হবে। যা চাওয়া হবে তাই দেয়া হবে শুধু জিনাকারী ও আল্লাহর সাথে শরীককারী ব্যক্তি এ সৌভাগ্য লাভ করবে না।’’  ৩৪

➥{(১) ইমাম বায়হাকী : শুয়াবুল ঈমান : ৫/৩৬২ পৃ. হা/৩৫৫৫ (২) ইমাম বায়হাকী : ফাযায়েলে আওকাত: পৃ- ১২৪ : হা/২৫ (৩) সাহল বিন শাকের আল-খারাতী, মুসাভীউল আখলাক, ১/২২৬পৃ. হাদিস,  ৪৬৭ (৪) শায়খ ইউসুফ নাবহানী, ফতহুল কাবীর, ১/১৩৯পৃ. হাদিস,  ১৪১৯ (৫) মুত্তাকী হিন্দী, কানযুল উম্মাল, ১২/৩১৪পৃ. হাদিস,  ৩৫১৭৮ (৬) সালিম র্জারার, ইমা ইলা যাওয়াইদ, ৫/১৮পৃ. হাদিস,  ৪২৩৭ (৭) সুয়ূতি, জামিউস সগীর, ১/১৬৬৬পৃ. হাদিস,  ১৬৬৬ (৮) আলবানী, দ্বঈফু জামে, হাদিস,  ৬৫৩}



পর্যালোচনা:


এ সনদটি সম্পর্কে আল্লামা আদনান হাদিসটিকে “হাসান” বলেছেন। আহলে হাদিস নাসিরুদ্দীন আলবানী এটিকে যঈফ বলেছেন। 


(আলবানী, সিলসিলাতুল আহাদিসিদ দ্বঈফাহ, ১৪/১০৯৯ পৃ. হা/৭০০০) 


❏ আলবানী লিখেছে-


قلت: وهذا إسناد ضعيف؛ وله علتان: إحداهما: عنعنة الحسن - وهو: البصري -؛ فقد كان يدلس. والأخرى: ضعف (جامع ين صَبِيح الرملي)


-‘‘আমি (আলবানী) বলি, এ হাদিসটির সনদ দুর্বল, আর তার দুটি কারণ রয়েছে, প্রথমটি হলো, তাবেয়ী হাসান বসরী (رحمة الله) এখানে তাদলীস করে বর্ণনা করেছেন, তাই তিনি এখানে তাদলীসকারী, আর দ্বিতীয়টি হলো, রাবী জা‘মে ইবনে ছাবিহ্ রমলী’ যঈফ।’’


(আলবানী, সিলসিলাতুল আহাদিসিদ দ্বঈফাহ, ১৪/১০৯৯ পৃ. হা/৭০০০)


সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! হযরত হাসান বসরী (رحمة الله)-এর মত মহান তাবেয়ীর যিনি দোষ ধরতে পারেন তিনি আর অন্য রাবীর বিষয়ে কিবাই না বলতে পারেন।  ৩৫ 

➥{ইমাম যাহাবী (رحمة الله) ‘হাসান বসরীর’ জীবনীতে লিখেন-

قَالَ مُحَمَّدُ بنُ سَعْدٍ: كَانَ الحَسَنُ -رَحِمَهُ اللهُ- جَامِعاً، عَالِماً، رَفِيْعاً، فَقِيْهاً، ثِقَةً، حُجَّةً، مَأْمُوْناً، عَابِداً، نَاسِكاً، كَثِيْرَ العِلْمِ، فَصِيْحاً، جَمِيْلاً، وَسِيْماً

-‘‘ইমাম বুখারীর উস্তাদ মুহাম্মদ বিন সা‘দ (رحمة الله) বলেন, তিনি ছিলেন ....আলিম,.....ফকীহ, বিশ্বস্ত, হুজ্জাত, নিরাপদ ব্যক্তি, আবেদ, ....অনেক ইলমের অধিকারী, সুস্পষ্ট ভাষী, অনেক সুন্দর ব্যক্তি,....।’’ (ইমাম যাহাবী, সিয়ারু আলামিন নুবালা, ৮/১৪৩ পৃ. ক্রমিক.২২৩) }


❏ আর রাবী জা‘মে কে একক একজন মুহাদ্দিস ছাড়া কেহই যঈফ বলেননি। পৃথিবী বিখ্যাত মশহুর মুহাদ্দিস ইমাম ইবনে আবি হাতেম ও ইবনে হিব্বান (رحمة الله) তার জীবনী বর্ণনা করে তার ভাল বলেছেন কোন সমালোচনা করেননি। ইবনে আবি হাতেম (رحمة الله) বলেন, তিনি আবু যারওয়া এবং আবু মুঈনের মত মুহাদ্দিসের শায়খ ছিলেন। 


(ইবনে আবি হাতেম, আল-জারহু ওয়া তা‘দীল, ২/৫৩০ পৃ. ক্রমিক.২২০৪, ইবনে হিব্বান, কিতাবুস সিকাত, ৮/১৬৬ পৃ.) 

তাই তার ভুয়া তাহকীক মানা যায় না।



৪নং হাদিসঃ


حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ مَنِيعٍ قَالَ: حَدَّثَنَا يَزِيدُ بْنُ هَارُونَ قَالَ: أَخْبَرَنَا الحَجَّاجُ بْنُ أَرْطَاةَ، عَنْ يَحْيَى بْنِ أَبِي كَثِيرٍ، عَنْ عُرْوَةَ، عَنْ عَائِشَةَ ، قَالَتْ: فَقَدْتُ النَّبِيَّ ﷺ ذَاتَ لَيْلَةٍ، فَخَرَجْتُ أَطْلُبُهُ، فَإِذَا هُوَ بِالْبَقِيعِ رَافِعٌ رَأْسَهُ إِلَى السَّمَاءِ. فَقَالَ: يَا عَائِشَةُ أَكُنْتِ تَخَافِينَ أَنْ يَحِيفَ اللَّهُ عَلَيْكِ وَرَسُولُهُ؟ قَالَتْ، قَدْ قُلْتُ: وَمَا بِي ذَلِكَ، وَلَكِنِّي ظَنَنْتُ أَنَّكَ أَتَيْتَ بَعْضَ نِسَائِكَ، فَقَالَ: إِنَّ اللَّهَ تَعَالَى يَنْزِلُ لَيْلَةَ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ إِلَى السَّمَاءِ الدُّنْيَا فَيَغْفِرُ لِأَكْثَرَ مِنْ عَدَدِ شَعَرِ غَنَمِ كَلْبٍ


-‘‘উম্মুল মু‘মিনীন হযরত আয়েশা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত।  তিনি বলেন,  এক রাতে আমি রাসূলে আকরাম (ﷺ) কে হারিয়ে ফেললাম। অর্থাৎ- মধ্যরাতে তাঁকে আমি বিছনায় দেখতে পেলাম না। এ সময় ঘর ছেড়ে গিয়ে তিনি জান্নাতুল বাকীতে অবস্থান করতে ছিলেন। (এবং এ সময় মুনাজাত রোনাজারীতে মশগুল ছিলেন) আমাকে লক্ষ করে তিনি বলেন তুমি কি এ ভয় করছ যে, আল্লাহ্ ও রাসূল তোমার প্রতি জুলুম করেছেন? আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! আমি ধারণা করেছি আপনি আপনার পবিত্র বিবিদের থেকে কারো গৃহে অবস্থান করতেছেন। তখন তিনি বলেন, আল্লাহ্ তা‘য়ালা অর্ধ শাবান (শবে বরাত) এর রজনীতে দুনিয়ার আসমানে নেমে আসেন (রহমত নেমে আসে) এরপর বনী কালীবের বকরির পশমের সংখ্যার চেয়েও অধিক বান্দাকে ক্ষমা করেন।’’  ৩৬

➥{(১) ইমাম তিরমিযী : আস সুনান : ৩/১১৫ পৃ. হা/৭৩৯ (২) ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল  : আল-মুসনাদ : ১৮/১১৪ : হা/২৫৮৯৬ (৩) ইমাম আবি শায়বাহ : আল-মুসান্নাফ : ১০/৪৩৮ : হা/৯৯০৭ (৪) ইমাম ইবনে মাজাহ : আস-সুনান :১/৪৪৪ পৃ. হা/১৩৮৯ (৫) ইমাম বাগভী : শরহে সুন্নাহ : ৪/১২৬ : হা/৯৯২ (৬) ইমাম ইবনে মুনযিরী : আত্ তারগীব ওয়াত তারহীব : ৪/২৪০ পৃ. হা/২৪ (৭) ইমাম ইবনে ইসহাক রাহবিয়্যাহ : আল মুসনাদ : ২/৩২৬ পৃ. হা/৮৫০ ও ৩/৯৭৯ পৃ. হা/১৭০০ (৮) শায়খ খতিব তিবরিযী : মিশকাতুল মাসাবীহ : ২/২৫৩ পৃ:  হা/১২৯৯ (৯) ইমাম বায়হাকী : ফাযায়েলুল ওয়াক্ত,  ১/১৩০ পৃ. হা/২৮ (১০) আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী : মিরকাতুল মাফাতীহ : ৩/৩৪০ পৃ: হা/১২৯৯ (১১) ইমাম কুরতুবী : তাফসীরে কুরতুবী : ১৬/১২৬-১২৭ পৃ.(১২) সুয়ূতি : আল-জামেউস সগীর : ১/১৪৬ পৃ. হা/১৯৪২ (১৩) আব্বাস আল-মাক্কী ফিকহী, আখবারুল মক্কা, ৩/৬৬ পৃ. হাদিস,  ১৮০৬ ও ১৮৪০ (১৪) শায়খ ইউসুফ নাবহানী,  ফতহুল কাবীর, ১/১৩৯ পৃ. হা/১৪২০ (১৫-১৬) মুত্তাকী হিন্দী, কানযুল উম্মাল, ৩/৪৬৪ পৃ. হা/৭৪৫০,  ও ১২/৩১৪পৃ. হাদিস,  ৩৫১৭৯ (১৭) মুত্তাকী হিন্দী, ইকমাল. ১২/৩১৫ পৃ. হা/৩৫১৮,  (১৮) মুত্তাকী হিন্দী, কানযুল উম্মাল, ১২/৩১৫ পৃ. হাদিস,  ৩৫১৮৪ (১৯) সুয়ূতি, জামেউস সগীর,  ১/১৬৬৭ পৃ. হা/১৬৬৭ ও জামিউল আহাদিস,  ৩/৪৮৫ পৃ. হা/২৬২৪ (১৩) আলবানী : দ্বঈফু মিশকাত : হা/১২৯৯, দ্বঈফু জামে, হা/৬৫৪,  তিনি বলেন সনদটি দ্বঈফ।}



সনদ পর্যালোচনা


❏ অপরদিকে ইমাম তিরমিযী  উক্ত হাদিসটি বর্ণনার পর বলেন, 


وَفِي الْبَابِ عَنْ أَبِي بَكْرٍ الصِّدِّيقِ


-‘‘ইমাম তিরমিযী (رحمة الله) বলেন,  এ পরিচ্ছেদে (এ বিষয়ে) হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) হতে হাদিস বর্ণিত হয়েছে।’’  ৩৭

➥{তিরিমিযী,  আস্-সুনান, ৩/১১৫পৃ. হা/৭৩৯, মোবারকপুরী, তুহফাতুল আহওয়াজী, ৩/৩৬৫ পৃ. হা/৭৩৯}



❏ এ হাদিসের সনদের কোন রাবীর বিষয়ে কোন সমস্যা নেই, শুধু ইমাম তিরমিযি (رحمة الله) ইমাম বুখারী (رحمة الله)-এর বরাতে উল্লেখ করেছেন যে-


وقَالَ يَحْيَى بْنُ أَبِي كَثِيرٍ لَمْ يَسْمَعْ مِنْ عُرْوَةَ، وَالحَجَّاجُ بْنُ أَرْطَاةَ لَمْ يَسْمَعْ مِنْ يَحْيَى بْنِ أَبِي كَثِيرٍ.


-‘‘ইমাম বুখারী (رحمة الله) বলেন, ইয়াহইয়া ইবনে আবি কাসির (رحمة الله) বর্ণনাকারী উরওয়া (রহ.) হতে কিছুই শুনেনি, আর হাজ্জাজ ইবনে আরত্বাত (رحمة الله) ইয়াহইয়া ইবনে আবি কাসির (رحمة الله) হতে কিছুই শুনেনি।’’  ৩৮

➥{তিরিমিযী,  আস্-সুনান, ৩/১১৫ পৃ. হা/৭৩৯}


বুঝা গেল এখানে দুজনে তাদলীস করেছেন সে কারণেই ইমাম বুখারী  এ সনদকে যঈফ বলেছেন। ইয়াহইয়া ইবনে আবি কাসির (رحمة الله) নিজেই একজন তাবেয়ী তাই এটা মুরসাল বলা হবে। 


❏ ইমাম আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ ইবনে ইসহাক ফাকেহী (ওফাত. ২৭২ হি.) আরেকটি সূত্র এভাবে সংকলন করেন, যেখানে উরওয়া নেই। যেমন -


حَدَّثَنَا عَمَّارُ بْنُ عَمْرٍو الْجَنْبِيُّ، قَالَ: ثنا أَبِي عَمْرُو بْنُ هَاشِمٍ أَبُو مَالِكٍ الْجَنْبِيُّ، قَالَ: ثنا الْحَجَّاجُ بْنُ أَرْطَأَةَ، عَنْ مَكْحُولٍ، عَنْ كَثِيرِ بْنِ مُرَّةَ الْحَضْرَمِيِّ، عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ


-‘‘ হাজ্জাজ ইবনে আরত্বাত তিনি তার শায়খ তাবেয়ী মেকহুল শামী (رحمة الله) হতে বর্ণনা করেছেন, আর তিনি এটি তার শায়খ কাসির ইবনে র্মুরাহ হাদ্বরামী হতে তিনি উম্মাহাতুল মু‘মিনীন আয়েশা (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন, তিনি নবী করীম (ﷺ) হতে বর্ণনা করেন।’’ 


(তথ্য সূত্র: ইমাম ফাকেহী, আখবারুল মাক্কা, ৩/৬৬ পৃ. হা/১৮৩৯)


সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! তাহলে এ সনদ আর উপরের সনদ এক নয়, কেননা হাজ্জাজ ইবনে আরত্বাত এখানে তার উস্তাদের নাম প্রকাশ করেছে, আর এ সনদে রাবী উরওয়া-ই নেই। রাবী হাজ্জাজ মিকহুল শামী (رحمة الله) হতে বর্ণনা প্রমাণিত। 


❏ ইমাম মিয্যী (رحمة الله) লিখেন-


وَرَوَى عَنْ: عِكْرِمَةَ، وَعَطَاءٍ، وَالحَكَمِ، وَنَافِعٍ، وَمَكْحُوْلٍ


-‘‘তিনি তাবেয়ী ইকরামা, আতা ইবনে রাবাহ, হাকাম, না‘ফে এবং মিকহুল শামী (رحمة الله) হতে বর্ণনা করতেন।’’ 


(ইমাম মিয্যী, তাহযিবুল কামাল, ৭/৬৯ পৃ. ক্রমিক.২৭)


❏ ইমাম বায়হাকী (رحمة الله)সহ আরও অনেক ইমাম উপরের হাদিসের ন্যায় আরেকটি সূত্র সংকলন করেন এভাবে-


أَخْبَرَنَا أَبُو نَصْرِ بْنُ قَتَادَةَ، حَدَّثَنَا أَبُو مَنْصُورٍ مُحَمَّدُ بْنُ أَحْمَدَ الْأَزْهَرِيِّ الْهَرَوِيُّ، حَدَّثَنَا الْحُسَيْنُ بْنُ إِدْرِيسَ، حَدَّثَنَا أَبُو عُبَيْدِ اللهِ ابْنُ أَخِي ابْنِ وَهْبٍ، حَدَّثَنَا عَمِّي، حَدَّثَنَا مُعَاوِيَةُ بْنُ صَالِحٍ، عَنِ الْعَلَاءِ بْنِ الْحَارِثِ، أَنَّ عَائِشَةَ، قَالَتْ: ...... فَقَالَ:  أَتَدْرِينَ أَيَّ لَيْلَةٍ هَذِهِ؟ ، قُلْتُ: اللهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ، قَالَ: هَذِهِ لَيْلَةُ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ، إِنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ يَطْلُعُ عَلَى عِبَادِهِ فِي لَيْلَةِ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ فَيَغْفِرُ لِلْمُسْتَغْفِرِينَ، وَيَرْحَمُ الْمُسْتَرْحِمِينَ، وَيُؤَخِّرُ أَهْلَ الْحِقْدِ كَمَا هُمْ


-‘‘হযরত আয়েশা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। .......এক পর্যায়ে রাসূল (ﷺ) মা আয়েশা (رضي الله عنه) কে লক্ষ্য করে বলেন, তুমি জান আজ কোন রাত? তিনি জবাবে বললেন, এ বিষয়ে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ভাল জানেন। অতঃপর তিনি বললেন, আজ হল শাবান মাসের ১৫ তারিখের রাত, এ রাতে মহান রব ক্ষমা প্রার্থনাকারীদের ক্ষমা করেন, রহমত প্রার্থনাকারীদের প্রতি রহমত নাযিল করেন, আর হিংসুকদেরকে তাদের হিংসার মাঝে ছেড়ে দেন,  যতক্ষণ না তারা তাদের হিংসা বিদ্বেষ ত্যাগ করে।’’ 


(বায়হাকী, শুয়াবুল ঈমান, ৫/৩৬১ পৃ. হা/৩৫৫৪, ইমাম মুনযিরী, তারগীব ওয়াত তারহীব, ২/৭৪ পৃ. হা/১৫৪৯, পরিচ্ছেদ: التَّرْغِيب فِي صَوْم شعْبَان )



সনদ পর্যালোচনা:


❏ ইমাম বায়হাকী (رحمة الله) এটি সংকলন করে লিখেন- قُلْتُ: هَذَا مُرْسَلٌ جَيِّدٌ -‘‘আমি (বায়হাকী) বলি, এটি মুরসাল, তবে সনদ শক্তিশালী।’’ 


(বায়হাকী, শুয়াবুল ঈমান, ৫/৩৬১ পৃ. হা/৩৫৫৪) 


❏ ইমাম মুনযিরী (رحمة الله) এ হাদিস সংকলন করে লিখেন-


رَوَاهُ الْبَيْهَقِيّ من طَرِيق الْعَلَاء بن الْحَارِث عَنْهَا وَقَالَ هَذَا مُرْسل جيد


-‘এ সনদটি মুরসাল হলেও শক্তিশালী।’’ 


(ইমাম মুনযিরী, তারগীব ওয়াত তারহীব, ২/৭৪ পৃ. হা/১৫৪৯) 


❏ তাই আহলে হাদিসদের সমর্থক মাওলানা আব্দুর রহমান মোবারকপুরী লিখেন- هَذَا مُرْسَلٌ جَيِّدٌ -‘‘এটি মুরসাল, তবে শক্তিশালী।’’  


(মোবারকপুরী, তুহফাতুল আহওয়াজি, ৩/৩৬৬ পৃ.)


❏ ইমাম সুয়ূতি (رحمة الله) সংকলন করেন-


وَأخرج الْخَطِيب فِي رُوَاة مَالك عَن عَائِشَة: سَمِعت النَّبِي صلى الله عَلَيْهِ وَسلم يَقُول: يفتح الله الْخَيْر فِي أَربع لَيَال لَيْلَة الْأَضْحَى وَالْفطر وَلَيْلَة النّصْف من شعْبَان ينْسَخ فِيهَا الْآجَال والأرزاق وَيكْتب فِيهَا الْحَاج وَفِي لَيْلَة عَرَفَة إِلَى الْأَذَان .


-‘‘ইমাম খতিবে বাগদাদী (رحمة الله) সংকলন করেন, হযরত আয়েশা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূল (ﷺ) কে বলতে শুনেছি, চার রাতে খায়ের বরকতের দরজা খুলে দেয়া হয়, ঈদুল আযহা এবং ঈদুল ফিতরের রাতে, ১৫ই শাবান তথা শবে বরাতের রাতে, (শবে বরাতের) রজনীতে আয়ূ এবং রিযিক নির্ধারণ করা হয়। এ রাতে কে হজ্জ করতে পারবে তাও লিপিবদ্ধ করা হয়। রহমতের দরজার খুলার আরেকটি সময় হল আরাফার রাত থেকে ফজরের আযান পর্যন্ত।’’ 


(ইমাম সুয়ূতি, তাফসিরে আদ-দুররুল মানসুর, ৭/৪০২ পৃ.)


পরিশেষে বলতে চাই, অনেকগুলো সূত্রে বর্ণিত, অপরদিকে তিরমিযির সূত্রকে অন্য সূত্র শক্তিশালী করেছে, সব মিলিয়ে এ বিষয়ক মা আয়েশা (رضي الله عنه)-এর হাদিসটি ‘হাসান’ পর্যায়ের। 



৫নং হাদিস


حَدَّثَنَا الْقَاضِي أَبُو أَحْمَدَ مُحَمَّدُ بْنُ أَحْمَدَ قَالَ: ثنا شُعَيْبُ بْنُ مُحَمَّدٍ الدُّبَيْلِيُّ، ثنا أَزْهَرُ بْنُ الْمَرْزُبَانِ، ثنا عُتْبَةُ بْنُ حَمَّادٍ أَبُو خُلَيْدٍ، عَنِ الْأَوْزَاعِيِّ، عَنْ مَكْحُولٍ، عَنْ مَالِكِ بْنِ يَخَامِرَ، عَنْ مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍؓ، عَنِ النَّبِيِّ - ﷺ- قَالَ:يَطَّلِعُ اللَّهُ إِلَى جَمِيعِ خَلْقِهِ لَيْلَةَ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ، فَيَغْفِرُ لِجَمِيعِ خَلْقِهِ، إِلَّا لِمُشْرِكٍ، أَوْ مُشَاحِنٍ- 


-‘‘হযরত মুয়ায ইবনে জাবাল (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন,  ‘‘আল্লাহ্ তা‘য়ালা শাবান মাসের ১৫ তারিখ অর্থাৎ (শবে বরাত) এর রাতে সমস্ত মাখলুকাতের দিকে রহমতের নজরে তাকান। সমস্ত মাখলুকাতকে আল্লাহ্ তা‘য়ালা মাফ করে দিবেন। তবে মুশরিক ও হিংসুক ব্যতীত।’’  ৩৯

➥{ইমাম আবু নুয়াইম ইস্পাহানী: হিলইয়াতুল আউলিয়া : ৪/২২২ পৃ. (২) ইমাম বায়হাকী : শুয়াবুল ঈমান : ৫/৩৬০ পৃ. হা/৩৫৫২ এবং ৬৬২৮ (৩) ইমাম ইবনে মুনযিরী : তারগীব ওয়াত্তারহীব : ২/২২ হা/১৫১৭, দারুল ইবনে হায়সামী, মিশর,  (৪) ইমাম তাবরানী : মুজামুল কাবীর : ১/১৪২ পৃ.: হা/২১৫ (৫) ইমাম ইবনে হিব্বান : আস-সহীহ : ১২/৪৮১ পৃ. : হা/৫৬৬৫ (৬) ইমাম বায়হাকী : ফাযায়েলে ওয়াক্ত, ১/১১৮পৃ. হা/২২ (৭) ইমাম তাবরানী : মু‘জামুল আওসাত : ৭/৩৬ পৃ. হা/৬৭৭৬ (৮) ইবনে হাজার হায়সামী : মাযমাউয যাওয়াইদ : ৮/৬৫ পৃ. হাদিস,  ১২৯৫৬ (৮) আলবানী : সহিহুত তারগীব : হা/১৫১৭, তিনি বলেন হাদিসটি হাসান, সহীহ (৯) ইবনে আছিম,  আস্-সুন্নাহ,  ১/২২৪পৃ. হা/৫১২ (১০) ইবনে আসাকীর, তারীখে দামেস্ক,  ৫৪/৯৭ পৃ. (১১) তাবরানী, মু‘জামুল কাবীর,  ২০/১০৮ পৃ. হা/২১৫ (১২-১৩) ও মুসনাদিস্-শামীন, ১/১২৮ পৃ. হাদিস,  ২০৩ও ৪/৩৬৫পৃ. হাদিস,  ৩৫৭০ (১৪) আবু নুয়াইম ইস্পাহানী, হিলইয়াতুল আউলিয়া, ৫/১৯১ পৃ. (১৫) বায়হাকী, শুয়াবুল ঈমান, ৯/২৪ পৃ. হা/৬২০৪ (১৬-১৮) সাজারী, তারতীবুল আমালি,  ১/৩৭২পৃ. হাদিস,  ১৩২০ ও ২/৪৫পৃ. হাদিস,  ১৫২৫ ও ২/১৪০ পৃ. হা/১৮৮১ (১৯) হাইসামী, মাওয়ারিদুয্-যামান,  ১/৪৮৬পৃ. হা/১৯৮০, (২০) দারাকুতনী, আল-নূযুল,  ১/১৫৮ পৃ. হাদিস,  ৭৭, (২১) মিয্যী, তুহফাতুল আশরাফ বি মা‘রিফাতুল আতরাফ, ৬/৪২০পৃ. হাদিস,  ৯০০৬ (২২) মুত্তাকী হিন্দী, কানযুল উম্মাল,  ৩/৪৬৮ পৃ. হা/৭৪৬৪ (২৩) সালিম র্জারার, ইমা ইলা যাওয়াইদ, ৫/৫১৭ পৃ. হাদিস,  ৫০৭২ (২৪) ইবনে কাসীর,  জামিউল মাসানিদ,  ৭/৫৩০ পৃ. হা/৯৬৯৭ (২৫) আহলে হাদিস নাসিরুদ্দীন আলবানী, সিলসিলাতুল আহাদিসুল সহীহাহ, ৩/১৩৫ পৃ. হাদিস,  ১১৪৪,  তিনি বলেন, সনদটি সহীহ।}



সনদ পর্যালোচনা:


❏ আল্লামা ইবনে হাজার হাইসামী (رحمة الله) উক্ত হাদিস সম্পর্কে বলেন :


رَوَاهُ الطَّبَرَانِيُّ فِي الْكَبِيرِ وَالْأَوْسَطِ وَرِجَالُهُمَا ثِقَاتٌ.


-‘‘উক্ত হাদিসটি ইমাম তাবরানী  তার ‘মু’জামুল কাবীর’ ও ‘মু’জামুল আওসাত’ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন; উভয় কিতাবের সমস্ত বর্ণনাকারী সিকাহ বা বিশ্বস্ত।’’  ৪০

➥{আল্লামা ইবনে হাজার হায়সামী : মাযমাউয যাওয়াইদ : ৮/৬৫ পৃ:}



❏ আহলে হাদিস নাসীরুদ্দীন আলবানী এ হাদিসের সনদ প্রসঙ্গে লিখেন-


حديث صحيح، روي عن جماعة من الصحابة من طرق


-‘‘এ হাদিসের সনদটি সহীহ, বিভিন্ন এক জামাত সাহাবায়ে কিরাম থেকে এটি বর্ণিত।’’ 


(আলবানী, সিলসিলাতু আহাদিসিস সহীহ, ৩/১৩৫ পৃ. হা/১১৪৪) 


❏ তিনি আরও লিখেছেন-


فإن رجاله موثوقون، وقال الهيثمي في مجمع الزوائد  (৮ / ৬৫) :  رواه الطبراني في  الكبير  و  الأوسط ورجالهما ثقات


-‘‘নিশ্চয় এ সনদের সমস্ত বর্ণনাকারী সিকাহ এবং ইমাম হাইসামী (رحمة الله) তার মাযমাউয-যাওয়াইদ গ্রন্থে বলেছেন, উক্ত হাদিসটি ইমাম তাবরানী  তার ‘মু’জামুল কাবীর’ ও ‘মু’জামুল আওসাত’ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন; উভয় কিতাবের সমস্ত বর্ণনাকারী সিকাহ বা বিশ্বস্ত।’’ 


(আলবানী, সিলসিলাতুল আহাদিসিস সহীহহা, ৩/১৩৫ পৃ. হা/১১৪৪)


সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! তথাকথিত আহলে হাদিসগণ তারা তাদের ইমামকেই মানে না, আমরা তাদেরকে কে কিভাবে মানতে পারি!


❏ মাওলানা আবদুল হাই লাখনৌভি উল্লেখ করেন-


وَقَالَ مُحَمَّد بن عبد الْبَاقِي الزّرْقَانِيّ فِي شرح الْمَوَاهِب اللدنية للقسطلاني عِنْد ذكر حَدِيث يطلع الله لَيْلَة النّصْف من شعْبَان فَيغْفر لجَمِيع خلقه الا لمشترك اَوْ مُشَاحِن وَنقل الْقُسْطَلَانِيّ عَن ابْن رَجَب ان ابْن حبان صَححهُ فِيهِ رد على قَول ابْن دحْيَة لم يَصح فِي لَيْلَة نصف شعْبَان شَيْء الا ان يُرِيد نفي الصِّحَّة الاصطلاحية فان حَدِيث معَاذ هَذَا حسن لَا صَحِيح


-‘‘আল্লামা মুহাম্মদ বি আবদুল বাকী জুরকানী (رحمة الله) তার শারহুল মাওয়াহিব গ্রন্থে  শবে বরাত সম্পর্কিত হযরত মুয়ায ইবনে জাবাল (رضي الله عنه)-এর হাদিস যেখানে রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, শবে বরাতে মুশরিক এবং হিংসুক ব্যতিত সবাইকে ক্ষমা করে দেন। ......প্রসঙ্গে আল্লামা ইবনে দাহিয়াহ  বলেছেন শবে বরাত সম্পর্কিত ‘কোনো হাদিসই সহীহ নয়’ (আল্লামা জুরকানী বলেন), নিশ্চয়ই সহীহ হওয়া নিষেধ দ্বারা উসূলে হাদিসের পারিভাষায় হযরত মুয়ায ইবনে জাবাল (رضي الله عنه)-এর হাদিসটি ‘হাসান’ হওয়া প্রমাণিত, তবে (সহীহ নয় শব্দ দ্বারা) সহীহ লিজাতিহী নয় (উদ্দেশ্য)।’’ 


(লাখনৌভি, রাফউ ওয়া তাকমীল, ১৯৭ পৃ., আল্লামা জুরকানী, শারহুল মাওয়াহেব, ১০/৫৬১ পৃ.)


আমাদের কতিপয় আহলে হাদিসগণ রাবী ‘আবু খুলাইদ’ সম্পর্কে বলে থাকেন তিনি নাকি যঈফ। আমি বলবো, যে এ কথা বলবে, সে আমার মনে হয় কখনো আসমাউর রিজালের কিতাব পড়েই নি। 


❏ বিখ্যাত আসমাউর রিজালবিদ, ইমাম যাহাবী (رحمة الله)-এর উস্তাদ, ইমাম মিয্যী (رحمة الله) তার জীবনীতে লিখেন-


وَقَال أَبُو عَلِي النيسابوري الْحَافِظ، وأَبُو بَكْر الخطيب: ثقة وذكره ابنُ حِبَّان في كتاب الثقات


-‘‘ইমাম আবু আলী নিশাপুরী  এবং খতিবে বাগদাদী (رحمة الله) বলেন, তিনি সিকাহ বা বিশ্বস্ত, ইমাম ইবনে হিব্বান (رحمة الله) তাকে তার সিকাহ রাবীর গ্রন্থে অর্ন্তভুক্ত করেছেন।’’ 


(মিয্যী, তাহযিবুল কামাল, ১৯/৩০৪ পৃ. ক্রমিক. ৩৭৭২, যাহাবী, তারিখুল ইসলাম, ৪/১১৬৬ পৃ. ক্রমিক. ২০০)


❏ তারা যখন উক্ত রাবী যঈফ প্রমাণ করতে পারেন না, তখন বলেন, তাবেয়ী মেকহুল শামী (رحمة الله)-এর সাথে তাঁর শায়খ ‘ইমাম মালেক ইবনে ইয়াখামীর’ (رحمة الله)-এর সাথে সাক্ষাত ঘটেনি।


❏ ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) লিখেন-


روى عنه معاوية بحضرته. وحديثه عنه، عن معاذ في صحيح البخاري: وروى عنه أيضا ابناه: عبد اللَّه، وعبد الرحمن: وعمير بن هانئ، وجبير بن نفير، وشريح بن عبيد، ومكحول


-‘‘ইমাম মালেক ইবনে ইয়াখামীর (رحمة الله) হতে হাদিস বর্ণনা করতেন, ........শুরাই ইবনে উবায়দ এবং মিকহুল শামী।’’ 


(ইবনে হাজার, আল-ইসাবা, ৫/৫৬৩ পৃ.) 


❏ ইমাম ইবনে আসাকীর (رحمة الله) লিখেছেন-


وروى عنه معاوية بن أبي سفيان وجبير بن نفير ومكحول وخالد بن معدان


-‘‘তাঁর থেকে বর্ণনা করেছেন, .......মেকহুল শামী এবং খালেদ ইবনে মা‘দান।’’ 


(ইবনে আসাকীর, তারিখে দামেস্ক, ৫৬/৫১৮ পৃ. ক্রমিক. ৭১৯৩)


সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! তাই প্রমাণিত হলো যে, এ হাদিসটি সহীহ তাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। 



৬ নং হাদিস:


❏ ইমাম বাজ্জার (رحمة الله)সহ আরও অনেকে সংকলন করেন-


حَدَّثَنَا عَمْرُو بْنُ مَالِكٍ قَالَ: نا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ وَهْبٍ قَالَ: نا عَمْرُو بْنُ الْحَارِثِ قَالَ: حَدَّثَنِي عَبْدُ الْمَلِكِ بْنُ عَبْدِ الْمَلِكِ، عَنْ مُصْعَبِ بْنِ أَبِي ذِئْبٍ، عَنِ الْقَاسِمِ بْنِ مُحَمَّدٍ، عَنْ أَبِيهِ أَوْ عَمِّهِ، عَنْ أَبِي بَكْرٍ- قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ - ﷺ-: إِذَا كَانَتْ لَيْلَةُ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ يَنْزِلُ اللَّهُ تَبَارَكَ وَتَعَالَى إِلَى سَمَاءِ الدُّنْيَا، فَيَغْفِرُ لِعِبَادِهِ، إِلَّا مَا كَانَ مِنْ مُشْرِكٍ، أَوْ مُشَاحِنٍ لِأَخِيهِ. - 


-‘‘হযরত আবু বকর সিদ্দিক (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত।  রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন,  যখন ১৫ই শাবান রাত (শবে বরাত) তখন আল্লাহ্ পৃথিবীর আকাশে রহমতের দৃষ্টি নিবদ্ধ করেন এবং সকল শ্রেণীর বান্দাদের ক্ষমা করেন, একমাত্র মুশরিক ও মুসলমান ভাইয়ের প্রতি বিদ্বেষ পোষণকারীকে ছাড়া।’’  ৪১

➥{ইমাম বায্যার : আল মুসনাদ : ১/২০৬পৃ : হা/১০৩ এবং ১/১৫৭ পৃ. হা/৮০ (২) ইমাম ইবনে মুনযিরী : আত-তারগীব ওয়াত তারহীব : ৪/২৩৮৭ পৃ.(৩) ইমাম ইবনে আদি : আল-কামিল : ৫/১৯৪৬ পৃ. (৪) ইমাম বায়হাকী : শুয়াবুল ঈমান : ৩/৩৮০ : হা/৩৮২৭ (৫) ইবনে হাজার হায়সামী : মাযমাউয  যাওয়াইদ : ৮/৬৫ পৃ: হাদিস,  ১২৯৫৬ (৬) হাইসামী,  কাশফুল আশতার, ২/৪৩৫ পৃ. হাদিস,  ২০৪৪ (৭) সুয়ূতি, জামিউল আহাদিস, ৩/৪৮৬পৃ. হাদিস,  ২৬২৫}



সনদ পর্যালোচনা:


❏ আল্লামা ইবনে হাজার হাইসামী (رحمة الله) উক্ত হাদিস সম্পর্কে বলেন, 


رَوَاهُ الْبَزَّارُ، وَفِيهِ عَبْدُ الْمَلِكِ بْنُ عَبْدِ الْمَلِكِ، ذَكَرَهُ ابْنُ أَبِي حَاتِمٍ فِي الْجَرْحِ وَالتَّعْدِيلِ، وَلَمْ يُضَعِّفْهُ، وَبَقِيَّةُ رِجَالِهِ ثِقَاتٌ.


-‘‘উক্ত হাদিসটি ইমাম বাজ্জার বর্ণনা করেছেন, সনদে ‘আবদুল মালিক ইবনে আবদুল মালিক’ নামক একজন রাবী রয়েছেন, ইমাম ইবনে আবি হাতেম (رحمة الله) ‘আল জরাহু ওয়া তা’দিল’ গ্রন্থে তার জীবনী আলোচনা করেছেন, তবে তাকে কেউ দুর্বল বলেনি, এছাড়া বাকী সব বর্ণনাকারীও সিকাহ বা বিশুদ্ধ।’’  ৪২

➥{আল্লামা ইবনে হাজার হায়সামী : মাযমাউয যাওয়ায়েদ : ৮/৬৫ পৃ}



❏ হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) এর বর্ণিত হাদিস প্রসঙ্গে আহলে হাদিসের অন্যতম আলেম মোবারকপুরী ইমাম মুনযিরের রায়কে এভাবে বর্ণনা করেন-


أَخْرَجَهُ الْبَزَّارُ وَالْبَيْهَقِيُّ بِإِسْنَادٍ لَا بَأْسَ بِهِ كَذَا فِي التَّرْغِيبِ وَالتَّرْهِيبِ لِلْمُنْذِرِيِّ فِي بَابِ التَّرْهِيبِ مِنَ التَّهَاجُرِ


-‘‘হাদিসটি ইমাম বাজ্জার (رحمة الله) ও ইমাম বায়হাকী (رحمة الله) বর্ণনা করেছেন, সনদে কোন অসুবিধা নেই। এমনটি ইমাম মুনযিরী (رحمة الله) তাঁর তারগীব ওয়াত তারহীবে এমনটি উল্লেখ করেছেন।’’  ৪৩ 

অতএব বুঝা গেল, হাদিসটির মান কমপক্ষে ‘হাসান’।

➥{মোবারকপুরী : তুহফাতুল আহওয়াজী : ৩/৩৬৫ পৃ. হা/৭৩৯}



৭নং হাদিস:


❏ ইমাম আহমদ (رحمة الله)সহ আরও অনেকে সংকলন করেন-


حَدَّثَنَا حَسَنٌ، حَدَّثَنَا ابْنُ لَهِيعَةَ، حَدَّثَنَا حُيَيُّ بْنُ عَبْدِ اللهِ، عَنْ أَبِي عَبْدِ الرَّحْمَنِ الْحُبُلِيِّ، عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ ﷺ قَالَ: يَطَّلِعُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ إِلَى خَلْقِهِ لَيْلَةَ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ، فَيَغْفِرُ لِعِبَادِهِ إِلَّا لِاثْنَيْنِ: مُشَاحِنٍ، وَقَاتِلِ نَفْسٍ


-‘‘হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত।  রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, শাবানের মধ্য রজনীতে আল্লাহ্ তা‘য়ালা তাঁর সৃষ্টির প্রতি বিশেষ করুনার দৃষ্টি প্রদান করেন এবং তাঁর সকল বান্দাকে ক্ষমা করে দেন,  কিন্তু দুই শ্রেণীর মানুষ ব্যতীত। বিদ্বেষ পোষণকারী ও আত্ম হত্যাকারী।’’  ৪৪

➥{(১) ইমাম আহমদ বিন হাম্বল : আল-মুসনাদ : ১১/২১৬ পৃ. হা/৬৬৪২ (২) ইমাম ইবনে মুনযিরী : আত-তারগীব ওয়াত তারহীব : ৪/২৩৯ (৩) খতীব তিবরীজী : মিশকাতুল মাসাবীহ : ২/২৫৫ পৃ. হা/১৩০৭ (৪) ইবনে হাজার হায়সামী : মাযমাউয যাওয়াইদ : ৮/৬৫ পৃষ্ঠা, হা/১২৯৬১ (৫) মুত্তাকী হিন্দী, কানযুল উম্মাল, ৩/৪৬৭পৃ. হা/৭৪৬৫}



সনদ পর্যালোচনা:


❏ উক্ত হাদিস সম্পর্কে আল্লামা হাফেয ইবনে হাজার হাইসামী  বলেন-


رَوَاهُ أَحْمَدُ، وَفِيهِ ابْنُ لَهِيعَةَ وَهُوَ لَيِّنُ الْحَدِيثِ، وَبَقِيَّةُ رِجَالِهِ وُثِّقُوا


-‘‘উক্ত হাদিসটি আহমদ বিন হাম্বল (رحمة الله) তার ‘মুসনাদ’ গ্রন্থে এটি বর্ণনা করেন, উক্ত সনদে ‘ইবনে লাহি‘আহ’ রয়েছেন, তিনি হাদিস বর্ণনার ক্ষেত্রে নরম প্রকৃতির, তবে সনদের বাকী সকল রাবী সিকাহ বা বিশ্বস্ত।’’  ৪৫

➥{আল্লামা ইবনে হাজার হায়সামী : মাযমাউয যাওয়াইদ : ৮/৬৫ পৃষ্ঠা, হা/১২৯৬১}



সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! ইবনে লাহি‘আহ’ (ওফাত. ১৭৪ হি.) একজন বিতর্কিত রাবী, মুহাদ্দিসগণের সিদ্ধান্ত হলো তার বর্ণনাকৃত হাদিসের যদি শাওয়াহেদ থাকে তাহলে সেটার মান ‘হাসান’। যেমন-


❏ আল্লামা ইবনে হাজার হাইসামী  এ বিষয়ে লিখেন- 


فِيهِ ابْنُ لَهِيعَةَ، وَفِيهِ ضَعْفٌ، وَهُوَ حَسَنُ الْحَدِيثِ، وَبَقِيَّةُ رِجَالِهِ ثِقَاتٌ.


 -‘‘বর্ণনাকারী ইবনে লাহিয়া কিছুটা দুর্বল হলেও তার বর্ণিত উক্ত হাদিসটি ‘হাসান’ পর্যায়ের।’’  ৪৬

➥{আল্লামা ইবনে হাজার হায়সামী : মাযমাউয যাওয়াইদ : ৬/৪২ পৃ. হা/৯৮৭৬, হা/১২৩২৪, হা/১২৩৩৪ এবং হা/১৩১৯২}



❏ আল্লামা ইবনে হাজার হাইসামী (رحمة الله) তার  বিষয়ে আরও অনেক উপমা তুলে ধরেন যে- 


وَرِجَالُهُ رِجَالُ الصَّحِيحِ غَيْرَ ابْنِ لَهِيعَةَ، وَهُوَ حَسَنُ الْحَدِيثِ.


-‘‘উক্ত হাদিসের সমস্ত রাবী সহীহ (বুখারী, মুসলিমের ন্যায়) গ্রন্থের ন্যায় সিকাহ বা বিশ্বস্ত,  তবে ইবনে লাহিআহ ছাড়া। তার উক্ত হাদিসটি (শাওয়াহেদ থাকায়) ‘হাসান’ পর্যায়ের।’’  ৪৭

➥{ইবনে হাজার হায়সামী : মাযমাউয যাওয়াইদ : ১০/১৭০ পৃ. হা/১৭৩৪৭}



❏ যেমন তিনি তার কিতাবে আরেক স্থানে লিখেন-


رَوَاهُ الطَّبَرَانِيُّ، وَفِيهِ ابْنُ لَهِيعَةَ وَهُوَ حَسَنُ الْحَدِيثِ عَلَى ضَعْفِهِ.


-‘‘তাবরানী হাদিসটি বর্ণনা করেছেন, সনদে ইবনে লাহি‘আহ রয়েছে, তার দুর্বলতাসহ এ হাদিসটি (শাওয়াহেদ থাকায়) হাসান।’’ 


(হায়সামী : মাযমাউয যাওয়াইদ : ৭/৩০৭ পৃ. হা/১২৩৫৪)


এ ধরনের বহু উদাহরণ ইমাম হাইসামী (رحمة الله)-এর কিতাব থেকে বহু দেয়া যায়।  


(দেখুন-হা/৫১১৪, হা/৫৪৬০, হা/৫৫৭২, হা/৬৫৯৮, হা/৯৪৭০, হা/১০২২৬, হা/১০৭৬২, হা/১১৬৪৫, হা/১১৬৯৫, হা/১২১৩৬, হা/১২৯০০, হা/১৬৪৭৯, হা/১৬৬৪২, হা/১৭২৭৬, হা/১৭৩৪৭, হা/১৭৪০৫, হা/১৭৪৬৬, দারুল কুদ্স, কায়রু, মিশর।)


❏ এ বিষয়ে ইমাম যাহাবী (رحمة الله) উল্লেখ করেন- 


قَالَ حَنْبَلٌ: سَمِعْتُ أَبَا عَبْدِ اللهِ يَقُوْلُ: مَا حَدِيْثُ ابْنِ لَهِيْعَةَ بِحُجَّةٍ، وَإِنِّيْ لأَكْتُبُهُ أَعْتَبِرُ بِهِ، وَهُوَ يَقْوَى بَعْضُهُ بِبَعْضٍ.


-‘‘মুহাদ্দিস আব্দুল্লাহ ইবনে আহমদ ইবনে হাম্বল (رحمة الله) বলেন, আমি আমার পিতা আবু আব্দুল্লাহ ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (رحمة الله)-কে বলতে শুনেছি, তার একক হাদিস হুজ্জাত নয়, আমি কেবল তার শুধু ঐ হাদিসগুলোই লিপিবদ্ধ করেছি যেগুলো অপর কোনো বর্ণনা দ্বারা শক্তিশালী করেছে।’’  ৪৮ 

➥{ক.ইমাম যাহাবী,  মিযানুল ই‘তিদাল,  ২/৪৭৮ পৃ. ক্রমিক.৪৫৩০ এবং সিয়ারু আলামিন নুবালা, ক্রমিক. ৮/১৬ পৃ. ক্রমিক.৪}



❏ তাই ইমাম আহমদ (رحمة الله) শবে বরাতের ইবনে লাহিয়াহ এর হাদিসের অনেক শাওয়াহেদ রয়েছে বিধায় এটি সংকলন করেছেন, যা তাঁর বক্তব্যের সাথে সংকলনের মিল পাওয়া যায়।


❏ এ বিষয়ে আল্লামা ইবনে হাজার হাইসামী  অন্য স্থানে এক হাদিসের সনদ বিশ্লেষণ করতে গিয়ে লিখেন- 


وَإِسْنَادُ أَحْمَدَ أَصَحُّ، وَفِيهِ ابْنُ لَهِيعَةَ، وَقَدِ احْتَجَّ بِهِ غَيْرُ وَاحِدٍ.


-‘‘ইমাম আহমদের সনদটি অধিক বিশুদ্ধ, তবে সনদে ‘ইবনে লাহি‘আহ’ নামক রাবী রয়েছেন। আর তাঁর হাদিস দিয়ে মুহাদ্দিসদের একটি দল দলীল গ্রহণ করেছেন।’’  ৪৯

➥{ইবনে হাজার হায়সামী : মাযমাউয যাওয়াইদ : ১/১৬ পৃ.}



রাবী ইবনে লাহি‘আহ-এর বিষয়ে মুহাদ্দিসদের বক্তব্য:


ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) তার পরিচয় তুলে ধরে বলেন- المصري الفقيه القاضي -‘‘তিনি মিশরের অধিবাসি, কাযি ও ফকীহ ছিলেন।’’ 


❏ ইমাম যাহাবী (رحمة الله) তার জীবনীতে লিখেন-


القَاضِي، الإِمَامُ، العَلاَّمَةُ، مُحَدِّثُ دِيَارِ مِصْرَ مَعَ اللَّيْثِ


-‘‘তিনি ছিলেন তৎকালীন কাযি, ইমাম, আল্লামা, ইমাম লাইসের সাথে মিশরের মুহাদ্দিস।’’ 


(ইমাম যাহাবী, সিয়ারু আলামিন নুবালা, ক্রমিক. ৮/১১ পৃ. ক্রমিক.৪) 


❏ তিনি আরও উল্লেখ করেন-


وَكَانَ اللَّيْثُ أَكْبَرَ مِنْهُ بِسَنَتَيْنِ.


-‘‘ইমাম লাইস (رحمة الله) ইবনে লাহিয়া (رحمة الله) থেকে দুই বছরের বড় ছিলেন।’’ 


(ইমাম যাহাবী, সিয়ারু আলামিন নুবালা, ক্রমিক. ৮/১৫ পৃ. ক্রমিক.৪) 


❏ তিনি তার আরেক গ্রন্থে লিখেছেন-


عَالِمُ الدِّيَارِ الْمِصْرِيَّةِ وَقَاضِيهَا وَمُفْتِيهَا وَمُحَدِّثُهَا، أَبُو عَبْدِ الرَّحْمَنِ الْحَضْرَمِيُّ الْمِصْرِيُّ.


-‘‘তিনি ছিলেন মিশরের সম্মানিত আলিমদের একজন, তিনি ছিলেন কাযি, মুফতী, মুহাদ্দিস, তার উপনাম আবূ আব্দুর রহমান হাদ্বরামী, তিনি মিশরের অধিবাসী ছিলেন।’’ 


(যাহাবী, তারিখুল ইসলাম, ৪/৬৬৮ পৃ. ক্রমিক. ১৫৯)



১. উক্ত রাবী সম্পর্কে ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) বলেন, 


وقال ابن شاهين قال أحمد بن صالح بن لهيعة ثقة وما روى عنه من الأحاديث فيها تخليط يطرح ذلك التخليط


-‘‘ইমাম ইবনে শাহীন (رحمة الله) এবং ইমাম আহমদ ইবন ছালেহ (رحمة الله) বলেন, ‘ইবনে লাহি‘আহ’ বর্ণনাকারী হিসেবে সিকাহ বা বিশ্বস্ত। তবে তার থেকে বর্ণিত হাদিসগুলো সংমিশ্রিত আছে (অর্থাৎ- সহীহ, হাসান,  দ্বঈফ সব মিলিয়েই রয়েছে)।’’  ৫০

➥{ইবনে হাজার আসকালানী : তাহযীবুত তাহযীব : ৫/৩৩১ পৃ.}



২. ইমাম যাহাবী (رحمة الله) তার জীবনীতে লিখেন-


أَبُو الطَّاهِرِ بنُ السَّرْحِ: سَمِعْتُ ابْنَ وَهْبٍ يَقُوْلُ: حَدَّثَنِي -وَاللهِ- الصَّادِقُ البَارُّ عَبْدُ اللهِ بنُ لَهِيْعَةَ.


-‘‘ইমাম ইবনে ওয়াহাব (رحمة الله) বলেন, ‘আল্লাহর কসম! আব্দুল্লাহ ইবনে লাহিয়া হাদিস বর্ণনার ক্ষেত্রে সত্যবাদী এবং সৎ ব্যক্তি।’’  ৫১

{ক.ইমাম যাহাবী,  মিযানুল ই‘তিদাল,  ২/৩৬৮ পৃ. ক্রমিক.৪৯০৭

খ.ইবনে হাজার আসকালানী, তাহযীবুত-তাহযীব,  ৫/৩২৯ পৃ. 

গ. যাহাবী, সিয়ারু আলামিন নুবালা, ক্রমিক. ৮/১১ পৃ. ক্রমিক.৪}



৩. ইমাম যাহাবী (رحمة الله) উল্লেখ করেন- 


قَالَ ابْنُ حِبَّانَ: كَانَ ابْنُ لَهِيعَةَ شَيْخًا صَالِحًا


-‘‘ইমাম ইবনে হিব্বান (رحمة الله) বলেন, তিনি ছিলেন হাদিসের শায়খ, হাদিস বর্ণনার ক্ষেত্রে তিনি একজন সৎ বর্ণনাকারী।’’  ৫২ 

➥{ক.ইমাম যাহাবী, মিযানুল ই‘তিদাল,  ২/৩৬৮ পৃ. ক্রমিক.৪৯০৭ এবং তারিখুল ইসলাম, ৪/৬৬৮ পৃ. ক্রমিক. ১৫৯}



❏ ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) উল্লেখ করেছেন- وقال بن حبان كان صالح -‘‘ইমাম ইবনে হিব্বান (رحمة الله) বলেন, তিনি সৎ ব্যক্তি।’’ 


(ইবনে হাজার, তা‘রিফু আহলিল তাকদীস, ৫৪ পৃ. ক্রমিক. ১৪০)


৪. বিশ্ববিখ্যাত মুহাদ্দিস ইমাম আবু দাউদ বলেন, 


وَقَالَ أَبُو دَاوُدَ: سَمِعْتُ أَحْمَدَ بنَ حَنْبَلٍ يَقُوْلُ: مَا كَانَ مُحَدِّثَ مِصْرَ، إِلاَّ ابْنُ لَهِيْعَةَ.


-‘‘আমি ইমাম আহমদ (رحمة الله) কে বলতে শুনেছি, মিশরের মধ্যে (তৎকালিন সময়ে) ‘ইবনে লাহিয়া’ ছাড়া কোনো মুহাদ্দিস ছিল না।’’  ৫৩

➥{ক.ইমাম যাহাবী,  মিযানুল ই‘তিদাল,  ২/৪৭৮ পৃ. ক্রমিক.৪৫৩০ এবং সিয়ারু আলামিন নুবালা, ক্রমিক. ৮/১১ পৃ. ক্রমিক.৪ এবং তারিখুল ইসলাম, ৪/৬৬৮ পৃ. ক্রমিক. ১৫৯}



৫. ইমাম যাহাবী (رحمة الله) উল্লেখ করেন-


وَقَالَ زَيْدُ بنُ الحُبَابِ: قَالَ سُفْيَانُ الثَّوْرِيُّ: عِنْدَ ابْنِ لَهِيْعَةَ الأُصُولُ، وَعِنْدَنَا الفُرُوْعُ.


-‘‘ইমাম সুফিয়ান সাওরী (رحمة الله) বলেন, ইবনে লাহি‘আহ এর নিকট ছিল اصول বা হাদিসের মূল ভিত্তি (কারণ তিনি ছিলেন মিশরের কাযি বা বিচারপতি),  আর আমাদের নিকট হল তাঁর শাখা-প্রশাখা।’’  ৫৪

➥{ইমাম যাহাবী,  মিযানুল ই‘তিদাল,  ২/৪৭৮ পৃ. ক্রমিক.৪৫৩০ এবং সিয়ারু আলামিন নুবালা, ক্রমিক. ৮/১১ পৃ. ক্রমিক.৪ এবং তারিখুল ইসলাম, ৪/৬৬৮ পৃ. ক্রমিক. ১৫৯}



৬. ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) লিখেন-


قلت قال الحاكم استشهد به مسلم في موضعين


-‘‘আমি (ইবনে হাজার) বলি, ইমাম হাকেম (رحمة الله) বলেন, ইমাম মুসলিম (رحمة الله) তার হাদিস সহীহ মুসলিমের সাক্ষ্য হিসেবে দুটি সংকলন করেছেন।’’ 


(ইবনে হাজার, তাহযিবুত তাহযিব, ৫/৩৭৭ পৃ. ক্রমিক. ৬৪৮, ইমাম মুগলতাঈ, ইকমালু তাহযিবুল কামাল, ৮/১৪৩ পৃ. ক্রমিক. ৩১৫০) 


❏ ইমাম হাকেম (رحمة الله) তার হাদিস সহীহ হিসেবে ১০০টির বেশী সনদে তার ‘আল-মুস্তাদরাকে’ এনেছেন, একটি সনদ প্রসঙ্গে ইমাম যাহাবী (رحمة الله) তার সাথে একমত পোষণ করে লিখেছেন- استشهد به مسلم -‘‘ইমাম মুসলিম (رحمة الله) সহীহ মুসলিমে সাক্ষ্য প্রদান করেছেন।’’ 


(যাহাবী, তালখীছ, হা/৭৩৭-এর আলোচনা।)


৭. ইমাম যাহাবী (رحمة الله)সহ অনেক মুহাদ্দিস তার জীবনীতে উল্লেখ করেছেন-


وَعَنْهُ: حَفِيْدُهُ؛ أَحْمَدُ بنُ عِيْسَى بنِ عَبْدِ اللهِ، وَعَمْرُو بنُ الحَارِثِ، وَالأَوْزَاعِيُّ، وَشُعْبَةُ، وَالثَّوْرِيُّ


-‘‘তার থেকে হাদিস বর্ণনা করতেন, .....ইমাম আওযায়ী, ইমাম শু‘বা, ইমাম সুফিয়ান সাওড়ী (رحمة الله)।’’ 


(যাহাবী, সিয়ারু আলামিন নুবালা, ক্রমিক. ৮/১১ পৃ. ক্রমিক.৪) 


নির্ভরযোগ্য সকল হাদিস গবেষক মুহাদ্দিসদের নিকট একটি বিষয় সুস্পষ্ট যে, ইমাম শু‘বা ইবনে হাজ্জাজ (رحمة الله) কোন যঈফ রাবী থেকে হাদিস বর্ণনা করতেন না। বুঝা গেল ইবনে লাহিয়াহ তাঁর নিকট সিকাহ ছিল।


৮. ইমাম যাহাবী (رحمة الله) লিখেন-


لاَ رَيْبَ أَنَّ ابْنَ لَهِيْعَةَ كَانَ عَالِمَ الدِّيَارِ المِصْرِيَّةِ، هُوَ وَاللَّيْثُ مَعاً، كَمَا كَانَ الإِمَامُ مَالِكٌ فِي ذَلِكَ العَصْرِ عَالِمَ المَدِيْنَةِ، وَالأَوْزَاعِيُّ عَالِمَ الشَّامِ، وَمَعْمَرٌ عَالِمَ اليَمَنِ، وَشُعْبَةُ وَالثَّوْرِيُّ عَالِمَا العِرَاقِ، وَإِبْرَاهِيْمُ بنُ طَهْمَانَ عَالِمَ خُرَاسَانَ


-‘‘এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, মিশরের মধ্যে তৎকালিন সময়ে ইবনে লাহিয়াহ এবং তাঁর সাথে ইমাম লাইস (رحمة الله) বিজ্ঞ আলিম ছিলেন, এমনিভাবে ইমাম মালেক (رحمة الله) তাঁর যুগে ছিলেন মদিনায়, ইমাম আওযায়ী (رحمة الله) শামে, মা‘মার ছিলেন ইয়ামানে, ইমাম শু‘বা (رحمة الله) এবং সুফিয়ান সাওড়ী (رحمة الله) ছিলেন ইরাকে, উবরাহিম তাহমান (رحمة الله) ছিলেন খুরাসানে।’’ 


(ইমাম যাহাবী, সিয়ারু আলামিন নুবালা, ক্রমিক. ৮/১৮ পৃ. ক্রমিক.৪)


৯. ইমাম যাহাবী (رحمة الله) আরও লিখেন-


قَالَ أَبُو دَاوُدَ: عَنْ أَحْمَدَ: مَا كَانَ مُحَدِّثَ مِصْرَ، إِلاَّ ابْنُ لَهِيْعَةَ.


-‘‘ইমাম আবু দাউদ (رحمة الله) ইমাম আহমদ (رحمة الله) হতে বর্ণনা করেন, মিশরে ইবনে লাহি‘আহ ছাড়া (তাঁর যামানায়) কোন মুহাদ্দিস ছিল না।’’


(যাহাবী, সিয়ারু আলামিন নুবালা, ক্রমিক. ৮/১৩ পৃ. ক্রমিক.৪)


১০. লিখেন-


قَالَ ابْنُ عَدِيٍّ : أَحَادِيْثُه أَحَادِيْثٌ حِسَانٌ، مَعَ مَا قَدْ ضَعَّفُوهُ، فَيُكْتَبُ حَدِيْثُهُ


-‘‘ইমাম ইবনে আদী (رحمة الله) বলেন, তার সামান্য দুর্বলতাসহ তার হাদিসের মান ‘হাসান’, অতএব আমরা তাঁর হাদিস লিপিবদ্ধ করতাম।’’ 


(যাহাবী, সিয়ারু আলামিন নুবালা, ক্রমিক. ৮/২২ পৃ. ক্রমিক.৪)


১১. ইমাম যাহাবী (رحمة الله) লিখেন- قَالَ أَبُو حَاتِمٍ: لا بَأْسَ بِهِ -‘‘ইমাম আবু হাতেম (رحمة الله) বলেন, তার হাদিস গ্রহণ করতে কোন অসুবিধা নেই।’’ 


(যাহাবী, তারিখুল ইসলাম, ৪/৬৬৮ পৃ. ক্রমিক. ১৫৯)


১২. ইমাম সুয়ূতি (رحمة الله) তার ‘তা‘কিবাত’ গ্রন্থে লিখেছেন ইমাম মুসলিম (رحمة الله) তাঁর সহীহ মুসলিমে তার হাদিস মুতাবা‘আত হিসেবে উল্লেখ করেছেন।


এমনকি আহলে হাদিসের অন্যতম গুরু নাসিরুদ্দিন আলবানী তার ‘সিলসিলাতুল আহাদিসুস সহীহাহ’ গ্রন্থে একে নির্ভরযোগ্য হাদিসে তালিকায় স্থান দিয়েছেন। 


(আলবানী, ‘সিলসিলাতুল আহাদিসুস সহীহাহ, ৪/৮৬ পৃষ্ঠা, হা/১৫৬৩) তাই এ হাদিসটির মান কমপক্ষে ‘হাসান’ তাতে কোনো সন্দেহ নেই।



৮নং হাদিস:


❏ ইমাম ইবনে মাযাহ (رحمة الله)সহ আরও অনেকে সংকলন করেন-


حَدَّثَنَا رَاشِدُ بْنُ سَعِيدِ بْنِ رَاشِدٍ الرَّمْلِيُّ، حَدَّثَنَا الْوَلِيدُ، عَنْ ابْنِ لَهِيعَةَ، عَنْ الضَّحَّاكِ بْنِ أَيْمَنَ، عَنْ الضَّحَّاكِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ عَرْزَبٍ عَنْ أَبِي مُوسَى الْأَشْعَرِيِّ، عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: إِنَّ اللَّهَ لَيَطَّلِعُ فِي لَيْلَةِ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ فَيَغْفِرُ لِجَمِيعِ خَلْقِهِ إِلَّا لِمُشْرِكٍ أَوْ مُشَاحِنٍ - 


-‘হযরত আবু মুসা আল আশ‘আরী (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত।  তিনি রাসূল (ﷺ) হতে বর্ণনা করেন যে,  তিনি ইরশাদ করেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তা‘য়ালা শাবানের ১৫ তারিখ রাতে সমস্ত সৃষ্টির দিকে রহমতের দৃষ্টিতে তাকান এবং তাদের ক্ষমা করেন, হ্যা তবে মুশরিক ও হিংসুক ব্যতীত।’’  ৫৫

➥{ইমাম ইবনে মাজাহ : ১/৪৪৫ পৃ. হাদিস,  ১৩৯০ (২) ইমাম আবু বকর কেনানী : মিসবাহুজ জুযযায়াহ্ : ১/৪৪৬ : হা/৪৮৭ (৩) বায়হাকী : শুয়াবুল ঈমান : ৩/৩৮২ পৃ. (৪) ইমাম বায়হাকী : ফাযায়েলে ওয়াক্ত : ১/১৩২ পৃ. হাদিস,  ২৯ (৫) খতিব তিবরিযী : মিশকাতুল মাসাবীহ : ১/৪০৯পৃ. : হা/১৩০৬ (৬) মোল্লা আলী ক্বারী, মিরকাত, ৩/৩৪৮ পৃ. (৭) ইবনে মুনযিরী, আত্-তারগীব ওয়াত তারহীব, ৪/২৪০পৃ. (৮-৯) মুত্তাকী হিন্দী, কানযুল উম্মাল, ১২/৩১৫ পৃ. হা/৩৫১৮২ ও ১২/৩১৩পৃ. হা/৩৫১৭৪, (১০) যায়লাঈ, তাখরীজে আহাদিসুল আছার, ৩/২৬৫পৃ. (১১) ইবনে কাসির, জামিউল মাসানীদ ওয়াল সুনান, ১০/২৮২ পৃ. হা/১৩০৭৬, (১২) ইবনে হাজার হাইসামী, মাযমাউয যাওয়াইদ, ৮/৬৫ পৃ. হা/১২৯৬০ (১৩) কেনানী, মিসবাহুয্যুজ্জাহ, ২/১০পৃ. হাদিস,  ৮০ (১৪) শায়খ ইউসুফ নাবহানী, ফতহুল কাবীর, ১/৩২১ পৃ. হা/৩৪৬২, (১৫) মুত্তাকী হিন্দী, কানযুল উম্মাল, ১২/৩১৩পৃ. হা/৩৫১৭১ (১৬) সুয়ূতি, জামেউস সগীর, ১/২৭০০পৃ. হাদিস,  ২৭০০ (১৭) আলবানী, সহিহুল জা‘মে, হা/১৮১৯ ও ৭৭১,  ১৮৯৮, তিনি বলেন, সনদটি ‘হাসান’, সিলসিলাতুল আহাদিসুল সহীহা, হা/১১৪৪}



সনদ পর্যালোচনা


❏ এ হাদিসের সনদটিও উপরের সনদের ন্যায় ‘হাসান’ পর্যায়ের। তবে আহলে হাদিসের অন্যতম আলেম মোবারকপুরী লিখেছেন-


قُلْتُ فِي سَنَدِ حديث أبي موسى الأشعري عند بن ماجه بن لَهِيعَةَ وَهُوَ ضَعِيفٌ


-‘‘আমি বলি, হযরত আবূ মূসা আশ‘আরী (رحمة الله)-এর বর্ণনা যা ইমাম ইবনে মাযাহ (رحمة الله) সংকলন করেছেন তা রাবী ‘ইবনে লাহি‘আহ’ এর কারণে যঈফ।’’  ৫৬ 

➥{মোবারকপুরী : তুহফাতুল আহওয়াজী : ৩/৩৬৬ পৃ.)}



ইবনে লাহি‘আ-এর হাদিসের গ্রহণযোগ্যতা ‘হাসান’, এ বিষয়ে ইতোপূর্বের হাদিসের আলোচনায় বিস্তারিত আলোকপাত করা হয়েছে, পাঠকবৃন্দের সেখানে দেখে নেয়ার অনুরোধ রইল।



৯নং হাদিস:


أَخْبَرَنَا أَبُو طَاهِرٍ الْفَقِيهُ، أَخْبَرَنَا أَبُو حَامِدِ بْنُ بِلَالٍ، حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ إِسْمَاعِيلَ الْأَحْمَسِيُ، حَدَّثَنَا الْمُحَارِبِيُّ، عَنِ الْأَحْوَصِ بْنِ حَكِيمٍ، عَنِ الْمُهَاصِرِ بْنِ حَبِيبٍ، عَنِ مَكْحُولٍ، عَنْ أَبِي ثَعْلَبَةَ أَنَّ النَّبِيَّ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - قَالَ:يَطَّلِعُ اللَّهُ إِلَى عِبَادِهِ لَيْلَةَ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ، فَيَغْفِرُ لِلْمُؤْمِنِينَ وَيُمْهِلُ الْكَافِرِينَ، وَيَدَعُ أَهْلَ الْحِقْدِ لِحِقْدِهِمْ حَتَّى يَدْعُوهُ- 


-‘‘হযরত আবু ছালাবাহ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত। প্রিয় নবী (ﷺ) ইরশাদ করেন,  আল্লাহ্ স্বীয় বান্দাদের প্রতি শাবানের মধ্য রজনীতে (শবে বরাত) করুনা ভরা হৃদয়ে ক্ষমার দৃষ্টিতে তাকান, ফলে মুমিনদের ক্ষমা করে দেন এবং কাফিরদেরকে ঈমান আনার সুযোগ দেন, আর হিংসুকদেরকে তাদের হিংসার মাঝে ছেড়ে দেন,  যতক্ষণ না তারা তাদের হিংসা বিদ্বেষ ত্যাগ করে।’’  ৫৭

➥{ইমাম বায়হাকী : সুনানে সগীর : ২/১২২পৃ. : হা/১৪২৬ (২) ইমাম মুনযিরী : আত-তারগীব ওয়াত তারহীব : ৪/২৪০ পৃ. হা/২২ (৩) ইমাম বায়হাকী : ফাযায়েলে ওয়াক্ত : ১/পৃ- ১২০ : হা/২৩ (৪) ইমাম বায়হাকী : শুয়াবুল ঈমান : ৫/৩৫৯ পৃ. হা/৩০৫৫১ (৫) ইমাম তাবরানী : মু‘জামুল কাবীর, (৬) ইবনে হাজার হায়সামী : মাযমাউয যাওয়াইদ : ৮/৬৫ পৃষ্ঠা, হা/১২৯৬২ (৭) আবি আছিম,  আস্-সুন্নাহ, ১/২২৩পৃ. হা/৫১১ (৮) শায়খ ইউসুফ নাবহানী, ফতহুল কাবীর, ১/১৩৮পৃ. হা/১৪১৭ (৯) মুত্তাকী হিন্দী, কানযুল উম্মাল, ৩/৪৬৪পৃ. হাদিস,  ৭৪৫১ (১০) ও ১২/৩১৫ পৃ. হাদিস,  ৩৫১৮৩ (১১) সুয়ূতি, জামেউস সগীর, ১/৭৭৩পৃ, হা/৭৭৩ (১২) ও তাঁর জামিউল আহাদিস, ৩/৪৮৩ পৃ. হা/২৬২০ ও ৮/২৭২ পৃ. হা/৭২৮৩ (১৩) ইবনে কূনী,  আল-মুসনাদ,  ১/১৬০ পৃ. (১৪) ইবনে কাসীর, জামিউল মাসানীদ ওয়াল সুনান,  ৭/৫৩০ পৃ. হা/৯৬৯৬ (১৫) ইবনে হাজার আসকালানী, ইত্তিহাফুল মুহরাহ, ১৩/২৮৩ পৃ. হাদিস,  ১৬৭২৯ (১৬) সালিম র্জারার,  ইমা ইলা যাওয়াইদ, ৬/১২৫ পৃ. হাদিস,  ৫৩৮৫ (১৭) আলবানী,  সহীহাহ,  ৪/৮৬ পৃ. হা/১৫৬৩, তিনি বলেন, সনদটি ‘হাসান’।}



সনদ পর্যালোচনা:


❏ উক্ত হাদিস সম্পর্কে আল্লামা ইবনে হাজার হাইসামী (رحمة الله) বলেন, 


رَوَاهُ الطَّبَرَانِيُّ، وَفِيهِ الْأَحْوَصُ بْنُ حَكِيمٍ وَهُوَ ضَعِيفٌ.-


-‘‘ইমাম তাবরানী (رحمة الله) হাদিসটি বর্ণনা করেছেন, উক্ত সনদে ‘আহওয়াছ ইবনে হাকীম’ তিনি দুর্বল রাবী।’’  ৫৮

➥{আল্লামা নুরুদ্দীন ইবনে হাজার হায়সামী : মাযমাউয যাওয়াইদ : ৮/৬৫ পৃ.}



আমি বলবো, ইমাম হাইসামী (رحمة الله)-এর একক সিদ্ধান্ত বাস্তবতার বিপরীত, কেননা অনেক ইমাম তাকে সিকাহ বা বিশ্বস্ত বলেছেন। 


❏ আল্লামা মুগলতাঈ (رحمة الله) লিখেন-


وفي كتاب الثقات لابن خلفون


-‘‘ইমাম ইবনে খালফুন (رحمة الله) তাকে সিকাহ রাবীর তালিকায় স্থান দিয়েছেন।’’ 


(মুগলতাঈ, ইকমালু তাহযিবুল কামাল, ৪/১২৩ পৃ. ক্রমিক.১৩১৭, ইবনে হাজার আসকালানী, তাহযিবুত তাহযিব, ২/৪৫০ পৃ. ক্রমিক.৭৮২)


❏ ইমাম ইজলী (ওফাত. ২৬১ হি.) লিখেন-


الْأَحْوَص بن حَكِيم شَامي لَا بَأْس بِهِ


-‘‘তিনি শাম দেশের অধিবাসী ছিলেন, তাঁর হাদিস গ্রহণ করতে কোন অসুবিধা নেই।’’ 


(ইজলী, তারিখুস সিকাত, ১/২১৩ পৃ. ক্রমিক.৫০, ইমাম মিয্যী, তাহযিবুল কামাল, ২/২৯২ পৃ. ক্রমিক.২৮৭)


❏ ইমাম ইবনে আবি হাতেম (رحمة الله) উল্লেখ করেছেন- وكان ثقة. -‘‘তিনি সিকাহ বা বিশ্বস্ত ছিলেন।’’ 


(ইবনে আবি হাতেম, জারহু ওয়া তা‘দীল, ২/৩২৭ পৃ. ক্রমিক. ১২৫২) 


❏ তবে ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) উল্লেখ করেছেন- وقال أبو حاتم لا بأس به -‘‘ইমাম আবু হাতেম (رحمة الله) বলেন, তার হাদিস গ্রহণ করতে কোন অসুবিধা নেই।’’ 


(ইবনে হাজার আসকালানী, তাহযিবুত তাহযিব, ২/৪৫০ পৃ. ক্রমিক.৭৮২)


❏ ইমাম ইবনে সা‘দ (ওফাত. ২৩০ হি.) বলেন-


وكان معروفًا قليل الحديث. وهو أبو الأحوص بن حكيم الشامي.


-‘‘তিনি খুব পরিচিত মুহাদ্দিস, তবে তিনি খুব কম হাদিস বর্ণনা করতেন,......তিনি শাম (সিরিয়া) দেশের অধিবাসী ছিলেন।’’ 


(আত-তবকাতুল কোবরা, ক্রমিক.৭/৩১৩ পৃ. ক্রমিক. ৩৮৪৮)


❏ ইমাম ইবনে আদী  বলেন-


قَالَ عَلِيّ وسمعت يَحْيى بْنَ سَعِيد يَقُولُ عندي ثقة.


-‘‘মুহাদ্দিস আলী ইবনে মাদীনী (رحمة الله) বলেন, আমি ইমাম ইয়াহইয়া ইবনে সাঈদ (رحمة الله) কে বলতে শুনেছি, আমার নিকট আহওয়াছ সিকাহ রাবী।’’ 


(ইবনে আদী, আল-কামিল, ২/১১৩ পৃ. ক্রমিক. ২২৮, ইমাম মিয্যী, তাহযিবুল কামাল, ২/২৯২ পৃ. ক্রমিক.২৮৭)


❏ ইমাম মিয্যী (رحمة الله) আরও উল্লেখ করেন-


وَقَال في موضع آخر : والأَحوص ثقة.


-‘‘ইমাম আলী ইবনে মাদীনী (رحمة الله) থেকে আরেক সূত্র রয়েছে যে, তিনি বলেন, আহওয়াছ রাবী হিসেবে বিশ্বস্ত।’’ 


(ইমাম মিয্যী, তাহযিবুল কামাল, ২/২৯২ পৃ. ক্রমিক.২৮৭) 


❏ তিনি আরও উল্লেখ করেন-


وَقَال يعقوب بْن سفيان : كان - زعموا - رجلا، عابدا، مجتهدا


-‘‘মুহাদ্দিস ইয়াকুব ইবনে সুফিয়ান (رحمة الله) বলেন, আমার ধারণা তিনি আবেদ (ইবাদত পরায়ন), মুজতাহিদ ব্যক্তি ছিলেন।’’ 


(ইমাম মিয্যী, তাহযিবুল কামাল, ২/২৯২ পৃ. ক্রমিক.২৮৭) 


কোনো রাবী হাদিসে অত্যন্ত দুর্বল হলে তিনি কখনো মুজতাহিদ হতে পারে না।


❏ শুধু তাই নয় তিনি আরও উল্লেখ করেন-


وَقَال الدَّارَقُطْنِيُّ: يعتبر به إذا حدث عنه ثقة. وَقَال أبو أحمد بْن عدي : له روايات ، وهو ممن يكتب حديثه، وقد حدث عنه جماعة من الثقات


-‘‘ইমাম দারাকুতনী (رحمة الله) বলেন, তাঁর সে হাদিসের উপর নির্ভর করা হবে যে হাদিস তার থেকে সিকাহ বা বিশ্বস্ত রাবীর মাধ্যমে বর্ণনা করেছেন। ইমাম আবু আহমদ ইবনে আদী (رحمة الله) বলেন, তার হাদিস আমরা লিপিবদ্ধ করতাম, তাঁর থেকে এক জামাত বিশ্বস্ত মুহাদ্দিস হাদিস বর্ণনা করেছেন।’’


(ইমাম মিয্যী, তাহযিবুল কামাল, ২/২৯৩ পৃ. ক্রমিক.২৮৭)


আমাদের কতিপয় ভাই তাকে হেফ্যে বা স্মরণশক্তিতে ক্রুটি ছিল বলে উল্লেখ করে থাকেন। যেমন- বলে থাকেন, 


❏ ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) লিখেছেন-


ضعيف الحفظ من الخامسة وكان عابدا


-‘‘তাঁর দুর্বলতা হেফযে বা স্মরণশক্তিতে, তবে তিনি আবেদ ব্যক্তি ছিলেন।’’ 


(ইবনে হাজার, তাক্বরীবুত তাহযিব, ৯৬ পৃ. ক্রমিক.২৯০)


সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! আমি এ কিতাবের শুরুতে আলোকপাত করেছি যে, কোন রাবীর হেফ্যে সামান্য ক্রটি বা দুর্বলতা থাকলে তার হাদিসের মান ‘হাসান’ স্তরের বলা হবে। তাই এটির মান সেই হিসেবেই কমপক্ষে ‘হাসান’ বলা উচিত ছিল তাদের, কিন্তু আহলে হাদিসগণ কি তাই বলেছেন! এ সনদ শক্তিশালী তাতে কোনো সন্দেহ নেই। ইমাম হাইসামী (رحمة الله)-এর তাহকীক ভুল।


❏ আহলে হাদিসের অন্যতম আলেম মোবারকপুরী ইমাম মুনযিরের বক্তব্যকে এভাবে উলে­খ করেন-


قَالَ الْبَيْهَقِيُّ وَهُوَ أَيْضًا بَيْنَ مَكْحُولٍ وَأَبِي ثَعْلَبَةَ مُرْسَلٌ جَيِّدٌ


-‘‘ইমাম বায়হাকী (رحمة الله) উক্ত হাদিস সম্পর্কে বলেন, উক্ত সনদটি মুরসাল, তবে শক্তিশালী।’’  ৫৯

➥{মোবারকপুরী : তুহফাতুল আহওয়াজী : ৩/৩৬৫ পৃ. হা/৭৩৯, ইমাম মুনযির : আত-তারগীব ওয়াত তারহীব : ৪/২৪০ পৃ.}



১০নং হাদিস


❏ ইমাম বাজ্জার (رحمة الله) সংকলন করেন-


حدثنا أبو غسان روح بن حاتم حدثنا عَبْد الله بن غالب حدثنا هشام بن عَبْد الرَّحْمن عَنِ الأَعْمَشِ عَنْ أَبِي صالح عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : إِذَا كَانَ لَيْلَةُ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ، يَغْفِرُ اللَّهُ لِعِبَادِهِ، إِلَّا لِمُشْرِكٍ أَوْ مُشَاحِنٍ


-‘‘হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত।  আঁকা (ﷺ) ইরশাদ ফরমান,  যখন শাবানের ১৫ই তারিখের রাত আগমন করে তখন ‘‘আল্লাহ্ তা‘য়ালা ঈমানদার বান্দাদেরকে ক্ষমা করে দেন, শুধু মুশরিক (আল্লাহর সাথে শরীককারী) ও হিংসুক ব্যতীত।’’  ৬০

➥{ইমাম বায্যার : আল মুসনাদ : ১৬/১৬১ পৃ. : হা/৯২৬৮ (২) ইবনে হাজার হায়সামী : মাযমাউয যাওয়াইদ,  হাদিস, ৮/৬৫ পৃ. হা/১২৯৫৮ (৩) সুয়ূতি, জামিউল আহাদিস, ৩/৪৮৪ পৃ. হাদিস,  ২৬২৩, (৪) খতিবে বাগদাদ, তারীখে বাগদাদ, ১৪/২৮৫ পৃ. (৫) ইবনুল জাওযী, আল-ইলালুল মুতানাহিয়্যাহ, ২/৫৬০ পৃ. হা/৯২১ (৬) ইমাম তবারী, শরহে উসূলুল আকায়েদ, ৩/৪৯৫ পৃ. হা/৭৬৩, হাইসামী, কাশফুল আশতার, ২/৪৩৬পৃ. হা/২০৪৬}



সনদ পর্যালোচনা:


❏ আল্লামা ইবনে হাজার হাইসামী উক্ত হাদিসটি বর্ণনা করে বলেন-


رَوَاهُ الْبَزَّارُ، وَفِيهِ هِشَامُ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ وَلَمْ أَعْرِفْهُ، وَبَقِيَّةُ رِجَالِهِ ثِقَاتٌ.-


-‘‘উক্ত হাদিসটি ইমাম বাজ্জার (رحمة الله) ‘মুসনাদ’ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন, সনদে ‘হিশাম ইবনে আব্দুর রহমান’ নামক একজন রাবী রয়েছে, তাকে আমি চিনি না। সনদের বাকী সমস্ত রাবী সিকাহ বা বিশ্বস্ত।’’  ৬১

➥{ইবনে হাজার হায়সামী : মাযমাউয যাওয়াইদ,  হাদিস, ৮/৬৫ পৃ. হা/১২৯৫৮ }



সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! ইমাম হাইসামী (رحمة الله)-এর সিদ্ধান্ত বাস্তবতার বিপরীত। 


❏ ইমাম বুখারী (رحمة الله)ই স্বয়ং তাঁর জীবনী বর্ণনা করেছেন। তিনি লিখেছেন- هِشام بْن عَبد الرَّحمَن، الكُوفيُّ. -‘‘হিশাম বিন আব্দুর রহমান তিনি কুফার অধিবাসী একজন মুহাদ্দিস।’’ 


(বুখারী, আত-তারিখুল কাবীর, ৮/১৯৯ পৃ. ক্রমিক.২৭০০) 


❏ অথচ ইমাম হাইসামী (رحمة الله) তার আরেক কিতাবে উক্ত রাবীর হাদিস উল্লেখ করেন এভাবে-


حَدَّثَنَا رَوْحُ بْنُ حَاتِمٍ، ثنا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ غَالِبٍ، ثنا هِشَامُ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ الْكُوفِيُّ، ثنا عَلْقَمَةُ بْنُ مَرْثَدٍ، عَنْ أَبِي الرَّبِيعِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ


-‘‘হিশাম বিন আব্দুর রহমান কুফী তিনি তার শায়খ আলকামা ইবনে মারছাদ (رحمة الله) হতে বর্ণনা করেন, তিনি আবি রাবে‘ঈ (رحمة الله) হতে তিনি হযরত আবূ হুরায়রা (رضي الله عنه) হতে।’’ 


(হাইসামী, কাশফুল আশতার, ১/১৪০ পৃ. হা/৯৩০) 


এখানে উক্ত রাবীর শায়খ আ‘মাশ (رحمة الله)-এর স্থানে আলকামা ইবনে মারছাদ, তিনি সিহাহ সিত্তার রাবী। উসূলে হাদিসের নীতিমালা হলো যে রাবী থেকে দুজন সুপ্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস হাদিস বর্ণনা করবে এবং তিনিও দুজন হতে বর্ণনা করবেন তিনি মাজহুল বা অপরিচিত নন। সে হিসেবে উক্ত রাবী মাজহুল নন। অনুরূপ আরেকটি সনদ ইমাম তাবরানী (رحمة الله) সংকলন করেছেন। 


(তাবরানী, মু‘জামুল আওসাত, ৬/২০২ পৃ. হা/৬১৮৮) 


❏ শুধু তাই নয় উক্ত রাবীর আরেকটি সূত্র ইমাম তাবরানী (رحمة الله) তুলে ধরেন এভাবে-


حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ زَكَرِيَّا الْغَلَابِيُّ قَالَ: نا عُبَيْدُ اللَّهِ بْنُ مُحَمَّدٍ ابْنُ عَائِشَةَ التَّيْمِيُّ قَالَ: ثَنَا هِشَامُ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ الْكُوفِيُّ، عَنْ حَمَّادٍ، عَنْ إِبْرَاهِيمَ، عَنْ عَلْقَمَةَ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ


-‘‘এখানে হিশামের শায়খ হলেন বিখ্যাত ফকীহ, ইমাম আযমের ফিকহের উস্তাদ ইমাম হাম্মাদ বিন সুলাইমান (رحمة الله), আর শিষ্য হলেন উবায়দুল্লাহ।’’ 


(তাবরানী, মু‘জামুল আওসাত, ৬/১৭৮ পৃ. হা/৬১২১) 


❏ ইমাম খতিবে বাগদাদী (رحمة الله) সংকলন করেন-


وَأَخْبَرَنَا الْقَاضِي أَبُو عُمَرَ الْقَاسِمُ بْنُ جَعْفَرِ بْنِ عَبْدِ الْوَاحِدِ الْهَاشِمِيُّ، قَالَ: حَدَّثَنَا أَبُو بِشْرٍ عِيسَى بْنُ إِبْرَاهِيمَ بْنِ عِيسَى الصَّيْدَلانِيُّ، قَالَ: حَدَّثَنَا أَبُو يُوسُفَ الْقُلُوسِيُّ، قَالَ: حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ غَالِبٍ الْعَبَّادَانِيُّ، قَالَ: حَدَّثَنَا هِشَامُ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ الْكُوفِيُّ، عَنِ الأَعْمَشِ، عَنْ أَبِي صَالِحٍ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ،


-‘‘এ সনদে তাঁর শায়খ হলেন তাবেয়ী ‘আমাশ (رحمة الله) এবং তাঁর ছাত্র হলেন আব্দুল্লাহ ইবনে গালেব।’’ 


(ইমাম খতিবে বাগদাদী, তারিখে বাগদাদ, ১৬/৪১৬ পৃ. ক্রমিক.৭৫৩২) 


তাই বাস্তবতার আলোকে তিনি কখনই মাজহুল রাবী নন।




১১ নং হাদিস:


❏ ইমাম বাজ্জার (رحمة الله) সংকলন করেন-


حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ مَنْصُورٍ، قَالَ: أَخْبَرَنَا أَبُو صَالِحٍ الْحَرَّانِيُّ يَعْنِي عَبْدَ الْغَفَّارِ بْنَ دَاوُدَ، قَالَ: أَخْبَرَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ لَهِيعَةَ، عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ زِيَادِ بْنِ أَنْعَمَ، عَنْ عُبَادَةَ بْنِ نُسَيٍّ، عَنْ كَثِيرِ بْنِ مُرَّةَ، عَنْ عَوْفٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَطَّلِعُ اللَّهُ تَبَارَكَ وَتَعَالَى عَلَى خَلْقِهِ لَيْلَةَ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ، فَيَغْفِرُ لَهُمْ كُلَّهُمْ، إِلَّا لِمُشْرِكٍ، أَوْ مُشَاحِنٍ


-‘‘হযরত আওফ বিন মালেক আশজারী (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত।  রাসূলে খোদা (ﷺ) ইরশাদ করেন, আল্লাহ্ তাবারাকা ও তা‘য়ালা ১৫ই শাবানের রাত্রে (শবে বরাত) সকল ঈমানদার বান্দাদেরকে ক্ষমা করে দেন। তবে মুশরিক এবং হিংসুক ব্যতীত সবাইকে।’’  ৬২

➥{(১) ইমাম বায্যার : আল-মুসনাদ :৭/১৮৬ পৃ. হা/২৭৫৪ (২) ইবনে হাজার হায়সামী, মাযমাউয যাওয়াইদ, ৮/৬৫পৃ. (৩) খতিব তিবরিযী : মিশকাতুল মাসাবীহ : হা/১৩০৬ : কিয়ামে রামাদ্বান (৪) ইবনে কাসীর, জামিউল মাসানীদ ওয়াল সুনান, ৬/৬৯১পৃ. হাদিস,  ৮৫৩৯}



সনদ পর্যালোচনা:


❏ আল্লামা ইবনে হাজার হাইসামী  উক্ত হাদিসটি সংকলন করে বলেন-


رَوَاهُ الْبَزَّارُ، وَفِيهِ عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ زِيَادِ بْنِ أَنْعُمٍ، وَثَّقَهُ أَحْمَدُ بْنُ صَالِحٍ وَضَعَّفَهُ جُمْهُورُ الْأَئِمَّةِ، وَابْنُ لَهِيعَةَ لَيِّنٌ، وَبَقِيَّةُ رِجَالِهِ ثِقَاتٌ.


-‘‘উক্ত হাদিসটি ইমাম বাজ্জার  তার মুসনাদ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন, উক্ত সনদে ‘আব্দুর রহমান বিন যিয়াদ বিন আনআম’ ইমাম আহমদ বিন সালেহ  বলেন, তিনি সিকাহ, জমহুর ইমামদের দৃষ্টিতে সে দুর্বল রাবী; সনদে নরম প্রকৃতির রাবী ‘ইবনে লাহি‘আহ’ নামক রাবীও রয়েছে, এছাড়া সনদের সমস্ত বর্ণনাকারী সিকাহ বা নির্ভরযোগ্য।’’  ৬৩

➥{আল্লামা ইবনে হাজার হায়সামী : মাযমাউয যাওয়ায়িদ : ৮/৬৫ পৃ:}



ইমাম হাইসামী (رحمة الله)-এর দৃষ্টিকোণে রাবী আব্দুর রহমানকে শুধু একজন মুহাদ্দিসই সিকাহ বলেছেন, কিন্তু বাস্তবতা তার বিপরীত। 


❏ ইমাম যাহাবী (رحمة الله) তার সম্পর্কে লিখেন-


الإِمَامُ، القُدْوَةُ، شَيْخُ الإِسْلاَمِ، أَبُو أَيُّوْبَ الشَّعْبَانِيُّ، الإِفْرِيْقِيُّ، قَاضِي إِفْرِيْقِيَةَ، وَعَالِمُهَا، وَمُحَدِّثُهَا، عَلَى سُوءٍ فِي حِفْظِه.


-‘‘তিনি ছিলেন ইমাম, অনুসরণযোগ্য, ইসলামের শাইখ যার উপনাম আবু আইয়্যুব শা‘বানী, ইফরাকী, কাযীয়ে ইফরীকী। তিনি একজন আলেম এবং মুহাদ্দিসও ছিলেন, তবে হিফয বা স্মরণ শক্তিতে কিছুটা ক্রুটি ছিল।’’  ৬৪

➥{যাহাবী, সিয়ারু আলামিন আন্-নুবালা, ৬/৪১১পৃ. ক্রমিক. ১৬৯}


❏ ইমাম ইসহাক ইবনে রাহওইয়্যাহ (رحمة الله) বলেন, আমি ইমাম সাঈদ ইবনে কাত্তান (رحمة الله) কে তার সর্ম্পকে বলতে শুনেছি যে তিনি (ثقة) ‘সিকাহ’ বা বিশ্বস্ত রাবী ছিলেন।’’  ৬৫ 

➥{ইমাম ইবনে আদি, আল-কামিল, ৫/৪৫৮ পৃ. ক্রমিক. ১১০৮, মিয্যী, তাহযীবুল কামাল, ১৭/১০২ পৃ. ক্রমিক.৩৮১৭, ইবনে হাজার আসকালানী, তাহযীবুত-তাহযীব, ৬/১৭৬ পৃ. ক্রমিক. ৩৫৮}


❏ ইমাম ইবনে শাহীন (رحمة الله) তাতে সিকাহ বলেছেন।  ৬৬ 

➥{ইমাম ইবনে শাহীন, আস্-সিকাত, ক্রমিক. ৮০৬}



❏ ইবনে হাজার আসকালানী  বলেন, মুহাদ্দিস আবু উসমান তানবাযী বলেন- كان الإفريقي رجلا صالحا-‘‘ইফরাকী হাদিস বর্ণনায় তিনি একজন সৎ ব্যক্তি ছিলেন।’’  ৬৭ 

➥{ইবনে হাজার আসকালানী, তাহযীবুত-তাহযীব, ৬/১৭৬ পৃ. ক্রমিক. ৩৫৮}



বুঝা গেল অনেকে তাকে সিকাহও বলেছেন। সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! উক্ত রাবীকে কেউ যদি দাবীও করেন যে, তার স্মৃতিশক্তিতে সামান্য ক্রুটি ছিল তাহলেও উসূলে হাদিসের নীতিমালা অনুসারে এটি ‘হাসান’, যা আমি এ গ্রন্থের শুরুতে নীতিমালা অধ্যায়ে আলোচনা করে এসেছি। তবে অনেকে ধোঁকা দিতে পারেন যে ইমাম নাসায়ীসহ কিছু ইমামগণ তাকে দুর্বল বলেছেন। আমার বক্তব্য হলো তার দুর্বলতা তো আমরাও স্বীকার করলাম, কিন্তু দেখতে হবে তিনি কোন দৃষ্টিকোন থেকে দুর্বল। সন্দেহ ছাড়া তার হাদিস দুর্বল বলা যাবে না। 


❏ ইমাম নুরুদ্দীন হাইসামী  তার বর্ণিত একটি সনদ আলোচনা করতে গিয়ে লিখেন-


وَاخْتُلِفَ فِي الِاحْتِجَاجِ بِهِ.


-‘‘তার হাদিস হুজ্জাত কিনা তা নিয়ে মতানৈক্য আছে।’’  ৬৮ 

➥{হাইসামী, মাযমাউয যাওয়াইদ, ২/২১৮ পৃ. হা/৩৩০৮}



তার হাদিস একেবারেই হুজ্জাত হবার উপযোগী নয় তেমনটি ইমাম হাইসামী (رحمة الله) বলেননি। আলবানীও তার সর্ম্পকে অনুরূপ বলেছেন।  ৬৯

➥{আলবানী, ইরওয়াউল গালীল, ২/২৩৬ পৃ.}



❏ ইমাম যাহাবী (رحمة الله) বলেন-


قاضي إفريقية وعالمها


-‘‘ইফরাকীর তৎকালিন কাযি ও আলেম ছিলেন।’’  ৭০ 

➥{যাহাবী, তারিখুল ইসলাম, ৪/১১৫ পৃ.}



❏ ইমাম যাহাবী  আরও উল্লেখ করেছেন মুহাদ্দিস সালেহ যাযরাহ তার সম্পর্কে বলেছেন- كان رجلا صالحا،  -‘‘তিনি একজন সৎ ব্যক্তি ছিলেন।’’  ৭১  

➥{যাহাবী, তারিখুল ইসলাম, ৪/১১৫ পৃ.}



❏ তিনি আরও বলেন ইমাম তিরমিযি বলেন ইমাম বুখারী (رحمة الله) তার সম্পর্কে বলেছেন- هُوَ مقارب الحديث -‘‘তার হাদিস সহীহ এর নিকটবর্তী।’’  ৭২ 

➥{যাহাবী, তারিখুল ইসলাম, ৪/১১৫ পৃ.}



❏ ইমাম নুরুদ্দীন হাইসামী (رحمة الله) তার বর্ণনার একটি হাদিস সর্ম্পকে বলেন-


وَقَدْ وَثَّقَهُ أَحْمَدُ بْنُ صَالِحٍ


-‘‘মুহাদ্দিস আহমদ ইবনে সালেহ (رحمة الله) তাকে সিকাহ বা বিশ্বস্ত বলেছেন।’’  ৭৩

➥{হাইসামী, মাযমাউয যাওয়াইদ, ৫/২৪ পৃ. হা/৯০৩১ ও ৮/৬৫ পৃ. হা/১২৯৫৯}



প্রমাণিত হল নিঃসন্দেহে হাদিসটি কমপক্ষে ‘হাসান’। 


আর ‘ইবনে লাহি‘আহ’ এর গ্রহণযোগ্যতার বিষয়ে আমি ইতোপূর্বে ৭নং হাদিসের সনদ পর্যালোচনায় আলোচনা করেছি, পাঠকবৃন্দের সেখানে দেখে নেয়ার অনুরোধ রইলো।




১২ নং হাদিস:


❏ ইমাম আবদুর রাজ্জাক (ওফাত.২১১ হি.} একটি হাদিস সংকলন করেন এভাবে-


عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ رَاشِدٍ قَالَ: حَدَّثَنَا مَكْحُولٌ، عَنْ كَثِيرِ بْنِ مُرَّةَ :أَنَّ اللَّهَ يَطَّلِعُ لَيْلَةَ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ إِلَى الْعِبَادِ، فَيَغْفِرُ لِأَهْلِ الْأَرْضِ إِلَّا رَجُلًا مُشْرِكًا أَوْ مُشَاحِنًا


-‘‘হযরত কাসীর ইবনে হাদ্বরামী (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, আল্লাহ্ তা‘য়ালা শাবানের ১৫ই তারিখ রাতে ঈমানদার বান্দাদেরকে ক্ষমা করে দেন, তবে হ্যা, দুই ধরনের ব্যক্তি ছাড়া, তারা হল মুশরিক ও হিংসুক।’’  ৭৪

➥{ইবনে আবী শায়বাহ : আল মুসান্নাফ : ৬/১০৮পৃ.হা/২৯৮৫৯ (২) ইমাম আব্দুর রাজ্জাক : আল মুসান্নাফ : ৪/৩১৭ : হা/৭৯২৩(৩) ইমাম বায়হাকী : শুয়াবুল ঈমান : ৫/৩৫৯পৃ.হা/৩৫৫০ (৪) ইমাম মুনযিরী : তারগীব ওয়াত তারহীব : ৪/২৪০পৃ. : হা/২১ (৫) সুয়ূতি : জামেউল আহাদিস, ৬/২৮৮ : হা/১৪৯০১ (৬) যায়লাঈ, তাখরীজে আহাদিসুল কাশ্শাফ,  ৩/২৬৫ পৃ. (৭) মুত্তাকী হিন্দী, কানযুল উম্মাল, ১২/৩১৩ পৃ. হা/৩৫১৭৫ (৮) শায়খ ইউসুফ নাবহানী, ফতহুল কাবীর,  ২/২৬৩পৃ. হা/৮২৫৭ (৯) সুয়ূতি, জামেউস সগীর, ১/৭৭১৭ পৃ. হা/৭৭১৭, (১০) ও জামিউল আহাদিস, ১৫/৪পৃ. হাদিস,  ১৪৮৩৪,  তিনি বলেন, সনদটি মুরসাল হলেও শক্তিশালী। (১১) বায়হাকী, শুয়াবুল ঈমান, ৩/৩৮১পৃ. হা/৩৮৩১, তিনি বলেন, সনদটি মুরসাল হলেও শক্তিশালী (১০) আলবানী,  সহিহুল জামে,  হাদিস,  ৪২৬৮}



সনদ পর্যালোচনা:


❏ উক্ত হাদিসের সনদ প্রসঙ্গে আহলে হাদিসের মুহাদ্দিস মোবারকপুরী এবং ইমাম মুনযির  এর অভিমত নকল করে লিখেন-


قَالَ الْمُنْذِرِيُّ رَوَاهُ الْبَيْهَقِيُّ وَقَالَ هَذَا مُرْسَلٌ جَيِّدٌ


-‘‘ইমাম মুনযির  বলেন,  উক্ত হাদিসটি ইমাম বায়হাকী বর্ণনা করেছেন। আর বলেছেন,  উক্ত হাদিসটি মুরসাল, তবে সনদ শক্তিশালী।’’  ৭৫ 

➥{ইমাম বায়হাকী : শুয়াবুল ঈমান : ৩/৩৮১ পৃ. হা/৩৮৩১, মোবারকপুরী : তুহফাতুল আহওয়াজী : ৩/৪৪১ পৃ. হা/৭৩৯, ইমাম মুনযির : আত-তারগীব ওয়াত তারহীব : ৪/৩০৮ পৃ. হা/৪১৯৩}



❏ ইমাম আব্দুর রাজ্জাক (رحمة الله) এ হাদিসটির আরকেটি সনদ সংকলন করেন এভাবে-


عَنِ الْمُثَنَّى بْنِ الصَّبَّاحِ قَالَ: حَدَّثَنِي قَيْسُ بْنُ سَعْدٍ، عَنْ مَكْحُولٍ، عَنْ كَثِيرِ بْنِ مُرَّةَ، يَرْفَعُهُ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِثْلَ حَدِيثِ مُحَمَّدِ بْنِ رَاشِدٍ


-‘‘আমি আমার শায়খ মুসান্না বিন ছুব্বাহ থেকে শুনেছি তিনি কায়েস বিন সা‘দ থেকে তিনি তাবেয়ী মিকহুল থেকে তিনি হযরত কাসীর বিন র্মুরাহ উপরের মুহাম্মদ বিন রাশেদেও সনদ ও মতনের ন্যায় হাদিস সংকলন করেন।  ৭৬ 

এ সনদটিতে মিকহুলের ছাত্র কায়েস বিন সা‘দ অর্থাৎ ভিন্ন ছাত্রের মাধ্যমে বর্ণিত।

➥{ইমাম আব্দুর রায্যাক : আল মুসান্নাফ : ৪/৩১৭ : হা/৭৯২৪}



১৩ নং হাদিস:


❏ ইমাম আব্দুর রাজ্জাক (رحمة الله)সহ আরও অনেকে সংকলন করেন-


عَنِ ابْنِ عُيَيْنَةَ، عَنْ مِسْعَرٍ، عَنْ رَجُلٍ، عَنْ عَطَاءِ بْنِ يَسَارٍ قَالَ: تُنْسَخُ فِي النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ الْآجَالُ، حَتَّى إِنَّ الرَّجُلَ ليَخْرُجُ مُسَافِرًا، وَقَدْ نُسِخَ مِنَ الْأَحْيَاءِ إِلَى الْأَمْوَاتِ، وَيَتَزَوَّجُ وَقَدْ نُسِخَ مِنَ الْأَحْيَاءِ إِلَى الْأَمْوَاتِ


-‘‘হযরত আতা ইবনে ইয়াসার (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন,  শাবানের মধ্য রজনীতে আয়ূ নির্ধারণ করা হয়। ফলে দেখা যায় কেউ সফরে বের হয়েছে অথচ তার নাম মৃতদের তালিকায় লিপিবদ্ধ করা হয়েছে, আবার কেউ বিয়ে করছে অথচ তার নাম জীবিতের খাতা থেকে মৃত্যুর খাতায় লিখা হয়ে গেছে।’’  ৭৭

➥{ইমাম আব্দুর রায্যাক, আল-মুসান্নাফ, ৪/৩১৭ পৃ. হা/৭৯২৫ (২) সুয়ূতি, জামিউল আহাদিস, ৪১/৬৯পৃ. হা/৪৪৩১৪ (৩) ইবনে রাহবিয়্যাহ, মুসনাদ, ৩/৯৮১ পৃ. হাদিস,  ১৭০২ (৪) তবারী, শরহে উসূলুল আকায়েদ, ৩/৪৯৯ পৃ. হাদিস,  ৭৬৯}



এ হাদিসের সমস্ত রাবী সিকাহ তবে সনদে বিখ্যাত মুহাদ্দিস মিস‘আর (رحمة الله) তাঁর শায়খের নাম গোপন করেছেন অর্থাৎ তাদলীস করেছেন। তবে তিনি যেহেতু সিহাহ সিত্তার নির্ভরযোগ্য রাবী বা মুহাদ্দিস তাই তার তাদলীস গ্রহণযোগ্য, কোনো মুহাদ্দিস মিস‘আরের তাদলীস নিয়ে সমালোচনা করেননি।


মুহাদ্দিসীনে কেরাম ও ফকীহগণের দৃষ্টিতে শবে বরাত


(১) আহলে হাদিসের অন্যতম আলেম মুবারকপুরী তিরমিযী শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ ‘তোহফাতুল আহওয়াযীতে’ বলেন, 


اعْلَمْ أَنَّهُ قَدْ وَرَدَ فِي فَضِيلَةِ لَيْلَةِ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ عِدَّةُ أَحَادِيثَ مَجْمُوعُهَا يَدُلُّ عَلَى أَنَّ لَهَا أَصْلًا -------- فَهَذِهِ الْأَحَادِيثُ بِمَجْمُوعِهَا حُجَّةٌ عَلَى مَنْ زَعَمَ أَنَّهُ لَمْ يَثْبُتْ فِي فَضِيلَةِ لَيْلَةِ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ شَيْءٌ وَاَللَّهُ تَعَالَى أَعْلَمُ -


-‘‘জেনে রাখুন,  শাবানের মধ্যরাতের (শবে বরাতের) ফযীলত সম্পর্কে অনেক হাদিস বর্ণিত হয়েছে,  সব হাদিস একত্রিত করলে প্রমাণিত হয় যে, এ রাতের ফযীলতের ক্ষেত্রে নির্ভরযোগ্য প্রমাণ রয়েছে। অনুরূপভাবে এ হাদিসগুলো সম্মিলিতভাবে তাদের বিপক্ষে প্রমাণ বহন করে যারা ধারণা করে যে, শবে বরাতের ফযীলতের ক্ষেত্রে কোন প্রমাণ মেলে না। আল্লাহ্ তা‘য়ালাই ভাল জানেন।’’  ৭৮

➥{আল্লামা মুবারকপুরী: তোহফাতুল আহওয়াজী শরহে তিরমিযী : ৩/৪৪১ পৃ. হা/৭৩৬}



(২) আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) এক হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেন- 


هَذَا الْحَدِيثِ بِالْبَابِ الْإِيذَانُ بِأَنْ لَيْلَةَ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ لِمَا وَرَدَ فِي إِحْيَائِهَا مِنَ الثَّوَابِ


-‘‘এই হাদিসে অধ্যায়ের দ্বারা সংবাদ বা খবর দিয়েছে যে শাবানের ১৫ই তারিখ রাতে (শবে বরাতে) জেগে ইবাদত করলে সাওয়াব রয়েছে যেমনটি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে।’’  ৭৯

➥{আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী মিরকাত : কিয়ামে রমযান: ৩/৯৬৯ পৃ. হা/১২৯৯}



(৩) আল্লামা তাহতাভী হানাফী (رحمة الله) বলেন,  


ندب إحياء ليلة النصف من شعبان


-‘‘শবে বরাতে (১৫ই শাবান) রাতে জাগ্রত থেকে ইবাদত করা মুস্তাহাব।’’  ৮০ 

➥{আল্লামা ইমাম তাহতাভী : মারাকিল ফালাহ : পৃ-১৫১}



❏ তিনি গোসল করার সুন্নাত ওয়াক্তের আলোচনা করতে গিয়ে লিখেন-


وندب في ليلة براءة وهي ليلة النصف من شعبان لإحيائها وعظم شأنها إذ فيها تقسم الأرزاق والآجال


-‘‘মুস্তাহাব হচ্ছে লায়লাতুল বারাআতে অর্থাৎ শাবানের ১৫ তারিখের রাতে জাগরণ করে ইবাদত করা, এ রাতে জাগরণের অনেক মর্যাদা রয়েছে, কেননা এ রজনীতে আয়ূ এবং রিযিক বন্টন করা হয়।’’ 


(মারাকিল ফালাহ, ৪৮ পৃ.)


(৪) আল্লামা আলাউদ্দিন হাসকাফী (رحمة الله) বলেন, 


وَمِنْ الْمَنْدُوبَاتِ رَكْعَتَا السَّفَرِ وَالْقُدُومِ مِنْهُ. .....وَإِحْيَاءُ لَيْلَةِ الْعِيدَيْنِ، وَالنِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ، وَالْعَشْرِ الْأَخِيرِ مِنْ رَمَضَانَ، وَالْأُوَلُ مِنْ ذِي الْحِجَّةِ،


-‘মুস্তাহাব হলো এ সমস্ত রাত্রিগুলোতে ইবাদত করা কমপক্ষে দুরাকাত নামায হলেও পড়া যেমন-

১. সফরের প্রথম রাত 

২. দুই ঈদের রাত 

৩. ১৫ ই শাবান অর্থাৎ শবেই বরাতে 

৪. রমযানের শেষ দশ দিনের রাত, 

৫. জিলহজ্জের ১ম তারিখ।’’  ৮১

➥{আল্লামা আলাউদ্দিন হাস্কাফী দুররুল মুখতার : ২/২৪-২৫ পৃ. পরিচ্ছেদ: بَابُ الْوِتْرِ وَالنَّوَافِلِ , কিতাবুল বিতর এবং নফল অধ্যায়।}



(৫) এর ব্যাখ্যায় ইমাম ইবনে আবেদীন শামী (رحمة الله) গোসল করার সুন্নাত ওয়াক্তের আলোচনায় তিনি লিখেন-


(قَوْلُهُ: وَفِي لَيْلَةِ بَرَاءَةٍ) هِيَ لَيْلَةُ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ.


-‘‘(লায়লাতুল বারাতে) অর্থাৎ ১৫ শাবানে গোসল করে নফল ইবাদত করা সুন্নাত।’’ 


(ফাতওয়ায়ে শামী, ১ম খণ্ড১৭০ পৃ.), 


❏ তিনি তার বিখ্যাত ফাতওয়ার গ্রন্থে নফল ইবাদতের তালিকা দিতে গিয়ে লিখেন-


(قَوْلُهُ وَالنِّصْفِ) أَيْ وَإِحْيَاءُ لَيْلَةِ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ.


-‘‘১৫ শাবানে রাত জাগরণ করে নফল ইবাদত করা।’’ 


(ফাতওয়ায়ে শামী, ২/২৫ পৃ.)


(৬) আল্লামা ইবনে নুজাইজ হানাফী মিশরী (رحمة الله) বলেন, 


وَمِنْ الْمَنْدُوبَاتِ إحْيَاءُ لَيَالِي الْعَشْرِ مِنْ رَمَضَانَ وَلَيْلَتَيْ الْعِيدَيْنِ وَلَيَالِي عَشْرِ ذِي الْحِجَّةِ وَلَيْلَةِ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ كَمَا وَرَدَتْ بِهِ الْأَحَادِيثُ


-‘‘মুস্তাহাব হলো রমযানের শেষ দশ দিনের রাতে ও দুই ঈদের রাতে ইবাদত করা। জিলহজ্ব মাসের দশ রজনী এবং শবে বরাতের রাতে ইবাদত করা, এমনটি হাদিস দ্বারা প্রমাণিত।’  ৮২

➥{আল্লামা ইবনে নুজাইম মিশরী : বাহরুর রায়েক : ২/৫৬ পৃ., কিতাবুল বিতর ওয়ান নাওয়াফেল}



(৭) ইমাম বদরুদ্দীন আইনী (رحمة الله) লিখেন-


فَابْن الصّلاح يزْعم أَن لَهَا أصلا من السّنة


-‘‘ইমাম ইবনে সালাহ (رحمة الله) দাবী করেছেন, শবে বরাতের বিষয়ে সুন্নাহের মধ্যে ভিত্তি রয়েছে।’’ 


(আল্লামা আইনী, উমদাতুল ক্বারী, ১১/৮২ পৃ.)



শাফেয়ী ফকীহদের অবস্থান:


১. ইমাম বায়হাকী (رحمة الله) সংকলন করেন-


قَالَ الشَّافِعِيُّ: وَبَلَغَنَا أَنَّهُ كَانَ يُقَالُ إِنَّ الدُّعَاءَ يُسْتَجَابُ فِي خَمْسِ لَيَالٍ فِي لَيْلَةِ الْجُمُعَةِ، وَلَيْلَةِ الْأَضْحَى، وَلَيْلَةِ الْفِطْرِ، وَأَوَّلِ لَيْلَةٍ مِنْ رَجَبَ، وَلَيْلَةِ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ


-‘‘ইমাম শাফেয়ী (رحمة الله) বলেন, আমাকে বলা হয়েছে যে, আগের যুগে (সাহাবী, তাবেয়ীদের যুগে) বলা হতো, পাঁচ রাতের দোয়া আল্লাহ কবুল করেন, 

১. জুম‘আর রাতের দোয়া, 

২-৩. ঈদুল আযহা এবং ঈদুল ফিতরের রাতের দোয়া, 

৪. রযব মাসের প্রথম মাসের রাতের দোয়া এবং 

৫. শবে বরাতের দোয়া।’’ 


(ইমাম বায়হাকী, শুয়াবুল ঈমান, ৫/২৮৭ পৃ. হা/৩৪৩৮) 


২. ইমাম ইবনে আবেদীন শামী (رحمة الله) লিখেন-


عَنْ بَعْضِ الشَّافِعِيَّةِ: أَنَّ أَفْضَلَ اللَّيَالِي لَيْلَةُ مَوْلِدِهِ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - ثُمَّ لَيْلَةُ الْقَدْرِ، ثُمَّ لَيْلَةُ الْإِسْرَاءِ وَالْمِعْرَاجِ، ثُمَّ لَيْلَةُ عَرَفَةَ، ثُمَّ لَيْلَةُ الْجُمُعَةِ، ثُمَّ لَيْلَةُ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ، ثُمَّ لَيْلَةُ الْعِيدِ


-‘‘একদল শাফেয়ী ফকীহগণ থেকে বর্ণিত আছে, সবচেয়ে উত্তম রাত হলো রাসূল (ﷺ)-এর জন্ম দিনের রাত, তারপর লাইলাতুল ক্বদরের রাত, তারপর ইসরা বা মি‘রাজের রাত, তারপর আরাফাতের রাত, তারপর জুম‘আর রাত, তারপর ১৫ই শাবান তথা শবে বরাতের রাত, তারপর দুই ঈদের রাত।’’ 


(ইমাম ইবনে আবিদীন শামী, ফাতওয়ায়ে শামী, ২/৫১১ পৃ.)


৩. ইমাম শিহাবুদ্দীন কাস্তাল্লানী (رحمة الله) লিখেন-


وقد كان التابعون من أهل الشام، كخالد بن معدان، ومكحول يجتهدون ليلة النصف من شعبان فى العبادة، وعنهم أخذ الناس تعظيمها


-‘‘শবে বরাতে ইবাদত করার বিষয়ে শাম দেশের তাবেয়ীদের আমল রয়েছে, যেমন খালেদ বিন মা‘দান এবং মিকহুল শামী (رحمة الله) প্রমুখ এ রাতে ইবাদত করার বিষয়ে মত প্রকাশ করেছেন। শামের লোকগণ তা‘যিমের সাথে তা গ্রহণ করেছেন।’’ 


(আল্লামা কাস্তাল্লানী, আল-মাওয়াহিবুল্লাদুনিয়্যাহ, ৩/৩০০ পৃ.) 


❏ তিনি আরও লিখেন-


وقد ورد فى فضل ليلة النصف من شعبان أحاديث كثيرة


-‘‘শবে বরাতের ফযিলতে অনেক হাদিসে পাক বর্ণিত হয়েছে।’’ 


(আল্লামা কাস্তাল্লানী, আল-মাওয়াহিবুল্লাদুনিয়্যাহ, ৩/৩০০ পৃ.)



হাম্বলী ফকীহদের অবস্থান:


১. বিখ্যাত ফকীহ আল্লামা শায়খ মনসূর বিন ইউনূস বাহুতী হাম্বলী (رحمة الله) বলেন, 


وَفِي اسْتِحْبَابِ قِيَامِهَا أَيْ لَيْلَةِ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ مَا فِي إحْيَاءِ لَيْلَةِ الْعِيدِ


-‘‘শবে বরাত (১৫ শাবান) এর রাতে,  দুই ঈদের রাতে দাঁড়িয়ে অর্থাৎ নামাযে লিপ্ত হওয়া মুস্তাহাব।’’  ৮৩

➥{আল্লামা শায়খ মনসূর বিন ইউনূস, কাশফুল কানাঈ : ১/৪৪৪ পৃ., পরিচ্ছেদ: فَصْلٌ صَلَاةُ الضُّحَى }



২. আল্লামা ইমাম ইবনে ইসহাক বুরহান উদ্দিন ইবনে মুফলিহ হাম্বলী (ওফাত.৮৮৪ হি.) বলেন, 


وَيُسْتَحَبُّ إِحْيَاءُ مَا بَيْنَ الْعِشَاءَيْنِ لِلْخَبَرِ.قَالَ جَمَاعَةٌ: وَلَيْلَةِ عَاشُورَاءَ، وَلَيْلَةِ أَوَّلِ رَجَبٍ، وَلَيْلَةِ نِصْفِ شَعْبَانَ


-‘‘মুস্তাহাব হলো মাগরিব ও ইশার মাঝখানে এই সমস্ত রাত্রিগুলোতে জেগে ইবাদত করা। এক জামাত ইমামগণ বর্ণনা করেছেন, এই সমস্ত রাত্রি হল,  আশুরার রাত্রি, রজবের প্রথম রাত্রি এবং শাবানের ১৫ তারিখ (শবে বরাত) রাত্রি। এই সমস্ত রাত্রিতে জাগ্রত থাকা মুস্তাহাব।’’  ৮৪

➥{মুফলিহ : মাবদাউ শরহে মাকানা: ২/৩৩ পৃ., দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ,  বয়রুত,  লেবানন।}



মালেকী ফকীহদের অবস্থান:


❏ অন্যতম মুহাদ্দিস আল্লামা ইমাম জুরকানী আল-মালেকী (رحمة الله) ওফাত.১১২২হি. বলেন, 


اذا كان ليلة النصف من شعبان فقوموا ليلها فقوموا ليلها أي: أحيوه بالعبادة وانصبوا أقدامكم لله قانتين 


-‘‘(ইবনে মাযাহ শরীফের হাদিসে এসেছে, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন) যখন ১৫ই শাবান আসবে তখন রাতে তোমরা ইবাদতের জন্য দন্ডায়মান হবে অর্থাৎ এ রাতে ইবাদতে জাগ্রত থাক, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য দন্ডায়মান রাতকে ইবাদতে স্থাপন করবে।’’  ৮৫

➥{আল্লামা ইমাম জুরকানী : শরহে মাওয়াহেবে লাদুন্নীয়া : ১০/৫৬১ পৃ.}

Top