আধুনিক নারী বনাম নারীর আধুনিকতা
নারীরা স্বাভাবিকভাবে একরূপে অবস্থান করে। কিন্তু যখন নিজের সৌন্দর্যকে অতিরিক্ত সুন্দর করতে বিভিন্ন ধরনের প্রসাধনীর প্রলেপ মেখে অন্যের চোখে নিজেকে সুন্দরী হিসেবে পরিস্ফুট করে তুলতে চায় আর এই প্রবণতা বর্তমান থাকে তাহলে তা ধ্বংসমুখী ফলদান করে।
এভাবে নিজেকে ফুটিয়ে তোলা জাহির করে তোলা আর একচ্ছত্র অধিপতি হওয়ার মানসিকতাই হলো বর্তমান নারীকে সমাজের আধুনিকতার হিড়িকে বর্তমান ফ্যাশনে গা ভাসিয়ে দিতে নারীরা কুণ্ঠাবোধ করে না। এই অদূরদর্শিতার ফলে সে যে পঙ্কিলতায় নিমজ্জিত হয় সেটা কেউ আঙ্গুল উচিয়ে দেখিয়ে দিলেও নারীরা সে পথ থেকে সরে আসতে লজ্জাবোধ করে। এরা হতে চায় অগ্রগামিনী বাধা-বন্ধনহীন দিগন্তের মুক্ত বিহঙ্গ। সম্মুখে চলার নেশায় ভেঙ্গে যায় সংসার। নিছক দুনিয়াদারীর দাবী আদায়ের জন্য মন-মানসিকতার আদি সংগঠনকে বিশৃংখল অবস্থায় ঠেলে দেয়। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ধ্বংস করার সুযোগ দিয়ে নিজেরা বেছে নেয় কিছু হীন নিয়ম-নীতি। ভেসে চলে নষ্ট আবর্জনার স্রোতে।
নারীদের সৌন্দর্য রূপচর্চা কেবল সে পুরুষের জন্য যে তার প্রকৃত বন্ধু কর্তা এক কথায় যিনি স্বামী। যার উপর নারীর অর্ধেক অধিকার রয়েছে। আর সে নারীর ওপর যার অর্ধেক অধিকার। কিন্তু নারী যখন তার রমণী বেশ অধিকতর আকর্ষণীয় করে ক্লাব, পার্টি মেলা-খেলার নামে সকল পুরুষের সাথে হাসি তামাশায় মত্ত হয়ে যায় তখন সে বেহায়াপনাকে প্রশ্রয় দিতে বাধ্য হবে। একজনের হাতা কাটা ব্লাউজ দেখে অন্যজন নিজেকে আরো উজ্জ্বলতর করতে হাফ বুক পিঠ বের করে রাখবে। চুলে মৌতাত গন্ধের শ্যাম্পু। ফুরফুরে হাওয়ায় উড়বে মসৃণ সোনালী কেশ। গণ্ডদেশে পাউডারের প্রলেপে মণির সুবাস। অধরে লাল টকটকে পালিশ, আকর্ষণীয় কর্ণ কুসুম আর কণ্ঠের হার।
মস্তকে উটের পিঠের মত কুজোঁ করে বাঁধবে চুল। বসাবে হরেক রকমের ক্লিপ ব্যান্ড, প্রজাপতি। চরণে হাই হিল। হেলে দুলে হাঁটবে কাড়বে পুরুষের মন। তার পেছনে লাগবে বেশ কয়েকজন ছেলে। বন্ধুু-বান্ধবীর কাছে হেসে হেসে বলবে তারই গাল-গল্প। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, দোযখীদের দুটি প্রকার আমি দেখে যেতে পারিনি। সে সব নারী যারা পোশাক পড়েও উলঙ্গ হবে এবং গর্বিত ভঙ্গিমায় কাঁধ হেলিয়ে দুলিয়ে অপূর্ব চালে চলবে। তাদের মস্তক উটের পিঠের নমনীয় কুঁজের মত হবে। (অর্থাৎ মাথায় কৃত্রিম কেশ সংযোজন করে উঁচু খোপা বাঁধবে) এ কারণে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না। বরং জান্নাতের সুগন্ধও পাবে না। অথচ জান্নাতের সুগন্ধি অনেক দূর থেকেও পাওয়া যাবে। ২৭৭
২৭৭.মুসলিম
ইসলাম চির আধুনিক, চির উন্নত জীবনবিধান। সব যুগের সাথে শতাব্দীর সাথে তাল মিলিয়ে চলার অধিকার একমাত্র ইসলামই রাখে। অথচ এ সম্বন্ধে ইসলামী জ্ঞান-বিজ্ঞান নবী রাসূল, ওলি-আউলিয়া মহিয়ষী নারীগণ এবং তাদের আদর্শ সম্বন্ধে জানার, তাদের সম্বন্ধে আলোচিত বই-পুস্তক পড়ার চেয়ে সিনেমার নায়ক-নায়িকা ও রোমান্টিক প্রেমের উপন্যাসের প্রতি আগ্রহ অনেক গুণে বেশি। বর্তমান যুগের আধুনিক শিক্ষিতা নারীরা আরবি ভাষা পড়তে জানে না, কুরআন পড়তে জানে না। মনে করে ওসব পড়ে সার্থকতা কি? এর চেয়ে বায়োলজি কেমিষ্ট্রি মহাকাশ নিয়ে গবেষণা করা ভাল। কারণ তারা এটাও জানে না যে, সৃষ্টি জগতের সবকিছুই কুরআনে সন্নিবেশিত আছে। হাদীস পড়ে সময় নষ্ট করতে চাইবে না। রাত জেগে আল্লাহর ইবাদতের কথা শুনলে চোখ কপালে উঠতে পারে। তবে রাত জেগে চুপি চুপি ব্লু-ফিল্ম নায়ক-নায়িকার বস্ত্রহীন শরীরের সুকীর্তি দেখতে নয়নে সুপ্তির লেশও আসবে না। প্রতিবেশী আর বান্ধবীদের সাথে পাল্লা দেয়ার ফলে আলনায় আটবে না পোশাক, বক্সে আটবে না রকমারি গহনার সাজ-সরঞ্জামে ড্রেসিং টেবিলের সামনে জড়ো হবে বিশ্বের দামী প্রসাধনী। অথচ নবী করিম (ﷺ)এর উক্তি- কোন ব্যক্তির ইসলামী জীবনের সৌন্দর্য হচ্ছে এই যে, যা তার প্রয়োজনীয় নয় তা পরিত্যাগ করা। ২৭৮
২৭৮.তিরমিযি
চাকরির ক্ষেত্রে হোক আর সিনেমা বিজ্ঞাপনের হোক তাতে প্রতিষ্ঠা পাওয়া আধুনিক নারীরা গর্বের ব্যাপার মনে করে। সে পেশার প্রকার যাই হোক না কেন। পোশাক খোলা-খুলি হবে যতটা পারা যায়। প্রথমে হয়ত মৃদু আপত্তি থাকে তারপর কিছুই থাকে না। যদিও মেয়েদের উপর বহিরাঙ্গনের কর্তব্য চাপানো হয়নি। তারা জ্ঞানার্জন দাওয়াতী সাহায্য-সহযোগিতা নিজেদের অর্থনৈতিক উন্নতি অগ্রগতির জন্য প্রয়োজন হলে বাইরে যেতে পারে। তবে পুরুষের সাথে কাজ করাটাতো পরম আনন্দ উল্লাস আর চরম স্বাধীনতা নয়। নিজেকে খোলাখুলিভাবে সহস্র পুরুষের মাঝে বিলিয়ে দেয়ার মনোভাবও ঠিক নয়। মেয়েদের সাজ-সজ্জায় নিষেধ করা হয়নি। তাই বলে কড়া সেন্টে ডুবে ডানা কাটা পরী সেজে গল্প কবিতা নাটক করে ছেলেদের সাথে মশকরা কোন ক্রমেই বৈধ হতে পারে না। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে- “তোমরা গৃহে অবস্থান করবে। আর পূর্বের জাহেলি যুগের ন্যায় নিজেদের সাজিয়ে প্রকাশ্যে চলাফেরা করবে না। তোমরা নামায কায়িম করবে যাকাত আদায় করবে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অনুগত থাকবে।” ২৭৯
২৭৯.সূরা আহযাব, আয়াত-৩০