সম্পদে অর্ধেক দিয়ে আল্লাহ কি মেয়েদের ঠকিয়েছেন? 


আল্লাহ ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি কারো উপর জুলুম করেন না। আপাতদৃষ্টিতে আল কুরআনে সম্পদ বণ্টনের আইন নিয়ে আধুনিককালের নারীবাদীরা অত্যন্ত সোচ্চার এবং কেউ কেউ এই আইন অর্থাৎ কুরআনের এই বিধান নারীদের প্রতি চরম অবিচার এমন ধুয়া তুলে নারীদের পুরুষের সমান হিস্যা নির্ধারণের দাবী করেন, আল্লাহ বলেন-لِلذَّكَرِ مِثْلُ حَظِّ الْأُنْثَيَيْنِএক পুরুষের অংশ দুই নারীর সমান। ২৮৩

২৮৩.সূরা নিসা : ১১

 

এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনার পূর্বে কয়েকটা বিষয় আমাদের পরিষ্কার ধারণা প্রয়োজন। 


ক. একথা সর্বজনস্বীকৃত যে মুসলিম পুরুষের উপর ইসলাম যে ধরনের দায়িত্ব কর্তব্য আরোপ করে নারীর উপর তেমনটা নয়। পুরুষকে তার রোজগারের জন্য বাইরে যেতে হয়। পরিবারের প্রত্যেক সদস্যদের অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা ও বাসস্থানের মত মৌলিক চাহিদাগুলি মিটানো তার উপর ফরয। স্ত্রীও বাইরে যেতে পারেন তবে তার আয়ে পুরুষ ভাগ বসাতে পারবে না। তার আয় তার নিজস্ব যদি তিনি পরিবারে খরচ করেন তবে তা ছাদাকা, ফরয দায়িত্ব নয়।


খ. পরিবারের চাহিদা অনেক। পরিবার নিয়ে ঘুরে বেড়ানো আত্মীয় স্বজনের মেহমানদারী, কারো বিপদে আপদে সাক্ষাত এসব হঠাৎ সৃষ্টি হওয়া সমস্যা পুরুষকেই মোকাবেলা করতে হয়। নারী এসব দায়িত্ব থেকে মুক্ত। মেহমান স্ত্রীর পক্ষের হলে বরং খরচের মাত্রা একটু বেশীই থাকে, মাঝে মধ্যে বাজেটেও ঘাটতি পড়ে।


গ. পুরুষ যদি সংসারের খরচাদি সামাল দিতে অপারগ ও অসমর্থ হয় তবে এর জন্য পরিবারের আর কেউ নয় তাকেই সমাজের আত্মীয় স্বজন বন্ধু বান্ধরের কাছে কর্জের জন্য ধর্ণা দিতে হয় এবং এই খরচ তাকেই আয় করে পরিশোধ করতে হয়। স্ত্রী এক্ষেত্রে স্বামীকে সাহায্য করলে এটাও ছাদাকা, তার দায়িত্বে অন্তুর্ভুক্ত নয়।


ঘ. বিয়ের সময় স্ত্রী স্বামীর কাছ থেকে আর্থিক নিরাপত্তা ‘মোহর’ পেয়ে থাকে যা নগদে মানসম্মত পরিমাণে পরিশোধ করার নিয়ম। এটা পুরুষের উপর ফরয। এই অর্থে স্বামী কোন ভাগ বসাতে পারে না। বাকী রাখারও বিধান নেই। আমাদের সমাজে এর পূর্ণ হক আদায় কেউ করে না বলে বাকীর রেওয়াজ চালু হয়েছে। মোহরের অর্থ নারী ব্যাংকে জমা করতে পারে, নিজে ব্যবসা চালাতে পারে কিংবা কোথাও বিনিয়োগও করতে পারে। এক্ষেত্রে তিনি সম্পূর্ণ স্বাধীন। পুরুষ এখানে কোন হস্তক্ষেপ করার অধিকার রাখে না।


ঙ. মেয়েরা উত্তরাধিকার সূত্রে শুধু পিতার সম্পদই নয় স্বামী, দাদা ও বৈপিত্রেয় ভাই থেকেও সম্পদ লাভ করে। শুধু পিতার সম্পত্তিতে ভাই অপেক্ষা অর্ধেক পাবে। এর সাথে বাকী সম্পদ যোগ করলে তা কি ভাই এর সম্পদ থেকে বেশী হচ্ছে না? আল্লাহ অত্যন্ত ইনসাফগার, তিনি ভালো জানেন কার হাতে কতটুকু সম্পদ দিলে সমাজের স্থিতি বিদ্যমান থাকবে। পরিবারে এর চেয়ে বেশী সম্পদ নারীর হাতে পড়লে তার রক্ষণাবেক্ষণ, উৎপাদন, ভাগ বণ্টন, সরকারী খাজনা মিউটিশান এসব ঝামেলার কারণে তিনি হয়তো তা নিজের নিয়ন্ত্রণ থেকেই হারিয়ে ফেলবেন।


চ. পাশ্চাত্য সমাজ ভিন্ন আমাদের সমাজে প্রতি পরিবারেই এই সংস্কৃতি চালু আছে যে, পুরুষ কোন সম্পত্তি কিনলে আগে স্ত্রীকে খুশি করে। স্ত্রীর নামে ব্যাংক জমা, ব্যবসায় লাইসেন্স, প্লট ফ্ল্যাট সবই। এসব যে ভালবাসার টানে হয় সব ক্ষেত্রে তা নয়। অনেক সময় সম্পদ লুকানোর চেষ্টায়ও এমন করা হয়। তাহলে স্ত্রী সে ভালো লোকেরই হোক বা মন্দ লোকের সম্পদ কিন্তু তার নামেই।


এরপরও নারীবাদীরা বলবেন উত্তরাধিকার নীতিতে সমতা আনা প্রয়োজন। নারীরা অর্ধেক পেয়ে ঠকছে? চোখ বুজে হিসাব কষে দেখুন আপনার কব্জায় সম্পদ বেশী না আপনার স্বামীর কব্জায়?


তারপরও যুক্তির বিচারে না হোক অন্তত বিশ্বাসের ক্ষেত্রে আল্লাহর সুবিজ্ঞ ও ইনসাফপূর্ণ বণ্টননীতিতে আমাদের কল্যাণ রয়েছে। একথা মানতে হবে যদি এই বণ্টন আল্লাহ নিজ দায়িত্বে করে না দিতেন তাহলে প্রতিটা পরিবারেই পরিবার কর্তার মৃত্যুর আগেই সম্পত্তি নিয়ে মারামারি হতো। পরিবারের শান্তি শৃঙ্খলা ভাই-বোনের বন্ধন সব কিছু লণ্ডভণ্ড হয়ে যেতো। এজন্য আল্লাহ বলেন-

آبَآؤُكُمْ وَأَبْنَاؤُكُمْ لَا تَدْرُونَ أَيُّهُمْ أَقْرَبُ لَكُمْ نَفْعًا فَرِيضَةً مِنَ اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلِيمًا حَكِيمًا

তোমাদের পিতা ও সন্তানদের মধ্যে কে তোমাদের নিকটতর তা তোমরা জানো না। এটাই আল্লাহর বিধান। আল্লাহ সর্বজ্ঞ ও প্রজ্ঞাময়। ২৮৪

২৮৪.সূরা নিসা : ১১

Top