বিষয় নং-২২: খতম শরীফ


দেওবন্দী এবং আহলে হাদিসপন্থিরা খতম পড়াকে বিদআত এবং হারাম বলে। আর আহলে সুন্নাত ওয়াল জামআত খতম পড়াকে জায়েয বলেন। পবিত্র কুরআনে পাকে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন-

وَنُنَزِّلُ مِنَ الْقُرْآنِ مَا هُوَ شِفَاءٌ وَرَحْمَةٌ لِلْمُؤْمِنِينَ

-“এবং আমি কুরআনের মধ্যে অবতীর্ণ করি বস্তু যা ঈমানদারের জন্য আরোগ্য রহমত।’’ (সূরা বানী ইসরাইল, আয়াত নং-৮২)

তাফসীরে রুহুল বয়ানে আল্লামা ইসমাইল হাক্কী (رحمة الله) আয়াতের তাফসীরে বলেন

وعن حميد بن الأعرج قال من قرأ القرآن وختمه ثم دعا أمن على دعائه اربعة آلاف ملك ثم لا يزالون يدعون له ويستغفرون ويصلون عليه الى المساء او الى الصباح

-‘‘তাবেয়ী হযরত হুমাইদ রাজ (رحمة الله) হতে বর্ণিত আছে, যে ব্যক্তি কুরআনে পাকের খতম করে প্রার্থনা করে চার হাজার ফেরেশতা তার মুনাজাতে আমিন বলেন। অতঃপর সকাল সন্ধ্যা তার জন্য দোয়া করেন এবং ক্ষমা প্রার্থনা করেন।’’  ২৮৭

  • ২৮৭. আল্লামা ইসমাইল হাক্কী, তাফসীর রুহুল বয়ান, ৩/৬৬ পৃ.


হযরত মুজাহিদ (رحمة الله) এর আকিদা

মুসলিম শরীফের ব্যাখ্যাকার আল্লামা ইমাম নববী (رحمة الله) বলেন-

وروى بإسناده الصحيح عن مجاهد قال: كانوا يجتمعون عند ختم القرآن يقولون: إن الرحمة تنزيل عند القرآن. تنزل الرحمة. ويستحب الدعاء عقب الختمة

-‘‘বিশুদ্ধ সূত্রে হযরত মুজাহিদ (رحمة الله) হতে বর্ণিত আছে, খতমে কুরআনের ব্যাপারে সকলে ঐক্যমত পোষণ করে বলেন, কুরআন শরীফ খতমের সময় আল্লাহর রহমত অবতীর্ণ হয়। (ইমাম নববী (رحمة الله) আরও বলেন) খতমে কুরআনের পর দোয়া কবুল হয়।’’  ২৮৮

টিকা━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━

  • ২৮৮. 

আল্লামা নববী, কিতাবুল আযকার, ১০৪-১০৫ : ৩১০, আল্লামা ইবনে কাইয়্যুম, জালাউল আফহাম, ৪০২ পৃ:, 


❏ এ বিষয়ে আল্লামা ইবনে কাইয়্যুম আরও উল্লেখ করেন-

عَن ابْن مَسْعُود أَنه قَالَ من ختم الْقُرْآن فَلهُ دَعْوَة مستجابة

-‘‘হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। নিশ্চয় তিনি বলেন, যে কুরআন খতম করে দোয়া করে তার দোয়া কবুল করা হয়।’’ (আল্লামা ইবনে কাইয়্যুম, জালাউল আফহাম, ৪০২ পৃ.)

━━━━━━━━━━o━━━━━━━━━━


মুফাস্সিরকুল শিরমনি হযরত আবদুল্লাহ বিন আব্বাস (رضي الله عنه)’ আকিদা

মুসলিম শরীফের ব্যাখ্যাকার আল্লামা নববী (رحمة الله) বলেন, সুনানে দারেমীতে এসেছে

وروينا في مسند الدارمي، عن ابن عباس رضي الله عنهما، أنه كان يجعل رجلا يراقب رجلا يقرأ القرآن، فإذا أراد أن يختم أعلم ابن عباس رضي الله عنهما فيشهد ذلك

-‘‘হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) কুরআন তেলাওয়াত করার জন্য এক ব্যক্তিকে নিযুক্ত করেন। যখন তিনি অবগত হতেন যে, কুরআন খতম করা হবে তখন হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) উক্ত স্থানে উপস্থিত হতেন।’’  ২৮৯

  • ২৮৯. ইমাম নববী, কিতাবুল আযকার, ১০৪ পৃ., হা/৩০৭, আল্লামা ইবনে কাইয়্যুম, জালাউল আফহাম, ৪০২ পৃ.


হযরত আনাস বিন মালেক (رضي الله عنه)’ আকিদা

আল্লামা নববী (رحمة الله) হযরত আনাস (رضي الله عنه) সম্পর্কে বলেন

عَنْ أَنَسٍ أَنَّهُ كَانَ إِذَا خَتَمَ الْقُرْآنَ جَمَعَ أَهْلَهُ

-‘‘তিনি কুরআন শরীফ খতম করার সময় তাঁর পরিবার পরিজনের সকলকে নিয়ে দোয়া করতেন।’’  ২৯০

টিকা━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━

  • ২৯০. 

ইমাম বায়হাকী, শুয়াবুল ঈমান, ৩/৪২১ পৃ. হা/১৯০৭, ইমাম নববী, কিতাবুল আযকার, ১০৪ পৃ: হা/৩০৮, আল্লামা ইবনে কাইয়্যুম, জালাউল আফহাম, ৪০২ পৃ. 


❏ তবে ইমাম বায়হাকী (رحمة الله) আরও সংকলন করেন-

عَنْ قَتَادَةَ، عَنْ أَنَسٍ: أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ إِذَا خَتَمَ الْقُرْآنَ جَمَعَ أَهْلَهُ

-‘‘তাবেয়ী কাতাদা (رحمة الله) হযরত আনাস ইবনে মালিক (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, নিশ্চয়ই রাসূল (ﷺ) কুরআন শরীফ খতম করার সময় তাঁর পরিবার পরিজনের সকল কে নিয়ে দোয়া করতেন।’’ (ইমাম বায়হাকী, শুয়াবুল ঈমান, ৩/৪২১ পৃ. হা/১৯০৮) 


❏ ইমাম বায়হাক্বী (رحمة الله) হাদিসটি সম্পর্কে বলেন: 

هَذَا هُوَ الصَّحِيحُ مَوْقُوفٌ -“এই হাদিস মাওকুফ  সহীহ্।” (ইমাম বায়হাকী, শুয়াইবুল ঈমান, হাদিস নং ১৯০৭)


❏ ইমাম নুরুদ্দিন হায়সামী (رحمة الله) এই হাদিস সম্পর্কে বলেন, 

رَوَاهُ الطَّبَرَانِيُّ، وَرِجَالُهُ ثِقَاتٌ. -“ইমাম তাবারানী এটি বর্ণনা করেছেন এবং এর সকল বর্ণনাকারী বিশ্বস্ত।” (ইমাম হায়সামী: মাজমাউয যাওয়াইদ, হা/১১৭১৩)


❏ নাছিরুদ্দিন আলবানী বলেছেন: إسناده صحيح. -“এর সনদ সহীহ।” (সিলসিলাতুল আহাদিসিস সাহীহা, হাদিস নং ১৪২) 


দেখুন! আমলের শেষে প্রিয় নবীজি (ﷺ), সাহাবী ও তাবেঈগণ দোয়ার সময় সকলে একত্রিত হয়ে দোয়া করতেন এবং ঐ দোয়া আল্লাহর হাবীব (ﷺ) কবুলের গ্যারান্টি দিয়েছেন। তাই যেহেতু একত্রি হয়ে ও সমষ্টিগতভাবে দোয়া করলে কবুল হওয়ার গ্যারান্টি আছে সেহেতু অনেক লোক একত্রিত হয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে দোয়া করা হয়। 


❏ অপরদিকে লোকেরা একত্রিত হলে তাদের মেহমানদারী তথা যিয়াফত করা স্বয়ং রাসূলে পাক (ﷺ) এর সুন্নাত। যেমন-

حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مُحَمَّدٍ، حَدَّثَنَا ابْنُ مَهْدِيٍّ، حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، عَنْ أَبِي حَصِينٍ، عَنْ أَبِي صَالِحٍ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ فَلْيُكْرِمْ ضَيْفَهُ 

-“হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) বলেন, রাসূলে পাক (ﷺ) বলেছেন: যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখেরাতের উপর বিশ্বাস রাখে, সে যেন অবশ্যই মেহমানদের যিয়াফত করে।’’  


সুতরাং মৃত ব্যক্তির রুহে সাওয়াব রেছানীর উদ্দেশ্যে ফাতেহা অনুষ্ঠান করা, দোয়ার সময় সকলে একত্রিত হওয়া ও সামর্থ অনুযায়ী লোকদেরকে যিয়াফত করা তথা খাবার পরিবেশন করা সবই রাসূলে পাক (ﷺ) এর হাদিস দ্বারা প্রমাণিত।

━━━━━━━━━━o━━━━━━━━━━


শায়খ আবদুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী (رحمة الله) মিশকাত শরীফের ব্যাখ্যায় বলেন-

بعض روايات آمده است كہ روح ميت سے آيد خانہ خود را شب جمعہ پں نظر مى كند كہ تصدق كنند ازو سے يا نہ

-‘‘কোন কোন বর্ণনায় এসেছে যে, জুমআর রাতে মৃত ব্যক্তির আত্মা ঘরে এসে দেখে তার পক্ষ থেকে পরিবার পরিজন দান সাদকাহ করছেন নাকি করেননি।’’ ২৯১

  • ২৯১. শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী, আশিয়াতুল লুম‘আত, ১ম খণ্ড ৪৭০ পৃ:


ইমাম গায্যালী (رحمة الله)’ আকিদা

ইমাম গায্যালী (رحمة الله) বলেন-

يَخْرُجُ الْاَمْوَاتُ مِنْ قُبُوْرِهِمْ فَيَقُوْمُوْنَ عَلَى اَبْوَابِ بُيُوْتِهِمْ وَيَقُوْلُوْنَ اِرْحَمُوْا عَلَيْنَا فَى هَذِه اللَّيْلَةِ بَصَدَقَةٍ اَوْ لُقْمَةٍ

-‘‘হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন, ঈদের দিন, আশুরার দিন, আশুরার রাতে, জুমআর দিন, রজবের ১ম জুম অথবা শাবান মাসের ১৫ তারিখ (শবে বরাতে) মৃত ব্যক্তিরা তাদের কবর থেকে বের হয়ে ঘরের দরজায় গিয়ে বলতে থাকেন এই রাতে দান, সাদকাহ অথবা কাউকে খাবার দানের মাধ্যমে আমাদের উপকার কর।’’ ২৯২

  • ২৯২. ইমাম গায্যালী, দাকায়েকুল আখবার, ৭০-৭১ পৃ.


বিজ্ঞ পাঠক! কুরআন হাদীসের আলোকে প্রমাণিত হল দেওবন্দী এবং গাইরে মুকাল্লিদ আহলে হাদিস পন্থিরা আহলে সুন্নাত ওয়াল জাম‘আত নয়।
Top