প্রথম অধ্যায়

তিন তালাক কার্যকরী হওয়ার প্রমাণাদি


বেশী তালাক দেয়ার চেয়ে এক তালাক দেয়াটা শ্রেয়। কিন্তু যদি তিন তালাকই দিতে হয়, তাহলে প্রতি তোহরে (পবিত্র কালে) এক তালাক করে তিন তোহরে তিন তালাক দেওয়া উচিৎ। এক সঙ্গে কয়েক তালাক দেয়া জঘন্য পাপ, তবে যদি কেউ এক সঙ্গে কয়েক তালাক দিয়ে দেয়, তা হলে যদিও বা পাপ করেচে, কিন্তু তিন তালাক কার্যকরী হবে। যেমন ঋতুকালে তালাক দেয়া যদিও বা পাপ কিন্তু তালাক কার্যকরী হয়। প্রমাণাদি নিম্নে প্রদত্ত হলো-


১। আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ ফরমান ➥665. সূূরা বাক্বারা, আয়াত নং-২২৯।

الطَّلَاقُ مَرَّتَانِ فَإِمْسَاكٌ بِمَعْرُوفٍ أَوْ تَسْرِيحٌ بِإِحْسَانٍ

পুনরায় ফরমান ➥666. সূূরা বাক্বারা, আয়াত নং-২৩০।

فَإِنْ طَلَّقَهَا فَلَا تَحِلُّ

এ আয়াতদ্বয় থেকে বোঝা গেল দু-তালাক পর্যন্ত প্রত্যাহার করার অধিকার আছে, কিন্তু তিন তালাক দেয়ার পর পুনরায় গ্রহণ رجعت করার কোন অধিকার থাকে না এবং مرتان এর প্রয়োগ দ্বারা বোঝা গেল যে পৃথক ভাবে তালাক দেয়ার এমন কোন শর্ত নেই যে তা না হলে তালাক কার্যকরী হবে না। এক সঙ্গে দেয়া হোক বা পৃথক পৃথক দেয়া হোক, হুকুম তা-ই হবে। 


✦ যেমন তাফসীরে সাবীতে এ আয়াতের প্রেক্ষাপটে বর্ণিত আছে-

فان طلقها الى طلقة ثالثة سوء وقع الاثنتان فى مرة او مرأة فلا تحل

অর্থাৎ আয়াতের অভিপ্রায় হলো যদি তালাক দেয়া হয়, তাহলে তিন তালাকই কার্যকরী হবে, তা এক সাথে দেয়া হোক বা পৃথক দেয়া হোক, যে কোন অবস্থায় স্ত্রী হালাল থাকবে না। ৬৬৭ 

➥667. আল্লামা সাভী, তাফসিরে সাভী, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-১৭২, দারু ইহ্ইয়াউত্-তুরাশুল আরাবী, বয়রুত, লেবানন।


✦ এর আগে উল্লেখিত আছে-

كما اذا قال لها انت طالق ثلثا او البتة وهذا هو المجمع عليه

অর্থাৎ যদি কেউ এ রকম বলে ‘তোমাকে তিন তালাক’ তাহলে তিন তালাকই কার্যকরী হবে। এ ব্যাপারে উম্মতে মুহাম্মদী একমত।  অনুরূপ অন্যান্য তাফসীর সমূহেও বর্ণিত আছে।

➥668. আল্লামা সাভী, তাফসিরে সাভী, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-১৭২, দারু ইহ্ইয়াউত্-তুরাশুল আরাবী, বয়রুত, লেবানন।


২। আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ ফরমান➥669. সূরা তালাক, আয়াত নং-১।

وَمَنْ يَتَعَدَّ حُدُودَ اللَّهِ فَقَدْ ظَلَمَ نَفْسَهُ لَا تَدْرِي لَعَلَّ اللَّهَ يُحْدِثُ بَعْدَ ذَلِكَ أَمْرًا

অর্থাৎ যে কেউ আল্লাহর সীমারেখা অতিক্রম করলো অর্থাৎ এক সঙ্গে তিন তালাক দিয়ে দিল, সে নিজের প্রতি জুলুম করলো। 


কেননা কোন কোন সময় মানুষ তালাক নিয়ে লজ্জিত হয় এবং প্রত্যাহার করতে চায়। কিন্তু তিন তালাক এক সঙ্গে দিয়ে দিলে, আর প্রত্যাহার করা যায় না। এ আয়াতে এটা বলা হয়নি যে এক সঙ্গে তিন তালাক দিলে তালাক কার্যকরী হবে না। বরং বলা হয়েছে যে এ রকম লোক জালিম। যদি এর দ্বারা এক তালাকই কার্যকরী হয়, তাহলে জালিম কিভাবে হয়? 


✦ মুসলিম শরীফের ব্যাখ্যা গ্রন্থ নবীর الطلاق الثلث শীর্ষক অধ্যায়ে বর্ণিত আছে ➥670. ইমাম নববী, শরহে সহীহ মুসলিম, খণ্ড-৫, পৃষ্ঠা-৬১।


وَاحْتَجَّ الْجُمْهُورُ بِقَوْلِهِ تَعَالَى وَمَنْ يَتَعَدَّ حُدُودُ اللَّهِ فَقَدْ ظَلَمَ نَفْسَهُ ......قَالُوا مَعْنَاهُ أَنَّ الْمُطَلِّقَ قَدْ يَحْدُثُ لَهُ نَدَمٌ فَلَا يُمْكِنُهُ تَدَارُكُهُ لِوُقُوعِ الْبَيْنُونَةِ فَلَوْ كَانَتِ الثَّلَاثُ لَا تَقَعُ لَمْ يَقَعْ طَلَاقُهُ هذا إِلَّا رَجْعِيًّا فَلَا يَنْدَمُ

(উপরে আমি যা আরয করেছি, তাই এর তরজুমা)


৩। বায়হাকী ও তবরাণী শরীফে সবিদ ইবনে গুফলাতা থেকে বর্ণিত আছে যে হযরত ইমাম হাসান ইবনে আলী (رضي الله عنه) স্বীয় বিবি আয়েশা খশামিয়াকে এক সঙ্গে তিন তালাক দিয়ে দেন। পরে জানতে পারলেন যে সে (স্ত্রী) ইমাম হাসানের বিচ্ছেদে অনেক কান্নাকাটি করছে। এ খবর শুনে তিনি নিজেও কাঁদলেন এবং বললেন, যদি আমি আমার আব্বাজান সৈয়্যদুনা হযরত আলী (رضي الله عنه)কে এ রকম বলতে না শুনতাম- “যে কেউ নিজের স্ত্রীকে পৃথক পৃথক বা এক সঙ্গে তিন তালাক দিলে, সেই মহিলা দ্বিতীয় স্বামী কর্তৃক পরিত্যক্তা না হওয়া পর্যন্ত ওর জন্য জায়েয হবে না।”  ৬৭১

➥671. ইমাম বায়হাকী, আস-সুনানুল কোবরা, খণ্ড-৭, পৃষ্ঠা-৫৪৯, হাদিস-১৪৯৭১।


তাহলে নিশ্চয় আমি ওকে পুনরায় গ্রহণ করে নিতাম। হাদীছের শেষের বাক্যটি হচ্ছে-

لَوْلَا أَنِّي سَمِعْتُ جَدِّي أَوْ حَدَّثَنِي أَبِي أَنَّهُ سَمِعَ جَدِّي يَقُولُ:  أَيُّمَا رَجُلٍ طَلَّقَ امْرَأَتَهُ ثَلَاثًا عِنْدَ الْأَقْرَاءِ أَوْ ثَلَاثًا مُبْهَمَةً لَمْ تَحِلَّ لَهُ حَتَّى تَنْكِحَ زَوْجًا غَيْرَهُ


(৪) সেই সুনানে কুবরা বায়হাকী শরীফে হযরত হাবীব ইবনে আবি ছাবেতের বরাত দিয়ে বর্ণিত আছে-

قَالَ: جَاءَ رَجُلٌ إِلَى عَلِيٍّ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ فَقَالَ: طَلَّقْتُ امْرَأَتِي أَلْفًا قَالَ:  ثَلَاثٌ تُحَرِّمُهَا عَلَيْكَ وَاقْسِمْ سَائِرَهَا بَيْنَ نِسَائِكَ

অর্থাৎ এক ব্যক্তি সৈয়্যদুনা আলী (رضي الله عنه) এর খিদমতে হাজির হয়ে বললেন- আমি আমার স্ত্রীকে হাজার তালাক দিয়েছি। হযরত আলী (رضي الله عنه) ফরমালেন তিন তালাকের দ্বারাই সে তোমার জন্য হারাম হয়ে গেল, বাকী তালাক সমূহ তোমার অন্যান্য স্ত্রীসমূহের মধ্যে বন্টন করে দাও। অর্থাৎ ওগুলো অর্থহীন।  ৬৭২

➥672. ইমাম বায়হাকী, আস-সুনানুল কোবরা, খণ্ড-৭, পৃষ্ঠা-৫৪৭, হাদিস/১৪৯৬১; ইমাম ইবনে আবি শায়বাহ, আল-মুসান্নাফ, খণ্ড-৪, পৃষ্ঠা-৬২, হাদিস-১৭৮০২।


এটা সুস্পষ্ট যে ওই লোকটি হাজার তালাক হাজার মাসে দেয়নি। তাহলে তো ছিয়াশি বছর দুমাস তালাকের জন্য অতিবাহিত হয়ে যেত। নিশ্চয়ই এক সঙ্গে দিয়েছে এবং সৈয়দুনা মওলা আলী (رضي الله عنه) তিন তালাক কার্যকরী হওয়ার কথা বলেছেন।


(৫) বায়হাকী শরীফে বর্ণিত আছে ➥673. ইমাম বায়হাকী, আস-সুনানুল কোবরা, খণ্ড-৭, পৃষ্ঠা-৫৪৭, হাদিস/১৪৯৬০

عَنْ جَعْفَرِ بْنِ مُحَمَّدٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ عَلِيٍّ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ:  لَا تَحِلُّ لَهُ حَتَّى تَنْكِحَ زَوْجًا غَيْرَهُ

অর্থাৎ ইমাম জাফর সাদিক স্বীয় পিতামহ হযরত আলী (رضي الله عنه) এর বরাত দিয়ে রেওয়ায়েত করেছেন- তিনি বলেছেন- যে কেউ নিজের স্ত্রীকে এক সঙ্গে তিন তালাক দিয়ে দিলে, দ্বিতীয় স্বামী কর্তৃক পরিত্যক্তা হওয়া ব্যতীত সেই স্ত্রী ওর জন্য হালাল হবে না। 


এর প্রতি জোরালো সমর্থন বায়হাকী শরীফে আবি ইয়ালা বর্ণিত এ হাদীছে রয়েছে ➥674. ইমাম বায়হাকী, আস-সুনানুল কোবরা, খণ্ড-৭, পৃষ্ঠা-৫৪৭, হাদিস/১৪৯৫৯


عَنْ عَلِيٍّ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ فِيمَنْ طَلَّقَ امْرَأَتَهُ ثَلَاثًا قَبْلَ أَنْ يَدْخُلَ بِهَا قَالَ: " لَا تَحِلُّ لَهُ حَتَّى تَنْكِحَ زَوْجًا غَيْرَهُ


৬। ইমাম বায়হাকী মুহাম্মদ ইবনে আয়ায ইবনে কবীরের বরাত দিয়ে রিওয়ায়েত করেছেন যে এক ব্যক্তি স্বীয় স্ত্রীকে দৈহিক সম্পর্কের আগে এক সঙ্গ তিন তালাক দিয়ে দেয়। পুনরায় ওকে গ্রহণ করার ইচ্ছা হলো। তখন সে হযরত আবু হুরাইয়া (رضي الله عنه) ও হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) এর খিদমতে হাজির হয়। তাঁরা উভয়ে অভিমত ব্যক্ত করলেন যে আমরা এ বিবাহের বৈধতার কোন উপায় দেখছি না, যতক্ষণ না সে অন্য স্বামী গ্রহণ করে। সে আরয করলো, জনাব আমিতো কেবল এক শব্দের দ্বারাই তিন তালাক দিয়েছি। এর উত্তরে হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস বললেন তোমার হাতে যা কিছু ছিল, সব দিয়ে দিয়েছ। হাদীছের শেষের ইবারতটি নিম্নরূপ-

فَسَأَلَ أَبَا هُرَيْرَةَ وَعَبْدَ اللهِ بْنَ عَبَّاسٍ عَنْ ذَلِكَ فَقَالَا: " لَا نَرَى أَنْ تَنْكِحَهَا [ص:৫৪৯] حَتَّى تَنْكِحَ زَوْجًا غَيْرَكَ " , قَالَ: إِنَّمَا كَانَ طَلَاقِي إِيَّاهَا وَاحِدَةً , فَقَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ: " إِنَّكَ أَرْسَلْتَ مِنْ يَدِكَ مَا كَانَ لَكَ مِنْ فَضْلٍ

(বায়হাকী, সুনানুল কোবরা, সপ্তম খণ্ডে ৫৪৮ পৃষ্ঠা, হা/১৪৯৬৫ দ্রষ্টব্য।)


৭। সেই বায়হাকী শরীফে হযরত আতা (رضي الله عنه) এর বরাত দিয়ে আবদুল হামিদ ইবনে রাফে থেকে বর্ণিত আছে যে, কোন একজন হযরত সৈয়্যদুনা আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) এর সমীপে বলেন- আমি আমার স্ত্রীকে একশত তালাক দিয়েছি। তিনি বললেন তিনটি নিয়ে নাও বাকী সাতানব্বইটি বাদ দাও। হাদীছের ভাষ্যটা এ রকম ➥675. ইমাম বায়হাকী, আস-সুনানুল কোবরা, খণ্ড-৭, পৃষ্ঠা-৫৫২, হাদিস/১৪৯৭৭


عَنْ مُجَاهِدٍ قَالَ: قَالَ رَجُلٌ لِابْنِ عَبَّاسٍ: طَلَّقْتُ امْرَأَتِي مِائَةً قَالَ: تَأْخُذُ ثَلَاثًا وَتَدَعُ سَبْعًا وَتِسْعِينَ

 

(৮) বায়হাকী শরীফে সাঈদ ইবনে হবির থেকে বর্ণিত আছে- এক ব্যক্তি হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাসের সমীপে আরয করলেন-আমি আমার স্ত্রীকে এক হাজার তালাক দিয়েছি। তিনি বললেন, তিনটি গ্রহণ করুন এবং নয়শত সাতানব্বইটি বাদ দিন। হাদীছের ইবারতটা হচ্ছে ➥676. ইমাম বায়হাকী, আস-সুনানুল কোবরা, খণ্ড-৭, পৃষ্ঠা-৫৫১, হাদিস/১৪৯৭৬


أَنَّ رَجُلًا جَاءَ إِلَى ابْنِ عَبَّاسٍ فَقَالَ: طَلَّقْتُ امْرَأَتِي أَلْفًا فَقَالَ: " تَأْخُذُ ثَلَاثًا وَتَدَعُ تِسْعَمِائَةٍ وَسَبْعَةً وَتِسْعِينَ


৯। বায়হাকী শরীফে হযরত সাঈদ ইবনে হবিরের রেওয়ায়েত ক্রমে বর্ণিত আছে- সৈয়্যদুনা আবদুল্লা ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) ঐ ব্যক্তিকে বললেন, যে তার স্ত্রীকে এক সঙ্গে তিন তালাক দিয়েছিল, “তোমার উপর তোমার স্ত্রী হারাম হয়ে গেছে।” হাদীছের ইবারতটা হচ্ছে ➥677. ইমাম বায়হাকী, আস-সুনানুল কোবরা, খণ্ড-৭, পৃষ্ঠা-৫৫১, হাদিস/১৪৯৭৬


عَنْ سَعِيدِ بْنِ جُبَيْرٍ عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ أَنَّهُ قَالَ لِرَجُلٍ طَلَّقَ امْرَأَتَهُ ثَلَاثًا: حُرِّمَتْ عَلَيْكَ


১০। বায়হাকী শরীফে হযরত উমরইবনে দিইনারের বরাত দিয়ে বর্ণিত আছে- জনৈক ব্যক্তি হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস থেকে জানতে চাইলেন যে, যে কেউ নিজের স্ত্রীকে তারকারাজির সমতুল্য তালাক দিলে এর কি হুকুম হতে পারে? তিনি বলেছেন ওকে বলে দাও যে ওর জন্য বুরজে জওযার মস্তকই যথেষ্ট। উল্লেখ্য যে, বুরজে জওযার মাথায় তিনটি তারা থাকে। হাদীছের ইবারত এ রকম ➥678. ইমাম বায়হাকী, আস-সুনানুল কোবরা, খণ্ড-৭, পৃষ্ঠা-৫৫২, হাদিস/১৪৯৮০


عَنْ عَمْرِو بْنِ دِينَارٍ، أَنَّ ابْنَ عَبَّاسٍ سُئِلَ عَنْ رَجُلٍ طَلَّقَ امْرَأَتَهُ عَدَدَ النُّجُومِ فَقَالَ:  إِنَّمَا يَكْفِيكَ رَأْسُ الْجَوْزَاءِ


(১১) ইবনে মাজা শরীফে তালাকের আলোচনার প্রারম্ভে من طلق ثلثا فى مجلس واحد শীর্ষক অধ্যায়ে বর্ণিত আছে, হযরত ফাতিমা বিনতে কাইস বলেন- আমাকে আমার স্বামী ইয়ামন যাবার প্রাক্কালে এক সঙ্গে তিন তালাক দিয়ে দেয়। হুযূর (ﷺ) ওই তিন তালাককে কার্যকর বলেছেন। হাদীছের আরবী ইবারতটা হচ্ছে ➥679. ইমাম ইবনে মাযাহ, আস-সুনান, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-৫০৭, হাদিস-২০২৪, দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন; সুনানে দারা কুতনী, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-১০, হাদিস-৩৮৭২; সুনানে দারেমী, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-১৩৬, হাদিস-২২৭৫; ইমাম আহমদ, আল-মুসনাদ, খণ্ড-৬, পৃষ্ঠা-৪১১


قَالَتْ: طَلَّقَنِي زَوْجِي ثَلَاثًا وَهُوَ خَارِجٌ إِلَى الْيَمَنِ، فَأَجَازَ ذَلِكَ رَسُولُ اللَّهِ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ


(১২) হাকিম, ইবনে মাজা ও আবু দাউদ, আবদুল্লাহ ইবনে আলী, ইবনে ইয়াযীদ, ইবনে রুকানা থেকে বর্ণনা করেছেন- তিনি বলেছেন, আমার দাদা রুকানা তাঁর বিবিকে তালাকে বত্তা (দ্বৈত অর্থবোধক তালাক) দেন। অতঃপর বারগাহে নববীতে হাজির হন এবং হুযূর (ﷺ) থেকে এ ব্যাপারে ফয়সালার জন্য আরয করলেন ‘আমি এক তালাকের নিয়ত করেছিলাম’। হুযূর (ﷺ) বললেন- খোদার কসম করে বলতে পারবে যে তুমি এক তালাকের নিয়ত করেছিলে? আরয করলেন- খোদার কসম করে বলছি যে এক তালাকের নিয়ত করেছিলাম। তখন হুযূর (ﷺ) তাঁর স্ত্রীকে তাঁর কাছে ফেরত দিয়ে দেন। যেমন- ইবনে মাজা ও আবু দাউদ শরীফে বর্ণিত আছে, 

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَلِيِّ بْنِ يَزِيدَ بْنِ رُكَانَةَ، عَنْ أَبِيهِ عَنْ جَدِّهِ: أَنَّهُ طَلَّقَ امْرَأَتَهُ الْبَتَّةَ، فَأَتَى رَسُولَ اللَّهِ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - فَسَأَلَهُ، فَقَالَ: مَا أَرَدْتَ بِهَا؟  قَالَ: وَاحِدَةً. قَالَ: آللَّهِ مَا أَرَدْتَ بِهَا إِلَّا وَاحِدَةً؟  قَالَ: آللَّهِ مَا أَرَدْتُ بِهَا إِلَّا وَاحِدَةً. قَالَ: فَرَدَّهَا عَلَيْهِ

এক সঙ্গে তিন তালাক দিলে যদি এক তালাকই কার্যকরী হতো, তাহলে হুযূর (ﷺ) হযরত রুকানাকে তাঁর নিয়তের কসম কেন করালেন? তিনি বলেছিলেন- أَنْتِ طَالِقٌ طَالِقٌ طَالِقٌ শেষের তালাক শব্দদ্বয় প্রথম তালাকের প্রতি জোর দেয়ার জন্যই বলেছিলেন। এ জন্য এক তালাকই ধরা হয়েছে। 

➥680. ইমাম ইবনে মাযাহ, আস-সুনান, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-৬৬১, হাদিস-২০৫১; ইমাম আবু দাউদ, আস-সুনান, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-২৬৩, হাদিস-২২০৮; ইবনে কাসির, জামিউল মাসানীদ, খণ্ড-৩২, পৃষ্ঠা-১১১, হাদিস-২৮৪৫।


এ রিওয়ায়েতটি একান্ত সহীহ ও নির্ভরযোগ্য। যেমন- ইবনে মাজা বলেন-

مَا أَشْرَفَ هَذَا الْحَدِيثَ

-‘‘এ হাদীছটি সনদের দিক দিয়ে খুবই উচ্চস্তরের।’’  ৬৮১

➥681. ইমাম ইবনে মাযাহ, আস-সুনান, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-৬৬১, হাদিস-২০৫১


আবু দাউদ বলেছেন-

هَذَا أَصَحُّ مِنْ حديث ابن جريج

এ রিওয়ায়েতটি ইবনে জরিহের রিওয়ায়েতের তুলনায় অনেক বিশুদ্ধ। ৬৮২

➥682. ইমাম আবু দাউদ, আস-সুনান, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-২৬৩, হাদিস-২২০৮


১৩। মুয়াত্তা ইমাম মালিক ও শাফেঈ, আবু দাউদ ও বায়হাকী শরীফে হযরত মায়াবিয়া ইবনে আবি আয়াশের বরাত দিয়ে বর্ণিত আছে যে জনৈক ব্যক্তি হযরত আবু হুরাইরা ও হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাসকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন- যে কেউ নিজের স্ত্রীকে এক সঙ্গে তিন তালাক দিলে এর কি হুকুম? হযরত আবু হুরাইয়া বলেছেন- ‘এক তালাকের দ্বারা ওকে পৃথক করে দেয়া হয়েছে এবং তিন তালাকের দ্বারা হারাম হয়ে গেছে এবং দ্বিতীয় স্বামী কর্তৃক তালাকপ্রাপ্তা না হওয়া পর্যন্ত ওকে পুনরায় বিবাহ করা জায়েয হবে না, হযরত ইবনে আব্বাস এর সমর্থন করেছেন। হাদীছের ইবারত হচ্ছে, 

عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ إِيَاسٍ، أَنَّ ابْنَ عَبَّاسٍ، وَأَبَا هُرَيْرَةَ، وَعَبْدَ اللَّهِ بْنَ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ، سُئِلُوا عَنِ الْبِكْرِ يُطَلِّقُهَا زَوْجُهَا ثَلَاثًا؟ فَكُلُّهُمْ قَالُوا: لَا تَحِلُّ لَهُ حَتَّى تَنْكِحَ زَوْجًا غَيْرَهُ. قَالَ أَبُو دَاوُدَ: رَوَى مَالِكٌ، عَنْ يَحْيَى بْنِ سَعِيدٍ، عَنْ بُكَيْرِ بْنِ الْأَشَجِّ، عَنْ مُعَاوِيَةَ بْنِ أَبِي عَيَّاشٍ، أَنَّهُ شَهِدَ هَذِهِ الْقِصَّةَ

➥683. সুনানে আবি দাউদ, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-৪৫০, হাদিস-২১৯৮, ইমাম আব্দুর রায্যাক, আল-মুসান্নাফ, খণ্ড-৬, পৃষ্ঠা-২৬২-২৬৩, হাদিস-১১১২২, ইমাম তাহাভী, শরহে মা’আনীল আছার, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-৫৭, হাদিস-৪৪৭৯।


১৪। বায়হাকী শরীফের বুসাম ছরিকী থেকে বর্ণিত আছে যে হযরত জাফর ইবনে মুহাম্মদ বলেন, যে কেউ নিজের স্ত্রীকে অজ্ঞাতে বা জেনে শুনে তিন তালাক দিয়ে দিলে, সেই মহিলা ওর জন্য হারাম হয়ে যাবে।


১৫। একই বায়হাকী শরীফে মুসাল্লামা ইবনে জাফর আহমদ থেকে বর্ণিত আছে আমি ইমাম জাফর ইবনে মুহাম্মদ (رضي الله عنه) কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম- আপনি কি এ রকম বলেছেন যে এক সঙ্গে তিন তালাক দিলে এক তালাক কার্যকরী হবে? তিনি বলেছেন- মায়াজাল্লা, আমি এ রকম কখনও বলিনি; তিন তালাকই কার্যকরী হবে।  ৬৮৪ (তফসীরে রূহুল মায়ানী, দ্বিতীয় পারা দ্রষ্টব্য)

➥684. আল্লামা আলূূসী, তাফসিরে রুহুল মা’য়ানী, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-১৩৯, দারু ইহ্ইয়াউত-তুরাশুল আরাবী, বয়রুত, লেবানন।


১৬। মুসলিম শরীফে কিতাবুত তালাকের الطلاق الثلث শীর্ষক অধ্যায়ে বর্ণিত আছে যে হযরত উমর (رضي الله عنه) এর যুগে এ রকম আইন পাশ করা হয়েছিল যে এক সঙ্গে তিন তালাক দিলে তিন তালাকই কার্যকরী হবে। হাদীছের মূল ইবারত হচ্ছেঃ


فَقَالَ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ: إِنَّ النَّاسَ قَدِ اسْتَعْجَلُوا فِي أَمْرٍ قَدْ كَانَتْ لَهُمْ فِيهِ أَنَاةٌ، فَلَوْ أَمْضَيْنَاهُ عَلَيْهِمْ، فَأَمْضَاهُ عَلَيْهِمْ

➥685. ইমাম মুসলিম, আস-সহীহ, কিতাবুত-তালাক, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-১০৯৯, হাদিস/১৪৭২


১৭। এ হাদীছের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে নববীতে বর্ণিত আছে যে সাহাবায়ে কিরামের ঐক্যমত হচ্ছে তিন তালাকের দ্বারা তিন তালাকই কার্যকরী হবে এবং সাহাবায়ে কিরাম কখনো ভ্রান্ত বিষয়ে ঐক্যমত হতে পারে না। ৬৮৬

➥686. ইমাম নববী, শরহে সহীহ মুসলিম, 


১৮। যখন স্বামীর তিন তালাক দেয়ার অধিকার রয়েছে, তখন তিন তালাক দিলে এক তালাক কার্যকরী হওয়ার কি যুক্তি থাকতে পারে? মালিকের হস্তক্ষেপ অগ্রগণ্য হওয়া উচিত।


১৯। হারাম কাজের দ্বারা কানুন পরিবর্তন হয় না। এক সঙ্গে তিন তালাক দেয়া অবশ্য কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। কিন্তু স্বামী যখন মুখ দিয়ে তিন তালাক বলছে, তাহলে তিন তালাক কার্যকরী হবে না কেন? দেখুন, চুরিকৃত, চাকু দ্বারা পশু যবেহ করা হারাম। কিন্তু যদি কেউ যবেহ করে, তাহলে যবেহকৃত পশু হালাল। ঋতু কালে তালাক দেয়া হারাম, কিন্তু কেউ দিয়ে দিলে, তালাক পতিত হবে।


২০। ইসকাতে কারণের সাথে আদি-কারণে (مسبب) সামঞ্জস্য থাকে। কারণ পাওয়া গেলে আদিকারণ (مسبب) থাকাটা একান্ত জরুরী। হিদায়া কিতাবুল ওকালতে বর্ণিত আছে ➥687. মীরগীনানী, হেদায়া, পৃষ্ঠা-১৮০, আইনী, বেনায়া শারহুল হেদায়া, ৯/২৩১ পৃ: 

لأن الحكم فيها لا يقبل الفصل عن السبب؛ لأنه إسقاط فيتلاشى

অর্থাৎ ইসকাতে হুকুমকে স্বীয় সবব (কারণ) থেকে পৃথক করা যায় না। তালাক বলাটা হচ্ছে এসব (কারণ) এবং তালাক কার্যকরী হওয়াটা হচ্ছে এর হুকুম। তালাক দ্বারাই স্বামীর অধিকার বাস্তবায়িত হয়। সবব (কারণ) পাওয়া গেল, হুকুম পাওয়া গেল না অর্থাৎ দিল তিন তালাক, কার্যকরী হলো এক, তা হতে পারে না।


২১। অধিকাংশ উলামায়ে কিরাম বিশেষ করে চারি ইমাম-আবু হানিফা, শাফিঈ, মালিক ও আহমদ (رضي الله عنه) এর অভিমত হচ্ছে এক সঙ্গে তিন তালাক দিলে তিন তালাকই কার্যকরী হবে। এর বিরোধিতা করা মানে মুসলিম মিল্লাতের বিরোধিতা করা, যা পথভ্রষ্টতার নামান্তর। মোট কথা, কুরআন, হাদীছ, ইজমায়ে সাহাবা, উলামা, মুহাদ্দেছীন ও তাফসীর কারকদের বিভিন্ন উক্তি ও যুক্তিগত দলীলাদি দ্বারা এ মাসআলাটি প্রমাণিত হয়েছে। এর বিরোধিতা করা মানে কুরআন হাদীছের বিরোধিতা করা।

Top