২. ভরণ-পোষণ


স্ত্রীর প্রতি স্বামীর দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হল স্ত্রীর ভরণ-পোষণের ব্যবস্থা করা। ভরণ-পোষণ বলতে স্ত্রীর আবাস, পোশাক, খাবার ও অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় বস্তু সামগ্রী প্রদান করা। আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন- 

الرِّجَالُ قَوَّامُونَ عَلَى النِّسَاءِ بِمَا فَضَّلَ اللَّهُ بَعْضَهُمْ عَلَى بَعْضٍ وَبِمَا أَنْفَقُوا مِنْ أَمْوَالِهِمْ-

পুরুষ নারীর কর্তা। কারণ আল্লাহ তাদের একজনকে অপরজনের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন এবং পুরুষ তাদের ধনসম্পদ ব্যয় করে। ১৪২

১৪২.সূরা নিসা, আয়াত: ৩৪ 

 

وبما انفقوا من امولهم 

আয়াতাংশ দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে ভরন-পোষণের দায়িত্ব পুরুষের। মহিলার উপর নয়। 


অন্য আয়াতে বলা হয়েছে,

- وَعَلَى الْمَوْلُودِ لَهُ رِزْقُهُنَّ وَكِسْوَتُهُنَّ بِالْمَعْرُوفِ- 

জনকের কর্তব্য বিধিমতে তাদের ভরণ-পোষণ করা। ১৪৩

১৪৩.সূরা বাকারা, আয়াত: ২৩৩

 

স্ত্রীর ভরণ-পোষণের ধরণ ও মান কী হবে এ সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন,

 لِيُنْفِقْ ذُو سَعَةٍ مِنْ سَعَتِهِ وَمَنْ قُدِرَ عَلَيْهِ رِزْقُهُ فَلْيُنْفِقْ مِمَّا آَتَاهُ اللَّهُ- 

বিত্তবান নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী ব্যয় করবে। আর যার জীবনোপকরণ সীমিত সে আল্লাহ যা দান করেছেন তা থেকে ব্যয় করবে। ১৪৪

১৪৪.সূরা তালাক, আয়াত: ৭

 

এ থেকে বুঝা গেল যে স্ত্রীর ভরণ-পোষণের মান ও ধরণ স্ত্রীর অবস্থার ভিত্তিতে হবে না বরং স্বামীর অবস্থার ভিত্তিতেই নির্ধারিত হবে। স্বামী বিত্তবান হলে বিত্তবান সুলভ ভরণ পোষণ দেওয়া ওয়াজিব হবে যদিও স্ত্রী গরিব হয়। স্বামী দরিদ্র হলে দরিদ্রসুলভ ভরণ পোষণ দেওয়া ওয়াজিব হবে যদিও স্ত্রী বিত্তশালী হয়। এক্ষেত্রে স্ত্রীকে ধৈর্য্যধারণ করার নিমিত্তে পরবর্তী অংশে বলা হয়েছে, 


سَيَجْعَلُ اللَّهُ بَعْدَ عُسْرٍ يُسْرًا

অচিরেই আল্লাহ দুঃখের পর সুখ দেবেন। অর্থাৎ সুখ-দুঃখ কারো জন্য স্থায়ী নয়। বিবাহের প্রথম দিকে সাধারণত স্বামীর আয় রোজগার কম হয়। ধীরে ধীরে আল্লাহ তা’আলা অবস্থা উন্নত করে দেন। একথা মাথায় রেখে স্ত্রীর উচিত অভাব-অনটনে অধৈর্য্য না হয়ে আল্লাহরব উপর ভরসা করে অপেক্ষা করা। নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা একদিন সচ্ছলতা দান করবেন। 


বিদায় হজ্জের ভাষণে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন-

 ولهن عليكم رزقهن وكسوتهن بالمعروف-

তোমরা স্বামীদের উপর কর্তব্য হলো যথাবিধি স্ত্রীদের ভরণ-পোষনের ব্যবস্থা করা। ১৪৫

১৪৫.আলি ইবনে আবি বকর র. (৫৯৩ হি.) হিদায়া, খণ্ড ২, পৃ. ৪৩৭

 

وإنك لن تنفق نفقة تبتغي بها وجه الله إلا أجرت حتى ما تجعل في في امرأتك-

হযরত সা’দ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত দীর্ঘ এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে তুমি যা কিছু ব্যয় কর তোমাকে এর প্রতিদান দেওয়া হবে। এমনকি যে লোকমা তুমি তোমার স্ত্রীর মুখে তুলে দিচ্ছ তার প্রতিদানও পাবে।১৪৬

১৪৬.বুখারী ও মুসলিম, সূত্র ইয়াহিয়া ইবনে শরফুদ্দীন নবভি র., রিয়াদুস সালেহীন, পৃ. ১৫৫

 

عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم دِينَارٌ أَنْفَقْتَهُ فِى سَبِيلِ اللَّهِ وَدِينَارٌ أَنْفَقْتَهُ فِى رَقَبَةٍ وَدِينَارٌ تَصَدَّقْتَ بِهِ عَلَى مِسْكِينٍ وَدِينَارٌ أَنْفَقْتَهُ عَلَى أَهْلِكَ أَعْظَمُهَا أَجْرًا الَّذِى أَنْفَقْتَهُ عَلَى أَهْلِكَ - 

হযরত হোরায়রা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, আল্লহর রাস্তায় (জিহাদে) এক দিনার তুমি ব্যয় করেছ, গোলাম আযাদ করার জন্য একটি দিনার তুমি ব্যয় করেছ, গরীব-মিসকীনকে তুমি একটি দিনার দান করেছ এবং নিজ পরিবারের জন্য তুমি একটি দিনার খরচ করেছ। তবে সবগুলোর মধ্যে সওয়াবের দিক দিয়ে নিজ পরিবারের জন্য তুমি যেটি ব্যয় করেছ সেটিই উত্তম পূণ্য। ১৪৭

১৪৭.মুসলিম, সূত্র, ইমাম নবভী র. রিয়াদুস সালেহীন, পৃ. ১৫০ ও মিশকাত, পৃ. ১৭০

 

عَنْ أَبِى مَسْعُودٍ الْبَدْرِىِّ عَنِ النَّبِىِّ -صلى الله عليه وسلم- قَالَ إِنَّ الْمُسْلِمَ إِذَا أَنْفَقَ عَلَى أَهْلِهِ نَفَقَةً وَهُوَ يَحْتَسِبُهَا كَانَتْ لَهُ صَدَقَةً.-

হযরত আবু মাসঊদ বদরী (رضي الله عنه) নবী করিম (ﷺ) থেকে বর্ণনা করেন, নবী করিম (ﷺ) ইরশাদ করেন, কোন ব্যক্তি যখন সওয়াবের নিয়তে তার পরিবারের জন্য ব্যয় করে তখন তার জন্য তা সাদকা হয়ে যায়। অর্থাৎ সে সাদকার সওয়াব পাবে। ১৪৮

১৪৮.মুসলিম, সূত্র, ইমাম নবভী র. রিয়াদুস সালেহীন, পৃ. ১৫১ ও মিশকাত, পৃ. ১৭০

 

হযরত সাওবান (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ইরশাদ করেন,

-أَفْضَلُ دِينَارٍ 

يُنْفِقُهُ الرَّجُلُ دِينَارٌ يُنْفِقُهُ عَلَى عِيَالِهِ 

কোন ব্যক্তি যত দিনার খরচ করে তন্মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ দিনার হলো যে দিনার নিজ পরিবারের জন্য খরচ করে। ১৪৯

১৪৯.ইমাম মুসলিম র. (২৬১ হি.), সহীহ মুসলিম, সূত্র মিশকাত, পৃ. ১৭০

 

অতএব উপরোক্ত হাদীস সমূহ দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, স্বামী তার স্ত্রী ও সন্তান সন্তুতির জন্য যা কিছু সঠিক পন্থায় ব্যয় করবে তা সাদকা হবে এবং এর প্রতিদান সে পাবে।

Top