বিষয় নং-০৭: মুমূর্ষু ব্যক্তির পাশে সূরা ইয়াসিন তিলাওয়াত করা।
বিভ্রান্তিকর একটি পুস্তক ‘বিদ‘আত’ এর ২/২৭ পৃষ্ঠায় ড. আহমদ আলী, আহলে হাদিসদের ইমাম নাসিরুদ্দীন আলবানীর উদ্ধৃতি দিয়ে লিখেন, “বিশিষ্ট হাদিস বিশারদ আলবানী (রহ.) এর মতে মুমূর্ষু ব্যক্তির পাশে সূরা ইয়াসিন পড়া বিদআত।” নাঊযুবিল্লাহ
সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! তিনি আর কোন দলীল খুঁজে পান নি। তার উপরোক্ত বক্তব্য ও স্বীয় গ্রন্থের বিভিন্ন স্থানে তার দলীল গ্রহণ এমনকি তার নামের শেষে “রাহমাতুল্লাহ আলাইহি” ব্যবহারের দ্বারাই বুঝা যায়, সে আহলে হাদিস আলবানীরই একজন উত্তরসূরী। আলবানী একজন বেয়াদবে রাসূল, কট্টর কুফুরি তার আকিদা। যারা তাকে সমর্থন করে এবং তার সাথে পূর্ণ সাদৃশ্য রাখে তারা কী!
প্রথম ও দ্বিতীয় সূত্র:
❏ ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) সংকলন করেন-
مَرْوَانَ بْنِ سَالِمٍ عَنْ صَفْوَانَ بْنِ عَمْرٍو عَنْ شُرَيْحٍ عَنْ أَبِي الدَّرْدَاءِ وَأَبِي ذَرٍّ قالا قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا مِنْ مَيِّتٍ يَمُوتُ فَيُقْرَأُ عِنْدَهُ يس إلَّا هَوَّنَ اللَّهُ عَلَيْهِ
-‘‘হযরত আবু দারদা (رضي الله عنه) এবং হযরত আবু যার গিফারী (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তাঁরা বলেন, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, যদি কোন মৃত ব্যক্তির (মুমূর্ষ ব্যক্তি) পাশে সূরা ইয়াসিন তিলাওয়াত করা হয় তাহলে আল্লাহ্ তাআলা তার সবকিছু সহজভাবে সম্পন্ন করবেন।’’ ১৮
➥{ইমাম আবু নুয়াঈম ইস্পাহানী, আখবারে ইস্পাহানী, ১/১৮৮ পৃ., মুত্তাকী হিন্দী, কানযুল উম্মাল, ১৫/৫৬৩ পৃ. হা/৪২১৮৬, ইবনে হাজার আসকালানী, মুত্তালিবুল আ‘লিয়া, ৫/২১৫ পৃ. হাদিস, ৭৮২, তালখিসুল-হুবাইর, ২/২৪৫ পৃ. হা/৭৩৪, কেনানী, ইত্তিহাফুল খায়রাত, ২/৪৩১ পৃ. হা/১৮৩৭}
পর্যালোচনা:
❏ এ সনদে ‘মারওয়ান বিন সালেম’ রয়েছে আর সে রাবী হিসেবে দুর্বল, কেননা ইমাম ইবনে আদি, নাসায়ী, বুখারী, আবু হাতেম এবং আহমদ বলেন, সে দুর্বল বর্ণনাকারী। ১৯
➥{ইবনে আদি, আল কামিল, ৮/১১৯ পৃ. যাহাবি, সিয়ারু আলামিন নুবালা, ৯/৩৫পৃ. রাবি. ০৮, মিযানুল ই‘তিদাল, ৪/৯০পৃ. রাবি: ৮৪২৫, মিয্যী, তাহযীবুল কামাল, ৮/১১৯পৃ. রাবি, ১৮৭০}
আমি কিতাবের ভূমিকায় আলোচনা করে এসেছি যে, দ্বঈফ সনদের হাদিস যখন একাধিক সূত্রে বর্ণিত হবে তখন তা ‘হাসান’ এর পর্যায়ে উপনীত হয়। তাই সে নীতিমালা অনুসারে এ হাদিসটি নিঃসন্দেহে ‘হাসান’।
❏ ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) এ হাদিস সম্পর্কে লিখেন-
وَلَهُ شَاهِدٌ مِنْ حَدِيثِ مَعْقِلِ بْنِ يَسَارٍ، رَوَاهُ أَصْحَابُ السُّنَنَ
-‘‘এ হাদিসটির শাওয়াহেদ পাওয়া যায় হযরত মা‘কিল ইবনে ইয়াসার (رضي الله عنه)-এর হাদিসে, যা সুনান প্রণেতাগণ সংকলন করেছেন।’’
(ইবনে হাজার আসকালানী, ইত্তিহাফুল খায়রাতুল মিহরাহ, ২/৪৩১ পৃ. হা/১৮৩৭)
এ সনদের বর্ণনাটি নিম্নে আলোকপাত করবো।
তৃতীয় সূত্র:
❏ ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) সংকলন করেন-
وَفِي الْبَابِ عَنْ أَبِي ذَرٍّ وَحْدَهُ أَخْرَجَهُ أَبُو الشَّيْخِ فِي فَضَائِلِ الْقُرْآنِ.
-‘‘এ বিষয়ে হযরত আবূ যার গিফারী (رضي الله عنه) হতে আরেকটি সূত্র ইমাম আবু শাইখ (رحمة الله) তাঁর লিখিত ‘ফাযায়েলিল কুরআন’ গ্রন্থে সংকলন করেছেন।’’ ২০
➥{ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী, তালখিসুল-হুবাইর, ২/২৪৫ পৃ. হা/৭৩৪}
চতুর্থ সূত্র:
❏ উক্ত দুই বর্ণনাকারীর হাদিসের সমর্থনে হযরত গুদায়ফ ইবনুল হারিছ (رضي الله عنه) এর সূত্রেও মওকুফ বর্ণনা রয়েছে। ড. আহমদ আলী তার “বিদআত” গ্রন্থের ২/২৯ পৃষ্ঠায় তা স্বীকার করেছেন। ২১
উক্ত হাদিসটি ‘হাসান’ বলেও তিনি স্বীকার করেছেন।
➥{আহমদ ইবনে হাম্বল, আল-মুসনাদ, হা/১৬৩৫৫}
পঞ্চম সূত্র:
❏ অপরদিকে বিশিষ্ট সাহাবী হযরত মা’কিল ইবনে ইয়াসার থেকে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন,
اقْرَءُوا يس عَلَى مَوْتَاكُمْ
-‘‘তোমরা তোমাদের মৃত (মুমূর্ষ) ব্যক্তির পাশে সূরা ইয়াসিন পড়ো।’’ ২২
➥{১. ইমাম আবু দাঊদ, আস-সুনান, কিতাবুল জানায়েয, ৩/৪৮৯ পৃ. হা/৩১২১
২. ২. ইমাম ইবনে মাযাহঃ আস-সুনান, কিতাবুল জানায়েজ, ১/৪৬৬ পৃ. হা/১৪২৮
৩. ৩. ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বলঃ আল-মুসনাদ, ৫/২৬-২৭ পৃ. হা/১৯৪১৬
৪.৪. ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী, আত-তালখিছিল হুবাইর, ২/৩১৯ পৃ. হা/৭৩৫
৫.৫. ইমাম নববী, আল কিতাবুল-আযকার, ১৪৪ পৃ.
৬.৬. ইমাম হাকিম নিশাপুরী, আল-মুস্তাদরাক, ১/৫৬৫ পৃ.
৭.৭. ইমাম ইবনে হিব্বান, আস-সহীহ, হা/৩০০২
৮.৮. ইমাম আবি শাইবাহ, আল-মুসান্নাফ, ৩/২৭৩ পৃ.
৯.৯. ইমাম নাসাঈ, আস-সুনানুল কোবরা, হা/১০৯১৩
১০.১০. আহলে হাদিস নাসিরুদ্দীন আলবানী, আল-ইরওয়া-উল গালীল, ৩/১৫০ পৃ.
১১.১১. ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ুতী, শরহুস সুদূর, ৫৫ পৃ.
১২.১২. খতিব তিবরিযী, মেশকাত, কিতাবুয জানায়েজ, ১/৩০৮ পৃ. হা/১৬২২
১৩.১৩. ইমাম সুয়ূতি, জামেউস সগীর, ১/১০১ পৃ. হা/১৩৪৪
১৪.১৪. আবূ দাউদ তায়লসী, আল-মুসনাদ, ২/২৪৪ পৃ. হা/৯৭৩
১৫.১৫. নাসাঈ, আমালুল ইয়াওম ওয়াল লায়লী, ১/৫৮১ পৃ. হা/১০৭৪
১৬.১৬. তাবরানী, মু‘জামুল কাবীর, ২০/২১৯ পৃ. হা/৫১০
১৭.১৭. বায়হাকী, শুয়াবূল ঈমান : ৪/৯২ পৃ. হা/২২৩০}
পর্যালোচনা:
❏ ইমাম নববী (رحمة الله) বলেন, উক্ত হাদিসে আবু উসমান নামক রাবী দ্বঈফ থাকলেও ইমাম আবু দাঊদ তা সহীহ বা বিশুদ্ধ বলেছেন। ২৩
➥{ইমাম নববী, কিতাবুল আযকার, ১৪৪ পৃ.}
❏ ইমাম জালালুদ্দিন সুয়ূতি বলেন, হাদিসটি ‘হাসান’ পর্যায়ের। ২৪
➥{ইমাম সুয়ূতি, জামেউস সগীর, হা/১৩৪৪}
তাই উক্ত হাদিস সম্পর্কে বলতে চাই, যারা এরূপ অসংখ্য সহীহ, হাসান হাদিসগুলোকে অস্বীকার করে বিদআত বলে তারা কোন কাতারের মুসলমান? আল্লাহ্ আমাদেরকে এরূপ ধোঁকাবাজ-মুসলমানদের থেকে রক্ষা করুন। (আমিন)