ইলমে গায়ব সম্পর্কে কুরআন, হাদীস ও ওলামা কিরামের বক্তব্যঃ
যদি আপনি বলেন, আল্লাহ আপনার উপর দয়া করুক, যা আপনি বর্ণনা ও ইঙ্গিত করেছেন এ দ্বারা আমি প্রকৃত ব্যাপার বুঝে নিয়েছি। আমি জ্ঞাত হয়েছি যে, এখানে না কোন শিরক এর অবকাশ রয়েছে, না পথভ্রষ্টতার স্থান। এ কারণে যে, আমরা না আল্লাহ তায়ালার জ্ঞানের সাথে সমান স্থির করি, না আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারাে জন্য স্বেচ্ছায় তা হাসিল করা জ্ঞান করি। বরং প্রদত্ত জ্ঞানের আংশিকই আমরা প্রমাণ করি। কিন্তু এ কতেক আংশিকের মধ্যেও উজ্জল পার্থক্য রয়েছে, যেমন আসমান ও জমিনের পার্থক্য। বরং তা থেকেও মহান ও অধিক। আর আল্লাহর স্থান বহু উর্ধ্বে । ওহাবীদের কতেক (১) ও আংশিকতাে বিদ্বেষ ও অবজ্ঞারই আংশিক। আর আমাদের আংশিক ইজ্জত, সম্মান ও মহিমার আংশিক। এ আংশিক জ্ঞানের পরিমাণ কতটুকু তা কেউ জানেন না; আল্লাহ ও তিনি ব্যতীত যাকে তিনি দান করেছেন। এখন আমি কুরআন, হাদীস এবং পূর্ব ও পরবর্তী ইমামদের অভিমত থেকে কয়েকটি দলীল শুনাতে চাই। যেমন উপরােল্লিখিত বর্ণনাবলীতে আপনারা আমাকে এর প্রতি উৎসাহ প্রদান করেছেন।
টিকা (১) (অতএব, কতেক ওহাবী) অর্থাৎ ওহাবীদের কতেক (আল্লাহ তায়ালা তাদের অপমান করুন) যা তারা বলে থাকে, ঐ কতেক হলাে হীন ও অপমানকর। যা তাদের নিকট থেকে রাসুলে পাক (ﷺ) ফজিলত সমূহের শত্রুতা রাখার কারণে এবং রাসুলে পাক (ﷺ) এর শানের (কুৎসা রটনার কারণে প্রকাশ পেয়েছে। আর আমাদের কতেক। শ্ৰেষ্ঠতার, যা শ্রেষ্ঠতম, মর্যাদাময় ও মাহাত্ম্যপূর্ণ। ঐ কতেক যার পরিমাণ অনুমান করা যায়না আল্লাহ তায়ালা ব্যতীত। অতঃপর তিনিই যাকে তিনি প্রদান করেছেন তিনি ব্যতীত। কেননা, পূর্বাপর সকল কিছুর জ্ঞান এক বিন্দু মাত্র ঐ মহান শ্রেষ্ঠতম ও মর্যাদাময় কতেকের যা আমাদের প্রিয় নবী (ﷺ) থেকে প্রকাশ পেয়েছে। আল্লাহ। তায়ালার দরবারে তাঁর উঁচু মকাম প্রদানের কারণে। 'তিনি (ﷺ) উচ্চ মর্যাদায় আসীন হয়েছেন। "
আমি বলবাে, হে আমার ভাইয়েরা! আল্লাহ আমাদের ও আপনাদের প্রতি রহম করুন! আমিতাে আপনাদের ঐ বক্তব্যের প্রতি ইঙ্গিত করেছি, যা জ্ঞানবানদের জন্য যথেষ্ট। যদি আপনারা প্লাবিত সমুদ্র ও উজ্জল চাদ দেখতে চান।
তাহলে আমার গ্রন্থ “মালিউল হাবীব বেউলুমিল গায়ব” ও “আল লুলুউল মাকনুন ফি ইলমিল বশীরে মা কানা ওয়ামা ইয়াকুন” দেখুন! আর আপনাদের চোখের সম্মুখে আমার রিসালাহ “ইন্বাউল মুস্তফা বিহালে সিররি ওয়া আখফা”তাে রয়েছেই। যদি আপনাদের আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ হওয়ার পরও অস্বীকার করেন তাহলে আমাদের জন্য বুখারী শরীফের হযরত ওমর ফারুক (رضى الله تعالي عنه) কর্তৃক বর্ণিত এ হাদীসই যথেষ্ট। তিনি বলেন-“একদা রাসুলে করীম (ﷺ) আমাদের মধ্যে খুতবা পড়ার জন্য দন্ডায়মান হলেন। তিনি আমাদের সৃষ্টির শুরু থেকে বর্ণনা করে জান্নাতী ও জাহান্নামী জাহান্নামে যাওয়া পর্যন্ত সকল বস্তুর সংবাদ প্রদান করেছেন।”
মুসলিম শরীফে হযরত ইবনে আখতাবের বর্ণিত হাদিসে রাসুলে সৈয়দে আলম (ﷺ) সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত খােবা প্রদানের কথা উল্লেখ রয়েছে। তাতে এ বাক্যটিও রয়েছে “যা কিছু দুনিয়াতে সংঘটিত হয়েছে, আর যা কিছু কিয়ামত পর্যন্ত সংঘটিত হবে, সব কিছুর সংবাদ আমাদের রাসুলে পাক (ﷺ) প্রদান করেছেন।”
বুখারী ও মুসলিম শরীফে হযরত হুজাইফা (رحمه الله تعالي) থেকে বর্ণিত হাদীসে রয়েছে, তিনি বলেন-“একদা রাসুলুল্লাহ (ﷺ) আমাদের নিকট খােতবা প্রদানের জন্য দন্ডায়মান হলেন। তিনি (ﷺ) দন্ডায়মানের প্রারম্ভে কিয়ামত পর্যন্ত যা হওয়ার ছিলাে কোন কিছুই ত্যাগ করেন নি, সবই বর্ণনা করেছেন।”
তিরমিজী শরীফে হযরত মুয়াজ বিন জাবাল থেকে বর্ণিত হয়েছে-“আমি আল্লাহ তায়ালাকে প্রত্যক্ষ করেছি। তিনি স্বীয় কুদরতী হস্ত আমার উভয় কাঁধের মধ্যখানে রাখলেন, যার শীতলতা আমি হৃদয়ে অনুভব করেছি। অতঃপর আমার নিকট সকল বস্তু আলােকিত হয়ে গেলে এবং প্রত্যেক কিছু আমি চিনতে পেরেছি।
ইমাম বুখারী, তিরমিযী,ইবনে খােজায়মা ও তাদের পরবর্তী ইমামগণ রাসুলে সৈয়দে আলম (ﷺ) -এর এ হাদীস বিশুদ্ধ বলে মত প্রকাশ করেছেন। তিরমিজী শরীফে হযরত ইবনে আব্বাসের সূত্রে বর্ণিত হাদীসে রাসুলে সৈয়দে আলম (ﷺ) এর এ ইরশাদ বর্ণিত হয়েছে-“আমি আসমান জমীনের সবকিছু অবগত হয়েছি।”
অন্য বর্ণনায় রয়েছে-“পূর্ব থেকে পশ্চিম প্রান্ত পর্যন্ত যা কিছু রয়েছে, সবই অবগত হয়েছি।”
এক হাদীস মুসনাদে ইমাম আহমদ, তাবাকাতে ইবনে সা’দ ও তাবরানীর কবীরে বিশুদ্ধ সনদে হযরত আবু যব গিফারী (رحمه الله تعالي) থেকে, অপর একটি হাদীস আবু ইয়ালা, ইবনে মুনী’ ও তাবরানীর সংকলিত হযরত আবু দারদার (رحمه الله تعالي) সূত্রে বর্ণিত। এ উভয় সাহাবী উল্লেখ করেছেন-“রাসুলুল্লাহ (ﷺ) আমাদের এমন ভাবে অবহিত করেছেন যে, কোন পাখীর পাখা নাড়ার বর্ণনা পর্যন্ত তাঁর জ্ঞান থেকে বাদ পড়েনি।”
বুখারী ও মুসলিম শরীফে সূর্য গ্রহণের হাদীসে রয়েছে-‘যে সকল বস্তু (পূর্বে) আমাদের দৃষ্টি (১) গােচর হয়নি, তা আমি স্বীয় এ স্থানেই প্রত্যক্ষ করে নিয়েছি।
যেভাবে রাসুল পাক (ﷺ) ইরশাদ করেছেন অথবা হাদীসের শব্দ যেভাবেই (১) রয়েছে।
একটি হাদীস আমি আপনাদের সম্মুখে বর্ণনা করছি, “নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা আমার জন্য দুনিয়া উত্তোলন করেছেন, আমি তা এবং কিয়ামত পর্যন্ত যা কিছু তাতে সংঘটিত হবে, সব কিছু এমন ভাবে অবলােকন করেছি, যেভাবে এ হাতের তালুকে।
টিকা (১) ইমাম কুস্তুলানী ইরশাদুসসারী শরহে বুখারীর কিতাবুল ইলমে উল্লেখ করেছেন অর্থাৎ ঐ বস্তু থেকে যা দেখা যুক্তিগত ভাবেও বিশুদ্ধ; যেমন আল্লাহ তায়ালার দর্শন। আর পরিচয়গত ভাবেও উপযােগী অর্থাৎ তাই যার সম্পর্ক দ্বীনের কর্ম ইত্যাদির সাথে হবে। যেমন তিনি (জটিল ও বিশৃঙ্খল প্রভেদসমূহের) দিকে ইঙ্গিত করেছেন। আমি বলছি, কিন্তু (পরিচয়গত বিশেষত্ব) অনুপযুক্তের সাথেই উপযােগী পরিচয়গত দর্শন। আর পরিচয়তাে প্রসিদ্ধতার মধ্যেই বিদ্যমান। বাকী রইলাে কাশাফিয়া’ এটা ইব্রাহিম খলীল (عليه السلام) এর মধ্যে পাওয়া যায়, যখন তাঁর প্রতিপালক, তাঁকে আসমান ও জমীনের সম্রাজ্য দেখিয়েছেন, তখন তিনি এক ব্যক্তিকে দেখলেন যে, সেজেনা করছে। অতঃপর দ্বিতীয় ও তৃতীয় ব্যক্তিকে এমতাবস্থায় দেখতে পেলেন। এ হাদীসটি আবদুল্লাহ ইবনে হামীদ, আবু শেখ ও ইমাম বায়হাকী ‘শুয়াবুল ঈমানে হযরত আতা থেকে আর সাঈদ ইবনে মানসুর’ ইবনে আবী শােভা, ইবনুল মুনযির ও আবু শেখ হযরত সৈয়দুনা সালমান ফারসী (رضى الله تعالي عنه) থেকে বর্ণনা করেন। অপর এক বর্ণনায় রয়েছে। “তিনি সাত ব্যক্তিকে একের পর এক ব্যভীচারীনির দিকে মুখ কাল করে) থাকতে দেখেছেন। এটা আবৃদ ইবনে হুমাইদ ও ইবনে আবী হাতিম শাহর ইবনে হুশাব থেকে বর্ণনা করেন। আল্লামা কুস্তুলানী কুসুফ সম্পর্কে ‘বাবু সালাতুন নিসা মায়ার রিজালে বর্ণনা করেন যে (তিনি (ﷺ) বলেন, বস্তু সমূহের মধ্যে কোন বস্তু) এমন নেই যা; দেখিনি, বরং এসব আমি স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করেছি)। সুতরাং এ শব্দকে এর ব্যাপকতার উপর ব্যবহার করা চাই-আর এটাই বিশুদ্ধ ও পঙ্কিলতা থেকে পবিত্র।
টিকা শেষ---------------------
এছাড়া আরাে অনেক হাদীস রয়েছে। এগুলাের সংখ্যা ও বিবরণী অনেক দীর্ঘ। ইমাম ও পূর্ববর্তী আলিমগণের বাণীসমূহই আপনাদের জন্য যথেষ্ট।
কাসিদায়ে বুরদার এ ছন্দ-“লওহ ও কলমের জ্ঞান আপনার জ্ঞানের এক টুকরা।” এর ব্যাখ্যাসহ আল্লামা আলী কারীর বর্ণনা (رحمه الله تعالي) গত হয়েছে।
শেখ আবদুল হক মােহাদ্দেছ দেহলভী (رضى الله تعالي عنه) মিশকাত শরীফের ব্যাখ্যা গ্রন্থে নবীয়ে করীম (ﷺ) এর এ ইরশাদ “আসমান ও জমীনে যা কিছু রয়েছে সব কিছু আমি জ্ঞাত হয়েছি”-এর ব্যাখ্যায় বলেন, “এ ইরশাদ দ্বারা পূর্ণ আংশিক সকল জ্ঞান হাসিল হওয়ার এবং তা পরিবেষ্টন করা বুঝায়।”
আল্লামা খাফাযী নসীমুর রিয়াদ শরহে শিফা আল-ইমাম কাজী আয়াজে, আল্লামা যুরক্বানী শরহে মাওয়াহেবে লুদুনিয়া ও মানহুল মুহাম্মদীয়ায় হযরত আবু যর ও আবু দারদার (رضى الله تعالي عنه) হাদীসের ব্যাখ্যায় “আসমান ও জমীনের মধ্যকার যে পাখী পাখা নাড়াচড়া করছে; রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এ সম্পর্কেও আমাদের অবহিত করেছেন” - বলেন, এটা এ কথারই প্রকৃষ্ট প্রমাণ যে, রাসুলে পাক (ﷺ) প্রত্যেক বস্তুর সুস্পষ্ট বর্ণনা দিয়েছেন--কখনাে বিস্তারিত, আবার কখনাে সংক্ষিপ্তাকারে।
ইমাম আহমদ কাস্তুলানী (رحمه الله تعالي) মাওয়াহেবে’ বলেন-“এতে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই যে, আল্লাহ তায়ালা হুজুর (ﷺ) কে এর চেয়েও অধিক জ্ঞান সম্পর্কে অবহিত করেছেন এবং পূর্বাপর সকল বস্তুর জ্ঞান সম্পর্কে অবহিত করেছেন।”
টিকাঃ (১) এটা আমি বৃদ্ধি করেছি। কেননা, অধম এ কিতাব মক্কা মােকাররমায় আট ঘণ্টায় ষষ্ঠ নজর ব্যতীত রচনা করেছি যা পরেই বৃদ্ধি করা হয়েছে। সে সময় আমার নিকট কোন কিতাব ছিলােনা যা আমি খােতবায় উল্লেখ করেছি। আমার এ শব্দে যা ইল্লা’ এর পূর্বে রয়েছে তা কি রায়াইতুহু', না ‘আরাইতুহু’ তাতে আমার সন্দেহ হয়েছে। এ কারণে আমি তা থেকে একটি উল্লেখ করেছি এবং বলে দিয়েছি, যেমন তিনি (ﷺ) ইরশাদ করেছেন। অতঃপর যখন আমি স্বীয় মাতৃভূমিতে ফিরে আসলাম এবং কিতাবাদী পাঠে মনােনিবেশ করলাম, তখন উভয় শব্দে নিশ্চিত হলাম। মুসলিম শরীফের দুস্থানে প্রথম শব্দ কদ’ বৃদ্ধি সহকারে অর্থাৎ এ আর বুখারী শরীফে ভিন্ন শব্দে পেয়েছি, তন্মধ্যে থেকেই কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে।'
___________________
ইমাম বুসীরী (رضى الله تعالي عنه) বলেন “সৃষ্টির সকল জ্ঞান ও ধৈৰ্য্য রাসুলের থেকেই।”
ইমাম ইবনে হাজর মক্কী (رحمه الله تعالي)-এর ব্যাখ্যা গ্রন্থ “আফযালুল কুরা লিকুরায়ে উম্মুল কুরায়” বর্ণনা করেন-“এটা এ কারণে যে, আল্লাহ তায়ালা হুজুরে সৈয়দে আলম (ﷺ) কে সমগ্র জাহানের জ্ঞান প্রদান করেছেন। সুতরাং তিনি পূর্বাপর সকল বস্তুর জ্ঞান যা কিছু সংঘটিত হয়েছে আর যা সংঘটিত হবে, সবই জেনে নিয়েছেন। ‘নসীমুর রিয়াদে উল্লেখ আছে-“হযরত আদম(عليه السلام)-এর জন্ম থেকে আরম্ভ করে। কিয়ামত পর্যন্ত সব সৃষ্টিকেই রাসুলে পাক (ﷺ) -এর ১ সম্মুখে পেশ করা হয়েছে। আর রাসুলে পাক (ﷺ) সে সবের জ্ঞান লাভ করেছেন। যেমন হযরত আদম (عليه السلام)কে সকল বস্তুর নাম শিক্ষা দেয়া হয়েছে।
ইমাম কাজী আয়াজ, আল্লামা মােল্লা আলী ক্বারী অতঃপর আল্লামা মানাভী (رضى الله تعالي عنه) আল্লামা সুয়ুতীর (رحمه الله تعالي) জামে সগীরের ব্যাখ্যা গ্রন্থ ‘তায়সীরে’ বলেন- ‘পবিত্র আত্মাসমূহ যখন শরীরের সম্পর্ক থেকে ছিন্ন হয়ে আলমে আ’লা তথা সর্বোচ্চ জগতের সাথে মিলে যায় এবং তার মধ্যখানে কোন পর্দা না থাকে, তখন সব কিছু এমনিভাবে প্রত্যক্ষ করেন ও শ্রবণ করেন যেমন সামনের বস্তু প্রত্যক্ষ করেন।'
ইমাম ইবনে হাজর মক্কী (رضى الله تعالي عنه) মাদখালে’ ও ইমাম কাস্তুলানী (رحمه الله تعالي) মাওয়াহেবে’ বলেছেন-“নিঃসন্দেহে আমাদের সম্মানিত ওলামায়ে কিরাম বলেন, রাসুলে পাক (ﷺ) -এর পবিত্র হায়াত ও ওফাতের কারণে এ বক্তব্যে কোন পার্থক্য নেই যে, হুজুর (ﷺ) স্বীয় উম্মতদের প্রত্যক্ষ করেছেন এবং তাদের। অবস্থাদি, নিয়ত, ইচ্ছা ও অন্তরের ত্রুটিসমূহ চিনেন। আর এগুলাে তাঁর জন্য। এমন সুস্পষ্ট, যাতে কোন গােপনীয়তা নেই।
আল্লাহ পাক রাব্দুল আলামীন ইরশাদ করেন-“হে নবী! আমি আপনাকে হাজির-নাজির করে প্রেরণ করেছি।”
‘শিফা শরীফে এ মাসয়ালা লিপিবদ্ধ করা হয়েছে যে, যখন শুন্য গৃহে প্রবেশ করাে যাতে কেউ নেই, তখন রাসুলে পাক (ﷺ) -এর উপর সালাম আরজ করাে।
টিকাঃ (১) এর প্রারম্ভ হলাে এটাই যে, আল্লামা ইরাকী শরহে মুহাজ্জবে’ উল্লেখ করেছেন যে, এর উপর সাল্লাল্লাহু আলইহে ওয়াসাল্লাম পেশ করা হয়েছে।
______________
- আল্লামা আলী কুারী এর ব্যাখ্যায় এ মাসআলার কারণ বর্ণনা করতে গিয়ে উল্লেখ করেন, “রাসুলে সৈয়দে আলম (ﷺ) -এর রুহ মােবারক সকল মুসলমানদের গৃহে তাশরীফ নেন।"
শেখ আবদুল হক্ব মােহাদ্দেছ দেহলভী (رضى الله تعالي عنه) ‘মাদারেজুন্নবুয়তে’ বলেন যে, 'দুনিয়ায় হযরত আদম (عليه السلام) থেকে আরম্ভ করে। সিঙ্গা ফুক দেয়া পর্যন্ত যা কিছু সংঘটিত হবে, আল্লাহ তায়ালা সব তাঁর প্রিয় মাহবুবকে অবগত করিয়েছেন। এমনকি আদি থেকে অন্ত পর্যন্ত সকল অবস্থাদি নবীয়ে করীম (ﷺ) জ্ঞাত হয়েছেন। তিনি সকল বস্তু সম্পর্কে জানেন; আল্লাহ তায়ালার কর্ম, আহকাম, গুণাবলী, নাম ও নির্দেশসমূহ এবং সকল জাহির বাতিন, আদি-অন্তের জ্ঞান পরিবেষ্টন করেছেন। এ আয়াতের ভিত্তিতে যে, প্রত্যেক জ্ঞানীর উপর জ্ঞানী রয়েছেন।' তাঁর উপর সবচেয়ে উত্তম দরুদ ও পরিপূর্ণ সালাম।
আমি বলছি, এ আয়াত عام (ব্যাপক) যাতে কোন বস্তুকে নির্দিষ্ট করা। হয়নি। আপনারা রাসুলে পাক (ﷺ) ব্যতীত পৃথিবীর যারই দিকে দৃষ্টিপাত করেন।
কেন, আমাদের নবী প্রত্যেক জ্ঞানী থেকে সর্বোত্তম ও মহাজ্ঞানী। যদি আপনারা হুজুরে সৈয়দে আলম (ﷺ) -এর বরকতময় সত্তার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ। করেন তাহলে দেখবেন, আল্লাহই মহাজ্ঞানী-তার চেয়ে (জ্ঞানের অধিকারী) কেউ নেই। আর ذي علم(যে কোন একজন অনির্দিষ্ট জ্ঞানী) শব্দের ব্যবহার।
আল্লাহর শানে বৈধ (১) নয়। কেননা, (তানকীর) অনির্দিষ্ট বাচক শব্দ ব্যবহার . আংশিকেরই প্রমাণ বহন করে, সুতরাং নির্দিষ্ট করার কোন প্রয়ােজন নেই। শাহ ওয়ালী উল্লাহ মােহাদ্দিস দেহলভী (رحمه الله تعالي) “ফুয়জুল হারামাইন” গ্রন্থে লিখেছেন, 'প্রিয়নবীর পবিত্রতম দরবারে অবস্থানকালে আমাকে স্পষ্ট করা হয়েছে যে, কোন বান্দা কিভাবে ক্রমাগতভাবে উন্নত স্থানের উপনীত হয় । যেস্থানে তার কাছে সব বস্তু পরিষ্কার হয়ে যায়। স্বপ্নে সংঘটিত মেরাজের বিকৃত ঘটনাবলী এ উচ্চতর অবস্থান হতেই প্রদত্ত। এ সম্পর্কিত বহু আয়াত রয়েছে, আর তা থেকে,কিছু প্রমাণস্বরূপ উল্লেখ করা হয়েছে।
টিকা (১) এটা আমি তাঁকে বলেছিলাম, যা আমার বিশ্বাস আমার প্রতিপালক এটা আমাকে শিখেয়েছেন। অতঃপর আমি আল্লামা বায়হাক্বীর কিতাব আল আসমা ওয়াসসিফাতে’ দেখেছি। তিনি উল্লেখ করেছেন, উসতাদ আবু নসর আল বাগদাদী বর্ণনা করেন-নিশ্চয় আমরা আল্লাহ তায়ালাকে تنكير (অনির্দিষ্টতার) সাথে ذو علم (জ্ঞানের অধিকারী) বলবাে না, বরং ذو علم (আলিম লাম) تعريف (নির্দিষ্টতা) সহকারে ذوعلم (জ্ঞানময়)ই বলবাে। যেমন ذو جلالও (অনির্দিষ্টতার) সাথে বলবাে না। এ বিষয়ে আমি মধ্যমভাবে আলােচনা করেছি। শুধু এটিই বলেছি যে, কোথায় (تنكير)তানকীর (অনির্দিষ্ট) নিষেধ আর কোথায় নিষেধ নয়। যেমন ذو مغفرة এবং তা ব্যতীত ذو فضل على الناس বলা যাবে। কিন্তু ذو فضل বলা যাবে না। এর বর্ণনা ও কারণ আমার পুস্তিকা ‘আসমাউল্লাহুল হুসনায় উল্লেখ করেছি।