দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োজনীয় ১০০০ সুন্নাতসমূহ 


আ.ন.ম সিরাজুম মুনির     

শিক্ষার্থী, 

অনার্স (আল-কুরআন এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ)   

জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া,

ষােলশহর, চট্টগ্রাম।


প্রথম প্রকাশকাল : 


উৎসর্গঃ আমার জান্নাতবাসী দাদা-দাদী এবং নানা যথাক্রমে- মরহুম মাওলানা মুহাম্মদ  রুহুল্লাহ  মরহুমা বেগম ফজিলাতুন্নেছা এবং মরহুম মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুল মান্নান। 




দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োজনীয় ১০০০ সুন্নাতসমূহ



ভূমিকা 


সকল প্রশংসা মহান রাব্বল আলামীন, আহকামুল হাকেমীন, নিখিল বিশ্বের একমাত্র স্রষ্টা, সর্বময় ক্ষমতার একক অধিকারী আল্লাহ ﷻ'র  জন্য যিনি তাঁর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি, সর্বোত্তম শ্রেষ্ঠ সৃষ্টজীব  মানব জাতির হেদায়েতের জন্যে যুগে যুগে সময়ের দাবী অনুযায়ী অসংখ্য নবী-রাসুল عليهم الصلاة والسلام প্রেরণ করে মানবজাতির উপর বড়ই এহসান করেছেন। নতশিরে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি তাঁর, যিনি আমাদেরকে শ্রেষ্ঠ নবীর শ্রেষ্ঠ উম্মত বলে সম্মানিত করেছেন। 


অসংখ্য দুরূদ-সালাম পেশ করছি সৃষ্টির উৎস মানবতার অগ্রদূত, সভ্যতার জনক ইমামুল আম্বিয়া, সায়্যিদুল মুরসালিন, রাহমাতুল লিল আলামীন হযরত মুহাম্মদ মােস্তফাﷺ-এর প্রতি শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি সাহাবায়ে কেরাম ও আহলে বাইতে রাসুল ﷺ কে এবং তাঁদের প্রতি রহমত এবং বরকত।



❏ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘য়ালা বলেছেন-


قُلۡ  اِنۡ کُنۡتُمۡ تُحِبُّوۡنَ اللّٰہَ فَاتَّبِعُوۡنِیۡ یُحۡبِبۡکُمُ اللّٰہُ وَ یَغۡفِرۡ لَکُمۡ ذُنُوۡبَکُمۡ ؕ وَ اللّٰہُ غَفُوۡرٌ  رَّحِیۡمٌ. 


 “হে মাহবুব! আপনি বলে দিন, ‘হে মানবকুল, যদি তোমরা      আল্লাহ‌কে      ভালবেসে     থাকো     তবে     আমার অনুসারী   হয়ে   যাও তাহলে  আল্লাহ‌  তোমাদেরকে    ভালবাসবেন এবং     আল্লাহ‌    তোমাদের    গুনাহ     ক্ষমা    করবেন;    আর আল্লাহ‌ ক্ষমাশীল, দয়ালু।

(সূরাঃ আলে ইমরান, আয়াতঃ ৩১)


 ❏ হাসান আল বাসরী رحمة الله عليه বলেন, 

‘তাদের (আল্লাহ ﷻ'র  প্রতি) ভালবাসার নিদর্শন হচ্ছে তাঁর নবী ﷺ'র সুন্নাতর প্রতি তাদের অনুগামীতা।’


 ঈমানদারদের মর্যাদাকে পরিমাপ করা হয় তাঁর নবীর সুন্নাতের অনুসরণ অনুযায়ী।


 এই জন্যই আমি এটিকে সংকলন করেছি যাতে মুসলিমদের কাজ কর্মে নবী ﷺ'র সুন্নাতকে পুনজাগরিত করা যায়; তাদের দৈনন্দিন জীবন, ইবাদত, ঘুম, পানাহার, লোকদের সাথে আচার-আচরণ, পবিত্রতা, ঘরে প্রবেশ এবং বাহির যাওয়া, পোশাক পরিধান এবং বাকি অন্যান্য ক্ষেত্রে।


 এটা আশ্চর্যের বিষয় যে, যদি আমাদের কেউ কিছু অর্থ হারায় সে কত মনোযোগ দেয় এবং এই ব্যাপারে কত চিন্তিত হয়, কত চেষ্টা করে এটাকে খুঁজে পাওয়ার জন্য।


 অথচ কত সুন্নাত আমাদের জীবনে আমরা হারাচ্ছি? এটা কি আমাদেরকে চিন্তিত করে? আমরা কি এগুলোকে আমাদের জীবনে ফিরিয়ে আনতে মুজাহাদা বা চেষ্টা সাধনা করি?


 সমস্যা হচ্ছে আমরা দিনার-দিরহামকে বেশী প্রাধান্য দেই সুন্নাতর চাইতে। এই সম্পদ কিভাবে উপকার করবে যখন আমাদেরকে আমাদের কবরে শোয়ানো হবে এবং জমীনের মাটি আমাদের উপর স্থাপন করা হবে?


❏ আল্লাহ  বলেছেন-


بَلۡ  تُؤۡثِرُوۡنَ الۡحَیٰوۃَ  الدُّنۡیَا. 


বরং  তোমরা  দুনিয়ার  জীবনকে  প্রাধান্য   দিয়ে  থাকো,


وَ الۡاٰخِرَۃُ  خَیۡرٌ  وَّ اَبۡقٰی. 


অথচ, পরকাল উত্তম ও চিরস্থায়ী।

(সূরাঃ আল আ‘লা, আয়াতঃ ১৬-১৭)


 আমি লক্ষ্য করলাম যদি কেউ যথাসাধ্য চেষ্টা করে সে তার জীবনের সব প্রয়োজন পূরণ করে যে সুন্নাত পালন করতে পারবে তা এক হাজারের কম নয়।


 এই ছোট পুস্তিকাটি সুন্নাতকে সহজে বাস্তবায়নের উপায় ব্যতীত আর কিছুই নয়। যদি একজন মুসলিম চায় তাহলে এক হাজার সুন্নাত দৈনিক পালন করতে পারে।


 সুন্নাতকে আকড়ে ধরার উপকারিতার মধ্যে রয়েছে-


 ‣ ভালবাসার মর্যাদায় পৌঁছাবার জন্য- আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার ভালবাসা তাঁর ঈমানদার বান্দাদের জন্য।


 ‣ এটি হচ্ছে ফরজ কাজগুলোর কাঠিন্যতা লাঘব করার উপায়।


 ‣ আল্লাহ দ্বীন যা উপস্থাপন করে তাকে মর্যাদা দেবার এটি একটি নিদর্শন।


 আল্লাহ নামে বলছি, হে মুসলিম উম্মাহ, তোমাদের জীবনের সর্বক্ষেত্রে তোমাদের রাসুল ﷺ'র সুন্নাতকে জাগরিত কর, কারণ সুন্নাত হচ্ছে তোমাদের জীবনে রাসুল ﷺকে পরিপূর্ণ ভালবাসার প্রমাণ এবং তাঁকে অনুসরণ করা তোমাদের জন্য একনিষ্ঠতার নিদর্শন।


– লেখকের কথা






সূচিপত্র


প্রথম অধ্যায়- ঘুম থেকে জেগে উঠা

দ্বিতীয় অধ্যায়- টয়লেটে প্রবেশ এবং বের হওয়া

তৃতীয় অধ্যায়- অযু

চতুর্থ অধ্যায়- মিসওয়াক

পঞ্চম অধ্যায়- গোসল করার সুন্নাত

ষষ্ঠ অধ্যায়- তৈল লাগানোর সুন্নাত পদ্বতি

সপ্তম অধ্যায়- নখ কাটার সুন্নাত

অষ্টম অধ্যায়- সুরমা লাগানোর সুন্নাত 

নবম অধ্যায়- কাপড় পরিধান ও খোলা এবং জুতো পরিধান ও খোলা

দশম অধ্যায়- ঘরে প্রবেশ এবং বের হওয়া

একাদশ অধ্যায়- পথ চলার সুন্নাত

দ্বাদশ অধ্যায়- সালামের সুন্নাত

ত্রয়োদশ অধ্যায়- মুসাফাহার সুন্নাত

চতুর্দশ অধ্যায়- কথা-বার্তা বলার সুন্নাত

পঞ্চদশ অধ্যায়- হাচিঁর সুন্নাত

ষোড়শ অধ্যায়- মসজিদে প্রবেশ এবং বের হওয়া

সপ্তদশ অধ্যায়- আযান ও ইক্বামাত

অষ্টাদশ অধ্যায়- সুতরাকে সামনে রেখে সালাত আদায়

ঊনবিংশ অধ্যায়- সুন্নাত সালাতসমূহ

বিংশ অধ্যায়- রাতের সালাত

একবিংশ অধ্যায়- বিতর সালাত

দ্বাবিংশ অধ্যায়- ফজর নামাজ

ত্রয়োবিংশ অধ্যায়-  ফরজ নামাজের পর

চতুর্বিংশ অধ্যায়- সকাল-সন্ধ্যায় আল্লাহ ﷻ'র  যিকির করা

পঞ্চবিংশ অধ্যায়- একজন মুসলিমের সাথে সাক্ষাতে সুন্নাতগুলো

ষটবিংশ অধ্যায়- খাবার খাওয়া ও পানি পান করা

সপ্তবিংশতি অধ্যায়- দাওয়াত দেওয়া এবং গ্রহণ করার সুন্নাত পদ্ধতি

অষ্টাবিংশ অধ্যায়- নফল নামাজ

ঊনত্রিংশ অধ্যায়- মজলিস ত্যাগ করার সময়

ত্রিংশ অধ্যায়- সঠিক নিয়ত করা

একত্রিংশ অধ্যায়- আনন্দ বিনোদনে সুন্নাত

দ্বাত্রিংশ অধ্যায়- ঈদের দিনের সুন্নাত

ত্রয়োত্রিংশ অধ্যায়- সর্বদা আল্লাহ ﷻ-কে স্মরণ করা

চতুর্ত্রিংশ অধ্যায়- আল্লাহ ﷻ'র  অনুগ্রহ নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা

পঞ্চত্রিংশ অধ্যায়- দুরুদ শরীফ পাঠ করা

ষটত্রিংশ অধ্যায়- অনিষ্ট থেকে নিরাপদ থাকার

সপ্তত্রিংশ অধ্যায়- কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত

অষ্টাত্রিংশ অধ্যায়- যৌথ-রসনা

ঊনচত্বারিংশ অধ্যায়- বিবাহের সুন্নাত

চত্বারিংশ অধ্যায়- স্বামী-স্ত্রী এর মাঝে ভাবপ্রবণতা এবং রাসুল ﷺ এর সুন্নাত 

একচত্বারিংশ অধ্যায়- সফরের সুন্নাত

দ্বাচত্বারিংশ অধ্যায়- রোগ দেখার সুন্নাত   

ত্রয়শ্চত্বারিংশ অধ্যায়- ঘুমানোর পূর্বে






উপক্রমণিকা 





সুন্নাত হলো দ্বীনের সেসব প্রচলিত পদ্ধতি, যা ফরজ নয়, ওয়াজিবও নয়, রাসুল ﷺ এবং সাহাবায়ে কেরামগণ মাঝেমধ্যে অভ্যাসগত ভাবে পরিত্যাগ করার সাথে সবসময় আমল করতেন তা-ই মূলত সুন্নাত। নিম্নে সুন্নাত এর পরিচয় উপস্থাপন করা হলো- 



★ সুন্নাত এর আভিধানিক অর্থ (معنى السنة لغة):-


سنه শব্দটি একবচন; বহুবচনে  سنن। এর আভিধানিক অর্থ হলো-


الطريقة নিয়ম।


السيرة চরিত্র।


الفطرة স্বভাব।


الحكم বিধান।


النهج পদ্ধতি।



★ সুন্নাত এর পারিভাষিক অর্থ(معنى السنةاصطاحا):-


❏ শরীয়তের পরিভাষায় সুন্নাত এর অর্থ হল-


هى الطريقة المسلوكة لدين من غير افتراض ولا وجوب.



❏ মোল্লা আলী কারী বলেন-


المراد بالسنه اقوال النبي ﷺ وافعاله واحواله معبرة عنها بالشريعة والطريقة والحقيقة.



❏ আল মুজামুল ওয়াসিত গ্রন্থ প্রণেতা বলেন-


السنة هى العمل المحمود في الدين مما ليس فرضا ولا واجبا.



❏ কেউ কেউ বলেন-


ما ينسب الى النبي ﷺ من قول او فعل او تقرير.



❏ দ্বীনের ঐ প্রচলিত পদ্ধতিকে সুন্নাত বলা হয়। যা ফরজও নয় ওয়াজিবও নয়।

 

❏  সুন্নাত রাসুল  ﷺ এর কথা,কাজ, অনুমোদন, স্বভাব-চরিত্র, আচার-ব্যবহার, চরিত্র, বৈশিষ্ট্য ও তাহার জীবন পদ্ধতির মধ্যে যা পালন করা ফরজ বা ওয়াজিব নয়, তাকেই সুন্নাত বলা হয়।



★ সুন্নাতের তাৎপর্যঃ-


পবিত্র কুরআনে সুন্নাহর অনুকরণ-অনুস্বরণের জন্য অত্যাধিক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। পবিত্র কুরআন এ কথাও বলেছে, কেউ যদি সুন্নাহর অনুসরণ না করে, তবে তার ঈমান যথাযথ হবে না। 


❏ মহান আল্লাহ বলেন, 


فَلَا وَ رَبِّکَ لَا یُؤۡمِنُوۡنَ حَتّٰی  یُحَکِّمُوۡکَ فِیۡمَا شَجَرَ  بَیۡنَہُمۡ ثُمَّ  لَا  یَجِدُوۡا فِیۡۤ  اَنۡفُسِہِمۡ حَرَجًا  مِّمَّا قَضَیۡتَ  وَ یُسَلِّمُوۡا  تَسۡلِیۡمًا. 



সুতরাং হে মাহবুব!  আপনার রবের  শপথ,  তারা মুসলমান    হবে    না   যতক্ষণ   পর্যন্ত    পরষ্পরের    ঝগড়ার ক্ষেত্রে  আপনাকে বিচারক মানবে  না  অতঃপর  যা  কিছু  আপনি নির্দেশ করবেন, তাদের অন্তরসমূহে সে সম্পর্কে কোন দ্বিধা পাবে না এবং সর্বান্তঃকরণে তা মেনে নেবে। 

(সুরা নিসা-  ৪:৬৫) 


❏ তিনি আরও বলেন, 


کَانَ  لِمُؤۡمِنٍ وَّ لَا مُؤۡمِنَۃٍ  اِذَا قَضَی اللّٰہُ  وَ رَسُوۡلُہٗۤ  اَمۡرًا اَنۡ  یَّکُوۡنَ  لَہُمُ الۡخِیَرَۃُ  مِنۡ اَمۡرِہِمۡ ؕ وَ مَنۡ یَّعۡصِ اللّٰہَ وَ رَسُوۡلَہٗ  فَقَدۡ  ضَلَّ  ضَلٰلًا  مُّبِیۡنًا. 


   না    কোন      মুসলমান    পুরুষ,    না     কোন মুসলমান নারীর জন্য  শোভা  পায় যে, যখন  আল্লাহ্‌  ও  রাসুল  কোন     নির্দেশ   দেন  তখন   তাদের   স্বীয়   ব্যাপারে কোন ইখতিয়ার থাকবে। এবং  যে কেউ নির্দেশ  অমান্য করে-     আল্লাহ্‌    ও     তার     রাসুলের,     সে     নিশ্চয়     সুস্পষ্ট বিভ্রান্তিতে পথভ্রষ্ট হয়েছে।

(সূরা আল-আহযাব- ৩৩:৩৬)


ইহ-পরকালীন নাজাত, কল্যাণ ও জান্নাতের পথ শুধুমাত্র কুরআন ও রাসুলুল্লাহ ﷺ এর আদর্শের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং খোলাফায়ে রাশিদীন ও সাহাবায়ে কিরামগণের رضي الله عنهم এর আদর্শে ও বিদ্যমান। রাসুল ﷺ এর আদর্শ সেভাবেই অনুসরণ করতে হবে যেভাবে সাহাবায়ে কেরাম বিশেষতঃ মুহাজীর ও আনসারগণ رضي الله عنهم অনুসরণ করেছেন। 


❏ এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, 


وَ السّٰبِقُوۡنَ الۡاَوَّلُوۡنَ  مِنَ الۡمُہٰجِرِیۡنَ وَ الۡاَنۡصَارِ وَ الَّذِیۡنَ اتَّبَعُوۡہُمۡ بِاِحۡسَانٍ ۙ رَّضِیَ اللّٰہُ عَنۡہُمۡ وَ رَضُوۡا عَنۡہُ وَ اَعَدَّ لَہُمۡ جَنّٰتٍ تَجۡرِیۡ تَحۡتَہَا الۡاَنۡہٰرُ خٰلِدِیۡنَ فِیۡہَاۤ  اَبَدًا ؕ ذٰلِکَ الۡفَوۡزُ الۡعَظِیۡمُ. 


 সবার  মধ্যে    অগ্রগামী  প্রথম  মুহাজির  ও আনসার  আর   যারা   সৎকর্মের   সাথে  তাদের   অনুসারী হয়েছে, আল্লাহ্‌ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তারাও আল্লাহ্‌র প্রতি      সন্তুষ্ট;      আর        তাদের        জন্য      প্রস্তুত   রেখেছেন বাগানসমূহ          (জান্নাতসমূহ),          যেগুলোর    নিম্নদেশে  নহরসমূহ  প্রবহমান। তারা  সদা  সর্বদা সেগুলোর মধ্যে অবস্থান করবে। এটাই হচ্ছে মহা সাফল্য।

(সূরা তাওবাহ ৯:১০০)


❏ রাসুলুল্লাহ ﷺ এর সুন্নাহ আঁকড়ে থাকার ব্যাপারে হুজুর ﷺ নিজেই বলেছেন, আমি তোমাদের কাছে দু’টি জিনিস রেখে যাচ্ছি। যতক্ষণ তোমরা সে দু’টি জিনিস আঁকড়ে থাকবে, ততক্ষণ পথভ্রষ্ট হবে না: আল্লাহর কিতাব ও আমার সুন্নাহ। 


عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ  صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ  وَسَلَّمَ تَرَكْتُ فيكُمْ شَيْئَيْنِ لَنْ تَضِلُّوا بَعْدَهُما كِتابَ الله وسُنَّتي وَلَنْ يَتَفَرَّقا حَتَّى يَرِدا عَلَيَّ الحَوْضَ.


আবূ হুরাইরা رضي الله عنه থেকে বর্ণিতঃ:


রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, “আমি তোমাদের মাঝে দুটি জিনিস রেখে যাচ্ছি, যা অবলম্বন করলে তোমরা কখনই পথভ্রষ্ট হবে না। তা হল আল্লাহর কিতাব এবং আমার সুন্নাহ। ‘হওয’(কাওসারে) আমার নিকট অবতরণ না করা পর্যন্ত তা বিচ্ছিন্ন হবে না।” 

(হাকেম ৩১৯)

  

❏ খোলাফায়ে রাশিদীনের সুন্নাত সম্পর্কে হযরত ইরবায বিন সারিয়াহ رضي الله عنه  থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ ﷺ একদিন আমাদের নিয়ে নামাজ আদায় করলেন। অতঃপর আমাদের দিকে ফিরে বসলেন। অতঃপর আমাদেরকে এমন মর্মস্পর্শী ভাষায় উপদেশ দিলেন যে, চক্ষু অশ্রুসজল হয়ে গেল এবং হৃদয় ভীত-বিহবল হয়ে পড়ল। এমন সময় একজন বলে উঠলো, হে আল্লাহর রাসুল! মনে হচ্ছে এটা যেন আপনার বিদায়ী ভাষণ। অতএব আপনি আমাদেরকে আরও বেশী উপদেশ দিন। তখন রাসুলুল্লাহ ﷺ বললেন, আমি তোমাদেরকে আল্লাহভীতির উপদেশ দিচ্ছি। আমি তোমাদের আমীরের আদেশ শুনতে ও মান্য করতে উপদেশ দিচ্ছি যদিও তিনি একজন হাবশী গোলামও হন। কেননা আমার পরে তোমাদের মধ্যে যারা বেঁচে থাকবে, তারা অতিসত্বর বহু মতভেদ দেখতে পাবে। তখন তোমরা আমার সুন্নাতকে এবং সুপথপ্রাপ্ত খোলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাতকেই আকড়ে ধরবে। তাকে কঠিনভাবে ধরবে এবং মাড়ির দাঁতগুলো দিয়ে কামড়ে ধরে থাকবে। 


عَنِ الْعِرْبَاضِ بْنِ سَارِيَةَ قَالَ صَلَّى بِنَا رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم ذَاتَ يَوْمٍ ثُمَّ أَقْبَلَ عَلَيْنَا فَوَعَظَنَا مَوْعِظَةً بَلِيْغَةً ذَرَفَتْ مِنْهَا الْعُيُوْنُ وَوَجِلَتْ مِنْهَا الْقُلُوبُ فَقَالَ قَائِلٌ يَا رَسُوْلَ اللهِ كَأَنَّ هَذِهِ مَوْعِظَةُ مُوَدِّعٍ فَمَاذَا تَعْهَدُ إِلَيْنَا فَقَالَ أُوْصِيْكُمْ بِتَقْوَى اللهِ وَالسَّمْعِ وَالطَّاعَةِ وَإِنْ كَانَ عَبْدًا حَبَشِيًّا فَإِنَّهُ مَنْ يَعِشْ مِنْكُمْ بَعْدِى فَسَيَرَى اخْتِلاَفًا كَثِيرًا فَعَلَيْكُمْ بِسُنَّتِى وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الْمَهْدِيِّينَ الرَّاشِدِينَ تَمَسَّكُوا بِهَا وَعَضُّوا عَلَيْهَا بِالنَّوَاجِذِ وَإِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الأُمُورِ فَإِنَّ كُلَّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ وَكُلَّ بِدْعَةٍ ضَلاَلَةٌ.


ইরবায বিন সারিয়াহ رضي الله عنه থেকে বর্ণিতঃ:


তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ ﷺ একদিন আমাদের নিয়ে ছালাত আদায় করলেন। অতঃপর আমাদের দিকে মুখ ফিরিয়ে বসলেন। অতঃপর আমাদেরকে এমন মর্মস্পর্শী ভাষায় ওয়ায করলেন যে, চক্ষু সমূহ অশ্রুসজল হয়ে গেল এবং হৃদয় সমূহ ভীত-বিহ্বল হয়ে গেল। এমন সময় একজন লোক বলে উঠল, হে আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! মনে হচ্ছে এটা বিদায়ী উপদেশ। অতএব আপনি আমাদেরকে আরও বেশী উপদেশ দিন। তখন রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আমি তোমাদেরকে আল্লাহ ভীতির উপদেশ দিচ্ছি এবং তোমাদের আমীরের আদেশ শুনতে ও মান্য করতে উপদেশ দিচ্ছি যদিও তিনি একজন হাবশী গোলাম হন। কেননা আমার পরে তোমাদের মধ্যে যারা বেঁচে থাকবে, তারা সত্বর বহু মতভেদ দেখতে পাবে। তখন তোমরা আমার সুন্নাতকে এবং সুপথপ্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশেদ্বীনের সুন্নাতকে আঁকড়ে ধরবে। তাকে কঠিনভাবে ধরবে এবং মাড়ির দাঁত সমূহ দিয়ে কামড়ে ধরে থাকবে। সাবধান! দ্বীনের মধ্যে নতুন সৃষ্টি হতে দূরে থাকবে। কেননা (দ্বীনের ব্যাপারে) যেকোন নতুন সৃষ্টি হল বিদ‘আত এবং প্রত্যেক বিদ‘আত হল পথভ্রষ্টতা’ 


(আহমাদ, আবু দাঊদ, তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/১৬৫, মুসিলিম : হাদিস নম্বর ১৭১৮; আবু দাউদ : হাদিস নম্বর ৪০৬৭।) 


❏ সাহাবাগণের সুন্নাত অনুসরণ-অনুকরণ সম্পর্কে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর رضي الله عنه থেকে বর্ণিত। প্রিয় রাসুল ﷺ বলেছেন, বানী-ইসরাইলীগণ বাহাত্তর দলে বিভক্ত হয়েছিল আর আমার উম্মাত বিভক্ত হবে তিয়াত্তর দলে, সকলেই জাহান্নামে যাবে, কিন্তু একটি মাত্র দল জান্নাতে যাবে। সাহাবাগণ رضي الله عنهم জিজ্ঞাসা করলেন, এই দল কারা? রাসুলুলাহ ﷺ বললেন, যারা আমার ও আমার সাহাবাগণের সুন্নাতের উপর কায়েম থাকবে। 

(তিরমিযি) 


হযরত রাসুলে আকরাম ﷺ ছিলেন উম্মতে মুহাম্মদীর'র জন্য শিক্ষক সরূপ । মুসলমানদের চাল-চলন, আচার-ব্যবহার, ইবাদাত-বন্দেগী এবং আদর্শ ও চরিত্র কেমন হবে, শিক্ষাগুরু হিসেবে তিনি নিজের জীবনে এসব বাস্তবে আমল করে উম্মতের জন্য নিদর্শন রেখে গেছেন । তাঁর সারাজীবনের কথা ও কাজের মাধ্যমে রেখে যাওয়া আদর্শ উম্মতে মোহাম্মদীর জন্য তরীকা বা সুন্নতে রাসুল ﷺ।


মানবের দেহ এবং আত্মা এই উভয় অংশের উৎকর্ষ সাধন ব্যতিত সে পূর্ণাঙ্গ মানুষ হতে পারে না । তাই রাসুল ﷺ মানুষের চরিত্র সংশোধনের পদ্ধতি শিক্ষাদানের পাশাপাশি আত্মার উন্নতি সাধনের পদ্ধতিও শিক্ষা দিয়েছেন, যাতে মানুষ আল্লাহ‌র পরিচয় লাভ করতে পারে । 


মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে সুন্নাতের গুরুত্ব জেনে, বুঝে সুন্নাতের ওপর জীবন অতিবাহিত করার তাওফিক দান করুন। আমিন।


Top