নজদ অঞ্চল ও তামিম গোত্রসম্পর্কিত হাদীসের অপব্যাখ্যার রদ


[Bengali translation of the online article "Puncturing the Devil's Dream about the Hadiths of Najd and Tamim" at www.masud.co.uk/ISLAM/misc/najd.htm; translator: Kazi Saifuddin Hossain]


মূল: হিশাম স্কাল্লি

(সুন্নী ডিফেন্স লীগ, লাদজনাত আল-দিফা’আ আ’ন আস্ সুন্নাহ আল-মোতাহহারাহ, মিলান, ইতালী)

অনুবাদ: কাজী সাইফুদ্দীন হোসেন

আরবী ও অনলাইন সেট-আপ: মুহাম্মদ রুবাইয়েত বিন মূসা



وَالصَّلوٰةُ وَالسَّلَامُ عَليٰ رَسُوْلِهِ الْكَرِيْمِ


এই বিষয়টি লক্ষণীয় যে, অন্যান্য মুসলমান দেশে অসংখ্য অনন্য সাধারণ মোহাদ্দেসীন, মুফাসসেরীন, ব্যাকরণবিদ, ইতিহাসবিদ অথবা আইনশাস্ত্রজ্ঞ তথা ইসলামী জ্ঞান বিশারদ পয়দা হলেও নজদ নামে পরিচিত অঞ্চলে অনুরূপ মহান কোনো আলেম-ই আবির্ভূত হন নি। এই প্রবন্ধটি খোলা মনের অধিকারী মুসলমানদের কাছে এই লক্ষণীয় বিষয়ের একটি ব্যাখ্যা প্রদানের উদ্যোগমাত্র।


নজদ অঞ্চল বিষয়ক হাদীস সম্পর্কে একটি ভ্রান্ত ধারণার অপনোদন


নজদ রাজ্য, যা দুই শতাব্দী যাবত ওহাবী মতবাদের মহাপরীক্ষার স্থান হয়ে দাঁড়িয়েছে, তা এক গুচ্ছ কৌতূহলোদ্দীপক হাদীস ও প্রাথমিক (যুগের) রওয়ায়াতের বিষয়বস্তুতে আজ পরিণত, যেগুলো অত্যন্ত সূক্ষ্ম বিশ্লেষণের দাবি রাখে। 


❏ হাদিস 1:


এগুলোর মধ্যে সর্বাধিক প্রসিদ্ধ হলো ইমাম বোখারী (رحمة الله)'র বর্ণনায় হযরত ইবনে উমর (رضي الله عنه)'র রওয়ায়াত, যা’তে তিনি বলেন: “রাসূলে খোদা (ﷺ) ইরশাদ ফরমান, 

اللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِي شَامِنَا، وَفِي يَمَنِنَا‘

ইয়া আল্লাহ! আমাদের সিরিয়া (শাম) ও আমাদের ইয়েমেন দেশে বরকত দিন।’ সাহাবা-এ-কেরাম (رضي الله عنه) আরয করেন, 

وقَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ، وَفِي نَجْدِنَا؟‘

আমাদের নজদ অঞ্চলের জন্যেও (দোয়া করুন)?’ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আবার দোয়া করেন,

 اللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِي شَأْمِنَا، اللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِي يَمَنِنَا 

‘ইয়া আল্লাহ! আমাদের শাম ও ইয়েমেনদেশে বরকত দিন।’ সাহাবা-এ-কেরাম (رضي الله عنه) আবারও আরয করেন,

قَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ، وَفِي نَجْدِنَا؟‘

আমাদের নজদ অঞ্চলের জন্যেও (দোয়া করুন)?’ তৃতীয়বারে আমার (ইবনে উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা) মনে হলো তিনি বলেন,

 هُنَاكَ الزَّلاَزِلُ وَالفِتَنُ، وَبِهَا يَطْلُعُ قَرْنُ الشَّيْطَانِ

‘ওখানে রয়েছে ভূমিকম্পসমূহ ও নানা ফিতনা (বিবাদ-বিসংবাদ), এবং সেখান থেকে উদিত হবে শয়তানের শিং (কারনুশ্ শয়তান)’।” [১.] 

১. বুখারী : আস সহীহ, বাবু কাওলিন নবীয়্যি (ﷺ), ৯:৫৪ হাদীস নং ৭০৯৪।

(ক) আহমদ : আল মুসনাদ, মুসনাদু আব্দিল্লাহ ইবনে উমর, ২:১১৮ হাদীস নং ৫৯৮৭।

(খ) তিরমিযী : আস সুনান, বাবু ফি ফাদ্বলিশ শাম ওয়াল ইমান, ৬:২২৭ হাদীস নং ৩৯৫৩।

(গ) আবু ইয়ালা : আল মুসনাদ, ১:৮৭ হাদীস নং ৭৮।

(ঘ) ইব্ন হিব্বান : আস সহীহ, ১৬:২৯০ হাদীস নং ৭৩০১।

(ঙ) ত্ববরানী : মু‘জামুল আওসাত, ২:২৪৯ হাদীস নং ১৮৮৯।

(চ) বাগাবী : শরহুস সুন্নাহ, ১৪:২০৬ হাদীস নং ৪০০৬।


এই হাদীস স্পষ্টই নজদীদের কাছে হজম হবার মতো নয়, যাদের কেউ কেউ আজো অন্যান্য প্রসিদ্ধ অঞ্চলের মুসলমানদেরকে বোঝাতে অপতৎপর যে হাদীসটি যা স্পষ্ট বলছে তা তার আসল অর্থ নয়। এ ধরনের আত্মপক্ষ সমর্থনকারীদের ব্যবহৃত একটি কূটচাল হলো এমন ধারণা দেয়া যা’তে ইরাককে নজদ অঞ্চলের সীমান্তে অন্তর্ভুক্ত করা যায়। নজদীরা এই ধূর্ত চালের দ্বারা সিদ্ধান্ত টানে যে, হাদীসে কঠোরভাবে সমালোচিত নজদের অংশটি আসলে ইরাক, আর মূল নজদ এলাকা এই সমালোচনার বাইরে। মধ্যযুগের ইসলামী ভূগোলবিদগণ এই সহজাতভাবে অদ্ভূত ধারণার বিরোধিতা করেছেন (উদাহরণস্বরূপ দেখুন ইবনে খুররাদাযবিহ কৃত ‘আল-মাসালিক ওয়াল-মামালিক’, লেইডেন, ১৮৮৭, ১২৫পৃষ্ঠা; ইবনে হাওকাল প্রণীত ‘কেতাব সুরত আল-আরদ’, বৈরুত ১৯৬৮, ১৮পৃষ্ঠা)। তাঁরা (ভূগোলবিদগণ) নজদের উত্তর সীমানাকে ‘ওয়াদি আল-রুম্মা’ পর্যন্ত অথবা আল-মাদা’ইনের দক্ষিণে অবস্থিত মরুভূমি পর্যন্ত চিহ্নিত করেন। কুফা ও বসরার মতো জায়গাগুলো, যেখানে কলহ-বিবাদের দ্বিতীয় ঢেউ উঠেছিল, সেগুলো প্রাথমিক যুগের মুসলমানদের মনে ‘নজদ’ অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত হবার কোনো ইঙ্গিত-ই এখানে নেই। পক্ষান্তরে, এই সব স্থান (কুফা, বসরা ইত্যাদি) সর্বক্ষেত্রে ইরাকের এলাকা হিসেবেই চিহ্নিত ছিল।

Top