জানাযার বর্ণনা



মাসআলাঃ মহল্লার ইমাম জানাযার নামায পড়ানোর ক্ষেত্রে মৃত ব্যক্তির সন্তান বা নিকটআত্মীয় ও অভিভাবক থেকে অগ্রগামী। যদি মহল্লার ইমাম নেক্কার ও পরহেজগার হয় এবং মৃত ব্যক্তি জীবত অবস্থায় তার পিছনে নামাযের ইকতিদা করাকে পছন্দ করে থাকে তাহলে জানাযার নামায পড়ানোর জন্য অভিভাবক থেকে অগ্রবর্তী হবে, তাকে রসমী অনুমতি নেয়ার প্রয়োজন নেই, নতুবা ওয়ালি (অভিভাবক) হক্বদার, তিনি নিজে পড়াবেন কিংবা অন্য কোন ব্যক্তি দিয়ে পড়াবেন।


ফতওয়ায়ে শামীতে উল্লেখ রয়েছে- মহল্লার মসজিদের নির্ধারিত ইমামই জানাযা পড়ানোর জন্য সর্বোত্তম, কেননা মৃত ব্যক্তি জীবিত থাকা অবস্থায় তার পিছনে নামায পড়তে রাজি ছিল, অতএব তিনি তার ওফাতের পর তার জানাযার নামায পড়ানো উচিত হবে। ১৮৮

 ➥১৮৮. ফতওয়ায়ে শামী, খণ্ড-১ম, পৃষ্ঠা-৫৯০।


মাসআলাঃ মৃত্যুর সময় বা জান বের হওয়ার সময় যদি কোন ব্যক্তি আপন গুনাহ সমূহ থেকে তাওবা করে তা গ্রহণযোগ্য হবে কি-না এ ক্ষেত্রে বলা যায়- নিঃসন্দেহে গুনাহ সমূহের তাওবা গ্রহণযোগ্য কিন্তু কুফরীর তাওবা গ্রহণযোগ্য নয়। ঐ সময়ে কাফির মুসলমান হতে পারে না।১৮৯

 ➥১৮৯. শামী, বাবুল জানায়িজ, পৃষ্ঠা-১৯৯।


মাসআলাঃ মৃত ব্যক্তির কান, নাক, মুখ ইত্যাদি ছিদ্র সমূহে রুই রাখা কোন অসুবিধা নেই, তবে পায়খানা ও পেশাবের স্থানে রাখবে না। ১৯০

 ➥১৯০. ফতোয়ায়ে শামী।


মাসআলাঃ কবরস্থানের লাকড়ী ও ঘাস শুকনা হলে তা কাটা কোন অসুবিধা নেই তবে সবুজ অর্থাৎ তাজা লাকড়ী ও ঘাস কাটা মাকরূহ।  ১৯১

➥১৯১. আলমগীরী।


মাসআলাঃ জানাযার নামাযে রুকন দুইটি- প্রথমটি হল- চার তাকবীর যা চার রাকাতের স্থলাভিষিক্ত আর দ্বিতীয়টি হল- দাঁড়ানো। যদি কেউ ওজর ব্যতীত জানাযার নামায বসে পড়ে তা শুদ্ধ হবে না। ১৯২

➥১৯২. শামী ইত্যাদি, দুররে মুখতার এর বরাতে।


মাসআলাঃ জানাযার মধ্যে ওয়াজিব হচ্ছে- মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া করা।  ১৯৩

 ➥১৯৩. রুকনে দ্বীন, পৃষ্ঠা-২০৮, দুররে মুখতার এর বরাতে।


মাসআলাঃ জানাযার নামাযে সুন্নাত হচ্ছে- ছানা ও দরূদ শরীফ পাঠ করা।  ১৯৪

 ➥১৯৪. রুকনে দ্বীন, পৃষ্ঠা-২০৮, দুররে মুখতার এর বরাতে, শামী।


মাসআলাঃ জানাযার নামায তখনই পড়তে হয়, যখন জানাযা উপস্থিত হয়ে যাবে। ১৯৫

 ➥১৯৫. ত্বাহত্বাবী।


মাসআলাঃ জানাযার নামাযের শর্তসমূহ হচ্ছে- প্রথমত: ঐ সমস্ত শর্ত যা অন্যান্য নামাযে রয়েছে, অর্থাৎ- মুসলমান হওয়া, হাক্বীক্বী ও হুকমী নাপাক থেকে পবিত্র হওয়া, সতর ঢাকা, কিবলামুখী হওয়া, নিয়ত করা কিন্তু নির্দিষ্ট শর্ত সমূহ যা এ নামাযের সাথে নির্ধারিত তা হল এ ময়্যিত (মৃত ব্যক্তি) সামনে বিদ্যমান হওয়া- ময়্যিত জমিনের উপর হওয়া। যদি জানাযা অনুপস্থিত হয় বা বাহনের উপর হয় বা হাতের উপর বা নিচে হয় তাহলে নামায শুদ্ধ হবে না।১৯৬

 ➥১৯৬. রুকনে দ্বীন, পৃষ্ঠা-২০৮, দুররে মুখতার এর বরাতে, আলমগীরী।


মাসআলাঃ অন্যান্য নামায সমূহের যা নামায ভঙ্গকারী বিষয় তা জানাযার নামাযের ও ভঙ্গকারী বিষয় মহিলা পুরুষের সাথে এক বরাবর দাঁড়ানো ব্যতীত, জানাযার নামাযে মহিলার সাথে এক বরাবর দাঁড়ানো শুদ্ধ আছে।১৯৭

 ➥১৯৭. রুকনে দ্বীন, আলমগীরী এর বরাতে।


মাসআলাঃ জানাযার নামায হচ্ছে- ফরযে কিফায়া এবং এটি জামাতে পড়াও শর্ত নয়। এমনকি একজন মানুষ পড়লেও ফরয জিম্মা থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাবে।  ১৯৮

 ➥১৯৮. আলমগীরী এর বরাতে।


মাসআলাঃ কবরস্থানে জানাযা জমিনে রাখার পূর্বে মানুষ বসে যাওয়া মাকরূহ, রাখার পর জায়েয আছে। আর উত্তম হল- যতক্ষণ পর্যন্ত উহার উপর মাটি ঢালবেনা ততক্ষণ পর্যন্ত বসবেনা। ১৯৯

 ➥১৯৯. আলমগীরী।


মাসআলাঃ যদি কোন ব্যক্তি থেকে জানাযার তাকবীর ছুটে বা চলে যাচ্ছে ঐ সময় ইমাম এক তাকবীর বলে ফেলেছে এমতাবস্থায় এ ব্যক্তি যদি পূর্ব থেকেই তাহরীমার সময় উপস্থিত ছিল এবং সে কোন কারণে তাকবীরে তাহরীমাতে শরীক হয়নি তাহলে সে দ্বিতীয় তাকবীরের অপেক্ষা না করে জামাতে শরীক হয়ে যাবেন।


মাসআলাঃ ইমাম যদি দ্বিতীয় বা তৃতীয় তাকবীরের পরে ভুলক্রমে সালাম ফিরিয়ে দেন তাহলে কিছুই করবে না, এভাবে পড়তে থাকবে এ সালামটি এরূপ যে, কেউ নামাযের বৈঠকের মধ্যখানে ভুলক্রমে সালাম ফিরিয়ে দিলেন। ২০০

  ➥২০০. আলমগীরী।


মাসআলাঃ অধিকাংশ লোক জানাযার মধ্যে জুতা খুলে না, এ ক্ষেত্রে  যদি ঐ সমস্ত লোকদের আপন জুতা সমূহের ব্যাপারে পবিত্র হওয়ার দৃঢ় বিশ্বাস থাকে তাহলে অসুবিধা নেই। নতুবা জুতা খুলে পড়তে হবে। ২০১

➥২০১. রুকনে দ্বীন, পৃষ্ঠা-২১০, বাবুল জানায়িয।


মাসআলাঃ লাশ দাফন হওয়ার পর ওয়াসিতের উপর আমল করার উদ্দেশ্যে কবর খুলা কখনোও জায়েয নয়। যেমন- কোন ময়্যতকে গোসল ও নামায ব্যতীত দাফন করা হয়েছে তাহলে কবর খনন করা জায়েয নেই।


যেমন- যদি গোসল বা নামায ব্যতীত দাফন করা হয় বা ডান পাশে না রেখে অন্য পাশে রাখে বা কিবলা ব্যতীত অন্য দিকে রাখে তাহলে মাটি দেয়ার পর কবর খনন করা যাবেনা। ২০২

 ➥২০২. শামী, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা-৮২।


মাসআলাঃ তাকবীর সমূহ শেষ হওয়ার পর সালামের পূর্বে হাত ছেড়ে দিবে। চতুর্থ তাকবীরের পর কোন উদ্দেশ্য অবশিষ্ট নেই কেননা চতুর্থ তাকবীরের পর আর কোন সুন্নাত যিকির অবশিষ্ট থাকে না তাই সহীহ হল উভয় হাত ছেড়ে দিবে অতঃপর ডানে ও বামে দুইটি সালাম ফিরাবে।২০৩

 ➥২০৩. ফতওয়ায়ে শামী, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা-২০০।


মাসআলাঃ জানাযার ব্যাপারে অন্যান্য মসজিদ সমূহকে মসজিদুল হারাম ও মসজিদে নববীর উপর কিয়াস করা যাবেনা। সম্মানিত ফকীহগণ (আল্লাহ তায়ালা তাদের মর্যাদা ও সম্মানকে বৃদ্ধি করুক) বলেছেন। অতএব মসজিদুল হারাম, তা অন্যান্য মসজিদের হুকুম থেকে ভিন্ন যেমন ইবনে জিয়া বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন। কেননা উহা ফরয নামায সমূহ, জুমা, উভয় ঈদ, সূর্যগ্রহণ, চন্দ্র গ্রহণ, জানাযার নামায ইত্যাদির জন্য বানানো হয়েছে। ২০৪

 ➥২০৪. শরহে নিক্বায়া, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা-১৩৭, খাইরুল ফতোওয়া, ৩য় খণ্ড, পৃষ্ঠা-২৮৫।


মাসআলাঃ মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেয়ার পর নিজে গোসল করে নেয়া মুস্তাহাব। মারাকিউল ফালাহ গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে: হাজামাত- ক্ষোরকর্ম বা সিঙ্গার সাহায্যে দূষিত রক্ত নির্গত করা ও মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেয়ার পর গোসল করা মুস্তাহাব হবে, উভয় ক্ষেত্রে গোসল আবশ্যক হওয়ার মতবিরোধ থেকে রেহাই পাওয়ার বা বেঁচে থাকার উদ্দেশ্যে।


মাসআলাঃ হুযূর (ﷺ) নাজ্জাশী বাদশহের গায়েবানা জানাযার নামায পড়ানো এটি হুযূর (ﷺ)-এর একটি বিশেষত্ব। অন্যের ক্ষেত্রে এমন করা জায়েয নয়। ২০৫

 ➥২০৫. দুররে মুখতার, শামী।


মাসআলাঃ মায়ের জানাযার নামায পড়ানোর ক্ষেত্রে ছেলে ওলী। তবে ছেলের জন্য তার পিতাকে নিজের উপর প্রাধান্য দেয়া উচিত। কেননা পিতা যদি ইমাম হওয়ার যোগ্য হন, তবে পিতার উপস্থিতিতে পুত্রের প্রাধান্য পাওয়া মাকরূহ।  ২০৬

 ➥২০৬. ফতোয়ায়ে আলমগীরী।


মাসআলাঃ যে ব্যক্তি মৃত ব্যক্তিকে গোসল করাবে তার জন্য গোসল করা আর যে ব্যক্তি তাকে বহন করবে তার জন্য উযু করা মুস্তাহাব। বসরি বিনতে সাফওয়ান (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, পাঁচ সহীহ গ্রন্থে উহা বর্ণনা করেছেন, তিরমিযী উহা সহী  বলেছেন এবং ইবনে আব্বাস ইমাম বুখারী বলেন- এ অধ্যায়ে এটাই সবচেয়ে সহীহ হাদীস।


মাসআলাঃ দাফনের পর মৃত ব্যক্তির চেহারা দেখা জায়েয আছে।


মাসআলাঃ মৃত্যুর পূর্বে নিজের জন্য সিন্ধুক বানানো মাকরূহ।  ২০৭

➥২০৭. ফতোয়ায়ে ক্বেনিয়া।


হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রা:) নিজের জন্য কবর খনন করতে নিষেধ করেছেন।


মাসআলাঃ যদি পুরুষ, মহিলা ও হিজড়ার জানাযার নামায একত্রে পড়ানোর প্রয়োজন হয় তাহলে এমতাবস্থায় সবার আগে পুরুষের লাশ রাখতে হবে, তার পিছনে হিজড়ার লাশ, তার পিছনে মহিলার লাশ রাখতে হবে। আর যদি পুরুষ ও হিজড়াকে কোন ওজর বশত এক কবরে দাফন করতে হয় তাহলে হিজড়াকে পুরুষের পিছনে রাখতে হবে এবং উভয়ের মধ্যখানে মাটি দ্বারা আলাদা রাখবে।


মাসআলাঃ আর যদি হিজড়া ও মহিলাকে একই কবরে দাফন করতে হয় তাহলে মহিলাকে হিজড়ার পিছনে রাখবে।


মাসআলাঃ হিজড়ার কবরকে দাফনের সময় কাপড় দিয়ে পর্দা করা মুস্তাহাব। ২০৮

 ➥২০৮.  হিদায়া, জামিউর রুমুয, দুররে মুখতার ইত্যাদি, খুলাসাতুল মাসায়িল, পৃষ্ঠা-১৪০।


মাসআলাঃ ছেলে কিংবা মেয়ে জীবিত অবস্থায় ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর মৃত্যুবরণ করলে, তার জানাযার নামায পড়া আবশ্যক। তার নাম রাখতে হবে।


মাসআলাঃ কবরস্থানে হাত উঠিয়ে দোয়া করাতে কোন খারাবী নাই, বরং মৃতের মাগফিরাতের জন্য হাত উঠিয়ে দোয়া করা উত্তম ও ভাল কাজ। হুযূর মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) থেকে কবরস্থানে হাত উঠিয়ে দোয়া করার প্রমাণ রয়েছে। অর্থাৎ রাসূল (ﷺ) কবরস্থানে কবরবাসীর মাগফিরাতের জন্য হাত উঠিয়ে দোয়া করেছেন।


মুসলিম শরীফের ৩১৩ পৃষ্ঠার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে, 


حَتَّى جَاءَ الْبَقِيعَ فَقَامَ فَأَطَالَ الْقِيَامَ ثُمَّ رَفَعَ يَدَيْهِ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ .


মাসআলাঃ জানাযার নামাযে ছানা পাঠের পর সূরা ফাতেহা শরীফ পাঠ করার কথাও কোন কোন সাহাবীর নিকট হতে প্রমাণিত রয়েছে। কাজেই দোয়ার নিয়তে ছানার পর সূরা ফাতেহা শরীফ পাঠ করাতে অসুবিধা কিছু নাই। ২০৯

 ➥২০৯.  আইনী, শরহে বুখারী ও হযরত শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলভী (রহ.) হতেও বর্ণিত রয়েছে।


মাসআলাঃ জানাযার নামায মসজিদের ভিতর কিংবা কবর সামনে রেখে আদায় করা মাকরূহ। মসজিদের ভিতরে জানাযার নামায আদায় করা এ জন্য মাকরূহ- যেহেতু মসজিদ হচ্ছে জীবিতদের নামায আদায় করার স্থান। আর কবরকে সামনে রেখে জানাযার নামায আদায় করা এ জন্যই নিষেধ, যাতে সাধারণ লোকদের অন্তরে কবরের উচ্চ মর্যাদা ও তা‘জীমের খেয়াল সৃষ্টি না হয়। কেননা এটি জাহেলী যুগের রসম ও প্রথা। যা মুসলমানদের মধ্যে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। 


فقط والله ورسوله اعلم


মাসআলাঃ মৃতকে দাফন করার পর কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে মৃতের জন্য দোয়া করা সুন্নাত।


মাসআলাঃ কবরস্থানে অহেতুক কথা-বার্তা এবং দুনিয়াবী গল্প-গুজব না করে বরং মৃত্যুর কথা স্মরণ করা বাঞ্চনীয়।


মাসআলাঃ জানাযার সাথে অর্থাৎ জানাযা নিয়ে যাওয়ার সময় মহিলা সাথে যাওয়া মাকরূহে তাহরীমি।


মাসআলাঃ জানাযা নামাযে বিলম্ব করা যাতে লোক সমাগম বেশী হয়, এরকম করা মাকরূহ। ২১০

 ➥২১০. শরহে তানভীর, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা-১২৪।


وكره تاخير صلوته ودفنه ليصل عليه جمع عظيم بعد صلوة الجمعة . 


মাসআলাঃ জানাযার আগে আগে গাড়ী ও কিংবা অন্য কোন বাহনের উপর আরোহন হয়ে চলা মাকরূহ।


মাসআলাঃ কবর বেশী উঁচু না করা আবশ্যক। বরং উঠের পিঠের ন্যায় করতে হবে।


মাসআলাঃ যদি একই সময়ে একই স্থানে কয়েকটি জানাযা হয় এমতাবস্থায় প্রত্যেক জানাযার জন্য আলাদা আলাদা জানাযার নামায পড়া আবশ্যক। আর যদি একই সাথে পড়ে তাও জায়েয আছে। ২১১

 ➥২১১. নুরুল ইযাহ, পৃঃ ৩৫।


নুরুল ইযাহ কিতাবে বর্ণিত রয়েছে-


اذا اجتمعت الجنائزة فالا فراد لكل منها اولى .


মাসআলাঃ জানাযার নামাযে ইমাম কিংবা মুক্তাদী ভুলবশতঃ তাকবীর বলার সময় হাত উত্তোলন করলে নামায হয়ে যাবে। দ্বিতীয়বার তথা পুনরায় নামায পড়া আবশ্যক নয়।


মাসআলাঃ যদি কোন ব্যক্তি সাগরের মধ্যে পানির জাহাজে মৃত্যুবরণ করে এবং শুকনা জমিন তথা স্থল ঐখান থেকে এমন দূরে হয় যে- ঐখানে লাশ পৌঁছাতে হলে লাশ খারাব ও নষ্ট হয়ে যাওয়ার সন্দেহ হয়, এমতাবস্থায় মৃতকে গোসল ও কাফন দিয়ে জানাযার নামায আদায় করে জানাযার সাথে ভারী বস্তু তথা মাটি ও পাথর বেধে সাগরের মধ্যে ফেলে দিবে।


মাসআলাঃ মৃতকে দাফন তথা কবরাস্থ করার পর পুনরায় কবর খনন করে মৃতকে বের করা জায়েয নাই। হ্যাঁ তবে কোন কারণ বশতঃ অবস্থার পরিপেক্ষিতে করা যাবে।


মাসআলাঃ মৃতকে যেখানে ইন্তেকাল হয়েছে সেখানে দাফন করা আবশ্যক। কিন্তু তার বাড়ী কিংবা আত্মীয়-স্বজন অতীব নিকটবর্তী, এক মাইল বা দুই মাইলের মধ্যে হলে ঐখানে নিয়ে যেতে পারবে। বেশী দূরে হলে নিয়ে যাওয়া জায়েয নাই। অর্থাৎ কোন ব্যক্তি বিদেশে কিংবা অন্য কোন দূরবর্তী স্থানে কর্মরত অবস্থায় মারা গেলে তাকে নিজ এলাকায় আনার সুযোগ থাকলে নিয়ে আসবে। অন্যথায় ঐখানে দাফন করবে। 


মাসআলাঃ জীবিত অবস্থায় কাফন তথা কাফনের কাপড় তৈরী করে রাখা জায়েয। তবে কবর তৈরী করে রাখা মাকরূহ। এ জন্যই মাকরূহ যে- সে জানেনা তার মৃত্যু কোন জায়গায় হয়। 


মাসআলাঃ আসর নামাযের পর সূর্য্য যতক্ষণ পর্যন্ত পরিপূর্ণভাবে লাল বর্ণ হয়ে না যাবে ততক্ষণ পর্যন্ত জানাযার নামায পড়া যাবে। 


মাসআলাঃ কোন ব্যক্তি জানাযার নামাযে এমন সময়ে শরীক হয়েছে, যখন প্রথম তাকবীর হয়ে গেছে অর্থাৎ প্রথম তাকবীরের পর শরীক হয়েছে, এমতাবস্থায় নামায শেষ হওয়ার পর সালাম ফেরার পূর্বে ছুটে যাওয়া তাকবীর বলে তারপর সালাম ফেরাবে। তবে কোন দোয়া পাঠ করা আবশ্যক নয়। এজন্য যে তাকবীর বলা ফরয আর দোয়া পড়া সুন্নাত।


মাসআলাঃ প্রকাশ থাকে যে- জানাযার নামাযের ইমামতির হকদার হচ্ছে সর্বপ্রথম হুকুমতের বাদশাহ, এরপর কাযী তথা বাদশাহর প্রতিনিধি, অতঃপর জামে মসজিদের ইমাম, তারপর মহল্লা মসজিদের ইমাম, সর্বশেষ অলী তথা মৃত্যের ওয়ারিশ। ২১২

 ➥২১২. নুরুল ইযাহ।


السلطان حق لصلوته ثم القاضى ثم امام الحى ثم الولى . 


মাসআলাঃ মুসলমান নারী-পুরুষ মারা যাওয়ার পর তার আলোচনা খারাপ তথা মন্দ ও দোষনীয় বাক্য দ্বারা যেন করা না হয়। যদিওবা তার চরিত্রে দোষণীয় কিছু থেকেই থাকে তবে তার সম্পর্কে ভাল-মন্দ কোনো কিছুই না বলা বাঞ্চনীয়। কেননা হাদিস শরীফে রাসূলে করিম (ﷺ) ইরশাদ ফরমায়েছেন- তোমরা মৃতদের ভাল ও উত্তম গুণের দিকটি আলোচনা কর। খারাপ তথা মন্দের দিক আলোচনা কর না।


মাসআলাঃ যে ঘরের লোক মৃত্যুবরণ করেছে ঐ ঘরের লোকজন ও বাসিন্দা সে ঘরে থাকা আবশ্যক। বরং এটি সুন্নাত।


মাসআলাঃ মৃতের জন্য তিন দিনের বেশী শোক পালন করা এবং শোক পালনের উদ্দেশ্যে যাওয়া মাকরূহ।


মাসআলাঃ কতক মহিলাদের মধ্যে এহেন অভ্যাস রয়েছে যে, মৃতের ঘরে তিন দিন পর্যন্ত চুলা জ্বালানো যাবে না। এটি ভুল ও খারাপ ধারণা। বরং তা জাহেলী তথা অজ্ঞদের খেয়াল। এহেন খেয়াল পোষণ করতঃ তিন দিন পর্যন্ত চুলায় আগুন না জ্বালানো গুনাহ।


মাসআলাঃ জানাযার নামায চার তাকবীর। আর প্রত্যেক তাকবীর এক রাকাতের স্থলাভিষিক্ত। ২১৩

 ➥২১৩. দুররে মোখতার।


মাসআলাঃ যদি জানাযার নামাযের ইমামতি মহিলা কিংবা বাদী করে থাকে এক্ষেত্রে নামায পুনরায় আদায় করতে হবে না। কেননা এক ব্যক্তি জানাযার নামায আদায় করার কারণে ফরয আদায় হয়ে যাবে। ২১৪

 ➥২১৪. দুররে মোখতার।


Top