বিষয় নং-৪: হযরত জাবির (رضي الله عنه)-এর দুই মৃত সন্তানদের জীবিত করার ঘটনা:


‘হাদীসের নামে জালিয়াতি’ গ্রন্থের ৩৫৭ পৃষ্ঠায় ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর বিশিষ্ট সাহাবী হযরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (رضي الله عنه) এর দুই সন্তানকে জীবিত করার ঘটনা বা মু‘জিজাটি কোন প্রমাণ ছাড়া মিথ্যা ও বানোয়াট বলার অনেক অপচেষ্টা করেছেন। তিনি তার গ্রন্থের ৩৫৭ পৃষ্ঠায় লিখেছেন-‘‘প্রচলিত একটি গল্পে বলা হয়’। শুধু তাই নয় একটু অগ্রসর হয়ে তিনি আরও ভয়ংঙ্কর কথাগুলো এভাবে লিখেন-‘‘পুরো কাহিনীটি আগাগোড়াই বানোয়াট, ভিত্তিহীন ও মিথ্যা।’’ 

সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! কত বড় মিথ্যুক ধোঁকাবাজ হলে প্রমাণহীনভাবে এটা বলতে পারেন এবং আল্লাহর নবীর মুজিযাকে অস্বীকার করার দুঃসাহস দেখাতে পারে! এই ঘটনাটি অনেক দীর্ঘ  বিধায় সংক্ষেপে তা উল্লেখ করা হলো। ঘটনাটি হল-


❏ হযরত জাবির (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন যে, আমি যখন ছাগল যবেহ করি তখন আমার ছোট দুটি সন্তান সেখানে উপস্থিত ছিল, তারা স্বচক্ষে ছাগলের যবেহ হওয়া দেখছিল। যখন হযরত জাবের (رضي الله عنه) চলে যান ছেলে দুটি ছুরি নিয়ে ছাদের উপরে চলে গেল। 

বড় ছেলে তার ছোট ভাইকে বললো,  এসো,  আমিও তোমার সাথে এরূপ করব যেমন আমাদের বাবা এই ছাগলের সাথে করেছেন। বড় ছেলে ছোট ছেলেকে বাঁধলো এবং কণ্ঠনালীর উপর ছুরি চালিয়ে দিল। আর অজ্ঞাতসারে তাকে যবেহ করে ফেললো। তার মস্তক বিচ্ছিন্ন করার পর সেটা হাতে তুললো। হযরত জাবির (رضي الله عنه) এর স্ত্রী যখন তাকে দেখলো দৌড়ে গেল তার পিছনে, তার ভয়ে সেও ছাদ থেকে পড়ে মারা যায়। হযরত জাবের (رضي الله عنه) এর স্ত্রী এ নিয়ে শোর-চিৎকার ও হায় হুতাশ করেনি, যেন হুযূর (ﷺ) চিন্তিত ও বিষন্ন না হন (এবং দাওয়াত বিষাদে পরিণত না হয়)। অত্যন্ত ধৈর্য ও অবিচলতা সহকারে উভয় সন্তানকে ভিতরে এনে তাদের উপর কাপড় দিয়ে ঢেকে দেয় এবং কাউকে তাদের অবস্থা সম্পর্কে জানায়নি এমনকি হযরত জাবেরকেও বলেনি। যদিও অন্তর রক্তের অশ্র“তে কাঁদছিল শোকে। কিন্তু তা স্বত্ত্বেও তার চেহারাকে সজীব ও আনন্দময় রেখে খাবার রান্না করলো।

রাসূল (ﷺ) তাশরীফ আনলেন এবং খাবার তাঁর সম্মুখে রাখা হয়। তখনই জিবরাঈল আমীন এসে বললেন,  হে মুহাম্মদ (ﷺ)! আল্লাহ্ তা‘য়ালা বলছেন যে, আপনি জাবেরকে বলুন যেন তার সন্তানদ্বয়কে আনেন যাতে তারা আপনার সাথে আহার করার সৌভাগ্য লাভ করে। তিনি হযরত জাবের (رضي الله عنه) কে ফরমালেন,  তোমার সন্তানদ্বয়কে আন। তিনি তৎক্ষণাৎ বাহিরে আসেন এবং স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করলেন,  ছেলেরা কোথায়? সে বললো, হুযূর (ﷺ) এর খেদমতে বলুন-তারা উপস্থিত নেই। হুযূর (ﷺ) ফরমালেন, আল্লাহ্ তা‘য়ালার নির্দেশ এসেছে, তাদেরকে তাড়াতাড়ি ডেকে আন। শোকের কারণে স্ত্রী কেঁদে উঠলো এবং বলল, হে জাবির! এখন আমি তাদেরকে আনতে পারবো না। হযরত জাবের (رضي الله عنه) বললেন, ব্যাপার কি? তুমি কাঁদছো কেন? স্ত্রী তাকে ভিতরে নিয়ে সমস্ত ঘটনা শুনালেন এবং কাপড় তুলে বাচ্চাদের লাশ দেখালেন তখন তিনিও কাঁদতে শুরু করেন, কারণ তিনি তাদের অবস্থা সম্পর্কে অবহিত ছিলেন না।

অতঃপর হযরত জাবের পুত্রদ্বয়কে এনে হুযূর (ﷺ) এর চড়নে রাখলেন। তখন ঘর থেকে শোর-চিৎকারের আওয়াজ, আসতে লাগল। আল্লাহ্ তা‘য়ালা জিবরাঈল আমীন কে প্রেরণ করলেন এবং ফরমালেন, হে জিবরাঈল! আমার মাহবুব (ﷺ) কে বলো, আপনি দুআ করলে আমি তাদেরকে জীবিত করে দেবো। হুযূর (ﷺ) দুআ করলেন, তারা আল্লাহর হুকুমে তখনই জীবিত হয়ে যায়।’’ ৫৬

৫৬. শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী : মাদারেজুন নবুয়ত প্রথম খণ্ড, ৩১১ পৃ. বিশ্ববিখ্যাত মুহাদ্দিস, মুফাস্সির, বিশ্ব আশেকে রাসূল (ﷺ) আল্লামা আব্দুর রহমান জামী (رحمة الله) উক্ত ঘটনাটি তাঁর সিরাত গ্রন্থ শাওয়াহিদুন নবুয়তের ৮৪ পৃষ্ঠায় বর্ণনা করেন। উক্ত সিরাত গ্রন্থ বাংলায় অনুবাদ করেছেন দেওবন্দী আলেম মাওলানা মহিউদ্দিন খাঁন, মদিনা পাবলিকেশন্স, ৩২/২ বাংলা বাজার হতে প্রকাশিত, এর পৃ-১০৮-১০৯ (পঞ্চম প্রকাশ-২০০৭ আগষ্ট), আল্লামা শফী উকাড়ভী : জিকরে জামীল : ২৩৪ পৃ.


সর্বশেষ তার নিকট আমার প্রশ্ন যে, তার কাছে কোন গ্রহণযোগ্য ইমাম বা মুহাদ্দিস উক্ত ঘটনাটি জাল বা বানোয়াট বলেছেন তার প্রমাণ থাকলে আমাদেরকে অবগত করুন। তিনি শায়খ দরবেশহুত এর আসনাল মাতালিব কিতাবের যে দলিল দিয়েছেন তাও মিথ্যা।

Top