টিকাঃ গায়াতল মামুলের খন্ডনঃ
এ উজ্জ্বল ব্যাখ্যাসমূহ প্রত্যক্ষ করেন। এটাও বারংবার এ অধ্যায়ে এসেছে যে, মাখলুকের জ্ঞান অসীম কর্মকে পরিবেষ্টন করতে পারে না। এখন প্রতারকদের প্রতারণার পরিমাণ অনুমান করুন, যারা আমার বিরুদ্ধে এ উক্তির অপবাদ রটিয়েছে যে, সৃষ্টির জ্ঞান অসীম জ্ঞানসমুহ পরিবেষ্টনকারী, সুতরাং যে সৃষ্টির জন্য অসীম কর্মের মধ্য থেকে একটি - জ্ঞান অর্জিত হওয়াকেও সুস্পষ্ট প্রমাণ দ্বারা খন্ডন করেছে সে কিভাবে সকল অসীম। কর্মসমূহ পরিবেষ্টনের উক্তি করবে?
হায়রে আফসােস! যদি তারা এ কথা বলতাে যে, আমার পুস্তিকায় নেই তাহলে এ মাসয়ালার 'অস্বীকৃতির জন্য প্রতিবাদ হতাে স্বীকৃতির জন্য নয়। সুতরাং ঐ সময় এর সম্পর্ক যদি হতাে, তাহলে শুধু অপবাদই হতাে। কিন্তু আমিতাে বেশ কয়েক স্থানে এর নিষেধ সম্পর্কে সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছি। সুতরাং আমার দিকে এর সম্পর্ক করা অপবাদ, হটকারিতা, একগুয়েমী ও কঠোর শত্রুতার বহিঃপ্রকাশ। কিন্তু এতে আশ্চর্য হবার কিছু নেই যে, এগুলাে ফ্যাসাদ সৃষ্টিকারী ওহাবীদের কারসাজী। কেননা, তারাতাে এ ধরণের অনেক অপবাদ রটনায় অভ্যস্ত এবং এটাই তাদের উত্তম পুঁজি। সুতরাং এ পুস্তিকা সৃষ্টির জ্ঞান কর্মের সাথে অসীম হওয়ার পরিবেষ্টন সম্পর্কে যে বক্তব্য প্রদান করেছে এর স্বরূপ উন্মোচিত হয়েছে। আর এটা দূর থেকে আহবান এবং তার ঐ অভিযােগের খন্ডন যা সে কল্পনা করেছে। বরং যার চিন্তা-ভাবনা সে নিজেই করেছে। আমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা ও নিরাপত্তা প্রার্থনা করি।
(টিকা ১) আশ্চর্য এ থেকে, যে এটা শুনেছে। অতঃপর রাসূলে পাক (ﷺ)-এর জ্ঞান_হাস করার জন্য হাদীসে শাফায়াত দ্বারা দলীল গ্রহণ করেছে--“অতঃপর আমি মাথা উত্তোলন করবাে এবং স্বীয় প্রতিপালকের হামদ ও গুণকীর্তন এমন প্রশংসা ও স্তুতিবন্ধনা দ্বারা করবাে, যদ্বারা আমার প্রতিপালক আমাকে অবগত করাবেন।” অতঃপর (১৬ পৃঃ) বলেন-“এটা প্রমাণিত যে, আল্লাহ তায়ালা তাঁকে তাই জ্ঞাত করবেন, যার জ্ঞান তাঁর নিকট ইতােপূর্বে ছিলােনা। আর এটা উপরােক্ত বেষ্টনীকে বাতিল করে দেয়।
_______________
আল্লাহর উপর এধরণেরই (১) আমাদের ঈমান। এদিকেই হযরত খিজির (আঃ) এক বাণীতে ইঙ্গিত করেছেন, যা তিনি হযরত মুসা (আঃ) কে বলেছিলেন, যে সময় পাখী সমুদ্র থেকে ঠোট ভরে এক বিন্দু পানি নিয়েছিলাে। যা হােক এ প্রকার জ্ঞান আল্লাহর জন্যই খাস্।
বাকী রইলাে অন্য তিন প্রকার, অর্থাৎ ইলমে মুতলাক ইজমালী (জ্ঞানের শর্তহীন সামগ্রিকতা) মুতলা ইলমে
সে নিশ্চয়ই পূর্বে আমার এ উক্তি শ্রবণ করেছে যে, আল্লাহ তায়ালার জাত সীমাহীন, তাঁর সিফাত (গুণাবলী) অসীম এবং তাঁর প্রত্যেক গুণও অসীম। সুতরাং অসীম কর্মের সাথে মাখলুকের জ্ঞানের নিঃসন্দেহে কোন সম্পর্কই নেই। অতএব, রাসূলে পাক (ﷺ) পরকালে আল্লাহ তায়ালার অন্য সিফাত সম্পর্কে জ্ঞাত হওয়া যাঁর জ্ঞান ইতিপূর্বে ছিলােনা, উল্লেখিত বেষ্টনীতে কি তিরস্কার হতে পারে? অতএব, তার এ উত্থাপিত আপত্তির জবাব এটাই দেয়া হলাে, যদি তােমার উদ্দেশ্য এই হয় যে, তিনি সে সময় এমন কালাম দ্বারা বাক্যালাপ করবেন যা আল্লাহ তায়ালার জাত ও তাঁর মুল সিফাতের প্রমাণ বহন করে তাহলে এটা বিশুদ্ধ নয় এবং এতে অহেতুক দীর্ঘালাপই করেছেন মাত্র। এটাতাে প্রমাণিত মাসয়ালা। এর ব্যাখ্যা আমি পূর্বে করেছি। আর এর দ্বারা তােমার উদ্দেশ্য যদি অন্যকিছু হয়, তাহলে উপরােক্ত বেষ্টনী বাতুলতা প্রমাণিত হয়ে যায়।
সুতরাং দেখুন ঐ ব্যক্তিকে, যার ধারণা যে, আল্লাহ তায়ালা স্বীয় সকল গুণাবলীর সাথে - যা প্রথম দিন থেকে সংঘটিত হয়েছে, আর-যা শেষ দিবস পর্যন্ত হতে থাকবে, এর মধ্যে অন্তর্ভূক্ত, সীমাবদ্ধ এবং লাওহ-ই মাহফুজে লিপিবদ্ধ রয়েছেন। আর এর বহির্ভূত জাত ও সিফাতের মৌলিকতা মাত্র। সুতরাং যখন নবীয়ে করীম (ﷺ) তাঁর হলাে জাত ও সিফাত সম্পর্কিত কোন নতুন জ্ঞান পরকালে পান, যে সম্পর্কে তিনি দুনিয়াতে জানতেন না; তাহলে তা দু’অবস্থা থেকে মুক্ত নয়। হয়তঃ তিনি আল্লাহ তায়ালার জাত ও সিফাতের রহস্য সম্পর্কে জানলেন। কেননা, তা ‘লাওহ-ই মাহফুজের বহির্ভূত অথবা তার জ্ঞান দুনিয়াতে ঐ বস্তুসমূহ পরিবেষ্টনকারী ছিলাে না, যা লাওহ-ই মাহফুজে সীমাবদ্ধ রয়েছে। আর সে এটা জ্ঞাত হয় নি যে, লাওহে সীমাবদ্ধ জ্ঞান সসীম, আর জাত ও সিফাতের সাথে সম্পর্কিত জ্ঞান অসীম। তাতে আম্বিয়ায়ে কিরামের জ্ঞানসমূহ অনন্তকাল পর্যন্ত বৃদ্ধি হতে থাকবে। আর তাঁদের কখনাে কোন অবস্থাতেই সসীম ছাড়া অসীমের জ্ঞান হাসিল হবে না। আর অসীম কখনাে সসীম হবে। সুতরাং যে সব বিষয় থেকে বিরত থাকা বাঞ্ছনীয়তার কোনটিই আবশ্যক হয়নি এবং অবােধ্যতার দরুণ চোখের উপর পর্দাই পড়েছে। আল্লাহর কাছে উভয় জাহানের নিরাপত্তা কামনা করি।
ইজমালী (সামগ্রিক শর্তহীন জ্ঞান) এবং ৮ তাফসীলী (বিস্তারিত জ্ঞান) এগুলাে আল্লাহর সাথে খাস নয়। বরং যদি আমরা সামগ্রিক জ্ঞানকে বস্তুহীন শর্তের ভিত্তিতে ধরে নিই অর্থাৎ যেখানে একটি বিষয়ের জ্ঞান অন্য বিষয় থেকে সম্পূর্ণ স্বাতন্ত্র হবে না, তখন ইজমালি জ্ঞানের উভয় প্রকার আল্লাহ তায়ালার জন্য অসম্ভব হবে এবং বান্দাদের সাথেই খাস হওয়া অপরিহার্য হয়ে যাবে।' ‘সামগ্রিক শর্তহীন জ্ঞান বান্দাদের জন্য অর্জিত হওয়া যুক্তিগত ও দ্বীনের প্রয়ােজনাদির অন্তর্ভুক্ত। এ জন্য যে, আমরা বিশ্বাস স্থাপন করেছি (আল্লাহ প্রত্যেক বস্তু সম্পর্কে জ্ঞাত) প্রত্যেক বস্তু সম্পর্কে জ্ঞাতি বলতে আমরা আল্লাহর সকল জ্ঞানই বুঝেছি এবং তা সবই সামগ্রিকভাবেই জেনে। নিয়েছি। সুতরাং যে নিজের বেলায় তা অস্বীকার করেছে সে ঈমান এবং এ আয়াতকেই অস্বীকার করেছে এবং স্বয়ং নিজের কুফরকেই মেনে নিয়েছে। আল্লাহর কাছে পানাহ্। "