বিষয় নং-০২: কবরে বাতি জ্বালানো।
কামেল ওলীদের মাজারে বাতির ব্যবস্থা না থাকলে বাতির ব্যবস্থা করলে কোন অসুবিধা নেই, বরং মুস্তাহাব। তবে সাধারণ কবরে রাতে অকারণে আলো বা বাতি জ্বালানো মাকরূহ। তবে এ প্রসঙ্গে যে হাদিসটি বর্ণিত হয়ে তা দুর্বল সনদের।
❏ হাদিসটি হল-
عَنْ أَبِي صَالِحٍ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ ؓ قَالَ: لَعَنَ رَسُولُ اللهِ ﷺ زَائِرَاتِ القُبُورِ، وَالمُتَّخِذِينَ عَلَيْهَا الْمَسَاجِدَ وَالسُّرُجَ.
-‘‘হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। রাসূল (ﷺ) কবর জিয়ারতকারীণী মহিলা ও কবরের উপর মসজিদ নির্মাণকারী ও বাতি (বিনা কারণে) জ্বালানোকারীদের প্রতি অভিসম্পাত করেছেন।’’ ২
➥{ক. ইমাম তিরমিযী : আস-সুনান : অনুচ্ছেদ : ২১ : ১/১০৮ পৃ. হা/৩২০
খ. ইমাম আহমদ ইবনে : আল-মুসনাদ : ১/২২৯ পৃ. হা/২০৩০
গ. খতিব তিবরিযী : মিশকাত : কিতাবুস্-সালাত : ১/১৫৫ পৃ. হা/৭৪০
ঘ. আবু দাউদ : আস-সুনান : ৩/৫৫৮ পৃ. হাদিস নং- ৩২৩৬
ঙ. ইমাম নাসায়ী : আস-সুনান : ৪/৯৪ পৃ. হা/২০৪৩
চ. ইবনে মাজাহ : আস-সুনান : ১/৫০২ পৃ. হা/১৫৭৫
ছ. আহলে হাদিস আলবানী : সিলসিলাতুল.. দ্বঈফাহ : হা/১/২৮০ পৃ. হা/২২৫}
পর্যালোচনা:
উক্ত হাদিসে হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه)-এর ছাত্র হিসেবে যে ‘আবু ছালেহ’ রয়েছেন তার মূল নাম ‘আবু সালেহ বাযাম’। কেননা
❏ ইমাম যাহাবী (رحمة الله) তার জীবনীতে লিখেন-
ضعفه البخاري. وقال النسائي: باذام ليس بثقة.
-‘‘ইমাম বুখারী (رحمة الله) তাকে যঈফ বলেছেন, ইমাম নাসাঈ (رحمة الله) বলেন, বাযাম বিশ্বস্ত রাবী নন।’’
(যাহাবী, মিযানুল ই‘তিদাল, ১/২৯৬ পৃ. ক্রমিক.১১২১)
❏ আল্লামা মুগলতাঈ (رحمة الله) বলেন-
وقال الجورقاني في كتاب الموضوعات تأليفه: متروك.
-‘‘আল্লামা জুওরকানী তার জাল হাদিসের গ্রন্থে তাকে মাতরুক বা পরিত্যক্ত বলেছেন।’’
(আল্লামা মুগলতাঈ, ইকমালু তাহযিবুল কামাল, ২/৩৪৬ পৃ. ক্রমিক.৬৬৯)
❏ তিনি আরও উল্লেখ করেন- ذكره ابن الجوزي: كذاب. -‘‘ইমাম ইবনে জাওযী (رحمة الله) তাকে মিথ্যাবাদী বলেছেন।’’
(আল্লামা মুগলতাঈ, ইকমালু তাহযিবুল কামাল, ২/৩৪৭ পৃ. ক্রমিক.৬৬৯)
❏ আমার মনে হয় এ হাদিসটি সে নিজে বানিয়েছে; কেননা আল্লামা মুগলতাঈ (رحمة الله) লিখেন-
وقال أبو حاتم البستي في كتاب المجروحين: يحدث عن ابن عباس ولم يسمع منه، تركه ابن سعيد القطان.
-‘‘ইমাম আবু হাতেম বুসতী (رحمة الله) তার কিতাবুল মাজরুহীন এ বলেন, বাযাম সাহাবী ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে কিছুই শুনেনি, এজন্যই ইমাম ইবনে সাঈদ কাত্তান তার হাদিস পরিত্যাগ করতেন।’’
(আল্লামা মুগলতাঈ, ইকমালু তাহযিবুল কামাল, ২/৩৪৬ পৃ. ক্রমিক.৬৬৯)
তাই নিঃসন্দেহে প্রমাণিত হয় হাদিসটি অত্যন্ত র্দুবল বা জাল। ইমাম তিরমিযী হাদিসটি “হাসান লিগাইরিহী” বললেও কেউ তার এ মতকে গ্রহণ করেননি।
❏ এমনকি আহলে হাদিসদের ইমাম নাসিরুদ্দীন আলবানী তার ‘সিলসিলাতুল আহাদিসুদ্-দ্বঈফা ওয়াল মাওদ্বুআহ’ গ্রন্থের ১/৩৯৩ পৃষ্ঠায় হাদিস : ২২৫ এ একে দুর্বল বলেছেন।