বিষয় নং-০২: সর্বপ্রথম আল্লাহ তা‘য়ালা আমার নূর সৃষ্টি করেছেন


ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর তার লিখিত ‘হাদীসের নামে জালিয়াতি’ গ্রন্থের ৩৪১ পৃষ্ঠায় লিখেছেন-‘‘সংক্ষেপে আমরা বলতে পারি যে, ‘রাসূলুল্লাহ (ﷺ) নূর দ্বারা সৃষ্ট’ এ অর্থে বর্ণিত ও প্রচলিত সকল হাদীসই বানোয়াট।’’ এবার আমরা সর্বপ্রথম রাসূল (ﷺ)-এর নূর মোবারক সৃষ্টি সম্পর্কিত সনদসহ কোনো বর্ণনা আছে কীনা তা অনুসন্ধান করে দেখবো, কারণ মাওলানা আবদুল মালেক সাহেব তার তত্ত্বাবধানে প্রকাশিত ‘এসব হাদীস নয়’ গ্রন্থের ১৭২ পৃষ্ঠায় লিখেছেন-‘‘নূরের বর্ণনাটাই তো নির্জলা জাল।’’ 


তাহলে এখন প্রশ্ন জাগে যে উনার আক্বিদা কি এবং এ বিষয়ের কোন মতের হাদিস সহীহ! তিনি ১৮৪ পৃষ্ঠায় লিখেন-‘‘তারপর তাঁর (আদম عليه السلام এর) বংশধরের (যার মধ্যে নবী ওলীগণও রয়েছেন) প্রত্যেককেই একফোঁটা পানি থেকে সৃষ্টি করেছেন। কাজেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সৃষ্টিও এভাবেই হয়েছে।’’


আফসোস! তিনি যদি রাসূল (ﷺ)-এর কে নুতফার তৈরী করার পক্ষে একটি দলিলও উপস্থাপন করতে পারলেন না বলে, শুধু মুখের বুলি উড়ানো ছাড়া আর তিনি কোনো প্রমাণই উপস্থাপন করতে পারলেন না। সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! মাওলানা মুহাম্মাদ আবদুল আবদুল মালেক এবং তার সহচর মাওলানা মুতীউর রহমানের কথায় একটাই যুক্তি এবং ভিত্তি, তাহলো, মহানবী হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) আদম (عليه السلام)-এর অনেক পরে দুনিয়ায় এসেছেন, তাই তাঁর সৃষ্টিও অন্যান্য মানবের ন্যায় নুতফার দ্বারা সৃষ্টি হওয়ায়ই বিবেক সম্মত। অথচ কোরআন সুন্নাহ বলে এ আক্বিধা ধারণকারী নিজে গোমরাহ এবং অপরকে গোমরাহকারী। এবার আসল কথায় আশা যাক, পাঠকবর্গ! এ যুক্তি তখনই কার্যকর হবে যখন রাসূল (ﷺ)-এর শেষে প্রেরণ হওয়ার সাথে সাথে সৃষ্টিও শেষে হতো, কিন্তু বাস্তবতা তার বিপরীত; কেননা তিনি সৃষ্টিতে সকল মানবের প্রথম এবং নবী হিসেবে মননীত হওয়ার দিক থেকেও প্রথম, যদিও প্রেরিত হয়েছেন সবার শেষে। রাসূল (ﷺ) সমস্ত নবীর মধ্যে সৃষ্টিতে প্রথম নবী এবং এমনকি আদম (عليه السلام) মাটি পানির সাথে মিশ্রিত থাকাকালীন সময়েও তিনি সৃষ্টিগত দিক থেকে নবী, এ বিষয়ে ইতোপূর্বে আলোকপাত করা হয়েছে, পাঠকবৃন্দের সেখানে আবার নজর দেবার অনুরোধ থাকবে। এবার আমরা প্রমাণের রাসূল (ﷺ) আদম عليه السلام এর আগে না পরে সৃষ্টি সে) আলোচনায় আসি।


❏ ইমাম বুখারী (رحمة الله)’র উস্তাদ ইমাম ইবনে সা‘দ (رحمة الله) [ওফাত. ২৩০ হি.] একটি হাদিস সংকলন করেন-


أَخْبَرَنَا عَبْدُ الْوَهَّابِ بْنُ عَطَاءٍ عَنْ سَعِيدُ بْنُ أَبِي عَرُوبَةَ عَنْ قَتَادَةَ قَالَ: وَأَخْبَرَنَا عُمَرُ بْنُ عَاصِمٍ الْكِلابِيُّ. أَخْبَرَنَا أَبُو هِلالٍ عَنْ قَتَادَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ. صلى الله عليه وسلم : كُنْتُ أَوَّلَ النَّاسِ فِي الْخَلْقِ وَآخِرَهُمْ فِي الْبَعْثِ


-‘‘হযরত কাতাদা (رضي الله عنه) হতে দুই ধারায় বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, সৃষ্টির মধ্যে আমিই প্রথম মানুষ এবং যদিও প্রেরিত হয়েছি সবার শেষে।’’  ৩৩

➥{ইমাম ইবনে সা‘দ, আত্-তবকাতুল কোবরা, ১/১৯৯ পৃ. দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন, ইবনে কাসির, বেদায়া ওয়ান নিহায়া, ২/৩৯৩ পৃ.দারু ইহ্ইয়াউত তুরাসুল আরাবী, বয়রুত, লেবানন, শিফা শরীফ, ১/১১৪ পৃ. কাসতাল্লানী, মাওয়াহেবে লাদুন্নীয়া, ১/৪২ পৃ.।}



সনদ পর্যালোচনা:


❏ আহলে হাদিসদের এবং জনাব মাওলানা মুহাম্মাদ আবদুল মালেক সাহেবের ইমাম, ইবনে তাইমিয়ার ছাত্র আল্লামা হাফেজ ইবনে কাসির (رحمة الله) [ওফাত. ৭৭৪ হি.] এ হাদিস সংকলন করে লিখেন- وَهَذَا أَثْبَتُ وَأَصَحُّ -‘‘এই সনদটি অধিক দৃঢ় ও অধিক বিশুদ্ধ।’’  ৩৪

➥{ইবনে কাসির, বেদায়া ওয়ান নিহায়া, ২/৩৯৩ পৃ.}



আপনারাই দেখুন ইমাম ইবনে সা‘দ (رحمة الله) এই হাদিসটির দুটি ধারায় বর্ণনা করেছেন আর প্রত্যেকটিই সনদই অনেক শক্তিশালী। হযরত কাতাদা (رضي الله عنه)-এর আরেকজন ছাত্রও এই হাদিসটি তার থেকে বর্ণনা করেছেন। 


❏ ইমাম ইবনে সালেহ শামী (رحمة الله) সংকলন করেন-


وروى ابن إسحاق عن قتادة مرسلا قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم، كنت أول الناس في الخلق وآخرهم في البعث


-‘‘ইমাম ইবনে ইসহাক (رحمة الله) তিনি কাতাদা (رضي الله عنه) হতে মুরসাল হতে বর্ণনা করেন, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, সৃষ্টির মধ্যে আমিই প্রথম মানুষ এবং যদিও প্রেরিত হয়েছি সবার শেষে।’’  ৩৫

➥{ইমাম ইবনে সালেহ শামী, সবলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, ১/৬৮ পৃ.}



❏ ইবনে ইসহাক সহীহ মুসলিমের রাবী এবং সত্যবাদী। 


(ইবনে হাজার, তাক্বরীবুত তাহযিব, ৪৬৭ পৃষ্ঠা, ক্রমিক. ৫৭২৫) 


বুঝা গেল কাতাদা (رضي الله عنه) থেকে এই হাদিসটি তিনটি সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। 


❏ হযরত কাতাদা (رضي الله عنه)-এর চতুর্থ সূত্রটি ইমাম ইবনে আদি (رحمة الله) মারফূ মুত্তাসিল সনদে উল্লেখ করেন এভাবে-


حَدَّثَنَا جَعْفَرُ بْنُ أَحْمَدَ بْنِ عَاصِمٍ، حَدَّثَنا هِشَامُ بْنُ عَمَّارٍ، حَدَّثَنا الوليد، حَدَّثَنا خُلَيْدُ بْنُ دَعْلَجٍ وَسَعِيدٌ، عَن قَتادَة عَنِ الْحَسَنِ، عَن أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيه وسَلَّم قَال: كُنْتُ أَوَّلَ الناس فِي الْخَلْقِ وَآخِرَهُمْ فِي الْبَعْثِ. 


-‘‘তিনি যথাক্রমে...জাফর ইবনু আহমাদ ইবনে আসেম থেকে তিনি হিশাম ইবনু আম্মার তেকে তিনি ওয়ালীদ থেকে তিনি তার দুই উস্তাদ খুলাইদ ইবনু দা‘লাজ এবং সাঈদ ইবনে বাশীর থেকে তিনি তাবেয়ী কাতাদা (رحمة الله) থেকে তিনি হাসান বসরী (رحمة الله) থেকে তিনি হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) হতে তিনি বলেন, নিশ্চয় রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, সৃষ্টির মধ্যে আমিই প্রথম মানুষ এবং যদিওবা প্রেরিত হয়েছি (নবীদের ক্ষেত্রে) সবার শেষে।’’  ৩৬

➥{ইমাম ইবনে আদি, আল-কামিল, ৩/৪৮৮-৪৮৯ পৃ. ক্রমিক. ৬০৬}



সনদ পর্যালোচনা:


এই সনদটিও সহীহ লিগাইরিহী; কেননা এই সনদের তাবেয়ী কাতাদার দুই ছাত্র খুলাইদ এর হাদিসের মান ‘হাসান’ এবং সাঈদ ইবনে বাশীর এর হাদিসের মান ‘সহীহ’ পর্যায়ের। 


খুলাইদ ইবনে দা‘লাজের গ্রহণযোগ্যতা: 


❏ ইমাম যাহাবী (رحمة الله) উল্লেখ করেন-


وَقَالَ أَبُو حَاتِمٍ: هُوَ صَالِحٌ.


-‘‘ইমাম আবু হাতেম (رحمة الله) বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় সৎ ব্যক্তি।’’ ৩৭

➥{যাহাবী, সিয়ারু আলামিন নুবালা, ৭/১৯৬ পৃ. যাহাবী, মিযানুল ই‘তিদাল, ১/৬৬৩ পৃ. যাহাবী, তারিখুল ইসলাম, ৪/৩৫৪ পৃ. ইমাম মিয্যী, তাহযিবুল কামাল, ৮/৩০৯ পৃ. }



❏ ইমাম মিয্যী (رحمة الله) উল্লেখ করেন-


وَقَال أَبُو حاتم الرازي  : صالح.


-‘‘ইমাম আবু হাতেম বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় একজন সৎ ব্যক্তি।’’  ৩৮

তার হাদিসের মান ‘হাসান’ বলে বুঝা যায়।

➥{ইমাম মিয্যী, তাহযিবুল কামাল, ৮/৩০৯ পৃ.}



❏ তবে ইমাম হাকেম নিশাপুরী (رحمة الله) তার দুটি সনদ সংকলন করেন; আর দুটোকেই সহীহ বলেছেন। যেমন-


حَدَّثَنَا مُكْرَمُ بْنُ أَحْمَدَ الْقَاضِي، ثنا أَحْمَدُ بْنُ عَلِيٍّ الْأَبَّارُ، ثنا إِسْحَاقُ بْنُ سَعِيدِ بْنِ أَرْكُونُ الدِّمَشْقِيُّ، ثنا خُلَيْدُ بْنُ دَعْلَجٍ أَبُو عَمْرٍو السَّدُوسِيُّ، أَظُنُّهُ عَنْ قَتَادَةَ، عَنْ عَطَاءٍ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا ...... هَذَا حَدِيثٌ صَحِيحُ الْإِسْنَادِ، وَلَمْ يُخَرِّجَاهُ


-‘‘...খুলাইদ ইবনু দা‘লাজ তিনি কাতাদা (رحمة الله) থেকে তিনি আবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে..........ইমাম হাকেম নিশাপুরী (رحمة الله) বলেন, এই সনদটি সহীহ।’’  ৩৯

➥{ইমাম হাকেম, আল-মুস্তাদরাক, ৩/১৬২ পৃ. হা/৪৭১৫, তিনি তার আরেকটি হাদিসকে সহীহ বলেছেন। দেখুন-ইমাম হাকেম, আল-মুস্তাদরাক, ৪/৮৫ পৃ. হা/৬৯৫৯ }



এবার আমরা তার সাথী ‘সাঈদ’ সম্পর্কে জানবো।


কাতাদার দ্বিতীয় ছাত্র সাঈদ ইবনে বাশিরের গ্রহণযোগ্যতা:


হযরত কাতাদার অপর ছাত্র ‘সাঈদ ইবনু বাশীর বাছরী’ এর হাদিস সর্বনিম্ন ‘সহীহ’ পর্যায়ের। কেনান তিনি হাফেযুল হাদিস ছিলেন। 


❏ ইমাম যাহাবী (رحمة الله) উল্লেখ করেন-


الإِمَامُ، المُحَدِّثُ، الصَّدُوْقُ، الحَافِظُ


-‘‘তিনি হাদিসের ইমাম, মুহাদ্দিস, সত্যবাদী, হাফেযুল হাদিস ছিলেন।’’  ৪০

➥{ইমাম যাহাবী, সিয়ারু আলামিন নুবালা, ৭/৩০৪ পৃ. ক্রমিক. ৯৭, যাহাবী, তারিখুল ইসলাম, ৪/৩৭৩ পৃ., ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী, তাহযিবুত তাহযিব, ৪/৯ পৃ. }



❏ তিনি আরও উল্লেখ করেন-


وَقَالَ أَبُو حَاتِمٍ: مَحَلُّهُ الصِّدْقُ.


-‘‘ইমাম আবু হাতেম (رحمة الله) বলেন, তার স্থান হচ্ছে সত্যবাদী বলা।’’  ৪১

➥{ইমাম যাহাবী, সিয়ারু আলামিন নুবালা, ৭/৩০৪ পৃ. ক্রমিক. ৯৭, যাহাবী, তারিখুল ইসলাম, ৪/৩৭৩ পৃ., ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী, তাহযিবুত তাহযিব, ৪/৯ পৃ. }



❏ তিনি আরও উল্লেখ করেন-


وَقَالَ بَقِيَّةُ: سَأَلْتُ شُعْبَةَ عَنْ سَعِيْدِ بنِ بَشِيْرٍ، فَقَالَ: ذَاكَ صَدُوْقُ اللِّسَانِ.


-‘‘বাকিয়্যাত তিনি ইমাম শুবা (رحمة الله) কে সাঈদ ইবনে বাশীর সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, তিনি সত্যবাদী।’’  ৪২

➥{ইমাম যাহাবী, সিয়ারু আলামিন নুবালা, ৭/৩০৪ পৃ. ক্রমিক. ৯৭, যাহাবী, তারিখুল ইসলাম, ৪/৩৭৩ পৃ., ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী, তাহযিবুত তাহযিব, ৪/৯ পৃ. }



❏ তবে ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) উল্লেখ করেন-


قال بقية عن شعبة ذاك صدوق اللسان وفي رواية صدوق اللسان في الحديث


-‘‘তার থেকে অন্য বর্ণনায় রয়েছে, তিনি হাদিস বর্ণনায় সত্যবাদী।’’  ৪৩

➥{ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী, তাহযিবুত তাহযিব, ৪/৯ পৃ.}



❏ তিনি আরও উল্লেখ করেন-


قال عثمان الدارمي سمعت دحيما يوثقه


-‘‘হযরত উসমান দারেমী (رحمة الله) বলেন, আমি আমি দুহাইম (رحمة الله) কে তাকে সিকাহ বলতে শুনেছি।’’  ৪৪

➥{ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী, তাহযিবুত তাহযিব, ৪/৯ পৃ.}



❏ তিনি আরও উল্লেখ করেন-


وقال أبو بكر البزار هو عندنا صالح ليس به بأس.


-‘‘ইমাম আবু বকর বাজ্জার (رحمة الله) বলেন, আমাদের নিকট তিনি সৎ হাদিস বর্ণনাকারী, তার হাদিস গ্রহণ করতে কোন অসুবিধা নেই।’’৪৫  

➥{ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী, তাহযিবুত তাহযিব, ৪/৯ পৃ.}



❏ ইমাম যাহাবী  আরও উল্লেখ করেন-


وَقَالَ مَرْوَانُ الطَّاطَرِيُّ: سَمِعْتُ ابْنَ عُيَيْنَةَ يَقُوْلُ: حَدَّثَنَا سَعِيْدُ بنُ بَشِيْرٍ، وَكَانَ حَافِظاً. وَقَالَ دُحَيْمٌ: يُوَثِّقُونَهُ، كَانَ حَافِظاً.


-‘‘মারওয়ান আত-তাতারী বলেন, আমি সুফিয়ান ইবনে উয়ানাকে বলতে শুনেছি, সাঈদ ইবনে বাশীর হাফেযুল হাদিস ছিলেন। ইমাম দুহাইম (رحمة الله) বলেন, তিনি সিকাহ, হাফেযুল হাদিস।’’৪৬  

➥{ইমাম যাহাবী, সিয়ারু আলামিন নুবালা, ৭/৩০৪ পৃ. ক্রমিক. ৯৭, যাহাবী, তারিখুল ইসলাম, ৪/৩৭৩ পৃ., ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী, তাহযিবুত তাহযিব, ৪/৯ পৃ. }



❏ আল্লামা মুগলতাঈ (رحمة الله) উল্লেখ করেন-


ولما ذكره ابن شاهين في الثقات قال: قال شعبة بن الحجاج: هو مأمون خذوا عنه. وذكره الحاكم في الثقات وخرج حديثه في مستدركه، وقال: كان إمام أهل الشام في عصره إلا أن الشيخين لما يخرجاه.


-‘‘ইমাম ইবনে শাহীন (رحمة الله) তাকে সিকাহ রাবীর তালিকায় অর্ন্তভুক্ত করেছেন। ইমাম শু‘বা ইবনে হাজ্জাজ (رحمة الله) বলেন, তিনি নেককার আমরা তার থেকে হাদিস গ্রহণ করতাম, ইমাম হাকেম (رحمة الله) তাকে সিকাহ তে রেখেছেন এবং মুস্তাদরাকে তার হাদিস সংকলন করেছেন এবং বলেছেন, তিনি শাম দেশের তৎকালিন যুগের ইমাম ছিলেন যদিও বুখারী, মুসলিমে তার হাদিস সংকলন হয়নি।’’ ৪৭

➥{ইমাম ইবনে শাহীন, তারিখু আসমাউ সিকাত, ১/৯৭ পৃ. ক্রমিক. ৪৩২, মুগলতাঈ, ইকমালু তাহযিবুল কামাল, ৫/২৬৪ পৃ. ক্রমিক. ১৯১০}



❏ তিনি আরও উল্লেখ করেন-


وقال البزار: سعيد بن بشير عندنا صالح ليس به بأس حسن الحديث


-‘‘ইমাম বাজ্জার বলেন, সাঈদ ইবনে বাশার আমাদের নিকট সৎ ব্যক্তি, তার হাদিস গ্রহণ করতে কোন অসুবিধা নেই। তার হাদিস ‘সুন্দর’ পর্যায়ের।’’  ৪৮

➥{ইমাম মুগালতাঈ, ইকমালু তাহযিবুল কামাল, ৫/২৬৪ পৃ. ক্রমিক. ১৯১০}



❏ তিনি আরও উল্লেখ করেন-


ولما ذكره ابن خلفون في الثقات


-‘‘ইমাম ইবনে খালফুন (رحمة الله) তাকে সিকাহ রাবীর তালিকায় স্থান দিয়েছেন।’’  ৪৯

➥{ইমাম মুগালতাঈ, ইকমালু তাহযিবুল কামাল, ৫/২৬৪ পৃ. ক্রমিক. ১৯১০}



❏ ইমাম হাকেম নিশাপুরী (رحمة الله) তার একটি হাদিস সংকলন করেন লিখেন-


حَدَّثَنَا أَبُو النَّضْرِ مُحَمَّدُ بْنُ مُحَمَّدِ بْنِ يُوسُفَ الْفَقِيهُ، ثنا عُثْمَانُ بْنُ سَعِيدٍ الدَّارِمِيُّ، ثنا أَبُو الْجُمَاهِرِ مُحَمَّدُ بْنُ عُثْمَانَ التَّنُوخِيُّ، ثنا سَعِيدُ بْنُ بَشِيرٍ، عَنْ قَتَادَةَ، عَنِ الْحَسَنِ، عَنْ سَمُرَةَ، قَالَ..... هَذَا حَدِيثٌ صَحِيحُ الْإِسْنَادِ، وَسَعِيدُ بْنُ بَشِيرٍ إِمَامُ أَهْلِ الشَّامِ فِي عَصْرِهِ إِلَّا أَنَّ الشَّيْخَيْنِ لَمْ يُخَرِّجَاهُ [التعليق - من تلخيص الذهبي]  صحيح


-‘‘...সাঈদ বিন বাশীর তাবেয়ী কাতাদা থেকে তিনি হাসান বসরী হতে তিনি সামুরা ইবনে জুনদুব (رضي الله عنه) হতে তিনি বলেন,.....। ইমাম হাকেম  বলেন, এই হাদিসটির সনদ সহীহ। সাঈদ ইবনে বাসীর শাম দেশের তার সময়ের হাদিসের ইমাম ছিলেন, যদিও শাইখাইন তার থেকে হাদিস বর্ণনা করেননি। ইমাম যাহাবী (رحمة الله) একমত পোষণ করে বলেন, এটি সহীহ।’’ ৫০

➥{ইমাম হাকেম, আল-মুস্তাদরাক, ১/৪০৩ পৃ. হা/৯৯৫, তিনি এ হাদিসকে সহীহ বলেছেন আর ইমাম যাহাবী (رحمة الله) তার সাথে একমত পোষণ করেছেন। আল-মুস্তাদরাক লিল হাকিম, ২/১২৫ পৃ. হা/২৫৩৬, ২/১৬২ পৃ. হা/২৫১, ৩/১৩০ পৃ. হা/৪৬১৭, ৩/৭৪৫ পৃ. হা/৬৭০৯, ৪/১৪১পৃ. হা/৭১৬২, ৪/১৭৭ পৃ. হা/৭২৭৯, হা/৮১০৪, ৪/৫০৬পৃ. হা/৮৪২১}



❏ এ বিষয়ে আরেকটি হাদিসে পাক বর্ণিত হয়েছে এভাবে, ইমাম তাবরানী, বাগভী (رحمة الله)সহ একজামাত মুহাদ্দিগণ সংকলন করেন-


حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ مُحَمَّدِ بْنِ يَحْيَى بْنِ حَمْزَةَ، ثَنَا أَبُو الْجُمَاهِرِ، ثَنَا سَعِيدُ بْنُ بَشِيرٍ، عَنْ قَتَادَةَ، عَنِ الْحَسَنِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ؓ، أَنَّ نَبِيَّ اللَّهِ ﷺ قَالَ كُنْتُ أَوَّلَ النَّبِيِّينَ فِي الْخَلْقِ وَآخِرَهُمْ فِي الْبَعْثِ


-‘‘তাবেয়ী হাসান বসরী (رحمة الله) হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন।  তিনি আল্লাহর রাসূল (ﷺ) হতে বর্ণনা করেন, তিনি ইরশাদ করেন, আমি সৃষ্টিতে সমস্ত নবীদের পূর্বে এবং প্রেরণের দিক দিয়ে নবীদের শেষ।’’ ৫১

➥{ইমাম তাবরানী, মুসনাদিশ শামেয়্যীন, ৪/৩৪ পৃ. হা/২৬৬২, ইমাম দায়লামী : আল ফিরদাউস : ৩/২৮২ পৃ. হা/৪৮৫০, ৭১৯৫, ইমাম বাগভী : মাআলিমুত তানজীল : ৩/৫০৮ পৃ., আল্লামা  ইবনে কাসীর : তাফসীরে ইবনে কাসীর : ৩/৪৭০ পৃ., আল্লামা আলূসী : তাফসীরে রুহুল মায়ানী : ১২/১৫৪ পৃ., আল্লামা ইমাম জালাল উদ্দিন সুয়ূতি, তাফসিরে দুররুল মানসূর : ৬/৫৭০ পৃ., ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতি, খাসায়েসুল কোবরা : ১/৫পৃ. হা/১, ইমাম ইবনে আদি : আল কামিল : ৩/৩৭৩ পৃ.}



উপরের হাদিসে এবং এ হাদিসে কোনো প্রার্থক্য নেই, কেননা সকল নবীই মানব জাতিতে দুনিয়ায় এসেছেন। এ হাদিসের সনদও সহীহ, সনদে রাবী ‘সাঈদ বিন বশীর’ রয়েছেন তার গ্রহণযোগ্যতা ইতোপূর্বে আলোকপাত করেছি। 



পর্যালোচনা:


সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! উপরের সহীহ হাদিসের আলোকে দীবালকের ন্যায় স্পষ্ট প্রমাণিত হয়ে গেল যে, মহান রব তা‘য়ালা সমস্ত নবী-রাসূল এবং মানবের মধ্যে প্রথম যাকে সৃষ্টি করেছেন তিনি হচ্ছেন রাসূল (ﷺ)। তাই তাঁর সৃষ্টিকে আদম (عليه السلام)-এর পরে আগমনকরা বণী আদমের ন্যায় নাপাক নুতফার তৈরী বলা গোমরাহী ছাড়া আর কিছুই নয়, যেমনটি মাওলানা মুহাম্মাদ আবদুল মালেক সাহেবের মত কতিপয় দুনিয়াধারী জাহেল আলেমগণ করেছেন। এবার আমরা মূল আলোচনায় আসবো যে, সর্বপ্রথম রাসূল (ﷺ)-এর নূরকে সৃষ্টি করা হয়েছে এ বিষয়ে সনদ ভিত্তিক কোনো বর্ণনা রয়েছে কিনা।



হাদিস নং-৪


❏ ইমাম বায়হাকী (رحمة الله)সহ আরও অনেকে সংকলন করেন-


أَخْبَرَنَا أَبُو الْحَسَنِ عَلِيُّ بْنُ أَحْمَدَ بْنِ سِيمَاءَ الْمُقْرِئُ، قَدِمَ عَلَيْنَا حَاجًّا، حَدَّثَنَا أَبُو سَعِيدٍ الْخَلِيلُ بْنُ أَحْمَدَ بْنِ الْخَلِيلِ الْقَاضِي السِّجْزِيُّ، أَنْبَأَنَا أَبُو الْعَبَّاسِ مُحَمَّدُ بْنُ إِسْحَاقَ الثَّقَفِيُّ، حَدَّثَنَا أَبُو عُبَيْدِ اللهِ يَحْيَى بْنُ مُحَمَّدِ بْنِ السَّكَنِ، حَدَّثَنَا حَبَّانُ بْنُ هِلَالٍ، حَدَّثَنَا مُبَارَكُ بْنُ فَضَالَةَ، حَدَّثَنَا عُبَيْدُ اللهِ بْنُ عُمَرَ، عَنْ خُبَيْبِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، عَنْ حَفْصِ بْنِ عَاصِمٍ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: لَمَّا خَلَقَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ آدَمَ خَيَّرَ لِآدَمَ بَنِيهِ، فَجَعَلَ يَرَى فَضَائِلَ بَعْضِهِمْ عَلَى بَعْضٍ، قَالَ: فَرَآنِي نُورًا سَاطِعًا فِي أَسْفَلِهِمْ، فَقَالَ: يَا رَبِّ مَنْ هَذَا؟ قَالَ: هَذَا ابْنُكَ أَحْمَدُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ هُوَ الْأَوَّلُ وَالْآخَرُ وَهُوَ أَوَّلُ شَافِعٍ


-‘‘হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, যখন আল্লাহ্ তা‘য়ালা হযরত আদম (عليه السلام) কে সৃষ্টি করলেন, তখন তাকে তার সন্তান-সন্ততি দেখালেন। হযরত আদম (عليه السلام) তাদের পারস্পরিক শ্রেষ্ঠত্ব নিরীক্ষা করতে থাকেন। অবশেষে তিনি একটি চমকদার নূর দেখতে পেয়ে জিজ্ঞাসা করলেন : হে পরওয়ারদিগার! এ কার নূর? তিনি ইরশাদ করলেন, এ তোমার আওলাদ আহমদ (ﷺ)। তিনি (সৃষ্টিতে) প্রথম এবং প্রেরণের দিক থেকে (সকল নবীদের) শেষে, হাশরের ময়দানে তিনিই সর্বপ্রথম শাফায়াতকারী হবেন।’’ ৫২

➥{ইমাম বায়হাকী, দালায়েলুল নবুয়ত, ৫/৪৮৩ পৃ. দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, ইমাম সুয়ূতী : খাসায়েসুল কোবরা : ১/৭০ পৃ. হা/১৭৩, আল্লামা ইমাম ইবনে আসাকির : তারিখে দামেস্ক : ৭/৩৯৪-৩৯৫ পৃ. দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন, ইমাম জুরকানী, শারহুল মাওয়াহেব, ১/৪৩ পৃ., দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন, মুত্তাকী হিন্দী : কানযুল উম্মাল : ১১/৪৩৭ পৃ. হা/৩২০৫৬, আবূ সা‘দ খরকুশী নিশাপুরী, শরফুল মুস্তফা,  ৪/২৮৫ পৃ., ইমাম কাস্তাল্লানী, মাওয়াহেবে লাদুন্নীয়া,  ১/৪৯ পৃ., ইমাম দিয়ার বকরী, তারীখুল খামীস, ১/৪৫ পৃ., র্সারাজ,  হাদিসাহ,  হাদিস নং.২৬২৮, ইবনে হাজার আসকালানী,  আল-মুখালি­সিয়্যাত,  ৩/২০৭ পৃ.হা/২৩৪০, সালিম র্জারার,  আল-ইমা ইলা যাওয়াইদ,  ৬/৪৭৮ পৃ. হা/৬০৮৩, ইবনে সালেহ শামী,  সবলুল হুদা ওয়ার রাশাদ,  ১/৭১ পৃ., ইফরাকী, মুখতাসারে তারীখে দামেস্ক,  ২/১১১ পৃ.}



পর্যালোচনা:


এ হাদিস থেকে স্পষ্ট প্রমাণিত হল স্বয়ং সৃষ্টিকর্তা মহান রব্বুল আ‘লামীন রাসূল (ﷺ)-এর কে সৃকল সৃষ্টির প্রথম বলে ঘোষণা দিয়েছেন, তারপরও যারা এর বিপরীতমুখি আক্বিদা অন্তরে ধারণ করেন তাদের আক্বিদা-ঈমান কতটুকু গ্রহণযোগ্য তার চিন্তার বিষয়, পাঠকবর্গ! যারা আল্লাহর বিপরীত কথা বলে সহজেই বুঝা যায় সৃষ্টিকর্তাকেও তারা ভয় করে না, যে আলেম দাবীদার অথচ আল্লাহকে ভয় করে না সে কি নিজেকে আলেম দাবী করতে পারে! 



❏ এ বিষয়ে মহান রব তা‘য়ালা ইরশাদ করেন-


إِنَّمَا يَخْشَى اللَّهَ مِنْ عِبَادِهِ الْعُلَمَاءُ


-‘‘আলেমগণই কেবল আল্লাহকে ভয় করেন।’’ 


(সূরা ফাতির, আয়াত নং-২৮)


এ হাদিস থেকে আরেকটি বিষয় প্রমাণিত হলো যে, হযরত আদম (عليه السلام) রাসূল (ﷺ) কে নূর রূপেই দেখেছিলেন, আজ উনার কতিপয় মানব রূপী সন্তানগণ তাঁর বিপরীত আক্বিদা পোষণ করেন।



সনদ পর্যালোচনা:


❏ এ হাদিসটির সনদটি সহীহ তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এমনকি আহলে হাদিসদের ইমাম নাসিরুদ্দীন আলবানী (১৯৯৯ খৃ.) এ সনদটি প্রসঙ্গে লিখেন-


قلت: وهذا إسناد حسن؛ رجاله كلهم ثقات رجال البخاري


-‘‘আমি (আলবানী) বলছি, এই হাদিসের সনদ ‘হাসান’, এর সকল বর্ণনাকারীগণ সহীহ বুখারীর বর্ণনাকারী ন্যায়।’’৫৩  

➥{আলবানী, সিলসিলাতুল আহাদিসুদ্ দ্বঈফাহ, হা/৬৪৮২}



আলবানী প্রথমে এ সনদটিতে রাবী ‘মোবারক বিন ফাদ্বালাহ’ এর কারণে যঈফ বলতে চেয়েছেন। আমি বলবো, এ রাবী সিকাহ এবং তার হাদিস গ্রহণযোগ্য। 


❏ ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) উল্লেখ করেন-


وقال عثمان الدارمي سألت بن معين عن الربيع فقال ليس به بأس


-‘‘উসমান দারেমী (রহ.) এ রাবী সম্পর্কে ইমাম ইবনে মাঈন (رحمة الله)‘র কাছে জানতে চান তিনি তার শায়খ রুবীঈ থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, তার হাদিস গ্রহণ করতে কোন অসুবিধা নেই।’’  ৫৪

➥{ইবনে হাজার আসকালানী, তাহযিবুত তাহযিব, ১০/৩০ পৃ. ক্রমিক নং.৪৯ }


❏ উক্ত ইমাম আরও উল্লেখ করেন-


وقال عمرو بن علي سمعت عفان يقول كان مبارك معتبرا


-‘‘হযরত আমর বিন আলী বলেন, আমি শায়খ আফ্ফান ইবনে মুসলিম (رحمة الله) কে বলতে শুনেছি, মোবারকের তিনি হাদিস বর্ণনায় নির্ভরযোগ্য।’’  ৫৫

➥{ইবনে হাজার আসকালানী, তাহযিবুত তাহযিব, ১০/৩০ পৃ. মিয্যী, তাহযিবুল কামাল, ২৭/১৮৪ পৃ.}



❏ ইমাম ইবনে হাজার  আরও উল্লেখ করেন- وذكره بن حبان في الثقات -‘‘ইমাম ইবনে হিব্বান  তাকে সিকাহ রাবীর তালিকায় অর্ন্তভুক্ত করেছেন।’’  ৫৬

➥{ইবনে হাজার আসকালানী, তাহযিবুত তাহযিব, ১০/৩০ পৃ. ক্রমিক নং. ৪৯}



❏ উক্ত ইমাম আরও উল্লেখ করেন-


وقال العجلي لا بأس به. وقال أبو زرعة يدلس كثيرا فإذا قال حدثنا فهو ثقة


-‘‘ইমাম ইজলী  বলেন, তার হাদিস গ্রহণ করতে কোন অসুবিধা নেই। ইমাম আবু যারওয়া  বলেন, তিনি অনেক হাদিসে তাদলীস করতেন, তবে তিনি হাদিস বর্ণনার ক্ষেত্রে যখন (حدثنا) বলে বর্ণনা করবেন অর্থাৎ তাদলীস করবেন না তখন তিনি সিকাহ বা বিশ্বস্ত।’’  ৫৭

➥{ইবনে হাজার আসকালানী, তাহযিবুত তাহযিব, ১০/৩০ পৃ. ক্রমিক নং. ৪৯}



তাই প্রমাণিত হল এ হাদিস সহীহ, কেননা তিনি এ হাদিসে তাদলীস করেননি। 


❏ এমনকি আলবানীও লিখেছে-


والذي عليه المحققون أنه صدوق لا بأس به؛ إذا صرح بالتحديث


-‘‘তাঁর বিষয়ে মুহাক্কিকগণ বলেছেন, নিশ্চয় তিনি সত্যবাদীর অর্ন্তভুক্ত, তার হাদিস গ্রহণ করতে কোনো অসুবিধা নেই, তবে যখন তিনি তাদলীসবিহীন বর্ণনা করবেন।’’  ৫৮

➥{আলবানী, সিলসিলাতুল আহাদিসুদ্ দ্বঈফাহ, ১৩/১০৮৩ পৃ. হা/৬৪৮২}



❏ ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী  আরও উল্লেখ করেন-


وقال بن أبي خيثمة عن بن معين ثقة


-‘‘মুহাদ্দিস ইবনে আবি খায়ছামা  তিনি ইমাম ইবনে মাঈন  থেকে বর্ণনা করেন যে, মোবারাক সিকাহ বা বিশ্বস্ত রাবী।’’  ৫৯

➥{ইবনে হাজার আসকালানী, তাহযিবুত তাহযিব, ১০/৩০ পৃ. ক্রমিক নং. ৪৯}



তাই প্রমাণিত হল সনদটি সহীহ তাতে কোন সন্দেহ নেই।


ধোঁকাবাজদের চিনে রাখুন!


‘এসব হাদীস নয়’ গ্রন্থের ২১৮ পৃষ্ঠায় মাওলানা মুহাম্মদ আবদুল মালেক আমার বিরোদ্ধে লিখতে গিয়ে এক চরম পর্যায়ের মিথ্যার আশ্রয় গ্রহণ করেন, তিনি লিখেন-‘‘এ ক্ষেত্রে তিনি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যত হাওয়ালা দিয়েছেন তার সবগুলোই সনদহীন।’’


সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! তার যদি একটুও আল্লাহর ভয় থাকতো এবং লজ্জা থাকলে তিনি কি এ কথা লিখতে পারতেন! ইতিহাস সাক্ষী এ পৃথিবীতে যত ধর্ম ব্যবসায়িক ছিল তাদের কারোই আল্লাহর ভয় এবং লজ্জা কোনোটিই ছিল না।



হাদিস নং-৫


❏ ইমাম আবূ সা‘দ খরকুশী নিশাপুরী (ওফাত. ৪০৭ হি.)সহ অনেক মুহাদ্দিস ইমাম আব্দুল্লাহ ইবনে মোবারক (رحمة الله)-এর কিতাব থেকে সংকলন করেন-


وروى عبد الله بن المبارك، عن سفيان الثوري، عن جعفر بن محمد الصادق، عن أبيه، عن جده، عن علي بن أبي طالب أنه قال: إن الله تبارك وتعالى خلق نور محمد صلى الله عليه وسلم قبل أن يخلق السماوات والأرض والعرش والكرسي والقلم والجنة


-‘‘বিখ্যাত হাদিসের ইমাম আব্দুল্লাহ ইবনে মোবারক (رحمة الله) হতে বর্ণিত আছে, তিনি তাঁর শায়খ সুফিয়ান সাওড়ী (رحمة الله) হতে তিনি আলে রাসূল ইমাম জাফর বিন মুহাম্মদ সাদেক (رحمة الله) হতে বর্ণনা করেন, তিনি তাঁর পিতা ইমাম বাকের (رحمة الله) হতে বর্ণনা করেন, তিনি তাঁর পিতামহ জয়নুল আবেদীন (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন, তিনি আমিরুল মু‘মিনীন হযরত আলী (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, নিশ্চয় মহান রব তা‘য়ালা আসমান, যমীন, আরশ, কুরসী, কলম, জান্নাত সৃষ্টি করার পূর্বে রাসূল (ﷺ)-এর নূর মোবারককে সৃষ্টি করেছেন।’’ 


(ইমাম আবূ সা‘দ খরকুশী নিশাপুরী, শরফুল মোস্তফা, ১/৩০৮ পৃ., দারুল বাশায়েরুল ইসলামিয়্যাহ, মক্কা, সৌদি আরব, প্রথম প্রকাশ. ১৪২৪ হি.)



পর্যালোচনা:


এ হাদিসের আলোকে বুঝা যায় যে, মহান রব সব কিছু সৃষ্টির পূর্বে তাঁর হাবিবের নূর মোবারককে সৃষ্টি করেছেন। এ হাদিসটি ইমাম ইবনে মোবারক (رحمة الله) সংকলন করেছেন এ হাদিসের সনদ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে আমার লিখিত ‘রাসূল (ﷺ)-এর সৃষ্টি নিয়ে বিভ্রান্তির নিরসন’ গ্রন্থ দেখুন। 




হাদিস নং-৬


❏ আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী  তাঁর তাফসীরে সূরা যুখরুফের ৮১ নং আয়াত- 


قُلْ إِنْ كَانَ لِلرَّحْمَنِ وَلَدٌ فَأَنَا أَوَّلُ الْعَابِدِينَ


-‘‘হে হাবিব! আপনি বলুন দয়াময় আল্লাহর যদি কোন সন্তান হতো তাহলে ইবাদাতকারীদের মধ্যে আমিই সর্ব প্রথম হতাম।’’ 


❏ এ আয়াতের ব্যাখ্যায় উপরের হাদিসের শাওয়াহেদে মুরসাল সূত্র উল্লেখ করেন এভাবে- 


قال جعفر الصادق رضى الله عنه أول ما خلق الله نور محمد صلى الله عليه وسلم قبل كل شىء 


-‘‘হযরত ইমাম জাফর সাদেক  বলেন, সকল কিছুর পূর্বে আল্লাহ্ ‘নূরে মুহাম্মাদী’ কে সৃষ্টি করেছেন।’’ ৬০

➥{ইসমাঈল হাক্কী : রুহুল বায়ান : ৮/৩৯৬ পৃ.,  সূরা যুখরুফ,  আয়াত.৮১}



এখন হয়তো কারো প্রশ্ন জাগতে পারে এ নূর থেকে যে রাসূল (ﷺ) কে সৃষ্টি করা হয়েছে, তার ব্যাখ্যা কে দিল! 


❏ বিশ্বের অন্যতম মুহাদ্দিস, হাফেযুল হাদিস, বিখ্যাত হানাফী ফকীহ, আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) তাঁর সুবিখ্যাত গ্রন্থ ‘মিরকাত’ এ উল্লেখ করেন, 


قَالَ ابْنُ حَجَرٍ: اخْتَلَفَتِ الرِّوَايَاتُ فِي أَوَّلِ الْمَخْلُوقَاتِ، وَحَاصِلُهَا كَمَا بَيَّنْتُهَا فِي شَرْحِ شَمَائِلِ التِّرْمِذِيِّ أَنَّ أَوَّلَهَا النُّورُ الَّذِي خُلِقَ مِنْهُ - عَلَيْهِ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ- -، ثُمَّ الْمَاءُ، ثُمَّ الْعَرْشُ


-‘‘ইমাম ইবনে হাজার (رحمة الله) বলেন, আদি সৃষ্টি কোন বস্তু তা নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন বর্ণনা রয়েছে, যার সার-সংক্ষেপ আমি শামায়েলে তিরমিযীর ব্যাখ্যা গ্রন্থে আলোচনা করেছি। সর্বপ্রথম সেই নূরকে মহান রব সৃষ্টি করেছেন যে নূর থেকে রাসূল (ﷺ) কে সৃষ্টি করা হয়েছে, তারপর পানি সৃষ্টি করা হয়েছে, তারপর আরশ সৃষ্টি করা হয়েছে (তারপর কলম)।’’ ৬১

➥{আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী : মিরকাতুল মাফাতীহ : ১/১৪৮ পৃ. হা/৭৯}



এ বিষয়ে ইমাম মুহাদ্দিসগণের অভিমত:


সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! আমি সর্বপ্রথম রাসূল (ﷺ) সৃষ্টি এ বিষয়ক কতিপয় হাদিসে পাক উল্লেখ করলাম, এছাড়াও হাদিসের জাবের (رضي الله عنه)সহ আরও কিছু হাদিস সামনে উল্লেখ করা হবে, ইন শা আল্লাহ


এখানে আমি এ বিষয়ের পক্ষে বিভিন্ন মুহাদ্দিস, ইমামদের অভিমত কি তা আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করবো।


১. বিশ্ববিখ্যাত মুহাদ্দিস আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) লিখেন-


وَأَمَّا نُورُهُ عَلَيْهِ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ فَهُوَ فِي غَايَةٍ مِنَ الظُّهُورِ شَرْقًا وغَرْبًا وَأَوَّلُ مَا خَلَقَ اللَّهُ نُورَهُ وَسَمَّاهُ فِي كِتَابِهِ نُورًا وَفِي دُعَائِهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اللَّهُمَّ اجْعَلْنِي نُورً ... لَكِنَّ هَذَا النُّورَ لَيْسَ لَهُ الظُّهُورُ إِلَّا فِي عَيْنِ أَهْلِ الْبَصِيرَةِ [فَإِنَّهَا لَا تَعْمَى الأَبْصَارُ وَلَكِنْ تَعْمَى الْقُلُوبُ الَّتِي فِي الصُّدُور


-‘‘সৃষ্টির সর্বত্র প্রিয় নবীর নূরানী সত্ত্বাই সর্বাধিক পরিচিত ও প্রকাশিত। আল্লাহ্ তা‘য়ালা তাঁরই নূরানী সত্ত্বাকে সর্বাগ্রে সৃষ্টি করেছেন। পবিত্র কোরআনে তাকে নূর হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। তিনি তার প্রার্থনায় বলেছেন,  আল্লাহ্ আমাকে নূরানী সত্ত্বায় প্রতিষ্ঠিত রাখুন। ....এতদ্সত্তে¡ও তার নূরানী সত্ত্বা বস্তু জগতে একমাত্র অন্তর্দৃষ্টি সম্পূর্ণ মানুষের কাছেই প্রজ্জ্বলিত। (কেবল কপালের চোখে প্রিয় নবীর নূরানী সত্ত্বার যিয়ারত সম্ভব নয়) আল্লাহ পাক বলেন,  কপালের চোখ তো অন্ধ নয়,  বরং অন্ধ হচ্ছে বক্ষস্থিত হৃদয় বা অন্তর্দৃষ্টি।’’ 


(আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী, আসরারুল মারফূআ, ৪০৪ পৃ.)



২. আল্লামা নূর উদ্দিন মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) স্বীয় ‘শরহে শামায়েলে তিরমিযী’ গ্রন্থের (মুলতান থেকে মুদ্রিত) ১ম খণ্ডের,  ১৪৬ পৃষ্ঠায় লিখেন, 


أَنَّ أَوَّلَهَا النُّورُ الَّذِي خُلِقَ مِنْهُ - عَلَيْهِ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ-


-‘‘সর্বপ্রথম সৃষ্টি সেই মহান ‘নূর’ যার দ্বারা হুযূর (ﷺ) কে সৃষ্টি করা হয়েছে।’’ ৬২

➥{মোল্লা আলী ক্বারী : মেরকাত : ১/২৪১ পৃ., হা/৭৯ }



৩. আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) মিশকাত শরীফের ব্যাখ্যা গ্রন্থ ‘মিরকাতুল মাফাতীহ’ এর ১ম খণ্ডের ১৬৭ পৃষ্ঠায় ঈমান বিল-ক্বদর অধ্যায়ে সর্বপ্রথম কোন বস্তু সৃষ্টি তা সম্পর্কে আলোকপাত করতে গিয়ে বলেন, 


فَالْأَوَّلِيَّةُ إِضَافِيَّةٌ، وَالْأَوَّلُ الْحَقِيقِيُّ هُوَ النُّورُ الْمُحَمَّدِيُّ عَلَى مَا بَيَّنْتُهُ فِي الْمَوْرِدِ لِلْمَوْلِدِ............ وَرُوِيَ: أَنَّ أَوَّلَ مَا خَلَقَ اللَّهُ الْعَقْلُ، وَإِنَّ أَوَّلَ مَا خَلَقَ اللَّهُ نُورِي، وَإِنَّ أَوَّلَ مَا خَلَقَ اللَّهُ رُوحِي، وَإِنَّ أَوَّلَ مَا خَلَقَ اللَّهُ الْعَرْشُ ، وَالْأَوَّلِيَّةُ مِنَ الْأُمُورِ الْإِضَافِيَّةِ فَيُؤَوَّلُ أَنَّ كُلَّ وَاحِدٍ مِمَّا ذُكِرَ خُلِقَ قَبْلَ مَا هُوَ مِنْ جِنْسِهِ، فَالْقَلَمُ خُلِقَ قَبْلَ جِنْسِ الْأَقْلَامِ، وَنُورُهُ قَبْلَ الْأَنْوَارِ- (مرقاة:১/২৭০)


-‘‘বাস্তবিক পক্ষে প্রথম সৃষ্টি হচ্ছে- নূরে মুহাম্মদী (ﷺ) যেমন আমি আমার ‘‘আল মাওরিদ লিল মাওলিদ’’ 


(১ম খণ্ড : ১৬৮ পৃষ্ঠা,  হাদিস,  ৯৪) 


এ উল্লেখ করেছি।....... আর যেসব বর্ণনায় এসেছে- আল্লাহ্ প্রথমে (আমার) আকল (বিবেক) সৃষ্টি করেছেন, অন্য বর্ণনায় আল্লাহ্ প্রথমে আমার নূরকে সৃষ্টি করেছেন, অন্য বর্ণনায় আল্লাহ্ প্রথমে আমার রুহকে সৃষ্টিকে করেছেন, অন্য বর্ণনায় আল্লাহ্ প্রথমে আরশ সৃষ্টি করেছেন। 


এসব বর্ণনায় ‘‘প্রথমে’’ শব্দটি দ্বারা আনুপাতিক প্রথম বুঝানো হয়েছে। সুতরাং এর ব্যাখ্যা এভাবে দেয়া যাবে যে, উল্লেখিত প্রতিটি বস্তু সে জাতীয় সব বস্তুর মধ্যে প্রথমে সৃষ্টি করা হয়েছে বলে ধরে নিতে হবে। যেমন, সব কলমের মধ্যে উলি­খিত কলমটি তাক্বদীর লিখন কলমটি সর্বপ্রথম সৃষ্ট হয়েছে। সুতরাং সৃষ্টিকুলের সমস্ত নূরের মধ্যে সর্বপ্রথম হুযূর (ﷺ) এর নূরকেই সৃষ্টি করা হয়েছে।’’ ৬৩

➥{আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী : মিরকাতুল মাফাতীহ : ১/১৬৮পৃ.ঈমান বিল ক্বদর : হা/৯৪}



৪. আল্লামা সৈয়দ শরীফ আলী বিন মুহাম্মদ আল জুরজানী (رحمة الله) শরহে মাওয়াক্কের (ইরানের কোম থেকে প্রকাশিত) এর ৭ম খণ্ডের ২৫৪ পৃষ্ঠায় লিখেছেন,  


قال بعضهم وجه الجمع بينه (اول ما خلق العقل) وبين الحديثين الاخرين اول ما خلق الله القلم واول ما خلق الله نورى – ان المعلوم الاول من حيث انه مجرد يعقل ذاته ومبدأه يسمى عقلا- ومن حيث انه واسطة فى صدور سائر الموجودات ونفوس العلم يسمى قلما ومن حيث توسطه فى افاضة انوار النبوة كان نورا لسيد الانبياء- 


-‘‘হাদিসে পাকে সর্বপ্রথম সৃষ্টি হিসেবে ‘‘আকল’’, ‘‘কলম’’ এবং ‘‘আমার নূর’’ তিনটি বস্তুর উল্লেখ মূলত: নবীক‚ল সম্রাট এর নূর মোবারককেই বুঝানো হয়েছে। সর্বাগ্রে নিরেট ও নির্ভেজাল অস্তিত্বময় একমাত্র তাঁরই সত্ত্বা। তাই তাকে ‘‘আক্বল’’ এবং সমগ্র সৃষ্টির অস্তিত্ব প্রাপ্তির তিনিই মাধ্যম তাই তাকে ‘‘কলম’’ এবং আনওয়ারে নবুওয়্যাতের তিনিই ফয়েয বিতরণের একমাত্র সোপান তাই তিনি ‘নূর’ হিসেবে আখ্যায়িত।’’ 



৫. আরেফ বিল্লাহ ইমাম আল্লামা আবদুল ওয়াহাব শারানী (رحمة الله)اليواقيت والجواهر গ্রন্থের ২য় খণ্ডের,  ২০ পৃষ্ঠায় হাদিসে উলি­খিত اول ما خلق الله نورى এবং اول ما خلق الله العقل উভয় বর্ণনার সামঞ্জস্য বিধানে বলেন,  


ان معناهما واحد لان حقيقة محمد صلى الله عليه وسلم تارة يعبر عنها بالعقل الاول وتارة بالنور- 


-‘‘মানে নূর কিংবা আকল পরস্পর কোন বৈপরিত্য নেই। এগুলো হাক্বীক্বতে মুহাম্মদী (ﷺ) এর বহুমুখী পরিচিতি।’’ ৬৪

➥{আল্লামা শায়খ ইউসূফ বিন নাবহানী : জাওয়াহিরুল বিহার : ২/৪৭পৃঃ}



৬. আল্লামা হুসাইন বিন মুহাম্মদ বিন হাসান দিয়ার বকরী (رحمة الله) স্বীয় ‘তারীখুল খামীস’ কিতাবের ১ম খণ্ডের ২৫ পৃষ্ঠায় অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন- 


وأهل الحقيقة على ان المراد من هذه الأحاديث شئ واحد لكن باعتبار نسبه وحيشياته تعدرت العبارات- 


-‘‘আহলে তাহকীক ওলামাদের অভিমত এই যে, যেই সমস্ত হাদিস হতে বস্তু (সর্বপ্রথম সৃষ্টির ব্যাপারে উদ্দেশ্য হয়েছে) সেই সমস্ত হাদিস দ্বারা একটিকে অপরটিরদিকে অনুপাতিক নেসবত করা হয়েছে। (মূলত রাসূল (ﷺ) এর নূরই সর্বপ্রথম সৃষ্টি)’  ৬৫

➥{আল্লামা হুসাইন বিন মুহাম্মদ বিন হাসান দিয়ার বকরী : তারীখুল খামীস : ১/২৫ পৃ}



৭. আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আকায়েদের ইমাম আবুল হাসান আশ‘আরী (رحمة الله) বলেন,  


انه تعالى نور ليس كالانوار و روح النبوية القدسية لمعة من نوره والملائكة اشرار تلك الانوار وقال صلى الله عليه وسلم اول ما خلق الله نورى ومن نورى خلق الله كل شئ- 


-‘‘আল্লাহ্ তা‘য়ালা নূর, তবে অন্যান্য নূরের মতো নন। আর নবী করীম (ﷺ) এর রুহ মোবারক হচ্ছে তার নূরের ঝলক। আর ফেরেশতাগণ হচ্ছেন তার নূরের শিখা। হুযূর (ﷺ) ইরশাদ ফরমান, আল্লাহ্ তা‘য়ালা সর্বপ্রথম আমার নূরকে সৃষ্টি করেছেন। আর আমার নূর থেকে আল্লাহ্ প্রত্যেক কিছু সৃষ্টি করেছেন।’’ ৬৬

➥{ক. আল্লামা ইমাম মাহদী আল ফার্সী : মাতালিউল মুর্সারাত : ২১ পৃ. মাতবায়ে মাকতুবায়ে নূরীয়া, লেবানন।

খ. আল্লামা শায়খ ইউসূফ বিন নাবহানী : জাওয়াহিরুল বিহার : ২/২২০ পৃ. দিল­ী থেকে প্রকাশিত।}



৮. বিশ্ববিখ্যাত মুহাদ্দিস আল্লামা ইমাম জাওযী (رحمة الله) স্বীয় “মওলুদুন নববী শরীফ’ গ্রন্থে এ বিষয়ক হাদিস প্রসঙ্গে লিখেন- 


اول ما خلق الله نورى ومن نورى خلق جميع الكائنات-


-‘‘রাসূল (ﷺ) এর বাণী : সর্বপ্রথম আল্লাহ্ তা‘য়ালা আমার নূর মোবারক সৃষ্টি করেছেন,  আর আমার নূর হতে কুল কায়িনাত সব কিছু সৃষ্টি করেছেন।’’  ৬৭

➥{আল্লামা ইমাম ইবনে যাওজী: বায়ানুল  মিলাদুন্নবী: ২২ পৃ. তুরস্ক হতে প্রকাশিত।}



৯. আল্লামা ইমাম আবদুল গণী নাবলুসী (رحمة الله) হযরত জাবের (رضي الله عنه) এর সনদ সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে সর্বপ্রথম সৃষ্টি সম্পর্কে বলেন, 


قد خلق كل شئ من نوره صلى الله عليه وسلم كما ورد به الحديث الصحيح- 


-‘‘রাসূল (ﷺ) এর নূর মোবারক থেকে সব কিছু সৃষ্টি। উক্ত বর্ণিত হাদিসটির সনদ সহীহ।’’ ৬৮

➥{ইমাম আব্দুল গনী নাবলুসী: হাদীকাতুল নাদিয়া:২/৩৭৫ পৃ. মাতবাতে মাকতবায়ে নূরীয়াহ, ফয়সালাবাদ।}



১০. বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাকার ইমাম কাস্তাল্লানী (رحمة الله) স্বীয় উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ ‘মাওয়াহিবুল্লাদুন্নীয়া’ গ্রন্থে ‘সর্বপ্রথম কী কলম সৃষ্টি’ তা সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে লিখেন,  


ان اولية القلم بالنسبة الى ما عدا النور النبوى المحمدى صلى الله عليه وسلم- 


-‘‘সর্বপ্রথম কলম সৃষ্টি বলতে নূরে মুহাম্মদী (ﷺ) এর পরে অন্যান্য সকল বস্তুর আনুপাতিক হিসেবে প্রথমে ইঙ্গিত করা হয়েছে।’’ ৬৯

➥{আল্লামা ইমাম কাস্তাল্লানী: মাওয়াহেবে লাদুন্নীয়া : ১/৭৪ পৃ.}



১১. ইমাম কাস্তাল্লানী (رحمة الله)সহ আরও অনেকে উল্লেখ করেন-


وقد اختلف هل القلم اول المخلوقات بعد النور المحمدى؟ فقال الحافظ ابو يعلى الهمدانى: الاصح ان العرش قبل القلم-


-‘‘ইমাম কাস্তাল্লানী (رحمة الله) আরও বলেন, ইমাম আবু ই’য়ালা (رحمة الله) কে প্রশ্ন করা হয় মুসলিম ইমামগণের ইখতিলাফ যে রাসূল (ﷺ) এর নূর মোবারকের পর প্রথম কী কলম সৃষ্টি? অতঃপর হাফেয আবু ই’য়ালা হামদানী (رحمة الله) বলেন,  বিশুদ্ধ বর্ণনা হলো কলমের পূর্বে আরশ সৃষ্টি করা হয়েছে।’ ৭০

➥{ইমাম কাস্তাল্লানী : মাওয়াহেবে লাদুন্নীয়া : ১ম খণ্ড : ৭২ পৃ. মাকতুবায়ে ইসলামিয়্যাহ, বয়রুত।}



তাই রাসূল (ﷺ)-এর নূর মোবারকের পরেও প্রথম সৃষ্টি কলম নয়, বরং তার পূর্বে আরও অনেক কিছুই সৃষ্টি করা হয়েছে, যেমন আরশ, তার পূর্বে পানি সৃষ্টি করা হয়েছে। 



১২. মুজাদ্দেদ তরিকার প্রবর্তক ইমামে রব্বানী মুজাদ্দিদ এ আলফেসানী শায়খ আহমদ ফারুকী সেরহিন্দী (رحمة الله) স্বীয় মাকতুবাত শরীফে বলেন, 


حقيقت محمد عليه من الصلوة افضلها ومن التسليمات اكملها كہ ظهور اول است وحقيقة الحقائق است باں معنى كہ حقائق ديگر چه حقائق انبياء كرام وچہ حقائق ملائك عظام عليه الصلوة والسلام كا اظلال اندمر او واجل حقائق است قال اول ما خلق الله نورى وقال عليه الصلوة والسلام خلقت من نور الله والمؤمنون من نورى-


-‘‘হাক্বীক্বতে মুহাম্মদী (ﷺ) বিকাশের দিক দিয়ে সর্বপ্রথম এবং সকল হাক্বীক্বতের হাক্বিক্বত। সকল আম্বিয়ায়ে কেরাম (ﷺ) এবং সম্মানিত সকল ফিরিশতাগণ হুযূর (ﷺ) এর হাক্বিক্বতের নির্যাস। রাসূলে খোদা (ﷺ) বলেছেন,  সর্বপ্রথম আল্লাহ্ তা‘য়ালা যা সৃষ্টি করেছেন তা হল আমারই নূর। আরো বলেছেন যে,  আমি আল্লাহর নূর হতে এবং সকল ঈমানদারগণ আমার নূর হতে সৃষ্টি।’’ ৭১

➥{মুজাদ্দেদে আলফেসানী : মকতুবাত ৩য় খণ্ড : ২৩১ পৃ}



১৩. ত্রয়োদশ শতাব্দীর মুজাদ্দিদ আল্লামা শাহ আব্দুল আযীয মুহাদ্দিস দেহলভী (رحمة الله) স্বীয় ‘‘তাফসীরে আযিযী”তে বলেন,  


در عالم ارواح اول كسے كہ پيدا شد ايشاں بودند-


-‘‘রুহ জগতে (আলমে আরওয়াহে) সর্বপ্রথম যাকে সৃষ্টি করা হয়,  তিনি হচ্ছেন রাসূল (ﷺ)।’  ৭২

➥{শাহ আজিজ মুহাদ্দিস দেহলভী : তাফসীরে আযিযী: ৩০ পারা: পৃ-২১৯}



১৪. বিশ্বের অন্যতম মুহাদ্দিস আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) ‘মিরকাত’ গ্রন্থে উল্লেখ করেন, 


قَالَ ابْنُ حَجَرٍ: اخْتَلَفَتِ الرِّوَايَاتُ فِي أَوَّلِ الْمَخْلُوقَاتِ، وَحَاصِلُهَا كَمَا بَيَّنْتُهَا فِي شَرْحِ شَمَائِلِ التِّرْمِذِيِّ أَنَّ أَوَّلَهَا النُّورُ الَّذِي خُلِقَ مِنْهُ - عَلَيْهِ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ- -، ثُمَّ الْمَاءُ، ثُمَّ الْعَرْشُ


-‘‘ইমাম ইবনে হাজার (رحمة الله) বলেন, আদি সৃষ্টি কোন বস্তু তা নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন বর্ণনা রয়েছে, যার সার-সংক্ষেপ আমি শামায়েলে তিরমিযীর ব্যাখ্যা গ্রন্থে আলোচনা করেছি। সর্বপ্রথম সেই নূরকে মহান রব সৃষ্টি করেছেন যে নূর থেকে রাসূল (ﷺ) কে সৃষ্টি করা হয়েছে, তারপর পানি সৃষ্টি করা হয়েছে, তারপর আরশ সৃষ্টি করা হয়েছে।’’ ৭৩

➥{আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী : মিরকাতুল মাফাতীহ : ১/১৪৮ পৃ. হা/৭৯}



১৫. উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠতম মুহাদ্দিস আল্লামা আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী (رحمة الله) স্বীয় সিরাত গ্রন্থ ‘‘মাদারিজুন নবুয়ত’’ এর দ্বিতীয় খণ্ডের ২য় পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন-


بدانك اول مخلوقات وواسطہ صدور كا ئنات وواسطہ خلق عالم وادم عليه السلام نور محمد صلى الله عليہ وسلم ست چنانچہ حديث در در صحيح دار دشده كہ اول ما خلق الله نورى وسائر مكونات علوى وسفلى ازاں  نور وازاں جوهر پاك پيدا شده-


-‘‘জেনে রেখো,  সর্বপ্রথম সৃষ্টি এবং কুল মাখলুকাত তথা আদম عليه السلام সৃষ্টিরও একমাত্র মাধ্যম নূরে মুহাম্মদী (ﷺ)। কেননা ‘সহীহ’ হাদিস শরীফে বর্ণিত হয়েছে- اول ما خلق الله نورى আল্লাহ্ তা‘য়ালা সর্বপ্রথম আমার নূর মোবারক সৃষ্টি করেছেন এবং উর্ধ্ব ও নিম্ন জগতের সবই তাঁরই নূরে পাক ও মৌলিক সত্ত্বা থেকেই সৃষ্ট।’’ ৭৪

➥{শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী : মাদারেজুন নবুয়্যাত : ২/২ পৃ.}



আল্লামা আবদুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী (رحمة الله) উক্ত হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন। আমাদের দেশের কতিপয় আলেম উক্ত হাদিসকে জাল বলে শায়খ দেহলভী (رحمة الله) থেকেও বড় মুহাদ্দিস সাজতে চান!



১৬. আল্লামা শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী (رحمة الله) বলেন, 


اما اول وى صلى الله عليہ وسلم اوليت درايجاد كہ اول ما خلق الله نورى اوليت در نبوت كہ كنت اويست نبيا وادم منجدل فى طينة واول در عالم در روز ميثاق الست بربكم قالوا بلى واول من امن بالله وبذالك امرت وانا واول المسلمين-  


-‘‘তিনি সৃষ্টির মধ্যে সর্বপ্রথম। রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, আল্লাহ্ তা‘য়ালা সর্বপ্রথম যা সৃষ্টি করেছেন, তাহলো আমারই নূর। তিনি নবুওয়াত প্রাপ্তির ক্ষেত্রেও সর্বপ্রথম। অতঃপর ইরশাদ ফরমান, আমি নবী ছিলাম যখন আদম (عليه السلام) এর সৃষ্টি সম্পন্ন হয়নি। তিনি নবীগণের নিকট থেকে অঙ্গীকার গ্রহণের দিন আল্লাহর বাণী ‘আমি কি তোমাদের রব নই?’ এর বেলায় সর্বপ্রথম ‘হ্যা’ বলে সম্মানিত উত্তরদাতা। তিনিই সর্বপ্রথম আল্লাহ তা‘য়ালার প্রতি ঈমান স্থাপনকারী।’’ ৭৫

➥{শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দেস দেহলভী : মাদারেজুন নবুওয়াত : ১/৬ পৃ.}



১৭. আল্লামা আব্দুল গণী নাবলূসী (رحمة الله) স্বীয় ‘হাদীকাতুন নাদিয়া’ নামক গ্রন্থে লিখেন, 


 كما ورد ان الله تعالى أول ما خلق نور محمد صلى الله عليه وسلم ثم خلق منه جميع الاشياء-


-‘‘যেমন বর্ণিত আছে যে,  নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তা‘য়ালা যা সর্বপ্রথম সৃষ্টি করেছেন তা হল নূরে মুহাম্মদী (ﷺ)। অতঃপর ঐ নূর হতে সমস্ত বস্তু সৃষ্টি করা হয়েছে।’’ ৭৬

➥{শায়খ ইউসুফ নাবহানী, জাওয়াহিরুল বিহার: ৩/৩১২ পৃ.}



১৮. আল্লামা ইবনুল হাজ্জ আল মালেকী (رحمة الله) [ওফাত.৭৩৭ হি.] সর্ব প্রথম সৃষ্টি সম্পর্কে লিখেন, 


فيه ايضا ، أى فى كتاب شفاء الصدور للخطيب أبى الربيع وَفِيهِ أَيْضًا أَنَّ أَوَّلَ مَا خَلَقَ اللَّهُ نُورُ مُحَمَّدٍ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - فَأَقْبَلَ ذَلِكَ النُّورُ يَتَرَدَّدُ وَيَسْجُدُ بَيْنَ يَدَيْ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ -


-‘‘তার মধ্যেও আছে অর্থাৎ আল্লামা খতিবে আবি রবীঈ (رحمة الله) তাঁর ‘‘সিফাউস সূদুর’’ গ্রন্থে বর্ণনা করেন,  নিশ্চয়ই সর্বপ্রথম ‘‘আল্লাহ্ তা‘য়ালা যা সৃষ্টি করেছেন তা হল মুহাম্মদ (ﷺ) এর নূর। অতঃপর ঐ নূর ভূ-কম্পিত হচ্ছিল এবং ‘‘আল্লাহ্ তা‘য়ালার নিকট তা সিজদা করতেছিল।’’ ৭৭

➥{আল্লামা ইবনুল হাজ্জ : আল মাদখাল : ২/৩২ পৃ.দারুল ইহইয়াউত তুরাস আল আরাবী,  বয়রুত।}



১৯. আল্লামা সৈয়দ মাহমুদ আলূসী আল বাগদাদী (رحمة الله) সর্বপ্রথম সৃষ্টি সম্পর্কে বলেন,   


وكونه صلى الله عليه وسلم رحمة للجميع باعتبار أنه عليه الصلاة والسلام واسطة الفيض الالهى على الممكنات على حسب القوابل ولذا كان نوره صلى الله عليه وسلم أول المخلوقات -


-‘‘রাহমাতুলি­ল আলামিন (ﷺ) হওয়া, এটা সমস্ত সৃষ্টির যোগ্যতা অনুসারে হয়ে থাকে। আর হুযূর (ﷺ) ফয়েজে এলাহী বিতরণ করেছেন সমস্ত সৃষ্টির উপরে, তাদের যোগ্যতা অনুসারে, আর তিনি যেহেতু সমস্ত সৃষ্টির উপরে ফয়েজ বিতরণ করেন সেহেতু তার নূর মোবারক হচ্ছে সর্বপ্রথম সৃষ্টি।’’ ৭৮

➥{আল্লামা সৈয়দ মাহমুদ আলূসী : তাফসীরে রুহুল মায়ানী: ১৭ পারা, সূরা আম্বিয়া, আয়াত:১০৭, পৃ.১০৫}


২০. আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী হানাফী (رحمة الله) [ওফাত.৮৫৫ হি.] সর্বপ্রথম সৃষ্টি সম্পর্কে লিখেন, 


وَقيل: أَو مَا خلق الله تَعَالَى نور مُحَمَّد صلى الله عَلَيْهِ وَسلم. قلت: التَّوْفِيق بَين هَذِه الرِّوَايَات بِأَن الأولية نسبي، وكل شَيْء قيل فِيهِ إِنَّه أول فَهُوَ بِالنِّسْبَةِ إِلَى مَا بعْدهَا.


-‘‘(সর্বপ্রথম সৃষ্টির বিষয়ে) কেউ কেউ বর্ণনা করেছেন, সর্বপ্রথম রাসূল (ﷺ)-এর নূরকে সৃষ্টি করা হয়েছে। আমি (আইনী) বলি, এই সমস্ত রেওয়ায়েতের সমাধান দেওয়া হয়েছে। এভাবে একটি বস্তু অন্য আরেক বস্তুর দিকে নেসবত বা সম্পৃক্ত করা হয়েছে এর মধ্যে নূরে মুহাম্মদী (ﷺ) সকল সৃষ্টির প্রথমে বা পূর্বে ছিল।’’ ৭৯

➥{আল্লামা বদরুদ্দীন মাহমুদ আইনী : উমদাতুল ক্বারী : ১৫/১০৯ পৃ. দারুল ইহইয়াউত তুরাস আল-আরাবী,  বয়রুত,  লেবানন।}



২১. আল্লামা মুহাম্মদ বিন মাহদী বিন আযিবাত আল হাসানী আল-আনযারী আল-ফাসী সূফী (رحمة الله) [ওফাত.১২২৪ হি.] তাঁর তাফসীরে সূরা যুখরুফের ৮১ নং আয়াত-


قُلْ إِنْ كَانَ لِلرَّحْمَنِ وَلَدٌ فَأَنَا أَوَّلُ الْعَابِدِينَ


-‘‘হে হাবিব! আপনি বলুন দয়াময় আল্লাহর যদি কোন সন্তান হতো তাহলে ইবাদাতকারীদের মধ্যে আমিই সর্ব প্রথম হতাম।’’ 


❏ এ আয়াতের ব্যাখ্যায় তিনি একটি হাদিস উল্লেখ করেন এভাবে-


قال جعفر الصادق رضى الله عنه أول ما خلق الله نور محمد صلى الله عليه وسلم قبل كل شىء


-‘‘হযরত ইমাম জাফর সাদেক (رضي الله عنه) বলেন,  সকল কিছুর পূর্বে আল্লাহ্ ‘নুরে মুহাম্মাদী’ কে সৃষ্টি করেছেন।’’ ৮০

➥{মুহাম্মদ বিন মাহদী আল ফাসী সূফী: তাফসীরে আল-বাহারুল মুদিদ ফি তাফসীরুল কুরআনুল মাজীদ : ৫/২৭৪ পৃ.,  সূরা যুখরুফ,  আয়াত.৮১ }



২২. আল্লামা আবূ আব্বাস সাভী আল-মালেকী (رحمة الله) [ওফাত.১২৪১ হি.] তাঁর কিতাবে লিখেন-


كَمَا قَالَ - ﷺ - لِجَابِرٍ - رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ -: أَوَّلُ مَا خَلَقَ اللَّهُ نُورَ نَبِيِّك مِنْ نُورِهِ الْحَدِيثُ


-‘যেমন রাসূল (ﷺ) হযরত জাবেরকে লক্ষ্য করে বলেন হে জাবের! সর্ব প্রথম তোমার নবীর নূরকে আল্লাহ্ সৃষ্টি করেছেন।’’ ৮১

➥{ইমাম  আবু আব্বাস সাভী আল-মালেকী: হাশীয়াতুল সাভী আ‘লা শরহে সগীর: ৪/৭৭৮ পৃ. দারুল,  মা‘রিফ, বয়রুত।}



২৩. ইমাম বদরুদ্দীন মাহমুদ আইনী হানাফী (رحمة الله) [ওফাত. ৮৫৫ হি.] তিনি তাঁর বুখারী শরীফের ব্যাখ্যা গ্রন্থে লিখেন-


وَحكى ابْن جرير عَن مُحَمَّد بن إِسْحَاق أَنه قَالَ: أول مَا خلق الله تَعَالَى النُّور


-‘‘ইমাম ইবনে জারীর আত-ত্ববারী (رحمة الله) তিনি তাবেয়ী মুহাম্মদ বিন ইসহাক (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, আর তিনি বলেছেন, আল্লাহ্ সর্ব প্রথম (রাসূলের) নূরকে সৃষ্টি করেছেন।’’  ৮২

➥{আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী : উমদাতুল ক্বারী : ১৫/১০৯ পৃ. }



২৪. ইমাম দিয়ার বকরী (رحمة الله) [ওফাত. ৯৬৬ হি.] তিনি তাঁর সিরাত গ্রন্থে লিখেন-


أن الله تعالى خلق نور محمد صلى الله عليه وسلم قبل خلق السموات والارض والعرش والكرسى واللوح والقلم والجنة والنار والملائكة والانس والجنّ وسائر المخلوقات


-‘‘নিশ্চয় মহান আল্লাহ্ নূরে মুহাম্মাদী (ﷺ) কে সৃষ্টি করেছেন আসমান, যমিন, আরশ, কুরসী, লাওহ, কলম, জান্নাত, জাহান্নাম, ফেরেশতা, মানব, জ্বিন এবং সমস্ত কুল মাখলুকাত সৃষ্টির পূর্বে।’’ ৮৩

➥{ইমাম দিয়ার বকরী : তারীখুল খামীস: ১/১৯ পৃ.}



২৫. এ সম্পর্কে হাফিজুল হাদিস আল্লামা ইমাম ইবনে হাজার হায়তামী মক্কী (رحمة الله) [ওফাত ৯৭৪ হিজরী] তার সুপ্রসিদ্ধ গ্রন্থে লিখেন,


لكن صحّ فى حديث مرفوع: أن الماء خلق قبل العرش فعلم أن أول الأشياء على الإطلاق النور المحمدى، ثم الماء، ثم العرش، ثم القلم لما علمت من حديث أول ما خلق الله القلم


-“মারফূ ছহীহ্ হাদিস হচ্ছে ‘আরশের পূর্বে পানি সৃষ্টি হয়েছে’। যেনে রেখ! প্রথম সৃষ্টি সমূদয় বস্তুর মধ্যে প্রথম সম্ভোধন হয়েছে ‘নূরে মুহাম্মদী, অত:পর পানি, অত:পর আরশ, অতঃপর কলম। যা আমরা ‘আল্লাহ প্রথমে কলম সৃষ্টি করেছেন’ এই হাদিস থেকে জানলাম।” 


(ইমাম ইবনে হাজার মক্কী: আশরাফুল অছাইল, ১ম খন্ড, ৩৭ পৃ:)



২৬. আল্লামা ইমাম হাফিজ ইবনে হাজার মক্কী (رحمة الله) আরো লিখেন,


واختلفوا فى أول المخلوقات بعد النور المحمدى، فقيل: العرش


-“নূরে মুহাম্মদী (ﷺ) এর পরে প্রথম সৃষ্টি কোনটি সেটা নিয়ে মতানৈক্য রয়েছে (অর্থাৎ নূরে মুহাম্মদী প্রথম সৃষ্টি)।” 


(ইমাম ইবনে হাজার মক্কী: আশরাফুল অছাইল ফি শরহে শামাইল, ১ম খন্ড, ৩৬ পৃ:)



২৭. আল্লামা হুছাইন ইবনে মুহাম্মদ দিয়ারবকরী (رحمة الله) (ওফাত ৯৬৬ হিজরী) তদীয় কিতাবে বলেছেন,


واختلفت الروايات فى أوّل المخلوقات ففى رواية نور رسول الله صلى الله عليه وسلم وفى رواية العقل وفى رواية القلم وفى رواية اللوح ومنشأ الاختلاف ورود الاخبار المختلفة فى أوّل ما خلق الله ففى خبر أوّل ما خلق الله نور محمد صلى الله عليه وسلم وفى الانس الجليل ان الله خلق أوّلا نور رسول الله صلى الله عليه وسلم قبل العرش والكرسى واللوح والقلم والسماء والارض والجنة والنار بألف ألف وستمائة وسبعين ألف سنة


-“প্রথম সৃষ্টির রেওয়াত গুলোর মধ্যে ভিন্নতা রয়েছে। এক রেওয়াতে আছে, রাসূল (ﷺ) এর নূর প্রথম সৃষ্টি। আরেক রেওয়াতে আছে, আকল, আরেক রেওয়াতে আছে কলম, আরেক রেওয়ায়েতে আছে লাওহ্। এভাবে আল্লাহ প্রথম কি সৃষ্টি করেছেন সেই রেওয়াত গুলোর মধ্যে ভিন্নতা রয়েছে। হাদিসের মধ্যে আছে, আল্লাহ তা’য়ালা রাসূল (ﷺ) এর নূর সৃষ্টি করেছেন। ‘ইনছে জালিল’ এ আছে, নিশ্চয় আল্লাহ তা’য়ালা আরশ-কুরছী, লাওহ-কলম, আসমান-জমীন, জান্নাত-জাহান্নাম সৃষ্টি করা ৭০ হাজার বছর পূর্বে আল্লাহর রাসূল (ﷺ) এর নূর সৃষ্টি করেছেন।” 


(আল্লামা দিয়ারবকরী: তারিখুল খামিস, ১ম খণ্ড, ১৭ পৃ:)



২৮. অনুরূপ আল্লামা মহিউদ্দিন আব্দুল কাদের ইবনে শায়েখ আব্দুল্লাহ আইদারুছ (رحمة الله) (ওফাত ১০৩৮ হিজরী) তদীয় কিতাবে বলেন,


فَعلم ان أول الْأَشْيَاء على الْإِطْلَاق النُّور المحمدي ثمَّ المَاء ثمَّ الْعَرْش ثمَّ الْقَلَم 


-“যেনে রেখ, নিশ্চয় প্রত্যেক কিছু প্রথম হওয়ার ব্যাপারে নিছবত হলেও প্রথম হল নবী পাক (ﷺ) এর নূর, অত:পর পানি, অত:পর আরশ, অত:পর কলম।” 


(নূরুছ ছাফির আনিল কারনিল আশির, ৮ নং পৃষ্ঠা)


২৯. যেমন এ বিষয়ে আল্লামা ইসমাঈল হাক্বী হানাফী (رحمة الله) [ওফাত ১১২৭ হিজরী] তদীয় কিতাবে বলেন,


ان السراج الواحد يوقد منه الف سراج ولا ينقص من نوره شىء وقد اتفق اهل الظاهر والشهود على ان الله تعالى خلق جميع الأشياء من نور محمد ولم ينقص من نوره شىء


-“নিশ্চয় একটি প্রদীপ থেকে হাজার হাজার প্রদীপ জ্বালালেও ঐ প্রদীপের আলো সামান্যতমও কমেনা। সকল উম্মত এ বিষয়ে একমত যে, আল্লাহ তা’য়ালা সব কিছুই মুহাম্মদ (ﷺ) এর নূর মোবারক দ্বারা সৃষ্টি করেছেন। অথচ তাঁর নূর মোবারক সামান্যতমও কমেনি।” 


(তাফছিরে রুহুল বয়ান, ৭ম খণ্ড, ১৯৭ পৃ:, সূরা আহযাব এর ৪৫-৪৬ নং আয়াতের তাফছিরে)



৩০. আল্লামা হাফিজ ইবনুল হাজ্জ আল-মালেকী (رحمة الله) [ওফাত ৭৩৭ হিজরী] তদীয় কিতাবে বলেন,


وَفِيهِ أَيْضًا أَنَّ أَوَّلَ مَا خَلَقَ اللَّهُ نُورُ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَقْبَلَ ذَلِكَ النُّورُ يَتَرَدَّدُ وَيَسْجُدُ بَيْنَ يَدَيْ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ 


-“অনুরূপ রয়েছে যে, নিশ্চয় সর্বপ্রথম আল্লাহ তা’য়ালা যা সৃষ্টি করেছেন তা হল মুহাম্মদ (ﷺ) এর নূর। অত:পর ঐ নূর ভূ-কম্পিত হচ্ছিল এবং আল্লাহ তা’য়ালার নিকট সেজদা করছিল।” 


(ইবনুল হাজ্জ: আল্ মাদখাল, ২য় খণ্ড, ৩২ পৃ:)



৩১. আল্লামা মুহাম্মদ ইবনে ইসমাঈল ইবনে ছিলাহ ছানআনী (رحمة الله) ওফাত ১১৮২ হিজরী তদীয় কিতাবে বলেন:


(كنت أول الناس في الخلق) لأن الله تعالى خلقه نوراً قبل خلق آدم


-“সৃষ্টি জগতে আমি প্রথম মানুষ ছিলাম’ কেননা আল্লাহ তা’লা তাকে নূররূপে আদমের পূর্বেই সৃষ্টি করেছেন।” 


(আল্লামা সান‘আনী: আত-তানভীর শরহে জামেউছ ছাগীর, ৮ম খণ্ড, ২৪১ পৃ: ৬৪০৫ নং হাদিসের ব্যাখ্যায়)



এ বিষয়ে আহলে হাদিস ও দেওবন্দী আলেমদের অভিমত:


৩২. দেওবন্দের অন্যতম শায়খুল হাদিস হুসাইন আহমদ মাদানী সাহেব স্বীয় গ্রন্থ ‘আস শিহাবুস সাকিব’ এর ২৭০ পৃষ্ঠায় লিখেন-


غرضيكہ حقيقت محمد صلى الله عليہ وسلم التحية واسطہ جملہ كمالات عالم عالميان ہے يہ هی معنى لولاك لما خلقت الافلاك اور اول ما خلق الله نورى اور انا نبى الانبياء كے ہیں -


-‘‘মোট কথা হলো সমস্ত কায়েনাত বা আলম হাকীকতে মুহাম্মদী তথা নূরে মুহাম্মদী থেকে সৃষ্ট। যেমন হাদিসে কুদসীতে আল্লাহ্  বলেন,  যদি আপনি না হতেন তবে আমি আসমান যমীন কিছুই সৃষ্টি করতাম না। রাসূল (ﷺ) এর বাণী : মহান আল্লাহ্ তা‘য়ালা সর্বপ্রথম আমার নূর মোবারক সৃষ্টি করেছেন এবং আরও বলেন,  আমি নবীদেরও নবী।’’ ৮৪

➥{মাওলানা হুসাইন আহমদ মাদানী : শিহাবুস সাকীব : ২৭০ পৃ. মাকতুবায়ে থানবী, ইউ.পি, দেওবন্দ, মুফতি আহমদ ইয়ার খান নঈমী : রিসালায়ে নূর : ২২ পৃ. মাকতুবায়ে গাউসিয়া, করাচি।}



৩৩. দেওবন্দীদের অন্যতম আলেম মুফতি শফি সাহেব (পাকিস্তান) বলেন, 


اور پہلا مسلمان ہو نے سے اس طرف بهى اشاره ہو سكتا ہے كہ مخلوقات ميں سب سے پہلے رسول كريم صلى الله عليہ وسلم كا نور مبارك پيدا كياگيا ہے اس كے بعد تمام آسمان وزمين اور مخلوقات وجود ميں آے ہيں جيسا كہ ايک حديث میں ارشاد ہے اول ما خلق الله نورى -(روح المعانى) 


-‘‘প্রথম মুসলমান বলতে এদিকেও ইঙ্গিত করা হতে পারে যে, সমগ্র সৃষ্টির মধ্যে সর্বপ্রথম রাসূলে করীম (ﷺ)-এর নূর মোবারক সৃষ্টি করা হয়েছে। তারপর সকল আসমান যমীন এবং সকল সৃষ্টি অস্তিত্ব লাভ করে। যেমন একটি হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, সর্বপ্রথম আল্লাহ্ তা‘য়ালা আমার নূর সৃষ্টি করেছেন। (রুহুল মায়ানী)’’  ৮৫

➥{মুফতী শফি : তাফসীরে মারিফুল কুরআন : ৩/৫১০ পৃ ইদারাতুন মা’আরিফ : করাচী, পাকিস্তান।}



উক্ত তাফসীর বাংলায় অনুবাদ করে সৌদি সরকার দিচ্ছেন বাংলায় অনুবাদ করেন মাওলানা মুহাম্মদ মহিউদ্দিন খাঁন। বাংলা মা‘রিফুল কোরআনের ৪২৮ পৃষ্ঠায় দেখুন।



৩৪. আহলে হাদিসের অন্যতম আলেম কাযি শাওকানী বলেন, 


أَوَّلُ الْمُسْلِمِينَ أَجْمَعِينَ، لِأَنَّهُ وَإِنْ كَانَ مُتَأَخِّرًا فِي الرِّسَالَةِ فَهُوَ أَوَّلُهُمْ فِي الْخَلْقِ، وَمِنْهُ قَوْلُهُ تَعَالَى: وَإِذْ أَخَذْنا مِنَ النَّبِيِّينَ مِيثاقَهُمْ وَمِنْكَ وَمِنْ نُوحٍ


-‘‘হুযূর করীম (ﷺ) সকল মুসলমানের মধ্যে সর্বপ্রথম। কেননা,  তিনি রাসূল হিসেবে পরে আবির্ভূত হলেও সৃষ্টির মধ্যে সর্বপ্রথম। আল্লাহ্ তা‘য়ালার উক্তি, স্মরণ করুন! যখন আমি মজবুত ওয়াদা নিয়েছি নবীগণ থেকে, আপনার নিকট থেকে এবং নূহ (عليه السلام) থেকে। এতে ঐ কথাই বিবৃত হয়েছে।’ ৮৬

➥{কাজী শাওকানী : ফতহুল কাদীর : ২/২১১ পৃ. দারুল হাদিস কায়রো, প্রকাশকাল ২০০২ খ্রী:}



৩৫. দেওবন্দীদের অন্যতম আলেম রশিদ আহমদ গাঙ্গুহী সাহেবকে প্রশ্ন করা হয় এভাবে 


سوال: اول ما خلق الله نورى اور لولاك لما خلقت الافلاك يہ دونوں حديثيں صحيح حديثيں ہیں يا وضعى ؟ كو وضعى بلاتا ہے-


প্রশ্নঃ সর্বপ্রথম আল্লাহ্ তা‘য়ালা যা সৃষ্টি করেছেন,  তা হল আমার নূর এবং আপনাকে সৃষ্টি না করলে আসমানসমূহ এবং যমীন কোন কিছুই সৃষ্টি করতাম না। এ মর্মে বর্ণিত হাদিসগুলো বিশুদ্ধ, নাকি জাল,  যায়েদ এগুলো জাল বলছে। এ প্রশ্নের উত্তরে গাঙ্গুহী সাহেব বলেন,  


جواب: يہ حديثيں كتب صحاح ميں موجود نہيں ہيں – مگر شيخ عبد الحق رحمة الله نے اول ما خلق الله نورى كو نقل كيا ہے اور بتايا ہے كہ اس كى كچہ اصل ہے فقط و الله تعالى اعلم -


-‘‘এ হাদিসগুলো সিহাহ (ছয়টি বিশুদ্ধ কিতাব) এর মধ্যে নেই। কিন্তু শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী (رحمة الله) সর্বপ্রথম রাসূল (ﷺ) এর নূর মোবারক সৃষ্টি করা হয়েছে’’ উক্ত হাদিসটি বর্ণনা করে বলেছেন যে,  এ হাদিসটির ভিত্তি আছে।’’ ৮৭

➥{রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী: ফতোয়ায়ে রশিদিয়া : ১/২৭৮ পৃ.}



৩৬. মাওলানা আশরাফ আলী থানবী সাহেব এর অন্যতম গ্রন্থ নশরুত্তীব এর ২৫ পৃষ্ঠায় জাবের (رضي الله عنه) এর বর্ণিত হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেন,  


اس حديث سے نور محمدى كا حقيقة سب سے پھلے پیدا ہونا ثابت ہوا كيونكہ جن چیزوں كى بارے ميں احادیث میں پھلے پیدا ھونا ایا ھے ان سب چیزوں کا نور محمدی کے بعد پیدا ھونا اس حدیث سے معلوم ھوتا ھے- 


-‘‘এ হাদিস (অর্থাৎ ইমাম আব্দুর রাজ্জাক কর্তৃক হযরত জাবের বিন আব্দুল্লাহ (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত) দ্বারা বাস্তবিক পক্ষে সর্বপ্রথম নূরে মুহাম্মদী সৃষ্টি হওয়া প্রমাণিত। কেননা যেসব সৃষ্টির ক্ষেত্রে ‘প্রথম সৃষ্টি’ বলে হাদিসে বর্ণনায় এসেছে। ওইসব সৃষ্টি ‘নূরে মুহাম্মদী’ থেকে পরে সৃষ্টি হবার বিষয়টি আলোচ্য হাদিস দ্বারা নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত।  ৮৮

➥{মাওলানা আশরাফ আলী থানবী : নশরুততীব ফী যিকরিনবীঈল হাবীব : পৃ. ২৫}



৩৭. রাসূল (ﷺ)‘র নূর মোবারক সর্ব প্রথম সৃষ্টি বিষয়ে দেওবন্দের শাইখুল হাদিস মাওলানা আনওয়ার শাহ কাশ্মীরী‘র [ওফাত.১৩৫৩ হি.] তিনি তাঁর লিখিত তিরমিযি শরীফের ব্যাখ্যা গ্রন্থ ‘আরফুস্-সাযী শরহে সুনানে তিরমিযি’ গ্রন্থে সর্বপ্রথম সৃষ্টি সম্পর্কে লিখেন-


أن أول المخلوقات نور النبي - صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ -، ذكره القسطلاني في المواهب بطريق الحاكم والترجيح لحديث النور على حديث الباب.


-‘‘নিশ্চয় সর্বপ্রথম সৃষ্টি হল নূরে নাবী (ﷺ) যেটি ইমাম কাসতাল্লানী (رحمة الله) তাঁর মাওয়াহেবে লাদুন্নিয়া গ্রন্থে হাকেমের সূত্রে উল্লেখ করেছেন। আর তিনি সেখানে সবগুলো বর্ণনার মধ্যে (কলম/নূরে মুহাম্মদী/আক্বল সর্বপ্রথম সৃষ্টি বিভিন্ন বর্ণনার মধ্যে) নূরের হাদিসকে প্রাধান্য দিয়েছেন।’’ ৮৯

➥{মাওলানা আনোওয়ার শাহ কাশ্মীরী (১৩৫৩হি.), আরফুস সাযী শরহে সুনানে তিরমিযি, ৩/৩৯৪ পৃ. হাদিস নং. ২১৫১, দারুল তুরাসুল আরাবী, বয়রুত, লেবানন, প্রথম প্রকাশ. ১৪২৫ হি./২০০৪ ইং খৃ.}



৩৮. রাসূল (ﷺ) নূর হওয়া প্রসঙ্গে বর্তমান বাংলাদেশের দেওবন্দী সুপ্রসিদ্ধ শাইখুল হাদিস আল্লামা মুফতি মনসূরুল হক যিনি অসংখ্য কওমী দেওবন্দী আলেমদের উস্তাদ। তিনি সুপ্রসিদ্ধ কওমী দেওবন্দী পত্রিকা মাসিক ‘আদর্শ নারীর’ ২০১২ ঈসায়ীর জানুয়ারী তথা রবিউল আউয়ালের সংখ্যার ‘‘রাসূলুল্লাহ (সা.) সারা জাহানের জন্য রহমত’’ শিরোনামের ৩ পৃষ্ঠায় লিখেছেন-‘‘এই ভূমণ্ডল, নভোমণ্ডল এবং এতদুভয়ের যাবতীয় বস্তুর সৃষ্টি রাসূলে কারীম (সা.)-এর সৃষ্টির বরকতমণ্ডিত। তাঁর নূরে রহমত পরশিত করেই  এসব কিছু সৃষ্টি করা হয়েছে। সর্বপ্রথম মহান আল্লাহ মহানবী (সা.) এর নূরকে সৃষ্টি করেন। (মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক) তারপর সেই নূরকে কেন্দ্র করে অন্যান্য সকল কিছু, তথা আসমান-জমিন, চন্দ্র-সূর্য, গ্রহ-নক্ষত্র, পাহাড়-পর্বত, নদী-নালা, আলো-বাতাস, সমস্ত জীন-ইনসান এক কথায় সমগ্র জগতের সৃষ্টি হয়। (ইবনে আসাকির)’’ সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! আপনারাই লক্ষ করুন মনসূরুল হক সাহেব কি সুন্দর করে নবিজির সৃষ্টি বর্ণনা দিলেন। আল্লাহ তার অনুসারীদের হিদায়াত নসিব দান করুক।



৩৯. মওলানা আমিনুল ইসলাম তার ‘‘নূরে নবী (ﷺ)’’ কিতাবে রাসূল (ﷺ) নূরের সৃষ্টি মর্মে ‘নূরে মুহাম্মদী (দঃ)’ নামক একটি অধ্যায় তৈরী করেছেন। তিনি এ অধ্যায়ের শুরুতেই উল্লেখ করলেন-‘‘এমনকি, সমগ্র সৃষ্টি-জগতের মধ্যে সর্ব প্রথম যাঁর সৃষ্টি তিনিই আমাদের প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম।’’ ৯০

➥{মাওলানা আমিনুল ইসলাম, নূরে নবী (দ.), প্রথম খণ্ড, ৫ পৃষ্ঠা, আল বালাগ পাবলিকেশন্স, ঢাকা, জুন, ১৯৯৯ ইং, রবিউল আউয়াল, ১৪২০ হি.}



৪০. এ বিষয়ে বি-বাড়িয়ার বড় হুযুর নামে খ্যাত মুফতি সিরাজুল ইসলাম এর লিখিত ‘‘গাওয়াহেরে সিরাজিতে’’ ৬৯ পৃষ্ঠায় লিখেছেন-‘‘হুযুর (ﷺ) হলেন সারা সৃষ্টির কারণ বা উসিলা। সর্ব প্রথম নবিজী (ﷺ)-এর নূর মোবারক সৃষ্টি করা হয়েছে। যেমন হুযুর (ﷺ) ইরশাদ করেন-


اول ما خلق الله نورى وكل خلائق من نورى وانا من نور الله


-‘‘আল্লাহ পাক সর্ব প্রথম আমার নূর মোবারক সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর আমার নূর হতে সমস্ত কিছু সৃষ্টি করেছেন। আমি হলাম আল্লাহর নূর।’’  বি-বাড়ীয়ার কওমী আলেমদেরকে তার থেকে শিক্ষা নিয়ার অনুরোধ রইল।

Top