○ অধ্যায়ঃ সালাত-রুকূ (রসূলাল্লাহ [ﷺ] সামনে পিছনে দেখেন)

___________________________________________

❏ দরসে হাদীসঃ [হাদীস নং- (৮০৯)]

○ অধ্যায়ঃ [রুকূ] (টীকাঃ ১)

[ﻋﻦ ﺍﻧﺲ ﻗﺎﻝ ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﷺ ﺍﻗﻴﻤﻮﺍ ﺍﻟﺮﻛﻮﻉ ﻭﺍﻟﺴﺠﻮﺩ ﻓﻮﺍﻟﻠﻪ ﺍﻧﻰ ﻻﺭﻛﻢ ﻣﻦ ﺑﻌﺪﻯ . ‏( ﻣﺘﻔﻖ ﻋﻠﻴﻪ )]

হযরত আনাস [ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ] হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,

রসূলাল্লাহ [ﷺ] এরশাদ করেছেনঃ

অর্থাৎ "রুকূ' ও সাজদা পরিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করো। আল্লাহ্'রই শপথ! আমি তোমাদেরকে আমার পেছন থেকেও দেখতে পাই।" (টীকাঃ ২)

[মুসলিম, বোখারী]

□ উক্ত হাদীস শরীফের ব্যাখায় বলা হয়েছেঃ


___________________________________

◇ টীকাঃ ১.

রুকূ'র আভিধানিক অর্থ হলো- 'নত হওয়া' অথবা 'পিঠ বাঁকা করা'। পরিভাষায় কখনো 'বিনয় প্রকাশ ও নিজেকে ছোট করা'কে রুকূ' বলা হয়। কখনো পূর্ণ রাক্'আত বরং পূর্ণ নামাযকেও রুকূ' বলা হয়। মহান রব এরশাদ করেনঃ

[ﻭَﺍﺭْﻛَﻌُﻮﺍ ﻣَﻊَ ﺍﻟﺮَّﺍﻛِﻌِﻴﻦَ]

(যারা রুকূ' করে তাদের সাথে রুকূ' করো। ৩:৪৩)

সঠিক অভিমত হচ্ছে- পূর্ববর্তী উম্মতের নামাযগুলোতে 'রুকূ' ছিলো না। 'রুকূ' শুধু এ উম্মতের নামাযের বৈশিষ্ট্য। মহান রব হয়রত মরিয়মের উদ্দেশ্যে এরশাদ করেনঃ

[ﻭَﺍﺳْﺠُﺪِﻱ ﻭَﺍﺭْﻛَﻌِﻲ]

(এবং তুমি সাজদাহ্ করো ও রুকূ' করো। ২:৪৩)

ওখানে রুকূ' মানে বিনয় ও নম্রতা। রুকূ' প্রত্যেক রাক্'আতের 'রুকন' (মৌলিক ফরয)। তাই রুকূ' পাওয়া গেলে 'রাক্'আত' পাওয়া যায়।

◇ টীকাঃ ২.

প্রকাশ থাকে যে, এতে ক্বিয়ামত পর্যন্ত সমস্ত মুসলমানকে সম্বোধন করা হয়েছে। অর্থাৎ হে আমার উম্মতগণ! নামায শুদ্ধভাবে সম্পন্ন করো। তোমরা যখনি যেখানে থাকো না কেন, আমি তোমাদের নামাযসমূহ দেখতে পাই। কোন কোন বর্ণনায় আছে যে, আমার কাছে তোমাদের রুকূ' ও সাজদা, অন্ততের বিনয় ও নম্রতা গোপন নয়। বুঝা গেলো যে, হুযূর [ﷺ] আমাদের হৃদয়ের ভেদ ও রহস্য সম্পর্কেও অবগত। আর সম্মাণিত নবী ও ওলীগণ ভবিষ্যতে সংঘটিতব্য ঘটনাবলী উপস্থিত বস্তুর মতোই দেখতে পান। হুযূর [ﷺ] মি'রাজে দোযখ ও জান্নাতে যথাক্রমে আযাব ও সাওয়াব-প্রাপ্তদেরকে তাদের স্ব-স্ব ঠিকানায় দেখেছেন। অথচ, এ আযাব ও সাওয়াব ক্বিয়ামতের পরে সংঘটিত হবে। আর এটাও হতে পারে যে, এতে সম্বোধন সাহাবীদেরকে করা হয়েছে আর ﺑﻌﺪ (বা'দু) মানে ﺧﻠﻒ বা 'পেছনে'।

অর্থাৎ ওহে সাহাবীগণ! তোমরা যে কোন কাতারে এবং যেখানেই থাকো না কেন আমার দৃষ্টি কিন্তু তোমাদের নামাযগুলো দেখতে পায়।

এতে বুঝা গেলো যে, হুযূর [ﷺ] -এর দৃষ্টি আলো ও আঁধারে দৃশ্যমান ও গোপন সবকিছু অনায়াসেই দেখতে পায়।

হযরত ঈসা [ﻋﻠﻴﻪ ﺍﻟﺴﻼﻡ] এরশাদ করেছিলেন, "তোমরা ঘরে যা কিছু খেয়ে কিংবা সঞ্চয় করে আসো তা' আমি তোমাদেরকে বলে দিতে পারি।" এটাও হুযূর [ﷺ] -এর মু'জিজা। 'মিরক্বাত' প্রণেতা বলেছেন, "এ হাদীস শরীফ সেটার প্রকাশ্য অর্থে ব্যবহৃত। এতে কোন প্রকারের ভিন্ন ব্যাখ্যার প্রয়োজন নেই।


□ 'মা বাইনা বায়তি ওয়া-মিম্বরী রওদাতুম্ মিন রিয়াদিল্ জান্নাহ্'-এর ব্যাখাঃ

❏ দরসে হাদীসঃ 【হাদীস নং- (৬৪৩)】


○ অধ্যায়ঃ 【মসজিদগুলো ও নামাযের স্থানসমূহ】

【 ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﻫﺮﻳﺮﺓ ﻗﺎﻝ ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﷺ ﻣﺎ ﺑﻴﻦ ﺑﻴﺘﻲ ﻭﻣﻨﺒﺮﻯ ﺭﻭﺿﺔ ﻣﻦ ﺭﯾﺎﺽ ﺍﻟﺠﻨﺔ ﻭﻣﻨﺒﺮﯼ ﻋﻠﯽ ﺣﻮﺿﯽ . ‏( ﻣﺘﻔﻖ ﻋﻠﻴﻪ )】

হযরত আবু হােরায়রা [ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ] থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [ﷺ] এরশাদ ফরমানঃ

❝আমার ঘর ও আমার মিম্বরের মধ্যবর্তী স্থান (টীকাঃ ১) জান্নাতের বাগানগুলাের মধ্যে একটি বাগান। (টীকাঃ ২) আর আমার মিম্বর আমার হাওযের উপর অবস্থিত।❞ (টীকাঃ ৩)

【মুসলিম, বােখারী】

□ উক্ত হাদীস শরীফের ব্যাখায় বলা হয়েছেঃ


___________________________________

১. 【আমার ঘর ও আমার মিম্বরের মধ্যবর্তী স্থান】

◇ টীকাঃ ১. কোন কোন বর্ণনায় আছে- ‘আমার কবর ও আমার মিম্বরের মধ্যবর্তী স্থান।' কোন কোন বর্ণনায় আছে- ‘আমার হুজুরা ও মুসাল্লার মধ্যবর্তী স্থান।' কিন্তু সবকটির অর্থ একটি- কেননা, হুযূর-ই আনওয়ার [ﷺ]-এর ঘর মুবারক, হুজুরা শরীফ এবং কবর-ই আনওয়ার একই জায়গায় আর মুসাল্লা অর্থাৎ ‘মিহরাবুন্নবী’ ও ‘মিম্বর শরীফ' একেবারে মিলিত। যেমন যিয়ারতকারীরা জানেন।

২. 【জান্নাতের বাগানগুলাের মধ্যে একটি বাগান।】

◇ টীকাঃ ২. অর্থাৎ এ স্থান প্রথমে জান্নাতের বাগান ছিলাে, সেখান থেকে আনা হয়েছে। আল্লাহ্ তা'আলা হযরত ইব্রাহীম খলীল [ﻋﻠﻴﻪ ﺍﻟﺴﻼﻡ]'কে জান্নাতের 'হাজরে আস্ওয়াদ' (কালাে পাথর) দান করেছেন, আর আপন হাবীবের জন্য জান্নাতের বাগান প্রেরণ করেছেন।

অথবা এ জায়গা কাল ক্বিয়ামতে হুবহু জান্নাতের বাগান হবে। অথবা যে ব্যক্তি এখানে এসে গেছে, সে যেনাে জান্নাতের বাগানে প্রবেশ করেছে। অর্থাৎ এর বরকতে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। অথবা এ স্থান জান্নাতের বাগানের মুখােমুখি অবস্থিত। স্মর্তব্য যে, হুযুর-ই আন্ওয়ার [ﷺ] আল্লাহ'র যিকরের গােলাকার বৈঠকগুলাে ও মু'মিনের কবরকে জান্নাতের বাগান বলেছেন। ওখানেও বহু ব্যাখ্যা রয়েছে।

৩. 【আর আমার মিম্বর আমার হাওযের উপর অবস্থিত।】

◇ টীকাঃ ৩. এখানেও ওই ব্যাখ্যাবলী রয়েছে- এ স্থান প্রথমে আমার হাউযের উপর ছিলাে। সেখান থেকে এখানে আনা হয়েছে। অথবা ভবিষ্যতে হাউযের কিনারায় থাকবে। অথবা এখনাে হাউযের কিনারায় রয়েছে। অথবা এখন হাউজের কিনারার মুখােমুখি অবস্থিত। অথবী যে ব্যক্তির সেটায় চুমু খাওয়ার সৌভাগ্য হলাে, সে যেনাে আমার হাউজের উপর (পাশে) পৌছে গেলাে।

স্মর্তব্য যে, ‘মিম্বর' মানে ‘মিম্বরের স্থান'। ওখানে মিম্বর যেমনি থাকুক না কেন! তাছাড়া, কা'বার কালাে পাথর ও রুকনে ইয়ামানী এবং মদীনা তাইয়্যেবার এ জায়গা যদিও জান্নাত থেকে এসেছে, কিন্তু সেখানকার ওই ঔজ্জ্বল্য ও সৌন্দর্য বিলীন করে দেওয়া হয়েছে।


□ হুযূর নামাযরত অবস্থায় সবার কথা শুনেন ও সবাইকে দেখেন;

এটা বিনয় ও একাগ্রতার পরিপন্থী নয়ঃ

❏ দরসে হাদীসঃ [হাদীস নং- (৮১৮)]


○ অধ্যায়ঃ [রুকূ']

[ﻭﻋﻦ ﺭﻓﺎﻋﺔ ﺑﻦ ﺭﺍﻓﻊ ﻗﺎﻝ ﻛﻨﺎ ﻧﺼﻠﻰ ﻭﺭﺁﺀ ﺍﻟﻨﺒﻰ ﷺ ﻓﻠﻤﺎ ﺭﻓﻊ ﺭﺃﺳﻪ ﻣﻦ ﺍﻟﺮﻛﻌﺔ ﻗﺎﻝ ﺳﻤﻊ ﺍﻟﻠﻪ ﻟﻤﻦ ﺣﻤﺪﻩ ﻓﻘﺎﻝ ﺭﺟﻞ ﻭﺭﺁﺀﻩ ﺭﺑﻨﺎ ﻭﻟﻚ ﺍﻟﺤﻤﺪ ﺣﻤﺪﺍ ﻛﺜﻴﺮﺍ ﻃﻴﺒﺎ ﻣﺒﺎﺭﻛﺎ ﻓﻴﻪ ﻓﻠﻤﺎ ﺍﻧﺼﺮﻑ ﻗﺎﻝ ﻣﻦ ﺍﻟﻤﺘﻜﻠﻢ ﺍﻧﻔﺎ ﻗﺎﻝ ﺍﻧﺎ ﻗﺎﻝ ﺭﺍﻳﺖ ﺑﻀﻌﺔ ﻭﺛﻠﺜﻴﻦ ﻣﻠﻜﺎ ﻳﺒﺘﺪﺭﻭﻧﻬﺎ ﺍﻳﻬﻢ ﻳﻜﺘﺐ ﺍﻭﻝ . ‏] - ‏( ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻯ )

হযরত রিফা'আহ ইবনে রাফি' [ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ] (টীকাঃ ১) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা নবী করীম [ﷺ]'র পেছনে নামায পড়ছিলাম। (টীকাঃ ২) যখন তিনি আপন শির মুবারক রুকূ' হতে উঠালেন। তখন বললেন, 'সামি'আল্লা-হু লিমান হামিদাহ্' (আল্লাহ আপন প্রশংসাকারীদের প্রশংসা শুনেন), তখন তাঁর পেছনে এক ব্যক্তি বললেন, "রাব্বানা-ওয়া লাকাল হামদু হামদান কাসী-রান তায়্যিবাম্ মুবা-রাকান ফী-হি)। অর্থাৎ হে আমাদের রব! তোমারই জন্য প্রশংসা- অনেক পূত-পবিত্র বরকতময় প্রশংসা। অতঃপর যখন (হুযূর) নামায সমাপ্ত করলেন, তখন এরশাদ করলেন, "এখন এ শব্দগুলো কে বলেছে?" (টীকাঃ ৩) লোকটি আরয করলেন, 'আমি বলেছি।' হুযূর এরশাদ করলেন, "আমি ত্রিশ অপেক্ষা বেশী ফিরিশতাদেরকে দেখছি, তারা ত্বরা করছিলো কে এ (কলেমা)গুলো প্রথমে লিখবে।" (টীকাঃ ৪)

[বোখারী]

□ উক্ত হাদীস শরীফের ব্যাখায় বলা হয়েছেঃ


___________________________________

◇ টীকাঃ ১.

তিনি আনসারী, বদরী সাহাবী। তাঁর পিতা আনসারীদের 'নক্বীব' (দলের) প্রধান ছিলেন। তিনি ৪১ হিজরীতে ওফাত পান।

◇ টীকাঃ ২.

খুব সম্ভব পাঞ্জেগানা নামাযগুলো থেকে কোন নামায ছিলো। কেননা, জামাতের গুরুত্ব এসব নামাযে দেওয়া হতো। তাহাজ্জুদ নামাযের যদিও কখনো জমা'আত হয়েছে, কিন্তু তাও বিশেষ ব্যবস্থাপনায় হতো না।

◇ টীকাঃ ৩.

প্রতীয়মান হলো যে, নবী করীম [ﷺ] নামাযরত অবস্থায়ও যেমনিভাবে সাহাবা-ই কেরাম ও ফিরিশতাদের অবস্থাদি দেখতেন, তেমনিভাবে তাঁদের পঠিত বাক্যগুলোও শুনতেন। আর তাঁর এ শুনা ও দেখা নামাযের 'খুশূ' ও 'খূদ্বূ' (বিনয় ও একাগ্রতা) -এর মধ্যে বাধা সৃষ্টি হতো না। কেননা, ওই হৃদয় মুবারককে মহান স্রষ্টা এমনভাবেই সৃষ্টি করেছেন যে, একই সময়ে স্রষ্টার কথাও শুনেন, সৃষ্টির কথাও। স্রষ্টা হতে নিচ্ছিলেন এবং সৃষ্টিকে দিচ্ছিলেন। একটির প্রতি মনোনিবেশ করা অপরটির দিক থেকে অমনোযোগী করে দেয় না। তাঁর অবস্থা তো এটা ছিলো যে,

[মূল কিতাবে এ স্থানে উর্দূ দ্রব্যষ্ট]

(অর্থাৎ এদিকে আল্লাহ্'র সাথে মিলিত, ওদিকে মাখ্লুক্বদের নিয়ে ব্যস্ত। মহান স্রষ্টা ও সৃষ্টির মধ্যবর্তী ঘনিষ্ট সম্পর্কের রহস্যের প্রতি ইঙ্গিত দেয় ﻣﺤﻤﺪ শব্দের তাশদীদ বিশিষ্ট ﻡ বর্ণটি।) এও হতে পারে যে, লোকটি শেষ কাতারে ছিলো, কিন্তু হুযূর [ﷺ] তার নিন্ম স্বরটিও শুনতে পান। হযরত সুলায়মান [ﻋﻠﻴﻪ ﺍﻟﺴﻼﻡ] তিন(০৩) মাইল দূরত্ব থেকে পিপীলিকার শব্দও শুনেছিলেন।

◇ টীকাঃ ৪.

অর্থাৎ প্রত্যেক ফিরিশতা এটা চাচ্ছিলেন যে, প্রথমে তিনি লিখে তা মহান রবের দরকারে পেশ করবেন, যাতে তিনি আল্লাহ্'র নৈকট্য বেশী লাভ করেন। স্মর্তব্য যে, এ সব ফিরিশতা আমলনামা লিপিবদ্ধকারী ফিরিশতাগণ ব্যতীত অন্য ফিরিশতা ছিলেন। কেননা, আমল লিখক মাত্র দু'জন ফিরিশতা একজন পুণ্য লিপিবদ্ধকারী আর অন্যজন পাপ লিপিবদ্ধকারী। তাঁদের এ তাড়াহুড়া ওইসব বাক্যের মহত্ব প্রকাশের জন্যই। অন্যথায় ফিরিশতাগণ সবকিছু লিখতে এক সেকেন্ড সময়ও লাগে না।

এ হাদীস শরীফ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, ফিরিশতাদের কতেক আমল নিয়ে যাওয়ার ফলে বিশেষ পুরষ্কার লাভ হয়। এটাও জানা গেলো যে, ফরয নামাযগুলোর 'কাওমা'য় (রুকূ' থেকে দাঁড়িয়ে) এ কলেমাগুলো বলা বৈধ। স্মর্তব্য যে, হুযূর [ﷺ], সেটা কে বলেছেন তা জিজ্ঞেস করা, তিনি নিজে জানার জন্য নয়; বরং তা লোকদের সামনে প্রকাশ করার জন্য ছিলো।


রুকূ' ও সাজদা ধীরস্থিরতার সাথে সম্পন্ন করা


শাফে'ঈদের মতে 'ফরয' আর হানাফীদের মতে- ওয়াজিবঃ

ﻭَﻋَﻦ ﺷَﻘِﻴﻖ ﻗَﺎﻝَ ﺍِﻥْ ﺣُﺬَﻳْﻔَﺔَ ﺭَﺃﻯ ﺭَﺟﻼً ﻻ ﻳُﺘﻢ ﺭُﻛُﻮﻋَﻪ ﻭَﻻ ﺳَﺠﻮﺩَﻩ

হযরত শাক্বীক্ব [ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ] হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,

❝হযরত হােযায়ফাহ্ এক ব্যক্তিকে দেখলেন, যে আপন রুকূ' ও সাজদা পুরােপুরিভাবে সম্পন্ন করছে না।

ﻓَﻠَﻤَّﺎ ﻗَﻀﻰ ﺻﻠﻮﺗﻪ ﺩَﻋَﺎﻩُ ﻓَﻘَﺎﻝَ ﻟَﻪ ﺣُﺬَﻳْﻔَﺔ ﻣَﺎ ﺻَﻠَّﻴْﺖَ

যখন সে আপন নামায শেষ করলাে, তখন তাকে ডাকলেন, আর তাকে হযরত হােযায়ফাহ্ বললেন, তুমি তাে নামায পড়াে নি।

ﻗَﺎﻝَ ﻭَﺃَﺣﺴَﺒﻪ ﻗَﺎﻝَ ﻭَﻟﻮﻣﺖ ﻣﺖَ ﻋَﻠﻰ ﻏﻴْﺮ ﺍﻟﻔﻄﺮَﺓِ ﺍﻟﺘﻲ ﻓَﻄَﺮَ ﺍﻟﻠﻪُ ﻣُﺤَﻤَّﺪًﺍ ﷺ .

তিনি (বর্ণনাকারী) বললেন, আমার মনে আছে যে, তিনি (হযরত হােযায়ফাহ্) এটাও বলেছেন, যদি তুমি মরে যাও, তবে তুমি ওই তরীকার বিরােধিতায় মরবে, যার উপর আল্লাহ তা'আলা হুযুর [ﷺ]'কে সৃষ্টি করেছেন।❞

: ﺭَﻭَﺍﻩُ ﺍﻟْﺒُﺨﺎﺭﺉ

[বােখারী]

উক্ত হাদিসের ব্যাখ্যায় 'মির'আত শরহে মিশকাত'-এ উল্লেখ হয়েছেঃ

________________________________________________________

১. 【হযরত শাক্বীক্ব [ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ]】

টীকা- ১. তাঁর নাম শাক্বীক্ব ইবনে আবূ সালমাহ্। উপনাম আবু ওয়া-ইল। তিনি বনূ আসাদ গােত্রের লােক। তিনি হুযুরের যুগ পেয়েছেন; কিন্তু হুযূরের সাক্ষাত পান নি। তাই তিনি মহা সম্মানিত তাবে'ঈ। খােলাফা-ই রাশেদীন হতে হাদীস সংগ্রহ করেন। হিজরী ৯৯ সালে ওফাত পান। (তাহযীব ও ইকমাল)

২. 【হযরত হােযায়ফাহ্ এক ব্যক্তিকে দেখলেন, যে আপন রুকূ' ও সাজদা পুরােপুরিভাবে সম্পন্ন করছে না।】

টীকা- ২. অর্থাৎ সেগুলাে ধীরস্থিরতার সাথে সম্পন্ন করছিলো না। ধীরস্থিরতা শাফে'ঈ মাযহাবের অনুসারীদের মতে 'ফরয' আর হানাফীদের মতে 'ওয়াজিব'।

৩. 【যখন সে আপন নামায শেষ করলাে, তখন তাকে ডাকলেন, আর তাকে হযরত হােযায়ফাহ্ বললেন, তুমি তাে নামায পড়াে নি।】

টীকা- ৩. অর্থাৎ ‘পরিপূর্ণভাবে পড়ােনি'। (হানাফী)

'শুদ্ধভাবে পড়ােনি'। (শাফেঈ) )

৪. 【তিনি (বর্ণনাকারী) বললেন, আমার মনে আছে যে, তিনি (হযরত হােযায়ফাহ্) এটাও বলেছেন, যদি তুমি মরে যাও, তবে তুমি ওই তরীকার বিরােধিতায় মরবে, যার উপর আল্লাহ তা'আলা হুযুর [ﷺ]'কে সৃষ্টি করেছেন।】

টীকা- ৪. অর্থাৎ যদি তুমি অসম্পূর্ণ ( ﻧﺎﻗﺺ ) নামায পড়ায় অভ্যস্থ হও, তবে তুমি নবীগণের সুন্নাতের বিরােধী হয়ে মরবে। অথবা যদি তুমি এ দোষকে ভালাে জেনে থাকো, তবে তােমার মৃত্যু (শেষ পরিণতি) কুফরের উপর হবে।

‘ফিতরাত' ( ﻓﻄﺮﺕ ) দ্বীন-ই ইসলামকেও বলা হয় । আর হুযূর সাল্লাল্লাহু তা ' আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ' র জন্মগত পবিত্র স্বভাবকে এবং নবীগণের সুন্নাতকেও ‘ফিতরাত' ( ﻓﻄﺮﺕ ) বলে।

সম্মানিত সূফীগণ বলেন, যে ব্যক্তি সুন্নাত বর্জন করায় অভ্যস্থ হয়, তার শেষ পরিণাম মন্দ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। আর যে ব্যক্তি কোন সুন্নাতকে তুচ্ছ মনে করে, সে কাফির। এটার পক্ষে প্রমাণ হিসেবে ক্বোরআনের বহু আয়াতও রয়েছে এবং এ ধরণের অনেক হাদীসও রয়েছে।

[মির'আত; ২/৮২পৃ. হাদীসঃ ৮২৫, টীকা-(৩৬-৩৯)]


প্রাসঙ্গিক কিছু ফিক্হী মাস্আলাঃ

____________________________

মাসআলাঃ ❝রুকূ'তে কমপক্ষে একবার 'সুবহানআল্লাহ্' বলার সময় পরিমাণ অবস্থান করা 'ওয়াজিব'।❞

[বাহারে শরীয়ত]

মাসআলাঃ ❝রুকূ' শেষ করে সাজদায় যাওয়ার পূর্বে কমপক্ষে একবার 'সুবহানআল্লাহ্' বলার সমপরিমাণ সময় দাঁড়ানো অথবা কাওমায় দাঁড়িয়ে থাকা 'ওয়াজিব'।❞

[বাহারে শরীয়ত]

মাসআলাঃ ❝সাজদার মধ্যে কমপক্ষে একবার 'সুবহানআল্লাহ্' বলা পরিমাণ সময় অবস্থান করা 'ওয়াজিব'।❞

[বাহারে শরীয়ত]

মাসআলাঃ ❝দু'সাজদার মাঝখানে জলসা করা অর্থাৎ সোজা হয়ে বসা 'ওয়াজিব'।❞

[বাহারে শরীয়ত]

মাসআলাঃ ❝জলসায় (দু'সাজদার মাঝখানে) কমপক্ষে একবার 'সুবহানআল্লাহ্' বলা সমপরিমাণ স্থির থাকা 'ওয়াজিব'।❞

[বাহারে শরীয়ত[

মাসআলাঃ ❝কোন ওয়াজিব বাদ দেয়া। যেমন- সাজদা ও রুকূ'তে পিঠ সোজা না করা, কওমা ও জলসায় সোজা হয়ে দাঁড়ানো বা বসার আগে সাজদাতে চলে যাওয়া ইত্যাদি 'মাকরুহে তাহরীমী'।❞

[আলমগীরী, গুনিয়া, বাহারে শরীয়ত, খন্ড-০৩, পৃ. ১৭০]

মাসআলাঃ ❝যে নামায 'মাকরুহে তাহরীমী' হয়, ওই নামায পুনরায় পড়া 'ওয়াজিব'।❞

[মু'মিন কী নামায]

মাস্আলাঃ ❝যে কাজগুলো ইচ্ছাকৃত করার দরুন নামায 'মাকরুহে তাহরীমী' হয়, সাজদায়ে সাহূ' দিলেও ওই নামায শুদ্ধ হয় না বরং ওই নামায পুনরায় পড়তে হয়। বরং তা পুনরায় পড়া 'ওয়াজিব'।❞

[মু'মিন কী নামায]


❏ ইমামের ক্বিরআতই মুক্বতাদীর ক্বিরআতঃ

❏ নামাযে 'আলহামদু' (সূরা ফাতিহা) পড়া ওয়াজিব, ফরয নয়ঃ

____________________________________________________

❏ দরসে হাদীসঃ [হাদীস নং- (৭৬৬)]

○ অধ্যায়ঃ [নামাযের ক্বিরআত] (টীকাঃ ১)


[ﻋﻦ ﻋﺒﺎﺩﺓ ﺑﻦ ﺍﻟﺼﺎﻣﺖ ﻗﺎﻝ ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﷺ ﻻ ﺻﻠﻮﺓ ﻟﻤﻦ ﻟﻢ ﻳﻘﺮﺃ ﺑﻔﺎﺗﺤﺔ ﺍﻟﻜﺘﺎﺏ - ﻣﺘﻔﻖ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﻓﻰ ﺭﻭﺍﻳﺔ ﻟﻤﺴﻠﻢ ﻟﻤﻦ ﻟﻢ ﻳﻘﺮﺃ ﺑﺎﻡ ﺍﻟﻘﺮﺍﻥ ﻓﺼﺎﻋﺪﺍ .]

হযরত ওবাদাহ্ ইবনে সামিত [ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ] হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [ﷺ] এরশাদ করেছেনঃ

"যে সূরা ফাতিহা পাঠ করে না তার নামায নেই। (টীকাঃ ২) [মুসলিম ও বোখারী] মুসলিমের বর্ণনায় আছে, "ওই ব্যক্তির নামায নেই, যে সূরা ফাতিহা এবং ততোধিক কিছু পড়েনি।" (টীকাঃ ৩)

□ উক্ত হাদীস শরীফের ব্যাখায় বলা হয়েছেঃ


___________________________________

◇ টীকাঃ ১.

নামাযের মধ্যে ক্বোরআন করীমের একটি দীর্ঘ আয়াত অথবা তিনটি ছোট আয়াত পড়া ফরয। 'সূরা ফাতিহা' এবং সেটার সাথে অন্য সূরা মিলানো ওয়াজিব। ফরয নামাযের প্রথম দু'রাক্'আতে ক্বোরআন তিলাওয়াত করা ফরয। বাকী রাক্'আতসমূহে নফল। ফরয ছাড়া অন্য সব নামাযের প্রত্যেক রাক্'আতে ক্বোরআন পাঠ ফরয। এর বিস্তারিত মাস্'আলাসমূহ ফিক্বহ'র কিতাবাদিতে দেখুন। স্মর্তব্য যে, নামাযের ভিত্তি 'নামাযের কর্মসমূহ' ( ﺍﻓﻌﺎﻝ) সম্পাদনের উপর প্রতিষ্ঠিত, পাঠ করা ( ﺍﻗﻮﺍﻝ ) -এর উপর নয়। তাই বোবার উপর নামায ফরয। যদিও সে ক্বোরআন তিলাওয়াত করতে পারে না। কিন্তু যে ব্যক্তি নামাযের রুকনসমূহ একেবারে সম্পাদন করতে পারে না, তার জন্য নামায না পড়া ক্ষমাযোগ্য।

◇ টীকাঃ ২.

হানাফীদের মতে 'সূরা ফাতিহা' পাঠ করা ওয়াজিব, ফরয নয়। কতেক ইমামের মতে ফরয। তাঁরা হাদীসের এ অর্থ করেন যে, যে ফাতিহা পড়ে না, তার নামায সহীহ্ (বিশুদ্ধ) নয়। আমরা এ অর্থ এভাবে করি যে, 'যে সূরা ফাতিহা পড়ে না, তার নামায কামিল (পরিপূর্ণ) নয়। অর্থাৎ ﻻﺀﻧﻔﻯﺠﻨﺲ -এর ﺧﺒﺮ (বিধেয়) তাঁদের মতে 'সহীহ্' বা (বিশুদ্ধ) উহ্য হবে আর আমাদের মতে 'কামিল' বা পূর্ণাঙ্গ। কিন্তু হানাফী মাযহাব অন্যন্ত শক্তিশালী। তাঁদের (হানাফীদের) এ তরজমা এ কয়েকটি কারণে অত্যন্ত যুক্তিযুক্তঃ

○ প্রথমতঃ হানাফীদের তরজমার ভিত্তিতে আলোচ্য হাদীস ক্বোরআনের এ আয়াতের বিরোধী নয়। এরশাদ হচ্ছে- [ﻓَﺎﻗْﺮَﺀُﻭﺍ ﻣَﺎ ﺗَﻴَﺴَّﺮَ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥِ]

তরজমাঃ (এখন ক্বোরআনের মধ্য থেকে যতটুকু তোমাদের নিকট সহজ হয়, ততটুকু পাঠ করো। ৭৩:২০) পক্ষান্তরে, ওইসব বুযুর্গের তরজমার ভিত্তিতে আলোচ্য হাদীস এ আয়াতের ঘোর বিরোধী হবে। কেননা, ক্বোরআন দ্বারা বুঝা যাচ্ছে যে, শর্তহীনভাবে (অর্থাৎ ক্বোরআনের যে কোন আয়াত বা সূরা তিলাওয়াত করলে) যথেষ্ট (বিশুদ্ধ) হবে। আর হাদীস বলছে- সূরা ফাতিহা পাঠ করা ব্যতীত নামায বিশুদ্ধ হয় না।

○ দ্বিতীয়তঃ এ হাদীসের শেষাংশে বর্ণিত হয়েছে যে, যে ব্যক্তি সূরা ফাতিহা এবং এর সাথে ক্বোরআন থেকে অন্য কিছু পড়ে না, তার নামায হবে না। আর ওই সব বুযুর্গের মতে অন্য সূরা মিলানো ফরয নয়। তাই একই হাদীস দ্বারা সূরা ফাতিহা পড়া ফরয মনে করা আর তার সাথে অন্য সূরা মিলানোকে ফরয মনে না করা আজব ধরনের কথা হয়।

○ তৃতীয়তঃ পরবর্তীতে হযরত আবূ হুরাইরা [ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ] কর্তৃক বর্ণিত হাদীসের মধ্যে হানাফীদের কৃত অর্থ স্পষ্টভাবে আসছে। তা হচ্ছে যে ব্যক্তি নামাযের মধ্য 'আলহামদু' পড়বে না, তার নামায অসম্পূর্ণ। বস্তুতঃ হাদীসের ব্যাখ্যা হাদীস দ্বারা হলে তা শক্তিশালী হয়। তদুপরি, হানাফীদের মতে 'সূরা ফাতিহা' পড়া মানে শর্তহীনভাবে ( ﻣﻄﺎﻗﺎ ) পড়া, তা 'হাক্বীক্বী' (প্রত্যক্ষভাবে) হোক, বা 'হুকমী' (পরোক্ষভাবে) হোক; যেমন শুধু ইমামই হাক্বীক্বী বা প্রত্যক্ষভাবে পড়বেন আর মুক্তাদীরা পড়বে পরোক্ষভাবে। অর্থাৎ ইমামের পড়াকে মুক্বতাদীদের পড়া হিসেবে ধরে নেওয়া হবে।

কিন্তু কোন কোন ইমামের মতে এখানে হাক্বীক্বী (প্রত্যক্ষভাবে) পড়াই উদ্দেশ্য। তাঁদের মতে, মুক্বতাদীর উপরও 'সূরা ফাতিহা' পড়া ফরয; কিন্তু হানাফীদের অভিমত কতেক কারণে অত্যন্ত গ্রহণযোগ্য। ওই কারণগুলো হচ্ছেঃ

○ প্রথমতঃ এতদভিত্তিতে আলোচ্য হাদীস ক্বোরআনের এ-ই আয়াতের বিরোধী হবে না।

[ﻭَﺇِﺫَﺍ ﻗُﺮِﺉَ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥُ ﻓَﺎﺳْﺘَﻤِﻌُﻮﺍ ﻟَﻪُ ﻭَﺃَﻧﺼِﺘُﻮﺍ]

তরজমাঃ আর যখন ক্বোরআন পাঠ করা হবে, তখন তোমরা মনযোগ সহকারে সেটা শ্রবণ করো এবং নিশ্চুপ থাকো। (৭ঃ২০৪) তাঁদের ব্যাখ্যা মতে, আয়াত ও হাদীসের মধ্যে বড় বিরোধ বেঁধে যায়।

○ দ্বিতীয়তঃ এতদভিত্তিতে এ হাদীস মুসলিম শরীফের নিন্মোক্ত বর্ণনার বিরোধী হবে নাঃ [ﻭﺍﺫﺍ ﻗﺮﺀ ﻓﺎﻧﺼﺘﻮﺍ]

(অর্থাৎ যখন ইমাম ক্বিরআত সম্পন্ন করবে, তখন তোমরা নিরব থাকো!)

○ তৃতীয়তঃ হানাফীদের কৃত তরজমা অনুসারে যে ব্যক্তি ইমামের সাথে রুকূ' পাবে, সে অনায়াসে ওই রাক্'আত পাবে; কিন্তু তারা (যাঁরা মুক্বতাদীর উপরও সূরা ফাতিহা পড়া ওয়াজিব বলেন) এ মাসআলায় সমূহ বিপদের সম্মুখীন হবেন। যেমন- সূরা ফাতিহা পড়া ব্যতীত রাক্'আত কিভাবে পাবেন?

○ চতুর্থতঃ কতেক অবস্থায় তারা তো এ হাদীসের উপর আমল করতেই পারবেন না। যেমন, মুক্বতাদী সূরা ফাতিহা পড়ার সময় মধ্যখানে ইমাম রুকূ'তে চলে গেলেন, তখন তো তার জন্য এ হাদীস প্রাণ বিনাশকারী শাস্তির মতো হয়ে যাবে।

তাই হানাফী মাযহাব অত্যন্ত শক্তিশালী। আর এ হাদীস তাঁদের মোটেই বিরোধী নয়। এতদ্ সম্পর্কে গবেষণালব্ধ বিশ্লেষণ আমার কিতাব 'জা-আল হক্ব': দ্বিতীয় খন্ডে দেখুন।

◇ টীকাঃ ৩.

অর্থাৎ নামাযীদের জন্য সূরা ফাতিহা পড়াও ওয়াজিব এবং এটার সাথে আরো কিছু আয়াত তিলাওয়াত করাও ওয়াজিব। যদি ওইগুলোর মধ্যে যে কোন একটার উপর আমল করা না হয়, তবে নামায অসম্পূর্ণ হবে। (তখন ওয়াজিব বাদ পড়ার কারণে সাজদা-ই সাহ্ভ দিতে হবে।) এ হাদীস হানাফীদের জন্য শক্তিশালী দলীল। যারা এ হাদীসের উপর ভিত্তি করে প্রত্যেক নামাযীর উপর সূরা ফাতিহা পড়া ফরয বলেন, তারা ﻓﺼﺎﻋﺪﺍ (কিছু অতিরিক্ত) শব্দের কি ব্যাখ্যা দেবেন? কেননা, তাঁদের মতে তো সূরা-ফাতিহার সাথে অন্য সূরা মিলানো ফরয নয়।


□ ইমাম যখন তাকবীর বলবেন, তখন তোমরাও তাকবীর বলো। আর যখন তিলাওয়াত করবেন, তখন তোমরা চুপ থাকো।- এর ব্যাখা কী �

❏ দরসে হাদীসঃ [হাদীস নং- ( ৭৯৮)]


○ অধ্যায়ঃ [নামাযের ক্বিরআত]

[ﻭﻋﻦ ﺍﺑﻰ ﻫﺮﻳﺮﺓ ﻗﺎﻝ ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﷺ ﺍﻧﻤﺎ ﺟﻌﻞ ﺍﻻﻣﺎﻡ ﻟﻴﺆﺗﻢ ﺑﻪ ﻓﺎﺫﺍ ﻛﺒﺮ ﻓﻜﺒﺮﻭﺍ ﻭﺍﺫﺍ ﻗﺮﺃ ﻓﺎﻧﺼﺘﻮﺍ . - ﺭﻭﺍﻩ ﺍﺑﻮ ﺩﺍﻭﺩ ﻭﺍﻟﻨﺴﺎﺋﻰ ﻭﺍﺑﻦ ﻣﺎﺟﺔ]

হযরত আবূ হুরাইরা [ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ] হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ [ﷺ] এরশাদ করেছেনঃ

"ইমাম এজন্যই নির্ধারিত হয়েছেন যেনো তাঁর অনুসরণ করা হয়। (টীকাঃ ১) তাই যখন (ইমাম) তাকবীর বলবেন, তখন তোমরাও তাকবীর বলো। আর যখন তিলাওয়াত করবেন, তখন তোমরা চুপ থাকো।" (টীকাঃ ২)

[আবূ দাঊদ, নাসাঈ ও ইবনে মাজাহ্]

□ উক্ত হাদীস শরীফের ব্যাখায় বলা হয়েছেঃ


___________________________________

১. (ইমাম এজন্যই নির্ধারিত হয়েছেন যেনো তাঁর অনুসরণ করা হয়।)

◇ টীকাঃ ১.

অর্থাৎ মুক্বতাদীর উপর নামাযের মধ্যে ইমামের ﺍﻋﻤﺎﻝ বা কার্যাদির অনুসরণ করা ওয়াজিব; ﺍﻗﻮﺍﻝ বা পঠনের মধ্যে নয়। সুতরাং ইমাম যে কাজ করবে তা করা মুক্বতাদীর উপরও ওয়াজিব। এমনকি যদি হানাফী মুক্বতাদী শাফে'ঈ ইমামের পেছনে ফযরের নামায পড়ে আর ইমাম রুকূ'র পর 'কুনূত'-ই নাযিলাহ্ পড়েন, তখন হানাফী মুক্বতাদীর উপর ওই সময় দাঁড়িয়ে থাকা ওয়াজিব। যদিও 'কুনূত' না পড়ে। এ মাসআলার উৎস হচ্ছে ওই হাদীস শরীফ। এখানে ﺍﻗﻮﺍﻝ বা পঠনের মধ্যে অনুসরণ করার অর্থ কেউ গ্রহণ করেন নি।

২. ( আর যখন তিলাওয়াত করবেন, তখন তোমরা চুপ থাকো।)

◇ টীকাঃ ২.

অর্থাৎ ইমামের পেছনে ক্বোরআন একেবারেই পড়ো না; না 'সূরা ফাতিহা' পড়বে, না অন্য কোন সূরা; চাই ইমাম নিন্মস্বরে তিলাওয়াত করুন, কিংবা উচ্চস্বরে। চাই, তোমাদের নিকট পর্যন্ত ইমামের শব্দ পৌঁছাক কিংবা না-ই পৌঁছাক।

এ হাদীস শরীফ হযরত আবূ হুরাইরা [ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ] হতে মুসলিম শরীফেও বর্ণিত হয়েছে। যেমনঃ প্রথম পরিচ্ছেদে উল্লেখ করা হয়েছে।

পবিত্র ক্বোরআন করীম-এর নিন্মোক্ত আয়াতও এর সমর্থন করে-

[ﻭَﺇِﺫَﺍ ﻗُﺮِﺉَ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥُ ﻓَﺎﺳْﺘَﻤِﻌُﻮﺍ ﻟَﻪُ ﻭَﺃَﻧﺼِﺘُﻮﺍ ...]

[তরজমাঃ আর যখন ক্বোরআন পাঠ করা হয়, তখন তোমরা মনযোগ সহকারে সেটা শোনো এবং নিশ্চুপ থাকো। (৭ঃ২০৪) আর এর উপরই অধিকাংশ সাহাবীর আমল রয়েছে। অর্থাৎ তাঁরা ইমামের পেছনে ক্বিরআতও একেবারে পড়তেন না। এ হাদীস শরীফ ইমাম-ই আ'যমের পক্ষে মজবুত দলীল। এ হাদীসের উপর ভিত্তি করে ইমাম মালিক [ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ] ও ইমাম মুহাম্মদ [ﺭﺣﻤﻪ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ] উচ্চ স্বরে ক্বিরআত বিশিষ্ট নামাযগুলোতে মুক্বতাদীদেরকে নিশ্চুপ থাকার নির্দেশ দিতেন। কতেক হাম্বলী ফক্বীহ্ বলেন যেনো মুক্বতাদী ইমামের ক্বিরআতের মধ্যভাগের বিরতিগুলোতে আলহামদু শরীফের আয়াতগুলো পড়ে নেন। কারো কারো মতে, ইমাম আলহামদু পড়ে চুপ থাকবে, তারপর মুক্বতাদী পড়বে। এমন কি ইমাম শাফে'ঈরও একটি অভিমত হচ্ছে- 'উচ্চ রবে ক্বিরআত বিশিষ্ট নামাযে মুক্বতাদী চুপ থাকবে।' এ থেকে প্রতীয়মান হয় এ হাদীস কতোই গুরুত্বপূর্ণ। আর ইমাম-ই আ'যমের মাযহাব কতোই শক্তিশালী। এর পূর্ণাঙ্গ আলোচনা আমার কিতাব 'জা-আল হক্ব': দ্বিতীয় খন্ডে দেখুন।


□ ইমামের পিছনে ক্বিরআতের 'নুসখ' (রহিতকরণ)-এর ধারাবাহিকতাঃ

_____________________________________________

_____________

❏ দরসে হাদীসঃ [হাদীস নং- (৭৯৬)]

○ অধ্যায়ঃ [নামাযের ক্বিরআত]

[ﻭﻋﻦ ﺍﺑﻰ ﻫﺮﻳﺮﺓ ﺍﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﷺ ﺍﻧﺼﺮﻑ ﻣﻦ ﺍﻟﺼﻠﻮﺓ ﺟﻬﺮ ﻓﻴﻬﺎ ﺑﺎﻟﻘﺮﺃﺓ ﻓﻘﺎﻝ ﻫﻞ ﻗﺮﺃ ﻣﻌﻰ ﺍﺣﺪ ﻣﻨﻜﻢ ﺍﻧﻔﺎ - ﻓﻘﺎﻝ ﺭﺟﻞ ﻧﻌﻢ ﻳﺎﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﻗﺎﻝ ﺍﻧﻰ ﺍﻗﻮﻝ ﻣﺎﻟﻰ ﺍﻧﺎﺯﻋﺎ ﺍﻟﻘﺮﺍﻥ ﻗﺎﻝ ﻓﺎﻧﺘﻬﻰ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﻋﻦ ﺍﻟﻘﺮﺃﺓ ﻣﻊ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﷺ ﻓﻴﻤﺎ ﺟﻬﺮ ﻓﻴﻪ ﺑﺎﻟﻘﺮﺃﺓ ﻣﻦ ﺍﻟﺼﻠﻮﺍﺕ ﺣﻴﻦ ﺳﻤﻌﻮﺍ ﺫﻟﻚ ﻣﻦ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﷺ - ‏( ﺭﻭﺍﻩ ﻣﺎﻟﻚ ﻭﺍﺣﻤﺪ ﻭﺍﺑﻮ ﺩﺍﻭﺩ ﻭﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻯ ﻭﺍﻟﻨﺴﺎﺋﻰ ﻭﺭﻭﻯ ﺍﺑﻦ ﻣﺎﺟﺔ ﻧﺤﻮﻩ )]

হযরত আবূ হোরায়রা [ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ] হতে বর্ণিত, নবী করীম [ﷺ] ওই নামায সমাপ্ত করলেন, যাতে উচ্চস্বরে ক্বিরআত সম্পন্ন করা হয়। তখন এরশাদ করলেন, "তোমাদের মধ্যে কি কেউ আমার সাথে ক্বিরআত সস্পন্ন করেছো?" এক ব্যক্তি বললেন, "হাঁ! হে আল্লাহ্'র রাসূল!" (টীকাঃ ১) হুযূর এরশাদ করলেন, "তবেই তো আমি চিন্তা করলাম আমার কি হয়েছে যে, আমি ক্বোরআন পাঠের সময় আমার সাথে ঝগড়া করা হচ্ছে?" (টীকাঃ ২) (বর্ণনাকারী) বললেন, "এরপর থেকে লোকেরা হুযূর [ﷺ] -এর সাথে ওই সব নামাযে ক্বিরআত হতে বিরত থাকলেন, যেগুলোতে উচ্চস্বরে ক্বিরআত সম্পন্ন করা হয়। যখন হুযূর [ﷺ] -এর নির্দেশ শুনলেন। (টীকাঃ ৩)

[মালিক, আহমদ, আবূ দাঊদ, তিরমিযী ও নাসাঈ]

আর ইবনে মাজাহ্ এর অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। (টীকাঃ ৪)

□ উক্ত হাদীস শরীফের ব্যাখায় বলা হয়েছেঃ


____________________________________

১. (নবী করীম [ﷺ] ওই নামায সমাপ্ত করলেন, যাতে উচ্চস্বরে ক্বিরআত সম্পন্ন করা হয়। তখন এরশাদ করলেন, "তোমাদের মধ্যে কি কেউ আমার সাথে ক্বিরআত সস্পন্ন করেছো?" এক ব্যক্তি বললেন, "হাঁ! হে আল্লাহ্'র রাসূল!")

◇ টীকাঃ ১.

প্রতীয়মান হলো যে, সাহাবীদের সমগ্র দলের মধ্যে শুধু ওই ব্যক্তি হুযূরের পেছনে 'আলহামদু' পড়েন। অন্যদের কেউ পড়েন নি। তিনিও না জানার কারণে পড়েছেন।

২. (হুযূর এরশাদ করলেন, "তবেই তো আমি চিন্তা করলাম আমার কি হয়েছে যে, আমি ক্বোরআন পাঠের সময় আমার সাথে ঝগড়া করা হচ্ছে?")

◇ টীকাঃ ২.

অর্থাৎ আমার উপর তোমাদের পড়ার এ প্রভাব পড়েছে যে, আমায় ক্বোরআনে 'লুকমা' লাগার উপক্রম হলো। এ গবেষণালব্ধ আলোচনা আমি এক্ষুনি করেছি যে, মুক্বতাদীর ক্বিরআতের প্রভাব ইমামের উপর পড়ে থাকে। এটা দ্বারা এ কথা অনিবার্য হয় না যে, তাঁরা উচ্চস্বরে ক্বিরআত পড়েছেন। অন্যথায় হুযূর এরশাদ করতেন না, "তোমরা কি ক্বিরআত সম্পন্ন করেছো?

৩. [(বর্ণনাকারী) বললেন, "এরপর থেকে লোকেরা হুযূর [ﷺ] -এর সাথে ওই সব নামাযে ক্বিরআত হতে বিরত থাকলেন, যেগুলোতে উচ্চস্বরে ক্বিরআত সম্পন্ন করা হয়। যখন হুযূর [ﷺ] -এর নির্দেশ শুনলেন।]

◇ টীকাঃ ৩.

অর্থাৎ এ ঘোষণার পর সাহাবীগণ হুযূর [ﷺ] -এর পেছনে উচ্চস্বরে ক্বিরআত বিশিষ্ট নামাযে তিলাওয়াত সম্পূর্ণরূপে ছেড়ে দেন; না 'আলহামদু' পড়েছেন, না অন্য সূরা।

স্মর্তব্য যে, 'নুসখ' (রহিতকরণ) -এর ধারাবাহিকতা এ যে, প্রাথমিক পর্যায়ে মুসলমানরা নামাযে কথা-বার্তাও বলতেন, আর ইমামের পেছনে 'সূরা ফাতিহা'ও পড়তেন। যখন [ﻭَﻗُﻮﻣُﻮﺍ ﻟِﻠَّﻪِ ﻗَﺎﻧِﺘِﻴﻦَ] (অর্থাৎ আর আল্লাহ্'র সম্মুখে আদব সহকারে দাঁড়াও! ২ঃ২৩৮) আল-আয়াত অবতীর্ণ হলো, তখন নামাযের মধ্যে কথা বলা বন্ধ হয়ে গেলো। তারপর আলোচ্য হাদীস শরীফ দ্বারা উচ্চস্বরে ক্বিরআত বিশিষ্ট নামাযে ইমামের পেছনে 'আলহামদু' পড়া বন্ধ হয়ে গেলো। তারপর [ﻭَﺇِﺫَﺍ ﻗُﺮِﺉَ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥُ ﻓَﺎﺳْﺘَﻤِﻌُﻮﺍ ﻟَﻪُ] আল-আয়াত অবতীর্ণ হলো। তখন থেকে ইমামের পেছনে ক্বিরআত সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেলো।

তাছাড়া, হুযূর [ﷺ] এরশাদ করেছেন যে, ইমামের ক্বিরআত মুক্বতাদীর ক্বিরআতের সামিল। ﻧﺴﺦ (রহিতকরণ) -এর ধারা-বাহিকতার বিবরণ 'তাফসীর-ই-খাযিন' ইত্যাদিতে দেখুন।

কেউ কেউ বলেন যে, [ﻭَﺇِﺫَﺍ ﻗُﺮِﺉَ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥُ] -এর মধ্যে 'ক্বোরআন' দ্বারা খুৎবা বুঝানো হয়েছে। আর এ আয়াতে খুৎবা পাঠকালে নিশ্চুপ থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এটা ভুল ধারণা। কারণ এ আয়াত অবতীর্ণ হবার সময় জুমু'আহ্ ফরযই হয় নি। এর গবেষণালব্ধ বিশ্লেষণ আমার কিতাব 'জা-আল হক্ব' : দ্বিতীয় খন্ডে দেখুন।

৪. (আর ইবনে মাজাহ্ এর অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।)

◇ টীকাঃ ৪.

অনুরুপ, এ হাদীস ইমাম মালিক ও ইমাম শাফে'ঈও বর্ণনা করেছেন। ইমাম তিরমিযী বলেন, এ হাদীস 'হাসান' পর্যায়ের। ইবনে হাব্বান বলেন, "এটা সহীহ্।" ইমাম বায়হাক্বী ও ইমাম হুমায়দী [ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻬﻢ] এটাকে দ্ব'ঈফ (দুর্বল সনদ বিশিষ্ট) বলেছেন। (মিরক্বাত)

অর্থাৎ এ হাদীস শরীফ বিভিন্ন 'সনদ' (বর্ণনা সূত্র) -এ মুহাদ্দিসগণ পেয়েছেন। কেউ পেয়েছেন 'সহীহ্ সনদ' সহকারে। কেউ 'হাসান' সূত্রে, আবার কেউ দ্ব'ঈফ' সূত্রে পেয়েছেন। প্রত্যেকেই আপন আপন সনদ অনুসারে এটাকে 'হাসান' অথবা 'সহীহ্' ইত্যাদি পর্যায়ের বলে মন্তব্য করেছেন।


ইমামের পেছনে ক্বিরআত'র আলোচনাঃ 

□ ইল্লা-বিফা-তিহাতিল কিতাব'র ব্যাখ্যাবলীর বিন্যাসঃ

□ নামাযের মধ্যে মুক্বতাদীর নিশ্চুপ থাকা ওয়াজিবঃ

________________________________________________________

❏ দরসে হাদীসঃ [হাদীস নং- (৭৯৫)]

○ অধ্যায়ঃ [নামাযের ক্বিরআত]


[ﻭﻋﻦ ﻋﺒﺎﺩﺓ ﺑﻦ ﺍﻟﺼﺎﻣﺖ ﻗﺎﻝ ﻛﻨﺎ ﺧﻠﻒ ﺍﻟﻨﺒﻰ ﷺ ﻓﻰ ﺻﻠﻮﺓ ﺍﻟﻔﺠﺮ ﻓﻘﺮﺃ ﻓﺜﻘﻠﺖ ﻋﻠﻴﻪ ﺍﻟﻘﺮﺃﺓ ﻓﻠﻤﺎ ﻓﺮﻍ ﻗﺎﻝ ﻟﻌﻠﻜﻢ ﺗﻘﺮﺅﻥ ﺧﻠﻒ ﺍﻣﺎﻣﻜﻢ ﻗﻠﻨﺎ ﻧﻌﻢ ﻳﺎ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﻗﺎﻝ ﻻ ﺗﻔﻌﻠﻮﺍ ﺍﻻ ﺑﻔﺎﺗﺤﺔ ﺍﻟﻜﺘﺎﺏ ﻓﺎﻧﻪ ﻻ ﺻﻠﻮﺓ ﻟﻤﻦ ﻟﻢ ﻳﻘﺮﺃ ﺑﻬﺎ - ﺭﻭﺍﻩ ﺍﺑﻮ ﺩﺍﻭﺩ ﻭﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻯ ﻭﺍﻟﻨﺴﺎﺋﻰ ﻣﻌﻨﺎﻩ ﻭﻓﻰ ﺭﻭﺍﻳﺔ ﻻﺑﻰ ﺩﺍﻭﺩ ﻗﺎﻝ ﻭﺍﻧﺎ ﺍﻗﻮﻝ ﻣﺎﻟﻰ ﻳﻨﺎﺯﻋﻨﻰ ﺍﻟﻘﺮﺍﻥ ﺍﻥ ﻓﻼ ﺗﻘﺮﺀﻭﺍ ﻭﺑﺸﻰﺀ ﻣﻦ ﺍﻟﻘﺮﺍﻥ ﺍﺫﺍ ﺟﻬﺮﺕ ﺍﻻ ﺑﺎﻡ ﺍﻟﻘﺮﺍﻥ .]

হযরত ওবাদাহ্ ইবনে সামিত [ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ] হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা ফজরে হুযূর [ﷺ]-এর পেছনে ছিলাম। তিনি ক্বিরআত সম্পন্ন কররেন; তাঁর নিকট ক্বির'আত ভারী হলো। যখন নামায সমাপ্ত করলেন, হয়তো তোমরা তোমাদের ইমামের পেছনে তিলাওয়াত করে থাকো!" আমরা বললাম, "হাঁ! হে আল্লাহ্'র রাসূল!" (টীকাঃ ১)তিনি এরশাদ করলেন, "সূরা ফাতিহা ছাড়া কিছু পাঠ করো না। কেননা, যে সূরা ফাতিহা পড়ে না তার নামায হয় না।" (টীকাঃ ২)

[আবূ দাঊদ ও তিরমিযী] নাসাঈ সেটার সমার্থ বর্ণনা করেছেন।

আবূ দাঊদ-এর অপর এক বর্ণনায় আছে, হুযূর এরশাদ করেছেন, 'আমি অন্তরে চিন্তা করছিলাম যে, আমার নিকট ক্বোরআন কেন ভারী বোধ হচ্ছিলো? সুতরাং যখন আমি উচ্চ রবে ক্বিরআত সম্পন্ন করি, তখন 'আলহামদু' (সূরা ফাতিহা) ব্যতীত অন্য কিছু তিলাওয়াত করো না।" (টীকাঃ ৩)

□ উক্ত হাদীস শরীফের ব্যাখায় বলা হয়েছেঃ


___________________________________

◇ টীকাঃ ১.

বুঝা গেলো যে, মুক্বতাদীর ভুল-ত্রুটির প্রভাব ইমামের উপর পড়ে। দেখুন মুক্বতাদীরা মনে মনে হুযূর [ﷺ] -এর পেছনে ক্বির'আত সম্পন্ন করেছেনন, যার প্রভাব এ হলো যে, হুযূরের ক্বির'আত ভারী বোধ হয়েছিলো, যেমনিভাবে যদি মুক্বতাদীর পবিত্রতা অর্জন শুদ্ধ না হয়, তবে ইমামের লোক্বমা লেগে থাকে।

◇ টীকাঃ ২.

এ হাদীস ওইসব হযরতের পক্ষে দলীল, যাঁরা ইমামের পেছনে ক্বিরআতের পক্ষপাতী। কারণ, এতে সুস্পষ্টভাবে মুক্বতাদীগণকে ইমামের পেছনে সূরা ফাতিহা পড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, কিন্তু এ মাসআলায় নিন্মলিখিত বিষয়গুলো লক্ষ্যণীয়ঃ

প্রথমতঃ

এ হাদীস হযরত আবূ হোরায়রা [ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ]'র বর্ণিত হাদীসের বিপরীত, যা এখনই এটার পর আসছে। যার মধ্যে উচ্চস্বরে ক্বিরআত পড়তে হয় এমন নামাযগুলোতে মুক্বতাদীকে কোন প্রকার ক্বিরআত পড়তে নিষেধ করা হয়েছে।

দ্বিতীয়তঃ

এ হাদীস হযরত জাবির, আলক্বামাহ্, আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাস'ঊদ, আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস, যায়দ ইবনে সবিত, আব্দুল্লাহ্ ইবনে আলী, আলী মুরত্বাদা এবং হযরত ওমর [ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻬﻢ] প্রমুখের বর্ণিত ওই হাদীসের বিরোধী, যার মধ্যে (ক্বিরআতের সময়) ইমামের পেছনে একেবারে নিশ্চুপ থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

তৃতীয়তঃ

এ হাদীস ক্বোরআনের বর্ণিত বিধানেরও বিপরীত। আল্লাহ্ তা'আলা এরশাদ করেন-

[ﻭَﺇِﺫَﺍ ﻗُﺮِﺉَ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥُ ﻓَﺎﺳْﺘَﻤِﻌُﻮﺍ ﻟَﻪُ ﻭَﺃَﻧﺼِﺘُﻮﺍ]

(অর্থাৎ আর যখন ক্বোরআন পাঠ করা হয়, তখন তোমরা মনযোগ সহকারে সেটা শ্রবণ করো এবং নিশ্চুপ থাকো। ৭ঃ২০৪)

চতুর্থতঃ এ হাদীস সম্পর্কে ইমাম তিরমিযী বলেছেন যে, অধিক সহীহ (বিশুদ্ধ) অভিমত হচ্ছে- তাতে শুধু এতোটুকু রয়েছে-

[ﻻ ﺻﻠﻮﺓ ﻟﻤﻦ ﻟﻢ ﻳﻘﺮﺃ ﺑﻔﺎﺗﺤﺔ ﺍﻟﻜﺘﺎﺏ]

(অর্থাৎ যে সূরা ফাতিহা পড়েনি তার নামায নেই।)

সুতরাং এখানে 'মুক্বতাদী'র উল্লেখ নেই। তাই এ হাদীস শরীফ অনুসারে আমল করা যাবে না; অথবা 'মানসুখ' বা রহিত।

◇ টীকাঃ ৩.

এ শব্দগুলো বাহ্যতঃ আমাদের বিরোধীদেরও বিপরীত। কেননা, এটার অর্থ এ যে, উচ্চস্বরে ক্বির'আত করা হয় এমন নামাযে আমার পেছনে শুধু 'আলহামদু' পাঠ করো আর নিন্মস্বরে পড়তে হয় এমন নামাযে 'আলহামদু' ও সূরা উভয়ই পাঠ করো; অথচ তাঁরাও মুক্বতাদীদেরকে সূরা পড়ার অনুমতি দেন না।


□ হাদীস শরীফ এর ব্যাখ্যা সম্বলিত টীকা পেতে সার্চ করুনঃ

f/Ishq-E-Mustafa ﷺ

Top