বিছমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
প্রথম অধ্যায়
ইছবাতুন নুবূওয়াত
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তাআলার জন্য যিনি তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হিদায়াতসহ প্রেরণ করেন এবং তার উপর বিশেষ কিতাব আল কোরআন-
নাযিল করেন, যার মাঝে সামান্যতম বক্রতা ও সন্দেহের কোন অবকাশ নেই, বরং তা সরল ও সহজ; যাতে তিনি লোকদেরকে ঐ ভয়ানক আযাব থেকে ভীতি প্রদর্শন করতে পারেন, যা আল্লাহর তরফ থেকে অত্যাসন্ন, আর মুমিনদেরকে খোশ-খবর শোনাতে পারেন তাঁদের নেক আমলের, যা আল্লাহর তরফ থেকে উত্তম নিয়ামত স্বরূপ-জান্নাত। আল্লাহ তাআলা তার হাবীবের মাধ্যমে স্বীয় দ্বীনকে পূর্ণতা প্রদান করেছেন এবং তাঁর উপর স্বীয় নেয়ামত পূর্ণ করে দিয়েছেন এবং দ্বীন-ইসলামকে তার জন্য পছন্দ করেছেন এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রেরণের মাধ্যমে নবী ও রাসূলগণের আগমনের সিলসিলা বা ধারা খতম করে দিয়েছেন। যারা মাখলুকের প্রতি প্রকাশ্যে দলীল ও বড় বড় মুজিযা নিয়ে আগমন করেন, যাতে মানুষেরা ঐ সমস্ত নবীগণের প্রতি নিজেদের ঐরূপ সমর্পণ করে, যেমন অন্ধ ব্যক্তি আত্মসমর্পণ করে তার পথ প্রদর্শকের উপর, কঠিন রোগগ্রস্ত ব্যক্তি নির্ভরশীল হয় বিজ্ঞ চিকিৎসকের উপর। ফলে, তার থেকে এমন উপকার প্রাপ্ত হয় যা চিন্তা ও ভাবনার বাইরে।
আল্লাহ তা'আলা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সমস্ত নবীদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ এবং রাসূলগণের মধ্যে সর্বোত্তম, মিল্লাতের দিক থেকে মধ্যপথ অবলম্বী এবং দ্বীন ও শরীয়তের দিক দিয়ে সব চাইতে সঠিক রাস্তা প্রদান করেন।
যার শেষ্ঠত্ব ও মর্যাদা সম্পর্কে আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেছেন :
مَازَاغَ الۡبَصَرُوَمَا طَغٰي. لَقَدۡ رَاٰی مِنۡ اٰيٰتِ رَبِّهِ الۡكُبۡرٰی
অর্থাৎ তার দৃষ্টি টেরা হয়নি এবং অবাধ্য হয়নি, বরং তিনি তার রবের বড় বড় নিদর্শনাবলী প্রত্যক্ষ করেন।(আল-কোরআন, ২৭ সূরা নজম, আয়াতঃ ১৭-১৮)।
এ আয়াতে খবর দেয়া হয়েছে যে, হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-ই একমাত্র রাসূল যাঁকে সমস্ত মাখলুকের প্রতি পাঠানো হয়েছে,যাতে তিনি সকলের কাছে আল্লাহর তাওহীদ ও একত্ববাদের দাওয়াত দেন, তাদেরকে ইলম ও আমলের শক্তিতে শক্তিশালী করেন এবং তাদের রোগগ্রস্ত দিলের চিকিৎসা করেন। আল্লাহ তাআলা তাঁর হাবীবের উপর স্বীয় রহমতের ধারা-অজস্র ধারায় বর্ষণ করুন; কেননা, তিনিই তার যোগ্য প্রাপক এবং সে রহমতের ধারায় স্নাত হোক তার পরিবার পরিজন ও সাহাবীগণ, যারা হিদায়েতের আলোকবর্তিকা স্বরূপ এবং অমানিশার মাঝে আলো স্বরূপ; যতদিন হিদায়াত ও গোমরাহী একের পর এক আসতে থাকে-তাদের উপর আরো অধিক শান্তি ও স্বস্তি নাযিল হোক! আমীন!
হামদ ও সালাতের পর বক্তব্য হলো : আল্লাহ তা'আলার রহমতের মুখাপেক্ষী আহমদ ইবন আব্দুল আহাদ ইবন যয়নুল আবেদীন (রহ.) বলেন যে, এ যুগে যখন আমি দেখি আসল নুবূওত সম্পর্কে লোকদের ধারণায় (জনৈক ব্যক্তির(বাদশাহ আকবরের) নুবূওতের দাবীর প্রেক্ষিতে এবং নুবূওতের ভিত্তিতে শরীয়তের কর্মকাণ্ডে) বিভ্রান্তি সৃষ্টি হচ্ছে এবং লোকদের মাঝে এ প্রবণতা ব্যাপকতর হচ্ছে; এমনকি আমাদের সময়ের জনৈক যালিম বাদশাহ(প্রাগুক্ত) অসংখ্য আলিম-উলামাদের উপর এজন্য কঠোর শাস্তি ও অকথ্য নির্যাতন চালাচ্ছে যে, তাঁরা শরীয়তের হুকুমের অনুসরণ করে এবং নবী রাসূলগণের উপর দৃঢ় ঈমান রাখে। সে কারণে আহলে ইসলামের অসংখ্য আলিমকে হত্যা করা হয়েছে এবং এখন অবস্থা এমন নাজুক পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে যে, সে বাদশাহ তার দরবারে হযরত খাতেমুল আম্বীয়া আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালামের নাম উচ্চারণ করাকেও স্পষ্টত পরিহার করেছে এবং যাদের ‘আহমদ’ ও ‘মুহাম্মদ' নাম ছিল তা পরিবর্তন করে অন্য নাম রাখা হয়েছে। গরু যবেহ করাকে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। অথচ হিন্দুস্থানের বুকে গরু কুরবানী করা ইসলামী নিদর্শনের অন্যতম। মসজিদসমূহ ও মুসলমানদের কবরস্থান সমূহ ধ্বংস করা দেওয়া হয়েছে, অথচ কাফিরদের ইবাদতগাহ(মন্দির) সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে এবং রসম-রেওয়াজ ও পূজা পার্বণের প্রতি সম্মান দেখানো হচ্ছে।
সংক্ষেপে বলা যায়, সে বাদশাহ ইসলামের বিধি-বিধান ও রসম-রেওয়াজ ও তার পবিত্র স্থানগুলিকে অপবিত্র ও বাতিল ঘোষণা করেছে এবং কাফিরদের বাতিল-মাজহাব ও রসম-রেওয়াজকে(রীতি-নীতি) প্রচার করছে।
এমনকি সে বাদশাহ হিন্দুস্থানের কাফিরদের 'হুকুম-আহকাম' প্রচার করছে এবং তাদের আসল ভাষা-সংস্কৃতিকে ফার্সীতে রূপান্তরিত করছে, যাতে ইসলামের নাম-নিশানা ও প্রভাব প্রতিপত্তি হিন্দুস্থানের বুক থেকে চিরতরে মুছে যায়।
যখন আমি বুঝতে পারি যে, সন্দেহ ও অস্বীকারের ব্যাধি সম্প্রসারিত হচ্ছে। এমনকি চিকিৎসকগণও তাতে আক্রান্ত হয়েছে এবং মাখলুক ধ্বংসের মুখোমুখি এসে দাঁড়িয়েছে, তখন আমি মানুষের আকীদা সম্পর্কে অনুসন্ধান করতে থাকি এবং তাদের এ ধরনের সন্দেহের কারণ সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করতে থাকি। এ পর্যায়ে আমার কাছে প্রতীয়মান হয় যে, তাদের এ সন্দেহ ও বদ আকীদার মূল কারণ হলো : তাদের ঈমানের দুর্বলতা, নুবূওতের যুগ থেকে দূরবর্তীতা, ভূঁয়ো দর্শন শাস্ত্রে লিপ্ততা এবং হিন্দুস্থানের তথাকথিত জ্ঞানী গুণীদের পুস্তকাদি পাঠে জ্ঞান লাভ করা।
এ পর্যায়ে আমি কিছু লোকের সাথে তর্কযুদ্ধেও অবতীর্ণ হই, যারা দর্শন শাস্ত্র পাঠ করেছিল এবং কাফিরদের রচিত পুস্তকাদি পাঠ করে জ্ঞানী-গুণী সেজে বসেছিল। এরাই লোকদেরকে গোমরাহ করে এবং আসল নুবূওতের ধারণাকে বাদ দিয়ে তারা তা জনৈক(শাহানশাহ আকবরের জন্য) ব্যক্তির জন্য নির্ধারণ করে; ফলে, তারা নিজেরাও গোমরাহ হয়। তারা এরূপ উক্তি করতে থাকে যে, নুবূওত প্রাপ্তির যোগ্যতা হলো : জ্ঞানী-গুণী হওয়া, মানুষের বাহ্যিক অবস্থার উন্নতি সাধন করা, সাধারণ মানুষের ভোগ-সম্ভারে স্বাধীনতা দেওয়া এবং পরস্পরের মতানৈক্য ও মতভেদ থেকে বিরত রাখা, এর সাথে আখিরাতের নাজাত ও মুক্তির কোন সম্পর্ক নেই। বরং আখিরাতের নাজাতের চাবিকাঠি হলো : উন্নত চরিত্র হাসিল করা এবং জ্ঞানীগণ তাদের কিতাবে অধিক উন্নতির জন্য যে বিধান দিয়েছেন তা অনুসরণ করা। তারা তাদের যুক্তির সমর্থনে এরূপ দলিল পেশ করে যে, ইমাম গাযযালী (রহ.) তাঁর প্রসিদ্ধ গ্রন্থ 'ইহইয়া উলুমদ্দীন' কে চারখণ্ডে বিন্যস্ত করেছেন এবং নামায, রোযা ও অন্যান্য ইবাদতের অংশ (যা ফিকাহের আলোচ্য বিষয়), তা মুনজিয়াত(নাজাতদানকারী বা মুক্তি প্রদানকারী) নামীয় খণ্ডে আলাদা বর্ণনা করেছেন। এ থেকে জানা যায় যে, ইমাম গাযযালী (রহ.) 'হুকামা' বা জ্ঞানী গুণীদের সংগে এ ব্যাপারে একমত যে, 'ইবাদতে বদনীয়া' বা শারীরিক ইবাদত যেমন তাঁর (গাযযালী (রহ.) নিকট নাজাত দানকারী নয়, তদ্রুপ তা হুকামাদের দৃষ্টিতেও মুক্তি প্রদানকারী নয়।
তারা আরো যুক্তি প্রদান করে যে, যার কাছে নবীগণের দাওয়াত পৌছে কিন্তু সময়ের দূরত্ব এবং নিদর্শনাবলী ও মু'জিযা প্রতিষ্ঠিত না হওয়ার কারণে সে নবীর নুবূওত তার জন্য গ্রহণীয় নয়। সুতরাং এর হুকুম এরূপ যে, তার জন্য সে নবীর উপর ঈমান আনা ওয়াজিব নয়। যেমন পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থানকারী ব্যক্তির জন্য এরূপ হুকুম, যার কাছে নবীর দাওয়াত পৌঁছায়নি। এ দুয়ের মাঝে পার্থক্য সৃষ্টি করা বাতুলতা বই আর কিছুই নয়।
এ যুক্তির জবাবে আমার বক্তব্য হলো : আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম আল্লাহর নির্দেশে দুনিয়ায় প্রেরিত হয়েছেন, যাতে তাঁরা মানবিক গুণের পরিপূর্ণতা বিধান করতে পারেন ও অন্তরের (ক্বলবের) ব্যাধির চিকিৎসা করেন। আর এ কাজটি নাফরমানদের ভীতি প্রদর্শন এবং ফরমাবরদারদের খোশ খবর দেওয়া ব্যতিরেকে সম্ভব নয়। তাছাড়া তারা আখিরাতে আযাব ও ছওয়াবের খবর প্রদানকারীও। কেননা, প্রত্যেক ব্যক্তির উপর তার কুপ্রবৃত্তির প্রাধান্য আছে, যা তাকে গুনাহ ও খারাপ কাজের দিকে আকর্ষণ করে এবং তারা একেই দুনিয়া ও আখিরাতের জন্য কল্যাণকর বলে মনে করে। অথচ আখিরাতের নাজাত ও মুক্তি এবং চিরস্থায়ী কল্যাণ ‘বি’ছাত’ বা নবী প্রেরণের সংগে সম্পৃক্ত। কেননা, দুনিয়ার জীবন ক্ষণস্থায়ী এবং আখিরাতের জীবন চিরস্থায়ী। পক্ষান্তরে, 'হুকামা’ বা জ্ঞানী-গুণীরা যখন তাদের বাতিল মতবাদ প্রতিষ্ঠার জন্য চেষ্টা করে, তখন তারা নিজেদের বক্তব্যের সাথে ঐ সমস্ত বিষয়কে সংযুক্ত করে দেয়, যা তারা নবীদের প্রতি নাযিলকৃত কিতাব এবং তাদের কথাবার্তা, এমনকি তাদের পূর্ণ অনুসারীদের কথাবার্তা থেকে চুরি করে নেয়, এবং তা নিজেদের বক্তব্য বলে চালিয়ে দেয়; যেমন চরিত্র গঠন সম্পর্কে কিছু বর্ণনা এবং ঐ ধরনের নেক কাজের কিছু বয়ান-যা বাতিন বা গোপন বিষয়ের সাথে সম্পৃক্ত। তারা এসবকে একটি বিশেষ বিষয় হিসেবে সংকলিত করেছে-(যার নাম হলো ‘দর্শন শাস্ত্র') যা তোমাদের মাঝে বিদ্যমান আছে।
বস্তুত হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম গাযযালী (রহ.) তো ঐ সমস্তকে কেবল ইবাদাতের অংশ এজন্য নির্ধারণ করেছেন যে, ফকীহগণ এ সমস্তকে তাদের ফিকাহর কিতাবে অনুষংগী বিষয় হিসেবে বর্ণনা করেছেন এবং যেভাবে বর্ণনা করা উচিত ছিল, সেভাবে বর্ণনা করেননি। কেননা, তাদের আসল উদ্দেশ্য হলো প্রকাশ্য 'আমল' এবং তারা জাহের বা প্রকাশ্যের উপর হুকুম দেয়, 'কুলুব' বা বাতিনের ব্যাপারে তারা কিছু বলেন না। বরং এ ব্যাপারে বর্ণনা করেন তরীকতের আলিমগণ এবং আল্লাহর পথের পথিক বা সালিকগণ। এজন্য ইমাম গাযযালী (রহ.) ঐ শরীয়ত যা জাহিরের (প্রকাশ্যের) সাথে সংযুক্ত-একত্রিত করেছেন এবং স্বীয় গ্রন্থকে এ ধারণা অনুসারে বিভক্ত করে এ অংশের নাম দিয়েছেন 'মুনাজজী' বা মুক্তি দানকারী। যদিও ইবাদাতের ক্ষেত্রেও তিনি বলেছেন যে, তাও নাজাত প্রদানকারী। কেননা, ইবাদাত করার কারণে নাজাত বা মুক্তি পাওয়ার কথা, ফিকাহের মাধ্যমে জানা যায়; কিন্তু দ্বিতীয় পর্যায়ের নাজাতের কথা তা থেকে জানা যায় না।
সুতরাং চিন্তা কর । এখনও যদি তোমাদের মনে কোন সন্দেহ থাকে, তবে এই গ্রন্থে বর্ণিত বিষয়ের প্রতি অনুধাবন কর, যা আমি আলোচনা করেছি। হয়তো তোমাদের সমস্ত সন্দেহ এতে নিরসন হবে। তর্কের খাতিরে আমি আরো বলছি : তোমরা তো 'জালিয়ানুস’ ও ‘সীবুয়াকে' দেখনি। বল দেখি, তোমরা কিরূপে জানলে যে, তিনি একজন খ্যাতিমান চিকিৎসক ছিলেন এবং “সীবুয়া” ছিলেন একজন প্রখ্যাত ব্যাকরণবিদ? যদি তুমি জবাবে বল যে, আমি চিকিৎসা বিদ্যা অধ্যয়ন করেছি এবং তার লেখা গ্রন্থরাজী পাঠ করেছি; ফলে জানতে পেরেছি যে, তিনি রোগের চিকিৎসা এবং অসুখ দূর করার পদ্ধতি বর্ণনা করেছেন। আর এভাবেই আমি জানতে পেরেছি যে, তিনি একজন বিজ্ঞ চিকিৎসক ছিলেন। এভাবেই আমি ব্যাকরণের জ্ঞান হাসিল করেছি ‘সীবুয়ার’ গ্রন্থরাজী থেকে, তাই নিশ্চিত জেনেছি যে, তিনি ছিলেন একজন ব্যাকরণবিদ।
এরূপেই আমি বলতে চাই যে, যখন তুমি নুবূওতের অর্থ জানতে চাইবে তখন কোরআন ও হাদীসের প্রতি গভীরভাবে মনোনিবেশ করবে; তখন তুমি অবশ্যই জানতে পারবে যে, হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নুবূওতের সর্বোত্তম মর্যাদায় বিভূষিত এবং সময়ের দূরত্বের কারণে এ সত্য প্রত্যায়নে কোন ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়নি। কেননা, হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সমস্ত কথাবার্তা, ক্রিয়াকর্ম, নেক্-আমল ইত্যাদি মানবতার পূর্ণতার সংবাদ প্রদান করে এবং রোগগ্রস্ত দিলের (অন্তরের) চিকিৎসা এবং তার মলিনতা বিদূরণের প্রক্রিয়ার খবর দেয়। বস্তুত নুবূওতের অর্থ এছাড়া আর কিছুই নয়।
এখন অবশিষ্ট রইলো পাহাড়ের চুড়ায় বসবাসকারী ঐ সমস্ত ব্যক্তিদের বিষয়টি, যাদের কাছে নবীর দাওয়াত পৌঁছায়নি। আর তারা হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথাও শোনেনি এবং তাঁর অবস্থা সম্পর্কেও কিছু জানতে পারেনি। এমতাবস্থায়, তাদের জন্য তাঁর (সা.) উপর ঈমান আনা সম্ভব নয় এবং তিনি যে, প্রেরিত রাসূল ছিলেন-সে জ্ঞান থাকাও তাদের জন্য সহজ নয়। ব্যাপারটি এমন, যেন তাদের কাছে কোন নবী রাসূল আসেননি, তাই তারা মা’যুর (ওযর প্রাপ্ত) হবে; ফলে, তাদের জন্য হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর ঈমান আনা কার্যতঃ সম্ভব নয়। কেননা, আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেছেন :
وَمَا كُنَّا مُعَذِّبِيۡنَ حَتّٰى نَبۡعَثَ رَسُوۡلًا
অর্থাৎ “আমি আযাব প্রদান করি না, যতক্ষণ না আমি কোন রাসূল প্রেরণ করি”।(আল-কোরআন, ১৭ সূরা বনী ইসরাঈল, আয়াত : ১৫)।
অবশেষে আমার হৃদয়ে এ ধারণা বদ্ধমূল হয় যে, আমি তাদের কাছে এমন বক্তব্য পেশ করবো, যাতে তাদের সন্দেহের নিরসন হয় এবং এমন কিছু লিখবো যা তাদের বিভ্রান্তি দূর করে। কেননা, আমি অনুভব করি যে, আমার উপর এক বিরাট দায়িত্ব আছে এবং আছে এক অবশ্যম্ভাবী 'করয' বা দেনা, যা আদায় করা ব্যতীত নিস্তার নেই-তখন আমি নুবূওতের আসল উদ্দেশ্য কি, তা বিধৃত করে এ পুস্তিকাটি লিপিবদ্ধ করি। এতে আমি খাতেমুর-রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নুবূওত ও রিসালাতের বাস্তবতা সঠিকভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি এবং তার নুবূওত ও রিসালাত অস্বীকারকারীদের সন্দেহ অপনোদন করেছি। ভূয়ো দর্শন শাস্ত্রের সমালোচনা এবং সে জ্ঞানের চর্চা ও সে সম্পর্কিত পুস্তকাদি পাঠে যে ক্ষতি হয়, তা বর্ণনার উদ্দেশ্যে প্রকৃষ্ট দলীলসহ এ গ্রন্থ রচনা করেছি। এ বিষয়গুলি আমার ব্যথাতুর হৃদয়ে, মহা-প্রতাপশালী আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্য হিসেবে প্রকাশ পেয়েছে। ফলে আমি বলছি যে, এ পুস্তকটি একটি ভূমিকা ও দু’টি নিবন্ধে রচিত হলো। আর মুকাদ্দামা বা ভূমিকায় আছে দুটি অধ্যায়।