✧ লা-মাযহাবী ও দেওবন্দীদের মধ্যে পার্থক্য
মওলবী ইসমাইলের ভক্ত-অনুসারীবৃন্দ দুই দলে বিভক্ত হয়ে পড়ে। একদল মাযহাবী ইমামদের অনুসরণের প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করে। এরা লা-মাযহাবী হিসেবে পরিচিত। অপরদল মুসলমানদের ঘৃণা থেকে বাঁচার জন্য নিজেদেরকে হানাফী বলে দাবী করে, আমাদেরই মত নামায-রোযা পালন করে। তারাই গোলাবী ওহাবী বা দেওবন্দী হিসেবে পরিচিত। আঁকা মাওলানা হযরত মাহবুবে কিবরিয়া (ﷺ) এর মুজিযা দেখুন;
❏ তিনি বলেছিলেন, “সেখান থেকে শয়তানী দলের আবির্ভাব ঘটবে”।
❏ قَرَنُ الشَّيِطَانِ (করনুশ শয়তান) এর উদুর্ অনুবাদ হচ্ছে, ‘দেও বন্দ’ ‘দেও’ অর্থ শয়তান আর ‘বন্দ’ অর্থ দল বা অনুসারী।
❏ কিংবা ‘দেওবন্দ’ শব্দদ্বয়ের মধ্যে সম্পর্কে হচ্ছে اضافت مقلوبى (ইযাফতে মকলুবী’র) অর্থাৎ দেওবন্দ শব্দটি ‘বন্দেদেও শব্দ হতে গঠিত, যার অর্থ হচ্ছে, শয়তানের দল বা স্থান।
এ উভয় দলের ধর্মীয় কাজ-কর্ম ও আচার আচরণে বাহ্যিকভাবে কিছুটা পার্থক্য থাকলেও তাদের আকীদার মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। উভয়েই মুহাম্মদ ইবনে আবদুল ওহাব সম্পর্কে ভাল ধারণা পোষণ করে এবং তার আকীদারই পৃষ্ঠপোষক। বস্তুতঃ
❏ দেওবন্দীদের মুরব্বী মওলবী রশীদ আহমদ সাহেব গাঙ্গুহী লিখেছেন, “মুহাম্মদ ইবনে আবদুল ওহাব নজদীর অনুসারীদের ওহাবী বলা হয়। তাঁর আকীদা ভাল ছিল। তিনি হাম্বলী মাযহাবের অনুসারী ছিলেন। অবশ্য তিনি উগ্র মেযাজের লোক ছিলেন। তবে হ্যাঁ, যারা সীমা অতিক্রম করেছে, তারা ফিত্না-ফ্যাসাদের শিকার হয়েছে। তাদের সবার আকীদা ছিল অভিন্ন। শুধু আমলের মধ্যে পার্থক্য ছিল। কেউ ছিল হানাফী, কেউ শাফিঈ কেউ বা মালেকী আর কেউ হাম্বলী”।
[রশীদ আহমদ গাঙ্গুহীঃ ‘ফতুয়ায়ে রশীদিয়া’ গ্রন্থের ১ম খন্ডের তাকলীদ শীর্ষক আলোচনা ১১৯]
বর্তমান যুগে লা-মাযহাবী ওহাবীদের তুলনায় দেওবন্দীরা অপেক্ষাকৃত বিপজ্জনক। কেননা সাধারণ মুসলমান তাদেরকে সহজে চিনতে পারে না। তাঁরা তাদের রচিত কিতাব সমূহে হুযুর (ﷺ) এর শানে যে ধরনের বে-আদবী করেছে, তা’ করতে কোন মুশরিকও কখনও সাহস পাবে না। এরপরেও এরা নিজেদেরকে মুসলমানের কান্ডারী ও ইসলামের একমাত্র এজেন্ট বলে দাবী করে থাকে।
❏ মৌলবী আশরাফ আলী সাহেবের থানভী তাঁর ‘হিফজুল ঈমান’ নামক কিতাবে হুযুর (ﷺ) এর জ্ঞানকে পশুদের জ্ঞানের মত বলেছেন।
❏ মৌলবী খলিল আহমদ সাহেব আম্বেটবী তাঁর ‘বারাহীনে কাতেয়া’ কিভাবে শয়তান ও হযরত আযরাইল (عليه السلام) এর জ্ঞান হুযুর (ﷺ) এর জ্ঞানের তুলনায় বেশী বলে মত প্রকাশ করেছে।
❏ মওলবী ইসমাইল দেহলবী সাহেব তাঁর ‘সিরাতুম মুস্তাকিম’ কিতাবে নামাজের মধ্যে হুযুর (ﷺ) এর খেয়াল আসাটা গাধা-গরুর খেয়াল আসা অপেক্ষা খারাপ বলেছে।
❏ মওলবী কাসেম সাহেব নানুতবী ‘তাহযিরুন নাস’ কিভাবে হুযুর (ﷺ) কে শেষ নবী হিসাবে স্বীকার করেনি। তাঁর কথা হলো হুযুর (ﷺ) এরপরে কোন নবী এসে গেলেও হুযুর (ﷺ) এর শেষ নবী হওয়ার ক্ষেত্রে এর কোন প্রভাব পড়বে না। (তাঁর মতে) খাতেম অর্থ আসল নবী এবং অন্যান্য নবীগণ হচ্ছেন আরেযী, (মূখ্য নবীর ভূমিকা অনুসরণকারী নবী)।
❏ মীর্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী ঠিক একথাই বলেছে, আমি আরেযী নবী। মির্জা গোলাম আহমদকে এ ক্ষেত্রে মওলভী রশীদ আহমদ সাহেবের (অথবা নানুতবী সাহেবের) সুযোগ্য শিষ্য হিসেবে গণ্য করা যায়।
এসব মওলভীদের কাছে তাওহীদ হচ্ছে নবীগণকে হেয় প্রতিপন্ন করা, যেমন রাফেজীগণ হযরত আলী (رضي الله عنه) এর প্রতি ভালবাসা বলতে অন্যান্য সাহাবায়ে কেরাম এর প্রতি শত্রুতা পোষণ মনে করে থাকে। বস্তুতঃ এ তাওহীদ হলো শয়তানী তাওহীদ। শয়তান আদম (عليه السلام) কে সম্মান করতে অস্বীকার করেছে। আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো কাছে মাথা নত করেনি সে। এর পরিণাম কি হয়েছে, সকলেই জানেন। প্রত্যেক لاحول (লা-হাওলা) বলে একে সম্বর্ধনা জ্ঞাপন করে থাকে। ইসলামী তাওহীদ হলো আল্লাহকে এক স্বীকার করা এবং তাঁর প্রিয় বান্দাদেরকে ইয্যত ও সম্মান করা।
❏ এ তাওহীদের শিক্ষা হচ্ছে,
لَااِلَهَ اِلَهَ اللهُ مُحَمَّدُرَّسُوْلُ اللهِ
উক্ত কলেমার প্রথমাংশে আল্লাহর একত্বের কথা বলা হয়েছে, দ্বিতীয়াংশে শানে মুস্তাফা প্রকাশ করা হয়েছে।
আজকাল প্রত্যেক জায়গায় মুসলিম জাতির মধ্যে বিশেষতঃ দেওবন্দী ও সুন্নীদের মধ্যে গৃহযুদ্ধ লেগেই আছে। কোন জায়গায় ভাল কাজে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি, কোন জায়গায় অদৃশ্য জ্ঞান নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা; কোন জায়গায় হুযুর (ﷺ) এর হাযির নাযির হওয়া সম্পর্কে বাকবিতন্ডা; আবার কোন ক্ষেত্রে মীলাদ মাহফিল ও ফাতিহা সম্পর্কিত তর্ক-বিতর্ক; কোন কোন ক্ষেত্রে আওলিয়া কেরামের মাযারে উপর গুম্বদ তৈরী করা সম্পর্কে মুনাজিরা। যদিও উল্লেখিত প্রত্যেক বিষয়ে আহলে সুন্নাত ওয়াল উচ্চমানের কিতাবাদি রয়েছে, যেমন তাকলীদ সম্পর্কে মাওলানা ইরশাদ হোসাইনের ইনতিসারুল হক ‘ইলমে গায়ব বা অদৃশ্য জ্ঞান সম্পর্কে আমার উস্তাদ ও মুরশিদ সদরুল আফাজেল আলহাজ্ব মাওলানা মুহাম্মদ নঈম উদ্দীন সাহেব মুরাদাবাদীর ‘আল কালিমাতুল উলইয়া’ ফাতিহা যিয়ারত ইত্যাদি সম্পর্কে মাওলানা আবদুস সমিহ বে-দীল রামপুরীর ‘আনোয়ারে সাতেয়া, এবং হাযির নাযির, উরস যিয়ারত ইত্যাদি সম্পর্কে বর্তমান শতাব্দীর মুজাদ্দিদ আ’লা হযরত মাওলানা আহমদ রেজা খান সাহেব বেরলভী (রহমাতুল্লাহে আলাইহে) এর গ্রন্থাবলী। তথাপি আমার ইচ্ছে হলো এমন একটি কিতাব লিখতে, যেখানে আলোচ্য যাবতীয় বিষয় সন্নিবেশিত করা হবে। যা’র হাতে এ কিতাবটি থাকবে, তিনি প্রত্যেক বিষয়ে বিরোদ্ধচারণ কারীর মুকাবিলা করতে পারবেন, ওদের থেকে মুসলমানদের আক্বীদা রক্ষা করতে সক্ষম হবেন। একমাত্র এ উদ্দেশ্যে আল্লাহর উপর ভরসা করে এ কিতাবটি রচনায় হাত দিয়েছি।
স্বীয় স্বল্প জ্ঞান ও আর্থিক অসঙ্গতির সম্যক ধারণা সত্ত্বেও এ গ্রন্থ প্রণয়নের সাহস করলাম। প্রারম্ভ আমার কাজ, ইহার পরিপূর্ণ রূপদান আমার মহাপ্রভুর দয়ার উপর নির্ভরশীল। আমি আমার সম্মানিত বন্ধু জনাব মুন্সী আহামদ দ্বীন সাহেব, সেক্রেটারী আঞ্জুমানে খুদ্দাআমুস সুফীয়া, গুজরাট এর হৃদয়ের অন্তঃস্থল হতে শুকরিয়া আদায় করছি, যিনি আমাকে এ কাজে পূর্ণ সহযোগিতা দান করে এ কিতাব ছাপানোর সুব্যবস্থা করেছেন। আল্লাহ তা’আলা তাঁর ধন-দৌলত, সন্তান-সন্ততি ও ঈমানে বরকত দান করুক।
এ কিতাবে উপরোলিখিত প্রত্যেক বিষয়ে সংক্ষিপ্ত অথচ পরিপূর্ণ আলোচনা করা হয়েছে তবুও যারা আরও বিস্তারিতভাবে জানতে চান, তা’রা ইলমে গায়ব সম্পর্কে আল কালিমাতুল উল্ইয়া’ নামক গ্রন্থ পাঠ করতে পারেন। এ বিষয়ে এ ধরনের গ্রন্থ আজ পর্যন্ত রচিত হয়নি। এছাড়া অপরাপয় বিষয়েও আ’লা হযরত বেরলভী (رحمة الله) এর রচিত গ্রন্থাবলী পাঠ করতে পারেন।